New Post has been published on https://paathok.news/122850
সেতুমন্ত্রীর এপিএস পরিচয়ে প্রতারণা, ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
.
এমপি-মন্ত্রী-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য ছিল ঢাকা কলেজে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগ করার কারণে। এরপর তো তিনি দাবি করতেন ছাত্রসংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছেন বলেন। এসময় এমপি-মন্ত্রী-পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে তা দিতেন ফেসবুকে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তোলা একটি গ্রুপ ছবি ‘ভালোবাসার শেষ ঠিকানা…’ ক্যাপশনে একাধিকবার ফেসবুকে পোস্টও করেছেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। সরকারি বিভিন্ন দফতরে গিয়ে নিজেকে পরিচয় দিতেন সেতুমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে। আর এসবের মধ্যেই চলছিল তার তদবির বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি। যার মাধ্যমে মোজাম্মেল হক ইয়াছিন (৩৩) হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস পরিচয় দিয়ে তার (মন্ত্রীর) সিল ও সই জালিয়াতির ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এ সদস্য। এখন শ্রীঘর-ই মোজাম্মেলের ঠিকানা।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের জাউলহাটী চৌরাস্তা এলাকার ৭৭৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক মোজাম্মেল হক ইয়াছিনকে (৩৩) গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম। এই ঘটনায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উচ্চমান সহকারী (প্রশাসন শাখা) এস এম আবুল কালাম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরে বাংলানগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। প্রতারক মোজাম্মেল নেত্রকোনার মদন উপজেলার বনতিয়শ্রী গ্রামের আ. রশিদের ছেলে।
গত ১৭ নভেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব ইমাম মোরশেদ এর কাছে অধিদপ্তরের অস্থায়ী কার্য-সহকারী পদে মো. মাঈন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির জন্য চাকরির সুপারিশ নিয়ে যায় প্রতারক মোজাম্মেল হক। এক পৃষ্ঠার ওই আবেদনপত্রের উপরে সবুজ কালি দিয়ে লেখা ছিল ‘সদয় বিবেচনা করিয়া অস্থায়ী কার্য-সহকারী পদে চাকরি দেওয়া জন্য জোর সুপারিশ করছি। ’ সেখানে সেতুমন্ত্রীর সই এবং মন্ত্রীর নাম সম্বলিত সিল দেওয়া ছিল। যদিও এই সিল ও সই দুটোই জাল (ভুয়া) ছিল।
সেতুমন্ত্রীর সুপারিশ দেখেই এলজিইডি অধিদপ্তরের প্রকৌশলী মাহবুব ইমাম মোরশেদ দ্রুতই আবেদনপত্রটি ফরওয়ার্ড করে দিয়েছিলেন। কিছুদিন পরে প্রতারক প্রকৌশলীকে সেতুমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে ফোন করেন। এরপর সন্দেহ জাগলে সেতুমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন মাহবুব ইমাম। এরপর তিনি বুঝতে পারেন, মোজাম্মেল হক একজন প্রতারক।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব ইমাম মোরশেদ বলেন, মাসখানেক আগে মোজাম্মেল হক সেতুমন্ত্রীর এপিএস পরিচয় দিয়ে আমার দফতরেই এসেছিলেন। সেতুমন্ত্রীর সুপারিশ করা একটি চাকরির আবেদনপত্র দিয়ে বলেছিলেন, মন্ত্রীমহোদয় এই কাজটি করে দিতে বলেছেন। তার কিছুদিন পর সে মোবাইল ফোনেও এপিএস পরিচয় দিয়ে তদবির করেন। তার চালচলন ও কথাবার্তায় সন্দেহ হলে, সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এই নামে সেতুমন্ত্রীর কোনো এপিএস নেই। তিনি একজন প্রতারক। পরে তাকে বুঝতে না দিয়ে বিষয়টি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে জানাই। এরপর তদন্ত করে তারা প্রতারক মোজাম্মেল হককে গ্রেফতার করেছে।
গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতারক মোজাম্মেল নিজেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দিতেন। এছাড়াও ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকিরের কমিটিতে তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে স্থান পান বলেও সবার কাছে বলে বেড়াতেন। ২০১৪ সালে মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। ঢাকা কলেজে পড়লেও মানুষের কাছে বলতেন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। ফেসবুকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছবি পোস্ট দিয়ে সবার কাছে নিজেকে ক্ষমতাধর হিসেবে প্রচার শুরু করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দাওয়াত কার্ডের ছবি তুলে সেটিও ফেসবুকে দিয়েছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে তা ফেসবুকে দিতেন এই প্রতারক। এসবের উদ্দেশ্য ছিল ছবিগুলো বিভিন্ন মানুষকে দেখিয়ে তদবির করা। কাজ হওয়ার আগেই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন প্রতারক মোজাম্মেল। এভাবে তদবির বাণিজ্য করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। এছাড়াও প্রতারণার মাধ্যমে তদবির করে হাতিয়ে নেওয়া বিপুল অর্থে কামরাঙ্গীরচরে একটি বাড়ির নির্মাণ করছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, প্রতারক মোজাম্মেল হক নিজেকে ছাত্রলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সোহাগ-জাকিরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় গ্রেফতার মোজাম্মেল হক কোনো কমিটিতেই ছিলেন না। তারা আসামি মোজাম্মেল হককে দেখে চিনতেও পারেন নি।
এবিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, সেতুমন্ত্রীর সিল ও সই জালিয়াতির ঘটনা��� এলজিইডি অধিদপ্তর থেকে পাওয়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকার বাসা থেকে মোজাম্মেলকে গ্রেফতার করি। সে সরকারি বিভিন্ন দফতরে গিয়ে নিজেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এপিএস পরিচয় দিতেন। চাকরির সুপারিশ, বদলিসহ বিভিন্ন তদবির করতেন। সর্বশেষ এলজিইডি অধিদপ্তরে এক প্রকৌশলীর কাছে এপিএস পরিচয় দিয়ে চাকরির সুপারিশ করেছিলেন এই প্রতারক। এমনকি ওই সুপারিশের মধ্যে থাকা সেতুমন্ত্রীর সিল ও সইও তারই করা জালিয়াতি ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর একান্ত সচিব গৌতম চন্দ্র পাল গণমাধ্যমকে বলেন, বুধবার ডিবি পুলিশের একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। মোজাম্মেল হক ইয়াছিন নামে স্যারের (সেতুমন্ত্রী) কোনো এপিএস নেই। তাদের মাধ্যমেই জেনেছি, ওবায়দুল কাদের স্যারের সিল ও সই জালিয়াতি করেছে এই লোক। যদি তিনি অপরাধ করে থাকেন তবে আইন অনুযায়ী তার সঠিক বিচার হোক এটাই আমরা গোয়েন্দা পুলিশকে বলে দিয়েছি।
0 notes
New Post has been published on https://paathok.news/78619
এবার মৃত্য বাবার কাছে ব্যারিস্টার তুরিনের খোলা চিঠি
.
এবার মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মৃত বাবার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ সেতু।
এর আগে গত ২০ জুন নিজ বাসায় প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেন তুরিন আফরোজের মা সামসুন নাহার তসলিম ও ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশির।
সংবাদ সম্মেলনে তুরিন আফরোজের মা সামসুন নাহার তসলিম দাবি করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রশাসনের সহায়তায় জোরপূর্বক তাঁর মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমার শরীর ভীষণ খারাপ। কিডনির ৬৫ শতাংশ ড্যামেজ হয়ে গেছে, সঙ্গে প্রেশার ও ডায়াবেটিস আছে। এসবের ওষুধ কেনার পয়সা ভাড়ার টাকা থেকে পেতাম। সেটাও সে (তুরিন আফরোজ) কেড়ে নিয়েছে। দেশে থাকার জায়গা নেই, এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াই।’
‘আমি এই বয়সে কেন আমার দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে পড়ে থাকব। আমার জন্মস্থান, আমার ৪৮ বছরের সংসার যেখানে, আমি সেখানেই থাকতে চাই।’ বলছিলেন সামসুন নাহার তসলিম।
এদিকে মা ও ভাইয়ের সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগের বিরুদ্ধে মৃত বাবার কাছে দুই পর্বের খোলা চিঠি লিখেছেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। এ বিষয়ে তুরিন আফরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে আমি তো রাস্তায় বক্তব্য দিতে পারি না। মৃত বাপীর (বাবা) কাছে চিঠি দিয়ে জানালাম।’
(তুরিন আফরোজের লেখা চিঠি হুবহু তুলে ধরা হলো)
“বাপীর কাছে চিঠি -১
সুপ্রিয় বাপী
তোমার মৃত্যুটা মেনে নেয়া খুব কষ্টকর। তবে তোমার মৃত্যু আমাকে বাস্তবতা শিখিয়েছে। মানুষের আসল রূপ চিনতে বাধ্য করেছে। সেটা যে এতো জঘন্য-নোংরা, সেটা আমি আসলেই জানতাম না। তুমি মারা গেলে ২০১৭ সালের ৩রা জানুয়ারী। শোক সামলে উঠতে না উঠতেই একরাশ দ্বায়ীত্ব আমার ঘাড়ে এসে পড়লো। তোমার অসমাপ্ত কাজগুলো সামলাবার। আমি একা, কারণ তোমার ছেলে তোমার মৃত্যুর ১১ দিন পড়েই পাড়ি জমালো তার দেশে, পড়ে রইলাম আমি আর মামণি।
মামনিকে সামলানো, শোক ভুলাতে তাকে কাজে ব্যস্ত রাখা, “অভিনন্দন” (আমাদের সুখের স্বর্গ) কে দেখে-শুনে রাখা সব দ্বায়ীত্ব এসে পড়লো আমার ঘাড়ে। সাথে আমার দুটো চাকরী, সুমেধা, পড়ালেখা, লেখালেখি, মিডিয়া, সমাজ-সংসার তো আছেই। মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়লো। কী ভাবে কী সামলাই! এতোদিন তো অনেক কিছুই তুমি সামলিয়েছো। তোমার বড় সন্তান হিসেবে এখন তো স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে সব দেখতে হবে। তুমি তো আমাকে কোন দিন মেয়ে হিসেবে বড় করোনি। বড় করেছো একজন মানুষ হিসেবে। আমি দ্বায়ীত্ব নিতে ভয় পেলে তো চলবে না, তাই না?
২০১৭ সালের ৩১শে জানুয়ারী (মঙ্গলবার) – তোমার মৃত্যুর পর তোমার প্রথম জন্মদিন। এমনিতেই মনটা ভীষণ খারাপ সেদিন। তোমার কথা খুব মনে পড়ছিল। তুমি তোমার জন্মদিনের কেক খাওয়ার জন্য বসে থাকতে! এতো ডায়াবেটিস থাকতো তোমার কিন্তু তাও মানতে না। দু-তিন পিস না খেলে তোমার চলতো না। মামণিরও নিশ্চয়ই মন খারাপ ছিল সেদিন। তুমি চলে যাওয়ার পর সেও তো একা হয়ে গেছে। অন্তত ঝগড়া করার সাথীটা তো আর তার বেঁচে নেই। হঠাৎ মনে হোল, ফেব্রুয়ারি মাসের ভাড়া তুলতে হবে। ঠিক করলাম, মামনিকে এই দ্বায়ীত্ব দিলে কেমন হয়। আমার কাজও একটু কমে, আবার মামনিও ব্যস্ত থাকতে পারবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। একটা নোটিশ লিখে ফেললাম সব ভাড়াটিয়াদের কাছে। যেখানে লিখলাম,
“জনাব
আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে গত ৩রা জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে আমার পিতা – জনাব তসলিম উদ্দিন আহমেদ পরলোকগত হয়েছেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্নালিল্লাহে রাজিউন)। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমার পিতা আমার পক্ষে ‘অভিনন্দন’, বাড়ি ১৫, রোড ১১, সেক্টর ৩, উত্তরা ঢাকাস্থ বাড়ির সকল ভাড়া ও যাবতীয় বিল আপনাদের সকলের থেকে নিয়মিত সংগ্রহ করতেন এবং বিল সমূহ নির্দিশট সময়ের মধ্যে আমার নিযুক্ত কর্মচারী মোঃ আমির হোসেন, পিতা- মোঃ সেলিম হাওলাদার, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পরিশোধের ব্যাবস্থা করতেন। এছাড়াও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমার পিতা আমার পক্ষে এই বাড়ির সকল উন্নয়ন ও মেরামতের কাজও তত্ত্বাবধায়ন করতেন।
বর্তমানে, আমার পিতার মৃত্যুর পর, আমার বিধবা মাতা, জনাবা সামসুন নাহার তসলিম, এখন থেকে আমার পক্ষে ‘অভিনন্দন’, বাড়ি ১৫, রোড ১, সেক্টর ৩, উত্তরা ঢাকাস্থ বাড়ির সকল ভাড়া ও যাবতীয় বিল আপনাদের সকলের থেকে নিয়মিত সংগ্রহ করবেন এবং বিল সমূহ নির্দিশট সময়ের মধ্যে পরিশোধের ব্যাবস্থা করবেন।
তবে উল্লেখ্য যে, আমার মাতার সাময়িক অনুপস্থিতিতে, ‘অভিনন্দন’, বাড়ি ১৫, রোড ১, সেক্টর ৩, উত্তরা ঢাকাস্থ বাড়ি সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।
আপনাদের সকলের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
বিনীত
-সই-
ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ …”
সকল ভাড়াটিয়ারা সেই নোটিশ পেয়ে আমার কপিতে নিজেদের স্বীকার প্রাপ্তি হিসেবে সইও করে দিলেন। নীচে সেই চিঠির ছবি দিলাম। তুমি দেখে নাও ঠিক আছে তো? বানান ভুল করলে আবার বকা দিতে এসোনা। তোমার তো আবার সব পারফেক্ট হওয়া চাই।
কিন্তু বাপী, আজ সারাদিন ধরে মিডিয়াতে শুনলাম আমি নাকি তোমার মৃত্যুর পর মামনিকে ভাড়া তুলতে বাধা দিয়েছি। বাড়ি দখল করেছি। ভাড়াটিয়াদের বলেছি সব টাকা আমার হাতে তুলে দিতে।
বাপী, বলোতো, এসব কেন আমার বিরূদ্ধে বলা হচ্ছে? জানি তোমার এসব শুনে কষ্ট হচ্ছে। আমারও বাপী, সুমেধারও। সুমেধাও তো আর ছোট নেই। ও এখন অ-নে-ক কিছু বুঝে। যখন দেখে যারা এসব কথা মিডিয়াতে বলছে, তারা ওর চেনা মুখ। তখন ওর কষ্টগুলো আরও বেড়ে যায়। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি কী উত্তর দিব? তোমার আদরের সুমেধাকে তুমি একটু বুঝিয়ে বলোতো। আমি সুমেধাকে কাছে বসিয়ে বোঝাই, সত্যকে সব সময় চোখ দিয়ে দেখা যায়না। সত্যকে মাঝে মাঝে খুঁজতে হয়।
বাপী, আজ আসি। কাল আবার চিঠি লিখব।
ইতি
তোমার সেতু
বাপীর কাছে চিঠি – ২
সুপ্রিয় বাপী
মামনি আর শিশিরের আমার বিরুদ্ধে ডাকা প্রেস কনফারেন্স মিডিয়াতে দেখলাম। মামনি কাঁদছিল – বাপী, মামনির কান্না দেখে খারাপ লাগছিল। মামনি কাঁদবে কেন? আমি না হয় তার যোগ্য সন্তান হতে পারিনি। আমার সাথে মামনি সম্পর্ক শেষ করেছে তোমার মৃত্যুর কয়েক মাস পরই। কথা বলাও বন্ধ করে দিয়েছে তখন থেকেই। আমার অপরাধ?
তুমি যখন ধানমন্ডির ল্যাব এইড হসপিটালে লাইফ সাপোর্টে ছিলে তখন সেই হসপিটালের সকল দর্শনার্থীদের সামনে মামনি আর তার সৈয়দপুরের বোন-বোন জামাই আমাকে বললো, “তোর বাবা কষ্টে মরবে না ক্যানো? সে একটা বেঈমান।“ বাপী, আমি নিতে পারিনি কথাটা। তুমি তো তখনো শ্বাস নিচ্ছিলে। বাপী, আমার আর সুমেধার জীবনে তুমি ছাড়া আর কে ছিল বল? আর ওই মুহূর্তে তুমি আমাদের ফেলে চলে যাচ্ছিলে। আমি তোমাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছিলাম যেন কোন অলৌকিক ভাবে তুমি বেঁচে যেতে পারো। হ্যা, বাপী, আমি তোমার অপমান মেনে নিতে পারিনি। চীৎকার করে প্রতিবাদ করেছিলাম। ছোট কাকু, কাকী আর তার বোনও ছিল সেখানে। আমার বডিগার্ডও ছিল। তারা আমাকে সরিয়ে নিয়ে যায় যাতে লোকজনের সামনে নাটক না বাড়ে। কিন্তু বাপী, আমার জায়গাতে অন্য মেয়ে থাকলেও কি একই ভাবে প্রতিবাদ করতো না?
শিশিরের কথা বলতে পারি না। তোমার তিনবার হার্ট এট্যাক হল – কই একবারও তো শিশির আর মামনি লন্ডন আর কানাডা থেকে আসলো না? সেই প্রথমবার তোমার হার্ট এটাক ২০০৮ সালে। সুমেধার তখন মাত্র ৮/৯ মাস। আমি টানা তিন দিন এক কাপড়ে ধানমন্ডির ল্যাব এইড হসপিটালে আই সি ইউ-র সামনে মাটিতে বসে কাটিয়েছি। কেউ সরাতে পারেনি। যখন তোমার জ্ঞান ফিরেছে, তারপর উঠেছি। ছোট কাকু, ডঃ আমজাদ মামা, সবাই আমাকে বুঝিয়েছে। সুমেধা কেমন আছে তার কথাও মনে আসেনি। বাপী, একই ঘটনা-ই তো ঘটলো পরের দুবার। না বাপী, আমি প্রেস কনফারেন্স করিনি কারো বিরুদ্ধে কষ্টের কথাগুলো বলতে।
বাপী, তুমি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগেই মামনি আর শিশির তোমার কেনা গাড়ি বিক্রি করলো। তোমার বিছানা, পড়ার টেবিল, চেয়ার, সোফা, বইয়ের তাক, অফিস টেবিল, অফিস চেয়ার সব বিক্রি করে দিল। তোমার শখের লাইব্রেরীর দেয়াল ভাঙল যাতে সেটা আর লাইব্রেরী না থাকে। বাপী, তোমার শেষ দিনগুলোতে তোমার জ্ঞান ছিলোনা। বাড়িতে যারাই আসতো, তোমার বন্ধুরা, প্রতিবেশীরা, ভাড়াটিয়ারা তারা এসব কাণ্ড দেখে স্তম্ভিত হয়ে যেত। বাপী, তোমার ব্রীফকেস টাও উঠোনে বিক্রির জন্য রাখা ছিল। আমি পাগলের মত যা পেয়েছি তিন তলায় উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। না বাপী, আমি প্রেস কনফারেন্স করিনি কারো বিরুদ্ধে কষ্টের কথাগুলো বলতে।
মামণি প্রেস কনফারেন্স করে কাঁদছে কেন? তার সুপুত্র তো তার সাথেই রয়েছে। শিশির কি তাহলে তার যত্ন নিতে পারছেনা? তার দেখা শোনা ঠিক মত করতে পারছেনা? তার সুপুত্র থাকতে তাকে ওষুধ না খেয়ে রাস্তায় ঘুরতে হচ্ছে কেন?
বাপী, প্রেস কনফারেন্সে মামনি কেঁদে বললো, তুমি মারা যাওয়ার ৫৮ দিন পর আমি নাকি মামনিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি।
বাপী, তুমি আসল ঘটনাই জানোনা। আমি কাউকেই বাড়ি থেকে বের করে দেইনি। শিশিরই আমাকে তুমি মারা যাওয়ার ৫৮ দিন পর বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
তুমি মারা গেলে ২০১৭ সালের ৩রা জানুয়ারী। ২০১৭ সালের ২রা মার্চ হয় তোমার মারা যাওয়ার ৫৮ দিন। দিনটি শিশিরের জন্মদিন – তোমার ছেলের জন্মদিন। আর সেই দিনই কানাডা থেকে শিশির আমাকে আর সুমেধাকে উচ্ছেদ করার নোটিশ দিল ইমেইল করে। নীচে সেই চিঠির ছবি দিলাম।
শিশির আমাকে কথা বলতে শুরু করার পর থেকেই “দাদা” বলে ডাকতো এটা তো তুমি জানোই। ২০১৭ সালের ২রা মার্চ –এর সেই নোটিশে কি লিখলো শিশির?
“প্রিয় দাদা
আমরা তোমাকে কাছে পেয়ে খুব আনন্দ পেয়েছি, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমি আমার বাড়ি ফেরত চাই এবং মার্চ মাসের মধ্যে তোমাকে এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলতে বাধ্য হচ্ছি। যদি কোন বৈধ কারণে এই তারিখটি তোমার জন্য অসুবিধাজনক হয়ে থাকে, তবে তুমি আমাকে সুবিধাজনক একটি তারিখ জানাবে। আমি তোমাকে বেশ কয়েকবার ফোন করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি।
দয়া করে বাড়ি ১৫, রোড ১১, সেক্টর ৩, উত্তরা থেকে তোমার সকল ব্যাক্তিগত জিনিস পত্র সরিয়ে ফেলবে এবং ছাদের চাবি সহ বাড়ির সকল চাবি মামনি অথবা রাশিকে ফেরত দিবে। আমি তোমার তিন তলার ফ্ল্যাটের পরিদর্শনের ব্যাবস্থা করব যেন তুমি সব কিছু ঠিক মত রেখে যাচ্ছ। আর চলে যাওয়ার পরদিন (অর্থাৎ ১লা এপ্রিল শনিবার) আমি পরিষ্কারের ব্যাবস্থা করব।
একই সাথে তোমার সরকার কর্তৃক নিযুক্ত নিরাপত্তা কর্মীবৃন্দ যারা বর্তমানে গ্যারেজ অথবা নীচের উঠানে অবস্থান করছে তাদেরকে জায়গা খালি করতে বলবে এবং তারা যেন একি তারিখের মধ্যে রক্ষিত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চলে যায়।
দয়া করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী এবং মার্চ-এর গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি সব বিল পরিশোধ করে যাবে। …
প্রিয় বোন, আমি তোমাকে আর আমার বাড়িতে রাখতে সক্ষম না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটা আমাদের সকলের জন্য ভাল হবে। আমি তোমাকে শুভ কামনা জানাই তুমি যেন তোমার নতুন পরিবেশে গিয়ে ভাল থাক যেখানে তোমার আর আমার সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না।
ইতি
শিশির”
বাপী, বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করল কে আর কে প্রেস কনফারেন্স করে কাঁদছে!
বাপী, জানো, আমি নোটিশ পেয়েই মামনির সাথে দেখা করতে চাইলাম এক তলায়। কিন্তু রাশি বলল, মামনি আমার সাথে কথা বলবে না, দেখা ও করবে না। আমি আবার উপরে এসে শিশিরকে তার ইমেইল এর জবাব দিলাম। নীচে আমার সেই ইমেইল এর জবাব এর ছবি দিয়েছি। দেখে নিও।
শিশির কে লিখলাম ওই একই দিনে, মানে তোমার মৃত্যুর ৫৮ দিনের দিন (২রা মার্চ ২০১৭) –
“প্রিয় শিশির
তোর ইমেইলের প্রাপ্তি স্বীকার করছি।
তুই তোর ইমেইলের প্রথম প্যারা তে লিখেছিস –
“আমরা তোমাকে কাছে পেয়ে খুব আনন্দ পেয়েছি, কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমি আমার বাড়ি ফেরত চাই এবং মার্চ মাসের মধ্যে তোমাকে এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলতে বাধ্য হচ্ছি। যদি কোন বৈধ কারণে এই তারিখটি তোমার জন্য অসুবিধাজনক হয়ে থাকে, তবে তুমি আমাকে সুবিধাজনক একটি তারিখ জানাবে।“
এই ব্যাপারে আমার বক্তব্য –
(১) বাড়ি ১৫, রোড ১১, সেক্টর ৩, উত্তরার ঠিকানাতে আমি অন্য কারো বাড়ি দখল করে নেই। সুতরাং ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে বাড়ি অথবা চাবি ফেরত দেয়ার প্রশ্ন আসে না।
(২) উপরন্তু, বাড়ি ১৫, রোড ১১, সেক্টর ৩, উত্তরা বাড়ির মালিকানা নির্ধারণের বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। যতক্ষণ না পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে এই বাড়ির মালিকানা নিরূপিত হচ্ছে, আমি এই বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য নই।
প্রিয় ভাই, তুই আরো লিখেছিস –
“প্রিয় বোন, আমি তোমাকে আর আমার বাড়িতে রাখতে সক্ষম না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এটা আমাদের সকলের জন্য ভাল হবে। আমি তোমাকে শুভ কামনা জানাই তুমি যেন তোমার নতুন পরিবেশে গিয়ে ভাল থাক যেখানে তোমার আর আমার সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে না।“
(৩) আমি আশ্চর্য হচ্ছি, এই বাড়িতে থাকার সময় তুই আমাকে কখন সাহায্য করেছিস!!! সব কিছুই পরিষ্কার হবে যখন মাননীয় আদালত এই বাড়ি নিয়ে মালিকানা বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। আমরা তখন সবাই জানতে পারবো এত বছর ধরে কে কাকে সাহায্য করে আসছে!!!
শুভেচ্ছান্তে,
দাদা”
বাপী, আমি কি ভুল কিছু করেছি?
আমি কি কাউকে বাড়ি থেকে বের করেছি তোমার মৃত্যুর ৫৮ দিনের দিন?
উল্টো তোমার মৃত্যুর ৫৮ দিনের দিন আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার পদক্ষেপ নেয়া হল।
না বাপী, আমি এসব নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করিনি। আমি ক্ষমতা দেখাতে যাইনি। আমি বড় আপু, ছোট আপু, পুলিশ, র্যাব , ডিজিএফআই কারো ধমকী দেইনি। আমি একজন সাধারণ নাগরিকের মত পারিবারিক সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজেছি আপোষের মাধ্যমে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে যা করা সম্ভব তা-ই করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছি।
তাহলে বাপী, আমি তোমার মৃত্যুর ৫৮ দিনের দিন মামনিকে বের করে দিলাম কিভাবে? বর��� তোমার মৃত্যুর ৫৮ দিনের দিন আমাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার নোটিশ জারী করা হল।
সেদিন ইমেইল লেখার পর কি হয়েছিল সেটা কালকের চিঠিতে লিখব। সেটা জানলে তুমি হতভম্ব হয়ে যাবে! কত বড় মিথ্যার সাথে লড়াই করছে তোমার মেয়ে তুমি ভাবো!
বাপী, তুমি শিখিয়েছ, সত্য সূর্যের মত। তাকে বেশী দিন আড়াল করে রাখা যায় না। কালকের চিঠিতে আরও সত্যের কথা বলব।
ইতি
তোমার সেতু”
0 notes