#জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
Explore tagged Tumblr posts
quransunnahdawah · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এ যোগ্যতা নেই। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, 'পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আলাক : ১)
জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। বিধানগতভাবে জাগতিক জ্ঞান দুই প্রকার : এক. যা চর্চা করা অপরিহার্য।
দুই. যা চর্চা করা নিষিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে- ওই সব জ্ঞান, যা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন- চিকিৎসা, গণিত, এমনিভাবে কৃষি, রাষ্ট্রনীতি, প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে সবাই কষ্টে পতিত হবে।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি, যা মানুষকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন- ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষিদ্ধ। (ইহইয়াউ উলুমিদ দ্বীন : ১/২৯-৩০)
তবে হ্যাঁ, জাগতিক জ্ঞান অর্জনেরও একটি বিশুদ্ধ ধর্মীয় দিক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনি খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে ��াখার স্বার্থে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা অর্জন, দ্বীন প্রচারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি দ্বীনি খিদমতের উদ্দেশ্যে হলে তা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হবে।
কোরআনে কারিমে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, 'তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো।' (সুরা আনফাল : ৬০)
অনুরূপ হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করলে এতেও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- 'হালাল রিজিক সন্ধান সব মুসলমানের ওপর ফরজ।' (আল মু'জামুল আওসাত : ৮৬১০)
ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।' (সুরা মুজাদালা : ১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।' (বুখারি : ৫০২৭) অন্যত্র তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' (মুসলিম : ২৬৯৯) আরেক হাদিসে আছে, 'আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।' (বুখারি : ৭১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, 'যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।' (তিরমিজি : ২৬৪৭)
তবে দ্বীনি ইলমের ওই ফজিলত লাভের জন্য শর্ত হলো 'ইখলাস' তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করা। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা কেবল আল্লাহর জন্যই শেখা হয়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।' (আবু দাউদ : ৩৬৬৪)
সারকথা, ইসলামে দ্বীনি শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাগতিক শিক্ষার গুরুত্ব। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনি কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। পক্ষান্তরে জীবনের সব কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক, ইমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে নৈতিক ��ূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়।
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা https://www.youtube.com/watch?v=OBEVzxgbN2s
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
Importance of Acquiring Knowledge in Islam
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
0 notes
tawhidrisalatakhirah · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এ যোগ্যতা নেই। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে। ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, 'পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আলাক : ১) জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। বিধানগতভাবে জাগতিক জ্ঞান দুই প্রকার : এক. যা চর্চা করা অপরিহার্য। দুই. যা চর্চা করা নিষিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে- ওই সব জ্ঞান, যা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন- চিকিৎসা, গণিত, এমনিভাবে কৃষি, রাষ্ট্রনীতি, প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে সবাই কষ্টে পতিত হবে। পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি, যা মানুষকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন- ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষিদ্ধ। (ইহইয়াউ উলুমিদ দ্বীন : ১/২৯-৩০) তবে হ্যাঁ, জাগতিক জ্ঞান অর্জনেরও একটি বিশুদ্ধ ধর্মীয় দিক রয়ে��ে, সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনি খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা অর্জন, দ্বীন প্রচারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি দ্বীনি খিদমতের উদ্দেশ্যে হলে তা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হবে। কোরআনে কারিমে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, 'তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো।' (সুরা আনফাল : ৬০) অনুরূপ হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করলে এতেও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- 'হালাল রিজিক সন্ধান সব মুসলমানের ওপর ফরজ।' (আল মু'জামুল আওসাত : ৮৬১০) ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।' (সুরা মুজাদালা : ১১) রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।' (বুখারি : ৫০২৭) অন্যত্র তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' (মুসলিম : ২৬৯৯) আরেক হাদিসে আছে, 'আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।' (বুখারি : ৭১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, 'যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।' (তিরমিজি : ২৬৪৭) তবে দ্বীনি ইলমের ওই ফজিলত লাভের জন্য শর্ত হলো 'ইখলাস' তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করা। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা কেবল আল্লাহর জন্যই শেখা হয়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।' (আবু দাউদ : ৩৬৬৪) সারকথা, ইসলামে দ্বীনি শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাগতিক শিক্ষার গুরুত্ব। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনি কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। পক্ষান্তরে জীবনের সব কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক, ইমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়। জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা https://www.youtube.com/watch?v=OBEVzxgbN2s https://www.youtube.com/watch?v=WR0tCQ_UmcU https://www.youtube.com/watch?v=Chqy8tp5e0w https://www.youtube.com/watch?v=gUZf5zu7Fic https://www.youtube.com/watch?v=s4O-oPPUPDc https://www.youtube.com/watch?v=ahL41l4R_i0&t=126s https://www.youtube.com/watch?v=ayK3KMCWDfo&t=34s https://www.youtube.com/watch?v=biYiQw1-lP4 https://www.youtube.com/watch?v=xYDj6RoDIbA https://www.youtube.com/watch?v=xYDj6RoDIbA https://www.youtube.com/watch?v=2R3E25VFj3Q
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
Importance of Acquiring Knowledge in Islam
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
0 notes
ilyforallahswt · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এ যোগ্যতা নেই। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, 'পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আলাক : ১)
জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। বিধানগতভাবে জাগতিক জ্ঞান দুই প্রকার : এক. যা চর্চা করা অপরিহার্য।
দুই. যা চর্চা করা নিষিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে- ওই সব জ্ঞান, যা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন- চিকিৎসা, গণিত, এমনিভাবে কৃষি, রাষ্ট্রনীতি, প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে সবাই কষ্টে পতিত হবে।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি, যা মানুষকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন- ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষিদ্ধ। (ইহইয়াউ উলুমিদ দ্বীন : ১/২৯-৩০)
তবে হ্যাঁ, জাগতিক জ্ঞান অর্জনেরও একটি বিশুদ্ধ ধর্মীয় দিক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনি খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা অর্জন, দ্বীন প্রচারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি দ্বীনি খিদমতের উদ্দেশ্যে হলে তা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হবে।
কোরআনে কারিমে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, 'তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো।' (সুরা আনফাল : ৬০)
অনুরূপ হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করলে এতেও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- 'হালাল রিজিক সন্ধান সব মুসলমানের ওপর ফরজ।' (আল মু'জামুল আওসাত : ৮৬১০)
ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।' (সুরা মুজাদালা : ১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।' (বুখারি : ৫০২৭) অন্যত্র তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' (মুসলিম : ২৬৯৯) আরেক হাদিসে আছে, 'আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।' (বুখারি : ৭১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, 'যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।' (তিরমিজি : ২৬৪৭)
তবে দ্বীনি ইলমের ওই ফজিলত লাভের জন্য শর্ত হলো 'ইখলাস' তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করা। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা কেবল আল্লাহর জন্যই শেখা হয়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।' (আবু দাউদ : ৩৬৬৪)
সারকথা, ইসলামে দ্বীনি শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাগতিক শিক্ষার গুরুত্ব। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনি কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। পক্ষান্তরে জীবনের সব কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক, ইমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়।
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা https://www.youtube.com/watch?v=OBEVzxgbN2s
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
Importance of Acquiring Knowledge in Islam
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
0 notes
myreligionislam · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এ যোগ্যতা নেই। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, 'পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আলাক : ১)
জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। বিধানগতভাবে জাগতিক জ্ঞান দুই প্রকার : এক. যা চর্চা করা অপরিহার্য।
দুই. যা চর্চা করা নিষিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে- ওই সব জ্ঞান, যা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন- চিকিৎসা, গণিত, এমনিভাবে কৃষি, রাষ্ট্রনীতি, প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে সবাই কষ্টে পতিত হবে।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি, যা মানুষকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন- ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষিদ্ধ। (ইহইয়াউ উলুমিদ দ্বীন : ১/২৯-৩০)
তবে হ্যাঁ, জাগতিক জ্ঞান অর্জনেরও একটি বিশুদ্ধ ধর্মীয় দিক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনি খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা অর্জন, দ্বীন প্রচারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি দ্বীনি খিদমতের উদ্দেশ্যে হলে তা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হবে।
কোরআনে কারিমে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, 'তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো।' (সুরা আনফাল : ৬০)
অনুরূপ হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করলে এতেও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- 'হালাল রিজিক সন্ধান সব মুসলমানের ওপর ফরজ।' (আল মু'জামুল আওসাত : ৮৬১০)
ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।' (সুরা মুজাদালা : ১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।' (বুখারি : ৫০২৭) অন্যত্র তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' (মুসলিম : ২৬৯৯) আরেক হাদিসে আছে, 'আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।' (বুখারি : ৭১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, 'যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।' (তিরমিজি : ২৬৪৭)
তবে দ্বীনি ইলমের ওই ফজিলত লাভের জন্য শর্ত হলো 'ইখলাস' তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করা। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা কেবল আল্লাহর জন্যই শেখা হয়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।' (আবু দাউদ : ৩৬৬৪)
সারকথা, ইসলামে দ্বীনি শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাগতিক শিক্ষার গুরুত্ব। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনি কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। পক্ষান্তরে জীবনের সব কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক, ইমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়।
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা https://www.youtube.com/watch?v=OBEVzxgbN2s
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
Importance of Acquiring Knowledge in Islam
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
0 notes
allahisourrabb · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এ যোগ্যতা নেই। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, 'পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আলাক : ১)
জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। বিধানগতভাবে জাগতিক জ্ঞান দুই প্রকার : এক. যা চর্চা করা অপরিহার্য।
দুই. যা চর্চা করা নিষিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে- ওই সব জ্ঞান, যা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন- চিকিৎসা, গণিত, এমনিভাবে কৃষি, রাষ্ট্রনীতি, প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে সবাই কষ্টে পতিত হবে।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি, যা মানুষকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন- ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষিদ্ধ। (ইহইয়াউ উলুমিদ দ্বীন : ১/২৯-৩০)
তবে হ্যাঁ, জাগতিক জ্ঞান অর্জনেরও একটি বিশুদ্ধ ধর্মীয় দিক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনি খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা অর্জন, দ্বীন প্রচারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি দ্বীনি খিদমতের উদ্দেশ্যে হলে তা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হবে।
কোরআনে কারিমে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, 'তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো।' (সুরা আনফাল : ৬০)
অনুরূপ হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করলে এতেও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- 'হালাল রিজিক সন্ধান সব মুসলমানের ওপর ফরজ।' (আল মু'জামুল আওসাত : ৮৬১০)
ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।' (সুরা মুজাদালা : ১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।' (বুখারি : ৫০২৭) অন্যত্র তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' (মুসলিম : ২৬৯৯) আরেক হাদিসে আছে, 'আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।' (বুখারি : ৭১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, 'যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।' (তিরমিজি : ২৬৪৭)
তবে দ্বীনি ইলমের ওই ফজিলত লাভের জন্য শর্ত হলো 'ইখলাস' তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করা। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ ���াসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা কেবল আল্লাহর জন্যই শেখা হয়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।' (আবু দাউদ : ৩৬৬৪)
সারকথা, ইসলামে দ্বীনি শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাগতিক শিক্ষার গুরুত্ব। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনি কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। পক্ষান্তরে জীবনের সব কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক, ইমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়।
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা https://www.youtube.com/watch?v=OBEVzxgbN2s
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
Importance of Acquiring Knowledge in Islam
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
0 notes
mylordisallah · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
মহান আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষ যেমন তার পার্থিব প্রয়োজন পূরণের উত্তম পন্থা আবিষ্কার করতে পারে, তেমনি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং আখিরাতের সফলতা-ব্যর্থতার জ্ঞানও অর্জন করতে পারে। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর এ যোগ্যতা নেই। শিক্ষার মাধ্যমে অজানাকে জানার এবং জানা বিষয়কে কাজে লাগিয়ে অজানার সন্ধান করার যোগ্যতা একমাত্র মানুষেরই আছে।
ইসলামে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুল (সা.)-এর ওপর হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওহি নাজিল হয়, 'পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।' (সুরা আলাক : ১)
জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : পার্থিব জীবনযাত্রার প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর জ্ঞান অর্জন ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকেও কাম্য। বিধানগতভাবে জাগতিক জ্ঞান দুই প্রকার : এক. যা চর্চা করা অপরিহার্য।
দুই. যা চর্চা করা নিষিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে- ওই ���ব জ্ঞান, যা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। যেমন- চিকিৎসা, গণিত, এমনিভাবে কৃষি, রাষ্ট্রনীতি, প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান ও দর্শন ইত্যাদির মৌলিক পর্যায়ের জ্ঞানও অপরিহার্য। গোটা জনপদে যদি এই জ্ঞানের পারদর্শী কেউ না থাকে, তাহলে সবাই কষ্টে পতিত হবে।
পক্ষান্তরে দ্বিতীয়টি, যা মানুষকে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়, তা চর্চা করা হারাম। যেমন- ইসলামবিরোধী প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, কুফরি সাহিত্য ইত্যাদি। তদ্রূপ অকল্যাণকর ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় চর্চা করাও নিষিদ্ধ। (ইহইয়াউ উলুমিদ দ্বীন : ১/২৯-৩০)
তবে হ্যাঁ, জাগতিক জ্ঞান অর্জনেরও একটি বিশুদ্ধ ধর্মীয় দিক রয়েছে, সে ক্ষেত্রে তা দ্বীনি খিদমত হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। যেমন- বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উন্নতির যুগে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ পারদর্শিতা অর্জন, দ্বীন প্রচারের জন্য কম্পিউটার শিক্ষা ও অন্যান্য অত্যাধুনিক মাধ্যমগুলোর জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি দ্বীনি খিদমতের উদ্দেশ্যে হলে তা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খিদমত হিসেবে গণ্য হবে।
কোরআনে কারিমে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, 'তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো শক্তি অর্জন করো।' (সুরা আনফাল : ৬০)
অনুরূপ হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন, মাতা-পিতা ও আত্মীয়স্বজনের খিদমত, পরিবার-পরিজনের হক আদায়, সমাজসেবা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে জ্ঞান অর্জন করলে এতেও সওয়াব রয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে- 'হালাল রিজিক সন্ধান সব মুসলমানের ওপর ফরজ।' (আল মু'জামুল আওসাত : ৮৬১০)
ধর্মীয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং যাদের ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবেন।' (সুরা মুজাদালা : ১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়।' (বুখারি : ৫০২৭) অন্যত্র তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।' (মুসলিম : ২৬৯৯) আরেক হাদিসে আছে, 'আল্লাহ তাআলা যাকে প্রভূত কল্যাণ দিতে চান, তাকে দ্বীনের প্রজ্ঞা দান করেন।' (বুখারি : ৭১) রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, 'যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।' (তিরমিজি : ২৬৪৭)
তবে দ্বীনি ইলমের ওই ফজিলত লাভের জন্য শর্ত হলো 'ইখলাস' তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইলম অর্জন করা। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে দ্বীনি ইলম অর্জন করা হলে তার পরিণাম হবে ভয়াবহ। হাদিস শরিফে এসেছে, 'যে ব্যক্তি দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে এমন ইলম শিখল, যা কেবল আল্লাহর জন্যই শেখা হয়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না।' (আবু দাউদ : ৩৬৬৪)
সারকথা, ইসলামে দ্বীনি শিক্ষার যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাগতিক শিক্ষার গুরুত্ব। পার্থিব প্রয়োজন পূরণ ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য জাগতিক শিক্ষা অতীব জরুরি। উপরন্তু বহু দ্বীনি কাজের জন্যও জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজন পড়ে। পক্ষান্তরে জীবনের সব কাজ ইসলামের বিধান মোতাবেক করার জন্য দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে সমাজ যতই উন্নতি লাভ করুক, ইমান ও আল্লাহভীতি না থাকলে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব নয়।
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা https://www.youtube.com/watch?v=OBEVzxgbN2s
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
youtube
ইসলামে জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব
Importance of Acquiring Knowledge in Islam
জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
0 notes
rasif-khan · 9 months ago
Text
দ্বীন অর্জনের গুরুত্ব ও সাহাবীদের প্রচেষ্টা ~
কাসীর ইবনু কায়স (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবূ দারদা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) -এর সঙ্গে দামেশকের মসজিদে  বসা ছিলাম। তখন তার নিক�� এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবূ দারদা! আমি একটি হাদীসের জন্য সুদূর মদীনাতুর রাসূল থেকে এসেছি। জানতে পারলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আমি আসিনি। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের মধ্যে কোনো একটি পথে পৌঁছে দেন।
ফিরিশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। জ্ঞানীর জন্য আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও দু’আ প্রার্থনা করে, এমন কি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও। আবেদ (সাধারণ ইবাদাতগুজারী) ব্যক্তির উপর ’আলিমের ফাযীলাত হলো যেমন সমস্ত তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরসুরি। নবীগণ কোনো দীনার বা দিরহাম মীরাসরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে..!!
[তিরমিজি, আবু দাউদ ]
0 notes
mamunh83 · 2 years ago
Link
0 notes
khutbahs · 4 years ago
Link
ইসলামে নারীর অধিকার ও সম্মান
মানুষ সামাজিক জীব, অন্যদিকে প্রকৃতির অংশ। তাই মানুষকে জীবন ধারণ, বেঁচে থাকা ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয় বিধানই মেনে চলতে হবে। প্রাকৃতিক বিধান লঙ্ঘন করলে ধ্বংস অনিবার্য। আর সামাজিক বিধান ভঙ্গ করলে নেমে আসে বিপর্যয়। সামাজিক নিয়মগুলো প্রকৃতি থেকে মানুষের লব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে গড়ে ওঠে। বিধানসমূহের মধ্যে ধর্মীয় বিধানই শ্রেয়। ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে। এ ছাড়া কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নারীর জান-মালের নি��াপত্তা ও সর্বোচ্চ সম্মান।
নারীর শিক্ষা
নারীদের তালিম তালবিয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন-ইবনে মাজাহ শরিফ)। তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। নারীর আধ্যাত্মিক শিক্ষা
একইভাবে আধ্যাত্মিক মহিমা অর্জনের ক্ষেত্রেও নারীর কর্তব্য রয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এ কথা সুনিশ্চিত, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম মুমিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকা দানকারী, রোজা পালনকারী, নিজেদের সম্ভ্রমের হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণকারী, আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত ও প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।’ (সূরা-২২ আহজাব, আয়াত: ৩৫)।
মা হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলাম নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে মা হিসেবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
মহানবী (সা.)-এর জামানার বিখ্যাত এক ঘটনার কথা আমরা জানি। মায়ের সেবা করার কারণে হজরত ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীর জামানায় থেকেও সাহাবি হতে পারেননি। একবার ওয়াইস করনি (রা.) নবীজির কাছে খবর পাঠালেন ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সঙ্গে সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি।’ নবীজি (সা.) তাঁর গায়ের একটি মোবারক জুব্বা ওয়াইস করনির জন্য রেখে যান। তিনি বলেন, মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি। আমার ইন্তেকালের পরে তাকে আমার এই জুব্বাটি উপহার দেবে। জুব্বাটি রেখে যান হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে। এবং প্রিয় নবী (সা.) বলেন, হে ওমর! ওয়াইস করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।কন্যা হিসেবে নারীর সম্মানমহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’বোন হিসেবে নারীর সম্মানমহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মান
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)। স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’ (মুসলিম শরিফ)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।    
বিধবার অধিকার ও সম্মান
বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণ–পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারি ও মুসলিম)।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ব্যক্তিত্বের প্রমাণ
রাসুলের একটি হাদিসে এসেছে, নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবী করিম (সা.)-এর জীবনে লক্ষণীয় ছিল—এক. নামাজের প্রতি অনুরাগ; দুই. ফুলের প্রতি ভালোবাসা; তিন. নারীর প্রতি সম্মান। (বুখারি ও মুসলিম)।
কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত বিখ্যাত নারীগণ:
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বহু বিখ্যাত নারীর উল��লেখ রয়েছে, তাঁরা নিজ নিজ অবস্থানে সেরা ছিলেন। যেমন: জগন্মাতা মা হাওয়া (আ.), আদমকন্যা আকলিমা, ইব্রাহিম (আ.)-এর পত্নী সারা, ইসমাইল (আ.)-এর মাতা হাজেরা, মিসরপতির স্ত্রী জুলায়খা, সুলাইমানের পত্নী সাবার রানি বিলকিস, ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া, আইয়ুব (আ.)-এর স্ত্রী বিবি রহিমা, ইমরানের স্ত্রী হান্না, ঈসা (আ.)-এর মাতা বিবি মরিয়ম, নবী করিম হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাতা আমেনা ও দুধমাতা হালিমা সাদিয়া; উম্মুল মুমিনিন খাদিজা (রা.), হাফসা (রা.), আয়িশা (রা.), মারিয়া (রা.)সহ নবী পত্নীগণ; নবীনন্দিনী রুকাইয়া, জয়নব, কুলসুম ও ফাতিমা (রা.); আবু বকরের কন্যা আসমা, শহিদা সুমাইয়া ও নবীজির দুধবোন সায়েমা।
নারী তাঁর নারীত্বের মর্যাদা বজায় রেখেই সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন ও রাখছেন। নারী ছাড়া অন্য কেউই মাতৃত্বের সেবা ও সহধর্মিণীর গঠনমূলক সহযোগী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম নয়। মায়েদের ত্যাগ ও ভালোবাসা ছাড়া মানবীয় প্রতিভার বিকাশ ও সমাজের স্থায়িত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। মায়েরাই সমাজের প্রধান ভিত্তি তথা পরিবারের প্রশান্তির উৎস।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি;
0 notes
gnews71 · 6 years ago
Photo
Tumblr media
“জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদায় ইসলাম যা বলে” জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। তবে এ সম্পর্কিত হাদিস তুলে ধরার আগে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্য একটি হাদিস তুলে ধরতে চাই। যে হাদিসটি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- 'মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল ছাড়া। আর তাহলো যথাক্রমে সাদকায়ে জারিয়াহ, এমন ইলম বা জ্ঞান; যা দ্বারা উপকৃত হয়, এমন নেক সন্তান যে তাদের জন্য দোয়া করে।' উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বলা যায়, সাদকায়ে জারিয়াহ কী তা জানতে জ্ঞানার্জন আবশ্যক। আবার মানুষের উপকার হয় এমন জ্ঞান দানের জন্য জ্ঞানার্জন জরুরি। আর পিতামাতার জন্য দোয়া করবে এমন নেক সন্তানও তৈরি হবে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে। সুতরাং জ্ঞানার্জনের গুরুত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব তুলে ধরে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিসে এসেছে- - হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ করেন।' (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি) জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে যারা জ্ঞানার্জন করে কিংবা যারা কল্যাণকর জ্ঞানদান করেন তাদের জন্য রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। প্রিয়নবি হাদিসে তাও বর্ণনা করেছেন- - হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি শুধু কল্যাণকর ইলম (জ্ঞান) শিক্ষার জন্য কিংবা শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে সকাল বেলা মসজিদে যায়, তার জন্য এমন একজন হাজির সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। যিনি তার হজকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছেন।' (তাবারানি, তারগিব) - হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার এ মসজিদে আসলো; তার উদ্দেশ্যটা যদি শুধু কল্যাণকর ইলম (জ্ঞান) শেখা কিংবা শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে তার মর্যাদা আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের স্থানে।' (ইবনে মাজাহ) সর্বোপরি কথা হলো, যারা জ্ঞানার্জনের পথে বের হয় তারা উভয় জগতেই সফলকাম। দুনিয়াতে তাদের জন্য রহমত কল্যাণ ও মাগফেরাতের দোয়া করা হয়। আর পরকালের কল্যাণতো সুনির্ধারিত। হাদিসে এসেছে- - হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জনের পথে চলে, আল্লাহর এর দ্বারা তাকে জান্নাতে পৌছে দেবেন। ফেরেশতারা ইলম অর্জনকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা পেতে দেন। অনন্তর আলেমদের জন্য আসমান-জমিনের সব প্রাণী ক্ষমা প্রার্থনা করে এমনকি পানির জগতের মাছসমূহও। সব নক্ষত্ররাজির ওপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা যেমন প্রাধান্য, ঠিক তেমনি (সাধারণ) আবেদের ওপর (ইলম অর্জনকারী) আলেমদের মর্যাদা তেমন। আলেমগণ নবিদের ওয়ারিশ। আর নবিগণ কোনো দিনার বা দিরহাম উত্তরাধিকার রেখে যাননি। বরং তারা মিরাস হিসেবে রেখে গেছেন ইলম বা জ্ঞান। সুতরাং যে ইলম (জ্ঞান) অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে।' (তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইলমে দ্বীন শেখার এবং শিক্ষা দেয়ার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 notes
authorbappy-blog · 7 years ago
Photo
Tumblr media
মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব ও অপ্রতুল সহযোগিতা অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ঘোষনা করেছেন- হে নবী আপনি বলে দিন, যারা জানে আর যারা জানেনা তারা সমান নয় (সূরা জুমার, আয়াত- ৯) আল্লাহপাক আরো বলেছেন- পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন (সূরা আলাক, আয়াত- ১)। নবী (সঃ) বলেছেন- আলেমের মর্যাদা একজন আবেদ বান্দার উপর তেমনি যেমনি আমারও সাধারণ মানুষের মর্যাদার পার্থক্য (তিরমিযী)। নবী (সঃ) আরো বলেন- যখন আল্লাহ কোন বান্দার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন (মুসনাদে আহমাদ)। দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনের জন্য বিদ্যার্জন, কর্মতৎপরতা যেমনি প্রয়োজন পরকালীন স্থায়ী জীবনের জন্য যথাযথ আমল তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমলের নিয়ম পদ্ধতি, মাসআলা মাসায়েল, বিশুদ্ধ উচ্চারণে কোরআন তিলাওয়াত জানা না থাকলে, দোয়া, তাছবীহ পড়তে না জানলে পরকালীন জীবনের জন্য আমল করা সম্ভব হয় না। পিতা-মাতার এমন সন্তান রেখে যাওয়া উচিৎ নয় যারা তাদের জানাজায় দাড়িয়ে সঠিকভাবে দোয়াগুলো পড়তে জানে না। বর্তমানে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় সাধারণ বই গুলো একই বই পাঠ্য। দশম শ্রেণী পর্যন্ত বই সরকারী ভাবেই সরবরাহ করা ��য়। সাধারণ শিক্ষায় একটি বিদেশী ভাষা- ইংরেজী। শিক্ষার্থীরা সাধারণত এ বিষয়ে ফলাফল খারাপ করে থাকে। অপর দিকে মাদরাসা শিক্ষার্থী ইংরেজীর পাশাপাশি আরো একটি বিদেশী ভাষা আরবী শিখতে হয়। দু’টি বিদেশী ভাষার মুখোমুখী হওয়ার পরও মাদ্রাসার ছাত্ররা বরাবরই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে সাধারণ শিক্ষার ফলাফল থেকে ভালো করছে। সাধারণ শিক্ষায় বারংবার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও মাদ্রাসার ক্ষেত্রে তা দেখা য়ায় না। মাদ্রাসার পাঠ্য বিষয় সাধারণ শিক্ষার তুলনায় বেশি। এইচ.এস.সি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রকে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়, একই সমমানের মাদ্রাসা ছাত্রকে ১৭০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। মাদ্রাসায় মান সম্মত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার বড় উদাহরণ হল বিশ^বিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। বিগত কয়েক বছরের ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যাবে অধিকাংশ বছরই মাদ্রাসা ছাত্র প্রথম স্থান সহ অনেক গুলো শীর্ষ স্থান দখল করেছে। ২০০৮-০৯ শিক্ষা বর্ষে “খ” ইউনিটে ২য় স্থান অধিকারী মাদরাসা ছাত্র আবদুল খালেক। সে বছর মেধা তালিকার প্রথম দশজনের চারজনই মাদ্রাসার ছাত্র। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে “খ” ইউনিটে প্রথম হন মাদ্রাসা ছাত্র আবদুল আলীম, ২য় হন মাদ্রাসার ছাত্র সেলিমুল কাদের, ৩য়, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ১০ম, ১৭তম, ১৮তম হন মাদ্রাসার ছাত্র, একই বছর “ঘ” ইউনিটে প্রথম মাদ্রাসার ছাত্রী এলিছ জাহান, ২য় মাদ্রাসার ছাত্র মিজানুল হক, ৪র্থ ও ১১তম হন মাদ্রাসার ছাত্র। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে “খ” ইউনিটে ১ম স্থান হন মাদ্রাসার ছাত্র মাসরুর বিন আনসারী, ২য়, ৪র্থ, ৫ম, ১৬তম, ১৭ তম, ১৮তম হন মাদ্রাসার ছাত্ররা। একই বছর “ঘ” ইউনিটে প্রথম মাদ্রসার ছাত্র আসাদুজ্জামান, ২য় স্থান ও দখল করে মাদ্রাসার ছাত্র। এরপর মাদ্রাসার ছাত্ররা যেন প্রতিযোগিতা করতে না পারে তার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০০ নম্বর করে বাংলা ইংরেজী সিলেবাসে থাকার শর্ত করে দেয়। এতদিন মাদ্রাসায় আরবী প্রাধান্য থাকায় ১০০ নম্বর করে বাংলা ইংরেজী ছিল। ১০০ নম্বর পড়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা ২০০ নম্বর পড়–ুয়া স্কুল কলেজ ছাত্রদের থেকে মেধায় এগিয়ে থাকার প্রমাণ দিলেও শর্তারোপের কারণে বাধ্য হয়ে মাদ্রাসার মূল আরবী শিক্ষা কিছুটা সংকুচিত করে স্কুল কলেজের ন্যায় ২০০ নম্বর করে বাংলা ইংরেজী মাদ্রাসার সিলেবাসভুক্ত করা হয়। এরপর ও থেমে নেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অগ্রযাত্রা ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরিক্ষার ফলাফলে (পাশের হার ছিল ৯.৯৮) “ঘ” ইউনিটে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হন মাদ্রাসার ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন, মানবিক শাখা থেকে ১ম হন মাদ্রাসার ছাত্র রিফাত হোসেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে খ ইউনিটে প্রথম স্থান অধিকার করে মাদ্ররাসা ছাত্র আবদুল্লাহ মজুমদার। তাছাড়া মেধা তালিকায় স্থান নেয়া সাধারণ শিক্ষার অনেকে এস.এস.সি পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়ে কলেজে ভর্তি হয়ে এইচ.এস.সি পাশ করা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাস্থান প্রাপ্তদের গড়ে সকল বোর্ডে ভাগ করে দিলে মাদ্রাসা বোর্ড পাবে প্রায় ৫ জন, বাকীদের ভাগে গড়ে ১ জন করে ও পড়বেনা। এভাবে মেধার পরিচয় দেয়ার পরও উচ্চ শিক্ষিত সংকীর্ণমনা কিছু ব্যাক্তির কারণে ভর্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাদ্রারাসা ছাত্র বিরুপতার শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অবদান রাখলেও বাস্তবতায় সাধারণ শিক্ষায় সরকারের সাহায্যের তুলনায় তা একেবারে নগণ্য। আপনি যে কোন ইউনিয়ন পর্যায়ের একটি স্কুলে গিয়ে তাদের সরকার প্রদত্ত অবকাঠামো এবং একই ইউনিয়নের একটি মাদ্রাসায় গিয়ে তাদের জন্য সরকারের প্রদত্ত অবকাঠামো, উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে একটি কলেজের অবকাঠামো ও একই স্থানের সমমানের মাদ্রাসার অবকাঠামোর দিকে তাকালে ���া বুঝতে মোটেও অসুবিধা হবে না। একটি ডিগ্রি কলেজে ইন্টার ১ম, ২য় বর্ষ, ডিগ্রি ১ম, ২য়, ৩য় বর্ষ মোট মৌলিক শ্রেণী ৫টি, অপরদিকে ১টি ডিগ্রি মাদ্রাসা ১ম শ্রেণী থেকে ডিগ্রি ৩য় বর্ষ পর্যন্ত ১৫টি মৌলিক শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন। ভবন বরাদ্দে সে দিকটি বিবেচনা করা হয় না। ১৯৯৪ ইং সনে একই পরিপত্রে স্বতন্ত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা গড়ে ওঠে। বেতন ছিল মাসিক ৫০০ টাকা। ঐ প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকে প্রথমে বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত ও পরবর্তীতে সরকারি করণ করা হয়েছে। অপর দিকে ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকের বেতন ৫০০ টাকার স্থলে বর্তমান সরকার ১০০০ টাকা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে হয়তো বলা হবে- আমরা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করেছি। কিন্তু সে দ্বিগুণ বেতন একজন শিক্ষকের মাসিক ১০০০ টাকা হওয়া উপহাঁস ছাড়া আর কিছু কি? তাদেরকে সংযুক্ত ইবতেদায়ীর সমস্কেলে নিলে ও ইজ্জত কিছুটা রক্ষা পেত। দেশে হাজার হাজার সরকারি স্কুল কলেজ রয়েছে অথচ সরকারি মাদ্রাসা রয়েছে মাত্র ০৩ টি। বর্তমান সরকার ছয়শতাধিক স্কুল কলেজকে নতুন করে সরকারি করণের ঘোষনা দিলে ও একটি মাদ্রাসাকে ও সরকারি করণের ঘোষনা অদ্যাবধি দেয়া হয়নি। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে আমার জানা মতে মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা অথচ সাধারণ শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিশ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশী, এদেশে চাকুরীর বাজার খুবই সীমিত। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় তারা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য আমাদের বিশাল শ্রম বাজার। বৈদেশিক মুদ্রা যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে তার সিংহভাগ আসছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা আরবী, আরবী জানা ব্যতীত সেখানে গিয়ে ভালো চাকুরী ও বেতন পাওয়া কঠিন। ভাষা শিখতে শিখতে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্ররা ব্যতিক্রম, তারা সহজে ভাষা আয়ত্ব করে নেয়। এজন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গের অনেক হিন্দু ছেলে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবী শিখছে। তারা আরবী ভাষা আয়ত্ব করে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে চাকুরী করবে। এক সময় জঙ্গী বলতে মাদ্রাসার ছাত্রদের দিকে অভিযোগের আংগুল তোলা হত। সে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত করে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা মসজিদে জুমার খুতবায়, শ্রেণী কক্ষে, বিভিন্ন সভা সমাবেশে, কোরআন ও হাদিসের আলোকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করছে। এভাবে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা মেধার ক্ষেত্রে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে, জঙ্গিমুক্ত জাতি গঠনের ক্ষেত্রে অবদান রাখার পর ও সাধারণ শিক্ষার তুলনায় সুযোগ সুবিধা কম পাওয়া দুঃখজনক। বর্তমান সরকার আরবী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কওমী মাদ্রাসা স্বীকৃতি প্রদান সহ মাদ্রাসার উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তবে সাধারণ শিক্ষার তুলনায় তা এখনো অনেক কম। আশা করি সরকারিকরণ, অবকাঠামোগত সুবিধা দান, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। [
0 notes
kazisaifuddin · 7 years ago
Text
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর হাজিরা
[Bengali translation of www.ziaislamic.com's article "Jibreel in the presence of the Holy Prophet Muhammad (Sallallahu alaihi wa sallam)"; translator: Kazi Saifuddin Hosain] মূল: জিয়া-ইসলামিক-ডট-কম অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[উৎসর্গ: পীর ও মোর্শেদ সৈয়দ মওলানা এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ আল-কাদেরী আল-চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর পুণ্যস্মৃতিতে...] আরবী ও অনলাইন সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়াত বিন মূসা 
আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অন্যান্য সকল নবী আলাইহিস সালাম-এর চেয়ে মাহাত্ম্য, গুণাবলী, মো’জেযা (অলৌকিকত্ব) ও আধ্যাত্মিক মকাম তথা মর্যাদার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। তিনি এরশাদ ফরমান:
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِنْ بَعْدِهِمْ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَلَكِنِ اخْتَلَفُوا فَمِنْهُمْ مَنْ آمَنَ وَمِنْهُمْ مَنْ كَفَرَ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
-          “এঁরা রাসূল, আমি তাঁদের মধ্যে এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠ করেছি। তাঁদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কেউ এমনও আছেন যাঁকে (অর্থাৎ, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে) সবার ওপর মর্যাদাসমূহে উন্নীত করেছি। আর আমি মরিয়ম-তনয় ঈসাকে স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ প্রদান করেছি; এবং পবিত্র রূহ দ্বারা তাঁকে সাহায্য করেছি; আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের পরবর্তীরা পরস্পর যুদ্ধ করতো না তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনগুলো আসার পর; কিন্তু তারা তো পরস্পর বিরোধকারী হয়ে গিয়েছে (নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছা যা তাদেরকে দান করা হয়েছিল এবং যার জন্যে তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে, তারই বশবর্তী হয়ে)। তাদের মধ্যে কেউ ঈমানের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রইলো এবং কেউ কাফের হয়ে গেল; আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত হতো না; কিন্তু আল্রাহ যা চান করে থাকেন।” ১
ফেরেশতাকুল-সহ সকল সৃষ্টি-ই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত আমাদের ঈমান ও আকীদা-বিশ্বাসের অনস্বীকার্য দিক হলো অন্তরে এই প্রত্যয় পোষণ করা যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই বিশ্বজগত ও এর তাবৎ বস্তু সৃষ্টির মূল উপলক্ষ এবং এগুলোর অস্তিত্বের (একমাত্র) কারণ। সমস্ত সৃষ্টিজগত, যা’তে অন্তর্ভুক্ত ফেরেশতাকুল-ও, তাঁরই উম্মত বলে সহীহ মুসলিম শরীফে ব��্ণিত হয়েছে; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান:
وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً، وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ
- “আর আমি সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে এবং নবুওয়্যতের ক্রমধারা উপলক্ষে প্রেরিত হয়েছি।” ২
মোল্লা আলী কারী এই হাদীসের ব্যাখ্যায় তাঁর কৃত ‘মেরকাত শরহে মেশকাত’ গ্রন্থে লেখেন: অর্থাৎ,
أَيْ: إِلَى الْمَوْجُودَاتِ بِأَسْرِهَا عَامَّةً مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ الْمَلَكِ وَالْحَيَوَانَاتِ وَالْجَمَادَاتِ،
 - আমি সমগ্র বিশ্বজগত, জ্বিন-ইনসান, ফেরেশতা, পশুপাখি ও জড় পদার্থের জন্যে রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।৩ আল্লাহতা’লা তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহিমা ও উচ্চ মকাম/মর্যাদা বর্ণনা করেছেন এবং উম্মতে মোহাম্মদীকে আদেশ করেছেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে, যেমনটি এরশাদ হয়েছে সূরা ফাতাহ’তে –
لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
- “যাতে ওহে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান আনো এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহত্ত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করো, আর সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করো।”৪ পুণ্যাত্মা জ্বিন ও ইনসান, ফেরেশতা ও সকল সৃষ্টি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন। এ কথা ধারণাও করা যায় না যে ফেরেশতাকুল, বিশেষ করে তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম কোনোভাবেই হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হবেন। আল্লাহতা’লা সূরা তাহরীমে এরশাদ ফরমান:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
“হে ঈমানদারবর্গ! নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে ওই আগুন থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হচ্ছে মানুষ ও পাথর, যার ওপর শক্তিশালী ও কঠোর ফেরেশতাবৃন্দ নিয়োজিত রয়েছেন, যারা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেন না এবং যা তাদের প্রতি আদেশ হয়, তা-ই করেন।”৫ আল্লাহতা’লা জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম-কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেবক/খেদমতগার বানিয়েছিলেন। তাঁকে সৃষ্টি-ই করা হয়েছিল শুধুমাত্র প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করার উদ্দেশ্যে। ইমাম ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি শায়খ আবদুল আযীয দাব্বাগ রহমতুল্লাহি আলাইহি-কে উদ্ধৃত করে লেখেন: হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম-কে যা যা উচ্চ মকাম বা মর্যাদা (খোদাতা’লার পক্ষ থেকে) মঞ্জুর করা হয়েছিল, তার সবই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতা বা সম্পর্ক এবং হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তাঁর খেদমতের কারণেই মঞ্জুর করা হয়েছিল। জিবরীল আলাইহিস সালাম যদি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত না করে সারা জীবন কাটিয়ে দিতেন এবং আপন শক্তি ব্যয়ে ওই সব উচ্চ আধ্যাত্মিক মকামগুলো অর্জনের সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন, তবু নিজ হতে তিনি ওগুলোর একটি মকাম-ও অর্জন করতে সক্ষম হতেন না। তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে যা যা (খোদায়ী) আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছেন, সেগুলো সম্পর্কে শুধু তিনি-ই জানেন, আর জানেন সেসব পুণ্যাত্মা, যাঁদের জন্যে খোদাতা’লা তাঁর মা’রেফতের (তথা খোদার ভেদের রহস্যপূর্ণ জ্ঞানের) দরজাগুলো খুলে দিয়েছেন। হযরত আবদুল আযীয দাব্বাগ রহমতুল্লাহি আলাইহি আরও বলেন: জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম-কে সৃষ্টি করা হয়েছে শুধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সেবা করার জন্যে, আর তাই তিনি তাঁর গোটা সত্তা দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সমর্থন যুগিয়েছেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রহমত (করুণাধারা) হতে জিবরীল আলাইহিস সালাম লাভবান  ইমাম কাজী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রধান রচনা-কর্ম ‘শেফা শরীফ’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে তিনি লেখেন:
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِجِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ: «هَلْ أَصَابَكَ مِنْ هَذِهِ الرَّحْمَةِ شَيْءٌ قَالَ: «نَعَمْ، كُنْتُ أَخْشَى الْعَاقِبَةَ فَأَمِنْتُ لِثَنَاءِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلَيَّ بِقَوْلِهِ «ذِي قُوَّةٍ عِنْدَ ذِي الْعَرْشِ مَكِينٍ، مُطاعٍ ثَمَّ أَمِينٍ .
- বর্ণিত আছে যে ��হানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম-কে বলেছিলেন, আমার বিশেষ রহমত হতে আপনি কি কোনো কিছু প্রাপ্ত হয়েছেন? জবাবে জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, জ্বি হ্যাঁ, আমি আমার ভাগ্য (পরিণতি) সম্পর্কে শংকিত ছিলাম। কিন্তু আমি এখন নিশ্চিন্ত। কেননা, আপনার কারণেই আল্লাহ আমার ব্যাপারে বলেন:
مُطَاعٍ ثَمَّ أَمِينٍ
- “যে (সত্তা তথা জিবরীল) শক্তিশালী (সত্যের প্রতি আহ্বানে, খোদার বাণী পৌঁছে দেয়ার বেলায় এবং আধ্যাত্মিক যোগ্যতায়), আরশ অধিপতির দরবারে সম্মানিত (গৌরব ও মহিমায়), সেখানে তার আদেশ পালন করা হয়, (যে) আমানতদার।” ৬ 
আধ্যাত্মিক জগতে জিবরীল আলাইহিস সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উজির  আল্লাহ পাক হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সেবক-ই কেবল বানান নি, বরং আধ্যাত্মিক জগতে তাঁকে তাঁর উজির-ও বানিয়েছেন। ইমাম হাকীম নিশাপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘মোস্তাদরাক’ কেতাবে এই প্রসঙ্গে ইমাম বোখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সূত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন:
إِنَّ لِي وَزِيرَيْنِ مِنْ أَهْلِ السَّمَاءِ ، وَوَزِيرَيْنِ مِنْ أَهْلِ الْأَرْضِ ، فَأَمَّا وَزِيرَايَ مِنْ أَهْلِ السَّمَاءِ: فَجَبْرَائِيلُ ، وَمِيكَائِيلُ ، وَأَمَّا وَزِيرَايَ مِنْ أَهْلِ الْأَرْضِ: فَأَبُو بَكْرٍ ، وَعُمَرُ "
- হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর সূত্রে বর্ণনা করা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আধ্যাত্মিক জগতে আমার দু’জন উজির এবং এই দুনিয়ায় দু’জন উজির আছেন। আধ্যাত্মিক জগতে দু’জন হলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম ও মিকাইল; আর দুনিয়ায় দু’জন হলেন আবূ বকর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।৭
এই হাদীসটি শব্দচয়নে সামান্য পরিবর্তনসহ অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘মোস্তাদরাক’ গ্রন্থের ২টি জায়গায় এর উল্লেখ করেন; আরও উল্লেখ করেন ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘জামেউ তিরমিযী’ পুস্তকের এক জায়গায়, ইমাম সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘জামেউল আহাদীস ওয়াল মারাসীল’ গ্রন্থের পাঁচ স্থানে, ‘কানযুল উম্মাল’ কেতাবের চার জায়গায় এবং ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘ফাযাইলে সাহাবা’ পুস্তকের এক স্থানে। হযরত শায়খুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মদ আনওয়ারুল্লাহ ফারূকী রহমতুল্লাহি আলাইহি এই হাদীসের ব্যাখ্যায় লেখেন: ফেরেশতাকুলের মধ্যে জিবরীল আলাইহিস সালাম ও মিকাইলের মতো দু’জন উজির আসমানে, আর দু’জন উজির জমিনে থাকলে এই বিষয়ে কি কোনো সন্দেহ আছে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসমানী জগত ও পার্থিব জগতের (অবিসংবাদিত) সুলতান তথা সম্রাট?  মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষক আল্লাহতা’লা, কোনোভাবেই জিবরীল আলাইহিস সালাম নন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সৃষ্টিকুলের মাঝে (আল্লাহতা’লার) সর্বপ্রথম সৃষ্টি। বিশ্বজগতের স্রষ্টা যা ঘটে গিয়েছে এবং যা ঘটবে, এসব বিষয় সম্পর্কে সমস্ত জ্ঞান তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাঁকে সমগ্র বিশ্বজগতের শিক্ষক বানিয়েছেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই জগতের কারো কাছ থেকে কখনোই কোনো কিছু শেখেননি। স্বয়ং আল্লাহতা’লা-ই তাঁকে সর্বপ্রকারের জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহতা’লা কুরআন মজীদের সূরা আর-রহমানের মধ্যে এরশাদ ফরমান:
الرَّحْمَنُ (1) عَلَّمَ الْقُرْآنَ (2) خَلَقَ الْإِنْسَانَ (3) عَلَّمَهُ الْبَيَانَ (4)
- “পরম দয়ালু (আল্লাহ), যিনি আপন মাহবূব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। মানবতার প্রাণ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-কে সৃষ্টি করেছেন; যা সৃষ্ট হয়েছে এবং যা সৃষ্টি করা হবে সব কিছুর (মা কানা ওয়া মা এয়াকূনু) সুস্পষ্ট বিবরণ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন।”৮ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষক হলেন খোদ খোদাতা’লা-ই। হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম আল্লাহর যে সমস্ত বাণী হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে এসেছিলেন, তা তিনি একজন সেবক ও প্রতিনিধি হিসেবেই এনেছিলেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর কাজ ছিল আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়া। কিন্তু এর অর্থ, অন্তর্নিহিত মর্ম এবং গুরুত্ব ও তাৎপর্য স্বয়ং আল্লাহ পাক-ই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিখিয়েছিলেন। অতএব, জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর প্রতি ‘শিক্ষা’ শব্দটি যেখানে আরোপ করা হয়েছে, সেখানে এর মানে এই নয় যে তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে শিক্ষা দিয়েছেন, বরং এর মানে তিনি আল্লাহর কালাম (বাণী) পৌঁছে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে, এর আক্ষরিক অর্থে যদি একে বিশ্বাস করা হয়, তাহলে জিবরীল আলাইহিস সালাম-কেই ’প্রকৃত শিক্ষক’ বলে স্বীকার করে নিতে হবে; কিন্তু স্রষ্টা ও সৃষ্টি উভয় তো একই সময়ে প্রকৃত শিক্ষক হতে পারেন না। আল্লাহ পাক (ওপরোক্ত আয়াতে করীমায়) প্রকৃত শিক্ষক হওয়ার বিষয়টি নিজের প্রতি আরোপ করে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত ফয়সালা দিয়েছেন। তিনি আরও এরশাদ করেন:
إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ
“নিশ্চয় সেটি (কুরআন মজীদ) সংরক্ষিত করা (আপনার পবিত্র বক্ষে) এবং পাঠ করা (আপনার পবিত্র জিহ্বায়) আমারই দায়িত্বে।”৯
ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ
 - একই (কেয়ামাহ) সূরায় আরও এরশাদ হয়েছে, “অতঃপর নিশ্চয় এর সূক্ষ্ম বিষয়াদি আপনার কাছে প্রকাশ করা আমার দায়িত্ব।” ১০
سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسَى
সূরা আল-আ’লায় আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান, “হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এক্ষণে আমি আপনাকে পড়াবো (শেখাবো এমন পন্থায়), যার ফলে আপনি (কখনো) ভুলবেন না।” ১১ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শিক্ষার দিকে ইঙ্গিত করে হাদীস শরীফে এরশাদ ফরমান: “নিশ্চয় আল্লাহতা’লা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং গড়ে তুলেছেন এবং তা তিনি সর্বোত্তম পন্থায়-ই করেছেন।”১২ তাফসীরে রূহুল বয়ানে বলা হয়
ان جبريل عليه السلام نزل بقوله تعالى كهيعص فلما قال كاف قال النبي عليه السلام (علمت) فقال ها فقال (علمت) فقال يا فقال (علمت) فقال عين فقال (علمت) فقال صاد فقال (علمت) فقال جبريل كيف علمت ما لم اعلم
 , “একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন সূরা মরিয়মের ‘কা....ফ, হা..., ইয়া..., আঈ...ন, সোয়া...দ’ আয়াতটি (১৯:০১) নিয়ে আসেন এবং তেলাওয়াত করেন, তখন হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, ‘কা..ফ’; এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, ‘হা..’, আর নবীয়্যে মকবূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল আলাইহিস সালাম আবার বলেন, ‘ইয়া...’, এবারও বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ অতঃপর জিবরীলআলাইহিস সালাম বলেন, ‘আঈ..ন’, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ জিবরীল আলাইহিস সালাম এরপর বলেন, ‘সোয়া..দ’, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এর অর্থ ও উদ্দেশ্য জানি।’ “জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম আরয করেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এই কী মহিমা আপনার! আমি নিজেই এর অর্থ জানি না, অথচ আপনি তা জানেন’!” ওপরের উদ্ধৃতিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম কোনোভাবেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শিক্ষক ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন ওহী (ঐশী বাণী)-এর বাহক ও (খোদাতা’লার) প্রতিনিধি এবং বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর  সেবক ও উজির। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে জিবরীল আলাইহিস সালাম ৪২০০০০ বার হাজিরা দেন  ইমাম মুহাম্মদ ফাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘মাতালি’উল মাসসাররাত’ পুস্তকের ৩২২ পৃষ্ঠায় শায়খ আবূ আব্দুল্লাহ রচিত ‘লাফযুদ্ দুররি বি-আমলিল কাফফ’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন: “এর মানে হচ্ছে হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম ৪২০,০০০ বার বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজিরা দিয়েছেন। প্রতিবারই তিনি যথাযথ আদবের সাথে হাজির হন এবং হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে অবস্থান করেন।” মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজিরার জন্যে তাঁর কাছে জিবরীল (অা:)-এর অনুমতি প্রার্থনা  জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে যতোবার হাজির হয়েছেন, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভক্তি ও সম্মান প্রদর্শনের মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেছেন। সম্মানার্থে তিনি কখনো হঠাৎ করে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসতেন না, বরং তিনি বারবার তাঁর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করতেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি দিলেই কেবল তিনি তাঁর কাছে এসে হাঁটুর সামনে হাঁটু রেখে সমান্তরালভাবে বসতেন। বস্তুতঃ এই ধরনের বর্ণনাসম্বলিত অনেক হাদীস ‘সিহাহ’, ‘সুনান’ জাতীয় বিভিন্ন হাদীসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। নমুনাস্বরূপ এ ধরনের একখানা হাদীস নিচে উদ্ধৃত হলো:
فَأَتَيْنَا عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ فَقَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ جَيِّدُ الثِّيَابِ، طَيِّبُ الرِّيحِ، حَسَنُ الْوَجْهِ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «وَعَلَيْكَ» ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَدْنُو مِنْكَ؟ قَالَ: «ادْنُ»
- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার আমর�� মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তাঁর দরবারে সুন্দর চেহারাবিশিষ্ট, সুগন্ধিময় ��েহসৌষ্ঠবসম্পন্ন ও পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধানরত এক ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। তিনি এসে আরয করেন, আস্ সালামু আলাইকুম, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি কাছে আসতে পারি? হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাছে আসুন। ওই ব্যক্তি কিছুটা কাছে আসেন। এভাবে তিনি বারংবার কাছে আসার অনুমতি চাইতে থাকেন এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আরও কাছে এসে বসেন।১৪ ’মুসনদে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল’ গ্রন্থে এই হাদীসটির শব্দচয়নে সামান্য রদবদল আছে:
فَجَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ ، أَدْنُو ؟ فَقَالَ : ادْنُهْ فَدَنَا رَتْوَةً ، ثُمَّ قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ ، أَدْنُو ؟ فَقَالَ : ادْنُهْ
জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, আস্ সালামু আলাইকুম, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দেন, ওয়া আলাইকুম আস্ সালাম। অতঃপর জিবরীল আলাইহিস সালাম আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি কি কাছে আসতে পারি? নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাছে আসুন।১৫ ’কানযুল উম্মাল’ গ্রন্থে কথাগুলো এভাবে লেখা হয়েছে: জিবরীল আলাইহিস সালাম আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি কি কাছে আসতে পারি? বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার কাছে আসুন।১৬
أتاه فقال: أنت رسول الله قال نعم قال أدنو منك؟ قال ادن مني
‘সুনানে নাসাঈ’ কেতাবে বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে এভাবে
حَتَّى سَلَّمَ فِي طَرَفِ الْبِسَاطِ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا مُحَمَّدُ، فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلَامُ، قَالَ: أَدْنُو يَا مُحَمَّدُ، قَالَ: «ادْنُهْ» فَمَا زَالَ يَقُولُ: أَدْنُو مِرَارًا، وَيَقُولُ لَهُ: «ادْنُ»
- জিবরীল আলাইহিস সালাম মেঝের ওপর বিছানো ফরাশের প্রান্তসীমায় এসে আরয করেন, হে সকল প্রশংসার যোগ্য অধিকারী (অর্থাৎ, তাঁর নাম মোবারককেও প্রশংসার আকারে উল্লেখ করা হয়েছে এখানে)! আস্ সালামু আলাইকুম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সালামের প্রত্যুত্তর দিলে জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, এয়া মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম), আমি কি আপনার কাছে আসতে পারি? হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কাছে আসুন। জিবরীল আলাইহিস সালাম বারংবার কাছে আসার অনুরোধ করতে থাকেন, আর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ও তা বারংবার মঞ্জুর করতে থাকেন।১৭
’মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল’ ও ’সুনানে বায়হাকী’ গ্রন্থগুলোতে তা বর্ণিত হয়েছে এভাবে: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি কি আপনার দরবারে প্রবেশ করতে পারি? ’মুসনদে ইমাম আদহাম’ গ্রন্থের ভাষ্যকার এটি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: জিবরীল অামীন আলাইহিস সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্যে এ উপায়ে অনুমতি চেয়েছেন, কেননা তিনি শঙ্কিত ছিলেন যে হঠাৎ কাছে এলে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি বেআদবি হতে পারে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে জিবরীল আলাইহিস সালাম কীভাবে শ্রদ্ধা ও সম্মান সহকারে হাজিরা দিতেন, তা এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাই। একইভাবে হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবার ত্যাগের আগে জিবরীল (অা:) যাতে তাঁর অনুমতি নেন, অনুমতি ও সম্মতি না নিয়ে যেন চলে না আসেন, সে ব্যাপারেও আল্লাহতা’লা ফেরেশতাকে নির্দেশ দিতেন। ‘হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুমতি না দিলে ফেরত এসো না’   সর্ব-হযরত ইবনে সাঅাদ ও আবূ শায়খ হতে হযরত কাজী সানাউল্লাহ পানিপথী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি একখানা হাদীস বর্ণনা করেন, যা’তে বিবৃত হয়: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের জ্বেহাদ শেষ করলে পরে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম একটি লাল ঘোড়ায় চড়ে বর্শা হাতে এবং বর্ম পরিহিত অবস্থায় তাঁর দরবারে আসেন; তিনি আরয করেন: হে মহা প্রশংসিত জন! এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ পাক আপনার দরবারে আমাকে পাঠিয়েছেন এবং আদেশ করেছেন আপনি রাজি না হওয়া পর্যন্ত আমি যেন আর (খোদার কাছে) ফেরত না যাই। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আমার প্রতি রাজি আছেন? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বলেন, হ্যাঁ, আমি আপনার প্রতি খুশি আছি। অতঃপর জিবরীল আলাইহিস সালাম [আল্লাহর কাছে] ফিরে যান। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর খেদমত হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম হলেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিশেষ একজন খাদেম ও দ্বাররক্ষী। তিনি হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সওয়ারের লাগাম ধরতেন, যেমনটি ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘মুসনদ-এ-শামিয়্যীন’ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ৬০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন:
قَالَ: كُنَّا إِذَا رَأَيْنَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ فِيمَا يُرْسِلُ إِلَيْهِ عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ مَرْوَانَ فَخَفَفْنَا لَهُ فَحَدَّثَنَا يَوْمًا قَالَ: غَزَوْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخَذْنَا فِي عَقَبَةٍ حَتَّى إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , ثُمَّ الْتَفَتَ إِلَيْنَا فَتَبَسَّمَ ثُمَّ سَارَ حَتَّى إِذَا كَانَ فِي وَسَطِهِ كَبَّرَ ثُمَّ الْتَفَتَ فَتَبَسَّمَ , ثُمَّ سَارَ حَتَّى أَسْهَلْنَا فَكَبَّرَ , ثُمَّ الْتَفَتَ فَجَعَلَ يَبْتَسِمُ , فَوَقَفَ حَتَّى إِذَا اجْتَمَعْنَا قَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ لِمَ كَبَّرْتُ وَجَعَلْتُ أَبْتَسِمُ إِلَيْكُمْ؟» قُلْنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ قَالَ: " إِنَّا لَمَّا أَخَذْنَا فِي الْعَقَبَةِ أَخَذَ جِبْرِيلُ بِزِمَامِ الرَّاحِلَةِ فَقَالَ لِي: أَبْشِرْ يَا مُحَمَّدُ وَبَشِّرِ أُمَّتَكَ أَنَّهُ مَنْ مَاتَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ , وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ فَكَبَّرْتُ , ثُمَّ الْتَفَتُ إِلَيْكُمْ , ثُمَّ تَبَسَّمْتُ , ثُمَّ سَارَ سَاعَةً , وَقَالَ: أَبْشِرْ يَا مُحَمَّدُ وَبَشِّرْ أُمَّتَكَ أَنَّهُ مَنْ جَاءِ مِنْكُمْ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ فَكَبَّرْتُ وَالْتَفَتَ إِلَيْكُمْ فَتَبَسَّمْتُ , ثُمَّ سَارَ حَتَّى إِذَا سَهَلْنَا قَالَ: أَبْشِرْ يَا مُحَمَّدُ وَبَشِّرْ أُمَّتَكَ مَنْ مَاتَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ النَّارَ "
- হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, কোনো এক যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম। ওই সময় একটি উপত্যকার দিকে এগিয়ে চলেছিলাম আমরা। (উপত্যকার পাহাড়ে) আরোহণ আরম্ভ করার সময় হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘তাকবীর’ (আল্লাহু আকবর) বলেন এবং আমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসেন, অতঃপর অগ্রসর হতে থাকেন। উপত্যকার মাঝামাঝি পৌঁছুলে পরে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও ‘তাকবীর’ বলেন এবং আমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসেন, অতঃপর আবারও অগ্রসর হতে থাকেন। আমরা গোটা উপত্যকা যখন পার হয়ে যাই, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় তাকবীর বলেন, আমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসেন এবং থেমে যান। আমরা তাঁর চারপাশে জড়ো হলে তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করেন, আমি কেন তাকবীর বলেছি এবং তোমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হেসেছি, তা কি তোমরা জানো? আমরা আরয করি, আল্লাহতা’লা ��� তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই আমাদের চেয়ে ভাল জানেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমতাবস্থায় এরশাদ ফরমান, আমরা যখন উপত্যকায় আরোহণ করছিলাম, তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার ঘোড়ার লাগাম তাঁর হাতে ধরে রেখেছিলেন। তিনি আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আপনার উম্মতকে এই খোশ-খবরী দিন, কেউ যদি সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বূদ বা উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম তাঁর হাবীব ও রাসূল, আর এই সাক্ষ্যের ওপরই যদি তার ইন্তেকাল হয়, তবে আল্লাহতা’লা তাকে অবশ্যই জান্নাত দান করবেন। আমি (এ কথা শুনে) তাকবীর বলি এবং তোমাদের দিকে ফিরে (স্মিত) হাসি। জিবরীল আলাইহিস সালাম লাগাম হাতে নিয়ে হাঁটতে থাকেন। কিছু সময় পরে জিবরীল আলাইহিস সালাম আবার আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অনুগ্রহ করে এই খোশ-খবরী গ্রহণ করুন এবং আপনার উম্মতকে জানান, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ভিন্ন কোনো মা’বূদ বা উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম হলেন তাঁর প্রেরিত রাসূল, তবে আল্লাহতা’লা তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। আমি (একথা শুনে) তাকবীর বলি এবং তোমাদের দিকে তাকিয়ে (স্মিত) হাসি। জিবরীল আলাইহিস সালাম ওই সময় হাঁটতে থাকেন। আমরা গোটা উপত্যকা পার হয়ে সমতল ভূমিতে এসে পড়লে তিনি আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অনুগ্রহ করে এই খোশ-খবরী গ্রহণ করুন এবং আপনার উম্মতকে জানান, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বূদ বা উপাস্য নেই এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম হলেন তাঁর প্রেরিত রাসূল, আর এই সাক্ষ্যের ওপরই যদি তার ইন্তেকাল হয়, তবে আল্লাহ পাক তার জন্যে জাহান্নাম নিষিদ্ধ করে দেবেন।
আল্লাহতা’লা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে প্রেরণ করেন তাঁকে সম্মান করার উদ্দেশ্যে   প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বেসাল তথা আল্লাহর সাথে পরলোকে মিলিত হওয়ার কিছুদিন আগে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হন। আত্ তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া গ্রন্থগুলোতে এতদসংক্রান্ত বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে, যা নিম্নরূপ:
عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ: لَمَّا كَانَ قَبْلَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، هَبَطَ عَلَيْهِ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ إِكْرَامًا لَكَ، وَتَفْضِيلًا لَكَ، وَخَاصَّةً لَكَ، أَسْأَلُكَ عَمَّا هُوَ أَعْلَمُ بِهِ مِنْكَ، يَقُولُ: كَيْفَ تَجِدُكَ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَجِدُنِي يَا جِبْرِيلُ مَغْمُومًا، وَأَجِدُنِي يَا جِبْرِيلُ مَكْرُوبًا» . قَالَ: فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الثَّالِثُ هَبَطَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَهَبَطَ مَلَكُ الْمَوْتِ عَلَيْهِمَا السَّلَامُ، وَهَبَطَ مَعَهُمَا مَلَكٌ فِي الْهَوَاءِ يُقَالُ لَهُ إِسْمَاعِيلُ عَلَى سَبْعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ، لَيْسَ فِيهِمْ مَلَكٌ إِلَّا عَلَى سَبْعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ، يُشَيِّعُهُمْ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ إِكْرَامًا لَكَ، وَتَفْضِيلًا لَكَ، وَخَاصَّةً لَكَ، أَسْأَلُكَ عَمَّا هُوَ أَعْلَمُ بِهِ مِنْكَ، يَقُولُ: كَيْفَ تَجِدُكُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَجِدُنِي يَا جِبْرِيلُ مَغْمُومًا، وَأَجِدُنِي يَا جِبْرِيلُ مَكْرُوبًا» . قَالَ: فَاسْتَأْذَنَ مَلَكُ الْمَوْتِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْبَابِ، فَقَالَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ: يَا مُحَمَّدُ، هَذَا مَلَكُ الْمَوْتِ يَسْتَأْذِنُ عَلَيْكَ، مَا اسْتَأْذَنَ عَلَى آدَمِيٍّ قَبْلَكَ، وَلَا يَسْتَأْذِنُ عَلَى آدَمِيٍّ بَعْدَكَ. فَقَالَ: ائْذَنْ لَهُ. فَأَذِنَ لَهُ جِبْرِيلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَقْبَلَ حَتَّى وَقَفَ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ، وَأَمَرَنِي أَنْ أُطِيعَكَ فِيمَا أَمَرْتَنِي بِهِ، إِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَقْبِضَ نَفْسَكَ قَبَضْتُهَا، وَإِنْ كَرِهْتَ تَرَكْتُهَا. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَتَفْعَلُ يَا مَلَكَ الْمَوْتِ؟» قَالَ: نَعَمْ، وَبِذَلِكَ أُم��رْتُ أَنْ أُطِيعَكَ فِيمَا أَمَرْتَنِي بِهِ. فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ؟ عَلَيْهِ السَّلَامُ: إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدِ اشْتَاقَ إِلَى لِقَائِكَ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «امْضِ لِمَا أُمِرْتَ بِهِ» . فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ: هَذَا آخِرُ وَطْأَتِي الْأَرْضَ،
হযরত আলী ইবনে হুসাইন রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর সূত্রে বর্ণিত; তিনি তাঁর পিতা হতে শুনেছেন যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বেসালের তিনদিন আগে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম তাঁর দরবারে হাজির হয়ে আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আল্লাহ পাক আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে এবং আপনারই খেদমত করতে আমাকে বিশেষভাবে পাঠিয়েছেন। এ কথা বলার পর জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসুখের ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। আজরাইল ফেরেশতা হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন। এ সময় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, ইনি আজরাঈল ফেরেশতা, জান কবজকারী; আপনার সামনে হাজির হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছেন। ইতিপূর্বে তিনি কোনো নবী আলাইহিস সালাম-এর কাছে এই অনুমতি প্রার্থনা করেননি, আর ভবিষ্যতেও তিনি কোনো মানবের কাছে এ রকম অনুমতি চাইবেন না। এ কথা শুনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাঁকে অনুমতি দিন। আজরাঈল ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে প্রবেশ করে পরম শ্রদ্ধাভরে দণ্ডায়মান হন এবং আরয করেন, নিশ্চয় আল্লাহ পাক আমাকে আপনার কাছে প্রেরণ করেছেন এবং আপনার যে কোনো হুকুম তা’মিল করার জন্যে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। আপনি যদি আপনার পবিত্র রূহ মোবারককে গ্রহণ করার জন্যে আমায় আদেশ করেন, আমি তা করবো। আর যদি তা করতে আপনি আমায় বারণ করেন, তাহলে তা করা থেকে আমি বিরত হবো। এমতাবস্থায় জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)! নিশ্চয় আল্লাহতা’লা আপনার সাক্ষাৎ চান। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ওহে জান কবজকারী ফেরেশতা! তোমাকে যে কাজ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, তা সম্পন্ন করো। জিবরীল আলাইহিস সালাম ওই সময় বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এই বারই পৃথিবীতে আপনার কাছে আমার শেষবার ওহী নিয়ে আসা। এই পৃথিবীতে আপনি-ই শুধু আমার ....... এবং ......।১৯.
{অনুবাদকের জ্ঞাতব্য: ওপরের উদ্ধৃতিতে বাক্য মিসিং আছে। পাওয়া গেলে শূন্যস্থানে বসানো হবে। } জিবরীল আলাইহিস সালাম কর্তৃক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত মোবারক চুম্বন যোবদাতুল মোহাদ্দেসীন হযরত আবূল হাসানা’ত সাঈদ আবদুল্লাহ শাহ সাহেব নকশবন্দী মোজাদ্দেদী কাদেরী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘মীলাদনামা’ পুস্তকের ১৬২ পৃষ্ঠায় একখানা হাদীস উদ্ধৃত করেন: একবার হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম খুব উৎফুল্ল ছিলেন। তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’হাত মোবারক চুম্বন করছিলেন; আর তাঁর জুব্বা মোবারকের (আস্তিনে) মুখ ঘষছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ওহে জিবরীল, এটি কী? তিনি জবাবে বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অনুগ্রহ করে মিকাঈল ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করুন। এমতাবস্থায় মিকাঈল আলাইহিস সালাম বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার দরবারে হাজিরা দেয়ার আদেশ যখন আমাদের দেয়া না হয়, তখন আমরা অস্থির হয়ে যাই। আজ আমরা আল্লাহর কাছে হাজার হাজার বার প্রার্থনা করি (হাজিরার অনুমতি চেয়ে)। আমাদের এই বিনীত প্রার্থনা দেখে অন্যান্য ফেরেশতারা আমাদের প্রশ্ন করেন, ওহে জিবরীল ও মিকাঈল, কেন এই অস্থিরতা? আমরা জবাবে বলি, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সৌন্দর্যমণ্ডিত চেহারা মোবারক না দেখলে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারি না। আমরা কী করতে পারি? যেহেতু আজ আমরা সহস্র সহস্র আরজি পেশ করার পর আপনার দরবারে হাজিরা দেয়ার অনুমতি পেয়েছি, সেহেতু আমাদের এই উৎফুল্ল চিত্ত। জিবরীল আলাইহিস সালাম কর্তৃক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ের গোড়ালি চুম্বন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি পেশকৃত হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম-এর ভক্তিশ্রদ্ধার সেরা নিদর্শন আমরা মে’রাজ রাতে ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণের সময় দেখতে পাই। মোল্লা মুহাম্মদ মুঈন কাশফী হারাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি মে’রাজ সম্পর্কে একটি হাদীস শরীফ বর্ণনা করেন: দ্বিতীয় বিবরণটি জিবরীল আলাইহিস সালাম হতে; তিনি বলেন, আল্লাহতা’লার ওহী থেকে আমি জানতে পেরেছিলাম যে আমার দেহ জান্নাতের কর্পূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু আমি এর কারণ জানতাম না। মে’রাজ রাতেই (এর কারণ) আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হই। আমার নির্মলতা ও সূক্ষ্মতা সত্ত্বেও আমি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঘুম থেকে জাগাতে ইতস্ততঃ করছিলাম; কীভাবে জাগাবো তা নিয়ে আমি ছিলাম উদ্বিগ্ন। হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মোবারক পা ‍যুগলের গোড়ালিতে আমার মুখ ঘষতে আমায় আদেশ করা হয়। আমি তা করলে কর্পূরের শীতল পরশ (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের কদম মোবারকের) উষ্ণতার সাথে মিশে এবং তিনি সহজে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। ওই সময়-ই আমি অনুধাবন করতে পারি কেন আমাকে কর্পূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ২০ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে জিবরীল আলাইহিস সালাম ২১০০০০ ফেরেশতাসহ হাজির হন মে’রাজ রাতে জিবরীল আলাইহিস সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করার সৌভাগ্য লাভ করেন। এ বিষয়ে তাফসীরে রূহুল বয়ান পুস্তকের ৫ম খণ্ড, ১০৯ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ আছে: মে’রাজ রাতে জিবরীল আলাইহিস সালাম, মিকাঈল, ইসরাফিল ও আজরাঈল ফেরেশতা হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের-এর দরবারে হাজির হন। তাঁদের প্রত্যেকের সাথে ছিলেন ৭০০০০ ফেরেশতা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোরাকে আরোহণ করলে জিবরীল আলাইহিস সালাম লাগাম হাতে ধরেন, মিকাঈল ধরেন রেকাব, আর ইসরাফিল ধরেন জিন। ফেরেশতাবৃন্দ নিজেদের এবাদতের বদলে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতের সুযোগ পান যোবদাতুল মোহাদ্দেসীন হযরত আবূল হাসানাত শাহ নকশবন্দী কাদেরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ’মীলাদনামা’ পুস্তকে লেখেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান, আমি তাঁদের (ফেরেশতাদের) সেবায় বিব্রত বোধ করছিলাম, তাই তা বন্ধ করে দেই। ফেরেশতামণ্ডলী আরয করেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা এই খেদমতের দায়িত্ব নিয়েছি হাজার হাজার বছেরের এবাদত-বন্দেগীর বদলে। একদিন আল্লাহতা’লা আমাদের জিজ্ঞেস করেন, তোমরা এই এবাদত-বন্দেগীর পুরস্কার হিসেবে কী পেতে চাও? আমরা আরয করি, আরশে আপনার পবিত্র নামের পাশে যাঁর নাম মোবারক লেখা আছে, তাঁর খেদমত করার তৌফিক দিন। আল্লাহতা’লা এরপর এরশাদ ফরমান, তিনি (হুযূর পাক) ধরাধামে শুভাগমন করলে আমি তাঁকে মক্কা মোয়াযযমা থেকে বায়তুল মোকাদ্দেস পর্যন্ত নিয়ে যাবো। ওই ভ্রমণের সময় তোমাদেরকে তাঁর খেদমত করার অনুমতি দেবো আমি। ফেরেশতাকুল বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমরা এভাবেই এ খেদমতের সৌভাগ্য অর্জন করেছি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর জন্যে ‘ওয়াসতায়ে উযমা’ জিবরীল আলাইহিস সালাম সবসময়ই কীভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সন্তুষ্ট করবেন, তা নিয়ে চিন্তা করতেন। এই সূত্রেই শেষ বিচার দিবসে তিনি পুল-সিরাতের ওপর তাঁর ডানা বিছিয়ে দেয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন। তাঁর এই ইচ্ছা তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে পেশ করেন। মে’রাজ রাতে ঊর্ধ্বাকাশ ভ্রমণকালে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো বন্ধু কি তাঁর বন্ধুকে এ রকম এক জায়গায় পরিত্যাগ করতে পারেন? জিবরীল আলাইহিস সালাম জবাবে বলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি যদি আরেক কদম সামনে অগ্রসর হই, তবে আল্লাহতা’লার নূরের তাজাল্লীতে ভস্মিভূত হবো। অপর এক হাদীস শরীফে তা এভাবে বর্ণিত হয়েছে, যদি আমি এক আঙ্গুলের তালু পরিমাণ জায়গা অগ্রসর হই, তাহলে পুড়ে ছাই হয়ে যাবো। এমতাবস্থায় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আপনার কি কোনো প্রার্থনা আছে যা আপনি আল্লাহর কাছে পেশ করতে ইচ্ছুক? জিবরীল আলাইহিস সালাম উত্তর দেন, হে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আল্লাহর কাছে আমার এই আরজি পেশ করুন যে পুল-সিরাতে আমি যেন আমার ডানা বিছিয়ে দেয়ার অনুমতি পাই, যাতে আপনার উম্মত সহজে তা পার হতে পারেন। হযরত ইবরাহিম খলীলউল্লাহ আলাইহিস সালাম-এর প্রতি খেদমতের পুরস্কার মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করলেন দান  ইমাম যুরকানী মালেকী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজ ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’ পুস্তকে একটি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক হাদীস বর্ণনা করেছেন যা নিম্নরূপ: হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত; হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো (এবং শেখো), আমি তোমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবার আগেই। আমাকে জিজ্ঞেস করো সেই জ্ঞান সম্পর্কে যার খবর না জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর কাছে আছে, না মিকাঈলের। আল্লাহতা’লা মে’রাজ রাতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে সব জ্ঞান শিখিয়েছিলেন, তা থেকে হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার প্রভু খোদাতা’লা আমাকে বিভিন্ন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত আলী  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অতঃপর বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ কথা জানান এবং তিনি আরও বলেন, আমি ছিলাম হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম-এর মোবারক দেহের পিঠে অবস্থিত এক নূর (জ্যোতি)। নমরুদ যখন তাঁকে আগুনে ছুঁড়ে ফেলার উপক্রম, ঠিক তখন-ই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর কাছে আসেন এবং বলেন, ওহে খলীলউল্লাহ (আল্লাহর বন্ধু), আপনার কি কোনো (সাহায্যের) প্রয়োজন আছে? তিনি উত্তর দেন, ওহে জিবরীল আলাইহিস সালাম, আপনার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। জিবরীল আলাইহিস সালাম দ্বিতীয়বার আবার আসেন। এবার তাঁর সাথে মিকাঈল-ও ছিলেন। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বলেন, আপনার বা মিকাঈলের কারোরই প্রয়োজন নেই আমার। জিবরীল আলাইহিস সালাম তৃতীয়বার আবার এসে বলেন, আপনার প্রভু খোদাতা’লার কাছে কি আপনার কোনো গুজারিশ আছে? ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বলেন, ভাই জিবরীল আলাইহিস সালাম, বন্ধুর নিদর্শন হচ্ছে তাঁর বন্ধুর ইচ্ছা অমান্য না করা। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক আমার (মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের) জবান (মোবারক) খুলে দেন এবং আমি বলি, আমি যখন ধরাধামে আবির্ভূত হবো, আর আল্লাহ পাক আমাকে রেসালাতের উচ্চমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন, আর সকল আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম-এর ওপর আমাকে মহা সম্মানিত করবেন, তখন আমি আমার পিতা (পূর্বপুরুষ) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর প্রতি খেদমতের প্রতিদানস্বরূপ জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে পুরস্কৃত কর��ো। অতঃপর আমাকে আল্লাহতা’লা দুনিয়াতে পয়গম্বর হিসেবে প্রেরণের পর মে’রাজ রাত এলো। জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার দরবারে হাজির হলেন এবং আমার সাথে অবস্থান করলেন, যতোক্ষণ না এক বিশেষ স্থানে আমরা পৌঁছুলাম। সেখানেই তিনি থেমে গেলেন। আমি জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে জি��্ঞেস করলাম, এ রকম জায়গায় কি কোনো বন্ধু তাঁর বন্ধুকে পরিত্যাগ করেন? জিবরীল আলাইহিস সালাম উত্তরে বল্লেন, আমি যদি এ জায়গা হতে আরও অগ্রসর হই, তবে আল্লাহতা’লার নূরের তাজাল্লী আমাকে পুড়িয়ে খাক করে দেবে। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বল্লেন, ওহে জিবরীল আলাইহিস সালাম, আল্লাহতা’লার কাছে আপনার কি কোনো আবেদন আছে পৌঁছে দেয়ার? জিবরীল আলাইহিস সালাম জবাব দিলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অনুগ্রহ করে আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করুন যেন আমি আখেরাতে পুল-সিরাতের ওপর আমার ডানা মেলে ধরতে পারি, যাতে আপনার উম্মত সহজেই তা পার হয়ে যেতে পারেন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আশীর্বাদপ্রার্থী জিবরীল আলাইহিস সালাম   হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম যেভাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজিরা দেয়ার সময় আদব বজায় রাখার বিষয়টি (সবসময়) বিবেচনা করেছেন, ঠিক তেমনিভাবে হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘সিদরাতুল মোনতাহা’য় অধিষ্ঠানকেও তিনি তাঁর নিজের জন্যে আশীর্বাদ লাভের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করেন। মোল্লা মুঈন কাশফী হারাভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কৃত ‘মা’আরিজ-উন্-নবুওয়াহ’ পুস্তকে (এতদসংক্রান্ত) একটি হাদীসের উল্লেখ করেন: হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, হে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার একটি আরজি আছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমায় বলুন তা কী। জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেন, আমার (একান্ত) অনুরোধ, আপনি এখানে দু’রাক’আত নামায পড়ুন, যাতে আমার আবাসস্থল আপনার পবিত্র পায়ের ধুলো দ্বারা আশীর্বাদধন্য হয়। ২১ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সুরক্ষা চাইতে জিবরীল আলাইহিস সালাম আদিষ্ট   নুযহাতুল মাজালিস গ্রন্থে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নরূপ:
أوحى الله تعالى إلى جبريل قف على قدم العبودية واعترف بعز الربوبية وامرح في ميدان شكري واعلم عظم قدري فقد مننت عليك فاستمع بما يوحى إليك فقال يا رب أنت اللطيف وأنا العبد الضعيف فقال خذ علم الهداية وبراق العناية وخلعة القبول وطيلسان الرسالة ومنطقة الجلالة وانزل مع سبعون ألف ملك إلى محمد صلى الله عليه وسلم فقم ببابه ولذ بجنابه فأنت الليلة صاحب ركابه ويا ميكائيل خذ علم السؤال وانزل مع سبعين ألف ملك إلى باب حجرة الرسول صلى الله عليه وسلم ويا إسرافيل ويا عزرائيل افعلا كما فعل جبريل وميكائيل زد من نور الشمس على نور القمر أي ضوء القمر ومن القمر على نور الكواكب فقال يا رب أقرب قيام
আল্লাহতা’লা জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে আদেশ করেন, ওহে জিবরীল আলাইহিস সালাম! হেদায়াতের নিশান তথা পতাকা, কল্যাণের বোররাক, মহাসম্মানের পোশাক, নবুওয়্যতের আলখেল্লা ও (আধ্যাত্মিক) রাজসিকতার পাগড়ী (এমামা) নিয়ে ৭০০০০ ফেরেশতার মিছিলসহ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হও! তাঁর দ্বারে দাঁড়িয়ে তাঁরই সুরক্ষা প্রার্থনা করো। এ রাতে তোমাকে তাঁর ঘোড়ার লাগাম ধরতে হবে। ওহে মিকাঈল! তুমি (খোদায়ী) রেযামন্দির ঝাণ্ডা নিয়ে ৭০০০০ ফেরেশতার মিছিলসহ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হও! ওহে ইসরাফিল ও আজরাঈল! তোমরা দু’জন-ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি একই রকম খেদমত পেশ করো। ২২ ইমাম সৈয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর প্রণীত ‘খাসাইসুল্ কুবরা’ গ্রন্থে এবং ইমাম তাবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কৃত ‘মো’জাম-এ-আওসাত’ ও ‘মজমাউয্ যাওয়াইদ’ পুস্তকগুলোতে একখানা হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে যা বিবৃত করে: উম্মুল মো’মেনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন, আমি পূর্বদিক হতে পশ্চিমদিক পর্যন্ত চষে বেরিয়েছি, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো এতো বড় (সেরা) মহাত্মা কাউকেই খুঁজে পাইনি।২৩
’ফাহামাযানী বি কাদামিহী’ বাক্যটি সম্পর্কে গবেষণা মে’রাজ রাতে জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম-এর আসমান থেকে অবতরণ করে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসা পর্যন্ত এবং পুরো ভ্রমণকাল যাবত তিনি ছিলেন হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মূর্ত প্রতীক। তিনি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোড়ার লাগাম ধরে রাখেন। শ্রদ্ধা প্রদর্শনে সামান্যতম গাফিলতি-ও তাঁর তরফ থেকে হয়নি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে জিবরীল আলাইহিস সালাম আসেন আলতোভাবে পা ফেলে এবং তিনি হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র পায়ের গোড়ালিতে নিজ গণ্ড ঘর্ষণ করেন। এখানে উল্লেখ্য যে ’সীরাতে ইবনে হিশামের’ মতো কিছু সীরাহ (জীবনী) পুস্তকে ’ফাহামাযানী বি কাদামিহী’ বাক্যটি ব্যবহৃত হয়েছে। কিছু লোক এটিকে অনুবাদ করেছে এভাবে - ‘জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে (ঘুম থেকে) জাগাতে আমাকে লাথি মেরেছিলেন।’ এই অনুবাদ সম্পূর্ণ ভুল এবং যুক্তিপরিপন্থী; আর আমাদের কাছে যা নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত দ্বারা বর্ণিত হয়েছে তারও পরিপন্থী এটি। কোনো মুসলমান-ই এভাবে চিন্তা করতে পারেন না। কেননা, এটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একদম খেলাফ। আর এটি জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর মতো মহান ফেরেশতার প্রতি মিথ্যা অপবাদ-ও বটে। এ কারণেই এই বাক্যের ভাষাতত্ত্বগত গবেষণার অবতারণা করা হলো নিচে। প্রথমে যে বিষয়টি জানা দরকার তা হলো, আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিস সালাম-দেরকে এমন-ই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, যা দ্বারা জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন ’সিদরাহ’ থেকে অবতরণের প্রস্তুতি নেন, তখন এই দুনিয়াতে থেকেই তাঁরা তাঁর গন্ধ শুঁকতে পান এবং বুঝতে পারেন যে জিবরীল আলাইহিস সালাম অবতরণ করতে যাচ্ছেন। আল্লামা শেহাবউদ্দীন খাফফাজী নিজ ‘নাসীম আল-রিয়ায’ পুস্তকে লেখেন: সার কথা হলো, আম্বিয়া কেরাম আলাইহিমুস সালাম-বৃন্দের অন্তর (আধ্যাত্মিকতা) ও তাঁদের বোধশক্তি ফেরেশতাসদৃশ। এ কারণেই তাঁরা দুনিয়ার শেষ সময় পর্যন্ত যা যা ঘটবে তা তা (দিব্যদৃষ্টিতে) দেখতে পান, আসমানের ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ শুনতে পান এবং জিবরীল আলাইহিস সালাম আসমান থেকে অবতরণের সিদ্ধান্ত নিলে তাঁরা তাঁর গন্ধ শুঁকতে পান। ২৪ একই পুস্তকে কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াত, হাদীস শরীফ এবং ইমামবৃন্দের ও সাহাবা-এ-কেরাম মণ্ডলীর বাণী ও শরয়ী সিদ্ধান্ত দ্বারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে জিবরীল আলাইহিস সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পছন্দকৃত একজন সেবক। তাঁকে আল্লাহ পাক-ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়োগ করেছেন। তিনি এক চুল পরিমাণ-ও হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হতে বিচ্যুত হন না। অতএব, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঘুম থেকে জাগাতে এ রকম অশিষ্ট আচরণ তিনি করতে পারেন বলে কি কখনো ধারণাও করা যায়? ইসলাম হলো এমন এক ধর্ম, যেটি সভ্যতা-ভব্যতা শিক্ষা দেয়। একজন সাধারণ মুসলমানকেও এভাবে ঘ���ম থেকে জাগানো ইসলামী শিষ্টাচারের খেলাফ। আলোচ্য বাক্যটি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ আরবী ‘হামাযা’ শব্দটির একাধিক অর্থ আছে। সেগুলোর মধ্যে ‘হিমস্’ একটি, যার মানে হলো মৃদু বা আলতো পায়ে হাঁটা, হালকা কদম ফেলে এগোনো, ধীরে ধীরে কথা বলা, অন্তরে উদ্রেক হওয়া, কোনো কিছু অপসারণ করা, চাপ দেয়া, কারো আড়ালে গিয়ে তার সমালোচনা করা ইত্যাদি। আল্লামা ইবনে মনযূর কর্তৃক বর্ণিত উক্ত শব্দের এতোগুলো অর্থের মধ্যে হাল্কা বা মৃদু পায়ে হাঁটা একটি।  [‘লিসানুল আরব’, হারফুয যা, হা মীম যা] এই শব্দটির ব্যাপারে আরবী ভাষাতত্ত্ব বিষয়ক ইমাম আল্লামা যোহরী নিজ ‘সিহাহ’ পুস্তকে, আল্লামা ইবনে ফারাস তাঁর ‘মাকায়ীস-উল-লোগাত’ বইতে লিখেছেন এবং ’মোখতার আস্ সিহাহ লিল্ রাযী’ গ্রন্থেও লেখা আছে যে এর অর্থ মৃদু পায়ে হাঁটা। ‘আল-মোনজিদ’, ’মো’জাম আল-ওয়াসীত’ বইগুলোও একই কথা লিখেছে। সবগুলো অভিধান যেখানে ওই শব্দটিকে মৃদু পায়ে হাঁটা হিসেবে বর্ণনা করেছে, সেখানে সমস্ত তথ্যকে অবজ্ঞা করে তাকে ‘লাথি’ হিসেবে অনুবাদ করা কতো-ই না বড় ভুল কাজ! এটি ভাষা-সাহিত্যের পাশাপাশি শরীয়ত হতেও বিচ্যুতি বৈ কী! বস্তুতঃ হাদীসে ব্যবহৃত শব্দাবলী সব সময়-ই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রাপ্য সম্মান ও শোভনতা-শালীনতা বজায় রেখে বুঝতে হবে এবং সেভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। তাই ‘ফাহামাযানী বি-কাদামিহী’ বাক্যটির অর্থ হচ্ছে ‘জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার কাছে আসেন মৃদু পায়ে হেঁটে।’ এই শব্দের আরেকটি মানে হলো অন্তরে উদ্রেক হওয়া। ফলে রূপকার্থে এর অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমি তাঁর আগমন নিজ অন্তরে অনুভব করেছিলাম।’ কোনো সেবক তার মনিবের দরবারে পরম শ্রদ্ধা ছাড়া আর অন্য কোনোভাবে হাজির হন না। কাউকে লাথি মারা কোনো জাতি কিংবা সমাজেই গৃহীত বা গ্রহণযোগ্য নয়; আর এটি বেআদবি বা অসম্মানসূচক আচরণ হিসেবেই বিবেচিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে সৎ উদ্দেশ্যে হলেও দ্ব্যর্থবোধক শব্দের ব্যবহার পরিহার্য   কুরআন মজীদে একটি আয়াতে করীমা আ��ে, যার ব্যাখ্যায় শায়খুল ইসলাম ইমাম মোহাম্মদ আনওয়ারউল্লাহ ফারূকী লেখেন: সার কথা হলো, সাহাবা-এ-কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এই শব্দটি (’রায়িনা’) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রে অত্যন্ত নেক উদ্দেশ্য নিয়ে ও যথাযথ ভক্তি সহকারে উচ্চারণ করতেন, কিন্তু তা আরেক ভাষায় শ্লেষাত্মক হওয়ার কারণে আল্লাহতা’লা তার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। সবাই এখানে বুঝতে সক্ষম, যে শব্দটি কোনো রকম অসম্মানের ইঙ্গিত-ও বহন করেনি, অন্য আরেকটি ভাষায় হেয়করণে ব্যবহৃত হওয়ায় তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় যে সব শব্দের উদ্দেশ্য অসম্মানসূচক, সেগুলোকে কীভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যায়? কেউ যদি বলে, ওই নিষেধাজ্ঞা শুধু ইহুদীদের প্রতি আরোপিত হয়েছিল এই মর্মে যে তারা তা ব্যবহার করতে পারবে না, তাহলে আমি বলবো, হয়তো তা হতে পারে; কিন্তু এ-ও তো অস্বীকার করার জো নেই যে ওই নিষেধাজ্ঞা মুসলমানদের প্রতি-ও ছিল, যাঁরা শব্দটিকে সম্মানার্থে ব্যবহার করতেন। এখানে (আয়াতে) ইহুদী ও তাদের ভাষার কোনো উল্লেখ-ই নেই। যদি তা-ই উদ্দেশ্য হতো, তাহলে ইহুদীদের অন্যান্য বদমাইশির মতো এটিরও উল্লেখ থাকতো। মুসলমানদেরকে সম্বোধন করায় বোঝা যায় যে সৎ উদ্দেশ্যেও এই ধরনের শব্দ ব্যবহারের অনুমতি নেই। [আনওয়ার-এ-আহমদী, ২২২ পৃষ্ঠা] পবিত্র কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সামান্যতম অসম্মান প্রদর্শন বা অশ্রদ্ধা জ্ঞাপনও কারো ঈমান ধ্বংস করতে পারে; আর ওই ব্যক্তি তা বুঝতেও পারবে না। এরশাদ হয়েছে -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ
- হে ঈমানদার মুসলমান! নিজেদের কণ্ঠস্বরকে উঁচু করো না ওই অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)-এর কণ্ঠস্বরের ওপর এবং তাঁর সামনে চিৎকার করে কথা বলো না, যেভাবে তোমরা একে অপরের সামনে করে থাকো, যেন কখনো তোমাদের কর্মসমূহ নিষ্ফল না হয়ে যায়, আর (এতে) তোমাদের খবরও থাকবে না। ২৫ এই আয়াতে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে পূর্ণ শ্রদ্ধাজ্ঞাপক শুধুমাত্র যে সব বাক্য ব্যবহার করা যাবে, সেগুলোর ব্যাপারেই আল্লাহ পাক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরও এরশাদ ফরমান:
لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنْكُمْ لِوَاذًا فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
-          (ওহে মুসলমান)! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আহ্বানকে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তেমনি স্থির করো না, যেমনটি তোমরা একে অপরকে ডেকে থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন যারা তোমাদের মধ্যে চুপে চুপে বের হয়ে যায়, কোনো কিছুর আড়াল গ্রহণ করে। সুতরাং যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা যেন ভয় করে (এই মর্মে) যে কোনো বিপর্যয় তাদেরকে পেয়ে বসবে, অথবা তাদের প্রতি (আখেরাতে) বেদনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে। ২৬
যদি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আহ্বান করা আমাদের পরস্পরের মাঝে ডাকাডাকি তথা সম্বোধনের মতো না হয়, তাহলে তাঁর ব্যক্তিত্ব কীভাবে আমাদের, অর্থাৎ, সাধারণ মানুষের ব্যক্তিত্বের মতো হতে পারে? তাঁর সামনে সামান্য একটু উচ্চস্বরে কথা বল্লেও ঈমানহারা ও আমল বরবাদ হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতেও স্পষ্ট হয় যে হযরত জিবরীল আমীন আলাইহিস সালাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন অনুসারী, সেবক ও উজির ছিলেন। এই কারণেই তিনি হুযূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজিরা দেয়ার সময় হয়েছিলেন শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মূর্ত প্রতীক। তিনি (সর্বদা) দরুদ-সালাম প্রেরণ করে তাঁর দরবারে প্রবেশের অনুমতি চাইতেন। বোখারী ও মুসলিম শরীফে এতদসংক্রান্ত একখানি সর্বসম্মত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যা’তে বিবৃত হয়: একবার হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হন; তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তাঁর হাত দুটো নিজ পায়ের উপরিভাগে স্থাপন করেন। অতঃপর তিনি হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ঈমান, ইসলাম, এহসান, কেয়ামত ও কেয়ামতের নিদর্শন সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সেসব প্রশ্নের উত্তর দ্বারা পুরস্কৃত করেন। তিনি চলে যাওয়ার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবা-এ-কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-কে বলেন,
 هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ لِيُعَلِّمَ النَّاسَ دِينَهُمْ
ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের ধর্ম শেখাতে এসেছিলেন।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাদেরকে আমাদের ধর্ম শেখাতে এসেছিলেন। প্রশ্ন হলো, এখানে ধর্ম তথা দ্বীন শিক্ষা দেয়ার কথা বলে কী বোঝানো হয়েছে? জিবরীল আলাইহিস সালাম তো সাহাবা-এ-কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-কে ইসলাম ধর্মের বিধিনিষেধ কোনো কিছুই শেখাননি। খোদ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই এগুলো জিজ্ঞাসিত হওয়ার পর নিজে নিজে ব্যাখ্যা কর��ছিলেন। তাহলে জিবরীল আমিন আলাইহিস সালাম কী শেখালেন? এর উত্তর পরিষ্কার। জিবরীল আলাইহিস সালাম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে পরম ভক্তিভরে হাজিরা দিয়েছেন এবং নিজের আরজি তাঁর বরাবরে পেশ করেছেন। তিনি গোটা উম্মতে মোহাম্মদীকে শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজিরা দিতে হয় এবং কীভাবে তাঁর কাছে ফরিয়াদ করতে হয়। এই সম্মান প্রদর্শন ও আদবশীলতাকেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘দ্বীন’ বা ধর্ম হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং তাঁর সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-কে বলেছেন: ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি তোমাদেরকে তোমাদের ধর্ম শেখাতে এসেছিলেন। আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অসীলায় মুসলমান সমাজকে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তা’যিম তথা সম্মান প্রদর্শনের দিকনির্দেশনা দিন এবং ইসলামী বিধিবিধান মানারও তৌফিক দিন, আমীন।
তথ্যসূত্র:                                                            
১. সূরা বাকারা : ২/২৫৩ আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান রহমতুল্লাহি আলাইহি কৃত ‘নূরুল এরফান।
২. মুসলিম : আস সহীহ, কিতাবুল মাসাজিদ ওয়াল মাওদ্বিউস সালাত, ১:৩৭১ হাদীস নং ৫২৩।
(ক) আহমদ : আল ‍মুসনাদ, মুসনাদু আবী হুরায়রা, ২:৪১১ হাদীস নং ৯৩২৬।
(খ) তিরমিযী : আস সুনান, বাবু মাজা‘আ ফিল গনিমাতি, ৩:১৭৫ হাদীস নং ১৫৫৩।
(গ) আবু উয়ানা : আল মুসনাদ, ১:৩২৯ হাদীস নং ১১৬৯।
(ঘ) ইবনে হিব্বান : আস সহীহ, ৬:৮৭ হাদীস নং ২৩১৩।
৩. মিরকা‘তুল মাফাতীহ, ৯/৩৬৭৬।
৪. আল কুরআন : আল ফাতহ, ৪৮:০৬।
৫. আল কুরআন : আত তাহরীমে ৬৬:০৬।
৬. আল কুরআন : আত তাকভীর  ৮১:২০।
৭. হাকেম : আল মুস্তাদরাক, ২/৩১৭ হাদীস  নং ৩১০৬।
ক. বাযযার : আল মুসনাদ, ১১/১৭৮ হাদীস নং ৪৯১৯।
৮. আল কুরআন : আর রহমান, ৫৫:১-৪।
৯. আল কুরআন : আল কিয়ামাহ, ৭৫:১৭।
১০. আল কুরআন : আল  কিয়ামাহ ৭৫:১৯।
১১. আল কুরআন : আল  আ‘লা ৮৭:০৬।
১২.  আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া, ৫ : ২৯৭।
১৩. তাফসীরে রূহুল বয়ান, সূরা মরিয়ম, ০১ আয়াতের ব্যখ্যায়।
১৪. ইবনে আবী শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৩:৩১ হাদীস নং ১৪৬৯৬।
১৫. আহমদ: আল মুসনাদ ১:৫৩ হাদীস নং ৩৭৫।
১৬. কানযুল উম্মাল : ১:২৭২ হাদীস নং ১৩৫৮।
১৭. নাসায়ী : আস সুনান, সিফাতুল ঈমান ওয়াল ইসলাম, ৮:১০১ হাদীস নং ৪৯৯১।
১৮. তবরানী : মুসনাদুশ শামিয়ীন, ১:৩০৬ হাদীস নং ৫৩৬।
১৯. তবরানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ৩:১২৮ হাদীস নং ২৮৯০।
(ক) আল-মাতালিব-উল-আ’লিয়্যা লি ইবনে হাজর আসকালানী, হাদীস নং ৪৪৪৯।
.২০. মা’আরিজুন্ নুবুওয়াহ, ৬০১ পৃষ্ঠা।
২১. মা’আরিজ-উন্-নবুওয়াহ, ৯৩১ পৃষ্ঠা।
২২. নুযহাতুল মাজালিস ২:৯৬।
২৩.  তাবারানী : আল মু‘জাম আল-কবীর, হাদীস নং ৬৪৬৮;
(ক) মজমাউয্ যাওয়াইদ, ৮:২১৭।
(খ)  ইমাম সৈয়ুতী : খাসাইসুল্ কুবরা’, ১: ৩১৮।
২৪. নাসীম আল-রেয়ায’, ৩: ৫৪৫।
২৫. আল কুরআন : আল হুজুরা-ত, ২য় আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান কৃত ‘নূরুল এরফান’।
২৬. আল কুরআন : আন নূর, ৬৩ আয়াত; মুফতী আহমদ এয়ার খান কৃত ‘নূরুল এরফান।
২৭. বুখারী : আস সহীহ, ৬:১১৫ হাদীস নং ৪৭৭৭।
(ক) মুসলিম : আস সহীহ, ১:৩৯ হাদীস নং ৯।
1 note · View note
mamunh83 · 2 years ago
Link
0 notes