মাদার তেরেসার মুখোশ উন্মোচন ও তার নিন্দিত জীবন
মাদার তেরেসার মুখোশ উন্মোচন ও তার নিন্দিত জীবন
মেরি তেরেসা বা মেরি টেরিজা হচ্ছে তার আসল নাম। ভদ্রপল্লীতে ভদ্রমুখোশে এই নারী নন্দিত হয়েছিলেন যেমন তেমনি সত্যের কান্ডারী বিভিন্ন স্থানে নিন্দিত ও হয়েছিলেন কালপ্রিট হিসেবে। জীবিত অবস্থায়ও সমালোচনার শিকার হলেও বর্ণবাদের প্রবল বিশ্বাসের সামনে ভারতীয়রা সাহস করেনি মুখোমুখি নিন্দার।
তেরেসা ও তার প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য মিশনারিজ অব চ্যারিটি’র (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) ক্রিয়াকলাপ অসংখ্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।…
View On WordPress
0 notes
ওহাবী করা? ওহাবীদের পরিচয়
ওহাবীদের পরিচয়–ওহাবী কারা ? ——————–“ওহাবী কাকে বলে” :مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الوهّاب بْنُ سُلَيْمَانَ التَّمِيمِيّ (1115 – 1206هـ) (1703م – 1791م) :মুহাম্মদ ইবন আব্দ আল-ওয়াহাব (ইংরেজী : Muhammad ibn Abd al-Wahhab (আরবি : مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الوهاب ; ১৭০০ — ২২ জুন ১৭৯২)
আরবের “উয়াইনা” অঞ্চলে “নজদ” নামক স্থানে বনু সিনান বংশে ওহাবী মতবাদ বা ওহাবীদের প্রতিষ্ঠাতা- “মোহাম্মদ ইবনে “আব্দুল ওহাব নজদী”…
View On WordPress
0 notes
বিজয় স্ফুলিঙ্গ: কবি ইয়াছিন আরাফাতের কবিতায় মুক্তির আহ্বান
প্রভু আমি পাথর নই
ইট সিমেন্টে গড়া নই কোনো মূর্তি
আমারও হিয়া করে ক্রন্দন
দেখে অনিয়ম দুর্নীতি।
বয়স হয়তো হয়নি কুড়ি
হইনি ক্ষুদিরাম
তাতে কি ?
আমিও তো বাংলা মায়ের
চাদরে জড়া সাধাসিধে রইসের আরেক নাম।
পর্তুগিজ গেলো, ইংরেজ গেলো
গেলো লেফটেন্যান্ট নিয়াজি
তাই বলে কি শোষণ গেছে
সোনার বাংলা ছাড়ি ?
চারদিকে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, দাপট, ধ্বস্তাধ্বস্তি,
চিৎকার, আহাজারি, আর রোন্দনের ছড়াছড়ি।
আহ! বিরক্ত আমি
এই কি বাংলা ?
স্বাধীন সোনার খন্ড!
অপরাধী আজ পার পেয়ে যায়
চাষা ভূষারা পায় দন্ড।
ভন্ডরা আজ একাত্তরের যোদ্ধা সাজে
খাটি যোদ্ধা মরে হাভাতে
তাই দেখে মোর মাতৃভূমি
ক্ষুদ্ধ শ্বাস ঝাড়ে।
পক্ষীগুলোও আজ তৃপ্তি পায়না
ঐ গগণে উড়ে
কলুষিত অনিলে পাখা মেলে
অন্দর বাসনা কি মিটে ?
সম���পূর্ণ কবিতাটি পড়ুনঃ কবিতা বিজয় স্ফুলিঙ্গ
0 notes
Shōgun review: This engrossing historical epic is one of the best shows of the year
80-এর দশকের নির্দিষ্ট শোগুলির মধ্যে একটিকে পুনরায় দেখার এবং আপডেট করা কোনও খারাপ কাজ নয়। জেমস ক্ল্যাভেলের প্রশংসিত উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নতুন দশ-পর্বের সীমিত সিরিজ, শোগুন, এটি দুর্দান্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং কৌশলের সাথে চেষ্টা করে। এর কেন্দ্রে, এটি 17 শতকের একজন ইংরেজ নাবিকের গল্প, যিনি নিজেকে সামন্ত জাপানে একজন সামুরাইতে পরিণত হয়েছেন। র্যাচেল কোন্ডো এবং জাস্টিন মার্কস দ্বারা নির্মিত শো,…
View On WordPress
0 notes
|| প্রসঙ্গ: সেন বংশ - মিথ ও মিথ্যা বনাম প্রকৃত সত্য। (পর্ব - ১) ||
নাম নিয়েছি আরব থেকে
ফার্সি মোদের সংস্কৃতি
ধর্মাচারকে শিকেয় তুলে
বাঙলা বলেই হই বাঙালি
- না, কেবল বাংলা বলেই কেউ বাঙালি হতে পারেনা, সেক্ষেত্রে ইংরেজি বললেই ইংরেজ, ফরাসি বললেই ফ্রেঞ্চ, কিংবা রাশিয়ান বললেই রুশ হওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু না, বাস্তবে জাতিত্ত্বের সংজ্ঞায়ন শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক নয়; ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্য ও পরম্পরাগতও বটে। তাই, কোনো জাতির সংজ্ঞায়ন হয় শুধুমাত্র তাদের ভাষা দিয়ে নয়, তাদের আবহমানকালের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয় দিয়ে - এর ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে সেই জাতির ইতিহাস। অনুরূপভাবে বাঙালি জাতির আবহমানকালের অনুসৃত তন্ত্রধর্ম, সাংখ্য দর্শন ও মাতৃকা উপাসনার উপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠে বাঙালির জাতীয় আইডেন্টিটি ও পরিচয়। আজ যাকে আমরা বাংলা ভাষা বলি, পূর্বে তাকেই গৌড়ীয় ভাষা বলা হতো, নাম পরিবর্তন এবং গঠন ও চরিত্রগত বিবর্তন হলেও তার অন্তর্নিহিত আবেদন আজও অক্ষুন্ন আছে। বাংলা ভাষায় কথা বললেও তাই যারা প্রকৃতিরূপী মাতৃকার উপাসনা করেন না, বাঙালির মাতৃকাধর্মকে পালন ও অনুসরণ করেন না, তারা যে বাঙালি জাতির মধ্যে ঠিকমতো ইন্টিগ্রেটেড হননি, একথা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।
আদি মধ্যকালীন বাংলার সেন বংশকে নিয়ে জনমানসে বহু মিথ ও মিথ্যা প্রচলিত। বহুবিধ ক্লাসিকের মতো বাঙালির ইতিহাসও আজ একপ্রকার ক্লাসিকে পরিণত। গবেষণাধর্মী উদ্দেশ্য ছাড়া বাঙালির ইতিহাস সাধারণের মধ্যে সেভাবে প্রচলিত নয়। স্বাভাবিকভাবেই তা স্কুলপাঠ্য থেকেও ব্রাত্য এবং কলেজ-ইউনিভার্সিটি স্তরেও সেভাবে চর্চিত নয়। চর্চা হলেও সেখানে ব্যতিক্রমী ও বিশ্লেষণাত্মক বিষয়ের পরিবর্তে রয়েছে গতে বাঁধা - ছাঁচে ঢালা তথ্যরাজীর সমাহার। প্রকৃত সত্যের তুলনায় সেখানে অনুমান-নির্ভরতা ও খন্ডিত সত্যকেই অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আলোচ্য সন্দর্ভে তাই সেন বংশ, সেন-নৃপতি গৌড়েশ্বর লক্ষণ সেন ও তাঁকে নিয়ে তৈরি মিথ্যা প্রোপাগান্ডার কলঙ্কমোচনের ক্ষুদ্র প্রয়াস করবো।
প্রচলিত ইতিহাস অনুসারে, সেন রাজাদের আদি বাসভূমি ছিলো দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট - অর্থাৎ মহীশূর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য যে সেনাদের তাম্রপট্ট থেকে পাওয়া যায় যে "কর্ণাট দেশাগত ব্রাম্ভ-ক্ষত্রিয় দক্ষিণ হইতে আগত" বাক্যবন্ধটি। এখানে কর্নাট বলতে কর্নাটক নয়, কর্ণসুবর্ণকে ইঙ্গিত করা হয়েছে - অর্থাৎ সেনদের পূর্বসূরীদের আদি বাসভূমি বলতে দাক্ষিণাত্য বা দক্ষিণ ভারত নয়, বোঝানো হয়েছে দক্ষিণ বঙ্গ বা রাঢ়বঙ্গকে। সেন সাম্রাজ্যের মূল ভিত্তিভূমি বা 'কোর বেস'ও ছিলো এই রাঢ়ভূম, কামরূপ ও সিংভূম অঞ্চলটি। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো সেনদের ইদিলপুর তাম্রপট্ট এবং বারাণসী থেকে আসাম ও উড়িষ্যা, পুরী-কাশী-প্রয়াগের বিজয়স্তম্ভের উৎকীর্ণ লেখসমূহ - যেগুলির প্রত্যেকটিই বঙ্গলিপিতে উৎকীর্ণ - যার সাথে কন্নড় লিপির চরিত্রগত কোনো সাদৃশ্যই নেই!
আধুনিক বঙ্গলিপির আদিরূপটিও এই সেনযুগেই সম্পূর্ণ হয়ে যায়। সুদূর দাক্ষিণাত্য থেকে বঙ্গে আগমনকারী সেন শাসকগণ কন্নড় লিপির পরিবর্তে তাঁদের তাম্রপট্ট ও বিজয়স্তম্ভসমূহে বঙ্গলিপির ব্যবহার করবেন কেন - এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়! দাক্ষিণাত্যের কর্ণাটক অঞ্চল থেকে এলে সেন রাজন্যবর্গের লেখগুলিতে কন্নড় লিপি বা হরফ পাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল অধিক। তাই দক্ষিণ বঙ্গ নয়, সেন রাজারা এসেছিলেন দক্ষিণ ভারত থেকে - এজাতীয় ভাবনা নিছকই কষ্টকল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিজয় সেনের দেওপাড়া শিলালেখ (পূর্ববঙ্গের রাজশাহীর নিকট দেওপাড়ায় প্রাপ্ত) এবং মাধাইনগর দানপত্র থেকে জানা যায় যে তারা জাতিতে 'ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয়' ছিলেন - অর্থাৎ ব্রাহ্মণ হলেও পরবর্তীতে তাঁরা রাজবৃত্তিকে বেছে নিয়ে ক্ষত্রিয়ের পেশা অবলম্বন করেছিলেন। মাধাইনগর তাম্রশাসনে তাঁদের 'কর্নাট-ক্ষত্রিয়' অর্থাৎ "কর্নাট থেকে আগত ক্ষত্রিয়" বলেও অভিহিত করা হয়েছে। দাক্ষিণাত্য থেকে সেনদের বঙ্গভূমিতে আগমনের প্রকৃত সময়কাল সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও মোটামুটি ভাবে বলা যায় যে বাংলায় সেন-কর্তৃত্বের সূচনা হয় সামন্ত সেনের হাত ধরে - যিনি ছিলেন রাঢ়বঙ্গের অধিবাসী। অর্থাৎ সামন্ত সেনের আমলে বা তাঁর আগে থাকতেই সেনরা রাঢ়বঙ্গে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
রাঢ়বঙ্গে বসবাসের পর মূলত সামন্ত সেনের হাত ধরে বাংলার বুকে তাদের কর্তৃত্ব শুরু হয় এবং বিজয় সেনের হাত ধরেই সেন রাজবংশ বাংলায় তাদের ভিত্তিমূল শক্ত করে। পরবর্তীতে বল্লাল ও লক্ষণ সেনের শাসনকাল বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে চরম উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির যুগ, বাঙালির সাম্রাজ্য বিস্তারের যুগ, ভারতবর্ষে বাঙালির সুনাম ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার যুগ। তবে বঙ্গদেশে সেনদের আগমনের সূত্র ধরে অনেকেই দাবি করেন যে সেনরা মূলত দক্ষিণ ভারতীয়, বাঙালি নন! সহজ ভাষায় বললে যেহেতু একটি বৃহদাংশের মানুষের ধারণা সেনদের পূর্বপুরুষের জন্ম এই বাংলার বুকে হয়নি; সুদূর দাক্ষিণাত্য থেকে বঙ্গভূমিতে তাদের স্থানান্তর ঘটেছিলো - অতএব তাঁরা অবশ্যই দক্ষিণ ভারতীয়, কোনোমতেই বাঙালি নন!
যদিও এই প্রশ্নের মীমাংসা পূর্বেই করে দেওয়া হয়েছে, তবু একথাও সমানভাবে সত্য যে ভৌগোলিক অবস্থান বা গমনাগমন দিয়ে কোনো জনগোষ্ঠী বা ব্যক্তিবিশেষের জাতিত্ত্ব নির্ধারিত হয়না, শুধুমাত্র ভাষা দিয়েও জাতিত্ত্ব নির্ণয় অসম্ভব। জাতিত্ত্ব নির্ধারিত হয় উক্ত জাতির আবহমানকালের অনুসৃত ধর্ম ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে। অনুরূপভাবে বাঙালি জাতিরও সংঙ্গায়ন হয় তার মাতৃভাষা, অনুসৃত গণসংস্কৃতি ও তন্ত্রধর্মীয় আচার-উপাসনার ওপর নির্ভর করে। পাল যুগের ন্যায় সেন আমলেও সনাতন বঙ্গীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মাচরণের যথাযথ সমৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটেছিলো।
ভাষা ও লিপির ব্যবহার এবং ধর্ম ও সাহিত্যের চর্চা :- সেনযুগেই প্রথম রাজকার্যে সিদ্ধমাতৃকা লিপির পরিবর্তে গৌড়ীয় নাগরী বা বঙ্গীয় লিপির ব্যবহার শুরু হয়। এক্ষেত্রে বিজয় সেনের দেওপাড়া প্রশস্তি লিপিটিকেই 'আধুনিক বাংলা বর্ণমালার পূর্বসূরী' বলে অভিহিত করা যেতে পারে। অদ্যাবধি বাংলা ভাষার আদিতম নিদর্শন চর্যাপদের কিছু পদও এই যুগেই লেখা। এছাড়া নাথযোগীদের 'হাড়মালা', 'গোরক্ষবিজয়', জয়দেবের 'গীতগোবিন্দ'র মধ্যেও সেনযুগের বাংলার সন্ধান পাওয়া যায় (যদিও বাংলা ভাষা তার আদি কাঠামো পরিগ্রহ করেছিলো পাল যুগেই)। গৌড়েশ্বর লক্ষণ সেনের রাজসভার বৌদ্ধ শ্রমণ পুরুষোত্তম ভট্টাচার্য্য রচনা করেন গৌড়ীয় প্রাকৃতিক ভাষার ব্যাকরণ 'লঘুবৃত্তি' বা 'ভাষাবৃত্তি।' 'ত্রিকান্ড শেষ' নামক গৌড়ীয় অভিধানটিও তাঁর রাজকীয় সভার আরেক পন্ডিত ��ারায়ণ দত্ত কর্তৃক রচিত হয়।
সেন পট্টোলীতে যে বর্ণমালা ব্যবহৃত হতো সেটা আজকের বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য বহন করে! শুধু তাই নয়, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতিদানও এই সেন রাজন্যবর্গেরই কৃতিত্ব। সেনযুগের সিংহভাগ সরকারি কার্যাদি বঙ্গলিপিতেই সম্পাদিত হতো। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রাজা বিজয় সেনের 'দেওপাড়া প্রশস্তি' নামক লেখটিকেই অধুনা বাংলা লিপি বলে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্বরূপ সেনের শাসনকালীন ইদিলপুর তাম্রশাসনেও অধুনা বঙ্গলিপির পরিপূর্ণ স্ফুরণ লক্ষ্য করা যায়। ইদিলপুর তাম্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গৌড়েশ্বর পরমবীর পরমনারসিংহ লক্ষণ সেন দক্ষিণ সমুদ্রতটভুক্ত শ্রীক্ষেত্রে, বারাণসীতে, বিশ্বেশ্বর ক্ষেত্রে এবং গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমস্থল ত্রিবেণীতে বিশুদ্ধ বঙ্গলিপিতে উৎকীর্ণ তাম্রশাসন 'সমর জয় স্তম্ভ মালা' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই বলা যেতেই পারে যে আজকে বাঙালির প্রাণের বাংলা ভাষা যে বর্ণমালা ব্যবহার করে তা নিঃসন্দেহে সেনযুগের উত্তরাধিকার।
লিপি ও ভাষার পাশাপাশি সেন যুগে বাঙালি জাতির শেকড়ে নিহিত শাক্ত-শৈব-বৈষ্ণব ধর্মেরও সমৃদ্ধি ও বিস্তার ঘটেছিলো। অর্থাৎ শুধু বাংলা ভাষা কিংবা বঙ্গীয় লিপি নয়, বাঙালির ধর্মের বিকাশেও সেন রাজাদের অবদান অবিস্মরণীয়। এযুগে প্রচুর মহিষমর্দিনী দুর্গামূর্তি, চামুন্ডা মূর্তি, লক্ষী-নারায়ণ মূর্তি ও উমা-মহেশ্বরের বিগ্রহ মেলে। বিজয় সেন ও বল্লাল সেন দুজনেই ছিলেন শৈব মতাবলম্বী (পদ্মিনীকে বিবাহ করে বল্লাল সম্ভবত শাক্ত হয়েছিলেন) আর লক্ষণ সেন ছিলেন পরম বৈষ্ণব।তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন বীরধর্মের অনুরাগী, শিল্প-সংস্কৃতি ও বিদ্যাচর্চার একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক, উদ্যমী বীরপুরুষ।
'পরমমাহেশ্বর' (মহেশ্বর অর্থাৎ শিবের পরম ভক্ত) বিজয় সেন রাজশাহীর সন্নিকটে দেওপাড়া গ্রামে এক সুবিশাল মন্দির নির্মাণ করে সেখানে 'প্রদ্যুম্নেশ্বর' নামক হরিহর মূর্তি স্থাপন করেন - যার উল্লেখ মেলে 'দেওপাড়া প্রশস্তি' নামক লেখে (এই হরিহরের রূপকল্পনা শিব ও বিষ্ণুর মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টার ঈঙ্গিত বহন করে; 'হরি' অর্থে বিষ্ণু বা নারায়ণ এবং 'হর' অর্থে শিব বা মহাদেব)। উত্তরের কিয়দংশ ব্যতীত সমগ্র বাংলা তাঁর শাসনাধীন ছিলো, উত্তর বিহারেও তিনি ক্ষমতাবিস্তার করেছিলেন। আবার বল্লাল সেনের হাত ধরেই দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো ঢাকেশ্বরী মন্দির (দেবীমূর্তিটি আচ্ছাদিত বা ঢাকা ছিলো বলেই 'ঢাকেশ্বরী' নামকরণ হয়), যার নামেই আজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের নামকরণ হয়েছে। সুপন্ডিত বল্লাল সেন 'আচারসাগর', 'প্রতিষ্ঠাসাগর', 'ব্রতসাগর', 'দানসাগর' এবং 'অদ্ভুতসাগর' নামক পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। প্রথম তিনটি গ্রন্থ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে আর 'অদ্ভুতসাগর' গ্রন্থখানি তিনি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি; তাঁর সুপুত্র লক্ষণ সেন তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করেন। অর্থাৎ তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ধার্মিক ও বিদ্যোৎসাহী।
ক্রমশঃ
0 notes
English speaking practice from a public place || জনবহুল জায়গা থেকে ইংরেজ...
0 notes
বারুইপুরের রামনগরের ঘোষ বাড়িতে কীভাবে শুরু হল দুর্গাপুজো?
এই যুগে জমিদারী কিংবা বনেদি প্রথা বাড়ির একেবারে নেই বললেই চলে। রয়ে গিয়েছে শুধু জমিদার বাড়ি গুলো। তবে, বারুইপুরের রামনগরের ঘোষ বাড়িতে, আজও জমিদারী প্রথার সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। ১৪১ বছর ধরে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে তাদের সেই বনেদি বাড়িতে। পুজো , নিয়ম , নরেন ঘোষ , কৈলাস ভবন ,
জানা যায়, ইংরেজ আমলে তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং ছিলেন ‘ঘোষ’ বাড়ির জমিদার নরেন ঘোষের অতি ঘনিষ্ঠ একজন। তাই ক্যানিং যাওয়ার পথে দুর্গা পুজোয় এসেছিলেন লর্ড ক্যানিং। সেখানে তিনি তাদের সাথে পুজোয় কয়েক ঘণ্টা সময় কাটিয়েছিলেন। বনেদি বাড়ি , জমিদার বাড়ি , প্রথা , দুর্গা পুজো , জমিদারী প্রথা ,
বিনোদনের খবর , পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ,
Stay connected and follow us for more content like this ! We are active on Facebook, Instagram and YouTube, where you will find a collection full of inspiring posts. Join our community and embark on a journey of cultural exploration and artistic wonder. Be a part of our vibrant online presence by connecting with us today.
Facebook : https://www.facebook.com/JiyoBangla
Instagram : https://www.instagram.com/jiyobangla/?hl=en
YouTube : https://www.youtube.com/c/JiyoBangla
0 notes
উইলিয়াম শেকসপিয়র (/ˈʃeɪkspɪər/; ইংরেজি: William Shakespeare উইলিয়াম্ শেইক্স্পিয়ার্; ব্যাপ্টিজম: ২৩ এপ্রিল, ১৫৬৪; মৃত্যু: ২৩ এপ্রিল, ১৬১৬) ছিলেন একজন ইংরেজ কবি ও নাট্যকার।
0 notes
Finger Print
ইংরেজ বিজ্ঞানী স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটন এই তথ্য ও নানাবিধ গবেষণার উপর ভিত্তি করে প্রথম #ফিঙ্গারপ্রিন্ট #সিস্টেম এর উন্নয়ন ঘটান। মানুষের আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্টের স্বকীয়তা যাচাই ও বিশ্লেষণের জন্য তিনি #আঙ্গুলের ছাপে থাকা বাঁক, #রেখার পুনরাবৃত্তি ও কুণ্ডলীর অবস্থানগুলো নিয়ে বেশ কিছু গ্রুপ তৈরি করেন। গ্যালটনের উদ্ভাবিত এই প্রক্রিয়াটির আরও কিছু উন্নয়ন ঘটিয়ে একে অনেক বেশি ব্যবহারউপযোগী করে তোলেন লন্ডন পুলিশের তত্কালীন কমিশনার স্যার এডওয়ার্ড আর হেনরি(যদিও এই সিস্টেমটি তৈরি করে ছিলেন কাজী আজিজুল হক এবং হেমচন্দ্র)। ১৯০০ সালের জুন মাসে তার তৈরি করা এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডিটেকশন সিস্টেমটি গ্যালটন-হেনরি সিস্টেম নামে প্রকাশিত হয়।
আর ১৯০১ সাল থেকে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে এর ব্যবহার শুরু করে অপরাধ তদন্ত সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড।
বর্তমানে আঙ্গুলের ছাপ নির্ণয়ের জন্য ডিজিটাল ইমেজ প্রসেসিং ব্যবহার করা হয়। হাতের ছাপের স্বকীয় বৈশিষ্ট্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে ইমেজ প্রসেসিং করে আঙ্গুলের ছাপ নির্ধারণ করা হয়।
♦চলবে♦
0 notes
আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাতে দেখলাম—একমাত্র ইংরেজ গভর্নমেন্ট ছাড়া স্বদেশি বা বিদেশি প্রজার বাক্যে বা ব্যবহারে বিরুদ্ধতা আর কোনো গভর্নমেন্ট এতটা ধৈর্যের সঙ্গে সহ্য করবে না। - কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর [প্রথম আলো, ০৩ মার্চ ২০২৩, পৃ ১১] ১৭৭০ সালে লুটতরাজ ও পাচারের মাধ্যমে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে বৃটিশরা ১ কোটি বাঙালি হত্যা করে। সেই ইংরেজ সরকারের গুনগান মহাকবির মুখে। https://www.instagram.com/p/CpaELQBSYWM/?igshid=NGJjMDIxMWI=
0 notes
ওহাবীদের কিছু কুফুরী আকিদা
এই সমস্ত ওহাবীদের কুফরী আকিদা গুলি জেনে নিন:
মৌং আশরাফ আলী থানেভীসহ দেওবন্দী দের আক্বীদা ও শিক্ষা হচ্ছে-১. আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন।[ফতোয়া-ই- রশীদিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৯, কৃত মৌং রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী দেওবন্দী]২. আল্লাহ আগে জানেন না বান্দা কি কাজ করবে। বান্দা যখন কাজ সম্প্ন করে নেয় তখনই আল্লাহ তা জানতে পারেন।[তাপসীর-ই- বুলগাতুল হায়রান পৃষ্ঠা ১৫৭-৫৮, কৃত মৌং হুসাইন আলী দেওবন্দী]৩. শয়তান ও মালাকুল…
View On WordPress
0 notes
ইংরেজ হলাম , আরব হলাম , বাঙাল হবার কামডা কি??
একুশ ছিলো মায়ের ভাষা ,রক্ত ভেজা শহীদের্।
সেই একুশটা হয়ে গেলো হাসিমুখে সেলফিদের্।
প্রভাত ফেরী নিশীথ ফেরী হয়ে গেলো অজান্তেই .
শহীদ মিনার পিছে রেখে সেলফি তুলি ভেটকিতেই।
বাংরেজিতে পড়তে যে হয় বাংলা নিয়ে স্ট্যাটাস .
বাংলা মানেই চাষার ভাষা . বাংলা মানেই জলদাস।
মান থাকেনা ছেলে যখন পড়ে বাংলা স্কুলে .
প্রেস্টিজটা থাকেনা আর ইংরেজি বোল না কইলে।
টিভি খুলে নাটক দেখি হায়রে বাংলার দুর্দশা ,
কেমন করে…
View On WordPress
0 notes
|| প্রসঙ্গ: সেন বংশ - মিথ ও মিথ্যা বনাম প্রকৃত সত্য। (পর্ব - ১) ||
নাম নিয়েছি আরব থেকে
ফার্সি মোদের সংস্কৃতি
ধর্মাচারকে শিকেয় তুলে
বাঙলা বলেই হই বাঙালি
- না, কেবল বাংলা বলেই কেউ বাঙালি হতে পারেনা, সেক্ষেত্রে ইংরেজি বললেই ইংরেজ, ফরাসি বললেই ফ্রেঞ্চ, কিংবা রাশিয়ান বললেই রুশ হওয়া সম্ভব হতো। কিন্তু না, বাস্তবে জাতিত্ত্বের সংজ্ঞায়ন শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক নয়; ধর্মীয়, ��াংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্য ও পরম্পরাগতও বটে। তাই, কোনো জাতির সংজ্ঞায়ন হয় শুধুমাত্র তাদের ভাষা দিয়ে নয়, তাদের আবহমানকালের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয় দিয়ে - এর ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে সেই জাতির ইতিহাস। অনুরূপভাবে বাঙালি জাতির আবহমানকালের অনুসৃত তন্ত্রধর্ম, সাংখ্য দর্শন ও মাতৃকা উপাসনার উপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠে বাঙালির জাতীয় আইডেন্টিটি ও পরিচয়। আজ যাকে আমরা বাংলা ভাষা বলি, পূর্বে তাকেই গৌড়ীয় ভাষা বলা হতো, নাম পরিবর্তন এবং গঠন ও চরিত্রগত বিবর্তন হলেও তার অন্তর্নিহিত আবেদন আজও অক্ষুন্ন আছে। বাংলা ভাষায় কথা বললেও তাই যারা প্রকৃতিরূপী মাতৃকার উপাসনা করেন না, বাঙালির মাতৃকাধর্মকে পালন ও অনুসরণ করেন না, তারা যে বাঙালি জাতির মধ্যে ঠিকমতো ইন্টিগ্রেটেড হননি, একথা নিঃসন্দেহেই বলা যায়।
আদি মধ্যকালীন বাংলার সেন বংশকে নিয়ে জনমানসে বহু মিথ ও মিথ্যা প্রচলিত। বহুবিধ ক্লাসিকের মতো বাঙালির ইতিহাসও আজ একপ্রকার ক্লাসিকে পরিণত। গবেষণাধর্মী উদ্দেশ্য ছাড়া বাঙালির ইতিহাস সাধারণের মধ্যে সেভাবে প্রচলিত নয়। স্বাভাবিকভাবেই তা স্কুলপাঠ্য থেকেও ব্রাত্য এবং কলেজ-ইউনিভার্সিটি স্তরেও সেভাবে চর্চিত নয়। চর্চা হলেও সেখানে ব্যতিক্রমী ও বিশ্লেষণাত্মক বিষয়ের পরিবর্তে রয়েছে গতে বাঁধা - ছাঁচে ঢালা তথ্যরাজীর সমাহার। প্রকৃত সত্যের তুলনায় সেখানে অনুমান-নির্ভরতা ও খন্ডিত সত্যকেই অধিকতর প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। আলোচ্য সন্দর্ভে তাই সেন বংশ, সেন-নৃপতি গৌড়েশ্বর লক্ষণ সেন ও তাঁকে নিয়ে তৈরি মিথ্যা প্রোপাগান্ডার কলঙ্কমোচনের ক্ষুদ্র প্রয়াস করবো।
প্রচলিত ইতিহাস অনুসারে, সেন রাজাদের আদি বাসভূমি ছিলো দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট - অর্থাৎ মহীশূর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। তবে এক্ষেত্রে একটি কথা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য যে সেনাদের তাম্রপট্ট থেকে পাওয়া যায় যে "কর্ণাট দেশাগত ব্রাম্ভ-ক্ষত্রিয় দক্ষিণ হইতে আগত" বাক্যবন্ধটি। এখানে কর্নাট বলতে কর্নাটক নয়, কর্ণসুবর্ণকে ইঙ্গিত করা হয়েছে - অর্থাৎ সেনদের পূর্বসূরীদের আদি বাসভূমি বলতে দাক্ষিণাত্য বা দক্ষিণ ভারত নয়, বোঝানো হয়েছে দক্ষিণ বঙ্গ বা রাঢ়বঙ্গকে। সেন সাম্রাজ্যের মূল ভিত্তিভূমি বা 'কোর বেস'ও ছিলো এই রাঢ়ভূম, কামরূপ ও সিংভূম অঞ্চলটি। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো সেনদের ইদিলপুর তাম্রপট্ট এবং বারাণসী থেকে আসাম ও উড়িষ্যা, পুরী-কাশী-প্রয়াগের বিজয়স্তম্ভের উৎকীর্ণ লেখসমূহ - যেগুলির প্রত্যেকটিই বঙ্গলিপিতে উৎকীর্ণ - যার সাথে কন্নড় লিপির চরিত্রগত কোনো সাদৃশ্যই নেই!
আধুনিক বঙ্গলিপির আদিরূপটিও এই সেনযুগেই সম্পূর্ণ হয়ে যায়। সুদূর দাক্ষিণাত্য থেকে বঙ্গে আগমনকারী সেন শাসকগণ কন্নড় লিপির পরিবর্তে তাঁদের তাম্রপট্ট ও বিজয়স্তম্ভসমূহে বঙ্গলিপির ব্যবহার করবেন কেন - এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়! দাক্ষিণাত্যের কর্ণাটক অঞ্চল থেকে এলে সেন রাজন্যবর্গের লেখগুলিতে কন্নড় লিপি বা হরফ পাওয়ার সম্ভাবনাই ছিল অধিক। তাই দক্ষিণ বঙ্গ ��য়, সেন রাজারা এসেছিলেন দক্ষিণ ভারত থেকে - এজাতীয় ভাবনা নিছকই কষ্টকল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিজয় সেনের দেওপাড়া শিলালেখ (পূর্ববঙ্গের রাজশাহীর নিকট দেওপাড়ায় প্রাপ্ত) এবং মাধাইনগর দানপত্র থেকে জানা যায় যে তারা জাতিতে 'ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয়' ছিলেন - অর্থাৎ ব্রাহ্মণ হলেও পরবর্তীতে তাঁরা রাজবৃত্তিকে বেছে নিয়ে ক্ষত্রিয়ের পেশা অবলম্বন করেছিলেন। মাধাইনগর তাম্রশাসনে তাঁদের 'কর্নাট-ক্ষত্রিয়' অর্থাৎ "কর্নাট থেকে আগত ক্ষত্রিয়" বলেও অভিহিত করা হয়েছে। দাক্ষিণাত্য থেকে সেনদের বঙ্গভূমিতে আগমনের প্রকৃত সময়কাল সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও মোটামুটি ভাবে বলা যায় যে বাংলায় সেন-কর্তৃত্বের সূচনা হয় সামন্ত সেনের হাত ধরে - যিনি ছিলেন রাঢ়বঙ্গের অধিবাসী। অর্থাৎ সামন্ত সেনের আমলে বা তাঁর আগে থাকতেই সেনরা রাঢ়বঙ্গে বসতি স্থাপন করেছিলেন।
রাঢ়বঙ্গে বসবাসের পর মূলত সামন্ত সেনের হাত ধরে বাংলার বুকে তাদের কর্তৃত্ব শুরু হয় এবং বিজয় সেনের হাত ধরেই সেন রাজবংশ বাংলায় তাদের ভিত্তিমূল শক্ত করে। পরবর্তীতে বল্লাল ও লক্ষণ সেনের শাসনকাল বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে চরম উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধির যুগ, বাঙালির সাম্রাজ্য বিস্তারের যুগ, ভারতবর্ষে বাঙালির সুনাম ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার যুগ। তবে বঙ্গদেশে সেনদের আগমনের সূত্র ধরে অনেকেই দাবি করেন যে সেনরা মূলত দক্ষিণ ভারতীয়, বাঙালি নন! সহজ ভাষায় বললে যেহেতু একটি বৃহদাংশের মানুষের ধারণা সেনদের পূর্বপুরুষের জন্ম এই বাংলার বুকে হয়নি; সুদূর দাক্ষিণাত্য থেকে বঙ্গভূমিতে তাদের স্থানান্তর ঘটেছিলো - অতএব তাঁরা অবশ্যই দক্ষিণ ভারতীয়, কোনোমতেই বাঙালি নন!
যদিও এই প্রশ্নের মীমাংসা পূর্বেই করে দেওয়া হয়েছে, তবু একথাও সমানভাবে সত্য যে ভৌগোলিক অবস্থান বা গমনাগমন দিয়ে কোনো জনগোষ্ঠী বা ব্যক্তিবিশেষের জাতিত্ত্ব নির্ধারিত হয়না, শুধুমাত্র ভাষা দিয়েও জাতিত্ত্ব নির্ণয় অসম্ভব। জাতিত্ত্ব নির্ধারিত হয় উক্ত জাতির আবহমানকালের অনুসৃত ধর্ম ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে। অনুরূপভাবে বাঙালি জাতিরও সংঙ্গায়ন হয় তার মাতৃভাষা, অনুসৃত গণসংস্কৃতি ও তন্ত্রধর্মীয় আচার-উপাসনার ওপর নির্ভর করে। পাল যুগের ন্যায় সেন আমলেও সনাতন বঙ্গীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মাচরণের যথাযথ সমৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটেছিলো।
ভাষা ও লিপির ব্যবহার এবং ধর্ম ও সাহিত্যের চর্চা :- সেনযুগেই প্রথম রাজকার্যে সিদ্ধমাতৃকা লিপির পরিবর্তে গৌড়ীয় নাগরী বা বঙ্গীয় লিপির ব্যবহার শুরু হয়। এক্ষেত্রে বিজয় সেনের দেওপাড়া প্রশস্তি লিপিটিকেই 'আধুনিক বাংলা বর্ণমালার পূর্বসূরী' বলে অভিহিত করা যেতে পারে। অদ্যাবধি বাংলা ভাষার আদিতম নিদর্শন চর্যাপদের কিছু পদও এই যুগেই লেখা। এছাড়া নাথযোগীদের 'হাড়মালা', 'গোরক্ষবিজয়', জয়দেবের 'গীতগোবিন্দ'র মধ্যেও সেনযুগের বাংলার সন্ধান পাওয়া যায় (যদিও বাংলা ভাষা তার আদি কাঠামো পরিগ্রহ করেছিলো পাল যুগেই)। গৌড়েশ্বর লক্ষণ সেনের রাজসভার বৌদ্ধ শ্রমণ পুরুষোত্তম ভট্টাচার্য্য রচনা করেন গৌড়ীয় প্রাকৃতিক ভাষার ব্যাকরণ 'লঘুবৃত্তি' বা 'ভাষাবৃত্তি।' 'ত্রিকান্ড শেষ' নামক গৌড়ীয় অভিধানটিও তাঁর রাজকীয় সভার আরেক পন্ডিত নারায়ণ দত্ত কর্তৃক রচিত হয়।
সেন পট্টোলীতে যে বর্ণমালা ব্যবহৃত হতো সেটা আজকের বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য বহন করে! শুধু তাই নয়, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতিদানও এই সেন রাজন্যবর্গেরই কৃতিত্ব। সেনযুগের সিংহভাগ সরকারি কার্যাদি বঙ্গলিপিতেই সম্পাদিত হতো। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রাজা বিজয় সেনের 'দেওপাড়া প্রশস্তি' নামক লেখটিকেই অধুনা বাংলা লিপি বলে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্বরূপ সেনের শাসনকালীন ইদিলপুর তাম্রশাসনেও অধুনা বঙ্গলিপির পরিপূর্ণ স্ফুরণ লক্ষ্য করা যায়। ইদিলপুর তাম্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গৌড়েশ্বর পরমবীর পরমনারসিংহ লক্ষণ সেন দক্ষিণ সমুদ্রতটভুক্ত শ্রীক্ষেত্রে, বারাণসীতে, বিশ্বেশ্বর ক্ষেত্রে এবং গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমস্থল ত্রিবেণীতে বিশুদ্ধ বঙ্গলিপিতে উৎকীর্ণ তাম্রশাসন 'সমর জয় স্তম্ভ মালা' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই বলা যেতেই পারে যে আজকে বাঙালির প্রাণের বাংলা ভাষা যে বর্ণমালা ব্যবহার করে তা নিঃসন্দেহে সেনযুগের উত্তরাধিকার।
লিপি ও ভাষার পাশাপাশি সেন যুগে বাঙালি জাতির শেকড়ে নিহিত শাক্ত-শৈব-বৈষ্ণব ধর্মেরও সমৃদ্ধি ও বিস্তার ঘটেছিলো। অর্থাৎ শুধু বাংলা ভাষা কিংবা বঙ্গীয় লিপি নয়, বাঙালির ধর্মের বিকাশেও সেন রাজাদের অবদান অবিস্মরণীয়। এযুগে প্রচুর মহিষমর্দিনী দুর্গামূর্তি, চামুন্ডা মূর্তি, লক্ষী-নারায়ণ মূর্তি ও উমা-মহেশ্বরের বিগ্রহ মেলে। বিজয় সেন ও বল্লাল সেন দুজনেই ছিলেন শৈব মতাবলম্বী (পদ্মিনীকে বিবাহ করে বল্লাল সম্ভবত শাক্ত হয়েছিলেন) আর লক্ষণ সেন ছিলেন পরম বৈষ্ণব।তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন বীরধর্মের অনুরাগী, শিল্প-সংস্কৃতি ও বিদ্যাচর্চার একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক, উদ্যমী বীরপুরুষ।
'পরমমাহেশ্বর' (মহেশ্বর অর্থাৎ শিবের পরম ভক্ত) বিজয় সেন রাজশাহীর সন্নিকটে দেওপাড়া গ্রামে এক সুবিশাল মন্দির নির্মাণ করে সেখানে 'প্রদ্যুম্নেশ্বর' নামক হরিহর মূর্তি স্থাপন করেন - যার উল্লেখ মেলে 'দেওপাড়া প্রশস্তি' নামক লেখে (এই হরিহরের রূপকল্পনা শিব ও বিষ্ণুর মধ্যে সমন্বয়ের প্রচেষ্টার ঈঙ্গিত বহন করে; 'হরি' অর্থে বিষ্ণু বা নারায়ণ এবং 'হর' অর্থে শিব বা মহাদেব)। উত্তরের কিয়দংশ ব্যতীত সমগ্র বাংলা তাঁর শাসনাধীন ছিলো, উত্তর বিহারেও তিনি ক্ষমতাবিস্তার করেছিলেন। আবার বল্লাল সেনের হাত ধরেই দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো ঢাকেশ্বরী মন্দির (দেবীমূর্তিটি আচ্ছাদিত বা ঢাকা ছিলো বলেই 'ঢাকেশ্বরী' নামকরণ হয়), যার নামেই আজ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের নামকরণ হয়েছে। সুপন্ডিত বল্লাল সেন 'আচারসাগর', 'প্রতিষ্ঠাসাগর', 'ব্রতসাগর', 'দানসাগর' এবং 'অদ্ভুতসাগর' নামক পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। প্রথম তিনটি গ্রন্থ কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে আর 'অদ্ভুতসাগর' গ্রন্থখানি তিনি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি; তাঁর সুপুত্র লক্ষণ সেন তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজকে সম্পন্ন করেন। অর্থাৎ তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন ধার্মিক ও বিদ্যোৎসাহী।
ক্রমশঃ
0 notes