Don't wanna be here? Send us removal request.
Text
এক পচন ধরা অথর্ব না-মানুষ ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯
খুশিতে পাগল হব না বলেই হয়ত রাশি রাশি ইচ্ছে অপূর্ণ থাকে সেই মেলা, শীতের পরশ, হাওয়ার মেঠাই, চেনা প্রিয় রাস্তা পাকা ধানের ঘ্রাণ একই রকম ডাক দিচ্ছে কিন্তু আমার কোথাও যাওয়ার নেই। এতবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছি যে আর হাত বাড়ানোর সাহস নেই আমার চেনা পৃথিবী শান্ত হয় না আক্রমণের পর আক্রমণ সবাই আজীবন লড়ে যায় অন্যায় নগরেবন্দরে, কলজে চিরে রক্ত চাটে সাধের গণতন্ত্র। সময় থেমে গেলে আবারও হাত বাড়��য়ে দিতাম বলতাম, দ্যাখো এই আমার তুলতুলে নরম মনটা হাত ছুঁয়ে দেখো রাগে-ঘৃণায় আর গা রি-রি করবে না।
ঠাণ্ডা মাথায় ফের ভেবে দেখলাম আমায় ভালবাসার কোনও কারণ নেই-- বিশ্বের সবখানে অন্যায়, অবিচার, দমনপীড়ন অহরহ চলছে রাষ্ট্র-বণিককূল, কাঁটাতার সব স্পষ্ট তারপরও আমি খাচ্ছিদাচ্ছি ঘুমোচ্ছি মিলন বিরহের গান শুনছি-- অভুক্ত পড়শির পাশে দাঁড়াচ্ছি না নারীকে মানুষ না ভাবা মধ্যযুগীয় সমাজকে পাল্টাতে মহামিছিলে কপালের ঘাম ফেলছি না ব্যারিকেড ভাঙা যুযুধান রাজপথে রক্ত ঝরছে না আমার মরিয়া চিৎকার করছি না-- সবাই মানুষ! মানুষ হবার অধিকারটুকু চাই। দেওয়ালে কোণঠাসা হয়ে হাতে বন্দুক তুলে নিতেও যতখানি চৈতন্য দরকার মেরুদণ্ডে হাত বুলিয়ে দেখলাম সেটুকুও নেই। বাঁচার মত বাঁচছি কই? মানুষের মত মানুষ হওয়ার সেই রুদ্রপ্রখর তেজও নেই...
এমন পচে যাওয়া অথর্ব না-মানুষের সহায় শুধু ঘুম, সব কাঁটাতার উপড়ে ফেলার পর কেউ যেন ডেকে তোলে আমায়।
0 notes
Text
এই হল বাঁচা
যত রাত বাড়ে মরার ইচ্ছা তীব্র হয় এই মি টু, এই বিদেশী খেদা এথনিং ক্লিনজিংঙের দাবার খেল রাত বাড়ে, মাও-দাগ লাগিয়ে পুলিশ মানুষ তোলে লকআপের মারধোর আমার কানে পৌঁছয় না
নিজের অনিদ্রা নিয়ে যখন ভেড়া গুণছি তখন রিলায়েন্সের জমি অধিগ্রহণ পাকা উইপোকা তাড়ানোর নিদেন দিচ্ছেন অমিত শাহ
গাই-বলদ-জমি বেচে ভারতীয় প্রমাণে আধ��রা, অস্থিচর্মসার জোয়ান মানুষ, কেউ প্যারানোয়েড হয়ে অজ্ঞাতবাসে। এদিকে আমার পিল ওভারডোজ বালতি ভাঙ্গি, কমোডে মাথা ফাটে, কাপড় রাখার ধাতব পাইপ ভাঙ্গি ওর ওদিকে বাঁশকান্দি-বাক্সায় সত্যি মানুষ মরে!
তিনটে প্রয়াসে তিনদিন মরি লিভার-কিডনি-মগজের জোরে ফের বাঁচি। কানে আসে ডি-ভোটার, ডিটেনশানে মৃত্যু।
আমার ফের হিপি বাঁচন - অজানা যন্ত্রণা ভুলতে আকন্ঠ শস্তা মদ ব্ল্যাকআউট, পথেঘাটে মাথা ফাটে, হাঁটু ফাটে, কনুই ছড়ে রক্তাক্ত ঘুম রাতভর ভোর হয়, কাগজে বাংলাদেশী ঘেন্না দাড়ি টুপি লুঙ্গির ইসলামোফোবিয়া অট্টহাসি নরম চাড্ডির মুখে মোদীজী-বাজপেয়ীজীর উন্নয়ণ রাজধর্ম!
বাজারে কপালে গেরুয়া ফেট্টি পরা বেকার যুবক টগবগে রক্ত ফুটে নাগপুরীয় দেশাত্মবোধে আহম্মদ-মোহম্মদ কিলিয়ে দেশরক্ষা মা-বোন ছাড়া আর নারীর অস্তিত্ব নেই।
জায়গার নাম বদলায়, ইতিহাসের বই পাল্টায় আচ্ছে দিন আসে, বুলেট ট্রেনের বরাত যায় বিদেশে তামিলনাড়ুর চাষীরা ইঁদুর খান দিল্লীর রাজপথ লাল হলেও চড়াও খাকি পুলিশ জলকামান।
জল-জঙ্গল-পাহাড়ে মাড়কাম হিড়মে শহীদ হন।
আমি আবার মরি, মরার প্রস্তুতি নেই পিল চাই আমার, গোটা চল্লিশেক যথেষ্ট। ভালো থাক দেশ!
0 notes
Text
সত্যি কথা ১৯ অক্টোবর, ২০১৮
আমি স্বাভাবিক থাকার অভিনয় করি, মুখোশ পরি আরও দশটাপাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের যদিও অন্তরটা কীসে যেন ফালাফালা করে ছিঁড়ে রেখেছে
রোজ রাতে আতঙ্ক তাড়া করে আরও ভয় পাই কারণ, জানিনা সকালে কেমন থাকবে মনমেজাজ ভীষণ চেষ্টা করি যাতে এই বিভীষিকা মগজের চালকাসনে না বসে কোনওকোনও দিন আচমকা মস্তিষ্ক দখলদারিত্ব হারায় আর ধীরেধীরে আমি সর্বস্ব হারাই।
বোবায় ধরার ভীতির মতো নিশ্চল হই মৃগীরোগীর মত ঠকঠক কাঁপি এই বুঝি রঙী�� মলাট ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে আমার দৈন্যদশা! পরশ্রীকাতরতা,��র্ষা, ঘৃণা, অহঙ্কার, আত্মপ্রেম, লালসা আর কাঁচের মতো ঠুনকো ইগো। যুক্তিবুদ্ধি ধুয়ে যায়, বিশ্বাস করতে থাকি মগজে ভর করা কোনও অতীন্দ্রিয় দানবের অস্তিত্বে। সরে যা শয়তান, ইবলিস! ডাকতে থাকি মৃত্যুদূত আজরাইলকে। কিন্ত সাড়া মেলে না বেরিয়ে আসে বিষ আমার চারপাশ জুড়ে জমতে থাকে নগ্নতা, ক্লেদ, গ্লানি অন্ধকার হয়ে আসে আলোর পথের মানবিক যাত্রা।
ক্রমে হারাই বন্ধুত্ব বিশ্বাসের সীমানা মুছে যায় অদৃশ্য রক্তক্ষরণে লতার মত জড়িয়ে থাকা ভালবাসা, অনুকম্পা সব হারিয়ে যায় খন্নাসের তান্ডবলীলায়।
সাহেবী নাম বাইপোলার
0 notes
Text
কলজে চেরা জবানবন্দী ৭ নভেম্বর, ২০১৮
যা করেছি তা আর করব না গোঁয়ারের মতো 'নো মিনস নো' মানিনি দুটো মানুষকে কয়েকদিন কাঁদিয়েছি পিতৃতান্ত্রিক কুশিক্ষা আর সব বিজয়ের প্রত্যাশা, কিংবা খানিকটা ম্যানিয়া একটা ছোট্ট পরিবারের বুকে সুনামি নামিয়েছি বারবার পতনেও শিক্ষা হয়নি গোয়ার্তুমি যায়নি
মা-বাবার উদ্বেগ বাড়িয়েছি কৃত্রিমভাবে মগজে ডোপামিনের তীব্র স্রোত তৈরী করে গড়িয়েছি কাচাপাকা সড়কে একবার নয়, দুইবার নয় বহুবার পাদজানুহস্তমস্তক কিছুই চোটে বাদ পড়েনি পথেঘাটে কী ঘটে তাও মনে রয়নি বহুবার বাবা-মা সাবেকি, বিয়ে হলে ছেলে শুধরে যাবে বৈকি! কিন্তু তাতেও রাজি নয় এই নোংরা কৃমিকীট। নইলে যে কাড়া যাবে ফেমিনিজমের স্বেচ্ছাপদক!
আলেয়ার পেছনে ছোটা সভ্যতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বারবার ফোনে বিরক্ত করা আজব-উটকো-উন্মাদের মত হঠাৎ হাজির হওয়া অপ্রীতিকর প্রসঙ্গ তুলে কাউকে কাঁদানো সে ফুঁফিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে কাঁথায় মুখ লুকিয়ে তার মায়ের চোখেও নামে জল...
অনেক হয়েছে এই আবেগের নিষ্ঠুর খেলা আমার আশেপাশে যারা ছিল তারাই ��্রসফায়ারে মারা পড়েছে জোর করে কিছুই পাওয়া যায় না ভালবাসা তো নয়ই আর কাউকে কষ্ট দেব না নিজের কষ্টে একচোট কেঁদে নেব আর শাপশাপান্ত করে যাব নিজেকে মানুষ হতে গিয়ে কেমন করে যে শয়তান হয়ে উঠলাম।
আমায় ক্ষমা করবেন সবাই তুমিও পারলে ক্ষমা কোরো ছলচাতুরি আর অপরিণত মস্তিষ্কপ্রসূত সব অস্ত্রশস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করছি।
নিজেকে বদলান আর হল না মুখোশ চাপিয়ে মিশে যাচ্ছি মহানগরের ভীড়ে। যা পাইনি, যা পাব না কেন পাব না এসব নিয়ে সুরতহাল করব না।
0 notes
Text
অসহায় ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮
টিকটিকি জানান দিলো রাত দুটো চোখে শুকিয়া আসা অস্রুর চিহ্ন আর চরাচর জুড়ে একাকীত্ব। এরই মাঝে অনিদ্রার সঙ্গে মল্লযুদ্ধ, নিউরোনে জীবন জুড়ে থাকা ভুলের আগুনে দগ্ধ প্রাণ আমি এক। স্বর্গ থেকে বিতাড়িত এক অনুপ্রবেশকারী, যার স্বর্গের মোহ কাটেনি যে অমৃতভাষিণীর চেহারাও ভুলতে পারেনি ছোঁচট খায় ঘোর-লাগা চোখে প্রলাপ বকে বিড়বিড় করে সেই প্রলাপে অলস ঘড়ি মুখ ভ্যাংচায় আয়না গালাগাল দেয় মরে যেতে বলে। করুণা মিইয়ে গিয়ে কখন ক্রুরতার রূপ নিয়েছে এ বেহায়া বুঝেনি। স্কুলবালকের মত চাঁদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে প্রহর কাটে। এ যুক্তিবুদ্ধির পরোয়া করে না শস্তা কমেডির উইংসে ফেলে আসা দিনের চিনেবাদামের খোসা কুড়োয়। ন্যালাখ্যাপার জীবন!
0 notes
Text
ক্ষমা, আবার উড়তে চাই ৬ জানুয়ারি, ২০১৯
ঘর থেকে যখন বেরোই শহরটা কামড়াতে আসে সুখী গৃহকোণ মানে এখন এলোমেলো কাগজের স্তুপ বহুদিন জলের স্পর্শ না পাওয়া দলমচা রোজকার পোযাক। তাও বেরোতে হয়, ছুটে এসে মনে বেঁধে যায় সহস্র আলপিন পথেঘাটে অলৌকিক দুয়ো শুনি কারা যেন আমায় দেখে থুথু ছেটায় সবখানে ব্রাত্য, মাঝেমাঝে আঘাত জোটে মনোহরী কথোপকথনে শামিল হতে পারি না বলে। সত্যি আমি ভাল নেই ভাল থাকার রসদ ফুরিয়ে গেছে সামনে গ্রানাইট-কঠিন একাকীত্বের দেওয়াল। কান্না পেলেই তখন অশরীরী ছায়ার মত তুমি চলে আস কানে সান্ত্বনাবাক্য শোনাও আর আমিও সিসিফাসের মতো পেল্লায় একখানা পাথর গড়িয়ে গড়িয়ে নিয়ে যাই পাহাড়চুড়ায় সেটা ফের গড়িয়ে পড়ে আমায় ফের তুলতে হয় -
এভাবেই চলছে আমার নাগরিক রোজনামচা লেখা শীত তো শেষ হচ্ছে প্রিয়তমা অবসর নিতে চাই এবার একবার ফিরেই দেখো না কতখানি বদলেছি আমি পুরোদস্তুর রক্তমাংসের মানুষ এখন।
0 notes
Text
কোনও নির্বাচনী চমক নয় তো?প্রসঙ্গ: নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬
এক আদিম মারকুটে মনোভাব নিয়ে এনআরসি-র নামে চলল ‘অবৈধ বাংলাদেশী আটক’ নামে শিকার পর্ব। রাজ্যজুড়ে ডিটেশন ক্যাম্পে বন্দী হলেন হাজার-হাজার নারী, পুরুষ, শিশু। মানবাধিকার কর্মীদের বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও টনক নড়েনি সরকারের। আজ অবধিও অমানবিক পরিস্থিতিতে দিন গুজরান করছেন সেই বন্দীরা। এই তো সবে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে তাদের। গোয়ালপাড়া ডিটেনশন ক্যাম্পে দুশোরও বেশী ‘নাগরিকত্ব-বন্দী’ ২০ জানুয়ারি থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন। দীর্ঘদিনের এই অন্যায়-অবিচার ও অমানবিক বন্দীদশা থেকে মুক্তির দাবীতে তারা অন্ন ত্যাগ করেছেন। ওয়েলফেয়ার রাষ্ট্র কতটা নির্মম এবং অমানবিক যে খোদ নাগরিকদেরই বাধ্য করে তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণে। আইনি প্রক্রিয়া যে খুব জটিল তা নয়, রাজনীতি এবং সরকারের সদিচ্ছার মারপ্যাঁচে দিনের পর দিন আটক অসহায় সব নারী, পুরুষ, শিশু। আসলে কর্পোরেটদের অসমের প্রাকৃতিক সম্পদ লুন্ঠনের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এবং জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখার এক অপকৌশল এই ‘বাংলাদেশী শিকার’। সাচ্চা নাগরিক খোঁজার নামে ‘উইচ হান্ট’। উত্তর ভারতে যেমন গোরু এবং গেরুয়া দিয়ে দিব্যি অন্য সমস্যা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখা যায় ঠিক তেমনি অসমে বাংলাদেশী-বাংলাদেশী রব তুলে বিধানসভা গরম রাখা যায়। অসমের মুখরোচক গণমাধ্যমগুলিও জানে জনতাকে কী খাওয়াতে হবে। তাই তারা ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ এবং অসমীয় অস্ত্বিত্ব সংকটে’ গোছের হাঁকডাক নিয়মিত হারে প্রচার করে। ‘অসমীয়াদের অস্ত্বিত্ব সংকটে’ এমন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ চরম জাতীয়তাবাদীও কেউ পেশ করতে পারেনি এখনো। ২০০১ এবং ২০১১ সালের জনগণনা হিসাব অনুযায়ী, ৫০ শতাংশের সামান্য কম অসমবাসীর মাতৃভাষা অসমীয়া। ৩০ শতাংশের কম জানিয়েছেন তাদের ভাষা বাংলা। গভীর উদ্বেগ নিয়ে রাজ্যের তাবড়-তাবড় অসমীয়াভাষী বুদ্ধিজীবীরা এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী এনআরসি প্রক্রিয়ার যৌক্তিকতা দেখান, যা কী না প্রায় দশ লক্ষ অসমবাসীকে রাষ্ট্রহীন করে দিতে পারে। বাংলাভাষীরা মূলতঃ বরাক উপত্যকায় সংখ্যাগুরু। এর সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার তুলনাই চলে না। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় কি অসমীয়াভাষীরা সংখ্যালঘু? ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় একজন বাংলাভাষীর বিপক্ষে তিনজন অসমীয়াভাষীর অনুপাত মোটেই অস্ত্বিত্ব সংকটের মত শোনায় না। তাহলে যদি এটা সংখ্যার সমস্যা না হয়, তবে কি সাংস্কৃতিক সমস্যা? বাংলা ভাষার আগ্রাসনে কি তবে অসমীয়া ভাষা কোনঠাঁসা? ইংরেজদের আমলে, ১৮৩০-১৮৭০-এর দিকে বাংলাভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা বা সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। সেইসময়ের একটা তিক্ততা রয়ে গেছে অসমীয়াভাষী জনমানসে। অভিযোগ ওঠে অসমীয়া ভাষার প্রসার রুখে দিয়ে নিজেদের ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার একখানা গোপন ছক রয়েছে বাঙালীদের। ১৮৯৮ সালে ‘ভাষাবিচ্ছেদ’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ অভিমত জানান যে অসম এবং উড়িষ্যার উচিত বাংলাভাষাকে নিজেদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা, কারণ উড়িয়া এবং অসমীয়ার বাংলার অনেক উপভাষার সঙ্গে মিল রয়েছে। সে বহুযুগ আগের কথা এবং বেশ দুঃখজনকই। তবে এই 4G গতির মাল্টিমিডিয়ার যুগে এসে যদি বলা হয় বাংলাভাষার জন্য অসমীয়া ভাষা-সংস্কৃতি বিপন্ন, তবে এ কথা কোনওমতেই হজম করা যায় না। এ হীণমন্যতার অন্য রাজনীতি রয়েছে। ছড়া-কবিতা-গল্পউপন্যাস-কমিকস-নাটক কোনওদিকেই অসমীয়া ভাষার খামতি নেই, জনগণের আগ্রহ এবং সরকারী মদতে বেশ রুচিকর এবং আয়তনেও বড় অসমীয়া সাহিত্য সমাজ। বহুসংখ্যক পত্র-পত্রিকা রয়েছে অসমীয়ায়। বিনোদন থেকে নিউজ, অসমীয়া টেলিভিশন দাপিয়ে ��েড়াচ্ছে গোটা অসমে। লাখ লাখ ��র্শক-শ্রোতা অসমীয়া গান, নাটক, থিয়েটার দেখেন। এমন একটা সুজলা-সুফলা ১৬ লক্ষ জনগণের ঐতিহ্য-পরম্পরা-সংস্কৃতি বাংলাদেশী (মতান্তরে বাঙালী) অনুপ্রবেশকারীদের হাতে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে -- এটা অবিশ্বাস্য! তবুও এনআরসি চলে, চলে ���ি-ভোটার সনাক্তকরণ এবং ডিটেনশন ক্যাম্পও বন্দীতে ভরতে থাকে। যখন এই প্রক্রিয়ার নামে মানবাধিকার হরণ, অমানবিক বন্দীদশা, আতঙ্ক ছড়িয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা, এসব খবর যখন দেশবিদেশে ছড়াল তখন হিন্দুরাষ্ট্র কায়েমের হাতিয়ার এবং জনগণের কাছে পড়শিদেশগুলোয় নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের মসীহা সাজার এক নয়া জুমলা হিসেবে পেশ করা হল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬। এর মূল বক্তব্য : হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টধর্মের মানুষেরা যেহেতু আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান এসব দেশে সংখ্যালঘু তাই তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের পাসপোর্ট আইন এবং বিদেশি সনাক্তকরণ আইনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা হবে না। এবং ছ’বছর ভারতে বসবাস করলেই মিলবে নাগরিকত্ব। এমনিতেই গোটা বিশ্বে ফ্যাসিজম আর জেনোফোবিয়ার বাড়বাড়ন্ত। ভারতই বা পিছিয়ে থাকে কেন? শাসক গেরুয়া দল এবং জাতীয়তাবাদী অসম গণ পরিষদ বরাবর এই দুই অস্ত্রে জনমানসে অমূলক ভয় আর সন্দেহ ঢুকিয়ে কিস্তিমাত করেছে। এমনিতেই দেশে রুজিরুটির অভাব --- আঠারোর যুবকের বুকে ক্ষোভ আর তিরিশের হতাশা। এখানেই ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদে মগজধোলাই শুরু। মার্কিন মুলুকে যেমন ধুঁয়ো তোলা হল: ‘ইমিগ্র্যান্টরা তোমাদের সব চাকরিবাকরি-কাজকর্ম দখল করে নিচ্ছে’ অমনি ক্ষেপে উঠল রিপাবলিকানরা, গর্জাল ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, টম-ডিক-হ্যারিরা দোহার দিল ‘দে টুক আওয়ার জবস’! এই একই ফর্মূলা খাটান হয় অসমেও। বলা হয় বাংলাদেশী উইপোকারা ঝুরঝুরে করে দিচ্ছে দেশ এবং অর্থনীতি। ব্যাস -- রাজ্যে টানটান উত্তেজনা। মুখরোচক মিডিয়ায় তৈরী থাকে ফুটেজ এবং পাবলিককে তা খাওয়ান হয়। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬ নিয়ে যে প্রতিবাদ হচ্ছে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তা মূলত ওই মানসিকতা থেকে উদ্ভুত। সংবিধানের সেক্যুলার চরিত্র হনন কিংবা পড়শি দেশগুলোয় নিপীড়িত-শোষিত মুসলমান বা যারা এই ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান’ কোনও ধর্মেরই অন্তর্ভুক্ত নন, তাদের কী হবে --- এই চিন্তা প্রতিবাদীদের মাথায় আসছে অনেক পরে। আবার দেশভা��ের বলি, দ্বিজাতিতত্ত্বের অভিশাপ মোচনের পথ হিসেবে এই সংশোধনকে দেখছেন অনেকে, মানবিক কারণে সমর্থনও করছেন যারা তাদের সংখ্যাও কম নয়। সংঘ পরিবার বহু আগে থেকেই আঁটঘাট বেঁধে কাজ করছে তাদের বহুকাঙ্খিত হিন্দুরাষ্ট্র গঠনে। যেখানে উগ্র হিন্দুত্বের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলবে মুনাফাখোর কর্পোরেটতন্ত্র। সামনেই নির্বাচন, বিজেপির এ অবধি শাসনের মার্কশিট তেমন উজ্জ্বল নয়। নোটবন্দী, নয়া কর্মসংস্থান দিতে ব্যর্থতা, চাষীদের দেশজোড়া প্রতিবাদ, নারী ও শিশুকল্যাণে বরাদ্দ কমিয়ে সর্দার প্যাটেলের বৃহৎ মূর্তি বানানো -- সব মিলিয়ে বিজেপি খুব একটা ভাল অবস্থানে নেই। তাই ঝুলি থেকে একে একে চমক বের করতে মরিয়া তারা। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল, ২০১৬ কি এমন কোনও চমক? কে জানে। সময়ই একথা বলবে।
0 notes
Text
অসহায় আদালত: বিষয় এনআরসি
৩য় পর্ব মহসিন আলম ভাট
অনুবাদ: শামীম আহমেদ এনআরসি-র কিছু জরুরী অর্থনৈতিক, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে নৈতিক মূল্য রয়েছে। ভারতের জনগণ কি ওই ডিটেশনশন সেন্টারের পরিবারগুলোকে অনির্দিষ্টকালীন আটক রাখার আর্থিক বোঝা কাঁধে নিতে তৈরি? তারা কি নিজেদের গ্রাম-শহরের পাশে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মত অবস্থা বজায় রাখার নৈতিক দায়ভার বহন করতে প্রস্তুত? অবাক করে দেওয়ার মত বিষয় হল এনআরসি যে পরিণতির দিকে আমাদের নিয়ে যায় সেই অবশ্যম্ভাবী ট্র্যাজেডি নিয়ে চৈতন্যোদয় করায় না কেউই --- না আদালত, না কোনও বিরাটমাপের ভারতীয় প্রশাসনতন্ত্র। নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্ধত রাজনীতি: এসবের মধ্য দিয়ে আদালত নিজেকে দাঁড় করিয়েছে রাজনৈতিকভাবে এক বহুবিভক্ত অবস্থানে, যার জন্য তার নিজের ন্যায্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ ধেয়ে আসা এক হুমকির মুখে। আদালত যখন এনআরসি সঞ্চালনায় নামে তখন প্রক্রিয়াটির ব্যাপক জনভিত্তি এবং সমর্থন ছিল। হয়ত তাই আদালতের ধারণা জন্মায় যে হয়ত একমাত্র বাধা হল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার কলহ। কথা ছিল ��ই বিচারবিভাগ-পরিচালিত আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফলপ্রদ হবে এবং অবশেষে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বির্তকের সমাধান করবে। আংশিকভাবে এই আগ্রহে ভাঁটা পড়ে এনআরসি-র অভ্যন্তরীণ কিছু কারণে, যেমন ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচন কেন্দ্র অনুযায়ী বহুসংখ্যক মানুষ এনআরসি প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ মনে করতে শুরু করেন। প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট কড়া না হওয়ায় তাদের কাছে এটাকে সংখ্যালঘু তোষণকারী অথবা ওদের নিয়ে উদাসীন মনে হয়েছে। আইনি পদ্ধতিতে অতিরিক্ত ভরসায় এই ব্যাপারটি উপেক্ষিত রয়ে যায় যে এনআরসি এক রাজনৈতিক বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে রয়েছে যাকে আদালত নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। প্রক্রিয়াটি চালাতে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা হ্রাস পেলেও বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে তারা এককাট্টা। অসমের বাইরেও এনআরসি-র সম্প্রসারণ করার আওয়াজ তোলে বিজেপির বেশ কিছু অংশ, যা দেশ জুড়ে সমাজজীবনে গভীর উদ্বেগ বাড়িয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের জন্য কেন্দ্রের যা উৎসাহ, যেখানে অমুসলিম "অবৈধ অভিবাসীদের" নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে, সেটিও কোনও ক্ষেত্রে সাহায্য করেনি। প্রস্তাবিত সংশোধন আদালত-পরিচালিত এনআরসি-তে দেওয়া ওই প্রতিশ্রুতিকে চ্যালেঞ্জ জানায় যে নাগরিকত্ব আইনের বাস্তব প্রয়োগ একটি রাজনৈতিক বিতর্কের সমাধান করবে। রাজনৈতিকভাবে এটি অসমীয়াভাষীদের মধ্যে এক গভীর আশঙ্কা ফের জাগিয়ে তুলেছে যা কিনা রাজ্যে এনআরসি-র মাধ্যমে আসা সাময়িক শান্তিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। আইনি প্রক্রিয়া এবং আনুষ্ঠানিকতা চেহারা এনআরসি-কে তার প্রসঙ্গ ও পরিণতি থেকে উদ্ধার করবে না। এই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরী শীর্ষ আদালত যেন সমস্যাগুলো সনাক্ত করে প্রক্রিয়াটিতে মানবিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উপসংহার টানে, যার কী না এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি হতে আর দু’পা বাকি।
0 notes
Text
অসহায় আদালত: বিষয় এনআরসি ২য় পর্ব মহসিন আলম ভাট
অনুবাদ: শামীম আহমেদ
অভূতপূর্ব 'আইনি’ প্রক্রিয়া:
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে, বিচারপতি গগৈ ও নরিমেনের সুপ্রীম কোর্টের বেঞ্চ এনআরসি আপডেটের তত্ত্বাবধানের জন্য নিয়মিত শুনানি গ্রহণ করেন, দলিল-দস্তাবেজ জমা দেওয়ার দিনক্ষণ ও সময়সীমা বাড়ানোর অনুরোধ সাড়া দেন, এবং নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে কোন কোন দলিল গ্রহণ করা হতে পারে তা স্থির করেন। হয়ত মনে হতে পারে আদালতের জড়িত হওয়াতে এনআরসি নবায়নের কাজের গতি বেড়েছে কিন্তু সেইসঙ্গে এটি উদ্বেকজনকভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে এক দূর্বোধ্যতা এবং দায়িত্বহীনতাও। আমাদের শাসনতন্ত্রে আদালতগুলোর কাজ সাধারণত কার্যনির্বাহী এবং আইনপ্রণয়ন ক্ষমতাকে অত্যন্ত-প্রয়োজনীয়ভাবে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য করা। এই এনআরসি প্রক্রিয়ায় শীর্ষ আদালতের এই তত্ত্বাবধানে "আন্তঃ-প্রতিষ্ঠানীয় আইনি দায়বদ্ধতা” সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। প্রকৃত কার্যক্ষেত্রে, প্রক্রিয়াটি চলছে এক নতুন পাওয়া আইনি বৈধতায় তা যেন কোনও চরম-আইনপ্রণেতা বা সুপার-একজিকিউটিভ। এনআরসি অ্যাডমিনিস্ট্রেটররা বিচার বিভাগের যতটা না সমর্থক ততটাই জবাবদিহি নন বিচার-বিভাগের কাছ। আদালত এনআরসি সমন্বয়কারীদের নিয়মিত সিলবদ্ধ কভারে প্রতিবেদন দাখিল করার আমন্ত্রণ জানায়। ওই প্রতিবেদনগুলি রাষ্ট্র ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে গোপন রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া নয়াদিল্লিতে চলে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা, যাদের কাছে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া কঠিন মনে হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিচার-বিভাগীয় পুনর্বিচার পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অসহায় আদালত: কূটাভাসিকভাবে, যখন এক দৃষ্টিকোণ থেকে শীর্ষ আদালতকে একটি চরম ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠান বলে প্রতীয়মান হয় ঠিক অন্য দৃষ্টিকোণে এটি নৈরাশ্যজনকভাবে ক্ষমতাহীন। তার সক্রিয় তত্ত্বাবধানের পর থেকে শীর্ষ আদালত দাবী করছে ‘বিতাড়ন প্রক্রিয়া কার্যকর’ করতে সরকার যেন কূটনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিত হয়। আদালতের ভেতরে এবং বাইরে সরকার জোরালভাবে জানায় যে তারা বাংলাদেশের কাছে এই বন্দীদের বিতাড়নের ইস্যুটি তুলে ধরার পরিকল্পনা নিচ্ছে। কিন্তু আধিকারিক রিপোর্ট একথার সত্যতা প্রমাণ করে না। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিকরা বারবার সুনিশ্চিত করেছেন যে ভারত সরকার তাদের কাছে ইস্যুটি একদমই তুলে ধরেনি। এহেন পরিস্থিতিতে আদালতের এমন কিছুই করার নেই যা দিয়ে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা যেতে পারে একটি উপযুক্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির রূপরেখা তৈরী করায়। এনআরসি প্রক্রিয়ার একমাত্র অনিবার্য পরিণাম লক্ষ সংখ্যক মানুষকে রাষ্ট্রহীন ঘোষণা করা। চলতি আইন অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসীদের আটক করে পুলিশ হেফাজতে রাখা যায়। এ মুহুর্তে অসমে আধডজন ডিটেনশন ক্যাম্প চালু রয়েছে, যেখানে আটক ব্যক্তিরা ট্র্যাইবুন্যালের মাধ্যমে বিদেশী ঘোষ��ত হওয়ার অপেক্ষায়।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ এক পর্যবেক্ষক দল ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসে ওই ডিটেনশন সেন্টারগুলো পরিদর্শনে যায়, তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী জেল চত্ত্বরে ঠাঁই হয়েছে শত শত নারী, পুরুষ এবং শিশুদের -- কোনও স্পষ্ট গার্হস্থ্য আইনি মানের অনুপস্থিতিতেই, এবং বহু আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান লঙ্ঘন করে। রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া এটুকুই যে তারা ডিটেনশন ক্যাম্পের পেছনে আরও টাকা খরচ করবে। কিন্তু গোটা অসমজুড়ে অনেকগুলো ডিটেনশন ক্যাম্প স্থাপন কোনওভাবেই অর্থপূর্ণ প্রতিক্রিয়া হতে পারে না। রাজনৈতিক এক সমাধানসূত্রের অভাবে লাখ লাখ মানুষ --- মহিলা, শিশু এবং বহু পরিবার অনিশ্চিতকালীন সময়ের জন্য কারাবন্দী রয়ে যাবে। আমরা কি অবাক হব যে শুধুমাত্র এনআরসি-র খসড়া থেকে নাম বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও অসমের মানুষকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছিল?
0 notes
Text
অসহায় আদালত: বিষয় এনআরসি
মহসিন আলম ভাট বাংলা অনুবাদ প্রচেষ্টা: শামীম আহমেদ লস্কর প্রথম পর্ব নাঃ এবার আমাদের স্বীকার করতেই হবে। ঘরবাড়ি বন্ধক দিয়ে, জমিজিরেত বিক্রি করে ৩০ লাখ মানুষের আদালত থেকে ট্রাইবুন্যালে মাসের পর মাস যে অমানুষিক দৌড়ঝাঁপ, কায়িক ও মানসিক ক্লেশের পরও বিদেশী তকমা জোটার ভীতি থেকে রেহাই নেই। ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস (এনআরসি) এবং যে শীর্ষ আদালতের উদ্যোগে তা চলছে সেটি এবার সাংঘাতিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১ লক্ষ মানুষকে রাষ্ট্রহীন করার মুখে দাঁড় করিয়ে রেখে এই নাগরিকপঞ্জী নবায়ন কোনও নতুন খাতে বইছে না। শীর্ষ আদালতও কোনওমতে নিজেকে রাজনৈতিকভাবে বহুদাবিভক্ত এবং আইনত অস্বস্তিকর এক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম এই এনআরসি কয়েক দশকের ভাতৃঘাতী বিভাজন, অভিবাসন এবং অনুপ্রবেশ বিবাদের সমাপ্তি ঘটাবে। কিন্তু তা না হয়ে সেটি বিপথগামী—অসমের সীমানা ছাড়িয়ে অন্যান্য রাজ্যেও ধর্মীয় এবং জাতিতত��ত্বমূলক মেরুকরণ ঘটাচ্ছে। দুহাজার আঠারোর ৩০ শে জুলাই প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জির নবায়িত খসড়ায় নাম বাদ পড়েছে চল্লিশ লক্ষ মানুষের। তখন থেকেই শীর্ষ আদালতকে বারবার এই প্রক্রিয়ার ব্যাপ্তি বুঝেশুনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হয়েছে যার ফলে দাবী এবং আপত্তি জানানোর ���ময়সীমা বেশ ক’বার বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফার শেষদিকে ১৫ই ডিসেম্বর ২০১৮তে পনের লাখেরও কম মানুষ নতুন দাবী দায়ের করাতে সক্ষম হন, বাদবাকি ২৫ লক্ষ রয়ে গেলেন রাষ্ট্রহীন ঘোষিত হবার অপেক্ষায়। এমনকী এমনকি ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮-র তৃতীয় দফায়ও দাবী জানানোর প্রক্রিয়াটি যথেষ্টভাবে কার্যকর হয়নি। পত্রপত্রিকার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১০ লাখেরও বেশী মানুষ ফাইল ক্লেইম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণখানা ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ডিসেম্বর ২০১৮য় অসম সরকার আদালতে স্বীকার করে যে যেসব মানুষ ক্লেইম প্রক্রিয়ায় অংশ নেননি তারা অশিক্ষিত এবং দরিদ্র তাই ফর্ম ফিল-আপ করতে পারেননি, তাদের হয়ত বিষয়টি জটিল লেগেছে। গরীব সম্প্রদায়ভুক্ত জনগণের ক্ষেত্রে শুরুতেই তো কোনও পরিচয়পত্র থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই-র কোঠায়, সেখানে খুঁজেপেতে বের করে যোগাড় করাটাই একটি কঠিন কর্ম। বিষয়টিকে আরও গোলমেলে করে তুলতে আইনি প্রক্রিয়াও শেষমেষ বাড়িয়ে তোলে আমলাতান্ত্রিক দূর্বোধ্যতা। জনগণ তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণে কোন কোন নথি জমা দিতে পারবেন, এই বিষয়টি আদালত নিয়মিত পর্যালোচনা করেছে । কিন্তু এই আদালত নির্ধারিত নথিমালা ছিল খুবই বিতর্কিত, যাতে ব্যাপকহারে ভোগান্তি, আতঙ্ক এবং যন্ত্রণায় শিকার হয়েছেন বহু মানুষ। নব্য দেশভক্তির এই যুগে সরকারের কাজকর্মের প্রতি প্রবল আশাবাদ এবং শর্তহীন সমর্থন রাখাটাই চলতি রীতি। সেই রীতি অনুযায়ী আমরা বলতেই পারি এনআরসি প্রক্রিয়ার মতো প্রকান্ড মাপের রাজসূয় যজ্ঞে এমনটা হবারই ছিল। সামান্য পরিমাণে আইনি অনিশ্চিয়তা এবং কার্যকারিতার অভাব সেখানে থাকবেই। হয়ত আমাদের বলা হয়েছিল বিষয়টি আদালতের দেখাশোনায় থাকবে এ ব্যাপার সুনিশ্চিত। এবং আদালতের সুপারভিশন বহাল রইবে। কিন্ত আইনি প্রক্রিয়ায় আমাদের এই স্বআরোপিত বিশ্বাস ছিল ভুল এবং তা আদালত-পরিচালিত প্রক্রিয়াটির গভীর বৈপরীত্যগুলোকে এড়িয়ে যায়। বিচার বিভাগীয় তত্ত্বাবধানের আপাতবিরোধীতার ভিত্তি: শীর্ষ আদালত ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর অসম সম্মিলিত মহাসংঘ বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলাটিতে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী এনআরসি নবায়নের কাজ শুরু করে। মহাসংঘ নাগরিকত্ব আইনের অনুচ্ছেদ 6A কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল যা কিনা রাজ্যে নাগরিকত্বের জন্য আলাদা-আলাদা নিয়ম প্রদান করার মাধ্যমে অসম চুক্তিকে কার্যকর করার জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। প্রভিশন অনুসারে, অন্যান্য রাজ্যের বিপরীতে, ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালের আগে অসমে অভিবাসনকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা ভারতীয় নাগরিক হিসাবে বা নাগরিকত্ব প্রাপ্তি�� যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। নিজেদের পিটিশনে মহাসংঘ যুক্তি দেখায় যে ওই প্রভিশন বাংলাদেশ থেকে ব্যাপকহারে অবৈধ অভিবাসীদের অনুপ্রবেশে উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে এ রাজ্যের নাগরিকদের ‘জীবনের অধিকার’কে লঙ্ঘন করছে। এতে এটাও বলা হয় নির্দিষ্ট শাসকদল তাদের সংবিধান-সুনিশ্চিত সাংস্কৃতিক অধিকারকে খর্ব করছে। বিচারপতি জাস্টিস গগৈ (এখনকার মুখ্য ন্যায়াধীশ) এবং জাস্টিস নরিম্যানের অধীনে বিচারপতিদের এক সহানুভূতিশীল বেঞ্চ সুপারিশ করেন যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বিষয়টিকে একটি বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠান হোক। এরকম করতে গিয়ে ওই বেঞ্চ অনুচ্ছেদ 6A-র সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে গভীর প্রশ্ন তোলে। কিন্তু ওই একই নির্দেশনামাতেই বেঞ্চ এনআরসি নবায়নে তদারকি শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়: এক আদালত নির্ধারিত ক্যালেন্ডারে এবং অনুচ্ছেদ 6A তে উল্লিখিত আবশ্যিকতারগুলোর ভিত্তিতে। কী আশ্চর্য! শীর্ষ আদালত দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিরাটমাপের বিচারব্যবস্থা-নেতৃত্বাধীন এক আমলাতান্ত্রিক মহাপ্রক্রিয়া শুরু করেছে এমনসব নিয়মের ভিত্তিতে যার আইনি বৈধতাও এ অবধি নির্ধারিত হয়নি! এনআরসি নিয়ে চলতি আলোচনায় পুরোপুরিভাবে উপেক্ষিত মনে হওয়া এই আপাতবিরোধিতা, বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়ার কিছু বেশ অস্বস্তিকর জিজ্ঞাসার জন্ম দেয়। অনুচ্ছেদ 6A-র চূড়ান্ত আইনি মূল্যায়ন করার জন্য শীর্ষ আদালতের পক্ষে অপেক্ষা করাটাই কি বেশি বিবেচ্য ছিল না? ভবিষ্যতে আদালতের কোনও বিষয় নিয়ে সাংবিধানিক বেঞ্চকে রেফার করাও কি অনাবশ্যক করে দিল এই এনআরসি? অথবা আদালত কি অবশেষে এটা শুনছে যে ওই সাংবিধানিক বেঞ্চ অনুযায়ী এনআরসি প্রক্রিয়া কি খুব ত্রুটিপূর্ণ? অলীক-অবাস্তব সংখ্যামালা: অস্বস্তিকর স্ববিরোধগুলি এখানেই শেষ হচ্ছে না। এনআরসি নবায়নের আগে এবং পরে অসমে অভিবাসন বিতর্কে শীর্ষ আদালতের জড়িত হওয়া বিষয়টি উদ্বেগ এবং অনথিভুক্ত বাংলাদেশী অভিবাসীদের সংখ্যা নিয়ে অযৌক্তিক ভীতির ভিত্তিতে হয়ে এসেছে। তিনজন বিচারক বিশিষ্ট বেঞ্চের হয়ে লিখতে গিয়ে বিচারপতি জিপি মাথুর ২০০৫ সালের সর্বানন্দ সনোয়াল মামলার রায়ে ‘আইএমডিটি' (ইললিগাল মাইগ্র্যান্টস ডিটারমিনেশন বাই ট্রাইবুনাল) অ্যাক্টের অংশবিশেষ বেআইনি বলে খারিজ করে দেন, ‘অসমে নিঃশব্দ, এবং বৈরিতা সৃষ্টিকারী জনতাত্ত্বিক আক্রমণ’ এই ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রমাণের দায়ভার রাষ্ট্রের হাত থেকে নিয়ে বর্তান ব্যক্তির উপরে। ওই বেঞ্চ সরকারের দায়ের করা বিভিন্ন হলফনামা গ্রহণ করে নামমাত্র গুরুত্ব দিয়ে। আদালত জানায় যে, ‘বৃহৎ মাপের এই অবৈধ অভিবাসন’ শুধুমাত্র অনুপ্রবেশই নয়, একধরণের ‘বাহ্যিক আগ্রাসন’ও যা ‘অভ্যন্তরীণ অশান্তি’-র দিকে নিয়ে যায়। ‘ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক ইসলামিক মৌলবাদ’ এবং আঞ্চলিক উত্তরাধিকার নিয়ে ভয় প্রকাশ করে আদালত। এগুলো নেহাৎই বাগাড়ম্বরতা ছিল না। ‘বিপদজনক’ অনথিভুক্ত অভিবাসনের ব্যাপ্তি এবং পরিমাণ ছিল ওই মামলার এক আইনি ভিত্তি। বিচারপতি মাথুরের জানান, আইএমডিটি অ্যাক্টের ফলে যে বিদেশীদের সনাক্ত করা হয় তা দাবীকৃত প্রকৃত বিদেশীদের সংখ্যার চেয়ে অনেক কম এবং কেন্দ্রীয় সরকার অনুচ্ছেদ ৩৫৫ তে নির্দেশিত বাহ্যিক আক্রমণ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাঘাত থেকে তার নাগরিকদের রক্ষা করার সংসদীয় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু আইএমডিটি অ্যাক্ট যে যথেষ্ট নয়, এর প্রমাণ কী ছিল? বিচারপতি মাথুর যদিও স্বীকার করেছিলেন আসামের অনথিভুক্ত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না, আদালত সংসদে দায়ের করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক বিবৃতির উপর নির্ভর করে, যে নথি অনথিভুক্ত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা ৫০ লক্ষ হতে পারে বলে নির্দেশ করে। অসমের জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশের এই নাটকীয় সংখ্যামালা মনে হয় আদালতকে বিশ্বাস যোগায় যে আইএমডিটি আইনের অধীনে মাত্র ১০,০১৫ জন ব্যক্তির সনাক্তকরণ হওয়া সম্পূর্ণভাবেই অপর্যাপ্ত। মহাসংঘের মামলায় বিচারপতি নরিমান ঠিকই এই বিষয়ে নির্ভর করে সুনিশ্চিত হলেন যে রাজনৈতিক শাখাগুলো অনথিভুক্ত অভিবাসন মোকাবিলায় ‘মূল্যবান যতসামান্য’ই কাজ করছে, আদালতের সক্রিয় ভূমিকা চেয়ে। (…political branches were doing “precious little” to deal with undocumented immigration, necessitating an active role for the courts…) কিন্তু সমস্যা হল এসবের কিছুই নিয়ে কোনও তথ্য ছিল না। আরটিআই করে জানা তথ্যভিত্তিক এক সাম্প্রতিক প্রবন্ধে দেখা যাচ্ছে ২০০৪ সালে বিবৃতি দেওয়ার পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক একটি স্পষ্টীকরণ জানায় যে ওই সংখ্যা ‘কোনও পরিসংখ্যান বা গবেষণা ভিত্তিক নয়’ এবং আরও মন্দ খবর ‘লোকের মুখে শোনা এবং তাও আগ্রহী পক্ষের’। স্পষ্টীকরণে বলা হয়েছে, “অসমের অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের কোনও বাস্তবসম্মত পরিসংখ্যান দেওয়া সম্ভব নয়”।এই ত্রুটিপূর্ণ সংখ্যাম��লা অভিবাসন সমস্যাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বিপদজনক করে দেখিয়েছে। এনআরসি নবায়নের সময় এগুলোই প্রক্রিয়াটির সাফল্যের মানদন্ড হয়ে ওঠে। অসমের অনেকের কাছে, এমনকী এই ৪০ লক্ষও অনেক কম। সকলেই এবার ওই অলীক-অবাস্তব সংখ্যামালার পেছনে ছুটছে। (চলবে) মূল লেখা: https://thewire.in/law/nrc-supreme-court-crisis
1 note
·
View note