#অল্প বিদ্যা
Explore tagged Tumblr posts
Text
#স্বল্প বিদ্যা।
যে কোন বিষয়ে অল্প বিদ্যা খুবই বিপজ্জনক বিষয়। অল্প বিদ্বানরা নিজেদেরকে মহা পন্ডিত মনে করে। জগতের আর সবাই তাদের কাছে নিতান্তই তুচ্ছ। আমাদের দেশে চিকিৎসা জগত অল্প বিদ্বানের জন্য মহা আর্শীবাদ স্বরূপ। আমাদের মত জনসংখ্যা প্রবল অনুন্নত দেশে এ পরিস্থিতি মারাত্মক আকারে রুপ নিয়েছে। কোন সরকারের একার পক্ষে এ সমস্যা দূর করা প্রায় অসম্ভব কাজ। জনসচেতনতা ছাড়া এ ক্যান্সার ব্যাধি নিরাময় অযোগ্য। আমাদের দেশের অলিতে-গলিতে নানা ধরনের অল্প বিদ্যাধারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়। বিশেষ করে, হোমিওপ্যাথিক ও কবিরাজি চিকিৎসক আপনি আপনার প্রায় প্রতি পদক্ষেপে পাবেন। ��োমিওপ্যাথিক চিকিৎসার অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সময় থাকতে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
0 notes
Video
youtube
Unara Jannadi #motivation #banglahadis #bangla
#পবিত্র #কালামুল্লাহ্ #শরীফ ও পবিত্র হাদিস শরীফ উভয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ থেকে। একটি ওহিয়ে মাতলু অন্যটি ওহিয়ে গাইরে মাতলূ। অর্থ্যাৎ একটি মহান আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ হতে অন্যটি মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে বলিয়েছেন এবং করিয়েছেন। এ অবস্থায় কেও বলে থাকে কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এ কথা বলা হয়েছে। তাহলে আমি হাদিস শরীফে কেন যাবো। মানে তাদের ভাষায় কুরআন সুন্নাহ উনার মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান। নাউজুবিল্লাহা। সুন্নাহ্ এবং কুরআন শরীফ উনার নির্দেশে কোন মত পার্থক্য নেই। কম জ্ঞান, কম বুঝের কারণে অল্প বিদ্যা মহা পন্ডিত বা কুয়ার ব্যাঙ কুয়া ছাড়া আর কিছু দেখে না তাই তারা এই কথা ভাবে বা মনে করে। এথানেই শেষ নয়।
1 note
·
View note
Text
ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট: যার প্রভাবে নিজেকে অতী পন্ডিত বলে মনে হয়
ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট: যার প্রভাবে নিজেকে অতী পন্ডিত বলে মনে হয়
বাক প্টু বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের বিশেষ পরিচিতি আছে। বিভিন্ন আড্ডা কিংবা সভা স্থলে চান্স পেলেই আমরা নিজেদের মনের ভাব উগড়ে দেই । ফেসবুকের স্ট্যাটাস গুলোতে ইশ্যু ভিত্তিক লোক জনের স্ট্যাটাস দেখলে তাদের উপস্থিতি বেশ বোঝা যায় কিন্তু আমাদের ভিতর অনেকেই আছেন যারা নিজেকে অনেকের চেয়ে বড় পন্ডিত ভাবেন। তাদের ঘাটে কিছু থাকুক আর নাই থাকুক এরা অফিস কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় এমন মানুষ দেখেছি যারা নিজের সম্��র্কে এত…
View On WordPress
0 notes
Text
আরো ১০টি প্রবাদ বাক্য [10 More Bengali Proverbs]
• অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ (Ōti bhōkti chōrēr lôkkhōṇ): Too much courtesy, too much craft
• অতি চালাকের গলায় দড়ি (Ōti chālākēr gôlāẏ dōṛi): Too much cunning overreaches itself
• অতি লোভে তাঁতী নষ্ট (Ōti lōbhē tām̐tī nôśṭō): Grasp all, lose all
• অতি দর্পে হত লঙ্কা (Ōti darpē hōtō lôṅkā): Pride goes before a fall.
• অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী (Ôlpō bidyā bhôẏōṅkōrī): A little learning is a dangerous thing.
• অভাবে স্বভাব নষ্ট (Ôbhābē śôbhāb nôṣṭō): Necessity knows no law
• অসারের তর্জন গর্জন সার (Ôśārēr tôrjōn gôrjōn sār): Empty vessels sound much
• অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট (Ōdhik śônn'yāsītē gājōn nôśṭō): Too many cooks spoil the broth.
• আপনি ভাল তো জগৎ ভালো (Āpni bhālō tō jôgōṯ bhālō): To the pure all things are pure.
• আপনি বাঁচলে বাপের নাম (Āpni bām̐clē bāpēr nām) Self-preservation is the first law of nature.
Adapted from http://bn.wikibooks.org/wiki/বাংলা_থেকে_ইংরেজি_প্রবাদ
#bangla#bengali#bangladesh#bangladeshi#bengali language#language#languages#vocabulary#vocab#langblr#bengali langblr#desi#south asian#india#kolkata#proverbs#বাংলা#বাংলাদেশ#বাংলা ভাষা#দেশি#বাংলাদেশি#প্রবাদ বাক্য
15 notes
·
View notes
Text
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
দশমহাবিদ্যার অষ্টম মহাবিদ্যা হল মা বগলামুখী দেবী।বগলামুখী বা বগলা হলেন হিন্দু দশমহাবিদ্যা দেবমণ্ডলীর অন্তর্গত অন্যতম দেবী। তিনি ভক্তের মানসিক ভ্রান্তি নাশের (অথবা শত্রু নাশের) দেবী। তাঁর অস্ত্র মুগুর। উত্তর ভারতে তিনি পীতাম্বরী নামেও পরিচিত।"বগলামুখী" শব্দটি "বগলা" (অর্থাৎ, ধরা) এবং "মুখ" শব্দদুটি থেকে উৎপন্ন। এই শব্দটির অর্থ যিনি যাঁর মুখ কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে তুলে নিতে সমর্থ। অন্য একটি অর্থে, যিনি মুখ তুলে ধরেছেন।
বগলামুখীর গায়ের রং সোনালি এবং তাঁর কাপড়ের রং হলুদ। তিনি হলুদ পদ্মের ভরা অমৃতের সমুদ্রের মাঝে একটি হলুদ সিংহাসনে বসে থাকেন। তাঁর মাথায় অর্ধচন্দ্র শোভা পায়। দুটি পৃথক বর্ণনার একটিতে তাঁকে দ্বিভূজা ও অপরটিতে তাঁকে চতুর্ভূজা বলা হয়েছে।
বগলামুখীর দ্বিভূজা মূর্তি পূজার প্রচলনই বেশি। এই মূর্তিটিকে সৌম্য মূর্তি ধরা হয়। এই মূর্তিতে তাঁর ডান হাতে থাকে গদা। এই গদা দিয়ে তিনি শত্রুকে প্রহার করেন। অন্যদিকে বাঁহাতে শত্রুর জিভটি টেনে ধরে থাকেন। এই মূর্তিটিকে অনেক সময় "সম্ভন" (শত্রুকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে তাকে শক্তিহীন করা) প্রদর্শন হিসেবে ধরা হয়। এই বর লাভের জন্য ভক্তেরা তাঁর পূজা করে থাকে। অন্যান্য মহাবিদ্যাদেরও এই শক্তি আছে বলে ধরা হয়।
বগলামুখীকে" "পীতাম্বরা দেবী" বা "ব্রহ্মাস্ত্র-রূপিণী"ও বলা হয়। তিনি একটি গুণকে বিপরীত গুণে পরিবর্তন করে পারেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন। যেমন, তিনি বাক্যকে নিঃস্তব্ধতায়, জ্ঞানকে অজ্ঞানে, শক্তিকে শক্তিহীনতায়, পরাজয়কে জয়ে পরিবর্তন করেন।
বগলামুখী দেবী সম্পর্কে একটি গল্প প্রচলিত আছে : একসময় পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঝড় হয়। এই ঝড়ে যখন সকল সৃষ্টি ধ্বংসের সম্মুখীন হয়, তখন সকল দেবতা সৌরাষ্ট্রঅঞ্চলে একত্রিত হন। সেই সময় দেবী বগলামুখী হরিদ্রা সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে দেবতাদের স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে সেই ঝড় থামিয়ে দেন। ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের দাতিয়া অঞ্চলের পীতাম্বরা পীঠমে হরিদ্রা সরোবরের অনুরূপ একটি হ্রদ রয়েছে।
ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটিতে অবস্থিত কামাখ্যা মন্দির তন্ত্রবিদ্যার কেন্দ্রস্থল। এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দির আছে। এই মন্দিরের কয়েক মাইল দূরেই বগলামুখী মন্দিরের অবস্থান। উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশরাজ্যের বাণখণ্ডীতে, মধ্যভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আগর মালব জেলার নলখেদা ও দাতিয়ার পীতাম্বরা পীঠেএবং দক্ষিণ ভারতের তামিল নাড়ু রাজ্যের তিরুনেলভেলি জেলার পাপানকুলাম জেলার কল্লাইদাইকুরিচিতে এবং পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাতেও বগলামুখীর মন্দির আছে।
বগলামুখী দেবী সিদ্ধবিদ্যা ও পীতাম্বরাবিদ্যা এই নামে প্রসিদ্ধ। বগলামুখী দেবি পীতবস্ত্রা, পীতপুস্পপ্রীয়া, এবং পীতঅলঙ্কারধারিনি।
তিনি শ্ত্রু কে সন্মোহিত করেন, শত্রুর বাক্য স্তম্ভন করেন, তিনি সর্বদুষ্টবিনাশিনী, দুষ্টদের ক্ষোভ বর্ধিত করেন তিনি অন্যদিকে ভক্তের ক্ষোভ দূর করেন। তিনি মহাস্তম্ভনকর্ত্রী।
দেবিকে চতুর্ভূজা বলা হয়।তিনি গম্ভীরা এবং তাঁর সুবর্ঙ্কান্তি। তিনি ত্রিনয়না, এবং কমলাসনে আসিনা।
কুব্জিকাতন্ত্রে প্রথম পটলে বগলা শব্দের অক্ষরগুলির তাৎপর্য এই ভাবে বর্ননা করা হয়েছে-
"বকারে বারুনি দেবি গকারে সিদ্ধিদা স্মৃতা ।
লকারে পৃথিবী চৈব চৈতন্যা মে প্রকীর্তিতা।।"
- বকারে বারুনি অর্থ অসুরদলনে দেবী মদোন্মত্তা। গকারে তিনি মানবের সর্বপ্রকার সিদ্ধি প্রদান করেন। লকারে পৃথিবী - আমাদের মাতৃসমা, সর্বংসহা পৃথিবীর মতো তিনি পালিনীশক্তির আধার এবং সেই সঙ্গে স্বয়ং চৈতন্যরূপিনী। এইসব গুনের আধারস্বরূপিনী দেবীর নাম তাই বগলা।
বগলামুখীর ধ্যান মন্ত্রে আমরা দেখতে পাই দেবি কিভবে বাম হাতে শ্ত্রু্র জ্বিহা টেনে ধরে তাকে দক্ষিন হাতে গদার আঘাত করছেন।
কেন বগলামুখী দেবির আরাধনা করা হয়- এই দেবীর পূজা সাধারনত মানুষ দৈব প্রকোপ শান্তির জন্য এবং আভিচারিক কর্ম সম্পাদনের উদ্দেশ্যে করে থাকে। তাছাড়ও বগলামুখীদেবীর আরাধনা করলে মঙ্গল গ্রহের বৈগুন্য নাশ হয়, রোগ নিরাময়, শত্রু নাশ, মামলায় জয়লা্ভ ইত্যাদি সুফল লাভ হয়ে থাকে।
বগলামুখী দেবীর মন্ত্রই ব্রম্ভাস্ত্রস্বরূপ । এমনকি এই মন্ত্রশক্তিতে সদাবিচরনশীল বায়ুরও গতিরোধ সম্ভব।
প্রতিদিন ১০৮ বার বগলামুখী বীজ মন্ত্র ও ১১ বার বগলামুখী গয়ত্রী মন্ত্র জপ করলে শত্রু নাশ, মামলায় জয়লাভ, মঙ্গলের কুপ্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বগলামুখী মন্ত্র- ওঁ হ্লীং বগলামুখি সর্বদুষ্টানাং বাচং মুখং স্তম্ভয় জিহ্বাং কীলয় কীলয় বুদ্ধিং নাশয় হ্লীং ওঁ স্বাহা ।
ব্যাষ্টিরূপে শত্রুনাশের ইচ্ছাযুক্তা এবং সমষ্টিরূপে পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলেন বগলা।। পীতাম্বরাবিদ্যা নামে বিখ্যাত বগলামুখীর সাধনা প্রায়শই শত্রুভিয়মুক্তি ও বাকসিদ্ধি লাভের জন্য করা হয়। এর পূজায় হরিদ্রােমালা, পীতপুস্প এবং পীতবস্ত্রের বিধান আছে। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এর স্থান অষ্টম। এর ধ্যানে বলা হয় যে সুধাসমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত মনিময় মণ্ডপে রত্নময় সিংহাসনে তিনি বিরাজ করেন। তিনি পীতবর্ণ বস্ত্ৰ, পীত আভুষন এবং হলুদ ফুলের মালা পরিধান করেন। এর এক হাতে শত্রুর জিহ্বা এবং অন্য হাতে মুগুর রয়েছে।ব্যাষ্টিরূপে শত্রুনাশের ইচ্ছাযুক্তা এবং সমষ্টিরূপে পরমাত্মার সংহারশক্তিই হলেন বগলা।। পীতাম্বরাবিদ্যা নামে বিখ্যাত বগলামুখীর সাধনা প্রায়শই শত্রুভিয়মুক্তি ও বাকসিদ্ধি লাভের জন্য করা হয়। এর পূজায় হরিদ্রােমালা, পীতপুস্প এবং পীতবস্ত্রের বিধান আছে। মহাবিদ্যাগণের মধ্যে এর স্থান অষ্টম। এর ধ্যানে বলা হয় যে সুধাসমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত মনিময় মণ্ডপে রত্নময় সিংহাসনে তিনি বিরাজ করেন। তিনি পীতবর্ণ বস্ত্ৰ, পীত আভুষন এবং হলুদ ফুলের মালা পরিধান করেন। এর এক হাতে শত্রুর জিহ্বা এবং অন্য হাতে মুগুর রয়েছে।
স্বতন্ত্রতন্ত্ৰ মতে ভগবতী বগলামুখীর আবির্ভাবের কাহিনীটা এইরকম—
সত্যযুগে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস করার জন্য এক ভীষন ঝড় ওঠে। প্রাণীসমূহের জীবনে আগত সংকট দেখে ভগবান মহাবিষ্ণু চিন্তান্বিত হলেন। তিনি সৌরাষ্ট্র দেশে হরিদ্র সরোবরে গিয়ে ভগবতীকে প্রসন্ন করার জন্য তপস্যা করতে লাগলেন। শ্ৰীবিদ্যা ওই সরোবরে বগলামুখীরূপে আবির্ভূত হয়ে তাঁকে দর্শন দেন এবং বিশ্বধ্বংসকারী ঝড়কে তৎক্ষণাৎ রোধ করে দিলেন। বগলামুখী মহাবিদ্যা ভগবান বিষ্ণুর তেজের সঙ্গে মিলিত হওয়াতে তিনি বৈষ্ণবী। মঙ্গলবার চতুর্দশীর মধ্যরাত্রে তিনি আবির্ভূত হন। ইহার পূজনের উদ্দেশ্য হল দৈবী প্রকোপ শান্তি, ধনধান্য লাভের জন্য নির্দিষ্ট কর্ম এবং আভিচারিক কর্ম ইত্যাদি | এই সব আপাতপ্রভেদ শুধুমাত্র উদ্দেশ্যের ভিন্নতার জন্য; নতুবা এর পূজা-উপাসনা ভোগ এবং মোক্ষ লাভ উভয়ের জন্যই করা হয়।
যজুর্বেদের কাঠকসংহিতানুসারে দশদিক প্রকাশিনী, সুন্দর স্বরূপধারিনী “বিষ্ণুপত্নী” কে ত্ৰিলোকের ঈশ্বরীরূপে মানা হয়। স্তম্ভনকারিনী শক্তি ব্যক্ত ও অব্যক্ত সমস্ত পদার্থের স্থিতির আধার পৃথিবীরূপে শক্তি। বগলা সেই স্তম্ভনশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবী। শক্তিরূপিনী বগলার স্তম্ভন শক্তিতে দু্যলোক বৃষ্টি বর্ষন করে। তাঁর দ্বারাই আদিত্যমণ্ডলের অবস্থান এবং তাঁহাতেই স্বৰ্গলোকও স্তম্ভিত রয়েছে। ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ ও গীতায় “বিষ্টভ্যাহমিদং
কৃৎক্সমেকাংশেন স্থিতাে জগৎ’ বলে সেই শক্তির সমর্থন করেছেন। তন্ত্রে সেই স্তম্ভনশক্তিকে বগলামুখী নামে
বলা হয়েছে।
শ্ৰীবগলামুখীকে ব্ৰক্ষাস্ত্ৰ’ নামেও বলা হয়। ঐহিক বা পারলৌকিক, দেশ অথবা সমাজে দুঃখদায়ী অরিষ্টাদিকে দমন এবং শত্রুনাশে বগলামুখীর মত আর কোন মন্ত্র নেই। সাধকেরা চিরকাল এই মহাদেবীর আশ্রয় নিয়ে আসছেন। এর পাঁচটি মন্ত্রপ্রভেদ-বড়বামুখী, জািতবেদমুখী, উল্কামুখী, জ্বালামুখী ও বৃহদভানুমুখী | কুণ্ডিকাতন্ত্রে বগলামুখী জপের বিধানের ওপর বিশেষ আলোকপাত করা হয়েছে। মুণ্ডমালাতন্ত্রে তো এও বলা হয়েছে যে, এর সিদ্ধিলাভের জন্য নক্ষত্ৰাদি বিচার ও কালশোধনেরও প্রয়োজন নেই।
বগলা ��হাবিদ্যা উদ্ধােম্নায় অনুসারেই উপাস্য। এই আমায়ে শক্তি কেবল পূজ্য বলে মনে করা হয়, ভোগ্য নয়। শ্ৰীকুলের সমস্ত মহাবিদ্যার উপাসনা সফলতা অর্জন না করা পর্যন্ত সতর্কভাবে গুরুর সান্নিধ্যে থেকে করে যাওয়া উচিত। ব্ৰহ্মচর্য পালন এবং অন্তর ও বাহিরের শুচিতা অতীব আবশ্যক। ব্ৰহ্মাই সর্বপ্রথম বগলা মহাবিদ্যার উপাসনা করেন। ব্ৰহ্মা এই বিদ্যার উপদেশ দেন সনকাদি মুনিদের, সনৎকুমার দেবর্ষি নারদকে এবং নারদ সাংখ্যায়ন নামক পরমহংসকে এই জ্ঞানের উপদেশ দেন, সংখ্যায়ন ছত্রিশ খণ্ডে উপনিবদ্ধ বগলাতন্ত্র রচনা করেন। বগলামুখীর দ্বিতীয় উপাসক ভগবান বিষ্ণু এবং তৃতীয় উপাসক পরশুরাম এবং পরশুরাম এই বিদ্যা আচার্য দ্ৰোণকে উপদেশ করেন।
বগলামুখী দেবীর ধ্যান মন্ত্র অনুসারে ইনি সুখ সাগরের ম��্যে মণিময় মণ্ডপে আচ্ছাদিত রত্ন নির্মিত বেদীর ওপর সিংহাসনে উপবিষ্টা, ইনি পীতবর্ণা, পীত বস্ত্র পরিহিতা, সুবর্ণের মালাতে দেবীর সর্ব শরীর বিভূষিত। হস্তে মুদ্গর ও আর এক হস্ত দ্বারা তিনি শত্রুর জিহ্বা ধারন করে আছেন ।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
বগলামুখী মহাবিদ্যা। ইনি পীতবর্ণা, পীতবস্ত্র আভরণ ভূষিতা। ব- বারুনী দেবী( অসুর দলনে উন্মত্তা), গ- সিদ্ধি দায়িনী( সর্ব প্রকার সিদ্ধি দেন) , ল- পৃথিবী( পৃথিবী যেমন সব সহ্য করেন, মা যেমন ছেলের সব দুষ্টামী সহ্য করে তাকে লালন পালন করে তেমনি মা বগলা তেমন সহ্য করেন) । ইঁহাই এঁনার অসীমা শক্তির কথা জানায়। এই দেবী এক হস্তে মুদ্গর ও অপর হস্তে ইনি অসুরের বা শত্রুর জিহ্বা টানিয়া থাকেন। দশমহাবিদ্যার মধ্যে অষ্টম মহাবিদ্যা হলেন বগলা । এই দেবী সিদ্ধ বিদ্যা ও পীতাম্বরবিদ্যা নামে প্রসিদ্ধা। এই দেবী শব বাহনা, শবের ওপর থাকেন। এই দেবীর পূজো বাংলাতে কম দেখা যায়। এই দেবীর সাথে দুর্গা, জগদ্ধাত্রী অল্প কিছুটা সাদৃশ্য আছে। এই দেবী ভয়ানক রূপ ধারিনী নন। দেবী উগ্র স্বভাবা । মানে অসুর নিধন কালে ইনি ভয়নাক মূর্তিতে আসেন। পরমাত্মার সংহার শক্তি হলেন মা বগলা। সাধক গণ নানা প্রকার সিদ্ধি, বাক সিদ্ধি, শত্রু দমনের জন্য এই দেবীর সাধনা করেন । তন্ত্রসার শাস্ত্রে এই দেবীর মাহাত্ম্য বলা হয়-
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
ব্রহ্মাস্ত্রং সংপ্রবক্ষ্যামি সদ্যঃ প্রত্যয়কারম্ ।
সাধকানাং হিতার্থায় স্তম্ভনায় চ বৈরিনাম্ ।।
যস্যাঃ স্মরণমাত্রেণ পবনোহপি স্থিরায়তে ।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
এই বগলামুখীর মন্ত্র ব্রহ্মাস্ত্র স্বরূপ। সাধক দের কাছে তা পরম সিদ্ধি, হিতকর। শত্রুকে স্তম্ভন কারী ব্রহ্মাস্ত্র রূপেও ব্যবহৃত হয় । এই বগলা মন্ত্রের প্রভাব এত যে বায়ু কেও রুদ্ধ করা যায়। অগ্নিও শীতল হয়। গর্বিতের গর্ব চূর্ণ হয়। ��্ষিতিপতিও শঙ্কিত হন । মা বগলার ধ্যান মন্ত্রে শত্রু দলনী দেবী দুর্গার স্মরণ করা হয়। মা দুর্গা, দেব শত্রু মহিষ ও তার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন। একটি সংস্কৃত মন্ত্রে মা বগলার একটি ধ্যান মন্ত্র পাওয়া যায়।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
জিহ্বাগ্রমাদায় করেণ দেবীং
বামেন শত্রুন্ পরিপীড়য়ন্তীম্ ।
গদাভিঘাতেন চ দক্ষিণেন
পীতাম্বরাঢ্যাং দ্বিভুজাং নমামি ।।
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
বাম করে শত্রুর জিহ্বা মা বগলা টেনে উৎপীড়ন করতে করতে তিনি দক্ষিণ হাতে গদার আঘাত করছেন শত্রুকে। সেই দেবীকে সকলে প্রনাম করে।
এই দেবীর আবির্ভাব সম্বন্ধে স্বতন্ত্র তন্ত্র নামক এক শাস্ত্রে একটি ঘটনা পাওয়া যায়। সত্য যুগে এক সময় বিশ্ব কে বিনাশের জন্য এক মহা ভয়ানক প্রলয় ঝড় ওঠে। এতে জীব কূলের ধ্বংস হবার উপক্রম দেখা গেলো। এই জগতের পালন করেন ভগবান বিষ্ণু। তিনি ধরিত্রী কে বাঁচানোর জন্য চিন্তিত হলেন। কিন্তু উপায়? যখন ত্রিদেবের অক্ষমতা দেখা দেয় তখুনি সেই মহাদেবীর আবির্ভাব হয়। ভগবান বিষ্ণু সৌরাষ্ট্রের হরিদ্রা সরোবরে গিয়ে ভগবতীকে প্রসন্ন করার জন্য তপস্যা শুরু করেন। শ্রী বিদ্যা ললিতা ত্রিপুরাসুন্দরী দেবী, ভগবান বিষ্ণুর তপস্যায় প্রীতা হয়ে হরিদ্রা সরোবরে জল ক্রীড়ায় রতা হন। দেবীর তেজ সেই সরোবরে ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার চতুর্দশীর মধ্য রাত্রে ঐ তেজ রাশি থেকে ত্রৈলোক্যস্তম্ভিনী পীত হ্রদ বাসিনী মহাদেবী মা বগলার আবির্ভাব হয় । মা বগলা , ভগবান বিষ্ণুকে দর্শন দিলেন। ভগবান বিষ্ণু মা বগলার কাছে স্তম্ভন বিদ্যা পেয়ে ঐ বিশ্ব ঝড় কে স্তম্ভন করে জগত ও জগতের জীব কূলকে রক্ষা করলেন । এই দেবীর পূজা সাধারণত দৈবী প্রকোপ শান্ত হয়। ইনি ভোগ ও মুক্তি দুটি প্রদান করেন।
সাধারণত শত্রু দমনের জন্য এই বিদ্যা প্রয়োগ করা হয়। কেন কি দেবী শত্রু দমন করেন । কিন্তু দেখা গেছে দুর্মতি তান্ত্রিক রা অর্থের লোভে অনেক সময় অপরের সর্বনাশ করে ফেলেন। মারন, উচাটণ, বশীকরণ, স্তম্ভন এগুলি করে থাকেন। জাগতিক সুখের জন্য মায়ের বিদ্যা প্রয়োগ করেন। মায়ের বিদ্যা কেবল শুভ কাজের জন্যই প্রয়োগ করা উচিৎ। যেমন ভগবান বিষ্ণু বিশ্ব রক্ষার জন্য করেছিলেন। অপরের সর্বনাশ করা ঘোর পাপ। যেসব তান্ত্রিক নিরীহ লোকের সর্বনাশ করেন এই সব মন্ত্র বিদ্যা দিয়ে- তাদের যে মা কি ভয়ানক শাস্তি দেন, তা কল্পনার বাইরে । আর যে সব লোক টাকা পয়সা দিয়ে এই সব তান্ত্রিক দের উৎসাহিত করেন ব্যাক্তিগত আক্রোশ মেটানোর জন্য – জন্ম জন্মান্তরেও তারা মায়ের কোপ থেকে নিস্কৃতি পান না । শত্রু বাইরে থাকেনা, শত্রু আছে নিজের মধ্যেই । মা সারদা বলতেন- দোষ দেখবে নিজের । আমাদের মধ্যে যে ষড় রিপু আছে, যাদের নিষ্পেষণে আমরা নানান পাপাচার করে থাকি এগুলো কিন্তু কোন অসুর বা শত্রুর থেকে কম ন���। এরা আধ্যাত্মিক পথ বন্ধ করে নরকের রাস্তা পরিষ্কার করে।
সংগৃহীত
🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺
0 notes
Text
জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে ভালোবাসতে হবে গোলাপি রঙকে
জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে ভালোবাসতে হবে গোলাপি রঙকে
নাটক ছাড়াও ঢাকাই সিনেমার দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম। যিনি বাংলাদেশ ছাড়াও কলকাতার সিমাতে দেখিয়েছেন তার অভিনয় দক্ষতা। এছাড়াও তাকে বেশ কিছু বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে। খুব অল্প সময়েই তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন এই মডেল-অভিনেত্রী। মিমের রয়েছে অসংখ্য ভক্ত। রয়েছে অনেক দিওয়ানাও��� যারা তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চান। আর তাদের জন্যই আজ রয়েছে মিম সম্পর্কে একটি গোপন তথ্য! মিম সেই পুরুষকে বিয়ে করতে একদমই…
View On WordPress
0 notes
Photo
আমি পেয়েছিলাম ১০০ তে ১০০! নাকি শূণ্য!! আমি আমেরিকায় এসেছি পড়াশোনা করতে। নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কেমিস্ট্রির মতো রসকষহীন একটি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে হবে। কত দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী কেটে যাবে। ল্যাবরেটরিতে, পাঠ্যবইয়ের গোলকধাঁধায়। মনে হলেই হূৎপিণ্ডের টিকটিক খানিকটা হলেও শ্লথ হয়ে যায়। নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির ক্লাসগুলো যেখানে হয়, তার নাম ডানবার হল। ডানবার হলের ৩৩ নম্বর কক্ষে ক্লাস শুরু হলো। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ক্লাস। কোর্স নম্বর ৫২৯। কোর্স নম্বরগুলো সম্পর্কে সামান্য ধারণা দিয়ে নিই। টু হানড্রেড লেভেলের কোর্স হচ্ছে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েটের নিচের দিকের ছাত্রদের জন্য। থ্রি হানড্রেড লেভেল হচ্ছে আন্ডার-গ্র্যাজুয়েটের ওপরের দিকের ছাত্রদের জন্য। ফোর হানড্রেড এবং ফাইভ হানড্রেড লেভেল হচ্ছে গ্র্যাজুয়েট লেভেল। ফাইভ হানড্রেড লেভেলের যে কোর্সটি আমি নিলাম, সে সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অল্প কিছু কোয়ান্টাম মেকানিক্স পড়েছি। একেবারে কিছুই যে জানি না, তাও নয়। তবে এই বিষয়ে আমার বিদ্যা খুবই ভাসাভাসা। জলের ওপর ওড়াউড়ি, জল স্পর্শ করা নয়। একাডেমিক বিষয়ে নিজের মেধা এবং বুদ্ধির ওপর আমার আস্থাও ছিল সীমাহীন। রসায়নের একটি বিষয় আমি পড়ে বুঝতে পারব না, তা হতেই পারে না। আমাদের কোর্স কো-অর্ডিনেটর আমাকে বললেন, ফাইভ হানড্রেড লেভেলের এই কোর্সটি যে তুমি নিচ্ছ, ভুল করছ না তো? পারবে? আমি বললাম, ইয়েস। তখনো ইয়েস এবং নো-র বাইরে তেমন কিছু বলা রপ্ত হয়নি। কোর্স কো-অর্ডিনেটর বললেন, এই কোর্সে ঢোকার আগে কিন্তু ��োর হানড্রেড লেভেলের কোর্স শেষ করোনি। ভালো করে ভেবে দেখ, পারবে? : ইয়েস। কোর্স কো-অর্ডিনেটরের মুখ দেখে মনে হলো, তিনি আমার ইয়েস শুনেও বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না। ক্লাস শুরু হলো। ছাত্রসংখ্যা পনেরো। বিদেশি বলতে আমি এবং ইন্ডিয়ান এক মেয়ে—কান্তা। ছাত্রদের মধ্যে একজন অন্ধ ছাত্রকে দেখে চমকে উঠলাম। সে তার ব্রেইলি টাইপ রাইটার নিয়ে এসেছে। ক্লাসে ঢুকেই সে বিনীত ভঙ্গিতে বলল, আমি বক্তৃতা টাইপ করব। খটখট শব্দ হবে, এ জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। আমি হতভম্ব। অন্ধ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এটা আমি জানি। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু অন্ধ ছাত্রছাত্রী আছে, তবে তাদের বিষয় হচ্ছে সাহিত্য, ইতিহাস, সমাজবিদ্যা বা দর্শন। কিন্তু থিওরিটিক্যাল কেমিস্ট্রি যে কেউ পড়তে আসে আমার জানা ছিল না। আমাদের কোর্স টিচারের নাম মার্ক গর্ডন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মস্তান লোক। থিওরিটিক্যাল কেমিস্ট্রির লোকজন তাঁর নাম শুনলে চোখ কপালে তুলে ফেলে। তাঁর খ্যাতি প্রবাদের পর্যায়ে চলে গেছে। লোকটি অসম্ভব রোগা এবং তালগাছের মতো https://www.instagram.com/p/CHkEhPWHtZh/?igshid=qe84epmcahsv
0 notes
Text
Facebook post (2020-09-01T18:17:41.000Z)
সবচেয়ে জনপ্রিয় ১৪৯ টি অনুবাদ ( সবার কাজে লাগবে।) : ১, অভাবে সভাব নষ্ট- Necessity knows no law. ২, অতি চালাকের গলায় দড়ি- Too much cunning overreaches itself. ৩, অতি লোভা তাতি নষ্ট- To kill the goose that lays golden eggs./ All covet, all lost. ৪, অতি ভক্তি চোরের লক্ষন- Too much courtesy, full of craft. ৫, অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট- Too many cooks spoil the broth. ৬, অস ময়ের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু- A friend in need is a friend indeed. ৭, অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী- A little learning is a dangerous thing. ৮, অপচয়ে অভাব ঘটে-Waste not, want not. ৯, অন্ধকারে ঢিল মারা-Beat about the bush. ১০, অন্ধের কিবা রাত্রি কিবা দিন-Day and night are alike to a blind man. ১১, অপ্রিয় সত্য কথা বলতে নেই- Do not speak an unpleasant truth. ১২, অরণ্যে রোদন/ বৃথা চেষ্টা- Crying in the wilderness. ১৩, অর্থই অন অনর্থের মূল-Money is the root cause of all unhappiness. ১৪, অহংকার পতনের মূল-Pride geoth before destruction. ১৫, অহিংসা পরম ধর্ম-Love is the best virtue. ১৬, অসারের গর্জন তর্জন সার/খালি কলসি বাজে বেশি-An empty vessel sounds much. ১৭, আকাশ কুশুম কল্পনা-Build castles in the air. ১৮, আগাছার বাড় বেশি-All weeds grow apace. ১৯, আগে ঘর, তবে তো পর-Charity begins at home. ২০, আঠারোমাসে বছর-Tardiness. ২১, আপনার গায়ে আপনি কুড়াল মারা-To dig one’s own grave. ২২, আপনার ভাল পাগলেও বোঝে- Even a fool knows his business. ২৩, আপনি বাঁচলে বাপের নাম/ চাচা আপন প্রাণ বাচা-Self preservation is the first law of nature. ২৪, আগুন নিয়ে খেলা-To play with fire. ২৫, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবর-The cobbler must stick to his last. ২৬, আয় বুঝে ব্যয় কর-Cut your coat according to yor cloth. ২৭, আল্লাহ তাদেরই সাহায্য করেন যে নিজেদের সাহায্য করে- Allah helps those who helps help themselves. ২৮, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়-Where there is a will, there is a way ২৯, ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়-Tit for tat. ৩০, ইশ্ব�� যা করেন সবই মঙ্গলের জন্য-It is all for the best./ What God wills is for good. ৩১, উলু বনে মুক্তা ছড়ানো- To cast pearls before swine. ৩২, উত্তম মাধ্যম দেওয়া(মারপিট করা)- To beat black and blue. ৩৩, উচুগাছেই বেশি ঝড় লাগে-High winds blow on high hills. ৩৪, উঠন্তি মুলো পত্তনেই চেনা যায়-The child is father to the man ৩৫, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে- One doth the scath and another hathhh the scorn. ৩৬, উড়ে এসে জুড়ে বসা-To be quick to occupy. ৩৭, এক ক্ষুরে মাথা মোড়ান-To be tarred with the same brush. ৩৮, এক ঢিলে দুই পাখি মারা-To kill two birds with one stone. ৩৯, এই তো কলির সন্ধ্যা- It is just the beginning of the trouble. ৪০, এক হাতে তালি বাজে না-I takes two to make a quarrel. ৪১, এক মিথ্যা ঢাকতে অন্য মিথ্যার অশ্রয় নিতে হয়- One lie leads to another. ৪২, একাই একশ- A host in himself. ৪৩, একূল অকূল দুকূল গেল- To fallen between two stools. ৪৪, এক মাঘে শীত যায় না- One swallow does not make a summer. ৪৫, এক মুখে দূরকম কথা-To blow hot and cold in the same braeth. ৪৬, কই মাছের প্রাণ বড় শক্ত- A cat has nine lives. ৪৭, কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না-No pains no gains. ৪৮, কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না-Black will take no other hue. ৪৯, কাচা বাশে ঘুণে ধরা-To be spoiled in early youth. ৫০, কাটা দিয়ে কাটা তোলা-To swallow the bait. ৫১, কাকে কান নিয়েছে শুনে কাকের পিছনে ছোটা- To swallow the bait. ৫২, কাকের মাংস কাকে খায় না-No raven will not pluck another’s eye. ৫৩, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা-To add insult to injury./ To add fuel to fire. ৫৪, কান টানলে মাথা আসে-Give the one, the other will follow. ৫৫, কানা ছেলের নাম পদ্ম লোচন-Appearances are deceptive. ৫৬, কিল খেয়ে কিল চুরি করা-To pocket an insult. ৫৭, কুকুরের পেটে ঘি সহ্য হয়না- Habit is the second nature. ৫৮, কেচো খুরতে সাপ-From the frying pan to the fire. ৫৯, কোথাকার জল কোথায় গড়ায়- Let us wait to see the conclusion. ৬০, খাল কেটে কুমির আনা- To bring on calamity by one’s own imprudence. ৬১, অসারের গর্জন তর্জন সার/খালি কলস বাজে বেশি -Empty vessels sound much. ৬২, খিদে থাকলে নুন দিয়ে খাওয়া যায়।–Hunger is the best sauce. ৬৩, গাছে তুলে মই কেড়ে নেওয়া-To leave one in the lurch. ৬৪, গামে মানে না আপনি মোড়ল- A fool to others to himself a sage. ৬৫, ঘর পোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়-A burnt child dreads the fire. ৬৬, ঘরের শত্রু বিভীষন- Fifth columnist. ৬৭, ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া-To make a fruitless effort. ৬৮, ঘোড়া দেখে খোড়া খোড়া হওয়া- To be unwilling to work when there is somebody to help. ৬৯, ঘোমটার ভেতর খেমটার নাচ-Coquetry under the guise of modesty. ৭০, চাদেও কলঙ্ক আছে-There is no unmixed goods. ৭১, চাচা আপন জান বাচা-Ever y man is for himself. ৭২, চেনা বামুনের পৈতা লাগে না-Good value for ready money. ৭৩, চকচক করলেই সোনা হয় না-All the glitters is not gold. ৭৪, চোরে চোরে মাসতুতো ভাই-All thieves are cousins. ৭৫, ছেড়ে দে মা কেদে বাচি-Don’t nag me, and leave me in peace. ৭৬, ছেলের হাতের মোয়া-Child’s play thing. ৭৭, জহুরীরাই জহর চেনে-Diamond cut diamond. ৭৮, জোর যার মুল্লুক তার-Might is right. ৭৯, গরু মেরে জুতা দান-To rob Peter, to pay paul. ৮০, ঝিকে মেরে বৌকে শেখান-To whip the cat of the mistress who doesn’t spin. ৮১. ঝোপ বুঝে কোপ মারা- Make hay while the sun shines. ৮২. টাকায় কি না হয়-Money makes everything. ৮৩. ঠেলার নাম বাবাজি -Nothing likes force. ৮৪. তেল মাথায় তেল দেওয়া- To carry coal to new castle. ৮৫. দশের লাঠি একের বোঝা-Many a little makes a mickle. ৮৬. দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পোষা-To cherish a serpent in one's bosom. ৮৭. দুষ্ট গরু অপেক্ষা শূন্য গোয়াল ভাল-Better an empty house than a bad tenant. ৮৮.দেখতে নারী তার চলন বাকা- Faults are thick whele loves is thin. ৮৯. ধান বানতে শীবের গীত-A rigmorale ৯০. ধরমের কল বাতাসে নড়ে-Virtue proclaims itself. ৯১, ধরি মাছ না ছুয়ে পানি- To make sure of something without risking anything. ৯২, নুন আন পানতা ফুরায়-After meal comes mustard. ৯৩, নানা মুনির নানা মত-Many men, many minds. ৯৪, নাকে তেল ঘুমান-To be careless about what happens. ৯৫, নিজের বলই শ্রেষ্ঠ বল-Self-help is the best help. ৯৬, পাকা ধানে মই দেওয়া-To do a great injury. ৯৭, পাগলে কিনা বলে ছাগলে কিনা খায়-A mad man and an animal have no difference. ৯৮, পাপের ধন প্রায়শিত্তে যায়-Ill got, ill spent. ৯৯, পুরনো চাল ভাতে বাড়ে-All that is old is not bad. ১০০, পেটে খেলে পিঠে সয়-Pain is forgotten where gain follows. ১০১, পরের মন্দ করতে গেলে নিজের মন্দ আগে হয়- Harm watch, warm catch. ১০২, বসতে পেলে ��ুতে চায়-Give him an inch and he will take an ell. ১০৩, বার মাসে তের পার্বন-A succession of festivities the all year round. ১০৪, বিধাতার লিখন না যায় খণ্ডন-Inevitable are the decrees of God. ১০৫, বিয়ে করতে কড়ি, ঘর বাধতে দড়ি-Be sure before you marry of a house, where in tarry. ১০৬, ভাই ভাই ঠাই ঠাই- Brothers will part. ১০৭, ভিক্ষার চাল কাড়া আর আকাড়া- Beggars must not be chosen. ১০৮, ভাগ্যর লেখা খণ্ডায় কে-Fate cannot be resisted. ১০৯, ভাজ্ঞা মন জোড়া লাগে না-Lost credit is like broken glass. ১১০, ভাবিয়া করিও কাজ-Look before you leap. ১১১, মশা মারতে কামান দাগা-To take a hammer to spread a paster. ১১২, মরা হাতি লাখ টাকা-The very ruins of greatness are great. ১১৩, মা রক্ষ্ণী চঞ্চলা-Riches have wings. ১১৪, মাছের তেলে মাছ ভাজা-To gain without spending. ১১৫, মৌ্নতা সম্মতির লক্ষণ-Silence gives consent./ Silence is half consent. ১১৬, মিষ্টি কথায় চিড়ে ভিজেনা- Fine words butter no parsnips. ১১৭, মূর্খই মূর্খের কদর করে-Fools paradises fools. ১১৮, যতক্ষন শ্বাস, ততক্ষণ আশ-While there is life there is hope. ১১৯, যার জ্বালা সেই জানে-The wearer best knows where the show pinches. ১২০, যার বিয়া তার খব র নাই পাড়াপড়শির ঘুম নাই- Though he is careless to make his mark, others are moving mountains for him. 121. যে রক্ষক সেই ভক্ষক- I am makers are law breakers. 122. যেমনি বাপ তেমনি ব্যাটা- Like father like son. 123. যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়- Dangers often comes where danger is feared. 124. যেম্ন কুকুর তেম্ন মুগুর- As is the evil, so is the remedy. 125. আপনি ভাল তো সব ভাল-To the good the world appears to be good. 126. ব্যননা বনে খাটাস রাজা-A dog is a lion in his lane. 127. রাখে আল্লাহ মারে কে- What good wills no frost can kill. 128. রতনে রতন চেনে মানিকে মানিক- Diamonds cuts diamond. 129. শাকদিয়ে মাছ ঢাকা- Hide in a superficial way. 130. সাবধানের মার নাই- Safe bind, safe find. 131. সস্তার তিন অবস্থা-Penny wise poun foolish. 132. সব ভাল যার শেষ ভাল তার-All’s well that that ends well. 133. সময় একবার বয়ে গেলে আর ফেরত আসে না- Time once lost cannot be regained. 134. সবুরে মেওয়া ফেলে- Patience has its reward. 135. হয় এসপার নয় ওসপার-To be desperate. 135. হাটের মাঝে হাড়ি ভাঙা-To wash one’s dirty line in public. 136.হাতি ঘোড়া গেল তল মশা বলে কত জল-Fools rush in in where anger fear to tread./ He would bend the bow of Ulysses. 137. কর্তর ইচ্ছায় কর্ম-Master’s will is law. 138. যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ- A drawing man catches at a straw. 139. যারে দেখতে নারি তার চলন বাকা-Faults are thick where love is thin. 140. যারে দেখতে নারি তার চলন বাকা-Faults are thick where love is thin. 141. তুমি কোথায় থাক?-Where do you put up? 142. এ বিষয়ে মতভেদ আছে--Opinions differ on this subject. 143. এ বাড়ীটি ভাড়া দেয়া হবে--The house is to let. 144. আমার বড় ক্ষুধা পেয়েছে--I feel very hungry. 145. আমার ঠান্ডা লেগেছে-- I have caught a cold. 146. নিজের চরকায় তেল দাও--Oil your own machine. 147. অনভ্যাসের ফোঁটা কপাল চড়চড় করে-- Every shoe fits not foot 148. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঈশ্বরভক্তির একটি দাপ-- Cleanliness is next of godliness 149. রক্তের টান বড় টান-- Blood is thicker than water
0 notes
Photo
New Post has been published on https://paathok.news/79874
কাউন্সেলিং কী, কখন প্রয়োজন?
.
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিই স্বাস্থ্য নয়, বরং স্বাস্থ্য হচ্ছে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকা। সুতরাং মানসিকভাবে যদি কোনো কারণে কেউ ভালো না থাকেন, তাহলে তাকে সুস্থ বলা যায় না।
শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে যেমন বিভিন্ন চিকিৎসার মাধ্যেমে আমরা দ্রুত সুস্থ হতে পারি, মানসিক কোনো সমস্যা দেখা দিলেও ঠিক তেমনি অনেক সময় প্রয়োজন পড়ে বিশেষ পরামর্শের।
খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বেশিরভাগ সময় আমরা এই ছোট ছোট মানসিক সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দেই না।আবার পরিবার থেকেও দেখা যায়, মানসিক সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ কারো কাছে যেতে অনিহা থাকে। তারা ভয় পান, পাছে লোকে ‘পাগল’ বলে। কিন্তু সঠিক পরামর্শ নিলে অল্প সময়েই মানসিক অসুস্থতাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
তবে জানতে হবে কখন সাইকোলজিস্টের কাছে যাওয়া দরকার? নানা কারণেই আমাদের মনে বিষাদ, রাগ, দুঃখ হতে পারে। এই অনুভুতি হয়ত কয়েকদিনেই চলে যায়। গেলে তো ভালো, কিন্তু যদি মন-খারাপ ভাব অনেক দিনেও না যায়, তাহলে দেরি না করে অবশ্যই মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিতে হবে।
কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে যে মানসিক উত্তরণ ঘটাতে পারি:
• পরিকল্পনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন
• দুশ্চিন্তা কমে যায় ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখি
• সিঁড়ি থেকে পড়ে যেতে পারি, অন্ধকারে দমবন্ধ হতে পারে, এধরনের ভয় দূর হয়
• মানসিক চাপ মোকাবিলা করে সুস্থ চিন্তা করার, সুখী হতে শেখায় কাউন্সেলিং • দাম্পত্য ও পারিবারিক সম্পর্কে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। এই সমস্যার সমাধানও হতে পারে সঠিক পরামর্শের মাধ্যমে
• মাদকাসক্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য কাউন্সেলিং জরুরি • শুধু বড়দেরই নয় শিশুর আচরণগত সমস্যা সমাধানের পথও বাতলে দেন একজন কাউন্সেলর।
কাউন্সেলিং নিতে চাইলে… ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাইকিয়াট্রি বিভাগে শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাউন্সিলিং ও সাইকোথেরাপি করা হয়। এর জন্য বহির্বিভাগে ১০ টাকা দিয়ে একটা টিকিট কাটতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (শাহবাগ,ঢাকা) এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে (কলেজগেট, ঢাকা) শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১০ টাকা টিকেটের কেটে এই সেবা গ্রহণ করা যাবে।
এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকে।
0 notes
Text
"মুজিব বর্ষের অঙ্গিকার,
পুলিশ হবে জনতার!"
পুলিশের এই স্লোগানের সাথে বাস্তবে তাদের কাজের কি কোন মিল আছে বলে আমার মনে হয় না? যদি তাদের কথার সাথে কাজের মিল থাকতো, তাহলে দেশের সকল বাহিনীর মধ্যে শুধুমাত্র পুলিশ বাহিনীর নামে এত এত বদনাম কেন? আরো তো অন্য বাহিনী আছে, কই তাদের কাজ নিয়ে তো কোন কথা উঠে না?
জানি, "ওসি প্রদীপের" মত পুলিশের সাথে কোন তর্ক বাঁধলে ইয়াবা পাচারকারী কিংবা গায়েবি মামলায় নিজেকে জড়িয়ে পড়তে হবে, সেটারও বহুজাতিক ঘটনার প্রমাণ ইতিমধ্যে সবারই জানা আছে। তাই ঐদিকে না গিয়ে শুধু বলতে চাই - পুলিশ যদি সত্যি মানুষের বন্ধু হতো, তাহলে কেন মানুষ আজ তাদের সাঁজানো মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয়ে থাকে? হয়তো সকল পুলিশ এমন নয়, তবুও সিংহভাগ পুলিশের কাজে এমন দূর্দশা হয় কেন??
আশা করি, আমার কথার মর্ম বুঝে শুনে তবেই জবাব দিবেন। নয়তো "অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী"র মত না বুঝে অযথা বাড়াবাড়ি করবেন না?
#লাবু
0 notes
Text
হিংসুটে নয় বাস্তবে গীতা দে ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল
New Post has been published on https://sentoornetwork.com/birth-anniversary-of-bengali-actress-gita-de/
হিংসুটে নয় বাস্তবে গীতা দে ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল
সে অর্থে বিরাট মাপের জনপ্রিয়তা হয়ত তাঁর ছিল না,, ছিল না নায়িকার লাস্যময়ী গ্ল্যামার। কিন্তু এমন কিছু তাঁর মধ্যে ছিল যার জন্য সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, তপন সিনহার মত বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তিনি গীতা দে। বাংলা সিনেমার তৎকালীন মহিলা ভিলেন বলা যায় তাঁকে��� দজ্জাল, কুঁদুলে মহিলা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য৷ কতবার যে তিনি নায়ককে নির্দয়ভাবে বাড়ি থেকে বার করে দিয়ে বা নায়িকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে লোকের বিদ্বেষ কুড়িয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই৷ কিন্তু ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল, পরোপকারী, স্নেহশীল একজন মানুষ। অভিনয় তাঁকে তাঁর প্রকৃত পরিচয় ভুলিয়ে দিয়েছিল। এখানেই তাঁর কৃতিত্ব, অভিনয় ক্ষমতার প্রমান।এমনই বিশ্বাসযোগ্য ছিল গীতা দে-র অভিনয়৷ মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়। তারপর টানা সত্তর বছর তিনি অভিনয় করে গেছেন মঞ্চ ও রূপালি পর্দায়। জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি অভিনয় করেন বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিয়ালেও। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে ‘সমাপ্তি’ ছবিতে। ঋত্বিক ঘটকের বিখ্যাত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে তাঁর অভিনয় ভোলার ক্ষমতা কারও নেই। একজন অল্প বয়সেই যুবতী হয়েও পৌঢ় মায়ের চরিত্রে কি অসামান্য অভিনয় করেছিলেন তা আজও মেঘে ঢাকা তারা দেখতে বসলেই সেই কথা মনে করিয়ে দেয়। এর পরে ঋত্বিকের ‘কোমল গান্ধার’ ও ‘সুবর্ণরেখা’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন গীতা দে। অভিনয় করেছিলেন, তপন সিনহার ‘হাটে বাজারে’, ‘জুতগৃহ’ এবং ‘এখনি’ ছবিতে। ১৯৩১ সালের ৫ আগস্ট কলকাতায় জন্ম গ্রহন করেন তিনি। শিশু অভিনেত্রী হিসাবে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ছিল আহুতি (১৯৪১)।তবে তিনি নিজেও বহুবার স্বীকার করেছেন অভিনয় শিক্ষার প্রথম পাঠ নাট্যাচার্য শিশির ভাদুড়ির কাছে৷ অহিন্দ্র চৌধুরি, নরেশ মিত্র, দেবনারায়ণ গুপ্ত, শম্ভু মিত্র, ছবি বিশ্বাস, বাংলা থিয়েটার জগতের মহিরুহদের ছায়ায় তিনি অভিনয় করে গেছেন। বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন; যার মধ্যে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বিদ্যা বালান এবং সঞ্জয় দত্ত অভিনীত পরিণীতা উল্লেখযোগ্য।
ছবি: গুগুল
আরও পড়ুন: করোনার ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না চোখের রোগিরা, বাড়ছে সমস্যা, চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা
0 notes
Text
আজকের রাশিফল মঙ্গলবার ৭ এপ্রিল ২০২০
জেনে নিন আজকের রাশিফল মঙ্গলবার ৭ এপ্রিল ২০২০ Ajker Rashifol : রাশিফল এমন একটি জিনিস প্রতিদিন আমাদের ভালো খারাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাশিফলের মাধ্যমেই আমাদের যা কিছু ভালো এবং যা কিছু খারাপ তাই প্রকাশিত হয় ।
বিশদে দেখুন আজকের রাশিফল মঙ্গলবার ৭ এপ্রিল ২০২০
Mesh Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020Aries horoscope today bangla rashifal daily মেষ রাশি – অর্থোপার্জন অনেক হবে। ব্যয়ও হবে বেশি, সুতরাং সঞ্চয় হবে অল্প। নিজের বা পরিবারের সদস্যগণের চিকিৎসার জন্য বহু অর্থ ব্যয় করতে হতে পারে। তবে দারিদ্রের লক্ষণ নেই। কর্মে পদোন্নতি ও বিদেশগমন যোগ দেখা যাচ্ছে। লাল রঙ শুভ। ১৭ শুভ সংখ্যা।
Bris Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Taurus horoscope today bangla rashifal daily বৃষ রাশি –এ বৎসর একাধিক স্থাবর সম্পত্তিলাভ হবে। লটারি প্রভৃতিতে প্রাপ্তির আশা অমূলক নয়। কর্মের জন্য দেশ-বিদেশ গমন সম্ভব। পদমর্যাদা বৃদ্ধিরও যোগ রয়েছে। নব গৃহনির্মাণ ও পুরাতন গৃহ সংস্কারে অনেক অর্থব্যয় হতে পারে কালো রং শ্রেয়। ৩ শুভ সংখ্যা।
Mithun Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Gemini horoscope today bangla rashifal daily মিথুন রাশি – দাম্পত্য জীবনে শান্তিভঙ্গের আশঙ্কা থাকলেও বিচ্ছেদের আশঙ্কা নেই। বৎসরের প্রথম ভাগে অবিবাহি��ের বিবাহযোগ লক্ষিত হয়। নতুন বন্ধুলাভের যোগ যেমন রয়েছে তেমনি একাধিক পুরাতন বন্ধুর সঙ্গে তিক্ততা সৃষ্টি ও যোগাযোগ ছিন্নের আশঙ্কা রয়েছে। ঘনিষ্ঠ কোনও বন্ধুর দ্বারা অনিষ্টের আশঙ্কা প্রবল সবুজ রঙ শুভ। শুভ সংখ্যা ১ দৈনিক রাশিফল, ফ্রি বাংলা হরোস্কপ
Karkat RashiAjker rashifal Tuesday 7 march 2020 Cancer horoscope today bangla rashifal daily কর্কট রাশি –দাম্পত্যেও থাকবে শান্তির বার্তা। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে এই রাশির জাতক জাতিকারা যাঁরা 'সিঙ্গল' পেয়ে যেতে পারেন নিজের প্রেমিকা কিংবা প্রেমিককে। ফলে আগামী বছরে থাকতে পারে বহু আশার বার্তা। হলুদ রং শুভ। ৬ শুভ সংখ্যা।
Singha Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Leo horoscope today bangla rashifal daily সিংহ রাশি –শরীর-স্বাস্থ্য ছাড়া অন্য সব দিকেই বছরটি শুভ। অনিয়মিত জীবনযাপন শরীরকে ব্যস্ত করে তুলতে পারে। তবে বিদ্যা, অর্থ ও কর্মক্ষেত্রে বেশি শুভ। উপার্জন খুবই ভাল হবে। ব্যবসায় অগ্রগতি যোগ। তৈরি খাদ্য দ্রব্য, ইমারতি দ্রব্য, পশুপালন, ওষুধের ব্যবসায়ীদের অর্থোপার্জন হবে প্রচুর। লাল রঙ শুভ। ৯ শুভ সংখ্যা
Kanya Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Virgo horoscope today bangla rashifal daily কন্যা রাশি -সারাটা বছর কন্যা রাশির হাতে অর্থ থাকলেও খরচ করতে হবে হিসেব করে। কর্মক্ষেত্রে অত্যধিক পরিশ্রমের জন্য মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। পারিবারিক ক্ষেত্রে মা, বাবার শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ রয়েছে। নীল রঙ শ্রেয়। ৬ শুভ সংখ্যা দৈনিক রাশিফল, আজকের বাংলা রাশিফল
Tula Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Libra horoscope today bangla rashifal daily তুলা রাশি – এই বছরটি শুভাশুভ মিশিয়ে কাটবে। ছোটখাটো বাধাবিঘ্নর মধ্য দিয়ে চলতে হবে সারাটা বছর। কর্মক্ষেত্রে সারা বছরই চাপ থাকবে। অর্থভাগ্য মধ্যম। তবে বছরের মাঝামাঝি সময়ে কিছু ভাল সুযোগ সুবিধা আসবে লাল রঙ শুভ। শুভ সংখ্যা ৪।
আজকের রাশিফল মঙ্গলবার ৭ এপ্রিল ২০২০ বৃশ্চিক রাশি –��াকরিজীবীদের সম্মান ও সাম্মানিক দুইই বাড়ার যোগ রয়েছে। পারিবারিক ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেম ও প্রীতির লক্ষণ দেখা যায়। বিদ্যার্থীদের সময় শুভ। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ভাল ফল আশা করা যায়। নতুন চাকরির যোগ আছে কালো রং শুভ। ৫ শুভ সংখ্যা।
Dhanu Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Sagittarius horoscope today bangla rashifal daily ধনু রাশি –কর্মক্ষেত্রে অত্যধিক পরিশ্রমের জন্য মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। পারিবারিক ক্ষেত্রে মা, বাবার শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ রয়েছে। ধূসর রং শুভ। ২ শুভ সংখ্যা। আজকের জাতক দেখে নিন
Makar Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Capricorn horoscope today bangla rashifal daily মকর রাশি –লেখক, কবি, আইনবিদ, চিকিৎসকদের যশ বাড়বে। অনেকের ভাগ্যে রাজ্য বা জাতীয় স্তরের পুরস্কার মিলতে পারে। অভিনেতা, শিল্পীদের পক্ষেও সময়টা ভাল। ধূসর রং শুভ। শুভ সংখ্যা ২।
Kumbha Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Aquarius horoscope today bangla rashifal daily কুম্ভ রাশি – উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি মিলতে পারে। পরের দখলে থাকা সম্পত্তি উদ্ধারের সম্ভাবনাও প্রবল। তবে এসব ক্ষেত্রে অনেক আইনি জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বাদামি রঙ শুভ। শুভ সংখ্যা ৮
Meen Rashi Ajker rashifal Tuesday 7 march 2020 Pisces horoscope today bangla rashifal daily মীন রাশি –কর্মক্ষেত্রে অত্যধিক পরিশ্রমের জন্য মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। পারিবারিক ক্ষেত্রে মা, বাবার শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ রয়েছে। লটারিতে আয়ের যোগ রয়েছে। কর্মহীনদের কাজ মিলবে। আয়ের থেকে ব্যয় কম হওয়ায় আর্থিক সঞ্চয় বাড়বে। লাল রং শুভ। ২ শুভ সংখ্যা। আরও পড়ুনঃ এ কোন ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিলেন রাখি সাওয়ান্ত আমাদের আজকের প্রতিবেদনঃ আজকের রাশিফল মঙ্গলবার ৭ এপ্রিল ২০২০ আপনার কেমন লাগলো নিচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। দৈনিক রাশিফল আপডেট পেতে হলে চোখ রাখতে হবে আমাদের পেজে। এছাড়া রাশিফল বিষয়ে আপনার যদি কোনো মতামত থাকে তাহলে আমাদের কন্টাক্ট করতে ভুলবেন না। দৈনিক রাশিফলের আপডেট পেতে হলে চোখ রাখতে হবে #kolkata_Hunt ওয়েবসাইটে অথবা আমাদের ফেসবুক পেজে । Read the full article
#anandabazarpatrikarashifol#banglahoroscope#horoscope#আজকেররাশিফল#আজকেররাশিফলমঙ্গলবার৭এপ্রিল২০২০#রাশিফল
0 notes
Text
স্থূলকায় শরীর নিয়ে বিদ্যার কান্না (ভিডিও)
স্থূলকায় শরীর নিয়ে বিদ্যার কান্না (ভিডিও)
বলিউড কুইন বিদ্যা বালানের অভিনয়ের কোনো জুড়ি নেই। তার চলন-বলন, গ্লামার, বাহ্যিক সৌন্দর্য সবাইকে টানে। তবে স্থূলকায় শরীর নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা শুনতে হয় বিদ্যাকে।
তবে বিদ্যার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এই অভিনেত্রী ছোট থেকেই মোটা শারীরিক গঠনের। অল্প খাবার খাওয়া সত্ত্বেও তিনি মুটিয়ে যান। হরমোন সমস্যায় ভুগছেন তিনি। নায়িকা হওয়ার পর এই ফিগার নিয়ে কম কটূক্তি শুনতে হয়নি তাকে। একাধিকবার বডি শেমিংয়ের শিকার হতে…
View On WordPress
0 notes
Text
দ্বীনী জ্ঞানে অজ্ঞ জনৈক ব্যক্তির প্রতি জবাব
মূল: আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক (তুরস্ক)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
আরবী সেট-আপ: মুহাম্মদ রুবাইয়াৎ বিন মূসা
অনুবাদকের আ’রয
৭৮৬/৯২
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ তা’লার প্রাপ্য যিনি তাঁর অনুপম করুণাস্বরূপ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে ধরাধামে প্রেরণ করেছেন। হুজূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’এর প্রতি নিবেদন করি অসংখ্য দুরুদ-সালাম। অতঃপর সালাম জানাই তাঁর খাঁটি আহলে বায়ত (পরিবার-পরিজন), আসহাবে কেরাম (সাথীবৃন্দ), আয্��য়াজে মোতাহহারাত (পবিত্র বিবি সাহেবাবৃন্দ) ও আউলিয়ায়ে কেরাম (খোদার প্রিয় বান্দা)’বৃন্দের প্রতি। বিশেষ করে আমার পীর ও মুরশীদ সৈয়দ মওলানা এ, জেড, এম, সেহাবউদ্দীন খালেদ সাহেব কেবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি’র পাক দরবারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করি, যাঁর আধ্যাত্মিক সুদৃষ্টি ছাড়া আমি এই অনুবাদ কাজ করতে সক্ষম হতাম না। তুরস্কের বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিত আল্লামা হুসাইন হিলমী ইশিক রহমতুল্লাহি আলাইহি সমসাময়িক কালের তথাকথিত প্রগতিবাদী কিন্তু দ্বীন-ইসলামের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারীদের উত্থাপিত বিভিন্ন আপত্তির জবাব এ প্রবন্ধটিতে উপস্থাপন করেছেন। অল্প কথায় এতো সুন্দর জবাব সত্যি দুর্লভ! আশা করি, পাঠকবৃন্দের কাছে এটি সুখপাঠ্য হবে। অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে সর্বান্তকরণে আমি পাঠকমণ্ডলীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আল্লাহ পাক সকলকে উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন, আমীন! আমার পীর ও মুরশীদ কেবলার অসীলায় আল্লাহ্ তা’লা এ লেখাটি কবুল করে নিলেই আমার শ্রম সার্থক হবে, আমীন, সুম্মা আমীন!
দ্বীনী জ্ঞানে অজ্ঞ এক ব্যক্তির প্রতি জবাব
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
مَا مِنْ مَوْلُودٍ يُولَدُ إِلا عَلَى فِطْرَةِ الإِسْلامِ ، حَتَّى يُعْرِبَ فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ ، أَوْ يُنَصِّرَانِهِ ، أَوْ يُمَجِّسَانِهِ
“প্রত্যেক শিশুই পৃথিবীতে একটি নিষ্পাপ আত্মা নিয়ে মুসলমান হওয়ার অভিপ্রায়ে জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তার পিতা-মাতা পরবর্তী পর্যায়ে তাকে ধর্মহীনতার দিকে টেনে নিয়ে যায়”। [১]
হাদীসটি পরিস্ফুট করে যে শিশুদেরকে ইসলাম শিক্ষা দেয়া অত্যাবশ্যক। তাদের খাঁটি ও নির্মল আত্মা ইসলামের জন্যে উৎসর্গিত। ইসলামী শিক্ষাপ্রাপ্ত নয় এমন একজন শিশু ইসলামের শত্রুদের মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসায় বিশ্বাস করে ইসলামকে ভুল বুঝতে পারে। সে ইসলামকে পশ্চাদগতিশীল ও মন্দ মনে করতে পারে। ইসলামী জ্ঞানে অজ্ঞ ব্যক্তি, যে নাকি ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে নি, সে যদি ইসলামের শত্রুদের ফাঁদে পা দেয়, তবে সে ইসলাম হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন বরং উল্টো বিষয়ই শিক্ষা করবে। তাকে উ��্দেশ্য করে লেখা শরমহীন মিথ্যা লেখনী এবং বিষাক্ত ধ্যান-ধারণার শিকারে সে পরিণত হবে। সে পৃথিবীতে শান্তি খুঁজে পাবে না। আর পরবর্তী জগতে সে অন্তহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হবে। যুব সম্প্রদায়কে ধোকা দেয়ার জন্যে দ্বীন ইসলামের শত্রুদের বানানো এ সকল কুৎসা কতো জঘন্য ও হীন তা প্রত্যেক মুসলমান, এমন কী প্রত্যেক ব্যক্তিরই জানা আবশ্যক। এ সব মিথ্যায় বিশ্বাস করে আযাবের মধ্যে ডুবে না যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমাদেরকে ইসলামের সুমহান আদর্শ সম্পর্কে উপলব্ধি করতে হবে এবং এটা যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও নৈতিকতাকে সমর্থন করে এবং অগ্রগতি-প্রগতি, সহযোগিতা, কর্ম উদ্যোগ ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যকে আদেশ করে, তা আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে। ইসলামকে ভালোভাবে এবং সঠিকভাবে অনুধাবনকারী একজন বুদ্ধিমান, সচেতন ও সভ্য ব্যক্তি ইসলামের শত্রুদের তৈরি করা বানোয়াট ও মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করবেন না। তাদেরকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অজ্ঞ, অশিক্ষিত ও ধোকাপ্রাপ্ত হীন প্রকৃতির লোক হিসেবে দেখে তিনি তাদের প্রতি করুণা করবেন। তিনি তাদেরকে এই অধঃপতিত অবস্থা হতে পরিত্রাণ পেয়ে সঠিক পথে ফেরার জন্যে তাদের শুভ কামনা করতে থাকবেন।
আমরা এ রকম দ্বীনী জ্ঞানে অজ্ঞ এক ব্যক্তির লজ্জাহীনভাবে রচিত কিছু পাতার একটি ছোট পুস্তিকা পেয়েছি, যার মধ্যে সে তার লেখা বিষাক্ত ও অনন্ত দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর মিথ্যাসমূহ সন্নিবেশিত করেছে সৎ ও পবিত্র আত্মাগুলোকে নিজের পরিণতি বরণ করানোর অসৎ উদ্দেশ্যে। লেখকের খেতাব দেখে কর্তৃত্বসম্পন্ন মনে করে যারা ভুল বুঝে, তারা সত্য, সততা ও নৈতিকতাকে কুৎসা রটনাকারী লেখনীটি দেখে হয়তো মনে করতে পারে যে সেটা জ্ঞান ও পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করেই বুঝি রচিত। লেখনীটির সৃষ্ট বিভ্রান্তি ও ক্ষতি দূর করার মহৎ লক্ষ্যে আমরা ১২টি অনুচ্ছেদ এই ঘৃণ্য মিথ্যাচারকে জবাব দেয়ার জন্যে উৎসর্গিত করেছি। নির্মল আত্মার যুব সম্প্রদায় এর দ্বারা সত্য উপলব্ধি করে অতি সহজেই ইসলামের শত্রুদের কূট-কৌশল সম্পর্কে অবগত হতে পারবে এবং নিজেদেরকে প্রগতিবাদী দাবিদার সেই সব বুদ্ধিহীন, দুরাত্মা অবিশ্বাসীদেরকে কাছে থেকে চেনতে পারবে। আপত্তি-১
সে বলেছে, “সামাজিক জীবনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ধর্মীয় দর্শন ও নিয়ম হচ্ছে সামাজিক প্রগতির প্রতিবন্ধক শেকলস্বরূপ।” জবাব রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
“তোমরা দুনিয়াদারী ��মনভাবে সম্পন্ন করতে থাকো যেন তোমাদের মৃত্যু-ই হবে না” (আল্ হাদীস)।
ইমাম মানাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃ�� উদ্ধৃত একটি হাদীস শরীফে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
‘জ্ঞান-বিজ্ঞান হলো ঈমানদার ব্যক্তির হারানো সম্পত্তি” (আল্ হাদীস)।
তাই মোমেন ব্যক্তির উচিৎ এর সন্ধান পাওয়ামাত্রই তা হস্তগত করা। শত্রু হোক কিংবা মিত্র হোক, বিজ্ঞানের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিত্বই সর্বসম্মতভাবে ঘোষণা করেন যে দ্বীন ইসলাম সমাজের প্রগতিকে সমর্থন করে এবং সভ্যতার পথে আলোর মশাল জ্বালায়। উদাহরণস্বরূপ, বৃটিশ লর্ড ড্যাভেনপোর্ট বলেন, “মুসলমানদের মতো আর কোনো (পৃথিবীতে আগত) জাতি-ই জ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতিকে এতো সম্মান প্রদর্শন করেন নি” (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ও কুরআন মজীদ - Hadrat Muhammad and the Quran শীর্ষক গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১ম অধ্যায়, লন্ডন হতে প্রকাশিত)। তিনি উদাহরণ ও দলিল সহকারে ব্যাখ্যা করেছেন যে ইসলাম ধর্ম সমাজসমূহকে প্রগতি ও কল্যাণের দিকে পরিচালিত করেছে।
১৯৭২ সালে টেক্সাস্ টেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনারত ডঃ ক্রিস্ ট্র্যাগ্লোর সাহেব এক বিশাল শ্রোতামণ্ডলীর মাঝে ভাষণদানকালে বলেন যে ইউরোপীয় রেনেসাঁর প্রেরণা ও বিকাশের উৎস ছিল দ্বীন ইসলাম এবং মুসলমানবৃন্দ স্পেন ও সিসিলি এসে আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রগতির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তাঁরা শিক্ষা দেন যে রসায়ন, চিকিৎসা, সৌরবিদ্যা, নৌ-বিদ্যা, ভূগোল, মানচিত্র অংকন বিদ্যা, গণিত ইত্যাদি শাস্ত্রে উন্নতি সাধনের মাধ্যমেই প্রগতি অর্জন সম্ভব। অধ্যাপক ট্র্যাগ্লোর সাহেব আরো বলেন যে উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনের মধ্য দিয়ে ইউরোপে এ সকল জ্ঞানের শাখা মুসলমানবৃন্দ-ই নিয়ে এসেছিলেন। তিনি আরো অভিমত প্রকাশ করেন যে আধুনিক প্রকাশনার উন্নতির ক্ষেত্রে প্যাপিরাস পাতা ও পশুর মূল্যবান চামড়ার ওপর লিখিত ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞান বিশেষ অবদান রেখেছিল। (সাপ্তাহিক মুসলিম বিশ্ব - The Muslim World, পাকিস্তান ২৬ শে আগষ্ট ১৯৭২ সংখ্যা দ্রষ্টব্য)। অতএব, টাইটেল বা খেতাবসম্পন্ন একদম অজ্ঞ ও দুর্নীতিপরায়ণ ইসলামের কোনো শত্রুর মিথ্যা কাহিনীসমূহ এ তথ্যটিকে ধামাচাপা দিতে পারবে না। কেননা, কাদা দিয়ে কখনোই সূর্যকে ঢেকে দেয়া সম্ভব নয়। আপত্তি-২
সে বলেছে, “ধর্মের শেকল থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষা করা আবশ্যক। সমসাময়িক পশ্চিমা সভ্যতার সমপর্যায়ে যেতে হলে একটি প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা অর্জন করা অত্যন্ত প্রয়োজন।” জবাব দ্বীন ইসলামে ইতিপূর্বে জ্ঞান, নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও ন্যায়-বিচারের ভিত্তিতে সম্পূর্ণভাবে উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ইসলাম রাষ্ট্রকে ভাঁওতাবাজ রাজনীতিবিদদের হাতে ক্রীড়নক হওয়া থেকে রক্ষা করে। পুঁজিবাদী গোষ্ঠী, একনায়কতন্ত্রী চক্র এবং সমাজতন্ত্রের সেবাদাস গং এ ধরনের একটি স্বাধীন প্রশাসনকে নিজেদের নিষ্ঠুরতা, অত্যাচার-অবিচার ও দুর্নীতির জন্যে শেকলস্বরূপ দেখে থাকে। খুনী, চোর ও অসৎ লোকেরা ন্যায়বিচার ও আইনকে নিজেদের জন্যে শৃঙ্খল হিসেবে গণ্য করে থাকে। ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ এবং ধর্মের ধ্বংস সাধন করার পেছনে এই অবিশ্বাসী লোকটির অজ্ঞতা ও আহাম্মকি সম্পর্কে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। এ লোকটি যা চাচ্ছে তা ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে পৃথকীকরণ নয়, বরং ধর্মের ধ্বংস সাধন। এটা বোধগম্য, রাষ্ট্র ও জাতির প্রগতি জ্ঞান-বিজ্ঞান, কর্ম উদ্যোগ ও নৈতিকতা হতে যে আহাম্মক ব্যক্তিটি আশা করে না, বরং ইসলামের ধ্বংস সাধন করতে চায় যা ওই সকল মাহাত্ম্যের প্রতিনিধিত্ব করে এবং যে নাকি পশ্চিমা দুর্নীতি, অশ্লীলতা ও অহমিকা বোধকে কামনা করে, সে শুধুমাত্র জ্ঞান ও বুদ্ধিশূন্যই নয়, সে নৈতিকতাশূন্যও। আপত্তি-৩ সে বলেছে, “তুষ্ট থাকার ইসলামী দর্শন মানুষের ওপর চাপিয়ে দিয়ে তারা আশা করে যে মানুষেরা নিজেদের অধিকার আদায় সম্পর্কে সচেতন থাকবে না। সমাজতন্ত্রকে প্রতিরোধ করার অজুহাতে তারা মানুষের ধারণকৃত দাসত্ব ও পরকালের ধ্যান-ধারণাগুলো সমর্থন করে। তুষ্ট থাকা শোষণের একটি বাহন ছাড়া আর কিছু নয়। ইসলামের অনুসারীরা এ শোষণকে প্রচার-প্রসার করছে।” জবাব “তুষ্ট থাকার ইসলামী দর্শন” - বাক্যটির মতো এমন উদ্ভট বাক্য খুব কম-ই আছে। আমরা Endless Bliss (অনন্ত কল্যাণ) গ্রন্থে দর্শনের মানে কী তা ব্যাখ্যা করেছি এবং সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি যে দ্বীন ইসলামে কোনো দর্শন থাকতে পারে না। এ ধরনের একটি ভুল বাক্য প্রতিভাত করে, যে ব্যক্তি তা ব্যবহার করে সে ইসলাম ধর্ম অথবা দর্শন সম্পর্কে কিছুই জানে না এবং সে ব্যক্তি অর্থ না জেনেই বহু বাক্য মুখস্থ করে বাক্যসমূহের পাহাড় গড়ে তুলেছে, যাতে সে ইসলামের প্রতি নিজের শত্রুতা বিস্তৃত করতে পারে। বহু শতাব্দী যাবত ইসলামের শত্রুরা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের ছদ্মবেশ ধারণ করে সেই মুখোশের অন্তরালে থেকে ক্ষতি সাধন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে তারা উচ্চপদের সনদ লাভ করে বিভিন্ন পেশা ও শিল্পকলার ছদ্মাবরণে ইসলামকে আক্রমণ করছে। সেই মিথ্যুক লোকেরা যারা মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়ার জন্যে নিজেদেরকে বিজ্ঞানী বলে পরিচয় দেয় এবং নিজেদের অবৈজ্ঞানিক কথাকে জ্ঞান-বিজ্ঞান হিসেবে পেশ করে, তাদেরকে বলা হয় “বিজ্ঞানী ছদ্মবেশধারী ধোকাবাজ।” শুধু ইসলাম নয়, প্রত্যেক জাতির ��ীতিগ্রন্থেই তুষ্ট থাকাকে প্রশংসা করা হয়েছে। এই বিজ্ঞানী ছদ্মবেশধারী ধোকাবাজ লোকটি যা বানিয়ে নিয়েছে তার ঠিক বিপরীত অর্থে, তুষ্ট থাকা হচ্ছে নিজ অধিকার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা, নিজ আয়ের ওপর রাজি থাকা এবং অন্যদের অধিকারে হস্তক্ষেপ না করা। এটা মানুষদেরকে অলস বানিয়ে দেয় না, বরং কাজ করে প্রগতি অর্জনে উৎসাহ যোগায়। এই ধোকাবাজের মিথ্যাচারের ঠিক বিপরীত অর্থে, দ্বীন ইসলাম দাসত্বকে সমর্থন করে না, বরং দাসদের মুক্তির আদেশ দেয়। দাসত্ব ইসলামে নয়, বরং একনায়কতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রে বিরাজমান। আসমানী কেতাবসমূহ এবং আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম যাঁদের অলৌকিক ক্রিয়া (মো’জেযা) পরিদৃষ্ট হয়েছে, তাঁরা পরবর্তী জগতের অস্তিত্ব সম্পর্কে খবর দিয়েছেন; জ্ঞান-বুদ্ধি ও বিজ্ঞান তা অস্বীকার করতে পারবে না। এই বিচ্যুত অজ্ঞ লোকটির কথাবার্তা একদম একগুঁয়ে ও আবেগতাড়িত। সে কোনো কিছুর উদ্ধৃতিও দিচ্ছে না, আবার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তিরও শরণাপন্ন হচ্ছে না। পরকালে বিশ্বাস সমাজ ও রাষ্ট্রে নিয়ম, ন্যায়বিচার, পারস্পরিক সৌহার্দ্য এবং ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। এতে অবিশ্বাস আলস্য, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, অহংবোধ, উচ্ছৃঙ্খলতা, ফিতনা ও শত্রুতার দ্বার উন্মোচিত করে। উপকারী কোনো কিছুতে বিশ্বাস স্থাপন করা সব সময়ই ভালো। ভিত্তিহীন ও ব্যর্থ কোনো জিনিসকে বর্জন করা যুক্তিসঙ্গত এবং প্রয়োজনীয়। ইসলাম শোষণ ও ব্যক্তি অধিকার খর্ব করাকে সমর্থন করে না। যেহেতু শোষণ একটি পাপ, সেহেতু কারো ক্ষতি সাধনকে অনুমোদন করার কোনো অনুমতি-ই নেই। ইসলামে অজ্ঞতা, আলস্য, ব্যক্তি অধিকারকে অবহেলা ও ধোকাপ্রাপ্ত হওয়ার কোনো ওজর নেই; এগুলো দূষণীয় অপরাধ। একটি প্রখ্যাত প্রবাদ বাক্য বিবৃত করে - “যে ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সন্তুষ্ট থাকে, তাকে করুণা করা যায় না।” শোষণ কীভাবে ইসলামে বিরাজ করতে পারে? জ্ঞানী ও বিবেচনাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি কীভাবে এ কথা বলতে পারে? যে অজ্ঞ লোকটি এ কথা বলে, সে কি ব্যক্তি অধিকারকে সমর্থনকারী আয়াতে করীমা ও হাদীস শরীফগুলো শোনে নি? সেগুলো না জানা কিংবা না শোনা তার জন্যে তো ওজর হতে পারে না!
আপত্তি-৪
সে বলেছে, “প্রাচ্য দেশগুলো ধর্ম দ্বারা মাদকাসক্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ঈমান রাখা হলো দাসত্ব।”
জবাব ইতিহাসের যে কোনো পাঠকই সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম’এর মাহাত্ম্য এবং এই তথ্যটি উপলদ্ধি করতে পারবেন যে ইসলাম সক্রিয়, জ্ঞানান্বেষী, ন্যায় ও ইনসাফ-সম্পন্ন এবং সাহসী জাতিসমূহ গঠন করেছে। এর সহস্র উদাহরণ এবং এ বিষয়টি প্রতীয়মানকারী শত-সহস্র বইপত্র প্রকাশ্যে বিদ্যমান। অন্ধ ব্যক্তি সূর্যকে দেখতে না পেলে আফসোস! এটা কি সূর্যের দোষ? শত্রু-মিত্র সকল জ্ঞানী ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তি-ই যেখানে এই মহান ধর্মকে, সভ্যতা ও সুখ-শান্তির এই উৎসকে পুলকিত নেত্রে অবলোকন করছেন, সেখানে একজন অজ্ঞ ও ধোকাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কুৎসা রটনার কী-ই বা মূল্য আছে? কথা ও লেখনী সব সময় ওর কর্তাকে প্রতিফলন করে। বহু মানুষ আছে যারা নিজেদের শত্রুদের ওপর ক্ষেপে গেলে তাদের প্রতি নিজেদের দোষগুলোই চাপিয়ে দেয়। অতএব, একজন হীন প্রকৃতির ব্যক্তির কথাবার্তা তার বক্র চিন্তাধারাকেই প্রতিফলন করে। তার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হলো সেই হীরকখণ্ডের মতো যেটা ধূলোয় পড়ে গিয়েছে। একজন বদমায়েশ লোকের দ্বীন ইসলামকে আক্রমণ করা কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। যা আশ্চর্যজনক তা হলো কিছু লোক এ সব ভিত্তিহীন, উদ্ভট কুৎসাকে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। এ সকল কুৎসা জবাব পাওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। কোনো অন্ধ লোককে সূর্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে বলা কিংবা কোনো অসুস্থ লিভার-সম্পন্ন লোককে চিনির মিষ্টি স্বাদ সম্পর্কে বলা একেবারেই অর্থহীন। শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম্যকে অসুস্থ ও ময়লা আত্মাসমূহের কাছে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এগুলোকে জবাব দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্যদেরকে এ সব কুৎসায় বিশ্বাস করা হতে রক্ষা করা। ওষুধ ব্যবহৃত হয় রোগীকে মৃত্যু হতে রক্ষা করার জন্যে, মৃতকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যে নয়। বিশ্ব সভ্যতাকে আলোকোজ্জ্বল করার ক্ষেত্রে দ্বীন ইসলামের প্রশংসাকারী শত-সহস্র উদ্ধৃতির মাত্র দুইটি আমরা এখানে পেশ করবো। আমরা সেগুলো প্রাচ্য হতে উদ্ধৃত করবো না, যাকে সেই অজ্ঞ ব্যক্তিটি ঘৃণা করে, বরং পাশ্চাত্য হতে উদ্ধৃত করবো যার সে গুণকীর্তন করে। জার্মানীর ধর্মতত্ত্ববিদ ও ইতিহাসবিদ জিন ম্যাখাইম (মৃত্যু: ১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দ) বলেন, “এটা ঐতিহাসিক সত্য যে দশম শতাব্দী হতে ইউরোপে বিস্তার লাভকারী জ্ঞান-বিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, সৌরবিদ্যা ও গণিতশাস্ত্র সবই ইসলামী বিদ্যাপীঠ হতে প্রাপ্ত ছিল। বিশেষ করে আন্দালুসিয়া (স্পেন)-এর মুসলমান সমাজ ছিলেন ইউরোপের শিক্ষক। আন্দালুসিয়াকে দখল করার জন্যে রোমান ও গথ (ফ্রান্স, জার্মানী ইত্যাদি এলাকার আদিবাসী)-রা দুইটি শতাব্দী যাবৎ চেষ্টা করেছিল, কিন্তু মুসলমানবৃন্দ মাত্র বিশ বছরে তা দখল করে নিয়েছিলেন। পীরানিজ পর্বতমালা অতিক্রম করে তাঁরা ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলেন। জ্ঞান, বুদ্ধি ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠত্ব তাঁদের বাহুবলের চেয়ে কম ছিল না।” লর্ড ড্যাভেনপোর্ট বলেন, “আজকের ইউরোপ মুসলমানদের কাছে ঋণী। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেছেন - ঐকান্তিকতা, সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব ধন-সম্পদ দ্বারা পরিমাপ করা হয় ��া, বরং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারাই বিচার করা হয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ শাসিত হয়েছে সবচেয়ে দৃঢ় হস্তে। তিনটি মহাদেশ জুড়ে মুসলমানদের বিস্তৃতি ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানিত বিজয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।” দ্বীনী জ্ঞানে অজ্ঞ ব্যক্তিটি যখন তার মানসিক বিকৃতির কারণে লিখেছে যে প্রাচ্য মাদকাসক্ত হয়ে ধর্মের মধ্যে বুঁদ হয়ে আছে, ঠিক তারই বিপরীতে বৃটিশ লর্ড ড্যাভেনপোর্টের মতো নিরপেক্ষ লেখকবৃন্দ তখন তাঁদের বিবেক সহকারে লিখেছেন: “আন্দালুসিয়ার মুসলমান সমাজ যখন পশ্চিমে (পাশ্চাত্যে) জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো বিচ্ছুরণ করছিলেন, তখন প্রাচ্যে মাহমুদ গযনবী জ্ঞান ও প্রজ্ঞা প্রসার করছিলেন এবং তাঁর দেশটি বিজ্ঞানীদের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। উক্ত ইসলামী শাসক উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিলেন এবং তাঁর আহরিত সম্পদসমূহ ভালো কাজ ও দেশের অগ্রগতি-প্রগতি ও উন্নতির জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল। প্রাচ্যে যখন এ রকম কল্যাণ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটছিল, ঠিক তখনি ফ্রান্সের লুই-৭ ‘ভিত্রি’ নামের শহরটি দখল করে নে��� এবং তা জ্বালিয়ে দেন, আর তেরো’শ মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারেন। সেই দিনগুলোতে গৃহযুদ্ধসমূহ ইংল্যান্ডে হত্যাযজ্ঞের দ্বার উন্মোচিত করতো; ইংল্যান্ড তখনো চাষাবাদযোগ্য ছিল না, ফলে সব উন্নতি ব্যাহত হয়েছিল। চতুর্দশ শতাব্দীতে ইঙ্গ-ফরাসী দ্বন্দ্ব-সংঘাত এতো বেদনাক্লিষ্ট, এতো প্রলয়ঙ্কর ছিল যে ইতিহাস অনুরূপ কোনো কিছু আর প্রত্যক্ষ করে নি। কিন্তু প্রাচ্যের মুসলমান দেশগুলোতে ফিরোজ শাহ্ তুঘলক যিনি ১৩৫১ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লীর মসনদে আরোহণ করেন, তিনি ৭৯০ হিজরীতে তাঁর ইন্তেকালের সময় অবধি পঞ্চাশটি খাল ও বাঁধ, চল্লিশটি মসজিদ, ত্রিশটি স্কুল, এক’শটি গণ-আবাস, এক’শটি হাসপাতাল, এক’শটি গণ-স্নানাগার এবং এক’শ পঞ্চাশটি সেতু নির্মাণ করেছিলেন। ভারতের শাহ্ জাহানের শাসনামলে কল্যাণ ও সুখ-সমৃদ্ধি বিরাজ করছিল। আলী মুরাদ খাঁন নামের একজন প্রকৌশলীর মাধ্যমে তিনি দিল্লীর খাল নির্মাণ করেছিলেন। শহরের সকল অংশেই মার্বেল পাথরের ফোয়ারা ও মার্বেলের গণ-স্নানাগার নির্মিত হয়েছিল। প্রত্যেকটি ঘরেই পানির সরবরাহ ছিল। রাষ্ট্রটি নিরাপদ ছিল।” (লর্ড ড্যাভেনপোর্ট) আপত্তি-৫ সে বলেছে, “ধর্ম হলো অদৃষ্টবাদ ও তুষ্ট থাকার একটি প্রকাশ মাধ্যম। এটা পরবর্তী জগতের একটি ধ্যান-ধারণা যা নির্যাতিত ও ক্ষুধার্তদের অবশ করে দেয়। এটা শিক্ষা দেয় যে পরবর্তী জগতে পরিত্রাণ লাভ করার জন্যে এ পৃথিবীতে কোনো কিছুর আকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিৎ নয়। বেঁচে থাকার আনন্দ ও প্রয়োজনীয়তা অদৃষ্টবাদ ও তুষ্ট থাকার মতবাদকে চুরমার করে দিয়েছে এবং ভালোভাবে ও বেশি পরিমাণে আয়-রোজগার করার সংগ্রামের জন্ম দিয়েছে। জীর্ণ-শীর্ণ প্রথা ও সংস্কারের ওপর নির্ভরশীল নিয়ম-বিধানের বিরোধিতা যারা করে, তাদেরকে ধর্ম ভয় পায়। ধর্মের মাদক মানুষকে গুরুত্বহীন, দাস ও নিষ্প্রাণ করে দেয়।” জবাব
এ ধরনের মিথ্যা ও জঘন্য কুৎসা জবাব পাওয়ার যোগ্যতাও রাখে না। কেননা, কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি যিনি সত্য সম্পর্কে জ্ঞাত, তিনি এতে বিশ্বাসই করবেন না। যদিও ইসলামের শত্রুরা জ্ঞানী নয়, তবু তারা চালাক; আর যুব সম্প্রদায়কে ধোকা দেয়ার জন্যে তারা অর্থহীন বিষয়গুলোতে অপতৎপর হয়ে পড়ে এবং যুব সম্প্রদায়কে নফস্ তথা প্রবৃত্তির জন্যে আনন্দদায়ক মাদক সরবরাহ করে, যার দরুন যুব সম্প্রদায় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা হতে বঞ্চিত হয়। নিরীহ, নিরপরাধ যুব সম্প্রদায়কে এ সকল মিথ্যায় বিশ্বাস করে দুর্দশাগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষাকল্পে এখানে সংক্ষেপে সত্য কথাগুলো লিপিবদ্ধ করা সঙ্গতিপূর্ণ। যে সৌভাগ্যবান যুবক আমাদের প্রকাশিত “অনন্ত কল্যাণ” (Endless Bliss) গ্রন্থটি পাঠ করেছেন, তিনি সঠিক ও যথাযথভাবে ইসলাম শিক্ষা করতে পারবেন। তিনি কোনো কুৎসায় বিশ্বাস করবেন না। কেননা, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিক্ষিত ও জ্ঞানী হতে বলেছেন। তিনি এরশাদ ফরমান,
“যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে, সে মুসলমান হয়ে যায়। যে ব্যক্তি অজ্ঞ থাকে, সে দ্বীনের শত্রুদের ধোকায় পড়ে যায়” (আল্ হাদীস)।
এ কথা সত্য যে দ্বীন হলো তাকদীর (অদৃষ্ট) ও তুষ্ট থাকায় দৃঢ় বিশ্বাস। কিন্তু তাকদীর মানে কর্মবিমুখ হওয়া কিংবা উন্নতি কামনা না করা নয়, যা এ অজ্ঞ লোকটি ধারণা করে নিয়েছে। “কদর” (অদৃষ্ট) মানে হলো আল্লাহতা’লা পূর্বাহ্নেই মানুষেরা কী করবে না করবে তা জানেন। আল্লাহ্ তা’লা মানুষদেরকে কাজ করতে আদেশ করেছেন। তিনি কর্ম সংঘটনকারীদের প্রশংসাও করেছেন। সুরা নিসার ৯৪ আয়াতে তিনি এরশাদ ফরমান,
فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنْفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً
“যারা জেহাদ, কর্ম সংঘটন ও সংগ্রাম করে তারা সেই সব বসে থাকা এবাদতকারী হতে বহু উত্তম ও মূল্যবান যারা জেহাদ পালন করে না” ।[২] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
ان الله يحب أن تعمل برخصه
“আল্লাহ্ তা’লা খেটে খাওয়া উপার্জনকারীদেরকে পছন্দ করেন” ।[৩]
ইতিহাসের শিক্ষা ও “অনন্ত কল্যাণ” (Endless Bliss) গ্রন্থের “উপার্জন ও ব্যবসা” শীর্ষক অধ্যায় হতে এটা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে দ্বীন ইসলাম কাজ করে উপার্জন করার ধর্ম। প্রত্যেক দিন কাজ করে উন্নতি ও অগ্রগতি-প্রগতি অর্জনের জন্যে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
“যে ব্যক্তি পরপর দুই দিন একই অবস্থায় থেকে যায় কিংবা প্রগতি অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, সে নিজেকেই ধোকা দেয়” (আল্ হাদীস)।
তিনি অন্যত্র এরশাদ করেন,
لاَ تُؤَخِّر عَمْلَ الْيَوْمِ لِغَدٍ.
“তোমরা আগামীদিনের জন্যে তোমাদের কাজকে ফেলে রেখো না।[৪] তাহলে তোমরা বিলুপ্ত হবে” ।
হুজূর সৈয়্যদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ ফরমান –
“বিদেশী ভাষা শিক্ষা করো। এতে তোমরা শত্রুদের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে” (আল্ হাদীস)।
পরবর্তী জগতে সুখ-শান্তির চিন্তা কর্ম উদ্যোগকে বাধা দেয় বলাটা অন্যায় ও নিচু মানসিকতা। “যে ব্যক্তি কাজ করে উপার্জন করে, সে পুনরুত্থান দিবসে পূর্ণ চন্দ্রের মতো জ্যোতির্ময় হবে;” “আলেমের ঘুম এবাদত;” “যা হালাল (বৈধ) তা উপার্জন করো এবং তা উপকারার্থে ব্যয় করো;” “দ্বীনী ভাইকে অর্থ কর্জ দানকারী মুসলমানের গুণাহ্সমূহ মাফ করা হবে;” “প্রত্যেক বস্তু অর্জনের একেকটি পদ্ধতি বা পন্থা বিরাজমান, বেহেস্তের পন্থা হলো জ্ঞান”- এই হাদীসগুলো আমাদেরকে কাজ করে উপার্জন করতে আদেশ দেয় এবং ব্যক্ত করে যে পৃথিবীতে যারা তা ব্যয় করে, তারা পরকালে সুখ-শান্তি অর্জন করতে সক্ষম হবে। অথচ অজ্ঞ ব্যক্তিটি বলেছে, “ধর্ম মানুষকে বিদ্রোহ করা হতে বিরত রাখে; অতএব তা মাদক।” তার এ আহাম্মকিপূর্ণ কথাটি প্রতিভাত করে যে সে দ্বীন ও সভ্যতা সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। এটা নিশ্চিত যে এ কথাটি জ্ঞান কিংবা গবেষণার ফসল নয়। বস্তুতঃ এ ধরনের কথাবার্তাই হলো শোষণ যা সমাজতন্ত্রীমনা প্রভুদের তুষ্টি অর্জনের জন্যে তৈরি করা হয়েছে; যাতে ধর্মের বিরুদ্ধে শত্রুতা করে একটা রাষ্ট্রীয় পদ অজর্ন করা সম্ভব হয়। যারা পার্থিব স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে ঈমান বিসর্জন দেয় এবং ভ্রান্তি ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তাদেরকে “ধর্মের প্রতারক” বলা হয়। তাদের প্রভুরা, যাদেরকে তারা তোয়াজ করছে, তারা অন্যান্য নশ্বর জীবের মতোই উচ্চপদ হতে পতিত হয়েছে। এ সকল ‘প্রভু’ মহান আল্লাহতা’লার ন্যায়বিচার ও ইনসাফপূর্ণ সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হয়ে চির আযাবের মধ্যে পতিত হয়েছে। অথচ তারা আল্লাহতা’লাকেই অবিশ্বাস ও তাঁর প্রতি একগুঁয়ে বিরোধিতা করেছিল। তাদের চামচা গং তাদেরকে ভুলে গিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্যান্য দলে ভিড়ে গিয়েছে এবং অন্যান্য নশ্বর জীবের মোসাহেবী আরম্ভ করেছে। আপত্তি-৬
সে বলেছে, “আরব দেশগুলো - যেখানে মরুভূমির আইন–কানুন প্রভাব ও প্রতিপত্তিশালী, সেখানেই তারা বস্তুবাদ ও বস্তুবাদী দর্শনকে আক্রমণ তথা বিষোদগার করছে।”
জবাব
ইতিপূবে ইসলামের শত্রুরা তাসাউফের মহান ইমামদের কিছু কথা তোতা পাখির মতো মুখস্থ করে সেগুলোর অর্থ না বুঝেই যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে আহলে তরীকত (তরীকাপন্থী) হওয়ার ভান করতো এবং যুব সম্প্রদায়কে ফাঁদে ফেলতো। কিন্তু ইদানীং তারা পশ্চিমা বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের কিছু কথা মুখস্থ করে নিজেদের প্রভুদের ওভারকোট বহন ও মদের পাত্র পূর্ণ করে দিয়ে সার্টিফিকেট এবং উচ্চপদ হাসিল করছে। জ্ঞানী ও সংস্কৃতিবান ব্যক্তি হওয়ার ভান করে তারা তাদের মুখস্থ কথাগুলোর মধ্যে ইসলামের প্রতি ��ুশমনিমূলক কথাবার্তা সন্নিবেশিত করছে এবং তা যুব সম্প্রদায়ের কাছে পেশ করছে। এভাবে তারা ম্যাসন (মোনাফেক) ও সমাজতন্ত্রীদের আকর্ষণীয় খাদ্য মুসলমান ঘরের সন্তানদেরকে প্রদর্শন করে তাদেরকে ধোকা দেয়ার অপচেষ্টায় রত।
জ্ঞান-বিজ্ঞানশূন্য যে সব নিকৃষ্ট লোক অবৈধ পন্থায় সার্টিফিকেট হাতিয়ে নিয়েছে এবং “বিজ্ঞানীর মুখোশ” পরে দ্বীন ইসলামকে আক্রমণ করছে তাদেরকে “বিজ্ঞানীর ছদ্মবেশধারী ধোকাবাজ” বলা হয়। একবার এ ধরনের এক ভুয়া বিজ্ঞানী তার সন্দেহজনক সনদের জোরে একটি জেলার কর্তাব্যক্তি হয়ে গিয়েছিল। সে যখন দেখতে পেল যে মানুষরা তাকে কর্তৃত্বসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করছে না, তখন সে একটি সভার আয়োজন করে গ্রামবাসী ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদেরকে জড়ো করে “বস্তুবাদী দর্শন,” “আধুনিক,” “সভ্য-সংস্কৃতিবান ব্যক্তিবর্গ” ইত্যাদি ধরনের কথা উদগীরণ করতে থাকে। ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের প্রতি সবাইকে সম্মান প্রদর্শন করতে দেখে এবং তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করতে দেখে সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে তার বদ চরিত্র ও বদ চিন্তাধারাকে প্রতিফলনকারী অনেক জঘন্য বাক্য উচ্চারণ করে। ইত্যবসরে ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদেরকে ইশারা করে সে বলে, “যে ব্যক্তি ইউরোপে যায় নি, সে একটা গাধা”। মুফতী আফেন্দী অতঃপর বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার শ্রদ্ধেয় পিতা কি তাঁর উপস্থিতি দ্বারা কখনো ইউরোপকে ধন্য করেছেন?” যখন সেই ভুয়া বিজ্ঞানী ঝাঁঝালো কণ্ঠে “না” বলতে বাধ্য হলো, তখন মুফতী আফেন্দী সমাপ্তি টানলেন - “তাহলে আপনার মতো মহান ব্যক্তিত্বও গাধা আপনার-ই পিতার উত্তরাধিকারসূত্রে”। ফলে ভুয়া বিজ্ঞানী নিজের ফাঁদে নিজেই পতিত হলো। নিজেদেরকে “প্রগতিবাদী,” “সভ্য ও সংস্কৃতিবান” দাবিদার অজ্ঞ-মূর্খ ও বেওকুফ ব্যক্তিবর্গ যারা ইসলামী জ্ঞান বিশারদদের মাহাত্ম্য সম্পর্কে কিংবা বিশ্বব্যাপী গ্রন্থাগারসমূহকে পূর্ণতা দানকারী ইসলামী সভ্যতার খ্যাতি ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে ওয়াকেফহাল নয়, তারা ইসলামের সুরক্ষিত দুর্গে এভাবে যুগে যুগে খেলনা পিস্তল নিয়ে আক্রমণ করেছে এবং ফলশ্রুতিতে নিজেরাই অপদস্থ হয়েছে।
আপত্তি-৭
সে বলেছে, “যারা অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে তারা এক মুঠো ভাত ও একটি মোটা কাপড়ের অদৃষ্টবাদে তুষ্ট থাকার কথাটির পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেছে, যার দরুন প্রতিভাত হয়েছে যে ধর্মের প্রভাব মাদকের মতোই। অথচ সভ্যতার মানে হলো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষী হওয়া এবং এরই জন্যে সংগ্রাম করা। কিন্তু সমাজের উন্নতি ও প্রগতির জন্যে এ সব আন্দোলনকে ধর্ম স্তব্ধ ও অবশ করে দিয়েছ�� তার অদৃষ্টে তুষ্ট থাকা, পরবর্তী জগৎ এবং আধ্যাত্মিকতার ধ্যান-ধারণা পেশ করে।” জবাব
আমাদের পূর্ববর্তী জবাবে চিত্রিত চামচাগিরির আরেকটি উজ্জ্বল চিত্র হলো উপরোক্ত কথাগুলো! এটা বলা কতো বড় মিথ্যা যে ইসলামের যোদ্ধাবৃন্দ, যাঁরা মাত্র বিশ বছরে তিনটি মহাদেশে বিস্তৃত হয়েছিলেন, যাঁরা পারস্য ও রোমের বিশাল সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং যাঁরা নিজেদের ন্যায়পরায়ণতা ও উন্নত নৈতিকতার সৌন্দর্য দ্বারা প্রত্যেক জাতিরই মন জয় করেছিলেন, তাঁরা নাকি মাদকাসক্ত ও অথর্ব জাতি ছিলেন! যাঁরা ইতিহাসের ন্যূনতম জ্ঞান রাখেন, তাঁরা এই জঘন্য কুৎসা রটনায় বিরক্ত হতে বাধ্য হবেন। ইসলাম মানুষদেরকে কাজ করে উন্নতি করতে আদেশ করে এবং সেই সব ব্যক্তিদের প্রতি জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয় যারা উপার্জন করে গরিবদেরকে সাহায্য করেন। যদি এই লেখক ইসলামী শিল্পকলা দেখতে পেতো যা দেখে ইউরোপীয় ও মার্কিনীরা মুগ্ধ হয় এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলমানদের সাফল্য ও কৃতিত্ব দেখে প্রশংসা করে প্রবন্ধ লিখে, তাহলে সে হয়তো এ সব কথা লিখতে লজ্জাবোধ করতো। আমরা “হয়তো” লিখছি এ কারণে যে লজ্জাবোধ একট সৎগুণ। একজন অসৎ ব্যক্তির কাছ থেকে লজ্জাবোধ আশা করা অযৌক্তিক বৈ কী! ইসলাম মুসলমানদেরকে কাজ করে উপার্জন করতে আদেশ করে। তুষ্ট থাকার মানে এই নয় যে একটি মোটা কাপড়ে তুষ্ট থাকতে হবে এবং অলস বসে থাকতে হবে। মুসলমানরা মোটেও এ রকম নয়। তুষ্ট থাকার অর্থ হলো নিজের উপার্জনের প্রতি তুষ্ট থাকা এবং অন্যদের আয়-উপার্জনের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি নিবদ্ধ না করা। ইসলামই ইউরোপে সভ্যতাকে বহন করে নিয়ে গিয়েছিল, কেননা ইসলাম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিক-নির্দেশনা দেয় এবং মানুষদেরকে তা অর্জন করার জন্যে আদেশ করে। নিম্নোক্ত হাদীসগুলো এবং আরো বহু হাদীস শরীফ পরিস্ফুট করে যে উপরোক্ত আপত্তিটি জঘন্য বানোয়াট কুৎসা ছাড়া আর কিছু নয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান –
“তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ তারাই যারা মানুষের জন্যে উপকারী (অর্থাৎ কল্যাণকারী)”;
“সেরা দান হলো সাদাকা;”
خَيْرُكُمْ مَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ
“তোমাদের মধ্যে সেরা হলো সেই ব্যক্তি, যিনি মানুষদেরকে খাদ্য সরবরাহ করেন”। [৫]
“তোমাদের মধ্যে সেরা সেই ব্যক্তি যিনি অন্যদের কাছ থেকে আশা না করে নিজে কাজ করে উপার্জন করে থাকেন।” (সংকলিত
আপত্তি-৮ সে বলেছে, “ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে একটি সার্বিক (common) সভ্যতায় পৌঁছুনোর সকল প্রচেষ্টা বিঘ্নিত হয়েছে ধর্মের সর্বগ্রাসী শক্তি দ্বারা। ধর্মের সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ব যা বিপ্লবের প্রতিবন্ধক, তাকে ধ্বংস করতে হবে।” জবাব এই ভুয়া বিজ্ঞানী বার বার ”সভ্যতা” শব্দটি উচ্চারণ করছে এবং এই যাদুকরী শব্দটি দ্বারা তরুণ মস্তিষ্ককে মোহাবিষ্ট করতে চাচ্ছে। সে মনে করছে যে ভারী শিল্প-কারখানা স্থাপন করা ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং পরমাণু-চালিত কারখানা তৈরি করা এবং এগুলোকে অবৈধ যৌনাচার, নারী-সম্ভোগ, বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের মাধ্যমে আভিজাত্য অর্জন, মিথ্যা কথন, প্রতারণা, শ্রমজীবী শ্রেণীর ঘাড়ে ভর করে ইদ্রিয় কামনাসমূহকে চরিতার্থকরণ ইত্যাদি অপকর্মে ব্যবহার করাই বুঝি সভ্যতা। ইসলামী জ্ঞান বিশারদবৃন্দ যে সভ্যতা অর্জনের জন্যে আদেশ করেছেন, তা হলো “তা’মির-এ বিলাদ ওয়া তারফিহ-এ এ’বাদ।” অর্থাৎ, দেশগুলোকে ইমারত নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ও কারখানা তৈরি করে উন্নত করা এবং প্রযুক্তি ও সকল প্রকার রাজস্বকে মানুষের মুক্তি, কল্যাণ ও সুখ-শান্তির জন্যে ব্যবহার করা। বিংশ শতাব্দীর এ সন্ধিক্ষণে সভ্যতার এই দুইটি দিকের মাত্র একটাই বর্তমানে বিরাজ করছে। যদিও প্রযুক্তির উন্নতি এক্ষণে চোখ ধাঁধাঁনো, তবুও অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নতি দ্বারা আজকাল মানুষকে দাস বানানোর এবং অত্যাচার-নিপীড়ন করার জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। সমাজতান্ত্রিক ও একনায়কতান্ত্রিক দেশগুলো এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিংশ শতাব্দী হলো প্রযুক্তির শতাব্দী। কিন্তু এটা সভ্যতার শতাব্দী হওয়া থেকে যোজন যোজন দূরে। সমাজতন্ত্রী লেখকটি ধর্মকে বিলোপ সাধনের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থকরণে বেশ বাস্তবপন্থী। কেননা, দ্বীন-ইসলাম দুর্নীতি, অসততা, শোষণ, কপটতা, একনায়কতন্ত্র, গীবত (পরচর্চা)-সহ সকল মানবতা-বিধ্বংসী বদ-আচরণকে নিষেধ করে । একজন অসৎ চরিত্রের ব্যক্তি কখনোই ভালো কোনো কিছুকে সাদরে গ্রহণ করে না। ইসলামের গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিকে নিচু মনের বদমায়েশ লোকেরা তাই ভয় করে থাকে। ইসলামকে সভ্যতার জন্যে কয়েদখানাস্বরূপ হেয় প্রতিপন্ন করার অসৎ উদ্দেশ্যে এই পাপাত্মা ব্যক্তিটি ইতিহাসকে মিথ্যা সাক্ষী হিসেবে পেশ করেছে। যদি ইতিহাস সম্পর্কে তার ন্যূনতম জ্ঞান থাকতো, তাহলেও সে এমনটি করতে কুণ্ঠিত হতো। এমন কি অমুসলিম ইতিহাসবিদরাও এ সত্যটি স্বীকার করেন যে দ্বীন ইসলাম সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছে এবং ইউরোপ ও আমেরিকায় অগ্রগতি-প্রগতি ও উন্নতি সাধন করেছে। এটা উপলব্ধি করা যায় যে এই অজ্ঞ ও ভুয়া বিজ্ঞানী নিজে থেকে এ সব মিথ্যা বানিয়ে নেয়ার মতো চালাক অথবা বুদ্ধিমান নয়। ইউরোপে খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত ন্যায্য আক্রমণসমূহ উদ্ধৃত করে সে দ্বীন ইসলামকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছে। কিন্তু যেহেতু সে ভ্রান্ত এবং যেহেতু তার জ্ঞান-বুদ্ধি ও উপলব্ধি ক্ষমতা কম, সেহেতু সে এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। খৃষ্টবাদ সম্পর্কে যারা বিরূপ, তাদের দ্বারা খৃষ্ট মতবাদকে আক্রমণ করার হেতু সবার কাছে জ্ঞাত করা এ প্রসঙ্গে যথাযথ হবে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ওই সব অভিযোগ যে অন্তঃসারশূন্য তা ব্যাখ্যা করাও প্রাসঙ্গিক হবে। রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের রাজত্বকালে ঐশীমূল্য হারানো খৃষ্টধর্ম পরবর্তীকালে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। অ-খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে পাদ্রী-পুরোহিতবর্গ অসংখ্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূত্রপাত করেন। তারা সবাইকে জোর করে খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত করেন। মার্টিন লুথার এই ধর্মান্ধ অভিযানে মাত্রা ছাড়িয়ে যান। তিনি প্রটে��্টান্ট নয় এমন ধর্ম ও জাতির প্রতি চরম বৈরীভাবাপন্ন ছিলেন। অপর পক্ষে, মিশনারী সংস্থাগুলো চিন্তা-চেতনাকে বিভ্রান্ত করতে চেষ্টা করে, বিবেকসমূহকে বিপথগামী করে এবং প্রতি দিন নিত্যনতুন প্রবন্ধ লিখে খৃষ্ট মতবাদ প্রচার করতে থাকে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এ সব খৃষ্টান আক্রমণ, যা কখনো রক্তে রঞ্জিত, কখনো বা প্রতারণায় পরিপূর্ণ ছিল, তা অষ্টাদশ শতকের ইউরোপে খৃষ্টান মতবাদবিরোধী একটি বিদ্বেষের জন্ম দেয়। ব্যাপক লেখনীর মাধ্যমে প্রচার শুরু হয় এ মর্মে যে পাদ্রী-পুরোহিতবর্গ মানুষদেরকে ধোকা দিচ্ছেন, কুসংস্কার ও নিজেদের ধ্যান-ধারণায় পিঞ্জরাবদ্ধ করতে তাদেরকে বাধ্য করছেন। কিন্তু এ শত্রুতা কেবলমাত্র খৃষ্টবাদের বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ রইলো না। এমন কিছু ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটলো যারা সকল ধর্মকেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করলো। পাদ্রী-পুরোহিতদের বদমায়েশীর উৎস যে ধর্মের বিকৃতি ও পরিবর্তন, তা না দেখেই তারা ধারণা করে নিয়েছিল যে এগুলো বুঝি ধর্ম হতেই নিঃসৃত। ধর্মসমূহ সম্পর্কে অধ্যয়ন না করেই খৃষ্টবাদের অপকারিতাসমূহকে তারা ধর্মের প্রতি আরোপ করে এবং ধর্মসমূহকে আক্রমণ করতে শুরু করে দেয়। ধর্মের প্রতি শত্রুতা পোষণকারীদের মধ্যে সীমা লঙ্ঘনকারীদের একজন হলেন ভলটেয়ার (ফরাসী দার্শনিক)। লুথারের মতো তিনিও দ্বীন ইসলামের কুৎসা রটনা করেন এবং লুথার যেভাবে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন, তিনিও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে সে রকম মনে করে তাঁর কুৎসা রটনা করেন। ইসলামকে অধ্যয়ন না করেই এঁরা খৃষ্টানদের মতো ধর্মকে আক্রমণ করেন। ঊনিশ শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো জার্মান চিন্তাবিদ ভন হার্ডার বলেন যে ধর্মসমূহের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ হলো জোরপূর্বক খৃষ্টান বানানোর মতোই মস্ত বড় ভুল। তিনি ধর্মসমূহ, বিশেষ করে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়ন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। অতঃপর ইউরোপবাসী জনগণ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন সম্পর্কে বুঝতে আরম্ভ করেন, দ্বীন ইসলাম-প্রদর্শিত আলোকোজ্জ্বল পথের মাহাত্ম্য দর্শন করে বিস্ময়াভিভূত হয়ে যান। বৃটিশ চিন্তাবিদদের অন্যতম থমাস্ কারলাইল তাঁর প্রণীত The Heroes (মহানায়কবৃন্দ) গ্রন্থের A Hero Who is the Prophet শীর্ষক অধ্যায়ে হুজূর পূর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন, নৈতিক গুণাবলী ও সাফল্য সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এ গ্রন্থটি তিনি ১৮৪১ সালে রচনা করেন। এতে তিনি লিখেছেন, “বারোটি শতাব্দী যাবৎ যে মহান ব্যক্তিত্ব লক্ষ লক্ষ মানুষকে দিক-নির্দেশনা দিয়ে আসছেন এবং যিনি প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে সভ্যতার রাষ্ট্রসমূহ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তিনি লুথার ও ভলটেয়ারের অভিযোগকৃত ভণ্ড হতে পারেন না। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)’এর অর্জিত সাফল্য ও কৃতিত্ব একজন নিচু প্রকৃতির লোক কখনোই অর্জন করতে সক্ষম হবে না। কেবলমাত্র একজন পূর্ণতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব যিনি বিশ্বাস ও নৈতিকতার অধিকারী, তিনি-ই অন্যদের বিশ্বাস দান করতে পারেন। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহান জাতিসমূহের জন্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যদি তা না হতো, তবে কেউই তাঁকে অনুসরণ করতো না। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথাবার্তা সত্য, কেননা একজন মিথ্যুক কখনোই একটি ঘর প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম নয়, ধর্ম তো দূরে থাক!” (কারলাইল) থমাস কারলাইলের জমানায় ইউরোপে কোনো সঠিক ও নির্ভুল ইসলামী গ্রন্থ বিরাজমান ছিল না। কিন্তু তাঁর বিচক্ষণ দৃষ্টি ও বহু বছরের অধ্যয়নের সাহায্যে তিনি খৃষ্টান ও দ্বীনের শত্রুদের বানানো মিথ্যাসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করেন নি এবং ঐতিহাসিক সত্যকে দর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজকে ইউরোপীয় ও আমেরিকান ভাষাসমূহে বহু ইসলামী বইপত্র অনূদিত হওয়ায় কারলাইলের ঐতিহাসিক লেখনীসমূহের প্রতি যে সন্দেহ ও ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিল তা কেটে যাচ্ছে। যদি লুথারের রচিত কুরআন মজীদ-বিরোধী প্রবন্ধাবলী ও হযরত রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে বানানো ভলটেয়ারের কল্পকাহিনীকে কারলাইল কৃত A Hero Who is the Prophet (মহানায়ক যিনি নবী) শীর্ষক প্রবন্ধের সাথে তুলনা করা হয়, তবে সবার কাছে ভালোভাবে জ্ঞাত হবে যে ধর্মান্ধ খৃষ্টান ও দ্বীনের শত্রুদের চেয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের ব্যক্তিবর্গ কতোটুকু ভিন্ন দৃষ্টিতে দ্বীন ইসলামকে মূল্যায়ন করে থাকেন। কারলাইলের পরে বৃটিশ লর্ড ড্যাভেনপোর্ট হযরত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ও নৈতিকতার মাধূর্য সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং ব্যক্ত করেছেন যে কুরআন মজীদই মানুষদেরকে সুখ-শান্তির পথপ্রদর্শনকারী জ্ঞানের উৎস। তিনি হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ও কুরআন মজীদের কুৎসা রটনাকারীদের প্রতি উপযুক্ত জবাবও লিপিবদ্ধ করেছেন। এটা পরিদৃষ্ট হচ্ছে যে ইসলামের শত্রুরা আজকাল দ্বীনের প্রতি কুৎসার দাবানল ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে তিনটি উৎস হতে সাহায্য পাচ্ছে: (১) খৃষ্টান মিশনারী, (২) ভলটেয়ারের মতো লোকেরা যারা ধর্মকে অন্ধভাবে আক্রমণ করে থাকে এবং (৩) সমাজতন্ত্রী গোষ্ঠী যারা সকল ধরনের সত্য ও সততাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গণমানুষকে জন্তু-জানোয়ারের মতো এবং যন্ত্রের মতো ব্যবহার করে থাকে। আপত্তি-৯ সে বলেছে, “ধর্ম মানুষকে বুঝ দেবার জন্যে; অর্থাৎ, তুষ্ট থেকে দুঃখ-কষ্ট ও বৈষম্যকে স্বীকার করে নেয় ধর্ম। এটা সমাজে বিদ্যমান সীমা নির্ধারণ করে দেয়। এটা সেই উন্নত জীবন অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যা শ্রেণী বৈষম্য ও শোষণ নির্মূল করে। এ সকল নিপীড়ন দোযখের ভয় দেখিয়ে করা হয়েছে। যারা এর শিকার হয়েছে, তাদেরকে বেহেস্তের সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে। এটা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ধ্বংস করে দেয়। জবাব সে মুসলমান সন্তানদেরকে সেই বিষ দ্বারা ধ্বংস করতে চাচ্ছে যা সে ওই তিনটি উৎস হতে প্রাপ্ত হয়েছে। কিন্তু সে এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। আজকাল যুব সম্প্রদায় ইসলামী বইপত্র পাঠ করে নিজেদের ঈমান-আকীদা সঠিকভাবে শিক্ষা করছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন –
“যে মুসলমান ব্যক্তি পরপর দুই দিন একই রুজীতে সীমাবদ্ধ থাকে, সে নিশ্চয় ক্ষতিগ্রস্ত। একজন মুসলমানকে প্রতিদিনই উন্নতি করতে হবে” (আল্ হাদীস)।
যে বিচক্ষণ ও জ্ঞানী যুবকটি হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর “অগ্রসর হও” শীর্ষক আদেশটি এবং উপরোক্��� হাদীসের আদেশটি যত্ন সহকারে পাঠ করেছে, সে কখনোই “প্রগতিবাদী” দাবিদার অজ্ঞ ব্যক্তিটির মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করবে না। দ্বীন ইসলাম বৈষম্য ও বে-ইনসাফী অনুমোদন করে না, বরং ন্যায়বিচার ও বৈষম্যের মূলোৎপাটনকে আদেশ করে। “আমি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকের সময় এসেছি”- হাদীসটি ঐশী গ্রন্থবিহীন অবিশ্বাসীদের ন্যায়বিচারকেরও প্রশংসা করেছে। ইমাম মানাবী ও ইমাম দায়লামী বর্ণিত একটি হাদীস শরীফে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
“বেহেস্তে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবে ন্যায়পরায়ণ বিচারক ও শাসকবৃন্দ” (আল্ হাদীস)।
এ হাদীসটি কি দুঃখ-কষ্ট, বৈষম্য ও বে-ইনসাফী মেনে নিতে আদেশ করেছে? নাকি এটা এগুলোকে পরিহার করতে পরামর্শ দিয়েছে? আমাদের পাঠকমণ্ডলীর বিবেকের কাছে এর সঠিক উত্তর অবশ্যই পাওয়া যাবে। তবে এতে পরিস্ফুট হচ্ছে কতটুকু বিচ্যুত হয়েছে এই অজ্ঞ লেখকটি এবং তারই সেবাপ্রাপ্ত চক্রটি। দ্বীন ইসলাম যাকাত ও ধার দেয়াকে এবং পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতাকে আদেশ করেছে। এটা জ্ঞাত করেছে, যারা এ সব আদেশ মান্য করবে যা সমাজে শ্রেণী বৈষম্য দূর করে, তারাই বেহেস্তী হবে। যারা দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে তারা নয়, বরং যারা দুঃখ-কষ্টের বিধায়ক খোদা তা’লার কাছে আত্মসমর্পণ করে, তারাই বেহেস্তী হবে। ইসলাম হলো একটি প্রগতিশীল, গঠনতান্ত্রিক ধর্ম। ইসলাম “বিদ্যমান সীমা” নির্ধারণ করে দেয় নি, বরং রাষ্ট্রবিদদেরকে সমসাময়িক কালের বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, কৃষি, সমর প্রযুক্তি এবং প্রগতি অর্জনকারী সকল ধরনের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ব্যবহার করতে স্বাধীনতা দিয়েছে। আল্লাহতা’লা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক জ্ঞানী সৃষ্টি হযরত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কেও বলেছেন,
وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ
সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করুন!”[৬]
ইসলামের প্রত্যেক খলীফা-ই জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত পরামর্শক সভার শরণাপন্ন হতেন। পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছু করাই তাঁদের অনুসৃত পন্থা ছিল না। এবাদতের ক্ষেত্রে কোনো সংস্কার কিংবা পরিবর্তন সাধন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রযুক্তি ও পার্থিব উন্নতি, অগ্রগতি-প্রগতি অর্জনের জন্যে আদেশ করা হয়েছে। এই কারণেই প্রাচ্য কিংবা পাশ্চাত্যে যে সব ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেগুলো সকল ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করেছিল। ইসলাম ব্যক্তিত্ব ও চিন্তার স্বাধীনতাকে লালনকারী ধর্ম। প্রত্যেক মুসলমানই সারা পৃথিবী হতে অধিক মূল্যবান। আপত্তি-১০ দ্বীনী জ্ঞানে অজ্ঞ ব্যক্তিটি বলেছে, “ধর্মের ফলশ্রুতিতে এসেছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক শোষণ। তুষ্ট থাকা ও ভা��্যে সমর্পিত হওয়ার দরুন শোষণ ও নিষ্ক্রিয়তা দেখা দিয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু হাতের মুঠোয় উৎপাদনের সকল সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে। গণমানুষ পার্থিব সুখ-শান্তি পাওয়ার জন্যে বিবেচিত হয় নি। এক মুঠো খাবার ও একটি মোটা কাপড়ের দর্শন বেঁচে থাকার এবং সংগ্রাম করার শক্তিকে বিতাড়িত করেছে। পরবর্তী জগতের আশা-আকাঙ্ক্ষা দুঃখ-কষ্টের ও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” জবাব ধর্ম বিষয়ে কথা বলতে হলে কিছু ধর্মীয় জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়। ইসলামকে বর্তমানকালের পুঁজিবাদী ও সমাজতন্ত্রী শোষকদের সাথে তুলনা দিয়ে ধর্মকে আক্রমণ করায় প্রতিভাত হয় যে সে ইসলামের প্রতি এমনই বৈরীভাব পোষণ করে যার দরুন তার দৃষ্টিশক্তি ও বুদ্ধি অন্ধ ক্রোধ দ্বারা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমা পুঁজিবাদী ও নিষ্ঠুর সমাজতন্ত্রী যারা উৎপাদনের সরঞ্জামগুলোকে কুক্ষিগত করে এবং মানুষদেরকে শোষণ করে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলেই এই অজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা সামাজিক সাম্য বিধানকারী দ্বীন-ইসলামকে আক্রমণ করাটা নিছক শত্রুতা ছাড়া আর কিছু নয়। যেহেতু ইসলামী জ্ঞানে সে সমৃদ্ধ নয়, সেহেতু বার বার সে তুষ্ট থাকা ও তাকদীরে (নিয়তিতে) বিশ্বাসকে আক্রমণ করেছে। সভ্যতার দোহাই পেড়ে অজ্ঞ ব্যক্তিটি শুধুমাত্র অর্থনীতি ও আয়-উপার্জন নিয়েই কথা বলেছে। সে বুঝতে পারছে না যে তুষ্ট থাকা এমনই এক গুণ যা মানসিক রোগসমূহ প্রতিরোধ করে, অসঙ্গতি ও হানাহানি অপসারণ করে এবং সমাজসমূহে নিয়ম-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে। এই তুষ্ট থাকাই সারা বিশ্বে ইসলামের বিস্তৃতি সাধন করেছে এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের সৌধ নির্মাণ করেছে। কুরআন মজীদে এরশাদ হয়েছে,
“যে ব্যক্তি কাজ করে সে-ই উপার্জন করবে” (আল্ আয়াত)।
অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,
“প্রত্যেকেই যা করে তার প্রতিদান সে পায়” (আল্ হাদীস)।
হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
“আল্লাহ্ তা’লা সেই সকল যুবককে পছন্দ করেন না, যারা কাজ করে না” (ইমাম মানাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদীস)।
এই সকল আয়াতে করীমা ও হাদীস শরীফ কি মুসলমানদেরকে কাজ করতে আদেশ দেয়? নাকি অলস বসে থাকতে বলে? উমাইয়া, আব্বাসীয়া, গযনবী, ভারতীয় তৈমুরবৃন্দ, আন্দালুসীয় ও উসমানীয় সভ্যতা যেগুলো মুসলমানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেগুলো কি কঠোর পরিশ্রমের সাক্ষ্য বহন করে? নাকি অথর্বতার? একজন দরবেশ কর্তৃক উচ্চারিত “এক মুঠো ভাত ও একটা মোটা কাপড়” কথাটি কি কুরআন মজীদ ও হাদীস্ শরীফের আদেশকে পরিবর্তন করতে সক্ষম? একজন দরবেশের কথাবার্তা যা তিনি জযবার হালতে (ভাবের সাগরে তন্ময় অবস্থায়) উচ্চারণ করেন, তা তাঁর নিজের জন্যেই প্রযোজ্য [বঙ্গানুবাদকের নোট: মানে তাঁর ও তাঁর তরীকতের একনিষ্ঠ অনুসারীদের জন্যে খাস্ বা সুনির্দিষ্ট; তাছাড়া এটা তাঁর হালত-অবস্থা যা সূফীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য]। কিন্তু তা তো সর্বসাধারণের জন্যে ইসলামী বিধান নয়। পরবর্তীজগতে বিশ্বাস দুঃখ-কষ্টের সৃষ্টি করে না, বরং ব্যক্তিবর্গ, পরিবারবর্গ ও সমাজের জন্যে নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধান করে। ইতিহাস সুস্পষ্টভাবে তা-ই ব্যক্ত করে। ইসলাম আত্মহনন নয়, বরং বস্তুগত ও আত্মিক দুঃখ-কষ্ট এবং অসুবিধা রহিতকরণকে আদেশ করে।
আপত্তি-১১ সে বলে, “এ সকল রাষ্ট্রকে এখনো মরুভূমির আইন দ্বারা শাসন করা হচ্ছে।” জবাব আল্লাহ্ তা’লা কর্তৃক উম্মোচিত কুরআন মজীদের আয়াতসমূহে এবং শত-সহস্র হাদীসমূহে বর্ণিত শিক্ষা ও আজ্ঞাবলী সারা বিশ্বের জ্ঞানী মানুষদের শ্রদ্ধা কেড়েছে। এ সকল শিক্ষা ও আজ্ঞার শ্রেষ্ঠত্ব ও মূল্য ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে ইসলামী জ্ঞান বিশারদমণ্ডলী সহস্র সহস্র গ্রন্থ রচনা করেছেন যার মধ্যে কিছু গ্রন্থের উদ্ধৃতি এখানে প্রদান করা হয়েছে। এমন কি অমুসলমান পণ্ডিতবৃন্দও এ সত্যটি ব্যক্ত করছেন। জার্মান লেখক গোথে বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথমবার কুরআন মজীদ পাঠ করেন তিনি এর স্বাদ পান না; কিন্তু পরবর্তীতে এটা পাঠককে নিজের প্রতি আকর্ষণ করে এবং নিজ সৌন্দর্য দ্বারা পাঠককে জয় করে নেয়।” গিবন (ইংরেজ ইতিহাসবিদ) বলেন, ”কুরআন মজীদ শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা’লার অপরিবর্তনীয় আদেশ ও আইন-কানুনই নিয়ে এসেছে যা মানবকুলের সকল বিষয়ের এবং অবস্থার ব্যবস্থাপক।” বৃটিশ লর্ড ড্যাভেনপোর্ট বলেন, “কুরআন মজীদ ধর্মীয় কর্তব্য-কর্ম, দৈনন্দিন বিষয়াবলী, আত্মিক পরিশুদ্ধি, দৈহিক স্বাস্থ্য, মানুষের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও অধিকার, মানুষ ও সমাজের জন্যে উপকারী বস্তুসমূহ এবং নৈতিকতা ও শাস্তির জ্ঞানসমূহকে নিয়মবদ্ধ করে। কুরআন মজীদ হলো একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা (Political system)। জীবিত ও জড় প্রত্যেকটি অবস্থাই এতে নিয়মতান্ত্রিক করা হয়েছে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে কুরআন মজীদ অত্যন্ত শক্তিশালী ও নির্মল। এটা সব সময়ই উপকার করার জন্যে আদেশ করে থাকে। সামাজিক সাম্যকে এটা জোরদার করে। এটা সভ্যতার ওপরও একটা ���নুকূল প্রভাব বিস্তার করে থাকে। একগুঁয়েমি ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কুরআন মজীদের প্রতি সবচেয়ে মারাত্মক অজ্ঞতাপূর্ণ সমালোচনা দ্বারা ওর বিরোধিতা করার মতো উদ্ভট ও অন্যায় আচরণ আর দ্বিতীয়টি হতে পারে না। কেননা, এটা মানব জাতির উপকার ও সুখ-শান্তির জন্যে প্রেরিত খোদাতা’লার সবচেয়ে মূল্যবান ঐশীগ্রন্থ।” (লর্ড ড্যাভেনপোর্ট) অতএব, এটা পরিদৃষ্ট হচ্ছে যে প্রত্যেক জ্ঞানী ও বিবেচনাশীল ব্যক্তি-ই কুরআন মজীদের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন এবং নিজ উপলব্ধি অনুযায়ী একে সম্মান করেন। এই পবিত্র গ্রন্থটি সম্পর্কে ‘মরুভূমির আইন-কানুন’ বলার মতো আর কোনো দুর্নীতি, নিচুতা ও আহাম্মকী হতে পারেন না। আপত্তি-১২ দ্বীনী জ্ঞানে অজ্ঞ ওই ব্যক্তি বলেছে, “প্রাচ্যের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলো একটি জাতীয় ও পশ্চিমা আদর্শের দিকে ধাবিত হচ্ছে মরুভূমির আইন-কানুনকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে এবং তারা ধর্মের মাদক ত্যাগ করে সচেতন হয়ে উঠছে।” জবাব এই অজ্ঞ, সীমা লঙ্ঘনকারী লেখক যাকে ‘মাদক’ বলছে, সেই দ্বীন-ইসলামের সামনে অমুসলমান পণ্ডিতবৃন্দ-ও শ্রদ্ধাবনত হয়েছেন। মখাইম (জার্মান ইতিহাসবিদ ও ধর্মতত্ত্ববিদ) বলেন, “দশম শতাব্দীতে ইউরোপকে গ্রাসকারী সেই সব কালো দিনের মতো খারাপ আর কোনো সময়ই হতে পারে না। এমন কি ল্যাটিন জাতিগুলো (গ্রীক/রোমান) যারা যুগের সবচেয়ে প্রগতিশীল ছিল, তারাও জ্ঞান-বিজ্ঞানের শিরোনামে যুক্তিবিদ্যা ছাড়া আর কিছুই জানতো না। যুক্তিবিদ্যাকে সকল জ্ঞানের শাখা হতে শ্রেষ্ঠ ধারণা করা হতো। সেই সময় মুসলমান জাতি-ই স্পেন ও ইতালিতে বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা করেন। তখন খৃষ্টানবৃন্দ এই সকল স্থানে জ্ঞান শেখার জন্যে সমবেত হতেন। ইসলামী জ্ঞান বিশারদদের শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি শিক্ষা করেই তাঁরা খৃষ্টান বিদ্যাপীঠ চালু করেন।” (মখাইম) আলোকোজ্জ্বল ইসলামী সভ্যতা যাকে সারা বিশ্নের ইতিহাসবিদমণ্ডলী সর্বসম্মতভাবে প্রশংসা করেছেন, তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই সকল গুণীজন দ্বারা, যাঁরা কুরআন মজীদকে অনুসরণ করতেন। আজকে বিজ্ঞান অগ্রগতি-প্রগতি সাধন করেছে এবং ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়ায় বিশাল আকৃতির শিল্প-কারখানাসমূহ স্থাপন করা হয়েছে। মহাশূন্য ভ্রমণও সূচিত হয়েছে। কিন্তু এ সব দেশের কোনোটাতেই মানসিক শান্তি বিধান করা সম্ভব হয় নি। শিল্প-কারখানার মালিকদের অপব্যয় ও ভোগ-বিলাস এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের দারিদ্র্য আজো দূর হয় নি। সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্র জনগণকে শোষণ করছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার্ত ও বিবস্ত্র অবস্থায় শুধুমাত্র তাদের খাদ্যের জন্যে কাজ করছে; আর একটি নিষ্ঠুর, রক্ত-পিপাসু সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ওই সব ক্ষুধার্ত জনগণের ওপর ভর করে বিলাসী জীবন যাপন করছে। এরা ভোগ-বিলাসে মত্ত হয়ে সব ধরনের মন্দ কাজ সংঘটন করছে। যেহেতু তারা কুরআন মজীদকে মান্য করে নি, সেহেতু তারা সুখ-শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। সভ্য হতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এবং কাজ করে উপার্জন করার ক্ষেত্রে তাদেরকে অনুকরণ করা জরুরি, কেননা কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফ বিজ্ঞান ও কলাসমূহের প্রগতি হাসিল করার জন্যে আদেশ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে আদী ও ইমাম মানাবী বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমান,
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তা’লা তাঁর প্রগতি অর্জনকারী ও কর্ম সম্পর্কে জ্ঞানী বান্দাকে ভালোবাসেন” (আল্ হাদীস)।
হাকিম, তিরমিযী ও ইমাম মানাবী বর্ণিত অপর এক হাদীসে তিনি এরশাদ করেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক তাঁর বান্দাকে কোনো একটি কর্ম-বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞাত দেখতে চান” (আল্ হাদীস)।
তবে কেবলমাত্র এই যোগ্যতা অর্জন করাই সভ্য হওয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়। উপার্জনের মাধ্যমে যে রহমত অর্জিত হয়, তা ইনসাফের ভিত্তিতে ভাগ করে নিতে হবে এবং শ্রমিককে তার শ্রমের সমপরিমাণ প্রাপ্য প্রদান করতে হবে। আর এ ন্যায়বিচার ও ইনসাফ একমাত্র কুরআন মজীদকে অনুসরণ করেই হাসিল করা সম্ভব। আজকে ইউরোপ, আমেরিকা ও রাশিয়া সেই সব কাজেই সাফল্য লাভ করছে যেগুলোতে তারা দ্বীন ইসলামের সাথে সঙ্গতি বজায় রাখছে। কি��্তু যেহেতু সুবিধাগুলো কুরআন মজীদের মধ্যে অবস্থিত ন্যায়ের নীতিমালার সাথে সঙ্গতি রেখে বণ্টন করা হচ্ছে না, সেহেতু জনগণ সুখ-শান্তি অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না, শ্রেণী সংঘাতও এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। যারা কুরআন মজীদকে মান্য করে না, তারা কোনোক্রমেই সুখি হতে পারে না। যারা ওতে বিশ্বাস রেখে কিংবা না রেখে মান্য করে, হোক তারা মুসলিম কিংবা অমুসলিম, তারা এই পৃথিবীতে ততোটুকু সুবিধাই হাসিল করতে সক্ষম হয় যতোটুকু তারা মান্য করে। যারা ওতে বিশ্বাস রাখে এবং মান্য করে তারা এ পৃথিবীতে এবং পরবর্তী জগতে সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়। তারা এ পৃথিবীতে সুখ-শান্তিতে বসবাস করে এবং পরবর্তী জগতে অনন্ত কল্যাণ ও অশেষ নেয়ামতের শরীকদার হয়। ইতিহাস এবং দৈনন্দিন ঘটনাবলী পরিস্ফুট করে যে এ কথাটি সত্য। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, যারা কুরআন মজীদ কর্তৃক প্রদর্শিত পথটি অনুসরণ করে না, তারা মুসলিম হোক কিংবা না হোক, তারা প্রদর্শিত পথটি হতে যতোই দূরে সরে যাবে, ততোই ক্ষতি ও দুর্দশাগ্রস্ত হবে। প্রখ্যাত তুর্কী ব্যবসায়ী জনাব সাকিপ সাবানজী বর্ণনা করেছেন যে যখন তিনি তাঁর হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচারের উদ্দেশ্যে আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন, তখন হাসপাতালে কর্মরত জনৈক প্রটেস্টান্ট পাদ্রী অস্ত্র্রোপচারের আগে তাঁর দর্শনার্থী হন এবং তাঁকে বলেন, “আগামীকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার আপনার ওপর করা হবে। আপনি আমার ধর্মাবলম্বী নন, আপনি একজন মুসলমান। কিন্তু আমরা সবাই তাঁরই বান্দা। এ রকম একটি নাজুক সময়ে স্রষ্টার সকল বান্দারই উচিৎ স্রষ্টার মাঝে আশ্রয় নেয়া। অতএব, আমি আপনার জন্যে আজ রাতে প্রার্থনা করবো।” এ ঘটনার ব্যাপারে সাকিপ সাবানজীর মন্তব্য হলো: “পাদ্রীর এই কথাগুলো আমাকে কতোটুকু অভিভূত ও অনুপ্রাণিত করেছিল তা ব্যক্ত করার ভাষা আমার জানা নেই।” সাকিপ সাবানজীর কৃত “আত্মিক মূল্যবোধের দিকে ফেরা” (Turning Towards the Spiritual Values) প্রবন্ধটি, যা ১৯৮১ সালের ৮ই মার্চের একটি তুর্কী দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল, তা নিম্নে বিধৃত হলো: এটা পরিদৃষ্ট হচ্ছে যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতির কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। তবে আরেকটি দৃশ্যমান বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতি, বস্তুগত ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মানের উন্নতি সাধন মানুষকে সুখ-শান্তি নিশ্চিত করে না। সর্বোপরি, একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে উপনীত হবার পরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নতি এবং বস্তুগত সম্পদ বৃদ্ধিতে সাফল্য পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয় কেবলমাত্র ‘আত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধ’ অর্জনের দ্বারাই। জাপানী মডেল নামের উন্নতি-ই এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। আজকাল তুরস্কে ‘জাপানী ধাঁচের রফতানী’ ও ‘জাপানী ধাঁচের শিল্প-কারখানা’ শীর্ষক অনুপ্রেরণাদায়ক বাক্যগুলো অহরহ-ই উচ্চারিত হয়ে থাকে প্রাত্যহিক জীবনে। জাপানীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কারখানাতেই কার (মটর গাড়ি) নির্মাণ শিখেছিল। অল্প সময়েই কিন্তু তারা ওই সকল বড় বড় কোম্পানীর সাথে শুধু আন্তর্জাতিক বাজারেই নয়, বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়ে ওঠে। তারা আরো অধিক সাফল্যের সাথে প্রস্তুতকৃত সামগ্রী বিক্রি করতে আরম্ভ করে। আমার বিশ্বাস, জাপানীদের এই কৃতিত্বের জন্যে তিনটি কারণ রয়েছে: (১) প্রযুক্তি, (২) শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্ম উদ্যোগ এবং (৩) ঐতিহ্য ও নৈতিক মূল্যবোধগুলো সংরক্ষণ। এক দেশ হতে আরেক দেশে প্রযুক্তি স্থানান্তর সম্ভ���, যদিও এর একটি নির্দিষ্ট ব্যয়ভার ও পরিশ্রম আছে। কিন্তু সুশৃঙ্খল কর্ম উদ্যোগ, ঐতিহ্যের সুষ্ঠু ধারণ ও নৈতিক মূল্যবোধ ক্রয়ের টাকা পরিশোধ করার সাথে সাথেই স্থানান্তর করা সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্যবশতঃ এ সকল বিষয় এ দেশে (তুরস্কে) বর্তমানে অবহেলিত ও উপেক্ষিত হচ্ছে। যখন আমরা মনোযোগ সহকারে আমাদের অতীতকে পর্যবেক্ষণ করি এবং জাপানের সাথে তুলনা করি, তখন আমরা দেখতে পাই যে তুর্কীরা ছিলেন সেই সব বিরল জাতির মধ্যে একটি যাঁরা ঐতিহ্যকে ধারণ করেছিলেন, কর্ম উদ্যোগে শৃঙ্খলা বজায় রেখেছিলেন এবং নৈতিক মূল্যবোধগুলোকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। তুর্কীদের একটি শক্তিশালী পারিবারিক কাঠামো বিরাজমান। পরিবারের বয়োবৃদ্ধকে ঘিরে অন্যান্য সদস্যরা জড়ো হন। তাঁর সম্পর্কে উচ্চ ধারণা ও শ্রদ্ধা বিদ্যমান। তিনিই কনিষ্ঠদেরকে রক্ষা করার দায়-দায়িত্ব বহন করে থাকেন। একজন তুর্কী তাঁর দেশ, পতাকা, ধর্ম ও সততার খাতিরে সংগ্রামরত। এটা তাঁর একটা পবিত্র সংগ্রাম । যুদ্ধের ময়দানে একজন তুর্কী ‘আল্লাহর নামে’ লড়াই করেন। কোনো নতুন কাজ আরম্ভ করার সময়ও তিনি তাঁরই নামে আরম্ভ করেন। তিনি প্রিয়জনদেরকে আল্লাহতা’লার হেফাযতে সমর্পণ করেন। তুর্কীদের মধ্যে সৃষ্টিশীল কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্যকে নিয়মবদ্ধকারী আচার ও ঐতিহ্যসমূহের একটা পদ্ধতি আছে। এ সকল ক্ষেত্রে তুর্কীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত শৃঙ্খলার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ব্যবসায়ীদের পুরোনো সমাজগুলো, সমবায় সমিতিগুলো, প্রতিটি সৃষ্টিশীল কর্মের রক্ষাকারী মালিক কর্তৃপক্ষ এবং মালিক, সহকারী মালিক ও শিক্ষানবীশদের মধ্যে সুসম্পর্ক। দ্বীন ইসলামই হচ্ছে বহু শতাব্দী যাবৎ সারা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ তুর্কীর বন্ধন স্থাপনকারী মৌলিক আত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উৎস। ১৯৮১ সালের এই দ্বিতীয়ার্ধে তুরস্কের ইতিবৃত্ত মূল্যায়ন করতে গিয়ে এ সকল “নৈতিক মূল্যবোধ” যেগুলোকে অতীতে ধারণ করা হয়েছিল কিন্তু সাম্প্রতিককালে অবহেলা করা হয়েছে, সেগুলোকে স্মরণ করার মধ্যে বহু উপকার নিহিত রয়েছে। আমরা যে সিরিয়াস সামাজিক ও রাজনৈতিক অনিয়ম হতে মুক্তি পেতে চেষ্টা করছি, সেই অনিয়মের দোষ-ত্রুটি আমরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণসমূহের ওপর আরোপ করতে পারি না। আমাদের (তুর্কীদের) জনসংখ্যা, যা পাঁচ কোটিরও অধিক এবং প্রতি বছরই যা দশ লাখ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার আবাসস্থল তুরস্ককে ‘সমসাময়িক সভ্যতার সমপর্যায়ে’ এবং ‘মানব মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ একটি জীবনযাত্রার মান’ প্রদান করতে আমরা দায়বদ্ধ। তবে আমরা যতোটুকু সাফল্যই অর্জন করি না কেন, এটা পরিস্ফুট যে শুধুমাত্র বস্তুগত উন্নতি সাধন করেই ৫ কোটি মানুষের সামগ্রিক সুখ-শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। আমাদের সার্বিক আত্মিক ও নৈতিক মূল্যবোধগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোকে সবার সামনে পেশ করা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য। এগুলোই ৫ কোটি মানুষকে একতাবদ্ধ করতে পারবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আরো কাজ করার প্রেরণা যোগাবে। যারা বৈষয়িক সমস্যাসমূহের কাছে অসহায় তাদেরকে আশা ও কাজ করার প্রেরণা যোগাবে আল্লাহতা’লায় বিশ্বাস, আল্লাহ-ভীতি (তাক্ওয়া বা পরহেযগারী) ও দ্বীন ইসলাম। এটা পরিদৃষ্ট হয়েছে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উপকারী হতে হলে আত্মিক উন্নতি অত্যাবশ্যক। দয়া করে মনে রাখবেন যে, চাঁদে অবতরণকারী (প্রথম) নভোচারীর পকেটে ধর্মের বই ছিল। অতএব, আমাদের লক্ষ্য হবে চাঁদে গমনের প্রযুক্তি ও সামর্থ্য অর্জন করা . . . . কিন্তু এই প্রযুক্তি ও সামর্থ্য অর্জনের পরও আল্লাহতা’লার সাহায্য ও সমর্থন অন্বেষণ করা। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে আত্মিক মূল্যবোধ অর্জনে অনুপ্রেরণা যোগান দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দ্বীন ইসলামের সুমহান আদর্শ হতে মদদ অন্বেষণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সভ্যতার দিক-নির্দেশনা হিসেবে আত্মিক সমর্থনের জন্যে আমরা ধর্মীয় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে চাই। আরো কাল ক্ষেপণের আগেই আমাদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা চালু করা উচিৎ। ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে থাকার ফলে চিন্তা-চেতনা ও কর্মের ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে পারস্পরিক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহিষ্ণুতা বোধ জাগ্রত হবে যা আমাদের ভীষণ প্রয়োজন। এটা পারস্পরিক বিরোধিতাকে ন্যূনতম ও শান্তিপূর্ণ করবে এবং অভ্যন্তরীণ শান্তির ভিত্তি রচনা করবে। ফলে আরো মৌলিক ও আরো শক্তিশালী একটা সামাজিক কাঠামোর উদ্ভব ঘটবে। নতুবা আত্মিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যশূন্য মানুষের বিশাল জনস্রোতকে শাসন ও সুখী করা একেবারেই অসম্ভব। এই ধরনের একটা সমাজে সহজে সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কুরআন মজীদে ঘোষিত হয়েছে,
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
“তোমরা বিষন্ন হয়ো না, দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হয়ো না। যদি তোমাদের ঈমান দৃঢ় হয়, তবে নিশ্চয় তোমরা কামিয়াব বা সফলকাম হবে” ।[৭]
আমরা শুনি এবং পড়ি যে, আজকাল সারা বিশ্বের মানুষেরা একে অপরকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জানতে চেষ্টা করছে এবং ইতিপূর্বে তারা যে সব জিনিসকে ��্রত্যাখ্যান করতো সেগুলোর প্রতি তারা বর্তমানে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। আমি শুধু একটা সহজ উদাহরণ দেবো: মার্কিনীরা বিশেষ করে দাবি করতো যে দ্বীন ইসলামের মধ্যে বহু নিষ্ঠুর আইন রয়েছে এবং তারা এ দাবির সমর্থনে চোরের হাত কাটার বিধানকে দৃষ্টান্তস্বরূপ পেশ করতো। আমরা বিস্ময়ে অবাক হয়ে গিয়েছি এবং না হেসে পারি নি যখন দেখেছি যে, ইলিনয় রাজ্যের সিনেটর ডগ্লাস হাফ্ সম্প্রতি তাঁর রাজ্যে চুরি-ডাকাতির হার বৃদ্ধিতে মুসলমান দেশগুলোর মতো চোরের হাত কাটার আইন পাশ করার সুপারিশ করেছেন। সিনেটর তাঁর সুপারিশপত্রে লিখেছেন, ‘এটা আপনাদের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু আমি আর কোনো সমাধান দেখছি না। আমি মনে করি, খোদা তা’লা তাঁর বান্দাদেরকে আদেশ করেন যে এই শাস্তিটি যথাযথ। যারা অপরাধ সংঘটিত করে তাদের উচিৎ খোদা তা’লাকে ভয় করা।’ অতএব দেখতেই পাচ্ছেন যে, মানুষেরা দিনকে দিন ইসলামের আইন কানুনের নিকটবর্তী হচ্ছে। এক স্রষ্টার দিকে আহ্বানকারী সর্বাধুনিক ধর্ম ইসলামের মধ্যে সমগ্র জগতের ধর্ম হওয়ার সকল কারণই বিদ্যমান। আমরা পুনর্ব্যক্ত করছি যে, ধর্ম হলো সেই শক্তির উৎস যেটা আমাদেরকে ক্ষতিকর মন্দ কর্মসমূহ সংঘটন করা হতে রক্ষা করছে; আমাদের উচ্চাভিলাষকে রহিত করছে; আমাদের আত্মাগুলোকে সজীব ও পরিশুদ্ধ করছে; আমাদের সদ-অভ্যাসগুলো বিকশিত করে নম্র, ভদ্র ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ বানাচ্ছে; গুরুজন এবং আইন-কানুন মান্য করতে শিক্ষা দিচ্ছে; বিদ্রোহী হতে নিষেধ করছে; আমাদের বিষয়সমূহে সাফল্য অর্জনে আশার সঞ্চার করছে; ব্যর্থতায় সান্ত্বনা যোগাচ্ছে; আমাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করছে; জীবনী শক্তি ও বেঁচে থাকার আশা যোগাচ্ছে; পূর্ণতাপ্রাপ্ত মানব বানিয়ে আল্লাহতা’লার পথে পরিচালিত করছে। সংক্ষেপে, এ পৃথিবীতে এবং পরবর্তী জগতে আমাদেরকে সুখ-শান্তি অর্জনের দিকে নির্দেশনা দিচ্ছে। আমাদেরকে আমাদের ধর্মকে আঁকড়ে ধরতে হবে, এর আদেশ-নিষেধ মান্য করতে হবে এবং এর মূল্য অনুধাবন করতে হবে। শুধুমাত্র নগণ্য পার্থিব স্বার্থে কিংবা হীন ব্যক্তিগত স্বার্থে দ্বীনকে ব্যবহার করা হতে আমাদের বিরত থাকা উচিৎ। এই আশীর্বাদপ্রাপ্ত দেশ এবং এই পবিত্র ধর্ম মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই সব ধর্ম-ব্যবসায়ীদের দ্বারা, যারা ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ ও কদর্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যে মানুষকে ধোকা দিয়েছে এবং ‘দ্বীন গেল, দ্বীন গেল’ বলে মানুষকে বিদ্রোহী করে তুলেছে। [বাংলাদেশেও ওহাবীপন্থী ও মওদূদীবাদী চক্র অনুরূপ ধর্ম ব্যবসা চালু করেছে - অনুবাদক] ধর্ম ব্যবসায়ীরা এবং ভুয়া বিজ্ঞানীরা এই দেশ ও জাতির সুখ-শান্তি বিঘ্নিত করেছে। ধর্ম-ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যক্তিগত লাভের জন্যে এবং রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে ধর্মকে ব্যবহার করে অনৈসলামী বহু বিষয়কে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বিষয় বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে। পক্ষান্তরে, ভুয়া বিজ্ঞানীরাও নিজেদের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থে যুব সম্প্রদায়কে ধর্মে অবিশ্বাসী বানাতে নিজেদের অবৈজ্ঞানিক, ধ্বংসাত্মক ও বিভক্তি সৃষ্টিকারক কথাবর্তাকে যুব সম্প্রদায়ের কাছে বিজ্ঞান হিসেবে পেশ করতে তৎপর হয়েছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধার্মিক লোক সেজে ধর্মপ্রাণ মানুষের সরল বিশ্বাসকে ব্যবহার করেছে। পক্ষান্তরে, ভুয়া বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানশাস্ত্রে মহাপণ্ডিত হওয়ার ভান করে এবং নিজেদের সার্টিফিকেট দেখিয়ে বিজ্ঞানের ওপর মানুষের আস্থাকে ব্যবহার করেছে। আমাদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ী ও ভুয়া বিজ্ঞানী উভয়ের ধোকাবাজী সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। সাম্প্রতিককালেও এমন কিছু কপট লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা ধর্ম ও বিজ্ঞানকে হীন রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চাচ্ছে। এটা পরিদৃষ্ট হয়েছে যে বেশির ভাগ নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও ডাকাত যাদেরকে বোমা, দূরবীণসম্পন্ন বন্দুক, ট্যাংক-বিধ্বংসী কামান, রকেট ও বেতারযন্ত্রসহ আটক করা হয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া বিজ্ঞানী। বাকিরা শ্রমিক, নয়তো তাদের দ্বারা ধোকাপ্রাপ্ত শিক্ষানবীশ নর-নারী। দ্বীন ও বিজ্ঞান মানুষের জন্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী দুইটি সহায়। জ্ঞান-বিজ্ঞান শান্তি, কল্যাণ ও সভ্যতার জন্যে প্রয়োজনীয় মাধ্যম ও কারণসমূহ সৃষ্টি করে থাকে। দ্বীন এ সকল মাধ্যমকে শান্তি, কল্যাণ ও সভ্যতার জন্যে ব্যবহার করতে প্রেরণা যোগায়। সমাজতন্ত্রীরা বিশাল আকৃতির শিল্প-কারখানা ও চোখ ধাঁধাঁনো রকেট ও উপগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছে জার্মানী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে চুরি করা প্রযুক্তি দ্বারা। তবুও তাদের মধ্যে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই বিরাজমান, কোনো ধর্মীয় চেতনা বিরাজমান নেই। এ কারণেই তারা তাদের জনগণকে নিষ্পেষণ করতে এবং অন্য জাতিগুলোকে আক্রমণ করতে এবং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে গণ্ডগোল-হট্টগোল বাঁধিয়ে রাখতে বৈজ্ঞানিক উপকরণসমূহ ব্যবহার করছে। তারা বহু জায়গাকে ইতোমধ্যেই কয়েদখানা বানিয়ে ফেলেছে। বিজ্ঞানে তাদের অগ্রগতি সভ্যতার বিকাশ আনে নি, বরং নির্মম বর্বরতা এনেছে। শান্তি, কল্যাণ ও মানবাধিকার হয়েছে পদদলিত। সংখ্যালঘুর বিনোদনের খাতিরে লক্ষ-কোটি মানুষকে দরিদ্র করা হয়েছে। এ কারণেই আমাদেরকে প্রকৃত দ্বীন শিক্ষা করতে হবে এবং প্রকৃত মুসলমান হতে হবে। কুরআন মজীদ প্রকৃত মুসলমানদের সম্পর্কে কী ঘোষণা দিয়েছে তা লক্ষ্য করুন,
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
‘সাবধান! আল্লাহতা’লার বন্ধুদের কোনো ভয় নেই, তাঁরা সন্তাপগ্রস্তও হবেন না” ।[৮]
আসুন, আমরা দ্বীন ইসলামের আইন-কানুন তথা আল্লাহতা’লার আদেশ-নিষেধে বিশ্বাস স্থাপন করি। প্রিয় পাঠক, এ সকল আইন-কানুন মান্য করেই আমরা পরস্পরের প্রতি ও রাষ্ট্রের প্রতি উপকারী হতে পারবো এবং শান্তি, কল্যাণ ও সুখঅর্জন করতে সক্ষম হবো”। (জনাব সাকিপ সাবানজীর কৃত “আত্মিক মূল্যবোধগুলোর দিকে প্রত্যাবর্তন” প্রবন্ধটির দীর্ঘ উদ্ধৃতি এখানেই শেষ হলো)
তথ্যসূত্র :
[১] তাবারানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ১:৩৫৩।
[২] আল কুরআন : আন নিসা, ৪:৯৪।
[৩] ইবনে আদী : আল কামিল, ২:২০৩]
[৪] ইবনে আবী শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৮:২৩১।
[৫] (ক) আহমদ : আল মুসনাদ, ৪৮:৪৫৫ হাদীস নং ২২৮০৩।
(ক) হাকিম : আল মুস্তাদরাক, ১৮:১০৪ হাদীস নং ৭৮৪৮।
(গ)বায়হাকী : শু‘য়াবুল ইমান, ১৮:৪৮২ হাদীস নং ৮৬৯০।
[৬] আল কুরআন : আলে ইমরান, ৩:১৫৯।
[৭] আল কুরআন : আলে ইমরান, ৩:১৩৯।
[৮] আল কুরআন : ইউনুস, ১০:৬২।
0 notes
Photo
তেল চুরি করে কোটিপতি ব্রাজিল বাড়ির মালিক টুটুল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লালপুরের সেই ব্রাজিল বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীন টুটুলের বিরুদ্ধে তেল চুরি করে কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর তাই টুটুলকে নিয়ে এলাকার সকল মহলে আলোচনা চলছে। শুধু আলোচনাই নয় রীতিমত সবাই ধিক্কার দিচ্ছে। যমুনা ডিপোর একজন সামান্য কর্মচারী হয়ে কীভাবে কোটি টাকার মালিক হলেন টুটুল। আর কী ধরনের আলাউদ্দিনের চেরাগ পেলো তা নিয়ে গোটা নারায়ণগঞ্জে চলছে আলোচনা। বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলকে হাইলাইট করে নারায়ণগঞ্জসহ দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছিলেন টুটুল। কিন্তু এখন তার সম্পর্কে তেল চুরির কাহিনী লজ্জাজনত অবস্থায় নিয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ফতুল্লার লালপুরের বাজ্রিল বাড়ির ভেতরে প্রবেশ মুখে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। আশেপাশের লোকজন টুটুলের তেল চুরির খবর জানলেও ইচ্ছে করেই ব্যাপারটি ধামাচাপা দিয়ে এসেছেন অনেকেই। অযথা ঝামেলা এড়াতে মুখ খুলতেও দ্বিধাবোধ করেন কেউ কেউ। কিন্তু মিডিয়ায় ফলাও করে তার কর্মকাণ্ড প্রচারের পর ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী। ���োঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লার লালপুরে ব্রাজিল বাড়ির মালিক জয়নাল আবেদীন টুটুল। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কুতুবপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর মজুরটেক। গ্রামের স্কুলে ফাইভ পর্যন্ত লেখাপড়া করে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে। তার বাবা রফিক মিয়া ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পঞ্চবটিতে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি যমুনা অয়েল কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড। বাবার মৃত্যুর পর যমুনা অয়েল কোম্পানিতে চাকরি পায় টুটুল। নো ওয়ার্ক নো পে পদ্ধতিতে যমুনা অয়েল কোম্পানির ক্যান্টিনে দৈনিক ৫৫ টাকায় বেতন ছিল টুটুলের। পরবর্তীতে যমুনা অয়েল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ করা তিনজন কর্মকর্তা ও দুইজন সিবিএ নেতার কল্যাণে টুটুল অপারেটরের পদ চাকারি পান। ভাগ্য খুলে যায় টুটুলের। কারণ প্রতিদিন বিভিন্ন তেলবাহী গাড়িতে তেল চুরির মূল হোতা হলো ওই অপারেটর। একপর্যায়ে চাকরি নেন গ্রেজারের। গ্রেজার মূলত বড় বড় তেল মাপায় জড়িত। যমুনা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন গ্রেজারের দৈনিক আয় কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। কখনো কখনো মাসে এ টাকার অংক ছাড়িয়ে যায় কোটিতে। মূলত তেল চুরির টাকা দিয়ে ফতুল্লার লালপুরে আলিশান ব্রাজিল বাড়ি গড়ে তুলেন টুটুল। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যাদের নামে মাত্র ১৫ শতাংশ জমি রয়েছে তাদেরই এখন ফতুল্লার লালপুরে ব্রাজিল বাড়ির পাশাপাশি প্রচুর জমিরও মালিক তারা। নারায়ণগঞ্জের ইউসিবি ব্যাংক থেকে ১০ বছর মেয়াদে ২০ লাখ টাকা লোন নিলেও মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে পরিশোধ করা হয় টাকা। টুটুলের এসব কাহিনী ব্রাজিল বাড়ির বদৌলতে সকলে পজেটিভ বিষয় জানলেও ইতোমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে একবার বদলিও করা হয়েছে। দুদকে জমা পড়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। তবে ইউসিবিএল ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ টুটুল ১০ বছর মেয়াদে ২০ লাখ টাকা লোন নেয়। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পুরো লোন পরিশোধ করে টুটুল। প্রশ্ন উঠে মাত্র দেড় বছরে ২০ লাখ টাকা টুটুল পেল কোথায়? এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লার পিলকুনি মৌজায় ৪ শতাংশ জমি, সম্প্রতি ব্রাজিল বাড়ির সন্নিকটে আরও ৮ শতাংশ জমি কিনেছেন টুটুল। অথচ টুটুলের বেতন ২৫ হাজার ৪৬২ টাকা। এই বেতনের একজন কর্মচারী রাতারাতি এতো টাকার মালিক বনে যাওয়ার বিষয়টি আলাউদ্দিনের চেরাগের মতো লাগছে এলাকাবাসীর কাছে। এক পর্যায়ের টুটুলের বিরুদ্ধে যমুনা ওয়েল কোম্পানির একজন দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন। দুদকের শুনানীতে টুটুলকে ডাকাও হয়েছিল। তবে টুটুলের দাবি, আত্মীয় স্বজন ও পারিবারিক সূত্র ধরেই টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন, বাড়ি করেছেন। তিনি জানান, গ্রামের স্কুলে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে এবং নারায়ণগঞ্জে ৫ম ও ৬ষ্ঠ লেখাপড়ার কথা বলে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। তবে বিপুল অর্থ-বিত্ত ও ব্রাজিল বাড়ি নির্মাণের বিষয়ে বলেন, বাবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি বিক্রি, বোনদের সহায়তা, ব্যাংক লোন নিয়ে এই বাড়ি করেছেন। আর তার বিরুদ্ধে অহেতুক অপপ্রচার করা হচ্ছে। তার আরও দাবি, ব্রাজিল বাড়ি করার কারণে হিংসা থেকে কেউ তার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। যমুনা ডিপোর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০০৫ সালে জয়নাল আবেদীন টুটুলের চাকরি স্থায়ী হয়। পরে তদবীর ও টাকা পয়সা খরচ করে কৌশলে সে তার পদবী পরিবর্তন করে অপারেটর (তেল মাপা) পদে পদায়ন হয়। আর অপারেটর হওয়া মানে তেলের ভেতর ঢুকে যাওয়া। মোটকথা সে যেদিন অপারেটর হয়ে গেল সেদিন থেকে তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তবে অপারেটর হওয়ার পর তার আবার সাধনা হলো সে গ্রেজার হবে। গ্রেজার হলো তেল মাপা, মানে যেখানে বড় মাপের তেল মাপা হয়। মাপের হেরফেরের মাধ্যমে দৈনিক লাখ লাখ টাকা ইনকাম হয়। মাসে কোটি টাকা। ধীরে ধীরে তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। অল্প দিনের মধ্যে তেল চুরির বিদ্যা রপ্ত করেন তিনি যমুনা অয়েল কোম্পানির সংশ্লিষ্টদের মতে, একজন গ্রেজারের দৈনিক আয় কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। কখনও কখনও মাসে এ টাকার অংক কোটিও ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার তেল চুরির সিন্ডিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন টুটুল। যমুনা অয়েল কোম্পানির নিয়ন্ত্রণ করা তিনজন কর্মকর্তা ও দুইজন সিবিএ নেতার সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠা। ওই সিন্ডিকেটের ইশারায় পদায়ন, পদোন্নতি, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য হয়। এক সময় টুটুলের অপকর্ম দৃষ্টিগোচর হলে তাকে বদলি করা হয় যুমনা ডিপোর সুনামগঞ্জ জেলায় সাজনা বাজার শাখায়। কিন্তু সে বেশি দিন সেখানে থাকেনি। ফতুল্লায় চলে আসে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এই ডিপোতে কাজ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, ধরেন ১৫ লাখ লিটার তেল জাহাজে এসেছে। ১৫ লাখ লিটার ট্যাংকিতে উঠেছে কাগজে কলমে। কিন্তু এই ১৫ লাখ লিটার তেল যে বিক্রি করা হচ্ছে তাতে গাড়িওয়ালাদের কম দিয়ে নিজেরা ওই তেল একসেস করে। যেমন একটি গাড়ি পাবে ১ হাজার মিলি। কিন্তু দুই থেকে তিন মিলি কম দেয়া হচ্ছে। তাহলে তিন মিলিতে ৯ লিটার কম, ২ মিলিতে ৬ লিটার কম। এই তেলটা তারা বাহিরে বিক্রি করে দেয়। ট্যাংকির ভেতর ১৩ লাখ তেলের সঙ্গে ২ লাখ লিটার পানি থাকার কথা। সেখানে পাওয়া গেছে ৪ লাখ। এ ঘটনায় ঝামেলা তৈরি হলে টুটুলকে এই ডিপো থেকে বদলী করা হয় সুনামগঞ্জ জেলায় সাজনা বাজার শাখায়। বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আকরাম আল হোসেন জানান, কোনো কর্মচারী, কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তেল চুরি বা পাচার এবং অন্য কোনো অনিয়মের বিষয়ে যখন আমাদের কাছে কোনো তথ্য উপস্থাপিত হচ্ছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে এটার কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর জয়নাল আবেদীন টুটুল রাশিয়ায় বিশ্বকাপ খেলা দেখতে গিয়েছিল, পারমিশন নিয়েছে কিনা তা আমরা খতিয়ে দেখবো।
0 notes
Photo
‘চুম্মা’ তিন মাসে এক কোটি স্টাফ রিপোর্টার সুরাইয়া প্রিয়া: প্রকাশের পরপরই আলোচনায় আসে ‘আমি নেতা হব’ ছবিতে শাকিব–মিম’র ‘চুম্মা’ শিরোনামের গানটি। গত ২৮ জানুয়ারি এসকে মুভিজের ইউটিউব চ্যানেলে এটি প্রকাশ পায়। প্রকাশের তিন মাসের মাথায় গানটি এক কোটি ভিউ পার করেছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত গানটির ভিউ দেখা গেছে এক কোটি ২৫ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশি ছবির কোনো গানের অল্প সময়ে এতো ভিউ পাওয়ার নজির বিরল। গানটি নিয়ে ‘আমি নেতা হব’ চলচ্চিত্রের পরিচালক উত্তম আকাশ রোববার (২৯ এপ্রিল) বাংলানিউজকে বলেন, এক কোটি ভিউ পাওয়ার সংবাদে আমি অনেক বেশি আনন্দিত। এতো দর্শক–শ্রোতা আমাদের গানটি পছন্দ করেছেন, সেজন্য ভীষণ ভালোলাগা কাজ করছে। গানটির পুরো কৃতিত্ব গীতিকারকে দেবো। কারণ তিনি না চাইলে হয়তো চমৎকার গানটি তৈরি হতো না। চলতি বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ১৬ ফেব্রুয়ারি ‘আমি নেতা হব’ ছবিটি মুক্তি পায়। ‘চুম্মা’ শিরোনামের গানটিতে শাকিব খান ও বিদ্যা সিনহা মিমকে পার্টি স্টাইলেই নাচতে দেখা গেছে। দু’জনের উপস্থিতিই ছিলো বেশ প্রাণবন্ত। সুদীপ কুমার দীপের কথায় গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কলকাতার শ্রী প্রীতম ও জেমি ইয়াসমিন। র্যাপ করেছেন বনি। ব্যাংককে গানটির চিত্রায়ন হয়।
0 notes