#UnitedMuslimUmmah
Explore tagged Tumblr posts
quransunnahdawah · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের স���ল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে ��্রায় দুইশো কোটির বৃহ��� একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থ���।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ��ক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
tawhidrisalatakhirah · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
ilyforallahswt · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
myreligionislam · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
allahisourrabb · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভ���ই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
mylordisallah · 3 months ago
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
ঐক্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি একতা, ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্যপূর্ণ বন্ধন। আর মুসলিম ঐক্য বলতে বুঝায় দেশ-জাতি, ভাষা,বর্ণ ও অঞ্চল ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হয়ে সকল মুসলিমরা নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব একাত্মতা পোষণ করা। অর্থাৎ বিশ্বের সকল মুসলিম একটি দেহের ন্যায় আবদ্ধ হওয়া, যেখানে থাকবে না কোন ব্যক্তি স্বার্থ। সবাই ভৌগোলিকভাবে দূরে থাকলেও সম্পর্ক হবে এক ও অভিন্ন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমারা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো (ঐক্যবদ্ধ হও) এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ১০৩)। এখানে রজ্জু দ্বারা দ্বীন-ইসলামকে বুঝানো হয়েছে। একে রজ্জু এজন্যই বলা হয়েছে যে, এক দিকে আল্লাহর সাথে ঈমানদার লোকদের সস্পর্ক স্থাপন হয় এবং অন্যদিকে সমস্ত মুসলিমরা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ ও মিলিত হয়ে একটি দৃঢ় ও শক্তিশালী জাতিতে রূপান্তরিত হয়। এই রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করার অর্থ এই যে, এ দ্বীনকে আল্লাহর জমিনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা করা করা এবং এক মুসলমান অপর মুসলমানকে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর কল্যাণে প্রতিটি মুসলমানের একাত্মতা ঘোষণা করা অবশ্যই কর্তব্য। সকল মুসলিম জনগোষ্ঠী ভাই-ভাই। এক মুসলমান ভাইয়ের কোন সমস্যা পরিলক্ষিত হলে বা এক মুসলমান নির্যাতিত হলে অপর মুসলমান ভাই তার সাহায্যে এগিয়ে যাবে। কুরআন মাজিদে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সূরা হুজরাত : আয়াত ১০)।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আজ এই দীক্ষা থেকে শত মাইল দূরে সরে গেছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলে আজ মুসলমান পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক ভাইয়ের সেটা ভুলে গিয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, যদি কোন জনসমষ্টি, রাষ্ট্র বা গোত্র পরাশক্তির অধিকারী হতে চায়, তবে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজেদের মধ্যে দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। এই বিষয়টির সঠিক জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী দেশগুলো এবং ইহুদি ও খ্রিস্টানরা তাদের মধ্যকার ঐতিহাসিক শত্রুতাকে ভুলে নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে একই প্লাটফর্মে সমবেত হয়েছে। আর অন্যদিকে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ভৌগলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত, জাতিভিত্তিক ও রাজনৈতিক সীমার বিভাজনেই শুধু বিভক্ত নয় বরং তারা হাজার দলে বিভক্ত হয়ে নিজেদের সকল বীরত্বের ইতিহাস ভুলে যেতে বসেছে। বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে অনৈক্য ও অসংহতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটির বৃহৎ একটি মুসলিম জনশক্তি রয়েছে।
পৃথিবীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ ভূমি মুসলমানদের দখলে রয়েছে। তবুও বিশ্বের অন্যান্য শক্তির কাছে তারা আজ নত। দেশে দেশে আজ মুসলিমরা লাঞ্ছিত ও নিষ্পেষিত হচ্ছে । মজলুম মানুষের কান্নায় আকাশ ভারী হচ্ছে। কখনো কী ভেবে দেখেছি যে, মুসলমানদের এই অবস্থা হলো কেন? আর এর উত্তরে একমাত্র যে কারণ তা হলো, মুসলিম উম্মাহর ভেতরে ঢুকে গেছে অনৈক্যের বীজ। মুসলিম বিশ্ব আজ শত দলে বিভক্ত। উম্মাহর এই অনৈক্য ও অসংহতি সৃষ্টি করছে মারাত্মক বিষক্রিয়ার। ফলে তারা কাটাচ্ছে মুমূর্ষু অবস্থা।
অনৈক্যের কারণে বর্তমান বিশ্বে মজলুম মুসলিমদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে মুসলিমরা ক্রমাগত তাদের ন্যায্য অধিকার হারাচ্ছে। নিজ ভূ-খ-ে নিজেরাই দাসে পরিণত হচ্ছে। এমনকি নিজেরাই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে জড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে নিজেরা এক মুসলিম সম্প্রদায় অন্য মুসলিম সম্প্রদায়কে বহিরাগত আক্রমণ থেকে রক্ষা করার কথা ছিলো। ক্রমাগত মজলুম মুসলমানদের নীরব কান্না বেড়েই চলছে। সাম্প্রতিক ফিলিস্তিনের গাজা এলাকায় ইসরাইলি দখলদার বাহিনী যে গণহত্যা তান্ডব চালাচ্ছে, যেখানে মুসলিম বিশ্ব নীরব। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সংগঠন ওআইসি, আরবলীগ থেকেও তাদের স্বাধীনতার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
পশ্চিমা দেশগুলো যেভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট দিয়ে আসছে, তার কিয়দংশও যদি মুসলিম বিশ্ব বা ওআইসি, আরবলীগের মতো সংগঠন দিতো তাহলে আজকে এই দূরাবস্থায় পড়তে হতো না। শুধু ফিলিস্তিন নয়, সিরিয়া থেকে শুরু করে, ইরাক, চীন, ভারত, মিয়ানমারসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এখন নির্যাতন-নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু হলো মুসলিম সম্প্রদায়। মুসলিম ঐক্য থাকলে আজ ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলো এমন সাহস পেত না। সুতরাং এখান থেকেও বুঝা যায় যে,মুসলিম ঐক্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উম্মাহের এই ক্রান্তিলগ্নে ঐক্যর কোন বিকল্প নেই।
যখন সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী একত্র হবে, নিজেরা নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হবে এবং মজলুম মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবে, তখন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি গুলোও ভয় পাবে। মজলুম, নির্যাতিত মুসলিমরা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। দখলদার ইজরাইলের হাত থেকে এবং সকল নিপীড়িত মুসলিম কলোনি স্বাধীন হবে। মুসলিমরা আবার নিজেদের শক্তি ফিরে পাবে। মুসলিম ঐক্যের দ্বারাই আবার মুসলিমদের শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
বিশ্ব মুসলিমের ঐক্য : কুরআনের দাবি
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন; নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে নিষেধ করেছেন এবং এই ঐক্যের বন্ধন হিসেবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সূরা আলে-ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতাংশে আল্লাহ তায়ালা তিনটি নির্দেশ দিয়েছেন- ১. মুসলমানদের আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকতে হবে। বেশির ভাগ তাফসিরকারকের মতে, ‘আল্লাহর রজ্জু’ বলতে পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই কুরআনই ইসলামের মূল ভিত্তি এবং কুরআনের বাস্তব নিদর্শন মহানবী সা:-এর সুন্নাহ। মুসলমানদের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন ও নবীর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকা। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অনুসরণ করা। ২. কুরআনের ভিত্তিতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ অর্থাৎ একমাত্র ইসলামই বিশ্ব মুসলমানের ঐক্যের ভিত্তি ও বন্ধন। ইসলাম ভিন্ন অন্য কিছু- ভাষা, গোত্র, বর্ণ কিংবা আঞ্চলিকতা মুসলমানদের ঐক্যের মূল ভিত্তি হতে পারে না। এগুলো ইসলামের অধীনে ঐক্যের অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ৩. নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা বা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না। মুসলমানরা যদি নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, দল-উপদলে বিভক্ত হয়, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয় এবং একে অপরের বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করে তা হবে আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
মুসলমানরা যেন একতাবদ্ধভাবে থাকে এবং নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ও ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে কুরআনে আল্লাহ তায়ালার আরো নির্দেশ রয়েছে।
মুসলমানদের পরস্পরের সম্প্রীতি ও ভালোবাসা তথা ঐক্যকে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি তাঁর ‘নিয়ামত’ বলে উল্লেখ করেছেন। মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর সাহচর্যে এসে তাঁর আনীত দ্বীন গ্রহণ করে মক্কার মুহাজির ও মদিনার আনসার এবং মদিনার চিরবৈরী আউস ও খাজরাজ গোত্র পরস্পরের ভাই ভাই হয়ে গেল- আল্লাহ বলেন : ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিগর্তের দ্বারপ্রান্তে ছিলে, তিনি তোমাদের তা থেকে রক্ষা করেছেন’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৩)।
আল্লাহ পাক বলেন : ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত-১০৫)।
আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘মুমিনরা পরস্পরের ভাই ভাই; কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে দাও। আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও’ (সূরা হুজুরাত-১০)। এই আয়াত দুনিয়ার সব মুসলমানকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। প্রত্যেক মুসলিম অপর মুসলিমকে নিজের ভাইয়ের মতো আপন মনে করবে, এটি আল্লাহর আদেশ। অতএব একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ঘৃণা করতে পারে না, তার কোনো অনিষ্ট চিন্তা করবে না, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে পারে না। যারা এরূপ করবে তারা অবশ্যই কুরআনের এই আদেশ লঙ্ঘনকারী।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই। সে তার ওপর জুলুম করবে না, তাকে সহযোগিতা করা পরিত্যাগ করবে না এবং তাকে লাঞ্ছিত ও হেয় করবে না। কোনো ব্যক্তির জন্য তার কোনো মুসলিম ভাইকে হেয় ও ক্ষুদ্র করার মতো অপকর্ম আর নেই’ (মুসনদে আহমাদ; ১৬/২৯৭, ৭৭৫৬)। তিনি আরো বলেছেন : ‘একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার ওপর অত্যাচার করতে পারে না, তাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে না’ (বুখারি : ২৪৪২; মুসলিম ২৫৮০)।
পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের এসব আদেশ ও নিষেধ বিশ্বের সব মুসলমানের ওপরই প্রযোজ্য। যিনি যে অবস্থায়ই আছেন, তার সে অবস্থাতেই এ সব আদেশ-নিষেধ পালন করা কর্তব্য। কুরআন হাদিসের আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করলে মুসলমানের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকা কুরআনের নির্দেশ। বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের পক্ষে কাজ করা, কথা বলা কিংবা নিদেনপক্ষে এর আকাক্সক্ষা পোষণ করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য, এটি তার ঈমানের দাবি। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মন্দ অবস্থা অবলোকন করে, তখন তার উচিত শক্তি প্রয়োগ করে তা ঠিক করে দেয়া; যদি তা সম্ভব না হয় তবে তার বিপক্ষে কথা বলে তা ঠিক করার চেষ্টা করা, যদি তাও সম্ভব না হয় তা দূর করার জন্য আকাক্সক্ষা প্রকাশ করা উচিত। এটি ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর’ (মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিষয়ে আয়াত
ইসলামের পক্ষের সকল শক্তিকে আল্লাহতায়ালা ঐক্যবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘মুমিনরা পরস্পর ভাই’। কখনও বলেছেন-‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্তভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’। তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)  আবার বলেছেন, ‘মুহাম্মদ সা.-এর সাথীরা কাফিরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর রহমদিল’। নিজেদের ঐক্য নষ্ট করে যারা পরস্পর দলাদলি করে তাদেরকে কাফির আখ্যায়িত করে সূরা আল ইমরানের নিম্নোক্ত আয়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ‘তোমরা যেন তাদের মত হয়ে যেয়ো না, যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং সুস্পষ্ট ও প্রকাশ্য হিদায়াত পাওয়ার পরও মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে। যারা এ নীতি অবলম্বন করেছে তারা সেদিন কঠিন শাস্তি পাবে। সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফুরি নীতি অবলম্বন করলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এই নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আজাবের স্বাদ গ্রহণ করো। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর রহমতের আশ্রয় লাভ করবে এবং চিরকাল তারা এই অবস্থায় থাকবে। এগুলো আল্লাহর বাণী, তোমাকে যথাযথভাবে শুনিয়ে যাচ্ছি। কারণ দুনিয়াবাসীদের প্রতি জুলুম করার কোন এরাদা আল্লাহর নেই।’ (সূরা আল ইমরান : ১০৫-১০৮) আল্লাহতায়ালা আরো বলেন- ‘এবং তোমাদের এ জাতি একই জাতি এবং আমিই তোমাদের প্রতিপালক; অতএব আমাকে ভয় কর। কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের দ্বীনকে বহুধা বিভক্ত করেছে, প্রত্যেক দলই তাদের নিকট যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত।’ (সূরা মু’মিনুন : ৫২-৫৩) ‘যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।’ (সূরা আন’আম : ১৫৯)
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং দিকনির্দেশনা
youtube
মুসলিম উম্মার ঐক্য ও ঐক্যের দিক নির্দেশনা
youtube
মুসলিমদের ঐক্যের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি?
youtube
উম্মতের ঐক্য- Unity of Ummah
youtube
মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য 
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
youtube
মুসলিম ঐক্য : বর্তমান মুসলিম উম্মাহর বিভক্তির সমাধান
Muslim Unity: A solution to the current division of the Muslim Ummah
0 notes
khutbahs · 3 years ago
Photo
Tumblr media
মুসলিম উম্মাহর করণীয়
#Muslim #Ummah #OneUmmah #MuslimUmmah পবিত্র কোরআন যে পরিভাষাটি ব্যবহার ও নির্বাচন করেছে তা হলো ‘মুসলিম উম্মাহ’। আল-কোরআনের কোথাও মুসলিম বিশ্ব, ইসলামী বিশ্ব, ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ এই সকল শব্দ ব্যবহার করেনি। এই সকল শব্দের পরিবর্তে -কোরআন আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহ বলে সম্বোধন করেছে। সকল মুসলমান যেন কিয়ামত পর্যন্ত এই চিন্তা ও চেতনার আলোকে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে পারে। আল্লাহর সাহায্য লাভের জন্য যেটা আবশ্যক তা হ’ল- প্রথমে বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা অতঃপর সেই মোতাবেক আমল করা। নতুবা উক্ত জ্ঞান মন্দ পরিণতিই বয়ে আনবে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা কর না? আল্লাহর নিকটে বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা এমন কথা বল, যা তোমরা কর না?’ (ছফ ৬১/৩)।https://www.youtube.com/watch?v=Lg4TXAVpuzM
0 notes
khutbahs · 3 years ago
Photo
Tumblr media
উম্মাহ কে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে
মুসলমান মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এখন জরুরী বিষয় তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) দুনিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটেছে ঐক্যের পয়গাম নিয়ে। অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার আবর্তে গোটা মানবজাতি যখন পর্যুদস্ত, তখন ইসলামই মুসলমানদের আদেশ দিয়েছে ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধারণ কর।’ আল্লাহতায়ালা মুসলমানকে সর্বক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আদেশ করেছেন। ইসলামের মূল লক্ষ্য পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করা।
https://www.youtube.com/watch?v=AaE7MOMjKwo
0 notes
khutbahs · 4 years ago
Link
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য
মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এখন জরুরী বিষয়|||
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩)
দুনিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটেছে ঐক্যের পয়গাম নিয়ে। অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলার আবর্তে গোটা মানবজাতি যখন পর্যুদস্ত, তখন ইসলামই মুসলমানদের আদেশ দিয়েছে ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধারণ কর।’ আল্লাহতায়ালা মুসলমানকে সর্বক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ থাকতে আদেশ করেছেন। তার একটি বড় কারণ হলো, শুধু আনুষ্ঠানিক ব্যক্তিগত ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ইসলামের দাবি পূরণ হয় না। ইসলামের মূল লক্ষ্য পৃথিবীকে জঞ্জাল ও কলুষমুক্ত করা। এ পথে সামগ্রিক ও সর্বাত্মক ঐক্যই হচ্ছে তাদের মূল হাতিয়ার।
ইসলামের এই অমর শিক্ষাকে ধারণ করে মুসলমানরা দুনিয়ার বুকে অসাধ্য সাধন করেছে। তারা দুনিয়ার বুকে সভ্যতা ও সংস্কৃতির এক নব যুগের দ্বারোদ্ঘাটন করেছে। বলা বাহুল্য, ঐক্যের বলেই তাদের পক্ষে এই অসাধ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যখনই মুসলমানরা ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনৈক্য ও দলাদলির পথে পা বাড়িয়েছে, গোষ্ঠীগত, জাতিগত, মতাদর্শ ও মত-পথের বিভাজন দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে ইসলামের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তখনই তারা সব গৌরব হারিয়ে একটি হতভাগা জাতিতে পরিণত হয়েছে। তারা সভ্যতা-সংস্কৃতিতে পিছিয়ে পড়েছে। আজ দুনিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা দেড়শ’ কোটির বেশি হওয়া সত্ত্বেও শক্তি ও প্রতিপত্তিতে তারা অন্যান্য জাতির তুলনায় অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে। একমাত্র অনৈক্যের কারণেই মুসলমানদের ওপর দুর্ভাগ্যের এই অমানিশা চেপে বসেছে। আল্লাহতায়ালা কোরআন মজিদের বিভিন্ন আয়াতে বার বার বিভিন্নভাবে ঐক্যের জন্য তাগিদ করেছেন এবং বিচ্ছিন্নতা, বিভেদ ও অনৈক্যকে বিপজ্জনক এবং মুশরিকদের ও জাহিলিয়াত যুগের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করে তা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর একত্ব সম্পর্কে কোরআন মজিদে ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমাদের এ উম্মাহ্ নিঃসন্দেহে এক অভিন্ন উম্মাহ। আর আমিই তোমাদের রব; অতএব তোমরা আমারই দাসত্ব-আনুগত্য কর। আর তারা (অনৈক্যের নায়করা) তাদের বিষয়কে (দ্বীনকে) পারস্পরিকভাবে টুকরো টুকরো ও বিভক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু (তাদের এ মারাত্মক কাজ করার আগে মনে রাখা উচিত ছিল যে,) প্রত্যেককেই আমাদের কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (আল-আম্বিয়া : ৯২-৯৩)।
আরও এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ��কত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।’ (আলে ইমরান : ১০৩)।
বস্তুত দ্বীনে বিভক্তি ও নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের সৃষ্টি করে বহুধাবিভক্ত হয়ে যাওয়া মুশরিকদেরই বৈশিষ্ট্য, তাওহিদবাদীদের নয়। কারণ বহু ‘ইলাহ’র পূজা থেকে বহু দলে বিভক্তি অপরিহার্য। অবশ্য মাটি ও পাথরের দেবমূর্তি নির্মাণ ও তার পূজা, অদৃশ্য দেবমূর্তি তথা নফসের পূজারই বহিঃপ্রকাশ মাত্র। প্রবৃত্তিকে ‘ইলাহ’ হিসেবে গ্রহণ করা থেকেই এক আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তার মোকাবিলায় দৃশ্য-অদৃশ্য দেব-দেবী রচনার কাজ সংঘটিত হয়। কিন্তু যে ব্যক্তি স্বীয় নফসকে একমাত্র রব ও ইলাহ আল্লাহতায়ালার আনুগত্যে নিঃশর্তভাবে সোপর্দ করে দিয়েছে, সে কখনও মুশরিকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভেদ ও অনৈক্যের নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা নিজেদের দ্বীনকে বিভক্ত বা বিচ্ছিন্ন করেছে এবং নিজেরা বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়েছে। (আসলে) প্রতিটি দলই তাদের নিজেদের কাছে যা কিছু আছে তা নিয়েই আনন্দে নিমগ্ন হয়ে রয়েছে।’ (আর রুম : ৩১-৩২)।
অবশ্য দ্বীনের কাজ বা কোনো ভালো উদ্দেশ্যে মুমিনদের মধ্যকার কিছু লোক যদি দলবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ হয় এবং তা যদি মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্যে ফাটল না ধরায় এবং তারা তাদের দ্বীন থেকে খারেজ বা বাতিল বলে গণ্য না করে তাহলে এ ধরনের সংঘবদ্ধতা নিন্দিত দলাদলি বা বিভক্তি বলে গণ্য হবে না। এটা মূলত ঐক্যের মধ্যে থেকেও কাজ ও অঙ্গনের বিভক্তি, যা দোষণীয় নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যত রকমের দ্বীনি ও বৈষয়িক দল, গোষ্ঠী ও সংগঠন রয়েছে নগণ্যসংখ্যক ব্যতিক্রম বাদে প্রায় সবার মধ্যে নেতিবাচক ও অবাঞ্ছিত বৈশিষ্ট্যগুলোই বিদ্যমান। এ থেকে বাঁচতে হবে।
0 notes
mylordisallah · 1 year ago
Text
Tumblr media
Unity of the Muslim Ummah
Come together and hold fast to the rope of Allah (Al-Qur'an i.e. the religion of Allah) and do not engage in factions. (Surah Ale-Imran:103) The unity of the Muslim Ummah will be the foundation of unity." Habalullah "- Islam is the system of life given by Allah. Islam is the only correct life-philosophy and way of life for people. Allah has sent this way of life to the earth to promote it and keep it victorious. And for this work, Muslims should always be organized and united.
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকার উপায়
তোমরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে (আল-কোরআন তথা আল্লাহর দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং দলাদলিতে লিপ্ত হয়ো না।( সুরা আলে-ইমরান:১০৩) মুসলিম উম্মাহর ঐক্য জরুরী বিষয় ঐক্যের ভিত্তি হবে "হাবলুল্লাহ্''- ইসলাম আল্লাহর প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা। একমাত্র ইসলামই মানুষের জন্যে নির্ভুল জীবন-দর্শন ও জীবনাদর্শ। আল্লাহ এই জীবনাদর্শ প্রেরণ করেছেন পৃথিবীর বুকে এটিকে প্রবর্তিত ও বিজয়ী করতে এবং বিজয়ী রাখতে। আর এই কাজের জন্যে মুসলিমদের সর্বদা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা চাই।
youtube
youtube
মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ থাকার উপায়
0 notes