#ঈশ্বরের ধারণা
Explore tagged Tumblr posts
Text
youtube
ইসলাম ধর্মে আল্লাহর ধারণা – Dr Zakir Naik
ITC-19
ইএশ-১৯
আমাকে ফলো করুন :
https://www.facebook.com/sazidpersonal
https://www.youtube.com/@sazidchannel
https://www.instagram.com/sazidpersonal
https://www.twitter.com/sazidpersonal
https://www.pinterest.com/sazidpersonal
https://www.tumblr.com/sazidpersonal
ইসলাম ধর্মে আল্লাহর ধারণা :
(১) বল, তিনিই আল্লাহ, এক এবং অদ্বিতীয় ।
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী (কারো উপর নির্ভরশীল নন) ও চিরস্থায়ী (চিরন্তন)।
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি।
আর তাঁর সমকক্ষ ও সমতুল্য আর কেউ নেই ।
|| আল কুরআন : সূরা আল-ইখলাস (১১২) ||
(২) “আর তোমরা তাদেরকে গা��মন্দ (নিন্দা) করো না, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা ��াকে, ফলে তারা গালমন্দ (নিন্দা) করবে আল্লাহকে, শত্রুতা পোষণ করে অজ্ঞতাবশত...”
|| আল কুরআন : সূরা আল-আনআম (৬) ; আয়াত-১০৮ ||
#ITC-19 #ইএশ-১৯ #ইসলাম #ধর্মে #আল্লাহর #স্রষ্টার #পালনকর্তার #ঈশ্বরের #প্রভুর #ধারণা #drzakirnaikofficial #জাকির #নায়েক #ZakirNaik #জাকিরনায়েক #DrZakirNaik #zakirnaik #sazidpersonal
1 note
·
View note
Text
13. সাক্ষী হওয়া
যদি একটি শব্দ সমগ্র শ্রীমদভগবদগীতার বর্ণনা করতে পারে তবে তা হবে দ্রষ্টা অর্থাৎ সাক্ষী, যা অনেক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। এটি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমাদের অধিকাংশই মনে করে যে আমরা সবকিছু করি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় অর্জুন প্রায় ষাট বছর বয়সের ছিলেন। তিনি সুন্দর জীবন যাপন করতেন এবং সকল প্রকার বিলাসিতা ভোগ করতেন। একজন যোদ্ধা হিসেবে তিনি অনেক যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। যুদ্ধের সময়, তিনি অনুভব করেছিলেন যে তিনিই কর্তা এবং অনুভব করেছিলেন যে তিনি তার আত্মীয়স্বজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন, যা তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে বিষাদ সৃষ্টি করেছিল। সমগ্র গীতা জুড়ে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে বলার চেষ্টা করেছেন যে তিনি ‘কর্তা’ নন। স্বাভাবিক প্রশ্ন হল - আমি যদি কর্তা না হই, তবে আমি কি? ভগবান গীতায় ব্যাখ্যা করেছেন যে অর্জুন হলেন দ্রষ্টা, সাক্ষী।
60 বছরের জীবনের ভাল এবং খারাপ অভিজ্ঞতার কারণে, অর্জুনের এই ধারণাটি উপলব্ধি করা কঠিন হয় যে তিনি কেবল একজন সাক্ষী এবং একজন কর্তা নন। শুধুমাত্র ঈশ্বরের শ্রমসাধ্য ব্যাখ্যা তাকে এই সৎ সম্পর্কে নিশ্চিত করে। যদিও অধিকাংশ সংস্কৃতি আমাদের বলে যে আমরা কেবল একজন দ্রষ্টা, যারা তাদের আধ্যাত্মিক যাত্রার শুরুতে তারা এই ধারণা দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।
দ্রষ্টা বুদ্ধিমত্তার একটি অবস্থা, কিন্তু জড় জগতে তা অনুভূত হয় না। এই ক্ষমতাই আমাদের চারপাশে প্রতিদিনের ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে অভ্যন্তরীণভাবে স্থিতিশীল থাকতে সাহায্য করে। যদিও জড় জগতে আমাদের সুখ-দুঃখের দ্বৈততার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু এই বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকে সাহায্য করবে কোনো কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই কাজ করতে। এটি আমাদের আবেগকে সাক্ষী ভাবে তাকানো এবং বশীভূত করার ক্ষমতা।
#bhagavad gita#bhagwad gita#gita#gita acharan#gita acharan in bengali#gita in bengali#spirituality#k siva prasad
0 notes
Text
কেন ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই?
প্রিন্সিপাল অব কজালিটি: এই ধারণা অনুসারে, মহাবিশ্বের সবকিছুর কারণ আছে। অতএব মহাবিশ্বেরও কারণ আছে। কিছু কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, মহাবিশ্বের হয়তো নিজস্ব কারণ আছে অথবা এটি মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে প্রাকৃতিক নিয়মে তৈরি হয়েছে। এছাড়া সকল কারণের আদি কারণ যদি ঈশ���বর হয়, তবে ঈশ্বরেরও কারণ থাকা উচিত। শন ক্যারল বলেন, কার্য-কারণ এনট্রপির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এটি ফিজিক্সের আভ্যন্তরীণ কোনো বৈশিষ্ট্য…
View On WordPress
0 notes
Text
ক্যাথলিক ধর্ম সম্পর্কে সত্য
(1) শুধুমাত্র ক্যাথলিক চার্চই খ্রীষ্টের কাছে তার শিকড় খুঁজে পেতে পারে।
(2) ইউক্যারিস্ট - খ্রীষ্টের আসল উপস্থিতি - প্রোটেস্ট্যান্ট গীর্জাগুলিতে পাওয়া যায় না।
(3) অন্যান্য খ্রিস্টানদের থেকে ভিন্ন, ক্যাথলিকদের ঈশ্বরের সঞ্চয় ক্রিয়াকলাপের সম্পূর্ণ পবিত্র ধারণা রয়েছে।
(4) চার্চের ম্যাজিস্ট্রিয়ামের কারণে, ক্যাথলিকদের এই নিশ্চয়তা রয়েছে যে তাদের বিশ্বাসগুলি ঐশ্বরিকভাবে প্রকাশিত সত্য, মানুষের ব্যাখ্যা এবং মতামত নয়।
(5) ক্যাথলিক চার্চ, অন্য যে কোন কিছুর চেয়ে বেশি, ঈশ্বরের মাকে উপযুক্ত সম্মান দেয়।
(6) অন্য যেকোনো খ্রিস্টান ধর্মের চেয়ে বেশি, ক্যাথলিক ধর্ম শাস্ত্রকে গুরুত্ব সহকারে নেয়।
(7) চার্চ টিকে আছে এবং এমনকি প্রায় দুই হাজার বছর ধরে উন্নতি লাভ করেছে, সব ধরনের নিপীড়ন, বিরোধিতা এবং অসুবিধা সত্ত্বেও।
(8) সমস্ত খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে, ক্যাথলিক ধর্মের মানব প্রকৃতির সবচেয়ে সঠিক এবং সম্পূর্ণ উপলব্ধি রয়েছে।
(9) ক্যাথলিক ধর্ম স্বর্গের প্রকৃতিকে অন্য যে কোন ধর্মের চেয়ে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে।
(10) কারণ এটি মূলে রয়েছে, কিন্তু সময় এবং ইতিহাসকেও অতিক্রম করে, চার্চ তার সদস্যদের ঈশ্বরের অপরিবর্তনীয় সত্য আবিষ্কার করতে এবং বেঁচে থাকতে সাহায্য করতে সক্ষম।
উত্স: খ্রিস্টান হ্যাঁ কিন্তু কেন ক্যাথলিক হতে ��বে? (ক্যাথলিক উত্তর নিবন্ধ) দ্বারা Fr. জোসেফ এসপার
1 note
·
View note
Text
কিভাবে সঠিকভাবে ঈশ্বরের ধন্যবাদ সাত কর্মের চেক হিসাবে অনেক বাস করেনি?
কিভাবে সঠিকভাবে ঈশ্বরের ধন্যবাদ সাত কর্মের চেক হিসাবে অনেক বাস করেনি?
ঈশ্বরকে ধন্যবাদ মুভি মূল্যায়ন, নবীন সিং ভরদ্বাজ: শত শত বছর ধরে, বেদ এবং পুরাণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, ধর্ম থাকতে পারে, ধারণা যে একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার ��রে স্বর্গ বা নরকে উভয়ই যায়। যাইহোক, তাদের মধ্যে কোন জায়গায় যেতে হবে, তা তাদের পাপ এবং পুণ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। আর এর হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করেন দেবতাদের হিসাবরক্ষক চিত্রগুপ্ত। এমনই পাপ, সুবিধা ও ধর্মের গল্প ঈশ্বরকে ধন্যবাদ! এখানে শিখুন-…
View On WordPress
0 notes
Text
ঈমান ছাড়া জান্নাত নাই
ঈশ্বর একমাত্র আল্লাহ্ সত্য ঈমান-আকিদাহ হোক বিশুদ্ধ। ঈমান' অর্থ গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম যেসব বিষয় অবতারণা করেছেন, সেসবকে অন্তরের বিশ্বাস, জবানের স্বীকারোক্তি এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে আমল করাকে ঈমান বলে। আল্লাহর প্রতি, ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ, সকল রাসুলগণ, আখেরাত ও তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস -ঈমানের ছয় রুকন। একসাথে সকল রুকনে বিশ্বাস থাকা আবশ্যক। আল্লাহ্ একমাত্র 'সত্য মাবুদ'। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো 'সত্য মাবুদ' নাই। আল্লাহ্ তায়ালা আসমানে আরশের ঊর্ধ্বে সমুন্নত আছেন। আল্লাহকে জানব তাঁর সুন্দরতম নাম ও পরিপূর্ণ গুণাবলী দ্বারা।
ঈশ্বর একমাত্র আল্লাহ্ সত্য ঈমান-আকিদাহ হোক বিশুদ্ধ। আল্লাহ্ ছাড়া সত্য ঈশ্বর নাই, ঈমান ছাড়া জান্নাত নাই।
https://www.youtube.com/watch?v=YvmBp1cRc7Y
https://www.youtube.com/watch?v=3h2As9xCd_o
#no paradise without faith#ঈশ্বর একমাত্র আল্লাহ্ সত্য#ঈমান-আকিদাহ হোক বিশুদ্ধ#আল্লাহ্ ছাড়া সত্য ঈশ্বর নাই#ঈমান ছাড়া জান্নাত নাই।#ঈমান' অর্থ#ঈশ্বরের ধারণা#ঈশ্বর#ঈমান#ঈদ#Emaan#Elah#eternal#ঈমান' অর্থ গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস#ইমান#Eman;sPillar
0 notes
Text
রেনে দেকার্তের দর্শন“I think; therefore I am”
ঐতিহাসিক অবস্থান
প্যারিসের লুভার মিউজিয়ামে আধুনিক দর্শনের জনক ও স্রষ্টা এবং ফ্রান্সের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক দেকার্তের একটি প্রতিকৃতি ঝুলছে। তিনি তার ঘন চোখের পাতার ভেতর থেকে আপনার দিকে দৃষ্টিপাত করছেন নির্লিপ্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভঙ্গিতে। আর তার হাসির মধ্যে দেখা যাবে একধরনের ভদ্রতাপূর্ণ তাচ্ছিল্য এবং অবজ্ঞার চিত্র। সপ্তদশ শতাব্দীতেই এই পুরুষ আমরা যে আধুনিক দর্শনে করছি তার আকার দান করেছিলেন। দেকার্ত দৃশ্যত অবজ্ঞা করতেন ফরাসি সমাজ, ত্রয়োদশ লুইয়ের পরিষদ, ফরাসি গির্জা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এববগ সাধারণ পথচারী সবাইকেই। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যা পড়ানো হতো তার পূর্ণ বিরোধীতা করতেন তিনি। পাদ্রি এবং গীর্জা কেন্দ্রিক পড়াশুনা চলতো তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। দেকার্ত লা-ফ্লেইশের জেস্যুয়িট কলেজ, যেখানে তিনি নিজেও পাঠ নিয়েছিলেন। যা সম্প্রতি ফরাসি অভিজাতদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করতেন তিনি। লা-ফ্লেইশে তার আটবছরের সময়কাল সম্পর্কে তিনি লেখেন—
“শৈশব থেকে আমি বইয়ের জগতে বাস করেছি…আমি সেথায় জ্ঞানার্জনের জন্য আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু আমার পাঠ্যক্রম সমাপ্ত করার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে এত ���েশি ভ্রান্ত ও সংশয়ে আসীন দেখতে পেলাম, যা দেখে মনে হলো, আমি কিছুই অর্জন করিনি৷ যদিও আমি ইউরোপের অতি নামীদামি স্কুলে গিয়েছিলাম।”
কলেজে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন, ইতিহাস, সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র এবং দর্শন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে লা-ফ্লেইশে শুধুমাত্র গণিতশাস্ত্র ভালো পাঠাদান হতো। আর বিজ্ঞান বিষয়ে কিঞ্চিৎ পাঠা দেয়া হতো যা পুরোপুরিই ছিল ভ্রান্ত বিজ্ঞান৷ কারণ তখন চার্চ এতোটাই কঠোর এবং কুসংস্কারছন্ন ছিল যে বাইবেলের অবৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বাইরে যুক্তিসংগত কোন মত আসলেই তা বন্ধ করার ব্যাপারে যেকোন কিছু করার জন্য তারা প্রস্তুত ছিল।
তিনি এই চার্চ ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেছেন—
“আমাদের বিশ্বাস ভুল দ্বারা কম কুলষিত হতো এবং তা আরও শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে পারতো যদি আমাদের শিশুকাল থেকে চিন্তায় তালগোল পাকানো শিক্ষকদের নিয়ন্ত্রণে না দেয়া হতো। এবং শুধুমাত্র আমাদের নিজস্ব যুক্তি ও বিচারশক্তি ব্যবহারের সুযো�� দেয়া হতো।”
দর্শনশাস্ত্র সম্পর্কে দেকার্তের বিশেষ অশ্রদ্ধা ছিল। যেমনটি কার্ল মার্কসেরও ছিল। দর্শন দেকার্তের কাছে অবজ্ঞা ও উপহাসের বস্তু ছিল। দার্শনিকগণ একে অপরের বিরোধিতা করলেও উভয়পক্ষই তাদের অবস্থান (জ্ঞান) সম্পর্কে নিশ্চিয়তা দানে ছিলেন অপারগ। তার মতে দার্শনিকগণ গণিতশাস্ত্র এবং বিজ্ঞানের বিষয়ে অজ্ঞ ছিলেন৷ তারা প্রাচীন ও সেকেলে প্রামাণ্য জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তাদের যুক্তি উত্থাপন করতেন। এ সম্পর্কে দেকার্ত অভিযোগ করে বলেছেন—
“অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি শত বছর ধরে দর্শন চর্চা করলেও তর্কাতীত বা অবিসংবাদিত জ্ঞান সৃজনে সমর্থ হননি।”
এই মতামতের মাধ্যমেই আধুনিক দর্শনের পিতা দেকার্ত সত্যিসত্যিই আধুনিকতার ছাপ রেখে গেছেন। তাকে ষাটের দশকের বিপ্লবী ছাত্রদের সঙ্গে তুলনা করা চলে৷ যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে এগুলো দারিদ্র্য, যুদ্ধ ও নাগরিক অধিকার প্রভৃতি সমস্যার বিষয়ে কোন দিকনির্দেশনা অপারগ। আর তাই এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। অবশ্য দেকার্ত তার নিজের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আদৌ চিন্তিত ছিলেন না। তিনি শুধুমাত্র চিন্তিত ছিলেন ‘সত্য’কে খুজে বের করার পথ নিয়ে৷ এবং ঝেটিয়ে বিদায় করতে চেয়েছিলেন সকল অসত্য বিশ্বাসকে। যাতে করে সত্যে পৌছানো সম্ভব হয়৷
তিনি তার নিজের সম্পর্কে বলেছেন—
“আমর সবসময়ই প্রবল আকাঙ্ক্ষা ছিল সত্য থেকে মিথ্যাকে পৃথক করতে পারার। যাতে করে আমি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাই যে কোনটা সঠিক এবং সে মতো সারাজীবন নিশ্চয়তার সাথে চলতে পারি।”
আধুনিক পাশ্চাত্য ইতিহাসের প্রবর্তকই হলেন রেনে দেকার্ত। তাই পাশ্চাত্য দর্শন থেকে তাকে বাদ দেয়ার কোন অবকাশ নেই। তিনি একজন সংশয়বাদী ছিলেন তবে একটু ভিন্নভাবে। দেকার্ত সংশয় প্রকাশ করতেন সত্যকে আলিঙ্গন করার জন্য। তিনি কখনোই ভাবতেন না যে সংশয় আবিচলভাবে ছুটে চলতে থাকবে। তিনি প্রতিটা বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন এবং অবশেষে তিনি যে চুড়ান্ত সত্যে উপনীত হয়েছিলেন তা হলো “ঈশ্বর আছেন”। সবকিছুর মূলে রয়েছেন একমাত্র ঈশ্বর। এ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত সামনে আলোচনা করবো। এখন আমরা জানবো রেনে দেকার্তের জীবন সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে।
সপ্তাদশ শতাব্দীর শুরুতে কোপারনিকাসের তত্ত্বে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে ব্রুনোকে যখন পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঠিক তার মাত্র চার বছর পূর্বে ১৫৯৬ সনে দেকার্ত জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দেকার্ত ছিলেন ব্রিটানির এক আইনজীবীর সন্তান। যার পরিবার ছিল ওই অঞ্চলের অত্যন্ত সম্মানিত এবং সবচেয়ে পুরনো পরিবার৷ দেকার্ত প্রতিপালিত হয়েছিলেন অভিজাত উচ্চশ্রেণির পরিবারের সকল সুবিধাদির মধ্য দিয়ে। তার প্রথম দিকের জীবনে তিনি ফরাসি কুলীনদের তরবারি ধারণ এবং সবুজ মখমলের পোশাক পরতেন। দশ থেকে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বিখ্যাত জেস্যুইট কলেজ লা-ফ্লেইশে পড়াশোনা করেছেন। তিনি সেখানে তার নিজ শিক্ষায় অসন্তুষ্ট ছিলেন৷ অর্জিত জ্ঞানের সত্যতা বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন। তার মনে এক প্রকার অনীহা জন্ম নিয়েছিল চার্চের গোড়ামী এবং অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য৷ লা-ফ্লেইশে তার পাঠ সমাপ্ত হবার পর। তিনি গ্রন্থপাঠ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে দেশ ভ্রমণে বেরিয়ে পরেছিলেন৷ এ পদক্ষেপের মাধ্যমে দেকার্ত এক আধুনিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যা আমাদের সময়ের আরও অনেকের মতই। যেখানে কেউ হতাশাতাড়িত হয়ে নৈতিক নিশ্চয়তার সন্ধানে অধ্যয়নে ইতি টেনে হিমালয়ে গুরুর সন্ধানে বেরিয়ে পরার মত।
১৬১৮ সনে তিনি প্রিন্স নাসাউরের সৈন্যদলে অবেতনভুক্ত স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যোগ দেন। সামরিক কলেজে স্বেচ্ছাসেবক সৈনিকের জীবন তখনকার অভিজাত বংশের যুবকদের জন্য তেমন কোন গুরুত্ববহন করতো না। দেকার্ত তার সংঙ্গীত এবং গণিতে পাঠ নেয়ার অবকাশের মধ্যে সৈনিকদের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেতেন। ১৬১৯ সালে তিনি ডিউক-অব-ব্যাভেরিয়ায় সৈন্যদলে বদলি হয়েছিলেন৷ সেখানে জার্মানির উলমে শহরে নভেম্বরের আবহাওয়ায় একদিন সারাদিনের জন্য একটি কক্ষে আটকা পরে অতিকায় এক চুল্লির সন্নিকটে বন্দিত্ব যাপন করেছিলেন৷ তিনি এই অবস্থার ব্যক্তিগত এবং দার্শনিক উভয় দিকের পর্যালোচনা বা নিরিক্ষার সিদ্ধান্ত নেন।
ঐ রাতে তিনি স্বপ্নযোগে অন্তরচক্ষুর মাধ্যমে কিছু দর্শন করেছিলেন। যা তিনি তার দিনলিপিতে এভাবে লিপিবদ্ধ করেছিলেন—
“১০ নভেম্বর ১৬১৯, আমি উদ্দীপনা পরিপূর্ণ অবস্থায় আবিষ্কার করলাম বিস্ময়কর এক বিজ্ঞানের ভিত্তি। একই সময় আমার পেশা কি হবে, তাও আমার নিকট পরিস্ফুটিত হয়েছিল।”
এরপর তিনি শপথ গ্রহণ করেছিলেন, যে তার বাকি জীবন তিনি এই নতুন বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠায় ব্যয় করবেন এবং আরও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি “আমাদের লেডি লরেটার” তীর্থ মন্দিরে গিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবেন তাকে এমন দূরদৃষ্টি প্রদানের জন্য।
তিনি দূরদৃষ্টি লাভ করেছিলেন, একটি একক এবং একীভূত বিজ্ঞানের পরিকল্পনা করার যাতে দর্শন এবং বিজ্ঞান পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে একটি প্রণালীবদ্ধ সমগ্রতায়৷ বস্তুর সকল গুণগত প্রভেদ কে, পরিমাণগত প্রভেদ হিসাবে দেখা হবে। এবং গণিত হবে বিশ্বজগতের তাবৎ সমস্যা সমাধানের চাবি স্বরুপ। প্লেটোর সঙ্গে দেকার্তের তুলনা করলে দেখা যায়, তিনি সকল বিজ্ঞানের ঐক্য দেখতেন শুভ বা কল্যাণের মতো মিস্টিক্যাল ধারণার মধ্যে। ��িন্তু দেকার্তের নিকট তা ছিল গাণিতিক স্বতঃসিদ্ধের ওপর ভিত্তিশীল। যা বিজ্ঞানসমূহের যুক্তিনিষ্ঠ এবং গাণিতিক ঐক্য। মধ্যযুগের অ্যারিস্টটলবাদ, পরিবর্তনের টেলিওলজিক্যাল বা পরমকারণবাদ ব্যাখ্যা দেয় যে, যাতে বাস্তবায়িত হওয়ার পথে বস্তু তার আকার বা রুপের দিকে ধাবমান থাকে; কিন্তু দেকার্তের মতে, সকল পরিবর্তন যান্ত্রিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব যেমন, বস্তুর গতি পদার্থবিদ্যার বিধি দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
দেকার্তের ঈশ্বর ভাবনার কাছে যাওয়ার আগে আমাদের এখন দেখে নেয়া উচিত তিনি ঠিক কীভাবে প্রতিটি বিষয়ের উপর সংশয় করতে করতে চুড়ান্ত সত্যে উপনীত হয়েছিলেন যে “ঈশ্বর” আছেন।
১. ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান
নাস্তিকদের নাস্তিক হওয়ার পেছনে যে বড় মোটো-টা কাজ করে তা হলো যা দেখা যায় না, অনুভব করা যায়, স্বাদ গ্রহণ করা যায় তার অস্তিত্ব কোন ভাবেই মানা যাবে না। মোদ্দাকথা তাদের জ্ঞান ইন্দ্রিয় কেন্দ্রিক৷ রেনে দেকার্ত প্রথমেই যে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমের উপর সংশয় প্রকাশ করেছেন তা হলো ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান। ইন্দ্রিয়লব্��� জ্ঞান যেমন অতি সহজে বিশ্বাসযোগ্য ঠিক তেমনি ভ্রান্তিজনক। উদাহরণস্বরুপ—দূরবর্তী বস্তু নগ্ন চোখে যেমন দেখাতো, তা এখন দূরবীন যন্ত্রের সাহায্যে অসত্যে প্রমাণিত। অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু নগ্ন চোখে যেমন দেখায়ব, অণুবীক্ষণ যন্ত্রে তা অগ্রাহ্য হয়। ১৬০৯ সনে গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। এবং অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ডিজাইন কপলার ১৬১১ সালে প্রদান করেন। তাহলে এই দুই যন্ত্রের আবিষ্কারের আগ অব্দি যেসব তথ্য আমরা ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে পেতাম তা সবই ভুল। তাহলে এখন প্রশ্ন ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস রাখা যাবে কি? অবশ্যই না। কারণ আমরা দেখলাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইন্দ্রিয় আমাদের ভুল তথ্য প্রদান করে থাকে। এ থেকেই দেকার্তের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে “ইন্দ্রিয় অনুভূতি”, নিশ্চয়তার উৎস হিসাবে নির্ভরযোগ্য নয়। যা আমাকে একবার প্রতারিত করেছে, তা আমাকে বারবার করতে পারে। যেমন, হঠাৎ কক্ষে প্রবেশ করে দেখলেন একটি সাপ পরে আছে। কিন্তু কিছু সময় বাদে আপনি দেখতে পেলেন সেটা সাপ নয় বরং একটি দড়ি। এখানে চোখ আপনার সাথে প্রতারণা করেছে। তাই এই চোখকে আর বিশ্বাস করা যাবে না। দেকার্ত বলেছেন—
“ইন্দ্রিয় দ্বারা আমি যা অনুভব করি তা হয়তো স্বপ্নের বিভ্রম।”
আমাদের ইন্দ্রিয়ের এরুপ সীমাবদ্ধতার ব্যাপারটা বোঝানোর জন্য আল্লাহ আমাদের অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে।
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই। তাঁরই কাছে সব কিছু প্রত্যাবর্তিত হবে। সুতরাং তো���রা তাঁর ইবাদত করো এবং তাঁর ওপর নির্ভর করো। তোমরা যা করো, সে সম্পর্কে তোমার প্রতিপালক অনবহিত নন।” (সূরা হুদ: ১২৩)
“মহানবী ﷺ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘বলো, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর ইচ্ছা না হয়, ততক্ষণ আমি নিজেরও কোনো উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখি না। আমি যদি গায়েবের (অদৃশ্যের) খবর জানতাম, তবে বহু কল্যাণ অর্জন করতে পারতাম। কোনো রকম ক্ষতিই আমাকে স্পর্শ করতে পারত না। আমি তো কেবল মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।” (সূরা আরাফ: ১৮৮)
“(হে নবী) বল, আল্লাহ ছাড়া পৃথিবী ও আকাশে কেউ অদৃশ্যের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, কখন পুনরুজ্জীবিত করা হবে।” (সূরা নমল: ৬৫)
২. প্রাকৃতিক জগতের উপর বিশ্বাস
অনেক নাস্তিককেই বলতে শোনা যায় যে তারা ঈশ্বর মানেন না তবে প্রাকৃতিক জগতের অস্তিত্বের উপর আস্থা রাখেন। দেকার্ত চিন্তা করেছিলেন—বস্তুগত জিনিস বা প্রাকৃতিক জগতের অস্তিত্ব বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস সম্পর্কে কি বলা হবে? তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে এগুলোর উপরেও সন্দেহ করতে হবে কারণ এগুলো ইন্দ্রিয়-প্রত্যক্ষীকরণের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ আমরা এই প্রাকৃতিক জগত, এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে যা জানি তা আমাদের এই ইন্দ্রিয় ব্যবহারের মাধ্যমে। আর আমরা জানি ইন্দ্রিয় আমাদের প্রতারিত করে তাই তা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে কখনোই সত্য হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না। তাই প্রাকৃতিক জগতের উপরেও বিশ্বাস বা ভরসা করা অমূলক।
৩. প্রাকৃতিক বিজ্ঞান
দেকার্ত নিজেকে প্রশ্ন করেন—প্রাকৃতিক বিজ্ঞান দ্বারা আবিষ্কৃত ব্যাপারগুলোর উপর আস্থা রাখা যাবে কি না? তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে “না”। আস্থা রাখা যাবে না কারণ এগুলোও ইন্দ্রিয় অনুভূতিলদ্ধ বস্তুর জ্ঞান, যা অ-নির্ভরযোগ্য বলে আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৪. গাণিতিক বিশ্বাস
দেকার্ত গাণিতিক বিশ্বাসের উপর মনযোগ দেন। গণিতশাস্ত্রের উপর কি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা যায়? তিনি কেন এই সকল কিছুকে সন্দেহ করেন? তিনি সব সময় গণিতকে সন্দেহ মুক্ত হিসাবে বিবেচনা করে এসেছেন, কারণ গণিতশাস্ত্র এর উপপাদ্য থেকেই সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত। অধিকন্তু গাণিতিক বিশ্বাস ইন্দ্রিয় অনুভূতি দ্বারা প্রাপ্ত নয় বলে তাকে অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। দেকার্ত বলেছেন—
“আমি জাগ্রত অথবা ঘুমন্ত যে অবস্থাতেই থাকি না কেন, দুই আর তিনের যোগফল সবসময় পাঁচ, এবং বর্গক্ষেত্রের চারটির অধিক বাহু থাকতে পারে না; এতো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান সত্য কখনো ভ্রান্ত হতে পারে না।”
এসব বিশ্বাস যুক্তির দ্বারা উপলব্ধ, ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে অনুভূত নয়। কিন্তু এদের কি সন্দেহ করা সম্ভব? গণিত এবং গণিতবিদরা কি সবসময় সত্য না ভ্রান্তির মধ্যেও পরতে পারে?
দেকার্ত গণিতকেও তার সন্দেহের মধ্যে যুক্ত করেছিলেন। তিনি বলেছেন—
“ধরা যাক যে সমস্ত জ্ঞানকে আমি নির্ভুল মনে করি, তার পেছনে যদি থাকে এক শক্তিশালী দুষ্টু শয়তানের চাতুরী। এক্ষেত্রে তখন আমি বারবার প্রতারিত, সবসময় ভ্রান্ত, এমনকি গণিতের মত শাস্ত্রেও, এছাড়াও নিশ্চিত উপপাদ্য যাকে আমি পরীক্ষিত সত্য ভাবি অর্থাৎ ২+৩=৫ তাও ভুল হতে পারে।”
প্রতিটি বিষয়ের উপর সংশয় প্রকাশের মাধ্যমে দেকার্ত একটি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন। তিনি চিন্তা করলেন—গণিতসহ আমার সব বিশ্বাস যদি সন্দেহজনক হয়, তথাপি আমার একটি বিশ্বাস অবশ্যই সন্দেহমুক্ত: আর তা হলো যখনই আমি সন্দেহ করি, তখনই অস্তিত্বে স্থিতি থেকেই তা করি। অর্থাৎ আমি আমার অস্তিত্বকে কখনোই অস্বীকার করতে পারবো না। সকল প্রকার বিশ্বাসের সত্যতায় সন্দেহ প্রকাশ করলেও, আমি যে সন্দেহ করছি, তাকে সন্দেহ করতে পারি না, তার মানে আমি অস্তিত্বমান। এমনকি যে সকল বিশ্বাস আমি সচেতনভাবে ধারণ করি, তা যদি অসত্যও হয়। তারপরও একটি সত্য: যে মুহূর্তে আমি সচেতন যে আমি চিন্তা করি, বা আমার মন কোন কিছুর সন্দিগ্ধতা-অসন্দিগ্ধতা সম্পর্কে ক্রিয়াশীল। তখন আমি চিন্তাশীল জিনিস হিসাবে অস্তিমান। অতঃপর, দেকার্ত যে সত্য প্রকাশ করেছিলেন তা হলো—
“কোগিটো, এরগো সুম”
“I think; therefore i am”
অর্থাৎ, আমি চিন্তা করি, তাই আমি। আমি যে চিন্তা করি সেটাই আমার অস্তিত্বের প্রমাণ। আমরা সবকিছুতে সংশয় প্রকাশ করলেও এই চিন্তার উপর সংশয় করা সম্ভব নয়। অনেকেই এই লাইনটিকে নাস্তিক্যবাদী স্টেটমেন্ট হিসাবে মনে করেন৷ আসলে মূলত এটার দ্বারা দেকার্ত ঈশ্বরকে চুড়ান্ত রুপে স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি এখানে “চিন্তা” শক্তিটাকে ঈশ্বর হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এই লাইনটি আমরা আরো সহজে বুঝতে পারবো যদি আমরা এই সুফি তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় যাই।
দর্শন শাস্ত্রের সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে এর ক্লাসিকতা আর ইউনিভার্সালিটি। দেকার্ত অনেক সংশয়ের নদী পাড় করে একটি ধ্রুব সত্যে উপনিত হয়েছিলেন, তিনি তার অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়েছিলেন পরম ঈশ্বরের সাথে। তার যখন বোধদয় বা মনন জগতে চৈতন্যের সূর্য উদিত হলো ঠিক তখন-ই তিনি প্রকাশ করেছিলেন সেই পরম ধ্রুব সত্য বাণী,
“আমি চিন্তা করি, অতএব আমি আছি” বা
“I think therefore, I exist”
লাইনটা নানাভাবে ইন্টারপ্রিটেশন করা যায়। অনেকে ভেবে থাকেন এই লাইন দ্বারা দেকার্ত তার অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। কথাটা অনেক আংশেই সত্য এবং খানিকটা লজিক্যাল। কিন্তু, আমরা আজ একটু ভিন্নভাবে ব্যাপারটা চেষ্টা করবো। ডুব দিবো আরও গভীরে।
দেকার্ত বিশ্বাস করতেন, “প্রতিটা মানুষ জন্মের সময়ই কিছু ইননেট আইডিয়া বা চিন্তা শক্তি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, এবং তা ঈশ্বর প্রদত্ত”।
এখন, দেকার্তের লাইনটা আবার খেয়াল করুন, যার প্রথম অংশেই রয়েছে “I think”-এই চিন্তা শক্তিকে আমরা “ঈশ্বর” হিসাবে ধরতে পারি। দেকার্ত এর সূত্র অনুযায়ী। কারণ, দেকার্ত এখানে সরাসরি নিজের অস্তিত্বের সূত্র হিসাবে “আমি চ��ন্তা করি”—জিনিসটা আবশ্যক করেছেন। আর, ঈশ্বরের উপস্থিতি ছাড়া পুরো জীব জগত অস্তিত্বহীন হতে বাধ্য। যেমন, হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন,
“আমি ছিলাম গুপ্ত, অতঃপর আমি প্রকাশ হইলাম।”
অপরদিকে, আদমের ব্যাপারে কুরআনে বলা হয়েছে,
“আমি প্রথম আদম-র মূর্তি সৃষ্টি করলাম, অতঃপর তাতে নিজ রুহ থেকে ফুৎকার করলাম।”
এই ২টি রেফারেন্স একটু পর্যালোচনা করলে, দেখা যাবে রেনে দেকার্তও একই কথা বলেছেন৷ আল্লাহ, আদমকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করলেন তার বুদ্ধির জন্য। আর, এই বুদ্ধি তিনি পেয়ে ছিলেন আল্লাহর কাছ থেকে। অতপর, আদম প্রকাশ লাভ করলো।
“I think (God), therefore I exist (human being).
দেকার্ত এই তত্ত্বের সাথে সুফিদের বাণী একদম একই। শুধুমাত্র ভাষাগত পার্থক্য।
মনসুর হাল্লাজ,” I’m the truth”
এখানে, মনসুর নিজের মধ্যে সত্য চিন্তাকে খুজে পেয়ে তা প্রকাশ করে ছিলেন উপরের বাক্যের দ্বারা।
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির ওস্তাদ শামস তাবরিজ বলেছিলেন,
“এক-এর দর্শনের মধ্যেই আমার অস্তিত্ব”
এই, “এক”—বলতে উনি সেই পরমসত্তার পরম সত্যকে বুঝিয়েছেন। লালন ঠিক একইভাবে দেকার্ত—চমস্কির মত ইননেট আইডিয়ার কনসেপ্ট প্রকাশ করেছিলেন,
“লামে-আলিফ লুকায় যেমন, মানুষে সাই আছে তেমন”
এখানে, লাম—হলো “আদম” এবং তার চিন্তার জগত এবং ঈশ্বর কে “আলিফ” বোঝানো হয়েছে।
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে আধুনিক দর্শনের জনক রেনে দেকার্ত কতটা কট্টর ছিলেন ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে। তিনি শুধু ঈশ্বরের উপর আস্থা রেখেই থেমে যাননি বরং নাস্তিকরা যেসব জিনিসকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করে ঈশ্বরকে অস্বীকার করে থাকে সেসব মাধ্যমকেও প্রশ্নবিদ্ধ এবং ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছেন।
দেকার্ত কর্তৃক প্রদত্ত ঈশ্বরের যুক্তিনিষ্ঠ প্রমাণ
সবকিছুতেই সংশয় করার পর রেনে দেকার্ত ঈশ্বরকে চুড়ান্ত সত্যরুপে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা যেটা সামনে আসলো তা হলো তিনি এই দাবি প্রমাণ করবেন কীভাবে। ঈশ্বরের অস্তিত্ব কি প্রমাণ করা সম্ভব? মধ্যযুগের ক্যাথলিক ধর্মতাত্ত্বিক সেইন্ট অ্যানস্যাল্ম এবং সেইন্ট টমাস একুইনাস যুক্তিনিষ্ঠ অবরোহ যুক্তির সাহায্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এসব যুক্তি প্রমাণকে আজকাল বলা হয়ে থাকে ক্লাসিক্যাল—র্যাশনালিস্ট-প্রুফ-অব-এক্সিসটেন্স-অব-গড, যা আধুনিক দর্শনে চরমভাবে সমালোচিত।
কিন্তু রেনে দেকার্ত খুব ভালোভাবে জানতেন যে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণে এসব বিখ্যাত মধ্যযুগীয় যুক্তি-প্রমাণ তিনি ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ তার কাছে শুদ্ধ জ্ঞান এবং প্রমাণিত বাক্য শুধু একটি-ই রয়েছে আর তা হলো—“তিনি নিজ��” অস্তিমান। তিনি তাই সেইন্ট টমাসের মতো যিনি অসংখ্য কার্যকরণের ধারাবাহিকতায় বিশ্ব গঠিত বলে মনে করেন, যেখানে ঈশ্বর হলেন প্রথম কারণ, এই মতের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করতে পারবেন না। সেইন্ট টমাস দ্বারা উত্থাপিত এসব যুক্তিকে বলা হয় সৃষ্টিতাত্ত্বিক যুক্তি (Cosmological argument) বা ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ। এই যুক্তি অনুযায়ী দাবি করা হয়, যেহেতু বিশ্বে সংগঠিত সকল কিছুর পেছনে একটি কারণ আছে। তাই এসব ধারাবাহিক সকল ঘটনার পেছনে চলমান সকল কারণের শেষে একটি চুড়ান্ত কারণ রয়েছে। যিনি-ই সবকিছু সৃষ্টির মূল কারণ আর তিনিই ঈশ্বর। স্পষ্টত, দেকার্ত সকল কারণের প্রথম কারণ হিসাবে ঈশ্বরকে গ্রহণ করার যুক্তি নিতে পারবেন না। কারণ, তার কাছে প্রমাণিত বাক্য শুধু একটিই রয়েছে আর সেটা হলো তার নিজের অস্তিত্ব। অনুরুপভাবে দেকার্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ে সেইন্ট টমাসের আরেকটি প্রমাণ যা আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইন নামে পরিচিত সেটাও ব্যবহার করতে পারবেন না। যা অনুমান করে যে বিশ্ব বিদ্যমান, শৃঙ্খলাপূর্ণ, সুসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, যার মাধ্যমে মানবসমাজ উপযুক্ত তাপ, আলো, বায়ু, খাদ্য, জল, আবাস এবং নান্দনিক সৌন্দর্য ভোগ করে আসছে তা দৈবক্রমে হঠাৎ ঘটেনি বরং কোনো বুদ্ধিমান সত্তা কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে মানুষের কল্যাণার্থে সৃষ্টি করা হয়েছে। পর্বত শিখরে দাড়িয়ে অথবা বিমানের সিটে উপবিষ্ট হয়ে পাহাড়-উপত্যকার দৃশ্যপট লক্ষ্য করে সেই মুহূর্তেকে বিশ্বাস করেনি যে এসব ঈশ্বরের পরিকল্পিত? “আর্গুমেন্ট ফ্রম ডিজাইন” যুক্তি দেয় যে ঈশ্বর বিদ্যমান আছেন বিশ্বের ডিজাইনার, পরিকল্পনাকারী এবং পরিচালক হিসাবে। কিন্তু রেনে এই যুক্তির আশ্রয়েও নিতে পারবেন না কারণ তিনি এখনো এই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব প্রমাণে সক্ষম হননি।
তা হলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কীভাবে “মাত্র আমিই অস্তিমান” এই বক্তব্যের মাধ্যমে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ করবেন? তার কাছে যেটা আছে সেটা হচ্ছে “তিনি চিন্তা” করতে পারেন অর্থাৎ আইডিয়া। এর দ্বারাই তাকে ঈশ্বরকে প্রমাণ করতে হবে। তিনি এটাকেই আশ্রয় করে একটি থিওরি সামনে আনলেন আর তা হলো—
থিওরি অব নলেজ বা জ্ঞানতত্ত্ব ধারণা। দেকার্ত “আইডিয়া” বা ধারণা বলতে বুঝিয়েছেন যা-কিছু সচেতন ও অনুভূতিশীল (আনন্দ বা বেদন); ইন্দিয়গ্রহ্য (সূর্য, বৃক্ষ, নগরের পথ জনতা); অনুস্মরণ বা স্মৃতিক্ষম (শৈশবকাল, যুদ্ধ); বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা বা যুক্তিবিচারক্ষম (বৈজ্ঞানিক, গাণিতিক, দার্শনিক) এগুলোকে। পুনরায় দেকার্ত তার আইডিয়া বা ধারণাকে পরীক্ষা করে দেখতে পান যে, তিনি তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে পারেন—
১। কোথা থেকে এলো ২। কেমন বা কি প্রকার বাস্তবতা, এবং তা কী ��ির্দেশ করে। এখানে প্রথম প্রসঙ্গ হলো আমরা যখন প্রশ্ন করি তার ধারণার উৎস কী, তা কোথা থেকে আসে এবং আমরা তা কীভাবে পাই। আমরা দেখি তিন প্রকার ধারণা আছে: তার মতে প্রথমটি হলো সে-সব ধারণা, যা জন্মসূত্রে সবার মধ্যে থাকে, যাকে বলা যায় “ইন্নেট” বা সহজাত ধারণা। যা আমাদের প্রকৃতির অন্তর্গত, যা আপন যুক্তির আলোকেই জানা সম্ভব। যেমন কোন কিছু সম্পর্কে আমাদের অনুভব, তার কারণ, অস্তিত্ব, স্থান, কাল, গণিতশাস্ত্রের মূলনীতি এবং যুক্তিশাস্ত্র ইত্যাদি। দ্বিতীয় প্রকারের ধারণা হলো মানুষের কল্পনা উদ্ভূত। যাকে তিনি বলেছেন “ফ্যাক্টিশাস” বা কৃত্রিম। যেমন মারমেইড বা মৎস্যনারাই, ইউনিকর্, ইউটোপিয়া, ভবিষ্যৎ পৃথিবী ইত্যাদি। সর্বশেষ তৃতীয় প্রকারের ধারণা হলো বাহ্যিক যা আমাদের বাইরে থেকে আগত বলে প্রতিভাত হয়। তা যেন প্রকৃতি আমাদের উপর আরোপ করে। যার উপস্থিতি বা আগমন আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল নয়। এ জাতীয় ধারণাকে “অ্যাডভেন্টিশাস” বা আপতিক বলা হয়। উদাহরণস্বরুপ কোন শব্দ শ্রবণ করা, সূর্য, বৃক্ষ, রঙ প্রভৃতি দর্শন ইত্যাদি। এতক্ষণে দেকার্ত কীভাবে কোন উৎস থেকে তা লাভ করা যায় তার ভিত্তিতে তাদের শ্রেণী বিভাগ দেখানোর চেষ্টা করেছেন৷ সহজাত-ধারণা আসে মানুষের অন্তর্গত বিচারবোধ বা যুক্তি থেকে। এ সকল মানুষের জন্য স্বাভাবিক বা প্রকৃতিগত; কৃত্রিম সৃষ্ট ধারণা আসে মানুষের কল্পনা শক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে; এবং আপতিক ধারণা আসে পৃথিবীর বাইরের কোন কিছুর কারণে।
এরপর দেকার্ত ধারণার বা আইডিয়ার দ্বিতীয় বিশিষ্টতা। অর্থাৎ তা কি প্রকার বাস্তবতা তা নিয়ে অগ্রসর হন। তার যুক্তি হলো: যতক্ষণ কোন ধারণা আমাদের মনে উপস্থিত বা বিদ্যমান আছে ততক্ষণ তা হলো প্রকৃত বা আনুষ্ঠানিক বাস্তবতা। দেকার্ত ধারণা সম্পর্কে তার তৃতীয় ও শেষ যে মন্তব্য করেছেন তা হলো—এখন তিনি ধারণা কোথা থেকে এলো বা তার বাস্তবতা কেমন, তা নিয়ে চিন্তিত নন। বরং তিনি জানতে চেয়েছেন—তা কীসের ধারণা। তা কী বিষয়ক বা তা কীসের প্রতিনিধিত্ব করে। দেকার্ত ধারণার এই বৈশিষ্ট���যকে বলেছেন অবজেক্টিভ রিয়্যালিটি বা বস্তুনিষ্ঠ বাস্তবতা। কোনো ধারণা বা আইডিয়ার অবজেক্টিভ রিয়্যালিটি গঠিত হয় তার কোনো বস্তুকে নির্দেশ করার সক্ষমতার ওপর। তার নিজের কোন বস্তু হওয়ার ওপর। যেমন, ঈশ্বরের ধারণা ঈশ্বর নির্দেশক, ওক বৃক্ষের ধারণা ওক বৃক্ষ নির্দেশক বা সেনাবাহিনীর ধারণা সেনাবাহিনী নির্দেশক।
ঈশ্বরের ধারণা, তিনি বলেন এই তাবৎ ধারণাই হয়তো কৃত্রিম। আমার “তৈরি” বা উদ্ভাবিত। আমা কর্তৃক সৃষ্ট। কিন্তু এখানে ব্যতিক্রম হলো ঈশ্বরের ধারণা। দেকার্তের ঈশ্বরের ধারণায় যাওয়ার আগে আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত—ঈশ্বর বিষয়ে আমাদের ধারণা কি? ঈশ্বর সর্বাধিক মাত্রায় সকল প্রকার ইতিবাচক উপাদানে গঠিত সারবস্তু। অর্থাৎ তার মধ্যে রিয়্যালিটি বা বাস্তবতা পূর্ণমাত্রায় নিখুঁত আকারে বিদ্যমান। দেকার্ত আরও যোগ করে ব��েছেন—ঈশ্বর অনন্ত অসীম এক সত্তা। তার শুভত্ব সীমারহিতরুপে বিশুদ্ধ৷ সর্বপ্রকার ত্রুটি মুক্ত। তার মধ্যে শুভত্ব-জ্ঞান-শক্তি-স্থিতি প্রভৃতি ধনাত্মক গুনাবলী নিখুঁত মাত্রায় বিদ্যমান। দেকার্ত ঈশ্বরের ধারণা পেশ করেছেন এভাবে—
“ঈশ্বর বলতে আমি তেমন বস্তুকে বুঝি যা অনন্ত-অসীম-স্বতন্ত্রময়-সর্বজ্ঞানী-সর্বশক্তিমান এবং যা থেকে এই আমি এবং অস্তিমান সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে।”
এই মহান দার্শনিকের ঈশ্বরকে উপলব্ধি সরাসরি কুরআনের সাথে মিলে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে—
তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বলো অথবা প্রকাশ্যে বলো, তিনি তো অন্তর্যামী। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।’ (সূরা মুলক: ১৩-১৪
পৃথিবীর সব বৃক্ষ যদি কলম হয় এবং সমুদ্র হয় কালি এবং এর সঙ্গে আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হবে না। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা লুকমান: ২৭)
বলুন, আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয় তবে আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হওয়ার আগেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে, আর এর সাহায্যার্থে অনুরূপ আরো সমুদ্র আনলেও।’ (সূরা কাহফ: ১০৯)
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের এবং তোমরা যা তৈরি করো তাও।’ (সূরা সাফফাত: ৯৬)
‘যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ। তাঁর ব্যাপার শুধু এই—তিনি যখন কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করেন তখন তিনি বলেন, হও; ফলে তা হয়ে যায়।’ (সূরা ইয়াসিন: ৮১-৮২)
একেক মুহূর্তে তিনি একেক শানে থাকেন।’ (সূরা আর রাহমান: ২৯)
তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা।’ (সূরা কাহফ: ২৬)
নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সব কিছু দেখেন।’ (সূরা. মুজাদালা: ১)
নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তা-ই করেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন।’ (সূরা হুদ: ১০৭)
‘তাঁর কাছেই রয়েছে অদৃশ্য জগতের চাবিসমূহ, এগুলো তিনি ছাড়া কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। মৃত্তিকার অন্ধকারে কোন শস্যকণা অঙ্কুরিত হয় না এবং ভিজা কিংবা শুকনো কোনো বস্তু পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।’ (সূরা আনআম: ৫৯)
বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়। আসমানের বিদ্যুৎ যখন অন্ধকার প্রান্তরে তাদের জন্য আলো নিয়ে আসে, তখন তারা কয়েক কদম অগ্রসর হয়। কিন্তু যখন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়, তখন তারা থমকে দাঁড়ায়। আল্লাহ চাইলে তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।” (সূরা বাকারা: ২০)
(হে রাসূল, আপনি) বলুন—পৃথিবীতে পরি��্রমণ করো এবং অনুধাবন করো কীভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? অতঃপর আল্লাহ পুনরায় পরকালীন জগত সৃষ্টি করবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।” (সূরা আনকাবুত: ২০)
অর্থাৎ, পৃথিবী ও আসমানসমূহে কোন কিছুই আল্লাহর জন্যে অসম্ভব নয়। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান। (সূরা ফাতের: ৪৪)
দেকার্তের যুক্তি হলো, আমরা ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে ভাবতে বা চিন্তা করতে পারি এ কারণে যে প্রকৃত ঈশ্বর বিদ্যমান। আর তিনিই এই ঈশ্বরের ধারণার কারণ। কারণ ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকলে তা কোন দিনই আমাদের মস্তিষ্কের ধারণায় আসতো না। তিনি আরো যুক্তি দেন যে আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের ধারণা গুপ্ত থাকার কারণ ঈশ্বরের অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ হিসাবে দেকার্ত বলেছেন—
প্রথমত আমাদের সকলের মধ্যে ঈশ্বর সম্পর্কে “স্পষ্ট এবং স্বতন্ত্র” ধারণা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু সব ধারণাই কোন না কোন কারণের ফল। তা হলে নিশ্চয় ঈশ্বরের ধারণারও কারণ আছে। তিনি বলেন—অধিকন্তু কারণ সম্পর্কে আমাদের তিনটি নিরীক্ষণ পদ্ধতি অবশ্যই মনে রাখতে হবে—
১। কোন ঘটনার কারাণের ভিতর যতখানি বাস্তবতা নিহিত থাকে তার কার্য বা পরিণতির মাধ্যেও সমপরিমাণ বাস্তবতা থাকতে বাধ্য। তিনি জিজ্ঞাসা করেন-
“পরিণতির বাস্তবতা কোথা থেকে উদ্ভুত হবে, যদি না—কি তা তার কারণ থেকে উদ্ভূত হয়?”
২। কিছু নিশ্চয়, শূন্য বা কিছু না থেকে উদ্ভূত নয়?
৩। যা অধিক নিখুঁত তা নিশ্চয়, কম নিখুঁত থেকে উদ্ভূত হতে পারে না?
অতএব নিখুঁত—সারবস্তু হিসাবে আমরা ঈশ্বরের ধারণা অনুরুপ পূর্ণসত্তার অস্তিত্ব ব্যাতিরেকে অন্য কোন কারণ হতে পারে না। যদিও আমি কোন প্রকৃতিক বস্তু অথবা প্রাণী অথবা মানুষ প্রভৃতির ধরণার কারণ হতে পারি—কারণ এগুলো মস্ত কোন বস্তু নয় বা নিখুঁত কোন ধারণা নয় যে আমি তাদের কারণ হতে পারি না। কিন্তু আমি কোন ভাবেই ঈশ্বরের ধারণার কারণ হতে পারি না। কারণ আমি সসীম, অ-নিখুঁত সত্তা। পক্ষান্তরে ঈশ্বরের ধারণা এক অনন্ত-অসীম-নিখুঁত সত্তা৷ অর্থাৎ আমার চেয়ে বৃহৎ কিছু নিশ্চয় আমার মধ্যে ঈশ্বরের ধারণা আরোপ করেছে। নূন্যপক্ষে তা পরিণতির অনুরুপ বৃহৎ যা নিখুঁত। যা আমাদের মধ্যে ঈশ্বরের ধারণা রুপে বিদ্যমান৷
এটাই দেকার্তের ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ। ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের পর আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ঈশ্বর কখনোই প্রতারণাকারী হতে পারে না। কারণ প্রবঞ্চনা, প্রতারণা প্রভৃতির উৎপত্তি খুঁত বা ত্রুটি থেকে। আর আমরা জানি যে, ঈশ্বর খুঁত এবং ত্রুটি মুক্ত। ঈশ্বর দুষ্টু হতে পারেন না। কারণ এই সমস্ত ত্রুটি নিখুঁত-সত্তার চরিত্রের লক্ষণ নয়।
দ্বিতীয় প্রমাণ: সহজাত—ধারণার মতবাদ। পরিশেষে দেকার্ত দাবি করেছেন ঈশ্বর সম্পর্কে আমাদের ধারণা সহজাত৷ তা আমাদের মনের স্বভাবজাত বা অন্তর্গত। ঈশ্বরই আমাদের এই ধারণার কারণ। তিনিই এই ধারণা সব মানুষের মধ্যে স্বভাবজাত করে দিয়েছেন। তিনিই এটা আমাদের মধ্যে মুদ্রিত করে দিয়েছেন। কারিগর হিসাবে আমাদের এভাবেই গড়েছেন তিনি। জন্ম থেকেই এরকম অনেক ধারণা আমাদের মধ্যে মুদ্রিত হয়ে আছে। মুদ্রিত ধারণাগুলো হলো ঈশ্বরের ধারণা, কারণ, সারবস্তু, যুক্তি, গণিত ইত্��াদি ধারণা। এগুলো আমাদের মধ্যে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত হয় না। এমনকি এগুলোর জন্য কোন প্রমাণের প্রয়োজন-ও পরে না। সহজাত ধারণা স্পষ্ট এবং স্বতন্ত্র। আমাদের মনে প্রমাণ ব্যাতিরেকে তা সত্য বা স্বতঃসিদ্ধ বলে গৃহীত। আমরা জানি যে এগুলো নিরঙ্কুশ রুপে সত্য। কারণ ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত সত্য। আর যে বিষয় আমাদের যুক্তিবোধের নিকট স্বতঃসিদ্ধ বা পরিক্ষিত হিসাবে গৃহীত। সে বিষয়ে ত���নি আমাদের প্রতারিত করতে পারেন না। যা তিনিই আমাদের মধ্যে অন্তর্গত করে দিয়েছেন।
উপরের আলোচনা থেকে আধুনিক দার্শনের জনক খুব শক্তভাবেই প্রমাণ করেছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব। তাই ফ্রান্সিস বেকন একটি কথা বলেছিলেন—
“নাস্তিকতা তাদের মনের কথা নয়; মুখের কথা। “
লেখক: কাজী ম্যাক
#রেনে দেকার্তের দর্শন এবং নাস্তিকতার অবস্থান#রেনে দেকার্ত#René Descartes#আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি#I think; therefore i am#রেনে দেকার্তের দর্শন
1 note
·
View note
Text
❤️|| দশমহাবিদ্যা ||❤️
❤️|| দেবী ছিন্নমস্তা ||❤️
ছিন্নমস্তা (সংস্কৃত: छिन्नमस्ता, Chinnamastā, "ছিন্ন মস্তক যে দেবীর") হলেন এক হিন্দু দেবী। তিনি ছিন্নমস্তিকা বা প্রচণ্ডচণ্ডিকা নামেও পরিচিত। মহাবিদ্যা নামে পরিচিত যে দশ দেবীর পূজা গুহ্য তান্ত্রিক সাধনার অঙ্গ, ছিন্নমস্তা হলেন তাদেরই অন্যতম। তিনি হিন্দুধর্মে মহাশক্তি নামে পরিচিত মাতৃকারূপী ঈশ্বরের একটি ভয়ংকরী মূর্তিবিশেষ। ছিন্নমস্তা নগ্ন অবস্থায় মৈথুনরত দিব্য যুগলের উপর দণ্ডায়মান বা উপবিষ্ট অবস্থায় থাকেন। তার এক হাতে থাকে কর্তৃকা (বাঁকা তরবারিবিশেষ)। নিজেই সেই কর্তৃকা দ্বারা নিজের মস্তক ছিন্ন করেন এবং অপর হাতে সেই ছিন্ন মস্তক ধৃত অবস্থায় থাকে। তার কর্তৃক কণ্ঠনালি থেকে সবেগে উদ্গত রক্তের তিনটি ধারা পান করেন তার ছিন্ন মস্তক এবং দুই সহচরী।
ছিন্নমস্তার মূর্তিকল্পে পরস্পরবিরোধী ধারণার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি একাধারে জীবনদাত্রী ও জীবনহন্ত্রী দেবী। ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে তাকে ইন্দ্রিয়-সংযম অথবা যৌনশক্তির প্রতীক মনে করা হয়। তিনি একদিকে যেমন মৃত্যু, পার্থিব বিষয় ও ধ্বংসের প্রতীক, তেমনই অন্যদিকে জীবন, অনৈতিকতা ও পুনঃসৃজনেরও প্রতীক। ছিন্নমস্তা আধ্যাত্মিক আত্মোপলব্ধি ও কুণ্ডলিনী শক্তির (আধ্যাত্মিক শক্তি) জাগরণের দেবী। ছিন্নমস্তা-সংক্রান্ত কিংবদন্তিগুলিতে তার আত্মবলিদান এবং কখনও তার সঙ্গে একটি মাতৃসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি, ইন্দ্রিয়-সংযম ও আত্ম-বিধ্বংসী ক্রোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।
হিন্দুধর্মের শক্তিপূজা-কেন্দ্রিক শাক্ত সম্প্রদায়ের কালীকুল শাখায় দেবী ছিন্নমস্তার পূজা প্রচলিত। অন্যতম মহাবিদ্যা হিসেবে হিন্দু দেবমণ্ডলীতে বিশেষ স্থানের অধিকারিনী হলেও ছিন্নমস্তার মন্দিরের সংখ্যা খুবই কম এবং সর্বজনীনভাবেও তার পূজা বিশেষ করা হয় না। ছিন্নমস্তার অধিকাংশ মন্দির নেপাল ও পূর্ব ভারতেই অবস্থিত। তবে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ও সুপরিচিত তান্ত্রিক দেবী। গুহ্য তন্ত্রসাধকেরা তার পূজা করে থাকেন। তিব্বতি বৌদ্ধ দেবী বজ্রযোগিনীর ছিন্নমস্তক রূপ ছিন্নমুণ্ডার সঙ্গে দেবী ছিন্নমস্তার একটি বিশেষ যোগ রয়েছে।
হিন্দু দেবী ছিন্নমস্তা তান্ত্রিক ও তিব্বতি বৌদ্ধ���র্মের এক গুরুত্বপূর্ণ দেবী। বৌদ্ধধর্মের উক্ত দুই শাখায় তিনি ছিন্নমুণ্ডা বা ত্রিকায়া-বজ্রযোগিনী নামে পরিচিতা। তিনি দেবী বজ্রযোগিনীর (বা বজ্রযোগিনীর অন্যতম ভয়ংকরী মূর্তি বজ্রবারাহীর) কর্তিত-মস্তক মূর্তি। এই মূর্তিটি হিন্দু দেবী ছিন্নমস্তার মূর্তিরই অনুরূপ।[২][৩]
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থে দেবী ছিন্নমুণ্ডার দু’টি জন্মবৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। একটি কাহিনি অনুসারে, কৃষ্ণাচার্যের শিষ্যা ছিলেন দুই ভগিনী মেখলা ও কনখলা। তারা ছিলেন মহাসিদ্ধ। নিজেদের মাথা কেটে তারা গুরুকে উৎসর্গ করেন এবং তারপর নৃত্যে রত হন। দেবী বজ্রযোগিনীও তখন সেই রূপে আবির্ভূতা হয়ে তাদের সঙ্গে নৃত্যে যোগদান করেন। অপর কাহিনি অনুসারে, পদ্মসম্ভবের এক শিষ্যা পূর্বজন্মে ছিলেন রাজকুমারী লক্ষ্মীঙ্করা। রাজা কর্তৃক দণ্ডিতা হয়ে তিনি নিজেই নিজের মাথা কেটে নগর পরিক্রমা শুরু করেন। সেই সময় নগরবাসী তাকে ছিন্নমুণ্ডা-বজ্রবারাহী নামে স্তুতি করেন।[৪][৫]
দেবী ছিন্নমস্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার নাগযজ্ঞোপবীত (সর্প-উপবীত) ও পায়ের তলায় মৈথুনরত যুগল। বৌদ্ধ ছিন্নমুণ্ডার মূর্তির এই দুই বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। তা সত্ত্বেও ২০শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে তন্ত্রবিশারদ তথা ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউট অফ বরোদার তৎকালীন পরিচালক বিনয়তোষ ভট্টাচার্য বৌদ্ধ সাধনমালা (১১৫৬ খ্রিষ্টাব্দ), হিন্দু ছিন্নমস্তাকল্প (রচনাকাল অজ্ঞাত) ও কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত তন্ত্রসার (১৬শ শতাব্দীর শেষভাগ) ইত্যাদি গ্রন্থ পর্যালোচনা করে ছিন্নমুণ্ডা ও ছিন্নমস্তা যে একই দেবী, সেই ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হন। বৌদ্ধ সাধনমালা গ্রন্থে এই দেবীর নাম সর্ববুদ্ধা ও এঁর দুই সহচরীর নাম বজ্রবৈরোচনী ও বজ্রবর্ণিনী। হিন্দু তন্ত্রসার গ্রন্থে তারই নাম সর্বসিদ্ধি ও তার দুই সহচরীর নাম বর্ণিনী ও ডাকিনী। অন্যদিকে ছিন্নমস্তাকল্প গ্রন্থে তাকে সর্ববুদ্ধি নামে অভিহিত করে তার সহচরীদের বৌদ্ধ নামগুলি অবিকৃত রাখা হয়েছে। বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের মতে বৌদ্ধ ছিন্নমুণ্ডা দেবীর ধারণা থেকেই হিন্দু ছিন্নমস্তা দেবীর উৎপত্তি এবং এই ছিন্নমুণ্ডা দেবীর পূজা অন্ততপক্ষে খ্রিস্টীয় ৭ম শতাব্দী থেকে প্রচলিত ছিল।[৬]
বিভিন্ন স্তোত্রে ছিন্নমস্তাকে পঞ্চম মহাবিদ্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিংসলে বলেছেন, মহাবিদ্যার বর্ণনায় ও তালিকায় কালী, তারা ও ছিন্নমস্তাই সর্বপ্রধান। যদিও মহাবিদ্যার বাইরে তার অস্তিত্ব নগণ্য।[২৪][২৫] গুহ্যাতিগুহ্য তন্ত্র গ্রন্থে বিষ্ণুর দশাবতারের সঙ্গে দশমহাবিদ্যার সম্পর্ক প্রদর্শিত হয়েছে; এই গ্রন্থ মতে, নরসিংহ অবতারের উৎস ছিন্নমস্তা।[২৬] মুণ্ডমালা গ্রন্থে অনুরূপ একটি তালিকায় ছিন্নমস্তার সঙ্গে পরশুরামের তুলনা করা হয়েছে।[২৭]
শাক্ত মহাভাগবত পুরাণ গ্রন্থে ছিন্নমস্তা সহ দশমহাবিদ্যার উৎপত্তি-সংক্রান্ত একটি উপ��খ্যান রয়েছে। দক্ষের কন্যা দাক্ষায়ণী ছিলেন শিবের প্র��মা স্ত্রী।দেবী সতী ছিলেন আদিতে প্রকাশমান একমাত্র শক্তি দেবী আদি পরাশক্তি মহামায়া। দক্ষ তার যজ্ঞানুষ্ঠানে শিবকে নিমন্ত্রণ না জানালে, দাক্ষায়ণী অপমানিত বোধ করেন। তিনি বিনা আমন্ত্রণেই যজ্ঞে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে শিবকে পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। কিন্তু শিব রাজি হন না। তখন দাক্ষায়ণী ভীষণা দশ মূর্তি ধারণ করে দশ দিক থেকে শিবকে ঘিরে ধরেন। এই দশ মূর্তিই দশমহাবিদ্যা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ছিন্নমস্তা পশ্চিমে শিবের ডানদিকে অবস্থান করেছিলেন।[২৮][২৯][৩০] আর একটি কিংবদন্তি অনুসারে, সতী নন, শিবের দ্বিতীয়া পত্নী মাতাপার্বতীকে দশমহাবিদ্যার উৎস বলা হয়েছে। পার্বতী ছিলেন পূর্বজন্মে সতী অথবা দেবী আদ্যাশক্তি। পার্বতী দশমহাবিদ্যার সাহায্যে শিবকে তার পিতৃগৃহ ছেড়ে যেতে বাধা দেন। শিব পার্বতীর সঙ্গে থেকে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই তিনি পার্বতীকে ত্যাগ করতে গিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় কালী তাকে জ্ঞান প্রদান করেন এবং নিরস্ত করেন।[৩১] দেবীভাগবত পুরাণ মতে, দশমহাবিদ্যা দেবী শাকম্ভরীর রূপা পার্বতীর যুদ্ধসঙ্গী ও রূপান্তর।[৩২]
প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থে ছিন্নমস্তার জন্মসংক্রান্ত দুটি কাহিনি বিবৃত হয়েছে। একটি কাহিনি নারদ-পঞ্চরাত্র থেকে গৃহীত বলে দাবি করা হয়েছে। এই কাহিনি অনুযায়ী, একদা মন্দাকিনী নদীতে স্নানকালে পার্বতী কামার্ত হয়ে পড়েন। ফলে তার গাত্রবর্ণ কালো হয়ে যায়। এই সময় তার দুই সহচরী ডাকিনী ও বর্ণনী (এঁরা জয়া ও বিজয়া নামেও পরিচিত) ক্ষুধার্ত হয়ে দেবীর নিকট খাদ্য প্রার্থনা করতে থাকেন। পার্বতী গৃহে ফিরে তাদের খেতে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু সহচরীদের ক্ষুধার্ত অবস্থা দেখে কাতর হয়ে দয়ার্দ্রহৃদয় দেবী নিজ নখরাঘাতে স্বমস্তক ছিন্ন করে নিজ রক্ত দিয়ে তাদের ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করেন। পরে তারা গৃহে ফিরে আসেন।[৩৩][৩৪] অপর কাহিনিটি প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থে স্বতন্ত্রতন্ত্র গ্রন্থ থেকে গৃহীত বলে দাবি করা হয়েছে। এই কাহিনিটি শিব নিজে বর্ণনা করেছেন: একদা তিনি ও তার পত্নী চণ্ডিকা (পার্বতী) রতিসংগমে রত ছিলেন। চণ্ডিকা ছিলেন বিপরীত রতিতে। কিন্তু শিবের বীর্যস্খলনে তিনি ক্রুদ্ধা হলেন। তখন তার দেহ থেকে ডাকিনী ও বর্ণনী নামে দুই সহচরীর জন্ম হল। কাহিনির অবশিষ্টাংশ পূর্বকথিত কাহিনিটির অনুরূপ। যদিও এই কাহিনিতে নদীটির নাম হল পুষ্পভদ্রা এবং ছিন্নমস্তার জন্মতিথিটিকে বলা হয়েছে বীররাত্রি। শক্তিসংগম তন্ত্র গ্রন্থে এই কাহিনিটি পুনঃকথিত হয়েছে।[৩৫]
একটি লোকশ্রুতি অনুযায়ী, দেবাসুর যুদ্ধে দেবগণ মহাশক্তির সাহায্য প্রার্থনা করলে দেবী পার্বতী, প্রচণ্ড চণ্ডিকা রূপে দেবগণের সাহায্যার্থে উপস্থিত হন। সকল দৈত্য বধের পর ক্রোধন্মত্তা দেবী নিজ মস্তক কর্তন করে নিজ রক্ত পান করেন। শাক্তপ্রমোদ গ্রন্থে ছিন্নমস্তা শতনাম স্তোত্রে প্রচণ্ড চণ্ডিকা দেবী ছিন্নমস্তারই অপর নাম।[৩৫] অপর একটি লোকশ্রুতি অনুযায়ী, সম��দ্রমন্থনের সময় উত্থিত অমৃত দেবাসুরের মধ্যে বণ্টিত হলে, ছিন্নমস্তা অসুরদের ভাগটি পান করেন এবং তারপর অসুরদের অমৃত থেকে বঞ্চিত করতে স্বমস্তক ছিন্ন করেন।[৩৬]
ছিন্নমস্তা-সংক্রান্ত কিংবদন্তিগুলির মূল উপজীব্য বিষয় হল আত্মত্যাগ – মায়ের আত্মত্যাগ (প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থের কাহিনিদ্বয়) বা জগতের হিতার্থে আত্মত্যাগ (দ্বিতীয় জনশ্রুতি)। এই কিংবদন্তির অপর উপজীব্য হল যৌন কর্তৃত্ব স্থাপন (প্রাণতোষিণী তন্ত্র গ্রন্থের দ্বিতীয় কাহিনি) বা আত্মবিধ্বংসী ক্রোধ (প্রথম লোকশ্রুতি)।[৩৭]
ছিন্নমস্তার গাত্রবর্ণ জবাফুলের ন্যায় লাল অথবা কোটিসূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল। তিনি সাধারণত নগ্না এবং আলুলায়িত কুন্তলা। ছিন্নমস্তা ষোড়শী এবং পীনোন্নত পয়োধরা, তার হৃদয়ের নিকট একটি নীলপদ্ম বিদ্যমান। তিনি নাগযজ্ঞোপবীত ধারণ করে থাকেন। তার গলদেশে অন্যান্য অলংকারের সঙ্গে নরকরোটি বা ছিন্নমুণ্ডের মালা দোদুল্যমান। বাম হাতে তিনি নিজমুণ্ড ধারণ করে থাকেন। কোনো কোনো মূর্তিতে তিনি থালা বা নরকপালের উপর নিজমুণ্ড ধারণ করেন। দেবীর ডান হাতে একটি কাতরি থাকে, যার মাধ্যমে তিনি তার মস্তক ছিন্ন করেন। ছিন্নমস্তকে মুকুট ও অন্যান্য অলংকার দেখা যায়। তার কবন্ধ থেকে তিনটি রক্তধারা ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায়। একটি রক্তধারা তার এবং অপর দুটি তার দুই যোগিনী সহচরীর মুখে প্রবেশ করে। তার দুই সহচরী – বামে ডাকিনী ও ডানে বর্ণনী – উভয়েই নগ্না, জটাজুটধারিণী বা আলুলায়িত কুন্তলা, ত্রিনয়না, পীনোন্নত-পয়োধরা, নাগযজ্ঞোপবীতধারিণী, বাম হস্তে নরকপাল ও দক্ষিণ হস্তে কাতরিধারিণী। ডাকিনী কৃষ্ণবর্ণা; তিনি তমোগুণের প্রতীক এবং বর্ণনী রক্তবর্ণা, তিনি রজোগুণের প্রতীক। দক্ষিণ পদ প্রসারিত ও বামপদ ঈষৎ বঙ্কিম অবস্থায় ছিন্নমস্তা কাম ও রতির দেহের উপর যুদ্ধভঙ্গিমায় দণ্ডায়মানা। কাম ও রতি উভয়েই প্রেমের দেবতা। কাম যৌনকামনার প্রতীক। তার দেহের উপর বিপরীত রতি ভঙ্গিমায় যৌনসংগমরত অবস্থায় রয়েছেন কামপত্নী রতি। কাম-রতি শায়িত রয়েছেন পদ্মের উপর এবং দেবীর পশ্চাদপটে রয়েছে শ্মশানঘাট।[৩৩][৩৮][৩৯][৪০] ছিন্নমস্তার এই জনপ্রিয় রূপটিই তন্ত্রসার ও ত্রিশক্তিতন্ত্র গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
অনেক সময় দেবীর সহচরীগণ হাতে ছিন্নমুণ্ড (তাদের নিজেদের নয়) ধারণ করে থাকেন।[৪১] কোথাও কোথাও কাম-রতির বদলে কৃষ্ণ ও রাধাকে দেবীর পদতলে দেখা যায়।[২৮] কোনো কোনো মূর্তিতে যুগলের তলায় পদ্মের বদলে চিতাসজ্জা লক্ষিত হয়। কোথাও কোথাও যুগলকে ছাড়াই ছিন্নমস্তা মূর্তি কল্পিত হয়। কোনো মূর্তিতে আবার দেবীর তলায় তার স্বামী শিবকে দেখা যায়; এই মূর্তিতে দেবী হাঁটু মুড়ে বসে শিবের সঙ্গে রতিসংগমরত অবস্থায় থাকেন।[৪২]
ছিন্নমস্তার জনপ্রিয় মূর্তিকল্পটি পীতবর্ণা ছিন্নমস্তক বৌদ্ধ দেবী বজ্রযোগিনীর সমতুল্য। কেবল বজ্রযোগিনী মূর্তিকে যুগলকে দেখা যায় না এবং ছিন্নমস্তা রক্তবর্ণা।[৮][৯]
ছিন্নমস্তা তন্ত্র গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, দেবী কামদেবের উপর উপবিষ্টা, দণ্ডায়মানা নন। ��েই সঙ্গে দেবী ত্রিনয়না এবং কপালে সর্পবেষ্টিত রত্নশোভিতা। তার স্তনযুগল পদ্মবিভূষিত।[৩৩] তন্ত্রসার গ্রন্থের একটি বর্ণনা অনুযায়ী, দেবী নিরাকারা ও নিজ নাভিদেশে উপবিষ্টা। কথিত আছে, এই মূর্তিটি কেবল ধ্যানচক্ষেই দেখা সম্ভব।[৩৩]
কোনো কোনো বর্ণনায় ছিন্নমস্তা চতুর্ভূজা। এক্ষেত্রে দেবীর পদতলে যুগলকে দেখা যায় না। তিনি তৃণক্ষেত্রের উপর উপবিষ্টা। তার দক্ষিণ হস্তদ্বয়ের উপরের হস্তে রক্তমাখা তরবারি ও নিচের হস্তে ব্রহ্মার ন্যায় একটি শ্মশ্রুমণ্ডিত ছিন্নমুণ্ড; বাম হস্তদ্বয়ের উপরের হস্তে নিজ ছিন্ন মুণ্ড এবং নিচের হস্তে রক্তময় নরকপাল। দুই নরকঙ্কাল তার দুই সহচরী। তারা রক্তপানরতা। দুটি শৃগাল দেবী ও ব্রহ্মার মুণ্ডের রক্তপান রত।[৪৩]
গবেষক ভ্যান কুইজের মতে, ছিন্নমস্তার মূর্তিকল্পে বীর ও ভয়ানক রসের প্রতিফলন ঘটেছে। যুগলমূর্তিটি শৃঙ্গার রসের প্রতিফলন। মূর্তির প্রধান বিষয় হল নিজ ছিন্নমুণ্ডের রক্ত উৎসর্গ ও পান এবং যুগল মর্দন।
ছিন্নমস্তা রূপের অর্থ জীবন, মৃত্যু ও যৌনতা পরস্পর স্বাধীন। ছিন্নমস্তার মূর্তি একটি চিরন্তন সত্যের বাহক: "জীবনকে বহন করে মৃত্যু, জীবন মৃত্যুর দ্বারা পুষ্ট হয়, এবং জীবনই মৃত্যুকে যাথার্থতা দান করে। এবং যৌনতার সর্বশেষ লক্ষ্য হল আরও জীবন সৃষ্টি করা। এই সব নতুন জীবনও তারপর নব নব জীবনকে বহন করার স্বার্থে জরাগ্রস্থ হয় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যুতে বিলীন হয়।"[৩৮] পদ্ম ও যৌনসংগমরত যুগল জীবন ও জীবনসৃষ্টির আকুলতার প্রতীক। এরা ছিন্নমস্তক দেবীকে জীবনীশক্তি প্রদান করে। দেবীর কবন্ধ থেকে রক্তের নির্গমন মৃত্যু ও জীবনীশক্তি ক্ষয়ের প্রতীক। এই ক্ষয়িত শক্তি তার সহচরী যোগিনীদের মুখে প্রবেশ করে তাদের পুষ্ট করে।[৩৮][৪৫] গবেষক পি. পাল ছিন্নমস্তাকে ত্যাগ ও সৃষ্টির পুনর্নবীকরণ ধারণার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। ছিন্নমস্ত�� নিজেকে ও নিজের রক্তকে উৎসর্গ করেছেন। সেই রক্ত তার সহচরীগণ পান করে বিশ্বচরাচরকে পুষ্ট করেছেন।[৪৬] একটি স্তবে তাকে ত্যাগ, ত্যাগী ও ত্যাগ গ্রহণকারী বলা হয়েছে। কারণ তার ছিন্নমস্তক একটি বলি।[৩৮][৪৭][৪৮]
কালীর ন্যায় অন্যান্য ভীষণা হিন্দু দেবীগণ দৈত্যদের মুণ্ড কর্তন করে থাকেন। তারা নিজ মস্তক ছিন্ন করার প্রথার সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু ছিন্নমস্তার মূর্তিতে দেখা যায় এক বিপরীত মস্তক উৎসর্গের প্রথা। তিনি তার নিজের মস্তক ভক্তদের ক্ষুণ্ণিবৃত্তির জন্য উৎসর্গ করেছেন। এই ভাবে তিনি দেবী রূপে জীবনদাত্রী। আবার কখনও কখনও যুগল মর্দন করে তিনি কালীর মতো জীবনহন্তা দেবী হয়ে ওঠেন।[৯]
ছিন্নমস্তা যৌনসংগমরত কামদেব ও রতিদেবীর উপর দণ্ডায়মানা। এর দুটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এক পক্ষের মতে, এটি যৌনকামনার আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতীক। অপর পক্ষের মতে, এর অর্থ দেবী যৌনশক্তির মূর্তিস্বরূপ। তার যোগিনী ও মদনাতুরা ("যিনি কামকে নিয়ন্ত্রণ করেন") নামদুটি তার যৌনশক্তি নিয়ন্ত্রণ ও দমনকারিণী যোগশক্তির পরিচায়ক।[৪৯] কোনো কোনো চিত্র��ল্পে ছিন্নমস্তা কাম-রতির উপর উপবিষ্ট। এই চিত্রে দেবীর দমনকারিণী মূর্তি দেখা যায় না। এখানে কাম-রতি দেবীকে যৌনক্ষমতা প্রদান করেন। কোনো কোনো মূর্তিতে দেবীকে শিবের সঙ্গে সংগমরতা অবস্থাতেও দেখা যায়। ছিন্নমস্তার কামেশ্বরী ও রতিরাগবিবৃদ্ধিনী নামদুটি এবং তার মন্ত্রে ক্লীঁ বীজের উল্লেখ (যা কামদেব ও কৃষ্ণের মন্ত্রেও উপস্থিত) এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।[৫০]
ছিন্নমস্তা তত্ত্ব গ্রন্থের লেখক আচার্য আনন্দ ঝা-র মতে, ছিন্নমস্তা যেহেতু যৌনকামনার উপর আত্মনিয়ন্ত্রণ, অপরের স্বার্থে বীরোচিত আত্মবলিদান ও মৃত্যুভয়হীনতার প্রতীক, সেহেতু সৈনিকদের ছিন্নমস্তা পূজা করা উচিত। নগ্নতা ও মস্তকহীনতা দেবীর সত্যরূপ ও "আত্মসচেতনতাহীনতা"-র প্রতীক। যুদ্ধে একাধিক দৈত্যবধ করার জন্য তিনি রণজৈত্রী নামে পরিচিত। এই নাম যুদ্ধক্ষেত্রে তার প্রবল শক্তিমত্তারও পরিচায়ক।[৫১]
ছিন্নমস্তা কুণ্ডলিনী শক্তি জাগরণেরও প্রতীক। যৌনসংগমরত যুগল মেরুদণ্ডের শেষ অস্থির উপর অবস্থিত মূলাধার চক্রের প্রতীক। কুণ্ডলিনী দেহের কেন্দ্রে সুষুম্না নদীপথে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মতালুতে অবস্থিত সহস্রারে আঘাত করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, সুষুম্না দেবীর সহস্রারে এত জোরে আঘাত করে যে, দেবীর মস্তক ছিন্ন হয়ে যায়। ঊর্ধ্বমুখে রক্তস্রোত চক্রের গ্রন্থি ছিন্ন করার প্রতীক। এই গ্রন্থি মানুষকে দুঃখিত, অজ্ঞ ও দুর্বল করে। ছিন্নমস্তক তুরীয় চৈতন্যের প্রতীক। কুণ্ডলিনী যখন সহস্রারে অবস্থানকারী শিবের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন তিনটি রক্তধারা অমৃতের ধারায় পরিণত হয়। অন্যমতে, ডাকিনী, যোগিনী ও ছিন্নমস্তা হলেন ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্না নামে তিনটি সূক্ষ্ম নদীর মুক্তধারার প্রতীক।[৫২][৫৩][৫৪] সুষুম্না মূলধার ও সহস্রারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এটি মেরুদণ্ডের সমান্তরালে প্রবাহিত। ইড়া দক্ষিণ অণ্ড থেকে বাম নাসারন্ধ্র পর্যন্ত প্রবাহিত। শীতল চান্দ্র শক্তি ও মস্তিস্কের দক্ষিণ ভাগের সঙ্গে এটি সংযুক্ত। পিঙ্গল বাম অণ্ড থেকে দক্ষিণ নাসারন্ধ্র পর্যন্ত প্রবাহিত। তপ্ত সৌর শক্তি ও মস্তিস্কের বাম ভাগের সঙ্গে এটি সংযুক্ত।
নিজের মস্তক ছিন্ন করা মিথ্যা ভাব, অজ্ঞতা ও আমিত্ব অপসারণের প্রতীক। মস্তক ছিন্ন করেও জীবিত থাকা অলৌকিক শক্তি ও কুণ্ডলিনী জাগরণের প্রতীক।[৫৫] দেবী ও দুই যোগিনীর ত্রয়ীমূর্তি বস্তুর তিন অবস্থার দার্শনিক প্রতীক, যার সঙ্গে সৃষ্টিশক্তিরও সম্পর্ক বিদ্যমান।[৩৩]
ছিন্নমস্তা হিন্দুসমাজে এক সুপরিচিত দেবী। বিভিন্ন দেবী মন্দিরের দশমহাবিদ্যার সঙ্গে তার পূজা প্রচলিত। তবে একক দেবী হিসেবে তিনি খুব একটা জনপ্রিয় নন। তার নিজস্ব মন্দিরের সংখ্যা হাতে গোনা। এককভাবে তার সার্বজনীন পূজা সুপ্রচলিত নয়। তান্ত্রিক, যোগী ও সর্বত্যাগীগণ বীরাচারী তান্ত্রিক মতে তার পূজা করে থাকেন। কিংসলের মতে দেবী ভীষণা এবং তার পূজা করা বা তার নিকটে যাওয়া বিপজ্জনক – এই রকম বিশ্বাস থাকায় তার পূজা জনপ্রিয়তা পায়নি।[১৪][৫৬] ছিন্নমস্তার শতনাম ও সহস্র��াম স্তোত্রে দেবীর ভীষণা প্রকৃতি ও ক্রোধের উল্লেখ আছে। এই সকল নামে তাকে প্রেতসেবিতা ও রক্তপানকারিণী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি নররক্ত ও নরমাংসে প্রীতা হন। দেহরোম, মাংস ও ভয়ংকর মন্ত্রে তার পূজা করা হয়।[৫৬]
তন্ত্রসাধকগণ সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের জন্য ছিন্নমস্তার পূজা করেন।[১৪] ছিন্নমস্তার মন্ত্র শ্রীঁ ক্লীঁ হ্রীঁ ঐঁ বজ্রবৈরোচনীয়ে হুঁ হুঁ ফট্ স্বাহা নারী বশীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।[৫৭][৫৮] তার মন্ত্র কাউকে মন্ত্রচালিত করা বা কারোর ক্ষতি করার জন্যও ব্যবহার করা হয়।[৩৩] কাব্যশক্তি, সুস্থতা, শত্রুবিজয়, বিঘ্নোপসারণ, রাজপ্রসাদ লাভ, অন্যকে আকর্ষণ, শত্রুরাজ্য জয় ও মোক্ষলাভ – মহাবিদ্যা আরাধনার এই সকল উদ্দেশ্যেও ছিন্নমস্তার পূজা করা হয়।[৫৬][৫৯]
তন্ত্রসার, শাক্ত প্রমোদ ও মন্ত্র মহোদধিহ (১৫৮৯ খ্রিষ্টাব্দ) নামক তন্ত্রগ্রন্থে[৬০] ছিন্নমস্তা ও অন্যান্য মহাবিদ্যার পূজাপদ্ধতি, যন্ত্র এবং ধ্যানমন্ত্র সহ অন্যান্য মন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে।[৫৬] তন্ত্রমতে, সাধককে নিজ নাভিতে যোনি চক্রের প্রতীক রক্তসূর্যচক্র কল্পনা করতে বলা হয়েছে। মনে করা হয়, এই চক্রের মধ্যেই ছিন্নমস্তার জনপ্রিয় রূপটির অবস্থান।[৩৩] তন্তসার গৃহস্থকে কেবল নিরাকার রূপেই ছিন্নমস্তার পূজা করতে বলেছেন। এই গ্রন্থে আরও বলা হয়েছে যে, যদি কোনো নারী মন্ত্রে ছিন্নমস্তাকে আবাহন জানান, তবে তিনি ডাকিনীতে পরিণত হন, স্বামী-পুত্র হারান এবং শেষে পরিপূর্ণ যোগিনী হন।[৩৩] শক্তিসংগম তন্ত্র গ্রন্থে কেবল বামমার্গে দেবীর পূজা করতে বলা হয়েছে। মন্ত্র মহোদধিহ গ্রন্থমতে, স্ত্রী ভিন্ন অপর নারীর সঙ্গে যৌনসংগম ছিন্নমস্তা পূজার অঙ্গ। শাক্ত প্রমোদ গ্রন্থেও পূর্বোক্ত মত সমর্থন করে যজ্ঞ ও রাত্রিকালে মদ্য ও মাংস যোগে দেবীর পূজার কথা বলা হয়েছে।[৬১] কোনো কোনো স্তবে বলা হয়েছে, দেবী রক্তে সন্তুষ্ট হন। তাই তার পূজায় রক্ত বলিদান করা হয়।[৬২] শক্তিসংগম তন্ত্র মতে একমাত্র বীরেরাই বামমার্গে দেবীর পূজার অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শাক্ত প্রমোদ গ্রন্থে বলা হয়েছে, সঠিক ভাবে দেবীর পূজা না করলে দেবী পূজকের মস্তক ছিন্ন করে রক্ত পান করেন। এই গ্রন্থে গৃহস্থ ও ত্যাগীর জন্য পৃথক পন্থায় ছিন্নমস্তার পূজার বর্ণনা রয়েছে।[৬১]
ছিন্নমস্তা মন্দির, বিষ্ণুপুর
হিমাচল প্রদেশের চিন্তাপূর্ণী ছিন্নমস্তা মন্দির একটি শক্তিপীঠ। কথিত আছে, এই মন্দিরে সতীর কপাল পড়েছিল। দেবী এখানে ছিন্নমস্তিকা এবং কপাল উভয় রূপেই পূজিতা হন।[৬৩] বারাণসীর নিকটবর্তী রামনগরের ছিন্নমস্তা মন্দিরে তান্ত্রিকরা শবদেহ নিয়ে দেবীর পূজা করেন। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের (বৈদ্যনাথ) নিকটবর্তী নন্দন পর্বত এবং রাঁচিতে অন্যান্য মহাবিদ্যার সঙ্গে ছিন্নমস্তারও বেদী রয়েছে। অসমের কামাখ্যা মন্দির চত্বরেও অন্যান্য মহাবিদ্যার সঙ্গে ছিন্নমস্তার বেদী বিদ্যমান। পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুর শহরে একটি বিখ্যাত ছিন্নমস্তা মন্দির রয়েছে। নেপালের কাঠমাণ্ডু উপত্যকা চাঙ্গু নারায়ণ মন্দিরের কাছে একটি ছিন্নমস্তা মন্দির রয়েছে। ��ারনার্ডের মতে, এই সকল মন্দিরগুলির মধ্যে প্রাচীনতমটি সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত।[৬১][৬৪][৬৫]
দশমহাবিদ্যা গ্রুপ থেকে সংগৃহীত 🙏
0 notes
Text
কেনো আমি গান্ধীকে ঘৃণা করি ? # (পর্ব- ২)
প্রথম পর্বে আমি গান্ধীর নানা কুকর্মের কথা তুলে ধরে তার হিন্দু্বিনাশী চরিত্র সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়েছি, এ পর্বেও জানতে পারবেন অনেক কিছু, তাই কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক-
বৃটিশ আমলে আজকের কেরালা রাজ্যের নাম ছিলো ত্রিবাঙ্কুর, মালাবার ছিলো এই ত্রিবাঙ্কুরের একটি জেলা। এই জেলায় বসবাসকারী মুসলমানদের বলা হতো মোপলা, মোপলা, মোল্লা শব্দের অপভ্রংশ। মোপলারা ছিলো খুবই দরিদ্র এবং তারা হিন্দুদের ক্ষেত খামারে কাজ করতো। কিন্তু এরা ছিলো খুবই হিংস্র এবং কারণে অকারণে জিহাদ ঘোষণা করে হিন্দুদরে উপর আক্রমন চালাতো। ১৭৫৭ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে এরা ৩৫ বার হিন্দুদের উপর আক্রমন চালায়। ১৯২১ সালের ২০ আগস্ট এই মোপলারা আবারও হিন্দুদের উপর আক্রমন চালায়। আ্ক্রমন থামাতে বৃটিশ সরকার সামরিক আইন জারি করে, কিন্তু তারপরও এটা ৫ মাস ধরে চলতে থাকে। খুন, ধর্ষণ, লুঠ, অগ্নিসংযোগ, জোরপূর্বক ধর্মান্তর সবই চলতে থাকে। সরকারি হিসেবে ২৩০০ হিন্দু মারা যায় এবং ১৬৫০ হিন্দু আহত হয়, যদিও বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা দ্বিগুন এবং ধর্মান্তর অগনিত। কিন্তু এই ঘটনা সম্পর্কে গান্ধী বলে,
“মোপলারা হলো বীর আর হিন্দুরা কাপুরুষ। এই ঘটনার জন্য হিন্দুরাই দায়ী, তারাই মোপলাদেরকে ক্ষেপিয়ে তুলেছিলো। তাই তারা বাধ্য হয়ে হিন্দুদেরকে হত্যা করেছে।”
শুধু তাই নয় মোপলাদের এই আক্রমনের সময় বৃটিশ সরকার যে ব্যবস্থা নিয়েছিলো তার জন্য গান্ধী তাদের নিন্দা করে এবং মোপলাদের এই বিদ্রোহকে তাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে আখ্যায়িত করে। গান্ধী আরো বলে. “মোপলারা হলো ভারতের অন্যতম এক সাহসী জাতি। তারা ঈশ্বরভীরু এবং তারা যে সাহসিকতা দেখিয়েছে সেজন্য তাদের সেনা পুরস্কার দেওয়া উ��িত।”
গান্ধী তার কথা বার্তা ও আচরণে সব সবসময় এটা বোঝাতো যে, মুসলমানরা হলো বীর আর হিন্দুরা হলো কাপুরুষ। সে মুসলমানদেরকে হ��ন্দুদের উপর আক্রমন করতে উৎসাহিত করতো আর অপরদিকে হিন্দুদেরকে অহিংস থাকতে বলতো, মুসলমানরা আক্রমন করলে তার প্রতিরোধ করতে নিষেধ করতো। গান্ধী বলতো, “হিন্দুরা যদি মরেও যায় তবু তারা কোনো মুসলমানকে প্রত্যাঘাত করবে না।” দেশ ভাগের প্রাক্কালে মুসলমানরা যখন পাঞ্জাবে ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামা ও হিন্দুদের হত্যা করতে থাকে, তখন সর্দার প্যাটেল হিন্দুদেরকে নিজেই নিজেদের প্রাণ রক্ষার করার উপদেশ দেন এবং গান্ধী এজন্য প্যাটেলকে তিরস্কার করে।
গান্ধী চাইতো না, হিন্দু শরীরচর্চা করে মুসলমানদের চেয়ে শক্তিশালী হোক, তাই সে হিন্দুদেরকে শরীর চর্চা করতে নিষেধ করতো, একারণে সে গুজরাটের সমস্ত ব্যায়ামাগার বন্ধ করে দেয়।
১৯০৩ সালে, গান্ধীর বয়স যখন মাত্র ৩৪, তখন গান্ধী হঠাৎ ঘোষণা দেয় যে, সে ব্রহ্মচর্য পালন করবে। কিন্তু গান্ধী এতটাই কামুক ছিলো যে, তার বাপ যখন মৃত্যুশয্যায়, পরিবারের লোকেরা যখন তাকে ডাকছিলো, সে তখন বাপের সাথে শেষ কথা বলার জন্য যায় নি, কারণ, সে তখন তার স্ত্রীর সাথে যৌন ক্রিয়ায় ব্যস্ত ছিলো। এই কামুক গান্ধীর হঠাৎ ব্রহ্মচর্য পালনের ঘোষণার মূল কারণ ছিলো তার অশিক্ষিত স্ত্রীর প্রতি তার অরুচি ধরে গিয়েছিলো, তার বিছানা থেকে তার নিষ্কৃতি পাওয়া এবং একারণেই বোধ হয় চিকিৎসা না করিয়ে তার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছিলো। ১৯৩৬ সালে গান্ধীর বয়স যখন ৬৭, তখন মুম্বাইতে ঘুমের মধ্যে গান্ধী তার বীর্যপাতের কথা স্বীকার করে, এই ঘটনাই প্রমান করে যে, গান্ধী কী পরিমান কামুক ছিলো। এছাড়াও গান্ধী নিজে স্বীকার করে গেছে যে, বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত এই যৌনতার আবর্ত থেকে সে নিজেকে মুক্ত করতে পারে নি।
১৯১৫ সালে গান্ধী সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে এবং এরপর থেকেই সে খোলাখুলি নারীসঙ্গ শুরু করে। এ নিয়ে অন্যদের মধ্যে বেশ ক্ষোভের সঞ্চার হয়; কারণ, আশ্রমের অন্য বাসিন্দাদের জন্য নারীসঙ্গ কঠোরভাবে নিষেধ, অথচ গান্ধী যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। এর জন্য নিজের পক্ষে গান্ধী সাফাই গেয়ে বলে, “সে কামগন্ধহীন, অর্ধনারীশ্বর, সব মেয়েই তার মা ও বোন মাত্র, তিনি তাদের সাথে যা করেন তা অন্তরাত্মার নির্দেশেই বা ঈশ্বরের আদেশেই করেন।”
যা হোক, আশ্রমের অন্যদের আপত্তির ফলেই গান্ধী কিছুদিন তার অন্তরাত্মার নির্দেশকে বন্ধ রাখে। কিন্তু এরপরই শুরু করে তার নতুন ধান্ধা, ব্রহ্মচর্যের পরীক্ষা, বহু যুবতী নারীর সাথে এক ঘরে এক বিছানায় নগ্ন হয়ে রাত্রি যাপন। গান্ধী বলতো, “এভাবে এক বিছানায় শুলে রাত্রে শরীর গরম থাকে এবং শরীরের প্রাকৃতিক চিকিৎসা হয়।” এইভাবে অনেক নগ্ননারীর সাথে এক বিছানায় শুয়ে নিজেকে সংযত রাখাকে গান্ধী সক্রিয় ব্রহ্মচর্য বলতো্। নিজের নাতি কানু গান্ধীর স্ত্রী, ১৬ বছরের আভা গান্ধীসহ আরো অনেক মহিলাকে সাথে নিয়ে গান্ধী তার এই ব্রহ্মচর্যের পরীক্ষা চালায়। এই সব পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে গান্ধী যে তাদেরকে শুধু ব্যবহার করতো তা ই নয়, তাদের মতামত গ্রাহ্য না করে তাদের উপর যৌন নির্যাতনও চালাতো। গান্ধীর খ্যাতির প���রভাবে তাদেরকে এই সব অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিলো না। গান্ধী সম্পর্কে এই সব কথা বলেছেন যশোধারা রায়চৌধুরী, আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে ২৫/৬/২০০৬ তারিখে।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে গান্ধীর সর্বপ্রধান শিষ্য, ‘আচার্য বিনোবা ভাবে’ বলেছেন, “ব্রহ্মচর্য নিয়ে এই সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করার গান্ধীর কোনো প্রয়োজন ছিলো বলে মনে হয় না। একজন খাঁটি ব্রহ্মচারী ব্যক্তি কখনো এইসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে যাবে না এবং কোনো ব্যক্তি, যিনি ব্রহ্মচর্যের শিক্ষা নিচ্ছেন, তিনিও নৈতিক কারণে এসব পরীক্ষা নিরীক্ষা বর্জন করবেন। কিন্ত গান্ধী বলতেন যে তার এই সব পরীক্ষা নিরীক্ষা খুবই সফল ও ফলপ্রসু হয়েছিলো।”
এই সব পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য গান্ধীর শিকার হয়েছিলো তার এক নাতনী, জয়সুখলাল ওরফে হীরালাল গান্ধীর মেয়ে, ১৯ বছর বয়সী মানু গান্ধী। মানুকে নিজের শয্যাসঙ্গিনী করে গান্ধী, জয়সুখকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলো, “মানুর ত্রুটিপূর্ণ শোয়াকে ঠিক করতে আমি ওকে আমার বিছানায় নিয়ে ঘুমাচ্ছি।” ১৯৪৬ সালের নভেম্বর মাসে গান্ধী যায় নোয়াখালি, সেখানেও তার শয্যাসঙ্গিনী হতো মানু গান্ধী। গান্ধী বলতো, নগ্ন হয়ে মানুর সাথে এক বিছানায় শোয়ার ফলে তিনি নানা ভাবে উপকৃত হয়েছিলেন, এর ফলেই তিনি নাকি দেশ ভাগ ও হিন্দু মুসলমানের সমস্যাগুলোকে সঠিকভাবে বিবেচনা করতে সমর্থ হন। ১৯৪৫ সালের মার্চ মাসে গান্ধী সাংবাদিকদের বলে, এই সব মহিলাদের সাথে নগ্ন হয়ে এক বিছানায় শোয়ার ফলে আমি ব্রহ্মচর্য রক্ষার ব্যাপারে প্রভূত সাফল্য লাভ করি। আগে আমি কস্তরবার সাথেও এই রকম পরীক্ষা চালিয়েছিলাম, কিন্তু তাতে অতটা সাফল্য পাই নি।
গান্ধীর এই সব লাম্পট্য দেখে তার স্টেনোগ্রাফার পি. আর. পরশুরাম একদিন তার কাজ ছেড়ে চলে যায়। এরপর নির্মল কুমার বসু- আপনি তো এইসব মেয়েদের সাথে শুয়ে ভালই লাম্পট্য সুখ উপভোগ করছেন, কিন্তু সর্বনাশ করছেন মেয়েগুলোর- ব’লে তার সাহচর্য ত্যাগ করেন। এইসব ঘটনায় জে.বি কৃপালনীও গান্ধীর কঠোর সমালোচক হয়ে উঠেন।
গান্ধী কাশ্মীরের রাজা হরি সিংকে উপদেশ দিয়েছিলো কাশ্মীরের অধিকার মুসলমানদের হাতে ছেড়ে দিতে যেহেতু কাশ্মীরের জনগণের অধিকাংশ মুসলিম, একইসাথে সে ‘নিজাম ওসমান আলি খান’ এর হায়দ্রাবাদের পাকিস্তানভুক্তি সমর্থন করে, অথচ হায়দ্রাবাদ অর্থাৎ আজকের- অন্ধ��রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, কর্ণাটক ও বেরার অধিকাংশ বাসিন্দা হিন্দু।
গান্ধীর লক্ষ্য ছিলো হিন্দু মুসলমানের ঐক্য। কিন্তু তার মতে, এর জন্য যা কিছু ত্যাগ স্বীকার সব কিছু করতে হবে হিন্দুদেরকে। হিন্দুর যা কিছু আছে তার সব কিছু মুসলমানদেরকে দিয়ে দিতে হবে। মুসলমানদেরকে খুশি করতে গান্ধী এক সময় সৈয়দ আমীর আলীর ‘স্পিরিট অব ইসলাম’ এবং উইলিয়াম মুরের লিখা ‘লাইফ অব মুহম্মদ’ অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। মুসলমানদেরকে খুশি রাখার জন্য তাদের অত্যন্ত গুরুতর অপরাধও সে না দেখার ভান করতো এবং তাদের আল্লাহু আকবর ধ্বনিকে ভারতের জাতীয় শ্লোগান বলতেন। অনেকের কাছে তাই গান্ধী ছিলো জিন্নার চেয়েও বড় মুসলমান।
গান্ধী বলতো আফগানিস্তানের আমীরের উচিত হবে না ভারতের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। ভারতের মুসলমানদের জন্য তার উপদেশ ছিলো, আফগানিস্তানের আমীর ভারত আক্রমন করলে তাদের উচিত আফগানিস্তানের আমীরের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করা। গান্ধী ছিলো বৃটিশদের দালাল এবং একারণে ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের জন্য ভারতের মানুষ জেনারেল 'ও ডায়ার' এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন, কিন্তু গান্ধী এর সমর্থন করতে অস্বীকার করে। এছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভারতে আসার পর তার জীবনের সমস্ত ঘটনাই ছিলো বৃটিশ অনুমোদিত নাটকের এক একটা দৃশ্য। তার অহিংস আন্দোলন, ভারত ছাড় আন্দোলন সবই ছিলো বৃটিশদের প্ল্যান। কারণ, বৃটিশরা জানতো এতে তাদের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না; উল্টো ভারতের হিন্দুদেরকে এই বলে ধোকা দেওয়া যাবে যে তাদের পক্ষ থেকে সরকারের সাথে কথা বলার লোক একজন আছে এবং সে নিপীড়িত জনগনের হয়ে লড়ছে। এ কারণে গান্ধীর সমস্ত কর্মসূচী ছিলো বৃটিশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মঞ্চায়িত এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে বৃটিশদের ভারত ত্যাগ যখন নিয়তি হয়ে উঠলো, তখন গান্ধী বৃটিশদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলো ভারতের শাসন ভার মুসলমানদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। শুধু তাই নয়, গান্ধী যেহেতু প্রথম দিকে এটা বিশ্বাস করতো যে দেশভাগ একটি অসম্ভব ব্যাপার, সেহেতু সে একজন মুসলমান সম্রাট এর খোঁজও শুরু করে দিয়েছিলো।
মুসলমানদের জন্য এত কিছু করলেও গান্ধী জানতো না যে, সে তাদের প্রিয় হতে পারবে না; কারণ, কোরান মতে সে কাফের, ঘৃণ্য, পশুর চেয়েও অধম। তাই জিন্না গান্ধী সম্পর্কে বলেছিলো, গান্ধী একজন অধঃপতিত মুসলমানের চেয়েও হীন। ভারত ভাগ যখন হয়েই গেলো এবং বৃটিশদের দালালী করার জন্য যখন গান্ধী ও নেহেরু ভারতের শাসন ভার হাতে পেলো তখন তারা উঠে পড়ে লাগলো দেশ থেকে সমস্ত হিন্দু চিহ্ন মুছে ফেলতে, তাদের কারণেই ভারতের নাম ‘হিন্দুস্থান’ হয় নি, এমনকি তারা ভারতও বলতো না, বলতো ‘অ-পাকিস্তান’ এবং শেষ পর্যন্ত ভারতের নাম রাখে ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়া রিপাবলিক। অথচ যেকোনো দেশের নাম তাদের অধিবাসীদের ধর্ম বা জাতীয়তা অনুযায়ী ই হয়ে থাকে। অনেক গান্ধী ভক্ত এটা বিশ্বাস করে যে, ভারত ভাগের জন্য গান্ধী দায়ী নয় বা অপরাধী নয়; কারণ, গান্ধী প্রকাশ্য জনসভায় বলতো, “দেশকে দ্বিখণ্ডিত করার আগে আমার দেহকে আগে দ্বিখণ্ডিত করো।” উপরে এই কথা বললেও তলে তলে গান্ধী কী নিয়ে কাজ করতো তা বোঝার চেষ্টা করুন নিচের এই কয়টি ঘটনা থেকে-
১৯৪০ সালের ২৬ মার্চ এর বৈঠকে মুসলিম লীগের নেতারা সর্বপ্রথম দেশভাগ ও পাকিস্তানের দাবীকে উত্থাপন করে। এর ১০ দিন পর, তাদের এই দাবীকে সমর্থন করে গান্ধী, ৬ এপ্রিল, হরিজন পত্রিকায় লিখে, “দেশের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মতো মুসলমানদেরও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আছে। বর্তমানে আমরা একটা যৌথ পরিবারের মতোই বাস করছি। তাই এর কোনো এক শরিক ভিন্ন হতে চাইতেই পারে।” এই ঘটনার ২ বছর পর, ১৯৪২ সালের ১৮ এপ্রিল গান্ধী হরিজন পত্রিকায় আবারও লিখে, “যদি ভারতের বেশিরভাগ মুসলমান এই মত পোষণ করে যে মুসলমানরা একটা আলাদা জাতি, তবে পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি নেই যে সেই চিন্তাভাবনা থেকে তাদেরকে বিরত করতে পারে এবং সেই ভিত্তিতে তারা যদি বেশির ভাগ চায় তবে অবশ্যই দেশভাগ করতে হবে। তবে ইচ্ছা করলে হিন্দুরা তার বিরোধিতা করতে পারে।”
এরপর বড় ঘটনা ঘটে ১৯৪৬ সালের কোলকাতার ‘ডাইরেক্ট এ্যাকশন ডে’ এবং ‘নোয়াখালির হিন্দু হত্যা’, এই ধরণের ঘটনা মুসলমানরা ঘটাবেই, এটা উপলব্ধি করেই বোধহয়, গান্ধী ৬ই মে ১৯৪৬ সালে, এক জনসভায় হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলে মুসলিম লিগের সাথে লড়াই না করতে বরঞ্চ তার পরিবর্তে প্রয়োজনে ক্ষতি স্বীকার করতে।
যা হোক, নানা ঘটন অঘটনের পর ১৯৪৭ সালের ১২ জুন থেকে শুরু হওয়া বৈঠকে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি দেশভাগের উপর প্রস্তাব আনে, এই বৈঠকেই কংগ্রেসের অনেক বিশিষ্ট নেতা, যেমন-পুরুষোত্তম দাস ট্যাণ্ডন, গোবিন্দবল্লভ পস্থ, চৈতরাম গিদোয়ানী, ড. এস কিচলু প্রমুখ দেশভাগের প্রবল বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখে। কিন্তু গান্ধী এই সব নেতাদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে দেশভাগের পক্ষে ৪৫ মিনিট ধরে এক জোরালো বক্তব্য রাখে। এতে গান্ধীর মূল বক্তব্য ছিলো, দেশ ভাগ মেনে না নিলে দেশব্যাপী অরাজকতা দেখা দেবে এবং দেশের নেতৃত্ব কংগ্রেসের হাত ছাড়া হয়ে যাবে। এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে গান্ধী ��ুসলমানদের উদ্দেশ্যে এই বার্তা দেয় যে দেশভাগ না হলে কোলকাতা ও নোয়াখালির মতো অরাজকতা করতে থাকো, আর কংগ্রেস নেতাদের উদ্দেশ্যে বার্তা দেয় যে, সারাজীবন তো অনেক জেল জুলুম সহ্য করলে, এখন দেশভাগ মেনে নিয়ে একটু ক্ষমতা ভোগ করো; কারণ, দেশভাগ মেনে না নিলে ইংরেজ ক্ষমতা ছাড়বে না আর তোমরা ক্ষমতার স্বাদ�� পাবো না। এরফলে ক্ষমতালোভী কংগ্রেসের নেতারা দেশভাগের পক্ষে চলে যায় এবং ভারতমাতা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।
কিছু কিছু এমন নির্বোধ হিন্দু আছে, যারা ভারতের এই দ্বিখণ্ডিত হওয়াকেই ভারতের স্বাধীনতা মনে করে এবং ১৫ আগস্টে আনন্দ ফুর্তি করে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে। এরা এইটুকুও বোঝে না যে, ভারত যদি অখণ্ডরুপে স্বাধীন হতো, তাহলেই সেটাকে ভারতের প্রকৃত স্বাধীনতা বলা যেতো, তাহলে ১৫ আগস্টকে আনন্দ ফুর্তির দিন হিসেবে কাটালে সেটা মানাতো। কিন্তু ১৫ আগস্ট যে হিন্দুদের আনন্দের নয় শোকের দিন, সেটাও এই নির্বোধ হিন্দুরা বোঝে না। এবং এই নির্বোধ হিন্দুরাই মনে করে ভারতকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে গান্ধী, তার অহিংসা আন্দোলনের দ্বারা। এরা যে কী পরিমাণ স্টুপিড সেটাকে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মায়ের ধর্ষিতা হওয়ার দিনকে এরা শুধু আনন্দের দিন হিসেবেই উদযাপন করে না, এরা এমন একজনকে তাদের পিতা হিসেবে মনে করে, যে তাদের পিতাই নয়; এভাবে তারা ভারতমাতাকে অপমান করছে দুই দিক থেকে।
প্রকৃতপক্ষে ইংরেজরা ভারত ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতিতে। কারণ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বের ৬০ টি দেশ ইউরোপীয় উপনিবেশের কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে। ভারতের এই খণ্ডিত স্বাধীনতা ছিলো বিশ্বব্যাপী এই বড় ধরণের পরিবর্তনের একটি ফল। এই সময় অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে, যারা স্বাধীনতার আন্দোলনই করে নি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের ফলে তারা এমনিই স্বাধীন হয়ে গিয়েছিলো, ভারত ছেড়ে ইংরেজদের চলে যাওয়া ছিলো এই ধরণেরই একটা ঘটনা।
যা হোক, ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও কাশ্মির স্বাধীনই থেকে যায়। কিন্তু কাশ্মির দখল করার জন্য পাকিস্তান মাত্র ২ মাস পরেই কাশ্মির আক্রমন করে। এর আগে পাকিস্তানের প্রাপ্য হিসেবে ৫৫ হাজার কোটি টাকা ভারতের পাকিস্তানকে দেবার কথা ছিলো; কিন্তু পাকিস্তান, কাশ্মির আক্রমন করায়, ভারত, ঐ টাকা পাকিস্তানকে না দেবার সিদ্ধান্ত নেয়, কেননা, ভারতের এই ভয় ছিলো যে, ঐ টাকা দিলে পাকিস্তান তা ভারতের বিরুদ্ধে শত্রুতা করতেই কাজে লাগাবে। কিন্তু ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গান্ধী অনশন শুরু করে।
এই ঘটনার সময় থেকেই বাতাসে এই কথা ভেসে বেড়াচ্ছিলো যে, গান্ধী যদি পাকিস্তানকে এই টাকা দিতে সরকারকে বাধ্য করতে পারে, তাহলে তার নেক্সট প্ল্যান হলো পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য ভারতের ভেতর দিয়ে স্থলপথে রাস্তার মতো একটি এলাকা দিয়ে দেওয়া, যাতে মুসলমানরা দুই পা্কিস্তানের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
যেদিন পত্রিকায় গান্ধীর এই অনশনের সিদ্ধান্তটি প্রকাশিত হয়, সেদিনই নাথুরাম গডসে গান্ধীকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা কার্যকর করে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি।
আমার গবেষণায়, পৃথিবীর ইতিহাসে, হিন্দুদের ক্ষতি গান্ধীর চেয়ে বেশি কেউ করে নি, আর এখন পর্যন্ত গান্ধীকে হত্যা করে নাথুরাম গডসে��� চেয়ে বেশি উপকারও এখন পর্যন্ত কোনো হিন্দু, হিন্দু সমাজের জন্য করে নি। অনেকেই মনে করতে পারেন, মুসলমানরা তো ৫০ কোটি হিন্দুকে হত্যা করেছে, গান্ধী কি মুসলমানদের চেয়েও হিন্দুদের বেশি ক্ষতি করেছে ? মুসলমানরা ৫০ কোটি হিন্দুকে হত্যা করেছে ঠিকই, কিন্তু সেই জনসংখ্যার ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব, কিন্তু গান্ধীর কারণে হিন্দুরা ভারতের যে ৩২% ভূমি হারিয়েছে, এটা কোনো দিনই পূরণ করা সম্ভব নয়। এই দৃষ্টিকোন থেকেই গান্ধী আমার কাছে হিন্দুদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ। শুধু তাই নয় ভারত ভাগের সময় যে ২০ লাখ হিন্দু ও শিখ মুসলমানদের হাতে নিহত হয়েছে এবং প্রায় ১ লাখ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে এবং ভারত ভাগের পর থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে তার জন্যও প্রকৃত দায়ী মূলত গান্ধী। সুতরাং মুহম্মদের মতোই গান্ধীর পাপের কোনো শেষ নেই।
অনেকেই ভাবতে পারেন আমার লেখার বিষয় তো সাধারণত হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের বিষয়, তার মধ্যে হঠাৎ এই গান্ধীপোকার কাহিনী কেনো ? আসলে আমার মূল উদ্দেশ্য হলো হিন্দু সমাজের ক্ষতগুলোকে সারিয়ে তুলে হিন্দুসমাজের উন্নয়ন করা, তাই যে বিষয়গুলো এখনও হিন্দু সমাজের ক্ষতি করে যাচ্ছে, আমার নজর সেই সকল বিষয়ের উপর। গান্ধীর প্রভাব বাংলাদেশর হিন্দুদের উপর তেমন নেই, কিন্তু ব্যাপকভাবে আছে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের উপর; যেকারণে তারা এখনও হিন্দু হয়ে উঠতে পারে নি বা পারছে না। আর একারণেই ক্ষতি হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের; তারা মুসলমানদের হাতে মার খাচ্ছে, কিন্তু গান্ধীবাদ তথা হিজড়াবাদের নেশা ছাড়তে পারছে না; এজন্যই আমার এই থিসিস- নপুংসকতার কবল থেকে পশ্চিমবঙ্গের ৯০% হিন্দুকে বের করে এনে মানুষ বানানো; কারণ, পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ হিন্দু যখন প্রকৃত হিন্দু হয়ে উঠবে, তখন বাংলাদেশের হিন্দুদের সমস্যা এমনিই কমে যাবে বা দূর হয়ে যাবে। একই সাথে পুরো ভারতবর্ষও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হবে, যেকারণে ঋষি অরবিন্দ বলে গিয়েছেন, “ভারতবর্ষ ততখানিই স্বাধীন হবে, গান্ধীবাদের যাদুকে সে যতখানি ঝেড়ে ফেলতে পারবে।”
জয় হিন্দ।
Collected Ruposhree Roy
0 notes
Text
কপি-পেস্ট ঃ (সমিতির সকল সদস্যের জ্ঞাতার্থে এবং প্রচারার্থে পোস্ট করা হলো)ঃ
মূর্তিপূজা কী? হিন্দুরা কি মূর্তিপূজা করেন?
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমানরা মূর্তি ও ভাস্কর্যের এক হওয়া-না-হওয়া নিয়ে যখন নানামুখী তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত তখন আমাদের পাশের বাড়ির হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা, যারা মূলত মূর্তি জিনিসটি ব্যবহার করেন, তাদের কাছে মূর্তির অর্থ কী বা তারা মূর্তিকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থ���কেন তা এদেশের মুসলিমরা কতোটা জানেন তা নিয়ে আমার মনে নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে।
আমার জন্ম এমন একটি গ্রামে যেখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ (বড়ুয়া, রাখাইন), খ্রিস্টান, সব ধর্মের মানুষের বসবাস। আমার বাড়ির ঠিক পেছনে পালপাড়া ও শীলপাড়া, ডানে বা উত্তরে কয়েক শ গজের মধ্যে ধরপাড়া। সব ধর্মের বন্ধু ও সহপাঠীদের সাথে একসঙ্গে খেলা-ধুলা, মেলামেশা করে বড় হয়েছি। আমার শিক্ষকদের মধ্যেও অনেকে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আমার কলিগদের মধ্যেও হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রয়েছেন অনেকে। এখনো ফেসবুকে সমবয়সী ও ছোট-বড় অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গ্রামে গেলে সবার সঙ্গে আগের মতোই ভাই-বন্ধুর মতো দেখা-��াক্ষাৎ হয়।, কথা-বার্তা, আড্ডা হয়। অন্যান্য বিষয়ের সাথে ধর্ম নিয়েও আমাদের মধ্যে কথা হয়, আলোচনা হয়। তবে কখনো তর্ক হয়নি। খুব ছোটকাল থেকেই একদম কাছ থেকে সবার ধর্ম-কর্ম দেখার ও জানা-বোঝার সুযোগ পেয়েছি। বড় হয়ে সাধ্যমতো নানা ধর্ম সম্পর্কে জানা-বোঝার চেষ্টা করেছি। যা এখনো অব্যাহত আছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মূর্তিপূজা সম্পর্কে পড়ালেখা ও আলোচনার মাধ্যম্যে আমি যতোটা জেনেছি তার সারসংক্ষেপ তাদের ভাষ্যে অনেকটা এরকম- হিন্দুধর্ম মতে মূর্তিপূজা বলে কিছু হয় না, হিন্দুরা যে পূজা করে তা আসলে প্রতিমাপূজা। (আসলে ঠিক তাও যে নয়, তা পরে বোঝা যাবে।) হিন্দুধর্মে প্রতিমা আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য করা হয়। কোনো বস্তুর মধ্যে যখন ভগবানের অস্তিত্ব আহ্বান করা হয় এবং তাকে স্বয়ং ভগবানের প্রতীক মনে করা হয় তখন তাকে 'প্রতিমা’ অথবা ‘শ্রীবিগ্রহ' বলে। অর্থাৎ আপনার শোকেসে যেটা রাখা আছে সেটা অবশ্যই মূর্তি, কিন্তু যে মুহূর্তে বিশেষ পূজার মাধ্যমে তার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয় সেই মুহূর্ত থেকে সেটা হয়ে যায় শ্রীবিগ্রহ। এটা হিন্দুধর্মের আচার-বিশ্বাস।
প্রতিমাপূজা হলো প্রতীকের মাধ্যমে বিশেষভাবে প্রার্থনা করা। বিশেষভাবে শ্রদ্ধার সাথে সৃষ্টিকর্তার শক্তির আহ্বান করাকেই পূজা বলে। যেমন, নির্বাচনে কোনো একটি প্রতীককে ভোট দেয়া হয়, যার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে কোনো দল বিজয়ী হয় এবং দলের প্রধান তার মাধ্যমেই সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হন। এখানে যেমন সত্যিকার অর্থে প্রতীক বা অন্য কোথাও ভোট দেওয়া হয় না, তেমনি কোন ছবি, কাগজ বা প্রতীকের নয়, পূজা করা হয় দেবদেবীর, চূড়ান্ত অর্থে ঈশ্বরের গুণ ও আদর্শকে।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘পুতুল পূজা করে না হিন্দু, কাঠ, মাটি দিয়ে গড়া মৃন্ময়ী মাঝে চিন্ময়ী হেরে হয়ে যায় আত্মহারা।’ ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে মূর্তিপূজা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘Hindus are not idol-worshipers. They are ideal-worshipers.’ অর্থাৎ, হিন্দুরা মূর্তি পূজারী নন, তারা আদর্শের পূজারী। মূর্তি হল একটি আদর্শের প্রতীক।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। হিন্দু দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা। প্রাচীন ঋষিগণ বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই (নিরাকার ব্রহ্ম) তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারণ করতে পারেন। কারণ তিনিই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্ব ক্ষমতার অধিকারী। ঋগ্বেদে বলা আছে ঈশ্বর ‘একমেবাদ্বিতীয়ম’- ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। ঈশ্বর সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে তিনি ‘অবাঙ্মানসগোচর�� অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা (বাক), মন বা চোখ দিয়ে ধারণ করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত। ঈশ্বর সম্পর্কে আরো কিছু উদ্ধৃতি-
১. ছান্দোগ্য উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ২ নম্বর পরিচ্ছেদের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- ‘একাম এবাদ্বিতীইয়ম।’ অর্থ- ‘স্রষ্টা মাত্র একজনই দ্বিতীয় কেউ নেই।’
২. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- ‘না চস্য কসুজ জানিত না কধিপহ।’ অর্থ- ‘সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা-মা নেই, তাঁর কোন প্রভু নেই, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই।’
৩. ‘একং সদ বিপ্র বহুধা বদন্তি’ (ঋগ্বেদ, ১/১৬৪/৪৬) অর্থাৎ ‘সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে ডেকে থাকেন।’
৪. যজুবেদের ৩২ নম্বর অধ্যায়ের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে- ‘ন তস্য প্রতিমা আস্তি’ অর্থ- ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সাথে কারও তুলনা হয় না।’
৫. যজুবেদের ৪০ নম্বর অধ্যায়ের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে, ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নিরাকার ও পবিত্র।’
৬. ‘একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি’ (ঋগ্বেদ, ১/১১৪/৫) অর্থাৎ ‘সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে।’
৭. ‘দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত’ (ঋগ্বেদ, ১০/৭২/৭) অর্থাৎ ‘দেবতারও পূর্বে সেই অব্যক্ত (ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগত উৎপত্তি লাভ করেছে।’
৮. যজুর্বেদের ৪০.১, ‘এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে। ”যিনি কখনই অন্যায় করেন না অথবা অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জনের ইচ্ছা রাখেন না।
৯. ঋগ্বেদ ১০.৪৮.৫, ‘ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করেন। তিনি অপরাজেয় এবং মৃত্যুহীন ও এই জগতের সৃষ্টিকারী।’
১০. যজুর্বেদ সংহিতা ৩২.১১, ‘ঈশ্বর যিনি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর মধ্যে তিনি অধিষ্ঠিত।’
১১. ঋগ্বেদ সংহিতা ১০.৪৮.১ ‘ঈশ্বর যিনি সর্ব্বত্রই ব্যাপ্ত আছেন।’
দেবদেবীগণ ঈশ্বর নন। ঈশ্বরকে বলা হয় নির্গুণ। অর্থাৎ জগতের সব গুণের (Quality) আধার তিনি। আবার ঈশ্বর সগুণও কারণ তিনি সর্বশক্তিমান। ঈশ্বর চাইলেই যে কো্নো গুণের অধিকারী হতে পারেন এবং সেই গুণের প্রকাশ তিনি ঘটাতে পারেন। দেবদেবীগণ ঈশ্বরের এই সগুণের প্রকাশ। অর্থাৎ ঈশ্বরের একএকটি গুণের সাকার প্রকাশই দেবতা। ঈশ্বর নিরাকার কিন্তু তিনি যেকোনো রূপে সাকার হতে পারেন, কারণ, তিনি সর্বক্ষমতার অধিকারী।
হিন্দুশাস্ত্র মতে মানুষ কখনোই ঈশ্বরের বিশালতা বা অসীমতাকে তার সসীম চিন্তা দিয়ে বুঝতে পারবে না। বরং সর্বগুণময় ঈশ্বরের কয়েকটি বিশেষ গুণকেই বুঝতে পারবে। আর এ রকম এক একটি গুণকে বুঝতে বুঝতে হয়ত কোন দিন সেই সর্ব গুণময়কে বুঝতে পারবে। আর মূর্তি বা প্রতিমা হল এসকল গুণের রূপকল্প বা প্রতীক। এটা অনেকটা গণিতের সমস্যা সমাধানের জন্য ‘x’ ধরার মতো। আদতে x কিছুই নয় কিন্তু এক্স ধরেই গণিতের সমস্যার উত্তর পাওয়া যায়।
অথবা ধরুন জ্যামিতির ক্ষেত্রে কোনো কিছু বিন্দু দিয়ে শুরু করা হয়। কিন্তু বিন্দুর স��জ্ঞা হলো যার দৈর্ঘ, প্রস্থ ও বেধ নাই, কিন্তু অবস্থিতি আছে- যা আসলে কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ এই বিন্দুকে আশ্রয় করেই প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতা থেকে হিমালয়ের উচ্চতা সব মাপা যায়।
আবার ভূগোল পড়ার সময় একটি গ্লোব রেখে কল্পনা করা হয় এটা পৃথিবী। আবার দেয়ালের ম্যাপ টানিয়ে বলা হয় এটা লন্ডন, এটা ঢাকা, এটা জাপান। কিন্তু ওই গ্লোব বা ম্যাপ কি আসলে পৃথিবী? অথচ ওগুলো দেখেই পৃথিবী চেনা যায়। তেমনি মূর্তির রূপ কল্পনা বা প্রতিমা, স্বয়ং দেবদেবী নন, তাঁদের প্রতীক, চিহ্ন বা রূপকল্প মাত্র। এগুলো রূপকল্প হতে পারে কিন্তু তা মনকে স্থির করতে সাহায্য করে এবং ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ সম্পর্কে ধারণা দেয়, শেখায় ঈশ্বর সত্য। সব শেষে পরম ব্রহ্মের কাছে পৌছাতে সাহায্য করে। হিন্দু ধর্মে পূজা একটি বৈশিষ্ট্য। কল্পনায় দাঁড়িয়ে সত্যে উত্তরণই পূজার সার্থকতা বলে মনে করা হয়।
হিন্দুরা মনে করেন, সব ধর্মেই রূপকল্প, চিহ্ন বা প্রতীক আছে, যা তাঁদের কাছে পবিত্র। যেম���, খ্রিস্টানদের গির্জায় মাতা মেরী বা ক্রুশবিদ্ধ যীশুর প্রতিমা থাকে, যার সামনে তাঁরা নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। আবার মুসলিমরা কাবাশরীফের কালো পাথরকে পবিত্র মনে করে চুম্বন করে কিংবা কোন কাগজে আরবিতে আল্লাহ লেখা থাকলে তাকে সম্মান দেন, তাকে যেখানে সেখানে ফেলে দেন না। তাহলে ওই কাগজখানা কি আল্লাহ নিজে? না। কিন্তু তারপরও তাকে সম্মান করে কারণ তা আল্লাহর নাম, ওটা দেখে আল্লাহর কথা মনে আসে, তার প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়।
হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর কাছে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিলো বিমূর্ত ধ্বনি রূপে। পরে তা কালির হরফে কাগজে লিপিবদ্ধ করা হয়। এটি কোরআনের মূর্ত রূপ। আধুনিক যুগে এর অসংখ্য প্রতিলিপি প্রিন্ট করা হচ্ছে। এই কপি বা প্রতিলিপি কিংবা কালির লেখা কোনোটাই তো সত্যিকার কোরআন নয়। বরং কালির হরফের লেখার মধ্যে যা নিহিত রয়েছে, তাই কোরআন। কিন্তু এই কাগুজে কোরআনকেই মুসলমানরা পবিত্র মনে করেন, একে সম্মান করেন, শ্রদ্ধা করেন। এর কোনো ধরনের অসম্মান বা অবমাননা সহ্য করতে পারেন না। কারণ এটি আল্লাহর কালাম বা বাণী ধারণ করেছে। মূর্তির ক্ষেত্রে হিন্দুদেরও ঠিক এমনই হয়।
হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের নিরাকার ও সাকার উভয় রূপের উপাসনার বিধান আছে। নিরাকার ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নাই, থাকা সম্ভবও না। যারা ঈশ্বরের অব্যক্ত বা নিরাকার উপাসনা করেন তাঁদের বলা হয় নিরাকারবাদী। আর যারা ঈশ্বরের সাকার রূপের উপাসনা করেন তাঁরা সাকারবাদী। গীতায় বলা আছে, যারা নিরাকার, নির্গুণ ব্রহ্মের উপাসনা করেন তারাও ঈশ্বর প্রাপ্ত হন। তবে নির্গুণ উপাসকদের কষ্ট বেশি। কারণ নিরাকার ব্রহ্মে মনস্থির করা স্বভাবগতভাবে অস্থিরমতি বলে মানুষের পক্ষে খুবই ক্লেশকর। কিন্তু সাকারবাদীদের সাকার ভগবানের উপর মনস্থির করা তুলনামূলক সহজ। এই সাকার ভগবানের চাহিদা মেটায় মূর্তিগুলো।
হিন্দুরা নিজেদের পৌত্তলিক মনে করেন না। তারা মনে করেন অন্য ধর্মের লোকেরা তাদের দর্শন সম্পর্কে ভালো মতো না জেনেই ‘মূর্তিপূজা’(?) দেখে মন্তব্য করে বসেন, হিন্দুরা পৌত্তলিক। কিন্তু সঠিক দর্শন জানলে তাঁদের এ ভুল ধারণা ভাঙবে বলে বিশ্বাস করেন তারা। আগেই বলা হয়েছে, হিন্দুদের দেবতা অনেক কিন্তু ঈশ্বর এক। ঈশ্বরের কোনো প্রতিমা নেই। দেবতারা হলেন ঈশ্বরের এক একটি রূপের বা গুণের প্রকাশ। মূর্তি বা প্রতিমা হলো সে সকল গুণের প্রতীক, চিহ্ন বা রূপকল্প মাত্র।
মূৃর্তিপূজা আসলে একটি Misnomer বা ভুলনাম। পূজায় মূর্তি ব্যবহার করা হয়, মূর্তির পূজা করা হয় না।
0 notes
Text
youtube
খ্রিস্টান ধর্মে ঈশ্বরের ধারণা – Dr Zakir Naik
ITC-18
ইএশ-১৮
আমাকে ফলো করুন :
https://www.facebook.com/sazidpersonal
https://www.youtube.com/@sazidchannel
https://www.instagram.com/sazidpersonal
https://www.twitter.com/sazidpersonal
https://www.pinterest.com/sazidpersonal
https://www.tumblr.com/sazidpersonal
খ্রিস্টান ধর্মে ঈশ্বরের ধারণা :
(১) যীশু খ্রিস্ট (আঃ) বলেছেন, আমার পিতা (ঈশ্বর) আমার চেয়ে মহান ।
|| Gospel of John (যোহন) : অধ্যায় - ১৪ ; অনুচ্ছেদ - ২৮ ||
(২) যীশু খ্রিস্ট (আঃ) বলেছেন, আমার পিতা (ঈশ্বর) সবার চেয়ে মহান ।
|| Gospel of John (যোহন) : অধ্যায় - ১০ ; অনুচ্ছেদ - ২৯ ||
(৩) যীশু খ্রিস্ট (আঃ) বলেছেন, আমি ঈশ্বরের আত্মার সাহায্যে শয়তানদের (ভূতদের) তাড়িয়ে দেই ।
|| Gospel of Matthew (মথি) : অধ্যায়-১২ ; অনুচ্ছেদ-২৮ ||
(৪) যীশু খ্রিস্ট (আঃ) বলেছেন, আমি ঈশ্বরের শক্তির সাহায্যে শয়তানদের (ভূতদের) তাড়িয়ে দেই ।
|| Gospel of Luke (লূক) : অধ্যায় - ১২ ; অনুচ্ছেদ - ২০ ||
(৫) যীশু খ্রিস্ট (আঃ) বলেছেন, আমি আমার ইচ্ছেমতো কিছুই করতে পারি না । আমি যেমন শুনি, কেবল তেমনই বিচার করি । আর আমার বিচার ন্যায্য, কারণ আমি নিজের নয়, বরং যিনি আমাকে প্রেরণ করেছেন, তাঁরই ইচ্ছা পালনের চেষ্টা করি ।
|| Gospel of John (যোহন) : অধ্যায় - ৫ ; অনুচ্ছেদ - ৩০ ||
(৬) যীশু খ্রিস্ট (আঃ) বলেছেন, তোমরা আমার যেসব বাণী শুনছো, তা আমার নিজের নয়, বরং সেগুলি পিতার (ঈশ্বরের), যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন ।
|| Gospel of John (যোহন) : অধ্যায় - ১৪ ; অনুচ্ছেদ - ২৪ ||
(৭) আর এই হলো অনন্ত জীবন যাতে তোমরা জানতে পারো একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে এবং যীশু খ্রীষ্টকে যাকে ঈশ্বর পাঠিয়েছেন ।
|| Gospel of John (যোহন) : অধ্যায় - ১৭ ; অনুচ্ছেদ - ৩ ||
(৮) হে ইস্রায়েলী জনগণ, একথা শুনুন, নাসরতীয় যীশু, যে ঈশ্বর মনোনীত (স্বীকৃত) মানুষ তোমাদের মাঝে, সে অনেক অলৌকিক কাজ করবে, ঈশ্বর তাকে দিয়ে করাবেন আর তোমরা তার সাক্ষী থাকবে ।
|| Book of Acts (প্রেরিত) : অধ্যায় - ২ ; অনুচ্ছেদ - ২২ ||
(৯) শাস্ত্রবিদদের মধ্যে একজন এসে তাঁদের তর্কবিতর্ক করতে শুনলেন । যীশু তাদের ভালো উত্তর দিয়েছেন লক্ষ্য করে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সব নির্দেশের মধ্যে কোনটি সর্বাপেক্ষা মহৎ ?”
যীশু উত্তর দিলেন, “সব থেকে মহৎ নির্দেশটি হলো এই যে, হে ইস্রায়েল শোনো, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু, কেবলমাত্র একজন । তুমি তোমার সমস্ত হৃদয়, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভালোবাসবে ।”
|| Gospel of Mark (মার্ক) : অধ্যায় - ১২ ; অনুচ্ছেদ - ২৮ থেকে ৩০ ||
#ITC-18 #ইএশ-১৮ #খ্রিস্টান #ধর্মে #ঈশ্বর #ঈশ্বরের #ধারণা #drzakirnaikofficial #জাকিরনায়েক #জাকির #নায়েক #DrZakirNaik #ZakirNaik #zakirnaik #sazidpersonal
1 note
·
View note
Text
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও সমাজতত্ত্ব
ওবায়দুল করিম
ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা নিয়ে গত ঊনবিংশ শতকে এক বিরাট বিতর্ক ছিলো। বিতর্ক তৈরি করে,ঐ সময়কালের রেডিক্যালরা। তাঁদের যুক্তির মোদ্দা কথাটা হলো, ইতিহাসের গতিপথ নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তির কোন ভূমিকা নেই। যতটুকু আছে তা গতিপথের নিয়ন্ত্রণের ফল হিসেবে।ব্যক্তি সমাজ,সংগঠনের নির্ধারিত সামাজিক সম্পর্কের পাত্র-পাত্রী মাত্র। সামাজিক
পরিবর্তন,ইতিহাসের ঘটনাক্রমে মানুষের ইচ্ছামুক্ত। ফলে সামাজিক ঘটনাসমূহের নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তির ভূমিকা গৌণ। এই ছিলো ইতিহাসের বস্তুতান্ত্রিক যান্ত্রিক ব্যাখ্যার ফল।
বাস্তবটা হলো ভিন্ন। পাত্র-পাত্রীর মিথস্ক্রিয়ায় (Interactions) তৈরি হয়-সমাজ, সামাজিক সম্পর্ক। সমাজ তৈরি হয় যখন,তখনই তৈরি হয় ক্ষমতার বিভাজনের।কেউ হোন নেতা, কেউ হোন সাধারণ সভ্য। নেতা আর সভ্য'র ভেতরে ফারাকটা হলো ব্যক্তির ভূমিকা। ভূমিকা নির্ধারিত হয়, ব্যক্তির যোগ্যতা ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে।আর এই যোগ্যতা ও সামর্থ্যের পার্থক্য সমাজের সবক্ষেত্রেই স্তরায়িত করেছে। স্তরায়ন যখন বঞ্চনা ও শোষণের উপায় হয় তা কাম্য নয়,কিন্তু যোগ্যতা ও সামর্থ্যের বিবেচনায় সমাজের প্রগতির উপায় হলে তা, অতি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য,কারণ কোন প্রাণী,গাড়ী এক পা বা এক চাকায় চলেনা।সমাজের অগ্রগতি ও কোন এক পেশাজীবীর ভূমিকায় পরিবর্তন হয়না। সব পেশায় থাকে নেতৃত্ব।নেতৃত্ব সমাজ ও সংগঠনের ভিত্তি।
ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা নিষ্ক্রিয় নয়,বরং সক্রিয়তাই পরিবর্তনের উৎস। মানুষ সমাজবদ্ধ হয়, উৎপাদন ও বন্টনের ভিত্তিতে। সমাজে উৎপাদন ও বন্টনের বিষয় না থাকলে, সমাজ তৈরি হতোনা। আগুনের আবিষ্কার মানুষকে উৎপাদনের উপায় তৈরিতে সাহায্য করে,সাহায্য করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে। উৎপাদনের উপায়ের উন্নয়ন সামাজিক সম্পর্কের মাত্রাকে নির্ধারণ করে। বলা হয়, উৎপাদনের উপায় উন্নয়নের একটা মুহূর্তে পুরোনো সামাজিক সম্পর্ক বহাল থাকলে আর এগুতে পারেনা। প্রয়োজন হয়, পুরোনো সামাজিক সম্পর্কের পরিবর্তনের। আর এই পরিবর্তনে প্রয়োজন প্রাগ্রসর ব্যক্তিত্বের।
প্রাগ্রসর ব্যক্তিত্ব যখন ,জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে,এবং এর ফলে জনগণের ভূমিকায় এক সামাজিক সম্পর্ক পরিবর্তনের সূচনা করে। ফলে বদলে যায়,উৎপাদন ব্যবস্থা বা ভিত্তিভূমির। আর এই পরিবর্তন নিয়ে আসে মানুষের নয়া চিন্তা,বিশ্বাস,ধ্যান-ধারণার। স্মর্তব্য ব্যক্তির ভূমিকা এখানে অন্যতম এবং অবশ্যম্ভাবী। যথেষ্ট উদাহরণ নয়,শুধু একটি উদাহরণের উল্লেখই যথেষ্ট।
মধ্যযুগে ইউরোপে ছিলো সামন্তযুগ বা ভূমিদাস ব্যবস্থা। ভূমিদাসরা ছিল ভূমির দাস। দাসদের এবং তাদের উত্তরসূরীদের আজীবন ভূমিতে শ্রম প্রয়োগ নির্ভর জীবন ছিলো। এই ছিলো ,সামাজিক সম্পর্ক। ঐ সময়কালে ইংল্যান্ডে ও ইউরোপের অন্যান্য স্থানে একটি পুঁজি নির্ভর মার্চেন্ট বা ব্যবসায়ী শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে। নয়া প্রযুক্তির উদ্ভাবন বা উৎপাদনের নূতন উপায় নয়া সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র তৈরি করে। এই সামাজিক সম্পর্ক হলো পুঁজির মালিক ও শ্রমশক্তি বিক্রয় নির্ভর শ্রমিকের সম্পর্ক। কিন্তু ভুমিদাস সামাজিক সম্পর্ক, এই নয়া সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। শিল্পনির্ভর নয়া উৎপাদনের উপায় বা শিল্পায়ন বিকশিত হতে পারছিলোনা ভূমিদাস সামাজিক সম্পর্ক বা প্রথার কারণে। একে বদলানো উৎপাদনের নয়া শক্তির বিকাশের জন্য প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু মানুষেরা ভূমিদাস প্রথাকে স্বাভাবিক মনে করছিলেন। তখনকার সামাজিক বিশ্বাস ছিলো, রাজা ঈশ্বরের প্রতিনিধি। রাজা যা করেন ঈশ্বরের নির্দেশেই করেন। সুতরাং রাজনির্দেশের বিরোধিতা , ঈশ্বরের বিরোধীতাকেই বোঝায়। প্রজারা এও বিশ্বাস করতেন যে, রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি। এই বিশ্বাসে বুঁদ হয়ে থাকা মানুষকে বুঁদ মুক্ত করা না হলে, নয়া সামাজিক বিপ্লব বা সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বেরিয়ে এলেন হবস,লক ,রুশোসহ অনেকেই। বললেন, জনগণের ইচ্ছাতেই রাষ্টের সৃষ্টি হয়েছে।জনগণের চুক্তি,রাষ্ট্র নামক কর্তৃত্বের সৃষ্টি করেছে , সুতরাং জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন রাষ্ট্রের কাজে না থাকলে, একে পরিবর্তনের সুযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্র ঈশ্বরের সৃষ্টি তা ও সঠিক নয়। জনগণ বিশেষ করে ভূমিদাসদের এই নয়া ধারণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবস,লক এবং রুশোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।শুধু উৎপাদিকা শক্তি বা উৎপাদনের উপায়ের উন্নয়নই নয়,সামাজিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব ও উদ্বুদ্ধকরণ বিশেষভাবে প্রয়োজন। পুঁজিবাদী সমাজের উদ্ভবে বাজারের শক্তির (Market Forces) এর স্বাধীনতা দরকার ছিলো, আর এর বাস্তবায়নে দরকার রাজনৈতিক স্বাধীনতার। হবস,লক,রুশ বললেন গণতন্ত্রের কথা। অর্থনীতির প্রতিষ্ঠান,রাজনীতিক প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। এই বিশাল পরিবর্তনে এঁদের ভূমিকা ছাড়া শিল্পসমাজে উল্লম্ফন সম্ভব ছিলো? দাসব্যবস্থার পরিবর্তন হলো,অথচ স্পার্টাকাস নেই, তা কি হয়? রোবসপিয়র নেই,অথচ হলো ফরাসি বিপ্লব? নেই লেনিন,সম্ভব রুশ বিপ্লবের? মাও সে তুং নেই,কল্পনা করা যায় আধুনিক চীনের? চিন্তা করা যায় , হো চি মিন নেই,অথচ দাঁড়িয়ে আছে ,আধুনিক অগ্রসরমান ভিয়েতনাম? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নেই, আধুনিক বাংলাদেশের? অসাধারণ ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি ইতিহাসের প্রতি ঘটনায় দেখা যায়। ব্যক্তি,অসাধারণ ব্যক্তির ভূমিকা তাই ইতিহাসের ঘটনালবলির উৎস। তাই চিন্তার অস্তিত্ব সামাজিক পরিবর্তনের উপায়। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিও তাই প্রয়োজনীয়।
সমাজের অনেক ঘটনাই আমাদের ইচ্ছা নিরপেক্ষ। আমাদের ইচ্ছার উপর সামাজিক ঘটনাসমূহ সকল সময়েই নির্ভরশীল নয়। সামাজিক ঘটনা ঘটবার কারণ সমূহ Social Dynamics বুঝবার সামর্থ্যের সাথে জড়িত। তবে ব্যক্তিত্ববান, যোগ্যতা ও সামর্থ্য রাখেন এমন ব্যক্তি তা অনুধাবন করেন ও সামাজিক গতিবিদ্যার ভবিতব্য অনুধাবন করে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এঁরাই হয়ে উঠেন নেতা,বিজ্ঞানী, প্রজ্ঞাবান দার্শনিক। বিজ্ঞানী না থাকলে, সমাজ বদলায়? নেতৃত্ত্ব না থাকলেও সমাজ বদলায়না।
যে কোন সামাজিক ঘটনা ঘটবার কালের পেছনে একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়াকাল থাকে। ইউরোপে ভূমিদাস প্রথা হাজার বছরের উপরে টিকে ছিলো। তবে ম্যাগনাকার্টার সনদের ঘোষণার সাথে সাথেই, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সূচনা করেনি। ignition বা প্রজ্জলনটা তখন শুরু হলেও, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, ভোক্তা অধিকার ইত্যাদির স্বীকৃতির আরো সময় লেগেছিল। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি, মনে করতেন দ্বাদশ শতকের ঘোষিত ম্যাগনাকার্টার সনদ তখনই বাস্তবায়ন করতেই হবে,তাহলে তা হতো,ঘোড়ার আগে গাড়ী লাগানোর সামিল। লোহা তপ্ত হয়ে প্রচণ্ড লাল রং ধারণ করলেই, তাকে বাঁকানো যায়। তার আগেই বাঁকানোর চেষ্টা, রাজনীতির ভাষায় একে হঠকারিতা বলে।
রে��িক্যাল রাজনীতির পরিভাষায় বলা হতো, "Concrete analysis of concrete situation" বা "বাস্তব অবস্থার বাস্তব বিশ্লেষণ" করতে পারাটাই রাজনীতিতে সফল হওয়ার মাপকাঠি।
এই অবস্থাকেই একাডেমিক ভাষায় বললে,বলতে হয়,. Objective Condition বা বিষয়গত শর্ত ও Subjective Condition বা বিষয়ীগত শর্ত । যখন কোন কিছু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত তখন তা বিষয়গত শর্ত এবং জনগণও বা বাইরের শর্তসমূহও পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত,কেবল তখনই পরিবর্তনের জন্য মানুষের ক্রিয়া প্রয়োজন। আর প্রয়োজন একে অনুধাবন করতে পারেন এমন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্বের। এই শর্তগুলোর অনুপস্থিতি, কোন উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়িত করেনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বজাত্যবোধ ১৯৪৭ এ পাকিস্তান সৃষ্টির পর রাজনৈতিক,সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনা প্রবাহ থেকে উৎসারিত। সময় একটি বড় মাত্রা এখানে। ১৯৪৮ থেকে বাংলা ভাষার উপর আঘাত ,এই প্রতীতি জন্মায়, যে সংখ্যা গরিষ্ঠতা এখানে উপেক্ষিত। পরে উপলব্ধিতে আসে, এতদ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। গণতন্ত্র উপেক্ষিত হবে, তা সৃষ্টিকালের ঘটনাক্রমের পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট। পাকিস্তানের সরকারী চাকুরেদের তৎকালীন দুই অংশের তুলনা করলে ভেদনীতি স্পষ্ট হয়। একটি সংবিধান দিতে পারেনি ১৯৫৬ এর আগে তাও পরিত্যক্ত হয় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। এই অল্প সময়কালটা বঙ্গবন্ধুর মানসপট গঠনে ভূমিকা রাখে। এই কথা আমরা বলে থাকি, রবীন্দ্রনাথ যদি এই কালে জন্ম নিতেন,তাহলে তিনি "ঘরে বাইরে", "শেষের কবিতা" লিখতে পারতেননা। কারণ "ঘরে বাইরে" লিখবার সামাজিক কন্টেক্সটটা এখন নেই। হয়তো আরো মহৎ কিছু লিখতেন। রবীন্দ্রনাথ কলম দিয়ে লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক ক্রিয়ার মাধ্যমে এমনকি কলমে, সম্প্রতি যা প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানের একটা দায়িত্ব হলো,প্রকৃতির নিয়মকে জানা এবং সে নিয়মকে প্রয়োগ করে প্রকৃতিকে বদলানো। এইই হলো মানবজাতির সভ্যতার বিকাশের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু সামাজিক ঘটনা প্রবাহকে বোধে আনতেন, এবং সামাজিক ঘটনা প্রবাহকে নিয়ন্ত্রন করতেন। বাস্তব অবস্থার,বাস্তব বিশ্লেষণ বোধ ছিলো তাঁর প্রখর। বাংলাদেশের রেডিক্যাল চিন্তায় যখন ,রণনীতি,রণ-কৌশল, বিষয়গত ও বিষয়ীগত অবস্থা নিয়ে বিতর্ক চলছে, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক জার্গণ(Political Jargon) বা political cliche নয়, জনগণের ভাষায় জনগণের সাথে যোগাযোগ করতেন।
এদেশে বাম প্রগতির পক্ষের শক্তিগুলো যখন রুশ-চীন রাজনৈতিক বিভক্তি হয়, এরপরে কিছু চীনাপন্থী পক্ষ, বাংলাদেশ(তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান)পাকিস্তানের উপনিবেশ, আধা-উপনিবেশ, জাতিগত নিপীড়ন, আধা-সামন্তবাদ ইত্যাদি বিতর্কে কালক্ষেপন আর নিজেদের বিভক্তি বাড়াচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু জনগণের ভাষায়, পূব আর পশ্চিমের বৈষম্য বোঝাচ্ছিলেন।বোঝাচ্ছিলেন সাংস্কৃতিক নিপীড়নের কথা। বাম মার্গে এমন সহজ ভাষায় জনগণের সাথে যোগাযোগের উপায় ছিলোনা। প্রধান দ্বন্দ্ব ও অপ্রধান দ্বন্দ্ব নিরুপন করতে গিয়ে Jargon War ছাড়া বামপন্থীরা আর কিছুই করতে পারেননি।অথচ ঐ কালের পূর্ব পাকিস্তান, পাকিস্তানের উপনিবেশ কিনা, সমাজকাঠামো আধা-ঔপনিবেশিক কিনা এ বিতর্কে না গিয়েও, সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষার ব্যবহারে জনগণের দোরে পৌঁছুনো যেতো। বঙ্গবন্ধু শুধু শব্দ দিয়ে নয়,কাজের মাধ্যমে জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব অংশ ,সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক ভাবে বৈষম্যের শিকার। এই বোধের অনুরণনে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চিন্তার স্ফুরণ ঘটে।
আওয়ামী লীগ ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়। পাকিস্তানের বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে, এই ভাঙ্গনের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে নিগৃহীত জনগোষ্ঠীর কাছে, বৈদেশিক নীতির আবেদন জনগণের কাছে প্রধান হয়? পন্থী নির্ভর রাজনীতি, দেশের অভ্যন্তরীণ social dynamics বুঝতে দেয়না। যখন দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় নিপীড়ন থেকে মুক্তিলাভ প্রধান তখন গৌণ কারণকে মুখ্য ভূমিকায় নিয়ে আসা সমীচীন?
বঙ্গবন্ধু এইসব বিভ্রান্তিকে দূরে সরিয়ে বাঙালী জাতীয়তবাদী আন্দোলনের গতিটাকে সচল রাখতে পেরেছিলেন।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ পাকিস্তানের পূর্ব অংশের নিরাপত্তাযে পাকিস্তানী শাসকদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয় তা উপলব্ধিতে আসে,তখনকার এতদ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর কাছে। বঙ্গবন্ধুর ৬দফায় এ বিষয়টিও এসেছে যথার্থ প্রয়োজনে।
লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠনের কথা থাকলেও, পাকিস্তান একটি এককেন্দ্রিক সরকারের স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় পতিত হয়। বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালি জাতিসত্তা নয়, এক ইউনিটের বাতিলের দাবি করে মূলত পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের বালুচ, পাঠান,সিন্ধু জাতিসত্তার উন্মেষ চাইছিলেন। এক ইউনিট প্রথা বাতিলের দাবি তাই প্রমান করে। উগ্র জাতীয়তবাদী বা শভিনিজম নয়, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদের ধারণা যা দেশসমূহের মুক্তি সংগ্রামকে যুক্ত করে ,তাতেই তাঁর বিশ্বাস ছিলো।
৬দফায় ছিলো এক অভাবনীয় ফেডারেশনের প্রস্তাব, যা শিথিল বা কনফেডারেশনেও খুব প্রতিভাত হয়না। প্রাক্তন সোভিয়েট ইউনিয়নে ১৫টি অঙ্গরাজ্যের স্বকীয় পতাকা এবং ফেডারেশন থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থাকলেও , প্রতি রাজ্যের জন্য পৃথক মুদ্রার ব্যবস্থা বা আলাদা স্টেট ব্যাংকের ধারণা ছিলোনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও তাই। এছাড়া এর বিকল্প হিসেবে সহজে বিনিময় যোগ্য মুদ্রা তবে তা কোনভাবেই পাকিস্তানের পূর্ব অংশ থেকে পশ্চিম অংশে পাচার হতে পারবেনা,একটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থাকলেও ,দুই অঞ্চলে দুইটি স্টেট রিজার্ভ ব্যাংক থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধু এমন দাবী মূলত স্বাধীনতাকেই প্রতিষ্ঠা করে।এক ইউনিট প্রথা ও দুই অংশের সংখ্যা সাম্য ছিল অগণতান্ত্রিক। এই ব্যবস্থার রদের দাবী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবারই নামান্তর। পাকিস্তানে যেমন নয় বছর লেগেছিল শুধু একটি সংবিধান প্রণয়নে,ঠিক তেমনি সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রথম নির্বাচন হয়েছিল ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে। এর পেছনে বঙ্গবন্ধুর ৬দফার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। Universal Suffrage এর ধারণা , বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের ফসল ছিলো, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
খাজনা আদায়ে স্টেট্ সমূহের হাতে ন্যস্ত করবার বিষয়সহ প্যারা মিলিশিয়া বাহিনী গঠন মূলত স্বাধীনতার নকশাই ছিল। লাহোর প্রস্তাবের উৎস ধরে স্বাধীনতার এক মহাপরিকল্পনা এই ৬দফাতে বিবৃত ছিলো। গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের ঘটনাবলীর নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন,বঙ্গবন্ধু। এইজন্য একে যে মুক্তির মহাসনদ বলা হতো,তা যথার্থই ছিলো।
বঙ্গবন্ধুর সাথে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ছিলো অত্যন্ত মধুর ও আন্তরিক সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু মাওলানা ভাসানীকে শ্রদ্ধা করতেন, মাওলানা ভাসানীও বঙ্গবন্ধুকে স্নেহ করতেন। রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও, এই সম্পর্ক কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।
১৯৭০ সালের নভেম্বরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়,গৃহহীন হয়ে পড়ে তার চেয়েও বেশি। এমন অবস্থায় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক নেতৃত্বই সহানুভূতি জানাতেও দুর্গত ��লাকা ভ্রমণ করেনি। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান , হেলিকপ্টারে করে একটা এরিয়াল ভিউ দেন মাত্র। সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ইয়াহিয়ার বাংলার মানুষের সাথে এহেন অমানবিক আচরণের উপর এক অসাধারণ কবিতাও লেখেন।
এই ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহে,বিভিন্ন বাম সংগঠনগুলো নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয়।" ভোটের আগে ভাত চাই" স্লোগান দিয়ে নির্বাচন বর্জনের ডাক ছিলো,এঁদের। বঙ্গবন্ধু জানতেন , বিষয়ীগতভাবে জাতিকে প্রস্তুত করতে নির্বাচনে জনরায় এক মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। ঘূর্ণিঝড় ও এর পরবর্তী পাকিস্তানী শাসকদের এতদ অঞ্চলের মানুষের প্রতি আচরণ ও এর প্রতিক্রিয়া যে নির্বাচনে পড়বে,তা বঙ্গবন্ধু যথার্থভাবেই অনুভব করেছিলেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টা এমন হয়েছিলো যে, "ভাতের জন্য ভোট চাই"। বঙ্গবন্ধু এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিলো, সময়োপযোগী। একাডেমিক ভাষায় এই সিদ্ধান্ত ছিলো,"Concrete analysis of the concrete situation"; নির্বাচন যদি না হতো, বাঙালির রায় যে, বিষয়ীগতভাবে বা subjectively পরিণত তা জানবার আর কোন উপায়ই ছিলোনা।এছাড়া সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার Legal Framework Order(LFO) মেনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ অসাধারণ বিচক্ষণতার পরিচায়ক। একটা প্রচল��ত কথা আছে, "শৃঙ্খলিত অবস্থায় শৃঙ্খলমুক্তির গান গাইতে হয়"; বঙ্গবন্ধু বাংলার শৃঙ্খলমুক্তির জন্য ,শৃঙ্খলের মাঝেই সংগ্রাম ও বিপ্লবের জন্য জনসাধারণকে প্রস্তুত করলেন। পরবর্তীকালে এই প্রযুক্তির ফল দেখি, মার্চের অসহযোগ আন্দোলনে। তাঁর নির্দেশেই, পুরো প্রশাসন চলেছিল। সত্তুরের নির্বাচন যদি না হতো, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জি হয়তো বিলম্বিত হতো। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারা, রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বড় উপায়। জাতীয়তবাদী আন্দোলনের সময়, সমাজতন্ত্রের ইস্যু নয়,বরং জাতিসত্ত্বার মুক্তি সংগ্রামটাই প্রধান। পাকিস্তানের ফেডারেলিজমের দাবি নিয়ে,স্বাধীনতায় পৌঁছে দেয়ার কৃতিত্ব একমাত্র তাঁর। রাজনৈতিক মুক্তি,অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান তৈরি করে। তাই রাজনৈতিক সংগ্রামের গুরুত্ব বঙ্গবন্ধু যথাযথভাবে প্রয়োগ করেন। এবং স্বাধীনতার পরে, গণতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এর প্রয়োগ ও অর্জনে মুক্তির আকাঙ্খা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার তাঁর মাঝে দেখতে পাই।
প্রতি ব্যক্তিরই থাকে পরিচিতি। জৈবিক পরিচিতি যেমন, পিতা,সন্তান, ইত্যাদি । পিতা পরিচিতির সাথে সাথে সমাজ পিতা হিসেবে কিছু দায়িত্ব পালন করতে বলে। আবার মানুষের সামাজিক পরিচিতিও থাকে। যেমন,ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ। এগুলো সামাজিকভাবে অর্জিত, জৈবিক নয়। তবে সমাজ এখানেও পরিচিতি অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে বলে।যেমন, যদি শিক্ষক হয়,তাহলে ছাত্রদের বিদ্যা বিতরণ করতে হবে। এই ভূমিকা ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপায়। তবে কিছু ব্যক্তিত্ব দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সামাজিক পরিচিতি অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই জাতির জনক পরিচিতি অর্জন করেন। ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা শুধুমাত্র, ব্যক্তিকে অসামান্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করে তা নয়,ইতিহাসের গতিপথ,সমাজের আদলকেও নিয়ন্ত্রণ করেন।বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন, সমাজতত্ত্বে ব্যক্তির ভূমিকার এক তাত্বিক ধারণার প্রতিষ্ঠায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
Powered by Journey Diary.
0 notes
Text
Odisha Priest Beheads Man Following Dreams That It Would End Covid-19
Odisha Priest Beheads Man Following Dreams That It Would End Covid-19
ওই ব্যক্তির দাবি, ঈশ্বরের আদেশেই সে এই কাজ করেছে। তাকে নাকি দেবীই বলেন, নরবলি দিলেই বিশ্ব থেকে করোনা ঘুচে যাবে।
By : ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ | 30 May 2020 07:55 AM (IST)
ভুবনেশ্বর: নরবলিই শেষ করতে পারে অতিমারীর বাড়বাড়ন্ত! এমন ধারণা থেকে এক ব্যক্তির মাথা কাটল ওড়িশার এক বৃদ্ধ। পেশায় পুরোহিত ওই ব্যক্তি মন্দিরে নিজে হাতে গলা কাটল বছর ৫৫-র একজনের। পু…
View On WordPress
0 notes
Text
" পুরুষদেরও নাকি প্রতি মাসে 'ঋতুচক্র ' হয়! শুনেছেন কখনও?।
"পুরুষদেরও নাকি প্রতি মাসে ‘ঋতুচক্র’ হয় ! শুনেছেন কখনও ?! চলছে অম্বুবাচী | অসমের কামাখ্যা মন্দিরে পুণ্যার্থী সমাগম | উর্��রতার এই উৎসবের কেন্দ্রে থাকে রক্ত | যা দেবীর হলে পবিত্র | কিন্তু রক্তমাংসের রজঃস্বলা নারীর দেহ থেকে নিঃসৃত হলে অতি ঘেন্নার | লজ্জার | সঙ্কোচের | জেনে নিন কীভাবে দেখা হয়েছে এই স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে | কয়েক যুগ ধরে | # প্রাচীন রোমান প্রকৃতিবিদ প্লিনি মনে করতেন এই রক্তে আছে জাদুশক্তি | যা নষ্ট করে দেয় খাবার ও সুরা | পচিয়ে দেয় ফল | শুকিয়ে দেয় ফল | ভোঁতা করে ইস্পাতের ধার | কমায় হাতির দাঁতের উজ্জ্বলতা | মরচে ধরায় ব্রোঞ্জ আর লোহায় | # মধ্যযুগে ইওরোপে মনে করা হতো এটা ইভকে দেওয়া ঈশ্বরের অভিশাপ | তবে রক্তের এতই শক্তি‚ সারায় কুষ্ঠর মতো রোগ ! # মধ্যযুগে গোঁড়া ধর্মান্ধ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা প্রচার করত ইহুদি পুরুষরাও নাকি রজঃস্বলা হন প্রতি মাসে | বিদ্বান উইলিস জোন্সও এই ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন | আধুনিক যুগের সূচনা অবধি বজায় ছিল এই ধারণা | # ফরাসিরা বিশ্বাস করত রজঃস্বলা অবস্থায় যৌন সঙ্গম করলে রাক্ষসের জন্ম হয় | প্রাচীন মিশরীয়‚ গ্রীকরা ব্যবহার করত প্যাপিরাস ও রোমানরা তুলো | স্যানিটরি ন্যাপকিন হিসেবে | # পিরিয়ডসের রক্তপাত কমাতে পাউচে ছাই ভরে ধারণ করতে হবে যৌনাঙ্গের পাশে | সেই ছাই হবে ব্যাঙের শরীর পোড়া | মানত মধ্যযুগীয় ইওরোপ | # রজঃস্বলা নারীর রক্ত গোপনে কোনও পুরুষকে খাওয়াতে পারলে সে বশ হয়ে যাবে ওই নারীর | বিশ্বাস প্রাচীন | এখনও মানে আফ্রিকান উপজাতিরা | # লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট‚ রজঃস্বলা নারীকে দূরে থাকতে হবে ঈশ্বরের কাছ থেকে | স্থান-কাল ভেদে এটাই সবথেকে বেশি পালিত রীতি | ভাবের ঘরে চুরি আর কাকে বলে ! স্রষ্টার দান | অথচ যাওয়া যাবে না তাঁর কাছেই !"
3 notes
·
View notes
Link
ঈশ্বরের ধারণা প্রধান ধর্মগুলির মধ্যে
আল্লাহ একমাত্র 'সত্য উপাস্য'। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ/উপাস্য নেই। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর কর্মে, প্রভুত্বে-কর্তৃত্বে ও উপাস্য হবার অধিকারে এক, অদ্ধিতীয় ও অংশীদারমুক্ত। আল্লাহ্ তায়ালা আসমানে মহান আরশের ঊরধে (সকল সৃষ্টি্র উরধে) গৌরবান্বিত আছেন। আল্লাহ্র সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা একক, চুড়ান্ত, পরিপূর্ণ ও অংশীদার মুক্ত। তাঁর কোন সমকক্ষ বা অংশীদার নেই। আল্লাহকে জানতে হবে আল কোরআন ও সহীহ হাদিসে বর্ণিত তাঁর সুন্দরতম নাম ও পরিপূর্ণ গুণাবলীর মাধ্যমে।
#Allah is the Only ‘True God’#Allah#ঈশ্বরের ধারণা#ঈশ্বরের ধারণা প্রধান ধর্মগুলিতে#God#Deity#The concept of God#আল্লাহ একমাত্র 'সত্য ঈশ্বর'#আল্লাহ একমাত্র 'সত্য উপাস্য'#ঈশ্বরেরধারণা#একেশ্বরবাদ#আল্লাহ একমাত্র 'সত্য উপাস্য#আল্লাহ কেমন?#আল্লাহকে জানতে
0 notes
Text
শুভ অশুভ দিনের প্রয়োগবিধি
💐💐💐💐🎂💐💐💐💐
ঈশ্বরের সৃষ্ট সব দিনই শুভ, পবিত্র। এতে শুভ অশুভ শক্তির ধারণা আরোপিত করেছে মানুষ স্বয়ং। বাস্তবে, মানুষের ভাবা উচিত---যে দিন মানুষের মনে অশুভ কর্মের বিচার আসে সেই সময় সর্বাধিক অশুভ, অপবিত্র এবং যে সময় মানুষ শুভ কর্মের কথা চিন্তা করে সেই সময় সর্বাধিক পবিত্র ও উপযুক্ত। ঈশ্বরের তৈরী সময় শুভাশুভের ঊর্ধ্বে এবং দোষরহিত।
তাই, প্রয়োগ করার সময় বরং প্রচলিত ধারা বদলানো দরকার। শুভ অশুভ দিনের বিচার করা উচিত অশুভ কর্মের জন্য। তাহলে, অশুভ কর্মের প্রেরণা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দমিত হয়ে যাবে। মানুষ অশুভ কর্মের পাপ থেকে রক্ষা পাবে। মদ, জুয়া, চুরি, লড়াই ঝগড়া বিবাদ ইত্যাদি কর্মের পূর্বে যদি শুভ অশুভ দিনের বিচার করা যায়, তবে সেই ক্ষণ ব্যতীত হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সেই অশুভ প্রেরণাই নষ্ট হয়ে যাবে সময়ের প্রভাবে। জ্যোতিষীরা বলেন কোনো দিনই সম্পূর্ণ ভাবে শ��ভ বা অশুভ হয় না। সেই সময়ের প্রতি যদি সতর্ক থাকা যায় তবে অশুভ কর্মকে এড়ানো যেতে পারে। অর্থাৎ অশুভ কর্ম করার সময় দিন ক্ষণের বিচার লাভদায়ক হতে পারে, কিন্তু শুভ কর্মের জন্য যে কোনো সময়ই শুভ হয়---একথা বিশ্বাস করা উচিত।
💐💐💐💐💐💐🎂💐💐💐💐💐💐
0 notes