#জ্বীন সাপ
Explore tagged Tumblr posts
Text
সাপ জ্বীনে আক্রান্ত একজন রোগী ও আমার অভিজ্ঞতা
ঘরবাড়িতে সাপ দেখা গেলে তা মারার আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। দেখলেই হুট করে মেরে ফেলা যাবে না। (তবে হ্যাঁ, হামলা করতে উদ্যত হলে তখন ভিন্ন কথা।) কমপক্ষে তিনবার চলে যেতে সতর্ক করতে হবে। কারণ জ্বীনদের একটি শ্রেণি রয়েছে যারা সাপের আকৃতি ধারণ করে ঘুরে বেড়ায় । (১) সাপ ভেবে অন্যায়ভাবে এদেরকে মেরে ফেললে মারাত্মক বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে, এমনকি এক সাহাবীকে তো এজন্য মৃত্যুবরণও করতে হয়েছিল।…
View On WordPress
0 notes
Text
New Post on BDTodays.com
৭০ জনকে জ্বীন সাপের কামড়: আতঙ্কে গ্রামবাসী !
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে জ্বীন সাপের কামড় আতঙ্কে ভুগছে গ্রামবাসী। গত ৩ দিনে প্রায় ৭০ জন কে জ্বীন সাপে কামড়িয়েছে বলে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পৌরসভাধীন চটকাবাড়ীয়া গ্রামে। সরেজমিনে ঐ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় জ্বীন সাপের কামড় থেকে রক্ষা পেতে ক...
বিস্তারিত এখানেঃ https://bdtodays.com/%e0%a7%ad%e0%a7%a6-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a6%95%e0%a7%87-%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%9c-%e0%a6%86/
#bangla news#bangla news today#bangla paper#bangladesh daily newspaper#bangladesh newspaper online#bd news#bd news bangla#bd newspapers#bdnews24#bdtodays#daily bangla newspaper#daily newspaper bd#online news paper#অনলাইন নিউজ পেপার#অনলাইন পত্রিকা#চটকাবাড়ীয়া#জ্বীন সাপ#জ্বীন সাপের কামড়#হরিণাকুন্ডু
0 notes
Text
চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা
তিন চীনা কিংবদন্তী ও পাঁচ সম্রাটের পনের শত বছর
তিন কিংবদন্তী ও পাঁচ সম্রাট চীনাদের প্রথম ঊনিশশত বছরের ইতিহাস রূপকথা ও লোককাহিনী ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। প্রাচীনতম এ ইতিহাসের সাথে রূপকথা ও লোককাহিনী এতটাই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে তাদের ইতিহাস থেকে এ সব রূপকথা ও লোককাহিনী বাদ দিলে ইতিহাস অর্থহীন আর রূপকথা ও লোককাহিনী থেকে ইতিহাস তুলে পৌরাণিক কল্পকথাগুলো আবেদনহীন হয়ে পড়ে। ফলে ইতিহাসবিদেরা চীনাদের রূপকথা ও লোককাহিনী থেকে নিখাঁদ ইতিহাসকে কখনও আলাদা করে দেখাতে পারেনি। রূপকথা ও লোককাহিনী নির্ভর এ ইতিহাসকে তারা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে লালন করছে। রূপকথার তিন কিংবদন্তী আর লোককাহিনীর পাঁচ দেবসম্রাটকে নিয়ে রচিত চৈনিক ইতিহাসের সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবুও তারা চীনা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম অংশীদার হিসেবে আজও সমধিক সমাদৃত। তিন কিংবদন্তী হলো ফুসি (Fu Xi), নোওয়া (Nü Wa) ও ইয়াংদি (Yan Di) বা শেংনংশি। পাঁচ সম্রাটের মধ্যে রয়েছে হোয়াংদি (Huang Di) , ঝোয়াংসু (Zhuan Xu), দিকু (Di Ku), ইয়াও (Yao), এবং শুং (Shun)। কল্পকাহিনীর এসব কিংবদন্তীদের সাথে চীনা জাতির উদ্ভব, জাতিগোষ্ঠীর উন্মেষ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ নিবিড়ভাবে মিশে আছে। প্রাচীন সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশে নদীর অবদান অনস্বীকার্য। নদীব���ধৌত সমভূমিতে কৃষিকাজ, পশুপালন সুবিধার জন্য যাযাবর আদিম মানুষেরা যখন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তখন তারা নদীতীরে জনবসতি গড়ে তোলে। এ কারণে দজলা-ফোরাতের (টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস) মাঝে মেসোপটেমিয়া, নীল নদের অববাহিকায় মিশরীয় সভ্যতা, সিন্ধু নদের তীরে হরপ্পা-মহোঞ্জাদারো সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। চৈনিক সভ্যতার উন্মেষ ও বিস্তারের সাথে হোয়াংহো (Huang Ho) বা ‘হলদে নদী’ ও ইয়াংসি (Yangtze) নদী ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কারণ পাঁচ হাজার বছর আগে এ দুই নদীর মধ্যবর্তী উপত্যকায় চৈনিক সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটে। হোয়াংহো নদী চৈনিক সভ্যতাকে যেমন সমৃদ্ধি দিয়েছে তেমনিভাবে এ নদীর ��য়েক দফা ভয়াবহ বন্যা তাদের মূল্যবান অনেক অর্জন কেড়ে নিয়েছে। এ নদীকে তাই ‘চীনের দুঃখ’ নামে অভিহিত করা হয়। তিন কিংবদন্তী- ফুসি, নোওয়া ও ইয়াংদি বা শেংনংশি তিন কিংবদন্তীর দুই জন- ফুসি ও নোওয়া ভাই বোন। ফুসির বোন নোয়ার হাতে চীনাদের সৃষ্টি। ওদের বাবা ইন্দ্রদেবতাকে বন্দী করে এক পর্বতের গুহায় আটকের রেখেছিল। পানির তেষ্টায় ইন্দ্রদেব ভয়াবহ আর্তচিৎকার শুরু করে। ইন্দ্রদেবের এ আর্তনাদে ফুসি ও তাঁর বোন নুওয়া সেখানে ছুটে যায়। পান করানোর মতো কোনো পানি না পেয়ে দু’জনেই কাঁদতে শুরু করলে ইন্দ্রদেব তাঁদের অশ্রুজল কোশভরে পান করে। অশ্রজল পানের শক্তিতে সে বন্দীশালা ভেঙে বেরিয়ে আসে। প্রতিদানে নিজের একটি দাঁত তাদেরকে দিয়ে সে বলেছিল, ‘তিনদিনের মধ্যে যখন মানব জাতির উপর ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে তখন যেন তারা এই দাঁতের সাহায্যে নিজেদেরকে রক্ষা করে’। মহাপ্লাবনে হলদে ও ইয়াংসির উপত্যকা ভেসে যেতে লাগলো। দাঁতটি একটি কিস্তিতে রূপান্তরিত হলে দুই ভাইবোন তার উপর চড়ে বসলো। সবাই মরে গেলো, ধ্বংস হলো সবকিছু, বেঁচে থাকলো ফুসি ও নোওয়া। এ কাহিনী একটি বিশেষত্ব হলো মহাপ্লাবন, নোওয়া ও তাঁর কিস্তি যার সাথে নূহের (Noah) প্লাবনের একটি সাদৃশ্যরয়েছে। ফুসি ও নোওয়া মহাপ্লাবনের পানি নেমে গেলে নোওয়া মানুষ সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করলো। হলদে নদীর মাটি দিয়ে পুতুল বানিয়ে তা জীবন্ত করে তুলতে লাগলো। আজকের চীনারা সেই সব মাটির পুতুলের উত্তরসূরী। ইয়াংদি তৃতীয় কিংবদন্তী ‘লাল সম্রাট’ ইয়াংদি। তিনি কৃষিকাজের লাঙল ও ভেষজশাস্ত্র আবিস্কার করেন। চীনাদেরকে তিনি ষাড়ের সাথে লাঙল জুড়ে জমি চাষ করে গম, ধান, ভুট্টা, ও শিমের চাষাবাদ শেখান। এ জন্য তিনি ‘স্বর্গীয় কৃষক’ নামে পরিচিত। ইয়াংদি ৩৬৫টি ঔষধি গাছের তালিকা প্রণয়ন করেন যার মধ্যে চীনা চায়ের কথা উল্লেখ ছিল। এ তালিকার সূত্র ধরে চীনে ভেষজশাস্ত্রের বুৎপত্তি ঘটে। এ জন্য তাঁকে ‘ভেষজ ঔষধের দেবতা’ও বলা হয়। সম্ভবত, নিজদেহে কোনো এক বিষাক্ত ভেষজের বিষক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পাঁচ সম্রাট- হোয়াংদি, ঝোয়াংসু, দিকু, ইয়াও এবং শুং বর্তমান চীনের প্রধান জাতিগোষ্ঠী হ্যান (Han) কিংবদন্তী ‘লাল সম্রাট’ ইয়াংদি ও পাঁচ সম্রাটের একজন ‘হলদে সম্রাট’ হোয়াংদির বংশধর। হোয়াংহো নদীর তীরে হোয়াংদি আর ইয়াংসির তীরে ইয়াংদি বাস করত। হোয়াংদি যখন তিনি গজদন্তের রথে চড়ে বেড়াতেন তখন বাঘ, সিংহ, সাপ আর ফিনিক্স পাখিরা তাঁর সাথে সাথে ��ুরত। প্রয়োজন হলে তিনি মাঝে মধ্যে ঈশ্বরের সাথে কথাও বলতেন। চীনা সংস্কৃতির উন্মেষে হোয়াংদির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। চীনারা বিশ্বাস করে যে তিনি চীনে আইন ও সরকার ব্যবস্থার প্রচলন করেন, চীনাদেরকে চাকা, কম্পাস, নৌযান তৈরি শেখান এবং সঙ্গীত ও শিল্পকলায় দীক্ষিত করেন। সম্রাট হোয়াংদিসম্রাট দিকুসম্রাট শুংসম্রাট ঝোয়াংসুসম্রাট ইয়াও হোয়াংদির স্ত্রী লেই যু (Lei Zu) একদিন দুপুরে তাঁর বাগানে কোনো এক তুঁত গাছের নীচে বসে যখন চা পান করছিলেন তখন একটি রেশম গুটি তাঁর পেয়ালায় পড়ে। পেয়ালার গরম চায়ে গুটি থেকে ধীরে ধীরে রেশম সুতা বের হতে থাকে। এর পরে তিনি রেশম পোকার জীবন বৃত্তান্ত জানলেন এবং চীনা মহিলাদেরকে রেশম গুটি থেকে সুতা বের করা শেখালেন। পরবর্তীকালে রেশম সিল্কে চীনারা সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছিল। চীনাদের কাছে লেই যু আজো ‘রেশমকীটের মা’ (Silkworm Mother) হিসেবে পরিচিত। হোয়াংদির স্ত্রী লেই যু একবার হলদে ও লাল সম্রাটের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধলো। বর্তমান বেইজিংয়ের কাছাকাছি বাংকোয়াং (Banquan) নামের কোনো এক স্থানে তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে। এ যুদ্ধে হলদে সম্রাটের কাছে লাল সম্রাট পরাজিত হলেও দুই সম্রাটের মধ্যে একটি শান্তির সমঝোতা হয়। ফলে হলদে সম্রাটের নেতৃত্বে হলদে ও লাল জাতি একসাথে বসবাস করতে শুরু করে। এ দুই জাতির মিলবন্ধনে নতুন যে জাতিগোষ্ঠী তৈরি হয় এখন তারা হ্যান জাতিগোষ্ঠী নামে পরিচিত। বর্তমানে চীনাদের নব্বই ভাগের বেশী লোক হ্যান জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ‘ধ্রুবতারার দেবতা’ ঝোয়াংসু হলদে সম্রাটের নাতি। জ্যোতির্বিদ্যা ও দিনপঞ্জিতে পারদর্শী এ সম্রাট রাজা সলোমোনের মতো তিনি জ্বীন-ভূতের সাহায্যে রাজ্য পরিচালনা করতেন। চীনের মহাপ্লাবন শেষে ফুসি তাঁর বোন নোয়াকে বিয়ে করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে চীনা সমাজে সহোদর বিবাহ রীতি প্রচলিত হয়। ঝোয়াংসু এ ধরণের বিবাহপ্রথা রদ করে। তিনি চীনের প্রভাবশালী কিং (Qing) রাজবংশের পূর্বপুরুষ। চীনা সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র আবিস্কার করেছিলেন হলদে সম্রাটের প্রপৌত্র লোককাহিনীর পঞ্চম সম্রাট দিকু। ‘সাদা সম্রাট’, ‘দেব সম্রাট’ নামে অভিহিত দিকু চীনের শাং (Shang) ও চৌ (Chou/Zhou) রাজবংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি বসন্ত-গ্রীষ্মে ড্রাগেন ও হেমন্ত-শীতে ঘোড়ায় চলাচল করতেন। দিকুর দ্বিতীয় স্ত্রী জিয়ানদি (Jiandi) একবার এক কালো পাখির ডিম গলাধঃকরণ করলে ঐ ডিমের প্রভাবে সে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। এই পুত্রসন্তান কি (Qi) শাং রাজবংশের দ্বিতীয় পিতৃপুরুষ। দিকু আরেক স্ত্রীর জিয়াং ইউয়াং (Jiang Yuan) কোনো এক দেবতার পায়ের ছাপের উপর পা দেবার কারণে গর্ভবতী হয়ে পড়ে, ফলে জন্ম নেয় হৌজি (Hou Ji) যিনি চৌ রাজবংশের পূর্বপুরুষ। দেব সম্রাটের পুত্র ইয়াও তাঁর শাসনামলে ভয়াবহ এক খড়ার হাত থেকে চীনাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। এ কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল হৌইয়ই (Houyi) নামের এক তীরন্দাজ। সে সময়ে দশটি জ্বলজ্বলে সূর্যের তাপদাহে ইয়াওয়ের সাম্রাজ্যের নদী-নালা-খাল-বিল সব শুকিয়ে যাচ্ছিল। সূর্যের এ ভয়াবহতা কমানোর জন্য হৌইয়ই তীর মেরে নয়টি সূর্যকে মাটিতে নামিয়ে আনেন। ইয়াও শাসনামলের অন্যান্য অবদানের মধ্যে ঋতুভেদে কৃষিকাজের সুবিধার্থে পঞ্জিকাবর্ষ সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। সম্রাট হিসেবে ইয়াও ছিলেন সুবিবেচক, ন্যায়পরায়ন ও মানবহিতৈষী। তিনি শহরের সামনে একটি কাঠের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন যেখানে দাড়িয়ে সাধারণ মানুষ তাঁর শাসনের দূর্বলতাগুলো তুলে ধরতে পারতেন। তিনি বলতেন, ‘রাজ্যের একটি মানুষও যদি ক্ষুধার্ত থাকে সেজন্য আমি দায়ী’। সম্রাট ইয়াও শাসক হিসেবে এতটাই দায়িত্বশীল ছিলেন যে, তিনি যখন বুঝতে পারলেন তাঁর সন্তান ড্যাংঝু (Danzhu) যথাযথভাবে রাজ্য শাসনে অক্ষম তখন তিনি তাঁর রাজ্য অমাত্য শুংকে রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করার জন্য নিজের দুই কন্যাকে তাঁর সাথে বিবাহ দিয়ে শুংয়ের রাজ্যাভিষেক করেন। সম্রাট হিসেবে তো বটেই ব্যক্তি হিসেবেও শুং এতটাই দায়িত্বশীল ছিলেন যে সৎ মা, সৎ ভাইয়ের শত অত্যাচারের সহ্য করেও তিনি তাদের প্রতি নিজের দায়িত্ব-কর্তব্যকে কখনও অবহেলা করেননি। শুং তাঁর সাম্রাজ্যকে বারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে পালাক্রমে সকল অঞ্চলে ভ্রমণ করে প্রজাদের সুখ দুঃখের খোঁজ-খবর নিতেন। প্রজাদের ধর্মীয় উৎকর্ষের জন্য তিনি প্রতিটি অঞ্চলে স্ব-স্ব দেবতার পূজা-অর্চণা, উৎসর্গের স্থান নির্ধারণ আ��� ইয়াওয়ের মতো কৃষিকাজের সুবিধা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদী খনন করেছিলেন। সুবিচারক হিসেবেও শুংয়ের খ্যাতি ছিল। যখন কৃষকদের মধ্যে গোলযোগ দেখা দেয়, যখন মৎসজীবীরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, কুমোর পাড়াতে মাটির বাসন-কোসন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল তখন তিনি কৃষক-জেলে-কুমোরদের সাথে মাসের পর মাস সময় কাটিয়ে তাদের সব সমস্যার সমাধান করেছিলেন। চীনা তিন কিংবদন্তী ও পাঁচ সম্রাটের রূপকথা ও লোককাহিনী ঐতিহাসিক সময়কাল ৩৫০০-২০৭০ খ্রিঃপূঃ। Read the full article
0 notes
Text
জামান মঞ্জিল রহস্য
১.
বাড়িটা বেশ পুরোনো।
পুরোনো ঢাকার তাঁতীবাজার এলাকাটা নতুন-পুরোনো বাড়ি মিলে বেশ একটা ঐতিহাসিক খিচুড়ি হয়ে টিকে আছে। গাড়ির হর্ন, রিক্সার ক্রিংক্রিং এখানে মেশে দূরের লাউড স্��িকারের ওয়াজ আর পাড়ার দোকানের হিন্দি গানের সাথে। গাড়ির কালো ধোঁয়া ছাপিয়ে বাতাসে ভাসে করিমের বিরিয়ানির গন্ধ।
জিন্দাবাহার লেন ধরে একটু এগোলেই একপাশে ভাতের হোটেল আর অন্যপাশে মোটর পার্টসের দোকানের মাঝে একটা লোহার গেইট। তার দিয়ে বাঁধা একটা টু-লেট এর সাইন বোর্ড ঢেকে গেছে 'পড়াইতে চাই' এর বিজ্ঞাপনে। একধারের সিমেন্টের থামে খোদাই করে লেখা 'জামান মঞ্জিল', খুব কাছ থেকে খেয়াল না করলে পড়াই যায় না।
বড় গেইট এর সাথে লাগোয়া ছোট্ট গেইটটা সবসময় খোলাই থাকে। মাথা গলিয়ে ঢুকে পড়লেই বাইরের সব কোলাহল হঠাৎ থেমে যায়। দারোয়ানের ঘরটা পাশ কাটিয়ে, এক চিলতে ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে, গাছপালা ঢাকা সোঁদা গন্ধ মাখা একটা তিনতলা বাড়ি। একসময় বোধহয় সাদা ছিল, এখন শ্যাওলায় ঢেকে পানসে সবুজ। কাঠের খড়খড়ি দেয়া আদ্যিকালের জানালা।
সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই বামে শান বাঁধানো ঘোরানো সিঁড়ি দোতলায় উঠে গেছে। দোতলায় উঠেই প্রথম যেটা চোখে পড়ে সেটা হচ্ছে বাম দিকে একটা আদ্যিকালের পেল্লায় গ্র্যান্ডফাদার ক্লক। আর ডানদিকে একটা গ্রিলে ঢাকা টানা বারান্দা।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে তাকালে সারি সারি দোকানের ফাঁক দিয়ে দেখা যায় সিরাজ-উদ-দৌলা পার্ক। ঘাস বিহীন জমিতে অনেকগুলো ধুলো মাখা ন্যাড়া গাছ। তাও ভালো। চৈত্রের গুমোট গরমের মাঝে একটু হাওয়া পাবার পথ ওটা।
২.
আয়াজ এবাড়িতে নতুন। তার বড় মামা, কামাল সাহেব বছর খানেক হলো এ বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে তাঁর বেশ গমগমে সংসার। অষ্টপ্রহর চিৎকার চ্যাঁচামেচি লেগেই আছে।
বাড়ির মানুষজনের মাঝে আয়াজ সবচেয়ে ছোট, তার বয়স বারো। এমনকি নাবিলা আপু, যে কিনা আয়াজের পিঠাপিঠি, সেও তার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়।
তার মানে কিন্তু এই না যে আয়াজের এবাড়িতে বন্ধু নেই। গরমের ছুটিটা সে এখানেই থাকবে। সবার সাথেই তার বেজায় খাতির। কিন্তু সবচেয়ে বেশি খাতির বোধহয় নাবিলা আপুর সাথে। অথবা নাফিজ ভাইয়ার সাথেও হতে পারে। আয়াজ এখনো ঠিক করে উঠতে পারেনি।
নাবিলা আপু তাকে গোয়েন্দা গল্পের বই পড়তে দেয়, আর গত সাতদিন ধরে প্রতিরাতে তারা দেখছে নেটফ্লিক্সে স্টেঞ্জার থিংস। কিন্তু নাফিজ ভাইয়া তাকে বাইকে চাপিয়ে ঘুরতে নিয়ে যায় প্রতিদিন বিকেলে। নাফিজ ভাইয়ার আইফোনের ক্ল্যা�� অফ ক্ল্যানে আয়াজ এখন টাউন হল ফোর।
আয়াজের মোবাইল ব্যবহার করা নিষেধ। মায়ের করা নিয়ম। আয়াজ নিজেকে বুঝিয়েছে, নাফিজ ভাইয়ার ফোনে একটু আধটু খেলাটাকে ঠিক নিয়ম ভাঙ্গার মধ্যে ধরা চলে না।
মা লন্ডনে থাকলেও আয়াজ মায়ের সব কথা মেনে চলে। প্রতিদিন রাত ১০টায় নাবিলা আপুর ল্যাপটপের স্কাইপে মায়ের সাথে কথা বলে। মায়ের ঘড়িতে তখন বাজে বিকাল ৫টা। এসময়টায় মা ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়ি ফেরে।
ট্রেনে চেপে অক্সফোর্ড থেকে প্যাডিংটন স্টেশন পৌঁছুতে লাগে ঠিক ১ ঘন্টা ১০ মিনিট। এই পুরো সময়টা জুড়ে আয়াজ মাকে বলে তার সারাদিনের যত এডভেঞ্চারের গল্প। মা শুধুই শোনে আর হাসে। স্টেশনে পৌঁছানোর হুইসেল বেজে উঠলেই, মা তাড়াহুড়ো করে - আয়াজের খাওয়া দাওয়া, পড়াশোনা আর দুষ্টমি সংক্রান্ত একগাদা উপদেশ দিতে দিতে কলটা কেটে দেয়।
দুপুর বেলাটা আয়াজের একার। এসময়টায় সবাই যে যার কাজে চলে যায়, কেউ থাকে না বাসায়। নানী কুরআন শরীফ পড়েন তিনতলার ঘরে, ড্রয়িং রুমে ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে রানু বুয়া সিরিয়াল দেখে আর দারোয়ানের ঘর থেকে ভেসে আসে মাসুদ মিয়ার নাক ডাকার শব্দ।
এসময়টা তাই আয়াজ গল্পের বই পড়ে অথবা একা একা ঘুরে বেড়ায় পুরোনো বাড়িটার ওপর নিচ। জামান মঞ্জিলের পেছনের দেয়াল আর বাড়ির মাঝখানের সংকীর্ণ জায়গাটা রাজ্যের জঞ্জাল আর আগাছায় ঢাকা। মাসুদ মিয়া বলেছে ওখানে সাপ আছে। আয়াজ বিশ্বাস করেনি। মাসুদ মিয়া একদিন বলেছিলো তার গলার তাবিজে নাকি জ্বীন আছে। যে মানুষ আসলেই জ্বীন ভুতে বিশ্বাস করে তার কথা গুরুত্ব দিয়ে নেয়াটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ না। আয়াজের বয়স কম হতে পারে, কিন্তু সে বোকা নয়।
৩.
আয়াজ যে বুদ্ধিমান সেটা সবাই স্বীকার করে। সেটা অবশ্য, মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল আর চোখের চশমার কারণেও হতে পারে। তবে নাবিলা আপু বলেছে আয়াজ ঠিক মতো পড়াশোনা করলে মায়ের মতো সায়েন্টিস্ট হতে পারবে। আয়াজের কিন্তু ইচ্ছে গোয়েন্দা হবার।
সে এরমধ্যেই অনেকগুলো রহস্য খুঁজে বের করেছে। রহস্য নম্বর এক - বাড়ির ছাদ থেকে নাফিজ ভাইয়ার জিন্সের প্যান্ট চুরি। জিন্সটা লিভাইসের - বেশ দামী; কিন্তু এত্তো পুরোনো আর ছেঁড়া ছিলো যে কেউ সেটা চুরি করবে এটা কেউ মানতেই পারছে না। নাফিজ ভাইয়া অবশ্য খুব চোটপাট করছিলো। ও নাকি জিন্সটা আরো পাঁচ বছর পরতে পারতো।
ছাদের আশেপাশে কোন গাছ বা পাইপ নেই যা দিয়ে ছাদে ওঠা যায়। ঘরের ভেতর দিয়েই ছাদে উঠতে হয়, তাই বাইরের কেউ জিন্সটা নিয়েছে সে সম্ভাবনা বাদ। আর বাইরের চোরই যদি আসে, তাহলে ছাদের শেড-এ�� নিচে রাখা টেলিস্কোপটা কেনো রেখে যাবে?
ঘরের মানুষের মধ্যে, মাসুদ মিয়া আর রানু বুয়া দুজনই অনেকদিনের বিশ্বস্ত মানুষ। নিজেরা পরার জন্য জিন্স নেয়ার তো প্রশ্নই আসে না, অন্য কারো জন্য নেবে সেটাও ঠিক মেলানো যায় না। মাসুদ মিয়ার তিনকুলে কেউ নেই, আর রানু বুয়ার আছে শুধু একটা মেয়ে।
নাবিলা আপু বলেছে জিন্সটা ছেঁড়া ন্যাকড়া ভেবে কাক নিয়ে গেছে, বাসা বানাতে। নাবিলা আপু ঠাট্টা করে বললেও গোয়েন্দা হিসেবে আয়াজ কোন মতামতই হেলাফেলা করছে না। সে দস্তুর মতো পড়াশোনা করে দেখেছে, সাধারণ কাক বা কর্ভাস স্প্লেনডেন কোনো ভাবেই ঐ বস্তার মতো জিন্সটা আলগাতে পারবে না। আর বড়সড় একটা দাঁড়কাক বা কর্ভাস লেভাইলান্তি যদিও ৩০০-৪০০ গ্রামOk পর্যন্ত আলগাতে পারে, ওরা বাসা বানায় খড়কুটো আর কাপড়ের টুকরো দিয়ে, পুরো জিন্সটা নিয়ে যাবে কোন দুঃখে?
কাক হাইপোথিসিস তাই আয়াজ বাদ দিয়েছে। এতো পড়াশোনা করে শুধু এটুকুই লাভ হয়েছে যে সে এখন জানে - কাকের ঝাঁক কে ইংরেজীতে বলে "মার্ডার"! তথ্যটা সে তার নীল মোলস্কিন নোটবুকে লিখে রেখেছে।
বড়মামীর কথা মোতাবেক - প্যান্টটা বাতাসে উড়ে গেছে। আয়াজ ব্যুফোর্ট উইন্ড স্কেলের সাথে মিলিয়ে দেখেছে, নিদেনপক্ষে ঘন্টায় ২৫ মাইল বেগের বাতাস না থাকলে জিন্স উড়ে যেতে পারে না। সমস্যাটা হচ্ছে, অ্যাকুওয়েদার বলছে, সেদিন বাতাসটা মোটেই জোরালো ছিলো না - মাত্র ১০ মাইল!
সুতরাং, আয়াজকে শেষ হাইপোথিসিসটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে - বড়মামী নিজেই চুপিচুপি জিন্সটা ফেলে দিয়েছেন। তিনি ঐ জিন্সটা দুই চক্ষে দেখতে পারতেন না। জিন্সটা হারানোতে বড়মামীর খুশি দেখে সন্দেহটা আরো পোক্ত হচ্ছে আয়াজের।
তবে এটা প্রমাণ করাটা বেশ কঠিন। সেদিনই বাইরের ডাস্টবিনটা দেখে আসতে পারলে হতো। কিন্তু আয়াজের বাসার বাইরে যাওয়া নিষেধ। তাই, আয়াজ ব্যাপারটা নিয়ে এখনো ভাবছে।
৪.
গোয়েন্দাদের একটা কাজ চোর ধরা। লার্সেনি ইনভেস্টিগেশন বলে, এই ধাঁচের কেস গুলোর বেশ গালভরা একটা নামও আছে। আয়াজের কিন্তু আরো কঠিন সব রহস্য সমাধান করতে ইচ্ছে হয়।
যেমন দোতলার গ্র্যান্ড ফাদার ক্লকটা প্রতিদিন ১৫ মিনিট পিছিয়ে যায়। ঘড়িটা একদম আদ্যিকালের - তাই সঠিক সময় না রাখতে পারাটাই স্বাভাবিক। ঘরের সবাই ব্যাপারটা জানে, আয়াজও কোনো রহস্য দেখতে পেতো না, যদি না সে এতটা মনোযোগ দিতো ঘড়িটার প্রতি।
ঘড়িটা আয়াজের খুব প্রিয়। বিশাল উঁচু কালো কাঠের ঘড়ির মাথায় মুকুটের মতো কারুকাজ, নিচে পেটমোটা একটা বাক্স, তার মাঝে পেন্ডুলামের মন্থর দোল - সবমিলিয়ে ��ড়িটার এমন একটা ভাবগাম্ভীর্য আছে যে এর সামনে দাঁড়ালেই বেশ গা ছম ছম করে ওঠে।
দুপুর বেলায় যখন চারদিক চুপচাপ হয়ে যায়, আয়াজ মাঝে মাঝেই ঘড়িটার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। নিস্তব্ধতার মাঝে ঘড়ির কাটার মৃদু টিক টিক শব্দটাই তখন স্পষ্ট হয়ে ওঠে, এমনকি কান পাতলে ঘড়ির গভীর থেকে উঠে আসা যান্ত্রিক গুঞ্জন আর হৃৎস্পন্দনের মতো একটা চাপা ভারী গুম গুম শব্দ শোনা যায়। শুনতে শুনতে আয়াজের কেমন একটা ঘোর লেগে যায়।
৫.
ঘড়ির যত্ন নেয়ার সকল দায়িত্ব মাসুদ মিয়ার। সে এই বাড়িতেই বড় হয়েছে। বয়স কম করে হলেও ষাট পেরিয়েছে। বামচোখে ছানি আর ডান পায়ে বাঁত। মাসুদ মিয়ার বাবাও ছিলো এবাড়ির দারোয়ান। বাড়িটা তখন ছিল তাঁতীবাজারের কোনো এক সমৃদ্ধশালী স্বর্ণকার পরিবারের। গণেশ পূজারী স্বর্ণকার বাড়ির নাম জামান মঞ্জিল কেনো রাখলেন সেটাও একটা রহস্য।
মাসুদ মিয়া সারাদিন ঝিমায় আর একা একা গজগজ করে। সে একাধারে এবাড়ির দারোয়ান, কেয়ারটেকার, বাজার সরকার, আর বাগানের মালি। এতগুলো কাজ একসাথে করতে পারার গোপন সূত্র হচ্ছে কোনোটাই ঠিক মতো না করা। যেকোনো কাজ সে দশটা ভুল না করে করতে পারে না। মামী বলেন কুঁড়ের বাদশাহ। মামা বলেন সিনাইল ইডিয়েট। আয়াজের কিন্তু মাসুদ মিয়াকে খুব ভালো লাগে।
শুধু একটা কাজে কিন্তু মাসুদ মিয়ার কক্ষনো ভুল হয় না - ঘড়ির যত্ন নেয়া। প্রতিদিন ভোর না হতেই সে পা টেনে টেনে দোতলায় উঠে পরিষ্কার একটা গামছা দিয়ে ঘড়িটা মোছে। তারপর ঘড়ির উপরের ডালা খুলে সময়টা ১৫ মিনিট এগিয়ে দেয়।
দৈনিক রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াও, প্রতি আট দিন পরপর সকাল বেলা ঘড়িতে দম দেয়া হয়। প্রথম দিন আয়াজ মাসুদ মিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে পুরো প্রক্রিয়াটা দেখেছে। পরের বার আয়াজের উৎসাহ দেখে মাসুদ মিয়া নিজেই তাকে খুব আগ্রহ নিয়ে শিখিয়েছে।
দম দেয়ার পুরো ব্যাপারটা মাসুদ মিয়া করে বেশ একটা অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। প্রথমেই সে ঝুঁকে ঘড়িকে সালাম করে। "যন্তরকে কিন্তু সোম্মান দিতে হবে আব্বাজি। হাঁ!"। খনখনে গলায় মাসুদ মিয়া কথা বলে থেমে থেমে। ঘড়িকে সে ডাকে 'যন্তর', আর আয়াজকে 'আব্বাজি'। সময় নিয়ে মাসুদ মিয়া একটা একটা করে ঘড়ির প্রতিটা অংশ চিনিয়েছে আয়াজকে।
ঘড়ির নিচের কাঁচের ডালাটা খুললেই সামনে দেখা যায়, মিহি বুননের চিকন শিকলে ঝুলছে কারুকাজ করা তিনটি ধাতব লম্বাটে ভার। শিকলগুলো উপরে ঘড়ির কলকব্জার ভেতর ঢুকে গিয়ে আবার ফিরে এসে ভার গুলোর পাশে পাশেই ঝুলছে। ঠিক মাঝের সবচেয়ে বড় ভারটাই সময়ের। বাকি দুটোর একটা ঘন্টার আরেকটা সিকি ঘন্টার।
শিকল গুলোর ঠিক পেছনে দোলে পেন্ডুলামটা - বাম, ডান, বাম, ডান। দীর্ঘ শরীর��র শেষ প্রান্তে কারুকাজ করা বৃত্তাকার একটা চাকতি। পেন্ডুলামের পেছনেও বাক্সটা বেশ খানিকটা বিস্তৃত, ফাঁকা, জমাট অন্ধকারে ঢাকা।
দম দেয়ার নিয়ম সবকটা শিকলের জন্যই একই। প্রথমে ভারের ঠিক উপরের অংশটা বাম হাতে তিন আঙ্গুলে আলতো করে ধরে রেখে, ডান হাতে পাশের শিকলটা ধীরে ধীরে নিচে টানতে হয়। তারপর টানের সাথে আস্তে আস্তে যখন ভারটা উপরে ওঠা শুরু করে, তখন খেয়াল রাখতে হয় যেনো বাম হাতটা ভারকে ঠেলে বা টেনে ধরে না রাখে। আঙুলের কাজ শুধুই ভারটাকে সোজা রাখা। ভারটা উপরের মাথা থেকে ঠিক দুই আঙ্গুল নিচে থাকতেই টানা থামিয়ে দিতে হয়। ব্যস, দম দেয়া শেষ।
আয়াজ পুরো ব্যাপারটা খব ভালো মতো বুঝলেও পুরো শিকলটা নাগালে না পাওয়ায় একা দম দিতে পারেনি।
৬.
ঘড়ির সময় পিছিয়ে যাবার ব্যাপারে মাসুদ মিয়ার সোজা সাপটা উত্তর হচ্ছে "সব জ্বীনের আসর আছে আব্বাজি"। মোটামুটি সব কিছুতেই মাসুদ মিয়া জ্বীন দেখতে পায় - আয়াজ এ নিয়ে তাই আর কোনো কথা বাড়ায়নি।
জ্বীন থাকুক আর নাই থাকুক, ঘড়িটা কেন যেন আয়াজকে খুব টানে। সারাদিনে অসংখ্যবার সে ঘুরে যায় ঘড়ির সামনে দিয়ে। তাই ঘড়িটার অনেক খুঁটিনাটি ব্যাপার এখন সে জানে। যেমন, নিচের দিকে পেঁচানো অক্ষরে উৎকীর্ণ 'জেনকিন্স ব্রাদার্স' কথাটা সবার চোখে পড়লেও তার ঠিক নিচে কালের বিবর্তনে ক্ষয়ে যাওয়া আরেকটা লেখা কেউই খেয়াল করেনা।
আয়াজ প্রথমে ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে লেখাটা পড়ার চেষ্টা করেছিলো। পড়তে না পেরে শেষ পর্যন্ত একটা কাগজ এনে লেখাটার ওপর রেখে চারকোল দিয়ে ঘসেছে। পরিষ্কার না বোঝা গেলেও আন্দাজ করা যায়, সেখানে লেখা - 'রবার্ট মাউসি থম্পসন অফ ডার্লিংটন'।
'মাউসি' নামটা সচরাচর শোনা যায় না, আয়াজ ঠিক নিশ্চিত হতে পারছিল না সে ঠিক পড়লো কিনা। আর একই ঘড়িতে দুইরকম নাম লেখাটাও একটা রহস্য। এদের মধ্যে ঘড়ির কারিগর কোন জন? জেনকিন্স ভাইয়েরা? নাকি মাউসি থম্পসন?
খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে অবশ্য এর একটা উত্তর আয়াজ পেয়েছে। পেটমোটা বাক্সের পায়ের কাছে, নকশা কাটা কাজের একদম শেষ মাথায়, খোদাই করা আছে একটা ছোট্ট ইঁদুর - 'মাউসি'। কারিগর তাঁর স্বাক্ষর রেখে গেছেন কাজের মাঝে।
ইঁদুরটা এতই নিখুঁত মুন্সিয়ানার সাথে তৈরী যে নাবিলা আপুকে ডেকে দেখালে সে নির্ঘাৎ চেঁচামেচি শুরু করে দেবে। ইঁদুর, তেলাপোকা আর মাকড়সায় তার অনেক ভয়।
ঘড়িটার আশেপাশে অনেকটা সময় কাটানোতে আয়াজ লক্ষ্য করেছে, যদি সকালে ঘড়ির সময় ঠিক করে দেয়া হয় তাহলে সারাদিনই ঘড়িটা ঠিক সময় দেয়। আয়াজ তার হাতের ক্যাসিওর সাথে সকাল নয়টা, দুপুর তিনটা, সন্ধ্যা ছয়টা, আর রাত নয়টায় ��ময় মিলিয়ে দেখেছে�� ঘড়ি নিখুঁত সময় দিচ্ছে। তাহলে সময়ের গরমিলটা হয় কখন? বারোটার পর?
সে প্রশ্নেরও উত্তর মিলেছে গতকাল। মায়ের স্কাইপ কলের পর বিছানায় শুয়ে ১১ টা পর্যন্ত ঘুমের ভান করছিল আয়াজ। ঠিক যখন ঢং ঢং করে ১২টা বাজলো, সে দৌড়ে গিয়েছিলো করিডোরে - ঘড়িতে বাজছে ১১:৪৫।
৭.
আয়াজ ঠিক করেছে আজ রাতে মায়ের সাথে কথা বলার পর যখন নাবিলা আপু তাকে মশারির নিচে রেখে নিজের রুমে ফিরে যাবে, তখন সে টুক করে গিয়ে সময়টা মিলিয়ে আসবে। দুমিনিটের ব্যাপার।
মায়ের সাথে কথা বলতে আয়াজের খুব ভালো লাগে, কিন্তু আজ সে এতই অস্থির হয়ে আছে যে, তার মনে হচ্ছিল, কথা যেন শেষই হচ্ছে না। কথা শেষ করে বেশ খানিকক্ষণ গড়াগড়ি করে সাড়ে এগারোটার পর আর আয়াজ বিছানায় থাকতে পারলো না। পা টিপে টিপে পৌঁছে গেল ঘড়ির করিডোরে। সাড়ে এগারোটা। ঘড়ি এখনো ঠিক সময় দিচ্ছে। আয়াজ ঘুরে খাবার ঘরে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে এলো। শুধু শুধুই ফ্রিজ খুলে দেখলো একবার। করিডোরে ফিরে এসে দেখলো - ১১:৪৫।
আরেকবার হাত ঘড়ি দেখলো আয়াজ। আর মাত্র পনের মিনিটের মধ্যেই সময়ের গোলমালটা হবে। হঠাৎ আয়াজের মনে খটকা লাগলো, "আচ্ছা, কেউ ইচ্ছে করে সময়টা পিছিয়ে দেয় না তো?" ডানে বামে একবার তাকালো আয়াজ, ফাঁকা করিডোর। নিঃশব্দ বাড়ি। কেউ যদি সময়টা বদলাতে চায় তাহলে এখুনি সময়। হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিলো আয়াজ, দৌড়ে পার হলো করিডোরটা। ঘড়ির নিচের ডালাটা খুলে ফেললো। ভেতরটা বেশ বড় - শিকল, ভার আর পেন্ডুলামের পেছনে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা।
দুলন্ত পেন্ডুলামটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ছোট্ট একটা হিসেব কষে ফেললো আয়াজ। তারপর একটা বড় নিঃস্বাস নিয়ে পেন্ডুলামটা সরে যেতেই, স্যাৎ করে ফাঁক গলে ঢুকে পড়লো ভেতরের অন্ধকার কোণে। হাত বাড়িয়ে টেনে দিলো দরজাটা। এখন কেউ ঘড়ির কাছে এলেও তাকে দেখতে পাবার কোনো উপায় নেই। কিন্তু সে ঠিকই দেখতে পাবে কে বদলায় সময়টা প্রতিদিন।
ভেতর থেকে ঘড়ির শব্দগুলো অনেক জোরালো শোনায়। সেকেন্ডের কাঁটার প্রতিটা টিকের সাথে মিশে থাকে অসংখ্য কলকব্জার খটাখট। সেই সাথে শোনা যায় চাপা গুমগুম শব্দটা। কান পেতে শব্দটা শুনতে শুনতে চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকে আয়াজ। মনে মনে গুনতে থাকে এক, দুই, তিন। এক একটা মিনিট যেনো অনন্ত কাল।
ঘড়ির ভেতরটায় বদ্ধ জায়গায় দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে আয়াজের। হাত ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে ১১:৫৯। এখুনি ১২টা বাজবে। এখনো কেউ এলো না? একটা একটা সেকেন্ড গড়িয়ে যাচ্ছে - ১৫, ১৪, ১৩... ৩, ২, ১... খটখট করে মাথার উপরে ঘন্টা বাজার কলকব্জাগুলো নড়ে উঠলো। শুরু হলো - ঢং ঢং ঢং। কানে একেবারে তালা লেগে গেল আয়াজের। ঘন্টার শব্দগুলো যেন ঘড়ির চারদেয়ালের মা��ে প্রতিধ্বনিত হয়ে আরো জোরালো হয়ে উঠছে।
কেউ আসেনি সময় বদলে দিতে। আশ্চর্য! নড়ে উঠলো আয়াজ, বেরিয়ে আসবে। সময়টা মিলিয়ে দেখবে বাইরে থেকে। মনে মনে ঘন্টার শব্দ গুনলো আয়াজ। ঠিক বারোবার বেজে থামলো ঘন্টা।
ঢং ঢং ঢং... তারপর নীরবতা। চমকে উঠে আয়াজ উপলব্ধি করলো, সেকেন্ডের কাটাটার টিক টিক থেমে গেছে। সাথে থেমে গেছে সামনের পেন্ডুলামটাও।
নৈঃশব্দ্য একমুহূর্তের হলেও আয়াজের মনে হলো যেন সময়ই থমকে গেছে। হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে বাইরে কোথাও একটা ইঁদুর কিঁচকিঁচ করে উঠলো তীক্ষ্ণ স্বরে। তার সাথে পুরো ঘড়িটা হালকা কেঁপে উঠে মাথার উপর ঘর্ঘর করে চলা শুরু করলো ঘড়ির যন্ত্রপাতি।
কিন্তু এবার উল্টো ঘুরতে শুরু করেছে কলকব্জা গুলো। ভেতর থেকেও আয়াজ বুঝতে পারছে ঘড়ির কাঁটাগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে ১৫ মিনিট। ১০ সেকেন্ড দ্রুত উল্টো চলেই আবার থেমে গেল ঘড়ি। টিক টিক টিক... এবার আবার ঠিক দিকে চলছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় বেশ হকচকিয়ে গিয়েছে আয়াজ। এ কেমন ঘড়ির গোলমাল? কাঁচের ডালা খোলার জন্য হাত বাড়িয়েও থমকে গেল আয়াজ।
করিডোরে একজন মানুষের ছায়া দেখতে পাচ্ছে। হলদে আলোতে করিডোরের মাটিতে লম্বা ছায়া। ঘড়ির ভেতর থেকে মানুষটাকে দেখা যাচ্ছেনা।
এ কার ছায়া? এই মানুষটাই কি ঘড়ির সময় পাল্টে দিচ্ছে দূর থেকে?
আয়াজের বুক ঢিপ ঢিপ করছে। অবশেষে রহস্যের সমাধান মিলবে। মানুষটা এগিয়ে আসছে। ঘষা কাঁচের ভেতর থেকে ভালো দেখা না গেলেও আবছা অবয়ব দেখে আয়াজ বুঝতে পারছে মানুষটা হাতঘড়ির দিকে তাকালো একবার। তারপর ডানে বামে একবার তাকিয়ে দৌড়ে এগিয়ে এলো। ঘড়ির নিচের ডালা খুলে উঁকি দিলো ঘড়ির ভেতরে।
আয়াজ চমকে উঠে দেখলো তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে একটা ছেলে মাথা ভর্তি কোঁকড়া চুল আর চোখে ভারী চশমা।
টিক টিক টিক... ঘড়ি চলছে। দুজন আয়াজ তাকিয়ে আছে একজন আরেকজনের দিকে।
...
জাকি হায়দার
ঢাকা, ২০১৮
1 note
·
View note
Text
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ :-----------------------------------------------------: ★-------> # হাদিসে বর্ণিত অাছে,,, কোনো সাপকে মারার অাগে ”"তিনবার তাকে (সাপকে) সাবধান করবে। এরপর ও যদি সে না বের হয়,,, তখন তাকে মেরে ফেলবে। কেননা, সে শয়তান।""” ★★★সূনানে আবু দাউদ : ৫১৬৮, ইফা. : ★------> হযরত সালিম (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,,, রসূল (স্ব:) বলেছেন,,, ""“তোমরা সাপ মারবে এবং সেই সাপ,,, যার পিঠে দু’টি সাদা রেখা আছে এবং যার লেজ নেই। কেননা,,, এরা বিষধর হওয়ার কারণে- দর্শন শক্তি বিনষ্ট করে দেয় এবং গর্ভস্থিত সন্তান ধ্বংস করে দেয়। বর্ণনাকারী বলেন,,, এরপর থেকে আবদুল্লাহ (র.) যে কোনো সাপ দেখতে পেলে তা মেরে ফেলতেন। : ★------> একদা আবু লুবাবা (র.) অথবা যায়দ ইবনে খাত্তব (র.) তাঁকে একটা সাপ মারতে উদ্যত দেখে বললেন,,, নবী (স্ব:) ঘরে বসবাসকারী সাপ মারতে নিষেধ করেছেন। ★★★সূনানে আবু দাউদ, ৫১৬২, ইফা. : ★------> তিনি বলেন,,, মদীনার একদল জ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছে,,, তাই তোমরা যখন তাদের (সাপ) কাউকে দেখবে,,, তখন তাকে তিনবার ভীতি-প্রদর্শন করবে যে,,, ‘''আর বের হবে না,,, অন্যথায় মারা পড়বে।’'' : ★------> হযরত ইয়াযীদ ইবনে মাওহাব (রহ.) আবূ সাই’ব ( র.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,,, একদা আমি আবূ সাঈদ খুদরী (রা.)-এর কাছে এসে বসি। এ সময় আমি ��ার চৌকির নিচে কিছুর আওয়াজ শুনতে পাই। আমি তাকিয়ে দেখি যে,,, একটা সাপ। তখন আমি দাঁড়ালে- আবূ সাঈদ (র.) জিজ্ঞাসা করেন,,, তোমার কি হয়েছে? তখন আমি বলি,,, এখানে একটা সাপ। তিনি বলেন,,, তুমি কি করতে চাও? তখন আমি বলি,,, আমি তাকে মেরে ফেলবো। তখন তিনি তাঁর বাড়ির একটা ঘরের দিকে ইশারা করে বলেন,,, এখানে আমার চাচাতো ভাই থাকতো। খন্দকের যুদ্ধের সময় ���ে রসূলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুমতি চায়,,, কেননা,,, সে তখন নতুন বিয়ে করেছিল। তখন রসূলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দেন এবং বলেন,,, তুমি তোমার হাতিয়ার নিয়ে যাও। সে সে ঘরে ফিরে তার স্ত্রীকে ঘরের দরজার উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,,, তার প্রতি কলম দিয়ে ইশারা করে। তখন তার স্ত্রী বলল,,, তাড়াহুড়া করো না,,, এসে দেখ,,, কিসে আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। তখন সে ঘরে ঢুকে একটা কুৎসিত সাপ দেখতে পায়। সে তাকে বল্লম দিয়ে হত্যা করে এবং বল্লমে তার দেহ ফুঁড়ে বাইরে নিয়ে আসে। : বর্ণনাকারী বলেন,,, আমি জানি না,,, এরপর কে আগে মারা গিয়েছিল- ব্যক্তিটি- না সাপটি। তখন তাঁর কাওমের লোকেরা রসূলুল্লাহ স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলে,,, আপনি দু’আ করুন,,, যাতে আমাদের সাথী বেঁচে যায়। তখন নবী স্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,,, "‘তোমরা তার মাগফিরাতের জন্য দু’আ কর। এরপর তিনি বলেন,,, মদীনার একদল জ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছে,,, তাই তোমরা যখন তাদের (সাপ) কাউকে দেখবে,,, তখন তাকে তিনবার ভীতি-প্রদর্শন করবে যে,,, ‘আর বের হবে না,,, অন্যথায় মারা পড়বে।’ এরপর যদি সে বের হয়,,, তখন তাকে মেরে ফেলবে।’ ★★★সূনানে আবু দাউদ, ইফা.৫১৬৭
0 notes
Text
চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা
তিন চীনা কিংবদন্তী ও পাঁচ সম্রাটের পনের শত বছর
তিন কিংবদন্তী ও পাঁচ সম্রাট চীনাদের প্রথম ঊনিশশত বছরের ইতিহাস রূপকথা ও লোককাহিনী ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। প্রাচীনতম এ ইতিহাসের সাথে রূপকথা ও লোককাহিনী এতটাই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে তাদের ইতিহাস থেকে এ সব রূপকথা ও লোককাহিনী বাদ দিলে ইতিহাস অর্থহীন আর রূপকথা ও লোককাহিনী থেকে ইতিহাস তুলে পৌরাণিক কল্পকথাগুলো আবেদনহীন হয়ে পড়ে। ফলে ইতিহাসবিদেরা চীনাদের রূপকথা ও লোককাহিনী থেকে নিখাঁদ ইতিহাসকে কখনও আলাদা করে দেখাতে পারেনি। রূপকথা ও লোককাহিনী নির্ভর এ ইতিহাসকে তারা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে লালন করছে। রূপকথার তিন কিংবদন্তী আর লোককাহিনীর পাঁচ দেবসম্রাটকে নিয়ে রচিত চৈনিক ইতিহাসের সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। তবুও তারা চীনা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম অংশীদার হিসেবে আজও সমধিক সমাদৃত। তিন কিংবদন্তী হলো ফুসি (Fu Xi), নোওয়া (Nü Wa) ও ইয়াংদি (Yan Di) বা শেংনংশি। পাঁচ সম্রাটের মধ্যে রয়েছে হোয়াংদি (Huang Di) , ঝোয়াংসু (Zhuan Xu), দিকু (Di Ku), ইয়াও (Yao), এবং শুং (Shun)। কল্পকাহিনীর এসব কিংবদন্তীদের সাথে চীনা জাতির উদ্ভব, জাতিগোষ্ঠীর উন্মেষ, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ নিবিড়ভাবে মিশে আছে। প্রাচীন সভ্যতার উৎপত্তি ও বিকাশে নদীর অবদান অনস্বীকার্য। নদীবিধৌত সমভূমিতে কৃষিকাজ, পশুপালন সুবিধার জন্য যাযাবর আদিম মানুষেরা যখন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তখন তারা নদীতীরে জনবসতি গড়ে তোলে। এ কারণে দজলা-ফোরাতের (টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস) মাঝে মেসোপটেমিয়া, নীল নদের অববাহিকায় মিশরীয় সভ্যতা, সিন্ধু নদের তীরে হরপ্পা-মহোঞ্জাদারো সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। চৈনিক সভ্যতার উন্মেষ ও বিস্তারের সাথে হোয়াংহো (Huang Ho) বা ‘হলদে নদী’ ও ইয়াংসি (Yangtze) নদী ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে কারণ পাঁচ হাজার বছর আগে এ দুই নদীর মধ্যবর্তী উপত্যকায় চৈনিক সভ্যতার গোড়াপত্তন ঘটে। হোয়াংহো নদী চৈনিক সভ্যতাকে যেমন সমৃদ্ধি দিয়েছে তেমনিভাবে এ নদীর কয়েক দফা ভয়াবহ বন্যা তাদের মূল্যবান অনেক অর্জন কেড়ে নিয়েছে। এ নদীকে তাই ‘চীনের দুঃখ’ নামে অভিহিত করা হয়। তিন কিংবদন্তী- ফুসি, নোওয়া ও ইয়াংদি বা শেংনংশি তিন কিংবদন্তীর দুই জন- ফুসি ও নোওয়া ভাই বোন। ফুসির বোন নোয়ার হাতে চীনাদের সৃষ্টি। ওদের বাবা ইন্দ্রদেবতাকে বন্দী করে এক পর্বতের গুহায় আটকের রেখেছিল। পানির তেষ্টায় ইন্দ্রদেব ভয়াবহ আর্তচিৎকার শুরু করে। ইন্দ্রদেবের এ আর্তনাদে ফুসি ও তাঁর বোন নুওয়া সেখানে ছুটে যায়। পান করানোর মতো কোনো পানি না পেয়ে দু’জনেই কাঁদতে শুরু করলে ইন্দ্রদেব তাঁদের অশ্রুজল কোশভরে পান করে। অশ্রজল পানের শক্তিতে সে বন্দীশালা ভেঙে বেরিয়ে আসে। প্রতিদানে নিজের একটি দাঁত তাদেরকে দিয়ে সে বলেছিল, ‘তিনদিনের মধ্যে যখন মানব জাতির উপর ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে তখন যেন তারা এই দাঁতের সাহায্যে নিজেদেরকে রক্ষা করে’। মহাপ্লাবনে হলদে ও ইয়াংসির উপত্যকা ভেসে যেতে লাগলো। দাঁতটি একটি কিস্তিতে রূপান্তরিত হলে দুই ভাইবোন তার উপর চড়ে বসলো। সবাই মরে গেলো, ধ্বংস হলো সবকিছু, বেঁচে থাকলো ফুসি ও নোওয়া। এ কাহিনী একটি বিশেষত্ব হলো মহাপ্লাবন, নোওয়া ও তাঁর কিস্তি যার সাথে নূহের (Noah) প্লাবনের একটি সাদৃশ্যরয়েছে। ফুসি ও নোওয়া মহাপ্লাবনের পানি নেমে গেলে নোওয়া মানুষ সৃষ্টিতে মনোনিবেশ করলো। হলদে নদীর মাটি দিয়ে পুতুল বানিয়ে তা জীবন্ত করে তুলতে লাগলো। আজকের চীনারা সেই সব মাটির পুতুলের উত্তরসূরী। ইয়াংদি তৃতীয় কিংবদন্তী ‘লাল সম্রাট’ ইয়াংদি। তিনি কৃষিকাজের লাঙল ও ভেষজশাস্ত্র আবিস্কার করেন। চীনাদেরকে তিনি ষাড়ের সাথে লাঙল জুড়ে জমি চাষ করে গম, ধান, ভুট্টা, ও শিমের চাষাবাদ শেখান। এ জন্য তিনি ‘স্বর্গীয় কৃষক’ নামে পরিচিত। ইয়াংদি ৩৬৫টি ঔষধি গাছের তালিকা প্রণয়ন করেন যার মধ্যে চীনা চায়ের কথা উল্লেখ ছিল। এ তালিকার সূত্র ধরে চীনে ভেষজশাস্ত্রের বুৎপত্তি ঘটে। এ জন্য তাঁকে ‘ভেষজ ঔষধের দেবতা’ও বলা হয়। সম্ভবত, নিজদেহে কোনো এক বিষাক্ত ভেষজের বিষক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পাঁচ সম্রাট- হোয়াংদি, ঝোয়াংসু, দিকু, ইয়াও এবং শুং বর্তমান চীনের প্রধান জাতিগোষ্ঠী হ্যান (Han) কিংবদন্তী ‘লাল সম্রাট’ ইয়াংদি ও পাঁচ সম্রাটের একজন ‘হলদে সম্রাট’ হোয়াংদির বংশধর। হোয়াংহো নদীর তীরে হোয়াংদি আর ইয়াংসির তীরে ইয়াংদি বাস করত। হোয়াংদি যখন তিনি গজদন্তের রথে চড়ে বেড়াতেন তখন বাঘ, সিংহ, সাপ আর ফিনিক্স পাখিরা তাঁর সাথে সাথে ঘুরত। প্রয়োজন হলে তিনি মাঝে মধ্যে ঈশ্বরের সাথে কথাও বলতেন। চীনা সংস্কৃতির উন্মেষে হোয়াংদির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। চীনারা বিশ্বাস করে যে তিনি চীনে আইন ও সরকার ব্যবস্থার প্রচলন করেন, চীনাদেরকে চাকা, কম্পাস, নৌযান তৈরি শেখান এবং সঙ্গীত ও শিল্পকলায় দীক্ষিত করেন। সম্রাট হোয়াংদিসম্রাট দিকুসম্রাট শুংসম্রাট ঝোয়াংসুসম্রাট ইয়াও হোয়াংদির স্ত্রী লেই যু (Lei Zu) একদিন দুপুরে তাঁর বাগানে কোনো এক তুঁত গাছের নীচে বসে যখন চা পান করছিলেন তখন একটি রেশম গুটি তাঁর পেয়ালায় পড়ে। পেয়ালার গরম চায়ে গুটি থেকে ধীরে ধীরে রেশম সুতা বের হতে থাকে। এর পরে তিনি রেশম পোকার জীবন বৃত্তান্ত জানলেন এবং চীনা মহিলাদেরকে রেশম গুটি থেকে সুতা বের করা শেখালেন। পরবর্তীকালে রেশম সিল্কে চীনারা সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছিল। চীনাদের কাছে লেই যু আজো ‘রেশমকীটের মা’ (Silkworm Mother) হিসেবে পরিচিত। হোয়াংদির স্ত্রী লেই যু একবার হলদে ও লাল সম্রাটের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধলো। বর্তমান বেইজিংয়ের কাছাকাছি বাংকোয়াং (Banquan) নামের কোনো এক স্থানে তারা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে। এ যুদ্ধে হলদে সম্রাটের কাছে লাল সম্রাট পরাজিত হলেও দুই সম্রাটের মধ্যে একটি শান্তির সমঝোতা হয়। ফলে হলদে সম্রাটের নেতৃত্বে হলদে ও লাল জাতি একসাথে বসবাস করতে শুরু করে। এ দুই জাতির মিলবন্ধনে নতুন যে জাতিগোষ্ঠী তৈরি হয় এখন তারা হ্যান জাতিগোষ্ঠী নামে পরিচিত। বর্তমানে চীনাদের নব্বই ভাগের বেশী লোক হ্যান জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত। ‘ধ্রুবতারার দেবতা’ ঝোয়াংসু হলদে সম্রাটের নাতি। জ্যোতির্বিদ্যা ও দিনপঞ্জিতে পারদর্শী এ সম্রাট রাজা সলোমোনের মতো তিনি জ্বীন-ভূতের সাহায্যে রাজ্য পরিচালনা করতেন। চীনের মহাপ্লাবন শেষে ফুসি তাঁর বোন নোয়াকে বিয়ে করেছিল, যার ফলশ্রুতিতে চীনা সমাজে সহোদর বিবাহ রীতি প্রচলিত হয়। ঝোয়াংসু এ ধরণের বিবাহপ্রথা রদ করে। তিনি চীনের প্রভাবশালী কিং (Qing) রাজবংশের পূর্বপুরুষ। চীনা সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র আবিস্কার করেছিলেন হলদে সম্রাটের প্রপৌত্র লোককাহিনীর পঞ্চম সম্রাট দিকু। ‘সাদা সম্রাট’, ‘দেব সম্রাট’ নামে অভিহিত দিকু চীনের শাং (Shang) ও চৌ (Chou/Zhou) রাজবংশের পূর্বপুরুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি বসন্ত-গ্রীষ্মে ড্রাগেন ও হেমন্ত-শীতে ঘোড়ায় চলাচল করতেন। দিকুর দ্বিতীয় স্ত্রী জিয়ানদি (Jiandi) একবার এক কালো পাখির ডিম গলাধঃকরণ করলে ঐ ডিমের প্রভাবে সে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ে। এই পুত্রসন্তান কি (Qi) শাং রাজবংশের দ্বিতীয় পিতৃপুরুষ। দিকু আরেক স্ত্রীর জিয়াং ইউয়াং (Jiang Yuan) কোনো এক দেবতার পায়ের ছাপের উপর পা দেবার কারণে গর্ভবতী হয়ে পড়ে, ফলে জন্ম নেয় হৌজি (Hou Ji) যিনি চৌ রাজবংশের পূর্বপুরুষ। দেব সম্রাটের পুত্র ইয়াও তাঁর শাসনামলে ভয়াবহ এক খড়ার হাত থেকে চীনাদেরকে রক্ষা করেছিলেন। এ কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল হৌইয়ই (Houyi) নামের এক তীরন্দাজ। সে সময়ে দশটি জ্বলজ্বলে সূর্যের তাপদাহে ইয়াওয়ের সাম্রাজ্যের নদী-নালা-খাল-বিল সব শুকিয়ে যাচ্ছিল। সূর্যের এ ভয়াবহতা কমানোর জন্য হৌইয়ই তীর মেরে নয়টি সূর্যকে মাটিতে নামিয়ে আনেন। ইয়াও শাসনামলের অন্যান্য অবদানের মধ্যে ঋতুভেদে কৃষিকাজের সুবিধার্থে পঞ্জিকাবর্ষ সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। সম্রাট হিসেবে ইয়াও ছিলেন সুবিবেচক, ন্যায়পরায়ন ও মানবহিতৈষী। তিনি শহরের সামনে একটি কাঠের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছিলেন যেখানে দাড়িয়ে সাধারণ মানুষ তাঁর শাসনের দূর্বলতাগুলো তুলে ধরতে পারতেন। তিনি বলতেন, ‘রাজ্যের একটি মানুষও যদি ক্ষুধার্ত থাকে সেজন্য আমি দায়ী’। সম্রাট ইয়াও শাসক হিসেবে এতটাই দায়িত্বশীল ছিলেন যে, তিনি যখন বুঝতে পারলেন তাঁর সন্তান ড্যাংঝু (Danzhu) যথাযথভাবে রাজ্য শাসনে অক্ষম তখন তিনি তাঁর রাজ্য অমাত্য শুংকে রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করার জন্য নিজের দুই কন্যাকে তাঁর সাথে বিবাহ দিয়ে শুংয়ের রাজ্যাভিষেক করেন। সম্রাট হিসেবে তো বটেই ব্যক্তি হিসেবেও শুং এতটাই দায়িত্বশীল ছিলেন যে সৎ মা, সৎ ভাইয়ের শত অত্যাচারের সহ্য করেও তিনি তাদের প্রতি নিজের দায়িত্ব-কর্তব্যকে কখনও অবহেলা করেননি। শুং তাঁর সাম্রাজ্যকে বারটি অঞ্চলে বিভক্ত করে পালাক্রমে সকল অঞ্চলে ভ্রমণ করে প্রজাদের সুখ দুঃখের খোঁজ-খবর নিতেন। প্রজাদের ধর্মীয় উৎকর্ষের জন্য তিনি প্রতিটি অঞ্চলে স্ব-স্ব দেবতার পূজা-অর্চণা, উৎসর্গের স্থান নির্ধারণ আর ইয়াওয়ের মতো কৃষিকাজের সুবিধা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদী খনন করেছিলেন। সুবিচারক হিসেবেও শুংয়ের খ্যাতি ছিল। যখন কৃষকদের মধ্যে গোলযোগ দেখা দেয়, যখন মৎসজীবীরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, কুমোর পাড়াতে মাটির বাসন-কোসন উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল তখন তিনি কৃষক-জেলে-কুমোরদের সাথে মাসের পর মাস সময় কাটিয়ে তাদের সব সমস্যার সমাধান করেছিলেন। চীনা তিন কিংবদন্তী ও পাঁচ সম্রাটের রূপকথা ও লোককাহিনী ঐতিহাসিক সময়কাল ৩৫০০-২০৭০ খ্রিঃপূঃ। Read the full article
0 notes