Tumgik
#সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২
quransunnahdawah · 2 months
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
What does Islam say about oppression and oppression
ইসলামে সব ধরণের জুলুম/অত্যাচার কঠোরভাবে হারাম। জুলুমকারী সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করে নিয়েছেন। এটি মানুষের জন্যও নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। কোরআন-সুন্নাহর একাধিক বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।
জুলুমকে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন মর্মে হাদিসে কুদসিতে নবিজী ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের উপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
শুধু জুলুম বা অত্যাচার করাই হারাম নয়, বরং অন্যকে জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালিম/অত্যাচারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম।
জালেমদের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা
মানুষের ওপর জুলুম করা ভয়াবহ গুনাহ ও মারাত্মক শাস্তির কারণ। যার শাস্তি কোনো না কোনো উপায়ে দুনিয়ার জীবন থেকেই শুরু হয়ে যায়। অহংকার ও গর্বের কারণে জালেম/অত্যাচারীরা মনে করে, কেউ তাদেরকে কখনো পাকড়াও করবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তাদেরকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এভাবে-
১. ‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা : আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। হাদিসে পাকেও এ সতর্কবাণী এসেছে এভাবে-
‘অত্যাচার করা থেকে দূরে থাকো! কারণ অত্যাচার কেয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’ (মুসলিম)
২. ‘(হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে।
ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজ���দের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।
(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)
জুলুমের শাস্তি
জাহান্নামে জুলুম/জালেমদের অনেক ধরণের কঠোর শাস্তি রয়েছে। জুলুমের অপরাধী/জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে; তার বিবরণ থেকে বুঝা যায়; জাহান্নাম কত কঠিন জায়গা। আর জুলুমের শাস্তি কত মারাত্মক! হাদিসে পাকে এসেছে-
নুমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেওয়া হবে যে ব্যক্তিকে; সে হলো তার পায়ের তলাতে দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে, যার কারণে তার মাথার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় উথলাতে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং সাবধান!
জালেম ও জুলুমের শাস্তি হবে কঠিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২)
মুমিন মুসলমানের উচিত, জুলুম থেকে বিরত থাকা। জুলুমের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর সতর্কবার্তা অনুযায়ী নিজেদের জুলুম থেকে বিরত রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে জুলুম ও জালেম হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি কী? 
youtube
অন্যের প্রতি জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
পৃথিবীর বুকে আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ, যাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত গ্রন্থ ‘কুরআনুল কারিম’ নাজিল করেছেন। তাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেছেন। পরকালীন জীবনে কোনো আদম সন্তানই জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও নাড়াতে পারবে না বলে বিশ্বনবি (সা.) ঘোষণা করেছেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
তাই মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ, জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তাআলার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলার মাজলুমের চাওয়া-পাওয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। সুতরাং মানুষের উচিত, দুনিয়ার কোনো সৃষ্টির প্রতিই জুলুম অত্যাচার না করা।
জুলুমের পরিচয় : যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। সে হিসেবে কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।
জুলুমের ভয়াবহতা : শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম। ইসলাম মতে, মানুষের ওপর জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। এ কারণে পরকালে দোজখে প্রবেশ করতে হবে।
জুলুম থেকে বাচার উপায় : জুলুম থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হচ্ছে লালসা, ক্ষমতার লোভ, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, ক্রোধ থেকে আত্মসংবরণ করা এবং জনসেবা, ধর্মীয় সেবা ও পরোপকারমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা আর হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে, হালাল টাকা-পয়সার মাধ্যমে পানাহারে, পোশাক-আশাকে সন্তুষ্ট থাকা।
সমাজের অনেকেই ধর্মপ্রাণ হিসেবে ধর্মকর্মে অগ্রগামী হলেও অন্যের ওপর জুলুম-অত্যাচারে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে সমাজের সহজ-সরল ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের ওপর। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই দুর্বল শ্রেণির লোকদের ওপর জুলুমকে অনেকেই অপরাধ মনে করেন না। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জুলুমের শাস্তি : আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি (যার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে) জালেমকে (অত্যাচারী ব্যক্তিকে) মাফ না করেন। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য। (বোখারি ও মুসলিম)
জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা আন নাহল : ৯০)
পবিত্র কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালেমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে কর না। তবে তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। সেদিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২-৪৫)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা আশ শু‘আরা : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা আল আন‘আম : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা আর রূম : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ১৪৯৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
0:00 / 10:14
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জালেম শাসকের জুলুম অত্যাচারকে যারা সমর্থন করে তারা রাসূল (সাঃ)এর উম্মত না!
youtube
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
What does Islam say about oppression and oppression?
জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
0 notes
tawhidrisalatakhirah · 2 months
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
What does Islam say about oppression and oppression
ইসলামে সব ধরণের জুলুম/অত্যাচার কঠোরভাবে হারাম। জুলুমকারী সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করে নিয়েছেন। এটি মানুষের জন্যও নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। কোরআন-সুন্নাহর একাধিক বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।
জুলুমকে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন মর্মে হাদিসে কুদসিতে নবিজী ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের উপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
শুধু জুলুম বা অত্যাচার করাই হারাম নয়, বরং অন্যকে জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালিম/অত্যাচারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম।
জালেমদের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা
মানুষের ওপর জুলুম করা ভয়াবহ গুনাহ ও মারাত্মক শাস্তির কারণ। যার শাস্তি কোনো না কোনো উপায়ে দুনিয়ার জীবন থেকেই শুরু হয়ে যায়। অহংকার ও গর্বের কারণে জালেম/অত্যাচারীরা মনে করে, কেউ তাদেরকে কখনো পাকড়াও করবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তাদেরকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এভাবে-
১. ‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা : আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। হাদিসে পাকেও এ সতর্কবাণী এসেছে এভাবে-
‘অত্যাচার করা থেকে দূরে থাক��! কারণ অত্যাচার কেয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’ (মুসলিম)
২. ‘(হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে।
ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।
(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, ��খন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)
জুলুমের শাস্তি
জাহান্নামে জুলুম/জালেমদের অনেক ধরণের কঠোর শাস্তি রয়েছে। জুলুমের অপরাধী/জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে; তার বিবরণ থেকে বুঝা যায়; জাহান্নাম কত কঠিন জায়গা। আর জুলুমের শাস্তি কত মারাত্মক! হাদিসে পাকে এসেছে-
নুমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেওয়া হবে যে ব্যক্তিকে; সে হলো তার পায়ের তলাতে দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে, যার কারণে তার মাথার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় উথলাতে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং সাবধান!
জালেম ও জুলুমের শাস্তি হবে কঠিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২)
মুমিন মুসলমানের উচিত, জুলুম থেকে বিরত থাকা। জুলুমের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর সতর্কবার্তা অনুযায়ী নিজেদের জুলুম থেকে বিরত রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে জুলুম ও জালেম হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি কী? 
youtube
অন্যের প্রতি জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
পৃথিবীর বুকে আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ, যাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত গ্রন্থ ‘কুরআনুল কারিম’ নাজিল করেছেন। তাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেছেন। পরকালীন জীবনে কোনো আদম সন্তানই জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও নাড়াতে পারবে না বলে বিশ্বনবি (সা.) ঘোষণা করেছেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
তাই মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ, জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তাআলার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলার মাজলুমের চাওয়া-পাওয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। সুতরাং মানুষের উচিত, দুনিয়ার কোনো সৃষ্টির প্রতিই জুলুম অত্যাচার না করা।
জুলুমের পরিচয় : যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। সে হিসেবে কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।
জুলুমের ভয়াবহতা : শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম। ইসলাম মতে, মানুষের ওপর জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। এ কারণে পরকালে দোজখে প্রবেশ করতে হবে।
জুলুম থেকে বাচার উপায় : জুলুম থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হচ্ছে লালসা, ক্ষমতার লোভ, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, ক্রোধ থেকে আত্মসংবরণ করা এবং জনসেবা, ধর্মীয় সেবা ও পরোপকারমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা আর হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে, হালাল টাকা-পয়সার মাধ্যমে পানাহারে, পোশাক-আশাকে সন্তুষ্ট থাকা।
সমাজের অনেকেই ধর্মপ্রাণ হিসেবে ধর্মকর্মে অগ্রগামী হলেও অন্যের ওপর জুলুম-অত্যাচারে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে সমাজের সহজ-সরল ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের ওপর। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই দুর্বল শ্রেণির লোকদের ওপর জুলুমকে অনেকেই অপরাধ মনে করেন না। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জুলুমের শাস্তি : আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি (যার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে) জালেমকে (অত্যাচারী ব্যক্তিকে) মাফ না করেন। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য। (বোখারি ও মুসলিম)
জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা আন নাহল : ৯০)
পবিত্র কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালেমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে কর না। তবে তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। সেদিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২-৪৫)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা আশ শু‘আরা : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা আল আন‘আম : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা আর রূম : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ১৪৯৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
0:00 / 10:14
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জালেম শাসকের জুলুম অত্যাচারকে যারা সমর্থন করে তারা রাসূল (সাঃ)এর উম্মত না!
youtube
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
What does Islam say about oppression and oppression?
জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
0 notes
ilyforallahswt · 2 months
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
What does Islam say about oppression and oppression
ইসলামে সব ধরণের জুলুম/অত্যাচার কঠোরভাবে হারাম। জুলুমকারী সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করে নিয়েছেন। এটি মানুষের জন্যও নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। কোরআন-সুন্নাহর একাধিক বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।
জুলুমকে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন মর্মে হাদিসে কুদসিতে নবিজী ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের উপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
শুধু জুলুম বা অত্যাচার করাই হারাম নয়, বরং অন্যকে জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালিম/অত্যাচারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম।
জালেমদের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা
মানুষের ওপর জুলুম করা ভয়াবহ গুনাহ ও মারাত্মক শাস্তির কারণ। যার শাস্তি কোনো না কোনো উপায়ে দুনিয়ার জীবন থেকেই শুরু হয়ে যায়। অহংকার ও গর্বের কারণে জালেম/অত্যাচারীরা মনে করে, কেউ তাদেরকে কখনো পাকড়াও করবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তাদেরকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এভাবে-
১. ‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা : আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। হাদিসে পাকেও এ সতর্কবাণী এসেছে এভাবে-
‘অত্যাচার করা থেকে দূরে থাকো! কারণ অত্যাচার কেয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’ (মুসলিম)
২. ‘(হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে।
ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।
(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)
জুলুমের শাস্তি
জাহান্নামে জুলুম/জালেমদের অনেক ধরণের কঠোর শাস্তি রয়েছে। জুলুমের অপরাধী/জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে; তার বিবরণ থেকে বুঝা যায়; জাহান্নাম কত কঠিন জায়গা। আর জুলুমের শাস্তি কত মারাত্মক! হাদিসে পাকে এসেছে-
নুমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেওয়া হবে যে ব্যক্তিকে; সে হলো তার পায়ের তলাতে দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে, যার কারণে তার মাথার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় উথলাতে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং সাবধান!
জালেম ও জুলুমের শাস্তি হবে কঠিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২)
মুমিন মুসলমানের উচিত, জুলুম থেকে বিরত থাকা। জুলুমের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর সতর্কবার্তা অনুযায়ী নিজেদের জুলুম থেকে বিরত রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে জুলুম ও জালেম হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি কী? 
youtube
অন্যের প্রতি জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
পৃথিবীর বুকে আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ, যাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত গ্রন্থ ‘কুরআনুল কারিম’ নাজিল করেছেন। তাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেছেন। পরকালীন জীবনে কোনো আদম সন্তানই জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও নাড়াতে পারবে না বলে বিশ্বনবি (সা.) ঘোষণা করেছেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালা��� ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আ��মানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
তাই মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ, জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তাআলার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলার মাজলুমের চাওয়া-পাওয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। সুতরাং মানুষের উচিত, দুনিয়ার কোনো সৃষ্টির প্রতিই জুলুম অত্যাচার না করা।
জুলুমের পরিচয় : যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। সে হিসেবে কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।
জুলুমের ভয়াবহতা : শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম। ইসলাম মতে, মানুষের ওপর জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। এ কারণে পরকালে দোজখে প্রবেশ করতে হবে।
জুলুম থেকে বাচার উপায় : জুলুম থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হচ্ছে লালসা, ক্ষমতার লোভ, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, ক্রোধ থেকে আত্মসংবরণ করা এব�� জনসেবা, ধর্মীয় সেবা ও পরোপকারমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা আর হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে, হালাল টাকা-পয়সার মাধ্যমে পানাহারে, পোশাক-আশাকে সন্তুষ্ট থাকা।
সমাজের অনেকেই ধর্মপ্রাণ হিসেবে ধর্মকর্মে অগ্রগামী হলেও অন্যের ওপর জুলুম-অত্যাচারে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে সমাজের সহজ-সরল ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের ওপর। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই দুর্বল শ্রেণির লোকদের ওপর জুলুমকে অনেকেই অপরাধ মনে করেন না। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জুলুমের শাস্তি : আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি (যার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে) জালেমকে (অত্যাচারী ব্যক্তিকে) মাফ না করেন। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য। (বোখারি ও মুসলিম)
জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা আন নাহল : ৯০)
পবিত্র কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালেমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে কর না। তবে তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। সেদিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২-৪৫)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা আশ শু‘আরা : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা আল আন‘আম : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা আর রূম : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ১৪৯৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
0:00 / 10:14
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জালেম শাসকের জুলুম অত্যাচারকে যারা সমর্থন করে তারা রাসূল (সাঃ)এর উম্মত না!
youtube
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
What does Islam say about oppression and oppression?
জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
0 notes
myreligionislam · 2 months
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
What does Islam say about oppression and oppression
ইসলামে সব ধরণের জুলুম/অত্যাচার কঠোরভাবে হারাম। জুলুমকারী সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করে নিয়েছেন। এটি মানুষের জন্যও নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। কোরআন-সুন্নাহর একাধিক বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।
জুলুমকে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন মর্মে হাদিসে কুদসিতে নবিজী ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের উপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
শুধু জুলুম বা অত্যাচার করাই হারাম নয়, বরং অন্যকে জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালিম/অত্যাচারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম।
জালেমদের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা
মানুষের ওপর জুলুম করা ভয়াবহ গুনাহ ও মারাত্মক শাস্তির কারণ। যার শাস্তি কোনো না কোনো উপায়ে দুনিয়ার জীবন থেকেই শুরু হয়ে যায়। অহংকার ও গর্বের কারণে জালেম/অত্যাচারীরা মনে করে, কেউ তাদেরকে কখনো পাকড়াও করবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তাদেরকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এভাবে-
১. ‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা : আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। হাদিসে পাকেও এ সতর্কবাণী এসেছে এভাবে-
‘অত্যাচার করা থেকে দূরে থাকো! কারণ অত্যাচার কেয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’ (মুসলিম)
২. ‘(হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে।
ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।
(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)
জুলুমের শাস্তি
জাহান্নামে জুলুম/জালেমদের অনেক ধরণের কঠোর শাস্তি রয়েছে। জুলুমের অপরাধী/জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে; তার বিবরণ থেকে বুঝা যায়; জাহান্নাম কত কঠিন জায়গা। আর জুলুমের শাস্তি কত মারাত্মক! হাদিসে পাকে এসেছে-
নুমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেওয়া হবে যে ব্যক্তিকে; সে হলো তার পায়ের তলাতে দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে, যার কারণে তার মাথার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় উথলাতে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং সাবধান!
জালেম ও জুলুমের শাস্তি হবে কঠিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২)
মুমিন মুসলমানের উচিত, জুলুম থেকে বিরত থাকা। জুলুমের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর সতর্কবার্তা অনুযায়ী নিজেদের জুলুম থেকে বিরত রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে জুলুম ও জালেম হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি কী? 
youtube
অন্যের প্রতি জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
পৃথিবীর বুকে আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ, যাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত গ্রন্থ ‘কুরআনুল কারিম’ নাজিল করেছেন। তাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেছেন। পরকালীন জীবনে কোনো আদম সন্তানই জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও নাড়াতে পারবে না বলে বিশ্বনবি (সা.) ঘোষণা করেছেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
তাই মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ, জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তাআলার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলার মাজলুমের চাওয়া-পাওয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। সুতরাং মানুষের উচিত, দুনিয়ার কোনো সৃষ্টির প্রতিই জুলুম অত্যাচার না করা।
জুলুমের পরিচয় : যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। সে হিসেবে কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।
জুলুমের ভয়াবহতা : শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা কর�� এবং জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম। ইসলাম মতে, মানুষের ওপর জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। এ কারণে পরকালে দোজখে প্রবেশ করতে হবে।
জুলুম থেকে বাচার উপায় : জুলুম থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হচ্ছে লালসা, ক্ষমতার লোভ, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, ক্রোধ থেকে আত্মসংবরণ করা এবং জনসেবা, ধর্মীয় সেবা ও পরোপকারমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা আর হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে, হালাল টাকা-পয়সার মাধ্যমে পানাহারে, পোশাক-আশাকে সন্তুষ্ট থাকা।
সমাজের অনেকেই ধর্মপ্রাণ হিসেবে ধর্মকর্মে অগ্রগামী হলেও অন্যের ওপর জুলুম-অত্যাচারে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে সমাজের সহজ-সরল ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের ওপর। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই দুর্বল শ্রেণির লোকদের ওপর জুলুমকে অনেকেই অপরাধ মনে করেন না। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জুলুমের শাস্তি : আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি (যার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে) জালেমকে (অত্যাচারী ব্যক্তিকে) মাফ না করেন। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য। (বোখারি ও মুসলিম)
জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা আন নাহল : ৯০)
পবিত্র কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালেমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে কর না। তবে তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। সেদিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২-৪৫)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বি��্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা আশ শু‘আরা : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা আল আন‘আম : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা আর রূম : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ১৪৯৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
0:00 / 10:14
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জালেম শাসকের জুলুম অত্যাচারকে যারা সমর্থন করে তারা রাসূল (সাঃ)এর উম্মত না!
youtube
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
What does Islam say about oppression and oppression?
জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
0 notes
allahisourrabb · 2 months
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
What does Islam say about oppression and oppression
ইসলামে সব ধরণের জুলুম/অত্যাচার কঠোরভাবে হারাম। জুলুমকারী সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করে নিয়েছেন। এটি মানুষের জন্যও নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। কোরআন-সুন্নাহর একাধিক বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।
জুলুমকে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন মর্মে হাদিসে কুদসিতে নবিজী ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের উপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
শুধু জুলুম বা অত্যাচার করাই হারাম নয়, বরং অন্যকে জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালিম/অত্যাচারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম।
জালেমদের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা
মানুষের ওপর জুলুম করা ভয়াবহ গুনাহ ও মারাত্মক শাস্তির কারণ। যার শাস্তি কোনো না কোনো উপায়ে দুনিয়ার জীবন থেকেই শুরু হয়ে যায়। অহংকার ও গর্বের কারণে জালেম/অত্যাচারীরা মনে করে, কেউ তাদেরকে কখনো পাকড়াও করবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তাদেরকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এভাবে-
১. ‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা : আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। হাদিসে পাকেও এ সতর্কবাণী এসেছে এভাবে-
‘অত্যাচার করা থেকে দূরে থাকো! কারণ অত্যাচার কেয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’ (মুসলিম)
২. ‘(হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে।
ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।
(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)
জুলুমের শাস্তি
জাহান্নামে জুলুম/জালেমদের অনেক ধরণের কঠোর শাস্তি রয়েছে। জুলুমের অপরাধী/জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে; তার বিবরণ থেকে বুঝা যায়; জাহান্নাম কত কঠিন জায়গা। আর জুলুমের শাস্তি কত মারাত্মক! হাদিসে পাকে এসেছে-
নুমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেওয়া হবে যে ব্যক্তিকে; সে হলো তার পায়ের তলাতে দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে, যার কারণে তার মাথার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় উথলাতে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং সাবধান!
জালেম ও জুলুমের শাস্তি হবে কঠিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২)
মুমিন মুসলমানের উচিত, জুলুম থেকে বিরত থাকা। জুলুমের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর সতর্কবার্তা অনুযায়ী নিজেদের জুলুম থেকে বিরত রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে জুলুম ও জালেম হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি কী? 
youtube
অন্যের প্রতি জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
পৃথিবীর বুকে আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ, যাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত গ্রন্থ ‘কুরআনুল কারিম’ নাজিল করেছেন। তাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেছেন। পরকালীন জীবনে কোনো আদম সন্তানই জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও নাড়াতে পারবে না বলে বিশ্বনবি (সা.) ঘোষণা করেছেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহা�� রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
তাই মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ, জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তাআলার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলার মাজলুমের চাওয়া-পাওয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। সুতরাং মানুষের উচিত, দুনিয়ার কোনো সৃষ্টির প্রতিই জুলুম অত্যাচার না করা।
জুলুমের পরিচয় : যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। সে হিসেবে কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।
জুলুমের ভয়াবহতা : শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম। ইসলাম মতে, মানুষের ওপর জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। এ কারণে পরকালে দোজখে প্রবেশ করতে হবে।
জুলুম থেকে বাচার উপায় : জুলুম থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হচ্ছে লালসা, ক্ষমতার লোভ, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, ক্রোধ থেকে আত্মসংবরণ করা এবং জনসেবা, ধর্মীয় সেবা ও পরোপকারমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা আর হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে, হালাল টাকা-পয়সার মাধ্যমে পানাহারে, পোশাক-আশাকে সন্তুষ্ট থাকা।
সমাজের অনেকেই ধর্মপ্রাণ হিসেবে ধর্মকর্মে অগ্রগামী হলেও অন্যের ওপর জুলুম-অত্যাচারে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে সমাজের সহজ-সরল ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের ওপর। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই দুর্বল শ্রেণির লোকদের ওপর জুলুমকে অনেকেই অপরাধ মনে করেন না। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জুলুমের শাস্তি : আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি (যার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে) জালেমকে (অত্যাচারী ব্যক্তিকে) মাফ না করেন। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য। (বোখারি ও মুসলিম)
জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা আন নাহল : ৯০)
পবিত্র কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালেমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে কর না। তবে তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। সেদিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২-৪৫)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে নির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা আশ শু‘আরা : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা আল আন‘আম : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা আর রূম : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ১৪৯৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
0:00 / 10:14
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জালেম শাসকের জুলুম অত্যাচারকে যারা সমর্থন করে তারা রাসূল (সাঃ)এর উম্মত না!
youtube
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
What does Islam say about oppression and oppression?
জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
0 notes
mylordisallah · 2 months
Text
Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media Tumblr media
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে
What does Islam say about oppression and oppression
ইসলামে সব ধরণের জুলুম/অত্যাচার ক��োরভাবে হারাম। জুলুমকারী সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট। আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য জুলুমকে হারাম করে নিয়েছেন। এটি মানুষের জন্যও নিষিদ্ধ। এটি কবিরা গুনাহ বা মহাপাপ। কোরআন-সুন্নাহর একাধিক বর্ণনায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।
জুলুমকে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছেন মর্মে হাদিসে কুদসিতে নবিজী ঘোষণা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজের জন্যে জুলুম করা হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একজন অন্যজনের উপর জুলুম করো না।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
শুধু জুলুম বা অত্যাচার করাই হারাম নয়, বরং অন্যকে জুলুমে সহযোগিতা করা এবং জালিম/অত্যাচারীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা এবং ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম।
জালেমদের প্রতি কঠোর সতর্কবার্তা
মানুষের ওপর জুলুম করা ভয়াবহ গুনাহ ও মারাত্মক শাস্তির কারণ। যার শাস্তি কোনো না কোনো উপায়ে দুনিয়ার জীবন থেকেই শুরু হয়ে যায়। অহংকার ও গর্বের কারণে জালেম/অত্যাচারীরা মনে করে, কেউ তাদেরকে কখনো পাকড়াও করবে না। অথচ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তাদেরকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এভাবে-
১. ‘আর অত্যাচারীরা অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ (সুরা আশ-শুআরা : আয়াত ২২৭)
আয়াতে ‘তাদের গন্তব্যস্থল কোথায়?’ এর মর্মার্থ হলো- জাহান্নাম। এখানে পাপীদের জন্য রয়েছে কঠিন সতর্কবাণী। হাদিসে পাকেও এ সতর্কবাণী এসেছে এভাবে-
‘অত্যাচার করা থেকে দূরে থাকো! কারণ অত্যাচার কেয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।’ (মুসলিম)
২. ‘(হে নবি!) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সব চোখ স্থির হয়ে যাবে।
ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফেরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য।
(হে নবি!) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর; যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা (জালেমরা) বলবে, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করবো।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোনো পতন নেই?’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪২-৪৫)
জুলুমের শাস্তি
জাহান্নামে জুলুম/জালেমদের অনেক ধরণের কঠোর শাস্তি রয়েছে। জুলুমের অপরাধী/জাহান্নামীদের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেওয়া হবে; তার বিবরণ থেকে বুঝা যায়; জাহান্নাম কত কঠিন জায়গা। আর জুলুমের শাস্তি কত মারাত্মক! হাদিসে পাকে এসেছে-
নুমান বিন বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মাঝে সবচেয়ে সহজ ও হালকা শাস্তি দেওয়া হবে যে ব্যক্তিকে; সে হলো তার পায়ের তলাতে দুটো জ্বলন্ত অঙ্গার থাকবে, যার কারণে তার মাথার মগজ ছোট মুখ বিশিষ্ট হাড়ির ন্যায় উথলাতে থাকবে।’ (বুখারি, মুসলিম)
সুতরাং সাবধান!
জালেম ও জুলুমের শাস্তি হবে কঠিন। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আগে থেকেই এই বলে সতর্ক করেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২২)
মুমিন মুসলমানের উচিত, জুলুম থেকে বিরত থাকা। জুলুমের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকা। কোরআন-সুন্নাহর সতর্কবার্তা অনুযায়ী নিজেদের জুলুম থেকে বিরত রাখা ঈমানের একান্ত দাবি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে জুলুম ও জালেম হওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
নির্যাতিতদের জন্য ন্যায়বিচার
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি কী? 
youtube
অন্যের প্রতি জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
পৃথিবীর বুকে আল্লাহর যত সৃষ্টি রয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মানুষ, যাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত গ্রন্থ ‘কুরআনুল কারিম’ নাজিল করেছেন। তাদের প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহিতার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করেছেন। পরকালীন জীবনে কোনো আদম সন্তানই জবাবদিহিতা ছাড়া এক কদমও নাড়াতে পারবে না বলে বিশ্বনবি (সা.) ঘোষণা করেছেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব। (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
তাই মানুষের সঙ্গে কারণে হোক আর অকারণে, কোনোভাবেই অন্যায় আচরণ, জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না। মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ। এ কারণেই অত্যাচারিত ব্যক্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহ তাআলার দরবারে সরাসরি পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলার মাজলুমের চাওয়া-পাওয়া খুবই দ্রুততার সঙ্গে কবুল করে থাকেন। সুতরাং মানুষের উচিত, দুনিয়ার কোনো সৃষ্টির প্রতিই জুলুম অত্যাচার না করা।
জুলুমের পরিচয় : যার যা প্রাপ্য তাকে সেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নাম জুলুম। সে হিসেবে কারো অধিকার হরণ, বিনা অপরাধে নির্যাতন, আর্থিক, দৈহিক ও মর্যাদার ক্ষতিসাধন, মানহানিকর অপবাদ দেওয়া, দুর্বলের ওপর নৃশংসতা চালানো, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ, অশ্লীল ভাষায় গালাগাল, উৎপীড়ন বা যন্ত্রণা ইত্যাদি কাজ জুলুমের পর্যায়ভুক্ত।
জুলুমের ভয়াবহতা : শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামে সব ধরনের জুলুম বা অত্যাচার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও হারাম। শুধু জুলুম নয়, জুলুমের সহযোগিতা করা এবং জালেমদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা রক্ষা করাও হারাম। আর এ বিধান শুধু মুসলমান নয়, কোনো অমুসলিমের ওপর জুলুম করলেও তার জন্য এ হুকুম। ইসলাম মতে, মানুষের ওপর জুলুম এক ভয়াবহ গোনাহ। এ কারণে পরকালে দোজখে প্রবেশ করতে হবে।
জুলুম থেকে বাচার উপায় : জুলুম থেকে বাঁচার কার্যকর উপায় হচ্ছে লালসা, ক্ষমতার লোভ, হিংসা, ধর্মীয় বিদ্বেষ, ক্রোধ থেকে আত্মসংবরণ করা এবং জনসেবা, ধর্মীয় সেবা ও পরোপকারমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা আর হালাল ও বৈধ পন্থায় উপার্জিত অর্থে, হালাল টাকা-পয়সার মাধ্যমে পানাহারে, পোশাক-আশাকে সন্তুষ্ট থাকা।
সমাজের অনেকেই ধর্মপ্রাণ হিসেবে ধর্মকর্মে অগ্রগামী হলেও অন্যের ওপর জুলুম-অত্যাচারে পিছিয়ে নেই। বিশেষ করে সমাজের সহজ-সরল ও নিম্ন শ্রেণির মানুষের ওপর। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই দুর্বল শ্রেণির লোকদের ওপর জুলুমকে অনেকেই অপরাধ মনে করেন না। উল্টো কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়।
জুলুমের শাস্তি : আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন এমন এক অপরাধ যা সাধারণত আল্লাহ মাফ করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মজলুম ব্যক্তি (যার প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে) জালেমকে (অত্যাচারী ব্যক্তিকে) মাফ না করেন। সূরা আশ শোয়ারার শেষ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের জুলুমের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে, তাদের গন্তব্যস্থল কেমন?’
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জালেমকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করেন, তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদগুলোকে পাকড়াও করেন। তার পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপতিরোধ্য। (বোখারি ও মুসলিম)
জুলুম সম্পর্কে কোরআনে আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা জালেমদের প্রতি ঝুঁকে পড়বে না, জালেমদের সহযোগী হবে না, তাহলে আগুন (জাহান্নামের) তোমাদেরও স্পর্শ করবে।’ (সূরা হূদ : ১১৩)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে ন্যায়পন্থার নির্দেশ দিয়েছেন। কল্যাণ ও ন্যায়পন্থা হলো মানবজীবনের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের ন্যায়পন্থা, অনুগ্রহ ও নিকটাত্মীয়দের হক প্রদানের নির্দেশ দেন এবং অশ্লীল ও নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে নিষেধ করেন।’ (সুরা আন নাহল : ৯০)
পবিত্র কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘জালেমদের কর্মকান্ড সম্পর্কে আল্লাহকে কখনো উদাসীন মনে কর না। তবে তিনি তাদের শুধু একটি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন, যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফোরিত হবে, তারা মাথা ঊর্ধ্বমুখী করে উঠিপড়ি করে দৌড়াতে থাকবে, তাদের চোখ তাদের নিজেদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের হৃদয়গুলো দিশেহারা হয়ে যাবে। মানুষকে আজাব সমাগত হওয়ার দিন সম্পর্কে সাবধান করে দাও, যেদিন তাদের কাছে আজাব আসবে। সেদিন জুলুমবাজরা বলবে, হে আমাদের প্রভু! অল্প সময়ের জন্য আমাদের অবকাশ দিন, তাহলে আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব (অন্যের ওপর জুলুম করব না) এবং রাসূলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি এর আগে কসম খেয়ে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছে, তোমরা তো তাদের বাসস্থানেই বাস করছ এবং সেসব জালেমের সঙ্গে আমি কেমন আচরণ করেছি, তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। উপরন্তু আমি তোমাদের জন্য বহু উদাহরণ দিয়েছি।’ (সূরা ইবরাহিম : ৪২-৪৫)
মানুষের অধিকার হরণ করা ও তাদের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অনেক বড় জুলুম। এই ধরনের জুলুমের কারণে পুরো পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। বিত্তবানরা দারিদ্র্য শ্রেণিকে ও ক্ষমতাবানরা সাধারণ লোকের প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে ��ির্যাতন, নিপীড়ন করে। ফলে একসময় জালিম বা অন্যায়কারীর জীবনে নেমে আসে নানা বিপদ-আপদ। যারা মানুষের ওপর জুলুম করে এবং প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬১৩)।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা জুলুমের ব্যাপারে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অচিরেই জালিমরা জানতে পারবে, তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল কোথায় হবে।’ (সুরা আশ শু‘আরা : ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফল হয় না।’ (সুরা আল আন‘আম : ৫৭)
জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন। জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি : ২৫১১)
সমাজে বিরাজমান অত্যাচার-অনাচার ও বিশৃঙ্খলা-অস্থিরতার মূল কারণ হলো জুলুম। একে অপরের ওপর নানা রকম অবিচারের ফলে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর এ বিশৃঙ্খলা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘জল ও স্থলভাগে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে তা মানুষের কর্মের ফলস্বরূপ।’ (সুরা আর রূম : ৪১)
মজলুম বা নিপীড়িতের দোয়া কখনো ব্যর্থ হয় না। তাই মজলুমের অশ্রুফোঁটা ও অন্তরের অভিশাপ পতনের অন্যতম কারণ। মজলুমের আর্তনাদের ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জালিমদের ওপর নেমে আসে কঠিন আজাব। তাদের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছ থেকে ফেরত আসে না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া মেঘমালার ওপরে তুলে নেন এবং তার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান রব বলেন, আমার সম্মানের শপথ, কিছুটা বিলম্ব হলেও আমি তোমাকে অবশ্যই সাহায্য করব।’ (তিরমিজি : ৩৫৯৮)
রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি : ১৪৯৬)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে ফরিয়াদ, তিনি যেন আমাদের জালিমদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে রক্ষা করেন এবং মজলুমের অভিশাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। আমিন।
0:00 / 10:14
জুলুমের ভয়াবহ পরিণতি
youtube
জালেম শাসকের জুলুম অত্যাচারকে যারা সমর্থন করে তারা রাসূল (সাঃ)এর উম্মত না!
youtube
জালেম ও জুলুম সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
What does Islam say about oppression and oppression?
জুলুম ও জালিমের ভয়াবহ পরিণতি
Harmful consequences of oppression and oppression of others
0 notes