#কোরআন- সূরা- আলাক
Explore tagged Tumblr posts
kawsarkhanuniverse-blog · 1 year ago
Video
youtube
096 সূরা আলাক || Al 'alaq | The Clot | سورة العلق | আল কোরআন বাংলা অনুবা...
0 notes
khutbahs · 5 years ago
Link
মানব সৃষ্টি সম্পর্কে ইসলাম ও বিজ্ঞানের ভাষ্য
পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টির মূল উপাদান পানি। এই মৌলিক উপাদান পৃথিবীর সব জীবদেহের মধ্যে বিদ্যমান। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)। জীববিজ্ঞানের মতে, সাগরের অভ্যন্তরের পানিতে যে প্রটোপ্লাজম বা জীবনের আদিম মূলীভূত উপাদান রয়েছে তা থেকেই সব জীবের সৃষ্টি। আবার সব জীবদেহ কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষ গঠনের মূল উপাদান হচ্ছে পানি। ভিন্নমতে, পানি অর্থ শুক্র। (কুরতুবি)
তা ছাড়া আকাশ ও পৃথিবী বন্ধ ছিল, অর্থাৎ আগে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হতো না এবং জমিনে তরুলতা জন্মাত না। আল্লাহর ইচ্ছায় বৃষ্টি বর্ষিত হলো এবং মাটি তা থেকে উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করে। (ইবনে আব্বাস)
পৃথিবীর জীবকোষের মূল উপাদান যেমন পানি, তেমনি এই পানিই মাটির উৎপাদন ক্ষমতা লাভের প্রধান উপাদান। মহান আল্লাহ এই ধরণিতে মাটি থেকে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করেন এবং তারপর তা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই মানবজাতি। মহান আল্লাহর ভাষায়, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পারো।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে ‘মানব ক্লোন’। এই ক্লোন পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দিতে গেলে পুরুষের জীবকোষের প্রয়োজন। অর্থাৎ একজন পুরুষের জীবকোষ বা শুক্রাণু ব্যতীত একজন নারী সন্তান জন্মদানে অক্ষম। কেননা নারীর ডিম্বাণু ক্রমোজম (XX) ও পুরুষের শুক্রাণু ক্রমোজম (SY) পুত্র-কন্যা সন্তান গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখানে ঈসা (আ.)-এর জন্ম সম্পর্কে প্রশ্ন হতে পারে, কিন্তু মহান আল্লাহ এ প্রশ্নের সমাধান পবিত্র কোরআনে যথাযথভাবে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন অতঃপর তাকে বলেছিলেন, হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেল।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৫৯)
আদি মানব-মানবী ও তাদের সন্তান সৃষ্টির পূর্ব ও পরের রহস্য নিয়ে নিম্নে আলোকপাত করার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।
মানব সৃষ্টির আদি কথা
আদি পিতা আদম (আ.)-এর সৃষ্টি নিয়ে বিভিন্ন বস্তুবাদী গবেষক, দার্শনিক নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। যেমন—আদি মানব স���্প্রদায় বানর ছিল! কালের আবর্তনে পর্যায়ক্রমে বানর থেকে মানবে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বর্তমান যুগে কি বিশ্বের কোথাও একটি বানর মানবে রূপান্তরিত হয়ে জীবন যাপন করছে? কিংবা কোনো বানরের গর্ভ থেকে মানব সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে ও বেঁচে আছে? এর জবাব হলো নেতিবাচক। এটা সকলের জানা। আদি মানব কী বস্তু থেকে সৃষ্টি তা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে ‘কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা।’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত : ৭),
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি মানবের পচা কাদা থেকে তৈরি বিশুদ্ধ ঠনঠনে মাটি।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ২৬)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘পোড়া মাটির মতো শুষ্ক মাটি থেকে (মানুষকে) সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ১৪)
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ৭৫)
আদম (আ.) মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি। কিন্তু মা হাওয়া (আ.) কী দিয়ে সৃষ্টি—সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি তার (আদম) থেকে তার যুগল (হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৬)
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তার (আদম) থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দুইজন থেকে অগণিত নারী-পুরুষ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১)।
অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীকে, তোমাদের জন্যই সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)
মহান আল্লাহ আদম (আ.)-এর পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে মা হাওয়াকে সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নারী জাতিকে পাঁজরের বাঁকা হাড় দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের মধ্যে একেবারে ওপরের হাড়টি অধিক বাঁকা। যদি তা সোজা করতে যাও, ভেঙে ফেলবে। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তবে সব সময় বাঁকাই থাকবে। সুতরাং তোমরা নারীর সঙ্গে উত্তম ও উপদেশমূলক কথাবার্তা বলবে।’ (বুখারি হাদিস : ৩০৮৫)
পৃথিবীতে প্রথম মানব আদম (আ.) মাটি থেকে এবং প্রথম মানবী হাওয়া (আ.) আদমের পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি। এতদ্ব্যতীত সকল মানব-মানবী এক ফোঁটা অপবিত্র তরল পদার্থ (বীর্য) থেকে অদ্যাবধি সৃষ্টি হয়ে চলেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, জমাট বাঁধা রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণ আকৃতি ও অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট গোশতপিণ্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করি।’ (সুরা হজ্জ, আয়াত : ৫)
এভাবে আজও মানব বংশবিস্তার অব্যাহত আছে বিবাহ-বন্ধন ও স্বামী-স্ত্রীর মিলন ব্যবস্থার মাধ্যমে, যাতে মহান আল্লাহর মহৎ উদ্দেশ্য সফল হয়।
মানবীয় মর্যাদার বিভিন্ন দিক
মানবীয় মর্যাদার বিভিন্ন দিক আছে। প্রথমত, যে আকার-আকৃতি ও সামঞ্জস্যপূর্ণ শারীরিক কাঠামো মহান আল্লাহ মানুষকে দান করেছেন, তা অন্য কোনো সৃষ্টবস্তুকে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, যে জ্ঞান মানুষকে দেওয়া হয়েছে, যার দ্বারা তারা নি��েদের জীবন গতিশীল করার জন্য নিত্যনতুন বস্তু আবিষ্কার করেছে, অন্য কোনো সৃষ্টবস্তুকে তা দেওয়া হয়নি। তৃতীয়ত, মানুষকে আসমানি ওহি দেওয়া হয়েছে। এই জ্ঞান দিয়ে তারা কল্যাণ-অকল্যাণ, উপকারী-অপকারী ও ভালো-মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম। চতুর্থত, মানুষকে একধরনের বিশেষ জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সে আল্লাহর অন্য সৃষ্টবস্তু থেকে উপকৃত হতে ও বশে রাখতে সক্ষম। আল্লাহর কিছু সৃষ্টবস্তু এমন আছে, যেগুলোর শক্তিমত্তার কথা ভেবেও মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়। অথচ মহান আল্লাহ সেগুলোও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। যেমন—চাঁদ, সূর্য, বাতাস, পানি মানুষের বশে নেই, কিন্তু দিব্যি এগুলো মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত।
মানুষের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হলো, তিনি তাকে বিশেষ দেহ-কাঠামো দান করেছেন। সুন্দর চেহারা, সুষম দেহ, উপযুক্ত প্রকৃতি ও অঙ্গসৌষ্ঠব আল্লাহর বিশেষ দান। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম অবয়বে।’ (সুরা ত্বিন, আয়াত : ৪)
মানুষকে দুই পায়ে সম্পূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়েছ। হাত দিয়ে খাওয়ার শক্তি দেওয়া হয়েছে। অন্য প্রাণীরা চার পায়ে হাঁটে। মুখ দিয়ে খায়। মানুষকে যে চোখ, কান ও অন্তর দেওয়া হয়েছে, মানুষ এসব সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে।
গর্ভে সন্তান গঠনের রহস্য
গর্ভে সন্তান গঠনের চক্র সাধারণত দীর্ঘ ২৮০ দিন যাবত চলতে থাকে। যা ৪০ দিন অন্তর সুনির্দিষ্ট সাতটি চক্রে বিভক্ত। নারী-পুরুষের যৌন মিলনের সময় নারীর ডিম্বনালির ফানেলের মতো অংশে ডিম্বাণু নেমে আসে। ওই সময় পুরুষের নিক্ষিপ্ত বীর্যের শুক্রাণু জরায়ু বেয়ে ওপরে উঠে আসে এবং তা ডিম্বনালিতে প্রবেশ করে। প্রথমে একটি শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বাণুটির দেহে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে অন্য কোনো শুক্রাণু প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে নারীর ডিম্বাণু নিষিক্ত (Fertilization) হয় এবং নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে নেমে প্রোথিত (Embedded) হয়। (গাইনোকলজি শিক্ষা, পৃষ্ঠা : ২২)
তা ছাড়া নারীর ডিম্বাণুর বহিরাবরণে প্রচুর সিয়ালাইল-লুইস-এক্সসিকোয়েন্স নামের চিনির অণুর আঠালো শিকল শুক্রাণুকে যুক্ত করে পরস্পর মিলিত হয়। আর এই শুক্রাণু দেখতে ঠিক মাথা মোটা ঝুলে থাকা জোঁকের মতো। জোঁক যেমন মানুষের রক্ত চুষে খায়, শুক্রাণু ঠিক তেমনি ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করে মায়ের রক্তে থাকা প্রোটিন চুষে বেড়ে ওঠে। নিষিক্ত ডিম্বাণুটি সন্তান জন্মের রূপ নিলে সাধারণত নিম্নে ২১০ দিন ও ঊর্ধ্বে ২৮০ দিন জরায়ুতে অবস্থান করে। ওই সময়ের মধ্যে ডিম্বাশয়ে নতুন করে কোনো ডিম্বাণু প্রস্তুত হয় না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমরা মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমরা তাকে শুক্রবিন্দুরূপে এক সংরক্ষিত আ��ারে (জরায়ুতে) স্থাপন করেছি। এরপর শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে গোশতপিণ্ডে পরিণত করেছি, এরপর গোশতপিণ্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে গোশত দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুনরূপে করেছি।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১২-১৪)
তিনি আরো বলেন, ‘এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত, অতঃপর আমরা একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, আমরা কত সুনিপুণ স্রষ্টা।’ (সুরা মুরসালাত, আয়াত : ২২-২৩)।
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন এবং তাতে রুহ সঞ্চার করেন।’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত : ৯)
এখানে মানব সৃষ্টির সাতটি স্তর উল্লেখ করা হয়েছে। স্তরগুলো হলো মাটির সারাংশ, বীর্য, জমাট রক্ত, গোশতপিণ্ড, অস্থি পিঞ্জর, অস্থিতে গোশত দ্বারা আবৃত্তকরণ ও সৃষ্টির পূর্ণত্ব অর্থাৎ রুহ সংহারণ। (তাফসিরে মা’আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা ৯১৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) মাতৃগর্ভে মানবশিশু জন্মের স্তর সম্পর্কে এভাবে বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে বীর্যের আকারে ৪০ দিন, জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতাকে পাঠান এবং চারটি বিষয়ে আদেশ দেন যে, তার (শিশুর) আমল, রিজিক, আয়ুষ্কাল ও ভালো না মন্দ—সব লিপিবদ্ধ করো। অতঃপর তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৬৮)
অন্যত্র এসেছে, ‘আল্লাহ মাতৃগর্ভে একজন ফেরেশতা মোতায়েন করেন। ফেরেশতা বলেন, হে রব! এখনো তো ভ্রূণ মাত্র। হে রব! এখন জমাট বাঁধা রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। হে রব! এবার গোশতের টুকরায় পরিণত হয়েছে। আল্লাহ যদি তাকে সৃষ্টি করতে চান, তখন ফেরেশতাটি বলেন, হে আমার রব! (সন্তানটি) ছেলে না মেয়ে হবে, পাপী না নেককার, রিজক কী পরিমাণ ও আয়ুষ্কাল কত হবে? অতএব এভাবে তার তাকদির মাতৃগর্ভে লিপিবদ্ধ করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৭)
নারী ও পুরুষের বীর্যের সংমিশ্রণ ঘুরতে থাকে এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এর চতুর্দিকে একটি আবরণের সৃষ্টি হয়। যাতে করে ভ্রূণটি ধ্বংস হতে না পারে। এরপর আস্তে আস্তে একবিন্দু রক্তকণায় পরিণত হয় এবং সেই রক্তকণা গোশতপিণ্ডে ও অস্থিমজ্জায় পরিণত হয়, এভাবেই সৃষ্টি হয় মানবশিশু। (মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম, বিজ্ঞান না কুরআন, পৃষ্ঠা ১০৯-১১০)
মাতৃগর্ভে শিশুকে সংরক্ষণের জন্য মাতৃজঠরের তিনটি পর্দা বা স্তরের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। যথা—পেট বা গর্ভ, রেহেম বা জরায়ু এবং ভ্রূণের আবরণ বা ভ্রূণের ঝিল্লি গর্ভফুল (Placenta)
(বাইবেল, কুরআন ও বিজ্ঞান, পৃষ্ঠা ২৭৭)
এই তিন স্তর সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে—পর্যায়ক্রমে, একের পর এক ত্রিবিধ অন্ধকারে।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৩৯/৬)
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে পবিত্র কোরআনে যে ‘ত্রিবিধ অন্ধকারের’ কথা বলা হয়েছে। এই তিনটি অন্ধকার হলো, ১. রেহেম, ২. মাশীমা বা গর্ভফুল এবং ৩. মায়ের পেট।
রেহেমে রক্তপিণ্ড ছাড়া সন্তানের আকার-আকৃতি কিছুই তৈরি হয় না। আর ��র্ভফুল (Placenta) ভ্রূণ বৃদ্ধি, সংরক্ষণ, প্রতিরোধ ইত্যাদি কাজে অন্যতম ভূমিকা রাখে। গর্ভফুল মায়ের শরীর থেকে রক্তের মাধ্যমে নানা পুষ্টি ভ্রূণের দেহে বহন করে, খুব ধীর গতিতে রেচন পদার্থ মায়ের দেহের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। গর্ভফুলের সাহায্যে ভ্রূণ অক্সিজেন (02) গ্রহণ ও কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) ত্যাগ করে মায়ের ফুসফুসের মাধ্যমে, জীবাণু (Infection) থেকে ভ্রূণকে রক্ষা করে। এ ছাড়া ভ্রূণটি ঠিকমতো জরায়ুতে আটকে রাখা, পুষ্টি সঞ্চয়, সম্পর্ক রক্ষা, হরমোন সৃষ্টি ইত্যাদি কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এভাবে ভ্রূণটি জরায়ুতে বেড়ে উঠতে থাকে ও ১২০ দিন অতিবাহিত হলে শিশুর রুহ ফুঁকে দেওয়া হয়। আর শিশু নড়েচড়ে ওঠে ও আঙুল চুষতে থাকে এবং পূর্ণ-পরিণত হওয়ার পরে সেখান থেকে বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়। (সুরা আবাসা, আয়াত : ১৮-২০)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘ঠেলে দেওয়া হয়।’ অর্থাৎ ২১০ দিন পর একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার উপযুক্ত হয়। আর সন্তানটির যখন ভূমিষ্ঠ হওয়ার উপযুক্ত সময় হয়ে যায়, তখন Overy-Placenta থেকে একধরনের গ্রন্থিরস নিঃসৃত হয়, যা প্রসব পথ পিচ্ছিল ও জরায়ুর মুখ ঢিলা করে দেয়। আর মানব সন্তান ওই সময় বিভিন্নভাবে নড়াচড়া করতে থাকে এবং প্রসব পথ পিচ্ছিল থাকায় বাচ্চা অনায়াসে বেরিয়ে আসে। সবচেয়ে মজার কথা হলো মানবশিশুর যে অঙ্গ সর্বপ্রথম গঠিত হয় তা হলো কর্ণ। আর সন্তান গর্ভে ধারণের ২১০ দিন পর চক্ষু গঠিত হয় এবং একটি পূর্ণাঙ্গ মানবশিশুতে পরিণত হয়।
পুত্র-কন্যাসন্তান সৃষ্টির রহস্য
মহান আল্লাহ বলেন, ‘নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যাকে ইচ্ছা কন্যা এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন। অথবা তাদের পুত্র-কন্যা উভয় দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ, ক্ষমতাশীল।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ৪৯-৫০)
এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করলে পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। আবার স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করলে কন্যাসন্তান জন্ম নেয়।’ (মুসলিম, মিশকাত, হাদিস : ৪৩৪)
আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের মতে, জরায়ুতে যদি কন্যা ভ্রূণ সৃষ্টি হয়, তাহলে করটিকস কম্পোন্যান্টগুলো (Cortics Componant) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে এবং মেডুলার কম্পোন্যান্টগুলো (Medullar Componant) কমতে থাকে। পক্ষান্তরে জরায়ুতে যদি পুত্র ভ্রূণ সৃষ্টি হয়, তাহলে করটিকস কম্পোন্যান্টগুলো (Cortics Componant) কমতে থাকে এবং মেডুলার কম্পোন্যান্টগুলো (Medullar Componant) বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে। তা ছাড়া মানুষের প্রতিটি দেহকোষে মোট ২৩ জোড়া ক্রমোজম থাকে। তন্মধ্যে ২২ ঝোড়া অটোজম এবং এক জোড়া সেক্স (Sex) ক্রমোজম। নারীর ডিম্বাণুতে XX ক্রমোজোম এবং পুরুষের শুক্রাণুতে XY ক্রমোজম থাকে। সুতরাং নারীর ডিম্বাণুর X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের শুক্রাণুর X ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম হবে XX এবং কন্যাসন্তানের জন্ম হবে। পক্ষান্তরে নারীর ডিম্বাণুর X ক্রমোজমকে যদি পুরুষের শুক্রাণুর Y ক্রমোজম নিষিক্ত করে, তবে জাইগোটের ক্রমোজম হবে XY এবং পুত্রসন্তান জন্ম হবে। [মাধ্যমিক সাধারণ বিজ্ঞান, জীবকোষের গঠন ও প্রকৃতি অধ্যায়, (ঢাকা : নব পুথিঘর প্রকাশনী), পৃষ্ঠা : ১৬১]
মোদ্দাকথা, ��খন ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর জাইগোটের ক্রমোজম একই গোত্রীয় (XX) হয়, তখন কন্যাসন্তান এবং যখন ডিম্বাণুর ও শুক্রাণুর জাইগোটের ক্রমোজম একই গোত্রীয় (XY) না ��য়, তখন পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। [J.N. Ghoshal, Anatomy Physiology, (Calcata print) P. 479]
অতএব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ নির্ভর করে পুরুষের দেহে উৎপন্ন শুক্রাণুর ওপর। আর যমজ সন্তান জন্মদানের জন্য সবচেয়ে বেশি ভূমিকা স্ত্রীর।  আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, নারীর ডিম্বাশয় থেকে যখন একটি ডিম্বাণু জরায়ুতে নেমে আসে, তখন একটি শক্তিশালী শুক্রাণু তাতে প্রবেশ করে একটি সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু যদি দুটি ডিম্বাণু জরায়ুতে নেমে আসে, তখন দুটি শক্তিশালী শুক্রাণু তাতে আলাদা আলাদা প্রবেশ করে। ফলে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। (গাইনোকলজি শিক্ষা, পৃষ্ঠা ১৫)
আবার সন্তানের আকৃতি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পুরুষ যখন স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্য প্রথমে স্থলিত হয়, তাহলে সন্তান পিতার আকৃতি পায়। পক্ষান্তরে যদি স্ত্রীর বীর্য প্রথমে স্থলিত হয়, তাহলে সন্তান মায়ের আকৃতি লাভ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩০৮৩)
এভাবেই সন্তান সৃষ্টির গূঢ় রহস্য বেরিয়ে এসেছে।
শেষ কথা
আল্লাহ তাআলা সুনিপুণ করে সুন্দর আকৃতিতে মনোরম কাঠামোতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আধুনিক বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন গবেষণা করে আল্লাহর সৃষ্টির নিগূঢ় রহস্য উদ্যাটন করে চলেছে। এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিরা! তোমরা গবেষণা ও শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ২)
যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে মানুষ সৃষ্টির চেয়ে মহাকাশ সৃষ্টিকে অতীব বিস্ময়কর মনে করেছেন। দিন দিন নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কারে বিস্মিত হয়েছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা উপলব্ধি করে না।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ৫৭)
আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করার অনুমতি আছে। আমাদের সবার উচিত আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি গভীর দৃষ্টিপাত করে মহত্ত্ব ঘোষণা করা। বর্তমানে  চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে নতুন নতুন তথ্য উদ্ধার করছেন। অথচ অনেক আগেই এই তথ্য মানব কল্যাণে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। বলা যেতে পারে, কোরআনই সুশৃঙ্খল কল্যাণকর অকৃত্রিম বিস্ময়কর এলাহি বিজ্ঞান এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বকালের যুগশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তা উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
পরিমার্জন ও পুনর্বিন্যাস : মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহThe mystery of Allah's creation
0 notes
authorbappy-blog · 7 years ago
Photo
Tumblr media
মাদ্রাসা শিক্ষার গুরুত্ব ও অপ্রতুল সহযোগিতা অধ্যক্ষ মোঃ ইয়াছিন মজুমদার আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ঘোষনা করেছেন- হে নবী আপনি বলে দিন, যারা জানে আর যারা জানেনা তারা সমান নয় (সূরা জুমার, আয়াত- ৯) আল্লাহপাক আরো বলেছেন- পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন (সূরা আলাক, আয়াত- ১)। নবী (সঃ) বলেছেন- আলেমের মর্যাদা একজন আবেদ বান্দার উপর তেমনি যেমনি আমারও সাধারণ মানুষের মর্যাদার পার্থক্য (তিরমিযী)। নবী (সঃ) আরো বলেন- যখন আল্লাহ কোন বান্দার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন (মুসনাদে আহমাদ)। দুনিয়ার ক্ষনস্থায়ী জীবনের জন্য বিদ্যার্জন, কর্মতৎপরতা যেমনি প্রয়োজন পরকালীন স্থায়ী জীবনের জন্য যথাযথ আমল তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন। আমলের নিয়ম পদ্ধতি, মাসআলা মাসায়েল, বিশুদ্ধ উচ্চারণে কোরআন তিলাওয়াত জানা না থাকলে, দোয়া, তাছবীহ পড়তে না জানলে পরকালীন জীবনের জন্য আমল করা সম্ভব হয় না। পিতা-মাতার এমন সন্তান রেখে যাওয়া উচিৎ নয় যারা তাদের জানাজায় দাড়িয়ে সঠিকভাবে দোয়াগুলো পড়তে জানে না। বর্তমানে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় সাধারণ বই গুলো একই বই পাঠ্য। দশম শ্রেণী পর্যন্ত বই সরকারী ভাবেই সরবরাহ করা হয়। সাধারণ শিক্ষায় একটি বিদেশী ভাষা- ইংরেজী। শিক্ষার্থীরা সাধারণত এ বিষয়ে ফলাফল খারাপ করে থাকে। অপর দিকে মাদরাসা শিক্ষার্থী ইংরেজীর পাশাপাশি আরো একটি বিদেশী ভাষা আরবী শিখতে হয়। দু’টি বিদেশী ভাষার মুখোমুখী হওয়ার পরও মাদ্রাসার ছাত্ররা বরাবরই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে সাধারণ শিক্ষার ফলাফল থেকে ভালো করছে। সাধারণ শিক্ষায় বারংবার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও মাদ্রাসার ক্ষেত্রে তা দেখা য়ায় না। মাদ্রাসার পাঠ্য বিষয় সাধারণ শিক্ষার তুলনায় বেশি। এইচ.এস.সি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রকে ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়, একই সমমানের মাদ্রাসা ছাত্রকে ১৭০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। মাদ্রাসায় মান সম্মত শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তার বড় উদাহরণ হল বিশ^বিদ্যালয় গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। বিগত কয়েক বছরের ঢাকা বিশ^ বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের দিকে তাকালে দেখা যাবে অধিকাংশ বছরই মাদ্রাসা ছাত্র প্রথম স্থান সহ অনেক গুলো শীর্ষ স্থান দখল করেছে। ২০০৮-০৯ শিক্ষা বর্ষে “খ” ইউনিটে ২য় স্থান অধিকারী মাদরাসা ছাত্র আবদুল খালেক। সে বছর মেধা তালিকার প্রথম দশজনের চারজনই মাদ্রাসার ছাত্র। ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে “খ” ইউনিটে প্রথম হন মাদ্রাসা ছাত্র আবদুল আলীম, ২য় হন মাদ্রাসার ছাত্র সেলিমুল কাদের, ৩য়, ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম, ১০ম, ১৭তম, ১৮তম হন মাদ্রাসার ছাত্র, একই বছর “ঘ” ইউনিটে প্রথম মাদ্রাসার ছাত্রী এলিছ জাহান, ২য় মাদ্রাসার ছাত্র মিজানুল হক, ৪র্থ ও ১১তম হন মাদ্রাসার ছাত্র। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে “খ” ইউনিটে ১ম স্থান হন মাদ্রাসার ছাত্র মাসরুর বিন আনসারী, ২য়, ৪র্থ, ৫ম, ১৬তম, ১৭ তম, ১৮তম হন মাদ্রাসার ছাত্ররা। একই বছর “ঘ” ইউনিটে প্রথম মাদ্রসার ছাত্র আসাদুজ্জামান, ২য় স্থান ও দখল করে মাদ্রাসার ছাত্র। এরপর মাদ্রাসার ছাত্ররা যেন প্রতিযোগিতা করতে না পারে তার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০০ নম্বর করে বাংলা ইংরেজী সিলেবাসে থাকার শর্ত করে দেয়। এতদিন মাদ্রাসায় আরবী প্রাধান্য থাকায় ১০০ নম্বর করে বাংলা ইংরেজী ছিল। ১০০ নম্বর পড়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা ২০০ নম্বর পড়–ুয়া স্কুল কলেজ ছাত্রদের থেকে মেধায় এগিয়ে থাকার প্রমাণ দিলেও শর্তারোপের কারণে বাধ্য হয়ে মাদ্রাসার মূল আরবী শিক্ষা কিছুটা সংকুচিত করে স্কুল কলেজের ন্যায় ২০০ নম্বর করে বাংলা ইংরেজী মাদ্রাসার সিলেবাসভুক্ত করা হয়। এরপর ও থেমে নেই মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অগ্রযাত্রা ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরিক্ষার ফলাফলে (পাশের হার ছিল ৯.৯৮) “ঘ” ইউনিটে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম হন মাদ্রাসার ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন, মানবিক শাখা থেকে ১ম হন মাদ্রাসার ছাত্র রিফাত হোসেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে খ ইউনিটে প্রথম স্থান অধিকার করে মাদ্ররাসা ছাত্র আবদুল্লাহ মজুমদার। তাছাড়া মেধা তালিকায় স্থান নেয়া সাধারণ শিক্ষার অনেকে এস.এস.সি পর্যন্ত মাদ্রাসায় পড়ে কলেজে ভর্তি হয়ে এইচ.এস.সি পাশ করা। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাস্থান প্রাপ্তদের গড়ে সকল বোর্ডে ভাগ করে দিলে মাদ্রাসা বোর্ড পাবে প্রায় ৫ জন, বাকীদের ভাগে গড়ে ১ জন করে ও পড়বেনা। এভাবে মেধার পরিচয় দেয়ার পরও উচ্চ শিক্ষিত সংকীর্ণমনা কিছু ব্যাক্তির কারণে ভর্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মাদ্রারাসা ছাত্র বিরুপতার শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন সময় সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অবদান রাখলেও বাস্তবতায় সাধারণ শিক্ষায় সরকারের সাহায্যের তুলনায় তা একেবারে নগণ্য। আপনি যে কোন ইউনিয়ন পর্যায়ের একটি স্কুলে গিয়ে তাদের সরকার প্রদত্ত অবকাঠামো এবং একই ইউনিয়নের একটি মাদ্রাসায় গিয়ে তাদের জন্য সরকারের প্রদত্ত অবকাঠামো, উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে একটি কলেজের অবকাঠামো ও একই স্থানের সমমানের মাদ্রাসার অবকাঠামোর দিকে তাকালে তা বুঝতে মোটেও অসুবিধা হবে না। একটি ডিগ্রি কলেজে ইন্টার ১ম, ২য় বর্ষ, ডিগ্রি ১ম, ২য়, ৩য় বর্ষ মোট মৌলিক শ্রেণী ৫টি, অপরদিকে ১টি ডিগ্রি মাদ্রাসা ১ম শ্রেণী থেকে ডিগ্রি ৩য় বর্ষ পর্যন্ত ১৫টি মৌলিক শ্রেণীকক্ষের প্রয়োজন। ভবন বরাদ্দে সে দিকটি বিবেচনা করা হয় না। ১৯৯৪ ইং সনে একই পরিপত্রে স্বতন্��্র প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা গড়ে ওঠে। বেতন ছিল মাসিক ৫০০ টাকা। ঐ প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকে প্রথমে বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত ও পরবর্তীতে সরকারি করণ করা হয়েছে। অপর দিকে ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকের বেতন ৫০০ টাকার স্থলে বর্তমান সরকার ১০০০ টাকা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে হয়তো বলা হবে- আমরা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন দ্বিগুণ করেছি। কিন্তু সে দ্বিগুণ বেতন একজন শিক্ষকের মাসিক ১০০০ টাকা হওয়া উপহাঁস ছাড়া আর কিছু কি? তাদেরকে সংযুক্ত ইবতেদায়ীর সমস্কেলে নিলে ও ইজ্জত কিছুটা রক্ষা পেত। দেশে হাজার হাজার সরকারি স্কুল কলেজ রয়েছে অথচ সরকারি মাদ্রাসা রয়েছে মাত্র ০৩ টি। বর্তমান সরকার ছয়শতাধিক স্কুল কলেজকে নতুন করে সরকারি করণের ঘোষনা দিলে ও একটি মাদ্রাসাকে ও সরকারি করণের ঘোষনা অদ্যাবধি দেয়া হয়নি। চলতি অর্থ বছরের বাজেটে আমার জানা মতে মাদ্রাসা ও কারিগরী শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা অথচ সাধারণ শিক্ষার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিশ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ছোট রাষ্ট্র, জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশী, এদেশে চাকুরীর বাজার খুবই সীমিত। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে কর্মসংস্থানের অভাব থাকায় তারা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য আমাদের বিশাল শ্রম বাজার। বৈদেশিক মুদ্রা যা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে তার সিংহভাগ আসছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের ভাষা আরবী, আরবী জানা ব্যতীত সেখানে গিয়ে ভালো চাকুরী ও বেতন পাওয়া কঠিন। ভাষা শিখতে শিখতে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মাদ্রাসার ছাত্ররা ব্যতিক্রম, তারা সহজে ভাষা আয়ত্ব করে নেয়। এজন্য আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গের অনেক হিন্দু ছেলে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবী শিখছে। তারা আরবী ভাষা আয়ত্ব করে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে চাকুরী করবে। এক সময় জঙ্গী বলতে মাদ্রাসার ছাত্রদের দিকে অভিযোগের আংগুল তোলা হত। সে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত করে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা মসজিদে জুমার খুতবায়, শ্রেণী কক্ষে, বিভিন্ন সভা সমাবেশে, কোরআন ও হাদিসের আলোকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করছে। এভাবে মাদ্রাসা শিক্ষিতরা মেধার ক্ষেত্রে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে, জঙ্গিমুক্ত জাতি গঠনের ক্ষেত্রে অবদান রাখার পর ও সাধারণ শিক্ষার তুলনায় সুযোগ সুবিধা কম পাওয়া দুঃখজনক। বর্তমান সরকার আরবী বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কওমী মাদ্রাসা স্বীকৃতি প্রদান সহ মাদ্রাসার উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তবে সাধারণ শিক্ষার তুলনায় তা এখনো অনেক কম। আশা করি সরকারিকরণ, অবকাঠামোগত সুবিধা দান, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। [
0 notes
babulsanaullah · 4 years ago
Video
93, Surah Ad Dhuha, সূরা দোহা, Al Quran, Only Bangla Translated, আল কোরআ...
Tafsir maariful quran bangla, tafsir al quran bangla, #Al_Quran_Bangla tafsir online, al quran bangla tafsir, bangla al quran 30 para, quran with bangla translation full 1 to 30, quran bangla translation word by word, al quran bangla tafsir mp3 free download, quran with bangla translation full 1 to 30, quran bangla translation word by word, #Bangla_Surah, #বাংলা_মর্মবাণী,
কোরআন পড়েছি বহুবার। কিন্তু তেমন কিছুই বুঝি নি, ভেতরে ডুব দিতে পারি নি কখনো। যখন এক নীরব মুহূর্তে কোরআনের গভীরে ডুবে গেলাম, আয়াতগুলো যেন কথা বলতে শুরু করল। শিহরিত, চমকিত হলাম। এক জীবনে যা চাই, তার সবই সাজানো রয়েছে কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা।
সবকিছু মিলিয়েই জীবন। তাই সমস্যা শরীরের হোক বা মনের, যৌন জীবনের জট হোক বা অর্থনৈতিক জটিলতা, পণ্যের আসক্তি হোক বা  প্রবৃত্তির দাসত্ব, ব্যক্তির অসততা হোক বা সামাজিক অবিচার, পার্থিব সুখ হোক অথবা পরকালীন পরিত্রাণ, সব একই সূত্রে গাঁথা। একটাকে আরেকটা থেকে আলাদা করা যায় না। কোরআন এই চিরায়ত সত্যকেই প্রকাশ করেছে সুস্পষ্টভাবে।
‘পড়ো! তোমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুর নামে। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন নিষিক্ত ডিম্ব থেকে। পড়ো! তোমার প্রতিপালক মহান দয়ালু! তিনি মানুষকে জ্ঞান দিয়েছেন কলমের। আর মানুষকে শিখিয়েছেন, যা সে জানত না।’ সূরা আলাক-এর এই পঙক্তিমালা দিয়েই কোরআন নাজিলের সূচনা।
ইতিহাস সাক্ষী! কোরআন ছাড়া আর কোনো গ্রন্থই প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে মানুষের হৃদয়ে এত আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে নি, এত দ্রুত মানুষকে এমনভাবে বদলে দিতে পারে নি। কোরআন সরাসরি যাদের সামনে নাজিল হয়েছিল তারাই শুধু আলোকিত হন নি; ধর্মান্ধতা ও পাশবিকতার পরিবর্তে ধর্ম, মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির এই স্রোত প্রবাহিত হয়েছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। ধর্ম, মানবিকতা ও মুক্তবুদ্ধির এই স্রোত ইতিহাসের মধ্যযুগে সৃষ্টি করেছিল এক আলোকোজ্জ্বল সভ্যতা।
প্রতিটি মানুষ বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই একটি মৌলিক প্রশ্নের জবাব জানতে চায়। তা হলো, দুনিয়ায় আমি কীভাবে ভালো থাকব? মৃত্যুর পর কোনো জীবন আছে কি? থাকলে সেখানে কীভাবে ভালো থাকব? চৌদ্দ শ বছর ধরে কোরআন থেকে যত বেশি সংখ্যক মানুষ এই প্রশ্নের বোধগম্য জবাব পেয়েছে, আর কোনো গ্রন্থ থেকে সে তা পায় নি। কোরআন তাই কোটি কোটি মানুষের কাছে অনুভূত হয়েছে পরম করুণাময়ের করুণার এক উজ্জ্বল নিদর্শনরূপে।
কোরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর কালাম। নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়। এর শব্দবিন্যাস, এর ছন্দ, এর সৌন্দর্য, এর ব্যঞ্জনা, এর অন্তর্নিহিত শক্তি, এর গভীরতা অতুলনীয়। তাই আজ পর্যন্ত এর একটি ছোট্ট সূরার সমকক্ষ সূরা কেউ রচনা করতে পারে নি। কোরআন যেহেতু আল্লাহ সরাসরি আরবি ভাষায় নাজিল করেছেন, তাই অন্য কোনো ভাষায় এর মহিমাকে অক্ষুণ্ন রেখে অনুবাদ কর��� কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে আন্তরিকতা নিয়ে এর মর্মবাণী অনুধাবন করতে চাইলে যে-কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষেই তা সম্ভব। কারণ ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল মানুষের হেদায়েতের জন্যেই কোরআন নাজিল হয়েছে। তাই কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহতে সমর্পিত একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আত্মনিমগ্ন হয়ে ধ্যানের স্তরে তাঁর কালামের মর্মবাণী উপলব্ধি করেছি আর বিস্মিত, চমকিত হয়েছি।
আপ্লুত হয়েছি কোরআনের বাণীর চির নতুনত্বকে উপলব্ধি করে। দেখেছি বর্তমান যুগের প্রতিটি যন্ত্রণা ও প্রতিটি জিজ্ঞাসার জবাব এক চমৎকার গাঁথুনিতে গাঁথা আছে। স্পষ্টত অনুভব করেছি চৌদ্দ শ বছর আগে অধঃপতিত অবিদ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষগুলো এই কোরআনের বাণীর মর্মার্থ অনুধাবন ও তা অনুসরণ করে নিজেদেরকে পৃথিবীর সেরা মানুষে রূপান্তরিত করেছিলেন, আলোকোজ্জ্বল সভ্যতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
একইভাবে যে-কোনো বঞ্চিত, অবহেলিত বা অধঃপতিত মানুষ যদি কোরআনের মর্মবাণীকে অনুধাবন করতে পারে, অনুসরণ করতে পারে, তাহলে সে-ও পরিণত হবে যথার্থ মানুষে, সফল মানুষে, আলোকিত মানুষে। আর এই মানুষেরাই হবে ভবিষ্যৎ আলোকোজ্জ্বল সভ্যতার নির্মাতা। সমাজ মুক্তি পাবে অবিদ্যা লালসা বঞ্চনা শোষণ ও পণ্যদাসত্বের শৃঙ্খল থেকে। বর্তমানের প্রেক্ষাপটে কোরআনের গুরুত্ব অনুধাবন করার পর এর মর্মবাণী মায়ের ভাষায় প্রকাশ করার জন্যেই এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ।
0 notes
babulsanaullah · 4 years ago
Video
96, Surah Al Alaq, সূরা আলাক, Al Quran, Only Bangla Translated, আল কোরআন...
0 notes
khutbahs · 5 years ago
Photo
Tumblr media
কোরআন উল কারীমের সূরা আল আসরে আছে জান্নাতের অধিকারী হওয়ার সূত্র।
জান্নাত লাভের জন্য  চারটি কাজ করা আবশ্যক। কাজগুলো হলোঃ
১ ঈমান আনা
২ সৎকর্ম করা
৩ পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেওয়া এবং
৪ পরস্পরকে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দেওয়া
পবিত্র কোরআনের ১১৪টি সূরা এবং তাঁদের অর্থ ১.ফাতিহা = সূচনা ২.আল বাকারাহ = বকনা বাছুর ৩.আলি ইমরান = ইমরানের পরিবার ৪.আন নিসা = নারী ৫.আল মাইদাহ = খাদ্যপরিবেশিত টেবিল  ৬.আল আনআম = গৃহপালিত পশু ৭.আল আরাফ = উচু স্থান ৮.আল আনফাল = যুদ্ধ লব্ধ ধনসম্পদ  ৯.আত তাওবাহ = অনুশোচনা  ১০.ইউনুস = নবী ইউনুস ১১.হুদ = নবী হুদ ১২.ইউসুফ = নবী ইউসুফ ১৩.রাদ = বজ্রপাত ১৪.ইবরাহীম =নবী ইবরাহীম ১৫.আল হিজর = পাথুরে পাহাড় ১৬.আন নাহল = মৌমাছি ১৭.বনি ইসরাঈল = ইহুদি জাতি  ১৮.আল কাহফ = গুহা ১৯.মারইয়াম = মারইয়াম ( ঈসা নবীর মা ) ২০.তাহা = তাহা ২১.আল আম্বিয়া =নবীগন  ২২.আল হা্জ্জ = হা্জ্জ ২৩.আল মুমিনূন = বিশ্বাসী  ২৪.আন ন���র = আলো  ২৫.আল ফুরকান = মানদন্ড ২৬.আশ শুআরা = কবি ২৭.আন নামল = পিপড়া ২৮.আল কাসাস = কাহিনি ২৯.আল আনকাবূত = মাকড়শা ৩০.আর রূম = রোমান জাতি ৩১.লুকমান = এক জ্ঞানী ব্যাক্তি ৩২.আস সিজদাহ = সিজদা ৩৩.আল আহযাব = জোট ৩৪.সাবা = নারী সাবা/শেবা ৩৫.ফাতির = আদি স্রষ্টা ৩৬.ইয়াসীন = ইয়াসীন  ৩৭.আস সাফফাত = সারিবদ্বভাবে দাড়ানো  ৩৮. সাদ = আরবি বর্ণ সাদ ৩৯.আয যুমার = দলবদ্ধ জনতা ৪০.গাফির = ক্ষমাকারী ৪১.ফুসসিলাত(হা-মীম সিজদাহ) = সুস্পষ্ট বিবরণ ৪২.আশ শুরা = পরামর্শ  ৪৩.আয-যুখরুফ =সোনাদানা ৪৪ .আদ দুখান = ধোয়া ৪৫.আল জাসিয়া =নতজাণু ৪৬. আল আহকাফ = বালুর পাহাড় ৪৭.মুহাম্মাদ = নবী মুহাম্মাদ ৪৮.আল ফাতহ = বিজয়  ৪৯.আল হুজরাত = আবাস  ৫০.কাফ = কাফ  ৫১.আয যারিয়াত = বিক্ষেপকারী বাতাস ৫২.আত তূর = পাহাড় ৫৩.আন নাজম = তারা  ৫৪.আল কামার = চাদ ৫৫.আর রহমান = পরম করুণাময়  ৫৬.আল ওয়াকিয়া = নিশ্চিন্ত ঘটনা ৫৭.আল হাদীদ = লোহা ৫৮.আল মুজাদালাহ = অনুযোগকারিণী ৫৯.আল হাশর = সমাবেশ  ৬০.আল মুমতাহিনা = নারী যাকে পরীক্ষা করা হবে  ৬১.আস-সফ = সারিবদ্ধ সৈনদল  ৬২.আল জুমুআহ = সম্মেলন / শুক্রবার ৬৩.আল মুনাফিকূন = ভন্ড বিশ্বসী  ৬৪.আত-তাগাবুন = মোহ অপসারন  ৬৫.আত তালাক = তালাক  ৬৬.আত- তাহরীম = নিষিদ্ধকরণ  ৬৭.আল মুলক = সার্বভৌম কর্তৃত্ব ৬৮.আল-কালাম = কলম  ৬৯.আল – হাক্কাহ = নিশ্চিত সত্য  ৭০.আল মাআরিজ = উন্নযনের সোপান  ৭১.নূহ = নবী নূহ ৭২.আল জিন = জিন সম্প্রদায়  ৭৩.আল মুযযামমিল = বস্রাচ্ছাদনকারী ৭৪.আল মুদ্দাসসির = পোশাক পরিহিত  ৭৫.আল কিয়ামাহ = পুনরুত্থান ৭৬.আল ইনসান ( দাহর ) = মানবজাতি ৭৭.আল মুরসালাত = প্রেরিত পুরুষ  ৭৮.আন নাবা = মহাসংবাদ ৭৯.আন নাযিআত = প্রচেষ্টা কারী  ৮০.আবাসা = সে ভ্রু কচকালো  ৮১.আত তাকউইর = অন্ধকারাচ্ছন্ন ৮২.আল ইনফিতার = বির্দীর্ণ করা  ৮৩.আত-মুতাফফিফীন = প্রতারণা করা  ৮৪.আল ইনশিকাক = খন্ড বিকন্ডকরণ  ৮৫.আল বুরূজ = নক্ষএপুঞ্জ  ৮৬.আত তারিক = রাতের আগন্তক  ৮৭.আল আলা = সর্বোন্নত ৮৮.আল গাশিয়াহ = বিহ্বলকর ঘটনা  ৮৯.আল ফজর = ভোরবেলা  ৯০.আল বালাদ = নগর  ৯১.আশ-শামস = সূর্য  ৯২.আল লাইল = রাত  ৯৩.আদ দুহা = পূর্বাহ্নের সূর্য কিরণ  ৯৪.আলাম নাশরাহ ( আশ শার��হ ) = বক্ষ প্রশন্তকরণ ৯৫.আত-তীন = ডুমুর  ৯৬.আল আলাক = রক্তপিন্ড ৯৭.আল-কাদর = মহিমান্বিত ৯৮.আল বাইয়্যিনাহ = প্রমাণ ৯৯.আয-যিলযাল = ভূমিকম্প ১০০.আল আদিয়াত = অভিযানকারী  ১০১.আল কারিয়াহ = মহাসংকট  ১০২.আত তাকাসুর = প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা  ১০৩.আল আসর = সময়  ১০৪.আর হুমাযাহ = পরনিন্দকারী  ১০৫.আল ফিল = হাতি  ১০৬.কুরাইশ = কুরাইশ গোএ ১০৭.আল মাউন = সাহায্য সহায়তা  ১০৮.আল কাউসার = কাউসার / প্রাচুর্য  ১০৯.আল কাফিরূন = অবিশ্বসী ১১০.আন নাসর = সাহায্য  ১১১.আল মাসাদ = খেজুরের পাকানো (রশি) ১১২.আল ইখলাস = আন্তরিকতা  ১১৩.আল ফালাক = নিশিভোর  ১১৪.আন নাস = মানুষ জাতি
0 notes
khutbahs · 4 years ago
Link
তাওহীদের মৌলিক উপাদান (রুকন) তথা لا إله إلا لله ‘র মৌলিক উপাদান
রুকন হচ্ছে এমন বিষয়, যার অনুপস্থিতিতে অন্য একটি বিষয়ের অনুপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে উঠে। রুকন অবশ্যই মূল বিষয়টির অন্তর্গত হওয়া চাই। যেহেতু রুকন কোন জিনিসের আভ্যন্তরীণ বা ভেতরের বিষয়,সেহেতু শুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি এর উপর নির্ভরশীল। অতএব কোন জিনিসের রুকন ব্যতীত তা সহীহ বা শুদ্ধ হয় না। রুকন কি জিনিস, এটা জানার পর আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, যে তাওহীদ আল্লাহ তায়ালা আপনার ওপর ওয়াজিব করে দিয়েছেন, সে তাওহীদেরও সালাতের মতোই রুকন আছে। সালাত যেমন তার রুকন যথা- তাকবীরে তাহরিমা, রকু, সেজদা, শেষ বৈঠক ইত্যাদি আদায় করা ব্যতীত শুদ্ধ হয় না, কোনো ব্যক্তি যদি সালাতের কোনো রুকন বাদ দেয় তাহলে তার সালাত যেমন ভাবে বাতিল হয়ে যায়, তেমনি ভাবে কোনো ব্যক্তি যদি তাওহীদের কোনো একটি রুকন বাদ দেয়, তাহলে সে ব্যক্তিও আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারবে না। এমতাবস্থায় কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ‘ তার কোনো কাজে আসবে না, সে আর মুসলিম থাকবে না বরং সে কাফেরে পরিণত হয়ে যাবে।
তাওহীদের দুটি রুকন (মৌলিক উপাদান) তাওহীদের প্রথম রুকন বা মৌলিক বিষয় হচ্ছে “কুফর বিত ত্বাগুত বা তাগুতকে অস্বীকার করা”। আর দ্বিতীয় রুকন বা মৌলিক বিষয় হচ্ছে “ঈমান বিল্লাহ বা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা”। এর প্রমাণ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার নিম্মোক্ত বানীঃ “যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করলো আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারণ করলো যা কখনো ছিড়ে যাবার নয়”। (আল-বাক্বারাহ ২: ২৫৬)
ﺎ ﻣ ﺑ ﻠ উপরোক্ত আয়াতের فمن يكفر الطاغوت হচেছ ১ম রোকন, ﺆن ﺑ ہ ل হচেছ ২য় রোকন এবং العروة الوثقى (শক্ত রজ্জু) বলতে কলেমা কে বুঝানো হয়েছে। আর এটাই মূলতঃ তাওহীদের কলেমা।
সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদীসে রাসল (সঃ) ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললো আর আল্লাহ ছাড়া অন্য সকল উপাস্যকে অস্বীকার করলো তার জান ও মাল পবিত্র “(অর্থাৎ কাফেরদের জান ও মালের মতো গনিমতের মাল নয়।) এবং তার হিসাবের ভার আল্লাহর ওপরই ন্যস্ত (অর্থাৎ মনের কুফরীর বিচার আল্লাহই করবেন।)
প্রথম রুকনঃ তাগুতকে অস্বীকার করা
প্রিয় পাঠক ! (আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথের দিশা দান করন) আপনাকে জেনে রাখতে হবে যে, তাগুতের কুফরী ব্যতীত একজন বান্দা কখনো “মুওয়াহ্যিদ” (আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী) হতে পারে না। আর তাগুত কি জিনিস তা জানা ব্যতীত, তাগুতকে অস্বীকার করা কখনো সম্ভব নয়।
তাগুত এর আভিধানিক সংজ্ঞাঃ তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে সীমালংঘনকারী, আল্লাহদ্রোহী, বিপথে পরিচালনাকারী। তাগুত শব্দটি আরবী (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ সীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা। শব্দের ক্রিয়ামূল (ত্বগা) এবং বহুবচন । যেমন পানির একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। নূহ (আঃ) এর সময় যখন জলোচ্ছাস হয়েছিল তখন পানি তার এ সীমা অতিক্রম করেছিল, এ ঘটনাকে কোরআনে এভাবে বলা হয়েছেঃ ‘‘যখন জ্বলোচ্ছাস হয়েছিল তখন আমি তোমাদেরকে চলন্ত নৌযানে আরোহন করিয়েছিলাম”। (সূরা, হাক্কা-৬৯:১১)
কোরআনে আল্লাহ সুবহানাহুওয়াতায়ালা সাধারণ সীমালংঘন এবং সুনির্দিষ্ট সীমালংঘনের বর্ণনা দিতে ব্যবহার করেছেন। যেমন সাধারন সীমালংঘন অর্থে কোরআনে ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হয়েছে-
كَلاَّ إِنَّ الإِْنسَانَ لَيَطْغَى অর্থাৎ “বস্তুত মানুষতো সীমালংঘন (لَيَطْغَى লা ইয়াতগা) করেই থাকে।” (সূরা, ‘আলাক- ৯৬:৬)
أَلاَّ تَطْغَوْا فِي الْمِيزَانِ “যাতে তোমরা সীমালংঘন (تَطْغَو লা তাতগা) না কর মানদন্ডে।” (সূরা, আর রাহমান-৫৫:৮)
সুনির্দিষ্ট সীমালংঘন অর্থে ক্রিয়াটি ব্যবহৃত হয়েছে (হালাল খাবার সম্পর্কে): “তোমাদিগকে আমি যা দিয়েছি তা থেকে পবিত্র বস্তুসমূহ খাও এবং সীমালংঘন করো না, তাহলে তোমাদের উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে এবং যার উপর আমার ক্রোধ নেমে আসবে সে ধ্বংস হয়ে যায়।” (সূরা, ত্ব-হাঃ ৮১)
যারা অবিশ্বাসী হয়ে সীমালংঘন করে আল্লাহ তাদের জন্যও এ ক্রিয়া ব্যবহার করেছেন। যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যকে রব এবং ইলাহ (ইবাদতের যোগ্য) হিসেবে গ্রহন করে সীমালংঘন করেছে কোরআনে সে কাফিরদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা (ত্বা-গি-ন) বলেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ “আর সীমালংঘনকারীদের (লিত ত্বাগিন) জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট পরিণাম।” (সূরা, ছোয়াদ-৩৮:৫৫) “প্রকাশ করা হবে জাহান্নাম, অনন্তর য�� সীমালংঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দেয়।” (সূরা, নাযিয়াত-৭৯: ৩৬-৩৮) অর্থাৎ “ছামুদ সম্প্রদায় অবাধ্যতায় (বি ত্বাগওয়াহা~) অস্বীকার করেছিল।” (সূরা, শামস-৯১:১১)
আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাগুতকে বর্জনের অপরিহার্যতা
প্রত্যেক ব্যক্তির এই জ্ঞান থাকা উচিৎ যে,সমস্ত জীব ও জড়ের সূচনা ও কর্তৃত্ব মহান আল্লাহর।
সালাত, যাকাত বা অন্যান্য ইবাদতের পূর্বে যে দৃঢ় ব্যাপার মহান আল্লাহ আদম (আঃ) এর সন্তানদের আদেশ করেছেন তা ���ল আল্লাহ তা’য়ালা একত্বের প্রতি ঈমান আনয়ন করা এবং অন্য সমস্ত উপাস্যগুলোকে (তাগুত) পরিত্যাগ ও অস্বীকার করা।
এর জন্যই আল্লাহ জীব সৃষ্টি করলেন, নবীদের প্রেরণ করলেন, আসমানী কিতাবগুলো নাযিল করলেন এবং আদেশ দিলেন জিহাদ ও শাহাদাতের। এর জন্যই মহান আল্লাহর বান্দা ও শয়তানের অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে শত্রুতা আর এর দ্বারাই মুসলিম জাতি ও সঠিক খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেনঃ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন এবং মানুষকে এইজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে।” (সূরা-যারিয়াত: ৫৬) এর অর্থ একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা। তিনি আরও বলেনঃ “আল্লাহর ইবাদত করিবার ও তাগুতকে বর্জন করবার নির্দেশ দিবার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।” (সূরা-নাহল: ৩৬)
কোন ইলাহ নাই আল্লাহ ব্যতীত (আক্ষরিক কোন উপাস্য বা ইবাদতের যোগ্য কোন কিছু বা কেউ নাই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া), এই বিশ্বাস হচ্ছে ইসলামের মূল বা ভিত্তি। এই বিশ্বাসের অবর্তমানে কোন দাওয়া, জিহাদ, সালাত, সওম, যাকাত বা হজ্জ কিছুই গ্রহণযোগ্য হবে না। কোন ব্যক্তিকেই জাহান্নামের আগুন থেকে বাচাঁনো যাবে না যদি না সে এই ভিত্তির প্রতি ঈমান না এনে থাকে। কারণ এটাই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের প্রতি আদেশকৃত অলঙ্ঘনীয় ভিত্তি। এই ভিত্তির অবর্তমানে দ্বীন-ইসলামের অন্যান্য স্তম্ভগুলো কোন ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন হতে নিরাপদে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। মহান আল্লাহ বলেনঃ “----যে তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে সে এমন এক মযবুত হাতল ধরবে যা কখনও ভাঙ্গবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা-বাকারা:২৫৬)
মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ “যারা ত্বাগুতের ইবাদত হতে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমূখী হয়, তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে।” (সূরা-যুমার:১৭) লক্ষ্য করুন কেমন করে আল্লাহ
তা’আলা তাঁর নিজের প্রতি ঈমান আনার পূর্বে সকল (মিথ্যা) উপাস্যদের অস্বীকার ও অবিশ্বাস করার কথা বলেছেন, যেমন তিনি ঈমান আনয়নের পূর্বে কুফরকে ত্যাগ করার কথা বলেছেন।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এই শব্দগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদের আদেশ দিয়েছেন
যা কিনা ইসলামের এই মজবুত ভিত্তির গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতির দিকে লক্ষ্য আরোপ করে। অতএব, সকল (মিথ্যা) উপাস্যদের ��রম মাত্রায় অস্বীকার করা ব্যতীত মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ট ঈমান পোষণ করা যায় না। তাগুতকে চেনার পর নিশ্চয়ই তাগুতকে অস্বীকার করার অপরিহার্যতা কি বুঝতে পারছেন। কারণ এটা অসম্ভব যে, কোন ব্যাপারে বিশ্বাস করা, যতক্ষন না এ বিশ্বাসের বিপরীত কিছুকে অস্বীকার ও অবিশ্বাস করা হয়। উদাহরণস্বরুপ কেউ যদি দাবী করে, ‘আমি এক ইলাহকে বিশ্বাস করি।’ অত:পর সে বলল, ‘আমি দুই ইলাহকে বিশ্বাস করি’। ঐ ব্যক্তির দ্বিতীয় উক্তি প্রথম স্বীকারোক্তিকে মিথ্যায় পরিণত করে বা অস্বীকার করে। কারণ দ্বিতীয় উক্তি প্রথম উক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত। এর অর্থ হচ্ছে তার একটা দাবী মিথ্যা অথবা উভয়টিই মিথ্যা। এজন্যই ঐরকম উক্তি সত্যকে মিথ্যা এবং অগ্রহনযোগ্য করে দেয়। সুনিশ্চিত সত্য একটা ব্যাপারে দু‘টি বিপরীতমুখী দিক থাকতে পারে না, যা ঐ নিশ্চিত বিষয়কে অস্বীকার করে।
তাগুতকে অস্বীকার করা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়নের অনিবার্য দাবী। তাওহীদের প্রথম রুকনই হচ্ছে তাগুতকে অস্বীকার করা, সুতরাং তাগুতকে বর্জন না করলে আল্লাহর প্রতি ঈমানের দাবী হবে অর্থহীন। ঈমানের প্রথম স্তম্ভ আল্লাহকে বিশ্বাস করা এবং দৃঢ়ভাবে ঘোষনা দেয়া । প্রথম অংশ অস্বীকার করে দ্বিতীয় অংশ এর বিরোধী বা বিপরীত কোন কিছুকে।
নিচের আয়াতটি এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয় যে, ত্বাগুতকে মেনে নেয়া এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করার সম্পূর্ণ বিপরীত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘য়ালা বলেনঃ অর্থাৎ “আমি প্রত্যেক জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করেছি আল্লাহর ইবাদত করার এবং তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য।” (সূরা, নাহল-১৬:৩৬) সুতরাং যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল না সে নবীদের মূল দাওয়াতকে অস্বীকার করল এবং মূলতঃ আল্লাহর ইবাদত করতে অস্বীকার করল। কারণ প্রত্যেক নবী তাদের কওমকে তাগুতের ইবাদতকে পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করার আহবান জানিয়েছিলেন।
এখন কেউ যদি নিজেকে ঈমানদার দাবী করে তাকে অবশ্যই তাগুতকে বর্জন করতে হবে। কারণ যে কালেমার স্বীকৃতি দিয়ে সে ইসলামে এসেছে সে কলিমার প্রথমাংশ ঘোষণা করার মাধ্যমে যাবতীয় বাতিল মা‘বুদকে অর্থাৎ তাগুত বর্জনের দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছে এবং দ্বিতীয় অংশ ঘোষণার মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ হিসাবে মেনে নিয়েছে। সুতরাং তাগুতকে বর্জন না করলে ঈমানের দাবী মিথ্যা প্রমানিত হবে। যারা এই তাগুতদের মানে তারা আল্লাহকে মানতে পারে না, আর যারা আল্লাহকে মানে তারা তাগুতদের মানতে পারে না। তবে হ্যাঁ, এমন অনেক ব্যক্তি আছে আল্লাহকে মানে আবার তাগুতদেরকেও মানে, কিন্তু আসলে যে আল্লাহকে মানা হয় না এ বোধ তাদের নেই। আর বর্তমানে অধিকাংশ লোকদের অবস্থাই এরকম।
উদাহরণস্বরূপ, কোরআন মাজীদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা ঐ ব্যক্তির ঈমানের মূল্যহীনতার কথা বলেছেন যে ব্যক্তি নিজেকে ঈমানদার দাবী করে আবার তাগুতের কাছে বিচার-ফায়সালা চায়, আল্লাহ তা‘য়ালা বলেনঃ “আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি তারা ঈমান আনয়ন করেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়কে ফয়সালার জন্য তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি তাকে (তাগুতকে) অমান্য করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (আন-নিসাঃ ৬০)
যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে কিংবা আল্লাহর পাশাপাশ�� তাগুতের ইবাদত করে তাদের উপর আল্লাহর লানৎ বর্ষিত হবে। আল্লাহতা‘য়ালা বলেন- “তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে প্রতিমা ও শয়তানকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে। এরা হলো সে সমস্ত লোক, যাদের উপর লা’নত করেছেন আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং। বস্তুতঃ আল্লাহ যার উপর লা’নত করেন তুমি তার কোন সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না”। (সূরা নিসা ৪:৫১-৫২)
পূর্ববর্তী জাতি যারা তাগুতের ইবাদত করেছিল তাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ “বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি, তাদের মধ্যে কার মন্দ প্রতিফল রয়েছে আল্লাহর কাছে? যাদের প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন, যাদের প্রতি তিনি ক্রোধাম্বিত হয়েছেন, যাদের কতককে বানর ও শুকরে রূপান্তরিত করে দিয়েছেন এবং যারা শয়তানের আরাধনা করেছে, তারাই মর্যাদার দিক দিয়ে নিকৃষ্টতর এবং সত্যপথ থেকেও অনেক দূরে।”(সূরা মায়েদাহ-৫:৬০)
আর যারা তাগুতের ইবাদতকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাদের সুসংবাদ প্রদান করেনঃ
“যারা শয়তানী শক্তির পূজা-অর্চনা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ। অতএব, সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদেরকে।যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান।” (সূরা যুমার ৩৯:১৭-১৮)
যারা তাগুতের ইবাদতকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহ তাদের ওয়ালী হবেনঃ “যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে”। (সূরা বাকারা ২:২৫৭)
তাগুত শব্দের শর‘য়ী সংজ্ঞা
এখানে আমরা আলোচনা করব তাগুত শব্দের শার’য়ী অর্থ নিয়ে তা, এজন্য যে কোরআন-সু্ন্নাহয় যখন কোন শব্দ ব্যবহৃত হয় তখন তার একটা নির্দিষ্ট শার’য়ী অর্থ দাড়ায়। তাগুত শব্দটি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত ওহী দ্বারা সাব্যস্ত, যা আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত। তাগুত’ এর ভাষাগত মূল (ত্বা-গি-ন) এর মত একই রকম মূল হলেও তাগুত হচ্ছে সীমালংঘনের সুনির্দিষ্ট ধরণ। সীমালংঘন করলেই ত্বাগুত হয়ে যায় না, যেমন আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন পবিত্র (হালাল) খাবার খাওয়ার জন্য এবং এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি বা সীমালংঘন না করার জন্য (সূরা, ত্ব-হা ২০:৮১)। এখন কেউ যদি হারাম খায় তাহলে সে ত্বাগুত হয়ে যাবে না, বরং সে অবাধ্য হবে। এরকম অন্যান্য পাপের ক্ষেত্রেও শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের পাপ বা সীমালংঘন কুফর, শিরক্, নিফাক্ পর্যন্ত পৌছতে পারে কিন্তু এ কারণে কেউ ত্বাগুত হয়ে যায় না। বরং ত্বাগুত হবে ঐ রকম সীমালংঘনের ক্ষেত্রে যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর সাথে শরীক্ করে��� সুতরাং একথা সুস্পষ্ট, যে আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করে সে মুশরিক কিন্তু সে ত্বাগুত নয়। আল্লাহ তাকে ত্বা-গি-ন বলেছেন। আর তাগুত হচ্ছে সে যে নিজেকে (মিথ্যা) রব এবং ইলাহ (অর্থাৎ ইবাদতের যোগ্য) বানিয়ে নেয়। এজন্যই সব তাগুতেরা ত্বা-গি-ন কিন্তু সব ত্বা-গি-নেরা তাগুত নয়।
যে ব্যক্তি আল্লাহর অধিকার, গুনাবলী, কার্যাবলী ও সত্তার দাবীতে সীমালংঘন করে সে তাগুত। আল্লাহ ব্যতীত যে কেউ ইবাদত গ্রহন করে বা দাবী করে সে তাগুত এবং যে কেউ আল্লাহর গুনাবলী দাবী করে সেও ত্বাগুত। তাগুত হচেছ সেই ব্যক্তি যে নিজের প্রতি আল্লাহর কার্যাবলী বা গুনাবলী আরোপ করে। যেমন ফেরাউন আল্লাহ দ্রোহী হয়েছিল এবং সীমালংঘন করেছিল, আল্লাহ সার্বভৌমত্বের মালিক অথচ সে নিজে মিসরের সার্বভৌমত্ব দাবী করেছিল। সে লোকদেরকে জড়ো করে ভাষণ দিয়েছিল যা কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছেঃ “ফেরাউন তার জাতির উদ্দেশ্যে (এক) ভাষণ দিলো। সে বললো, মিশরের সার্বভৌমত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে, এই নদীগুলো আমার (রাজত্বের) অধীনেই বয়ে চলছে--------।”(সূরা যুখরুফ ৪৩:৫১)
আল্লাহতা‘য়ালা তাকে ‘ত্বাগা’ বলেছেন সূরা ত্বাহার ২৪ নং আয়াতে এবং মুসা (আঃ) কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কাছে যাওয়ার জন্য- “ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালংঘন করেছে।” শরীয়তের পরিভাষায়, এমন প্রত্যেক ব্যক্তিই তাগুত যে, আল্লাহদ্রোহী হয়েছে এবং সীমালংঘন করেছে, আর আল্লাহর কোনো হককে নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছে এবং এমন বিষয়ে নিজেকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ বানিয়েছে, যা একমাত্র আল্লাহর জন্য খাস।
সুস্পষ্ট ভাবে তাগুত এর অর্থ হচ্ছে, কোন মাখলুক (সৃষ্টি) নিন্মোক্ত তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি বিষয়কে (আল্লাহর স্থলে) নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করাঃ-কোন মাখলুক (সৃষ্টি) কর্তৃক আল্লাহতা‘য়ালার কার্যাবলীর যে কোন কার্য সম্পাদনের বিষয়টি নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করা। যেমন সৃষ্টি করা, রিজিক দান অথবা শরীয়ত (বিধান) রচনা। এসব বিষয়গুলো সম্পাদনের ব্যাপারকে যে ব্যক্তি নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করবে (অর্থাৎ কেউ যদি বলে, আমি সৃষ্টি করি,আমি বিধান দেই) সেই তাগুত ।
কোন মাখলুক (সৃষ্টি) আল্লাহতা‘য়ালার কোন সিফাত বা গুন কে নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করা। যেমন ইলমে গায়েব জানা। যদি কেউ তা করে (অর্থাৎ বলে আমি এলমে গায়েব জানি) তাহলে তাকে তাগুত হিসেবে গন্য করা হবে।
যে কোন ইবাদত মাখলুক কর্তৃক (বা সৃষ্টির) এর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা । যেমনঃ দোয়া, মানত, নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই অথবা বিচার ফায়সালা চাওয়া। যদি (কোন মাখলুক) এসব ইবাদত গ্রহন করে, দাবীকরে, আকাঙ্খা করে অথবা (নিজের জন্য) সম্পাদন করে, তাহলে সেই তাগুত।
এমনকি কেউ তার জন্য ইবাদত নিবেদন করলে যদি সে নীরব থাকে তাহলেও সে ত্বাগুত বলে গন্য হবে, যতক্ষন পর্যন্ত না সে নিজেকে এ থেকে পবিত্র ও মুক্ত করে নেয় এবং এ হক্ আল্লাহর একথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়।
উপরোক্ত যে তিনটি বিষয়ে আলোচনা করেছি, তার যে কোন একটি যদি কেউ নিজের দিকে সম্পর্কযুক্ত করে বা নিজের জন্য সম্পাদন করে তাহলে সে তাগুত হিসেবে গন্য এবং নিজেকে আল্লাহর সমকক্ষ করে নিল। ইমাম আত্ তাবারী (রহঃ) বলেন, “আল্লাহর দেয়া সীমালংঘনকারী মাত্রই তাগুত বলে চিহ্ন��ত, যার অধীনস্থ ব্যক্তিরা চাপের মুখে তার ইবাদত করে বা তাকে তোষামোদ করার জন্য বা তার আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য তার ইবাদত করে। এ (তাগুত) উপাস্যটি মানুষ কিংবা শয়তান বা মূর্তি অথবা অন্য যেকোন বস্তু হতে পারে।” (তাফসীরে তাবারী, ইফাবা/৫ম খন্ড, ২৫৬ নং আয়াতের তাফসীর)
সাইয়্যেদ আবুল আ‘লা মওদুদী তাহফীমুল কোরআনে সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতের তাফসীরে তাগুতের ব্যাখ্যায় বলেন, “আভিধানিক অর্থে এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাগুত বলা হবে, যে নিজের বৈধ অধিকারের সীমালংঘন করেছে। কোরআনের পরিভাষায় তাগুত এমন এক বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভূ এবং রব হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজেদের বন্দেগী এবং দাসত্বে নিযুক্ত করে। কোন ব্যক্তি এই তাগুতকে অস্বীকার না করা পর্যন্ত কোন দিন সঠিক অর্থে আল্লাহর মু‘মিন বান্দা হতে পারে না।”
আল্লামা ড: মুহাম্মদ তকীউদ্দীন হেলালী ও আল্লামা ড: মুহাম্মদ মুহসিন খান কর্তৃক অনুদিত কুরআন মাজীদের ইংরেজী অনুবাদের সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াতে উল্লেখিত ‘তাগুত’ শব্দের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- “ The word ‘Taaghoot’ covers a wide range of meaning: it means everything worshipped other that Allah, i.e. all false deities. It may be satan, devils,idols, stones, sun, stars, human beings.” অর্থাৎ “তাগুত” শব্দটি বিস্তৃত অর্থ বোঝায়ঃ এটার অর্থ আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয়। যেমন সকল মিথ্যা উপাস্য; এটা শয়তান, মৃত ব্যক্তির আত্মা, মুর্তি, পাথর, সূর্য, তারকা, অথবা কোন মানুষও হতে পারে। (The Noble Qur’an .English Translation , পৃষ্ঠা ৫৮)
সাইয়্যেদ কুতুব (রহ:) বলেন, “তাগুত বলতে সেইসব ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে বোঝায় যেগুলো ঐশী দ্বীন এবং নৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলাকে অবমাননা করে এবং আল্লাহ নির্দেশিত বা তার দেয়া দিক-নির্দেশনা থেকে উদ্ভুত নয় এমন সব মূল্যবোধ ও রীতিনীতির ভিত্তিতে এই জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা করে।” (তাফসীরে ফি যিলালিল কোরআন)
ইমাম মালেক (রহ:) তাগুতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেনঃ “এমন প্রত্যেক জিনিসকেই তাগুত বলা হয়,আল্লাহ তা‘য়ালাকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়।” (ফতহুল ক্বাদীর, আল্লামা শওক্বানী) এ সংজ্ঞাটি উত্তম এবং ব্যাপক অর্থজ্ঞাপক। আল্লাহ ব্যতীত যারই ইবাদত করা হয় সেই এ সংজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত। যেসব উপাস্যকে ‘তাগুত’ হিসেবে গন্য করা হয় সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
মূর্তি, এমন সব কবর, গাছ, পাথর ও অচেতন পদার্থ যে গুলোর উপাসনা করা হয়;
আল্লাহর আইন ব্যাতীত এমন সব আইন যার মাধ্যমে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়;
এমনসব বিচারক তাগুতের অন্তর্ভূক্ত যারা আল্লাহর আইনের বিরোধী আইনদ্বারা মানুষের মধ্যে বিচার ফায়সালা করে;
শয়তান, যাদুকর, গনক (যারা ইলমে গায়েবের ব্যাপারে কথা বলে);
উপাস্য হতে যে রাজী;
যারা আইন রচনা বা মানুষের জন্য হালাল-হারাম নির্ধারণ করে কিংবা করার অধিকার রাখে বলে মনে করে;
প্রধান প্রধান তাগুত
তাগুতের সংখ্যা অনেক। তবে পাঁচ ধরণের তাগুত নেতৃত্বের আসনে রয়েছেঃ
১. গায়রুলাহর ইবাদতের দিকে আহবানকারী শয়তান;
২. আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারী জালেম শাসক;
৩. আল্লাহ তা‘য়ালার নাযিলকৃত বিধান ছাড়া যে বিচার-ফায়সালা করে;
৪. আল্লাহ ব্যতীত যে ব্যক্তি এলমে গায়েব জানে বলে দাবী করে;
৫. আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত ��রা হয় এবং সে এই ইবাদত গ্রহণে রাজি বা খুশি থাকে;
Collected From
সরলপথ
0 notes
khutbahs · 5 years ago
Link
কোরআনের পরিচয়
কোরআন আল্লাহর নাযিলকৃত ঐ কিতাবকে বলা হয়, যা তিনি তার শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপরে দীর্ঘ তেইশ বৎসর কালব্যাপী বিভিন্ন পর্যায়ে, প্রয়োজন মোতাবেক অল্প অল্প করে অবতীর্ন করেছিলেন। ভাষা এবং ভাব উভয় দিক হতেই কোরআন আল্লাহর কিতাব। অর্থাৎ কোরআনের ভাব (অর্থ) যেমন আল্লাহর তরফ হতে আগত তেমনি তার ভাষাও।
কোরআন নাযিলের কারণ
নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষনের পরে আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ)-কে বেহেশ্‌ত হতে দুনিয়ায় পাঠানোর প্রাক্কালে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলে দিয়েছিলেন যে, “তোমরা সকলেই এখান হতে নেমে পড়। অতঃপর তোমাদের কাছে আমার পক্ষ হতে জীবন বিধান যেতে থাকবে পরন্তু যারা আমার জীবন বিধান অনুসারে চলবে, তাদের ভয় ও চিন্তার কোন কারণ থাকবে না। (অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তিতে তারা আবার অনন্ত সুখের আধার এই বেহেশতেই ফিরে আসবে)। আর যারা উহাকে অস্বীকার করে আমার নিদর্শন সমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী এবং সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে”। (সূরা বাকারা আয়াত নং ৩৮,৩৯)
আল্লাহ তায়ালার উক্ত ঘোষণা মোতাবেকই যুগে যুগে আদম সন্ততির কাছে আল্লাহর তরফ হতে হেদায়েত বা জীবন বিধান এসেছে। এই জীবন বিধানেরই অন্য নাম কিতাবুল্লাহ। যখনই কোন মানব গোষ্ঠী আল্লাহর পথকে বাদ দিয়ে নিজেদের মন গড়া ভ্রান্ত পথে চলতে থাকে, তখনই কিতাব নাযিল করে আল্লাহ মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে থাকেন।
কিতাব নাযেলের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার চিরন্তন নীতি হল এই যে, তিনি যখন কোন জাতির জন্য কিতাব নাযিলের প্রয়োজনীয় অনুভব করেন, তখনই সেই জাতির মধ্য হতে মানবীয় গুণের অধিকারী সর্বোৎকৃষ্ঠ লোকটিকে পয়গাম্বর হিসেবে বাছাই করে নেন, অতঃপর ওয়াহীর মাধ্যেমে তার উপরে কিতাব নাযিল করে থাকেন।
মানব সৃষ্টির সূচনা হতে দুনিয়ায় যেমন অসংখ্য নবী-রসূল এসেছেন, তেমনি তাঁদের উপরে নাযিলকৃত কিতাবের সংখ্যাও অগণিত। নবীদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যেমন সর্বশেষ কিতাব। অতঃপর দুনিয়ায় আর কোন নতুন নবীও আসবে না এবং কোনও নতুন কিতাবও অবতীর্ণ হবে না।
কোরআনের আলোচ্য বিষয় ও উদ্দেশ্য
কোরআনের আলোচ্য বিষয় হল, মানব জাতি। কেননা মানব জাতির প্রকৃত কল্যাণ ও অকল্যাণের সঠিক পরিচয়ই কোরআনে দান করা হয়েছে। কোরআনের উদ্দেশ্য হল মানব জাতিবে খোদা প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থার দিকে পথ প���রদর্শন, যাতে সে দুনিয়ায়ও নিজের জীবনকে কল্যাণময় করতে পারে এবং পরকালেও শান্তিময় জীবনের অধিকারী হতে পারে।
ওয়াহীর সূচনা কিভাবে হয়েছিল
বোখারী শরীফ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে। তাতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, ওয়াহীর সূচনা এভাবে হয়েছিল যে, হুজুর ঘুমের ঘোরে এমন বাস্তব স্বপ্ন দেখতে থাকেন যা উজ্জ্বল প্রভাতের ন্যায় বাস্তবায়িত হতে থাকে। অতঃপর হুজুরের নিকটে নির্জনবাস আকর্ষণীয় অনুভূত হল এবং তিনি হেরা গুহায় নির্জনবাস শুরু করে দিলেন। এখানে তিনি একাধিক রাত্রি একত্রে কাটিয়ে দিতেন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য পানীয় ও জরুরী সামগ্রী সাথে নিয়ে যেতেন। উহা ফুরিয়ে গেলে আবার ফিরে এসে হযরত খাদীজার নিকট হতে উহা নিয়ে গুহায় ফিরে যেতেন। এভাবেই এক শুভক্ষণে হেরায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় তাঁর কাছে হকের (ওয়াহীর) আগমন ঘটল। ফিরিশতা (জিবরাঈল আমিন) এসে তাঁকে বললেন, আপনি পড়ুন। (হুজুর বলেন) আমি বললাম, আমি পাঠক নই। হুজুর বলেন, অতঃপর ফিরিশতা আমাকে বগলে দাবিয়ে ছেড়ে দিলেন। ফলে আমি খুব ক্লান্তি বোধ করতে থাকলাম। আবার তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিলেন। এভাবে তিনি তিনবার করলেন এবং তিনবারই হুযুর একই জওয়াব দিলেন। অতঃপর ফিরিশতা পাঠ করলেনঃ
“তুমি পাঠ কর তোমার সেই প্রভূর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানব জাতিকে ঘণীভূত রক্ত বিন্দু হতে। তুমি পাঠ কর তোমার সেই মহিমান্বিত প্রভূর নামে যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। যিনি মানব জাতিকে শিখিয়ে দিয়েছেন যা সে জানত না”। (সূরা আলাক আয়াত নং ১-৫) অতঃপর হুজুর উক্ত আয়াতসমূহ নিয়ে কম্পিত হৃদয়ে বাড়ি ফিরলেন। আর খাদীজার (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। এভাবে কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়ার কিছুক্ষণ পরে তাঁর অস্থিরতা কেটে গেল। তিনি হযরত খাদীজাকে আদ্যোপান্ত সমস্ত ঘটনা শুনালেন এবং বললেন, আমার নিজের জীবন সম্পর্কেই আমার ভয় হচ্ছে। হযরত খাদীজা তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ, আল্লাহ কিছুতেই আপনার কোন অনিষ্ট করবেন না। কেননা আপনি আত্মিয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, দরিদ্র ও নিরন্নকে সাহায্য করেন, অতিথীদের সেবা করেন এবং উত্তম কাজের সাহায্য করেন। অতঃপর হযরত খাদীজা হুজুরকে নিয়ে তাঁর চাচাত ভাই অরাকা বিন নওফলের কাছে গেলেন। তিনি জাহেলিয়াতে ইসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং ইবরাণী ভাষা জানতেন। আর ইনজিল হতে উক্ত ভাষায় যা ইচ্ছা নকল করতে পারতেন। তিনি খুবই বৃদ্ধ ছিলেন এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। খাদীজা তাকে সম্বোধন করে বললেন, ভাই আপনি আপনার ভাইপোর ঘটনা শুনুন, তিনি বললেন, এতো সেই ফিরিশতা যিনি হযরত মুসার (আঃ) কাছে এসেছিলেন। আফসোস! তোমার লোকেরা তোমাকে যখন দেশ হতে বের করে দিবে, তখন ��দি আমি জীবিত থাকতাম! হুজুর বললেন, তাহলে কি তারা আমাকে বের করে দিবে? অরাকা বললেন, হ্যাঁ, তুমি যা পেয়েছ ইহা যে যে পেয়েছে তার সাথে অনুরূপ ব্যবহার করা হয়েছে। আমি যদি ঐ দিন জীবিত থাকি, তাহলে তোমাকে সাধ্যমত সাহায্য করব। অতঃপর পুনরায় ওয়াহী নাযিলের আগেই অরাকা ইনতেকাল করেন।
উপরোক্ত ঘটনাটি যেদিন ঘটে সেদিন ছিল ১৭ই রমজান সোমবার। হুজুরের বয়স ছিল তখন চল্লিশ বছর ছয় মাস আট দিন। অর্থাৎ ৬ই আগস্ট ৬১০ খৃস্টাব্দ।
ওয়াহী কিভাবে নাযিল হত
হুযুরের উপরে যখন ওয়াহী অবতীর্ণ হতো তখন হুজুরের ভিতরে এক বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হত। চেহারা মোবারক উজ্জ্বল ও রক্তবর্ণ হয়ে যেত, কপালে ঘাম দেখা দিত, নিঃশ্বাস ঘন হত এবং শরীর অত্যধিক ভারী হয়ে যেত। এমন কি উটের পিঠে ছওয়ার অবস্থায় যখন ওয়াহী নাযিল হত, তখন অত্যধিক ভারে উট চলতে অ��ারগ হয়ে মাটিতে বসে যেত।
ওয়াহী নাযিলের সময় কেন এমন অবস্থা হত, এর কারণ স্বরূপ বলা চলে যে, নবীগণ ছোট বড় সব রকমের গোনাহ্‌ হতে পবিত্র থাকার ফলে তাদের স্বভাবের অধিক্য থাকলেও তারা মানবীয় স্বভাবের উর্ধে নন। ফলে আল্লাহ তাঁর পবিত্র কালাম নাযিল করার পূর্ব মুহূর্তে তাদেরকে এমন এক বিশেষ নুরানী অবস্থায় নিয়ে যেতেন, যেখানে তাদের কলব মানবীয় সবটুকু বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফিরিশতা স্বভাবে রূপান্তরিত হত এবং আল্লাহর অনুগ্রহের নূর তাদের অন্তর-আত্মাকে মোহিত করে ফেলত। ফলে এক নীরব ও মহাপ্রশান্তিময় পরিবেশে আল্লাহ তার কালাম নবীদের পরে নাযিল করতেন। কেননা আল্লাহর পবিত্র কালাম পূর্ণ মনোনিবেশ সহকারে শুনা, উহা অন্তরে গেঁথে রাখা এবং ইহার প্রকৃত মর্ম হৃদয় মন দিয়ে অনুধাবন করার জন্য উপরোক্ত বিশেষ অবস্থায় নবীদেরকে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হত।
এভাবে যখন ওয়াহী নাযিল হওয়া সমাপ্ত হত, তখন উপরোক্ত অবস্থা কেটে যেত এবং হুজুর পুর্বাবস্থায় ফিরে আসতেন। আর নাযিলকৃত কালাম ছাহাবাদেরকে তেলাওয়াত করে শুনাতেন।
ওয়াহী কিভাবে নাযিল হত সে সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে নিম্নলিখিত মর্মে একটি হাদীস বর্নিত আছেঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা হারিস-বিন হিসাম হুজুরকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসুল, আপনার উপরে ওয়াহী কিরূপে নাযিল হয়? হুজুর বললেন, কখনও কখনও ওয়াহীর আওয়াজ (আমার অন্তরে) ঘন্টা ধ্বনির ন্যায় ধ্বনিত হতে থাকে। ওয়াহীর এই ধরনটাই আমার জন্য খুব কঠিন হয় এবং আমি ক্লান্তি বোধ করতে থাকি। অতঃপর উহা আমার অন্তরে বিঁধে যায়। আবার কখনও ফিরিশতা মানুষের আকৃতিতে আসেন এবং আমার সাথে কালাম করেন (ওয়াহী নাযিল করেন)। আর আমি মনে গেঁথে নেই। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, অত্যধিক শীতের সময়ও যখন ওয়াহী নাযিল হত, হুজুরের শরীরে তাপ সঞ্চয় হত এবং তাঁর চেহারা মোবারকে ঘাম দেখা যেত।
উপোরোক্ত দুই ধরনের বাইরেও কখনও কখনও আল্লাহ কোন মাধ্যম ব্যতিরেকেই সরাসরি পর্দার আ��াল হতে নবীদের সাথে কথা বলেছেন।
বুখারী শরীফের ওয়াহী সম্পর্কীয় হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা আইনী তাঁর গ্রন্থে ওয়াহীর বিভাগ সম্পর্কে নিম্নরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছেন,
(১) আল্লাহ কোন প্রকার মাধ্যম ছাড়াই সরাসরি কথা বলতেন। যেমন পবিত্র কোরআন এবং বিশুদ্ধ হাদীসের বর্ণনায় জানা যায় যে, হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সাথে আল্লাহ এ ধরনের কথোপকথণ করেছেন।
(২) কোন ফিরিশ্‌তা পাঠিয়ে তাঁর মাধ্যেমে ওয়াহী নাযিল করতেন।
(৩) অন্তরে ওয়াহীর শব্দসমূহ ধ্বনিত করে বিঁধে দেন। যেমন হুজুর বলেছেনঃ “পবিত্র ফিরিশতা আমার অন্তরে দম করে দিয়েছেন”। হযরত দাউদের (আঃ) উপরে তৃতীয় ধরনের ওয়াহী নাযিল হত।
কোরআন নাযিল হওয়ার পদ্ধতি
কোরআনকে বুঝা এবং তাকে হৃদয়ঙ্গম করার নিমিত্ত কোরআন নাযিল হওয়ার পদ্ধতি অনুধাবন করা অপরিহার্য। মনে রাখা দরকার যে, কোরআন গ্রন্থাগারে একই সময় নবী করীমের (সঃ) উপরে অবতীর্ণ হয়নি। বরং যে বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব নবী (সঃ) এবং তার আত্মোৎসর্গিত সাথীদের উপরে আল্লাহ চাপিয়ে দিলেন, সেই আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে অল্প অল্প প্রয়োজনানুসারে পূর্ণ তেইশ বৎসর কালব্যাপী অবতীর্ণ হয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ (সঃ) চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়ত প্রাপ্ত হন এবং পূর্ণ তেইশ বছর কাল নবী হিসেবে খোদা প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করে তেষট্টি বছর বয়সে দুনিয়া ত্যাগ করেন। এই সুদীর্ঘ তেইশ বৎসর কালব্যাপী বিভিন্ন পর্যায় কোরআনের বিভিন্ন অংশ আল্লাহর রসূলের প্রতি অবতীর্ণ হতে থাকে।
মক্কী-মাদানী
নবুয়াত প্রাপ্তির পরে হযরত (সঃ) তের বৎসরকাল মক্কা শরীফে অবস্থান করেন এবং মক্কা ও উহার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইসলামের দাওয়াত দিতে থাকেন। মক্কায় অবস্থানকালীন এই দীর্ঘ তের বছরে যে সব সূরা নবীর (সঃ) উপরে অবতীর্ণ হয়েছে তাকে বলা হয় মক্কী সূরা।
অতঃপর আল্লাহর নবী মদীনা শরীফে হিযরত করেন এবং দীর্ঘ দশ বছরকাল মদীনায় অবস্থান করে ইমলামকে একটি জীবন্ত-বিধান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে পরকালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। মদীনায় অবস্থানকালীন এই দশ বছর কালব্যাপী কোরআন মজীদের যে সব সূরা হযরত (রঃ) উপরে অবতীর্ণ হয়েছে উহাকে বলা হয় মাদানী সূরা।
মক্কী সূরাসমুহের বৈশিষ্ট্য
ইসলামী দাওয়াতের সূচনায় মক্কা শরীফে নবী করীম (সাঃ) উপরে যে সব সূরা অবতীর্ণ হয়েছে তার অধিকাংশ ছিল আকারে ছোট অথচ অত্যন্ত প্রভাব বিস্তারকারী। সাধারনত ইসলামের মৌলিক আকীদা বিশ্বাস সম্পর্কীয় বিষয়সমুহ , যেমন তাওহীদ রিসালাত আখেরাত ইত্যাদি বিষয়ের ইহাতে যেমন আলোচনা করা হয়েছে, তেমনি শীরক কুফরী নাস্তিকতা পরকাল অস্বীকৃতি প্রভৃতি আকীদা সম্পর্কীয় প্রদান পাপ কার্যেরও উহাতে বর্ণনা দান করা হয়েছে। অতীতে যে সব জাতি নবীর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করত একমাত্র আল্লাহর প্রদত্ত দ্বীন অনুসারে চলে দুনিয়ায়ও অশেষ কল্যাণ লাভ করেছে এবং পরকালেও অনন্ত সুখের অধিকারী হবে, তাদের সম্পর্কে যেমন ইহাতে আলোচনা করা হয়েছে তেমনি আলোচনা করা হয়েছে সেই সমস্ত ভাগ্যহীনদের সম্পর্কে যারা নবীর দাওয়াতকে অস্বীকার করে আল্লাহর দ্বীনকে প্রত্যা��্যান করে দুনিয়ায়ও ধ্বংস হয়েছে এবং পরকালেও চরম শাস্তি ভোগ করবে। আর এই ঘটনাগুলি বর্ণনা করা হয়েছে উহা হতে উপদেশ গ্রহণ করার জন্য, ইতিহাস আলোচনার জন্য নয়।
এ ছাড়াও মক্কী সূরাতে রসূল (সঃ) এবং তাঁর মুষ্টিমেয় সাথীদেরকে কাফির ও মুশরিকদের অবিরাম নির্যাতনের মুখে যেমন ধৈর্য ধারণ করার নছিহত করা হযেছে, তেমনি কাফির-মুশরিকদেরকেও তাদের হঠকারিতা ও বাড়াবাড়ির ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে।
মাদানী সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য
মহানবীর (সঃ) মাদানী জীবনের সূচনা হয় নবুয়তের তের বছর পরে। মক্কা মরীফে রসুলের দাওয়াতে যারা ইসলাম কবুল করেছিলেন, তারা যেমন ছিলেন প্রভাবহীন, তেমনি ছিলেন সংখ্যায় নগন্য। কোরায়েশ এবং মক্কার পার্শ্ববর্তী গোত্রসমূহের নেতৃস্থানীয় লোকেরা ছিল রসুলের দাওয়াতের ঘোরতর বিরোধী।
ফলে মুসলমানদেরকে সেখানে কুফরী প্রভাবের অধীনে যথেষ্ট নির্যাতিত জীবন যাপন করতে হয়েছে। কিন্তু মদীনার অবস্থা ছিল ইহার সম্পূর্ণ বিপরিত। মদীনায় দুটি প্রভাবশালী গোত্র ‘আওচ ও খাজরাজের’ নেতৃস্থানীয় লোকেরা ইতিপূর্বে হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় এসে রসুলের কাছে ইসলাম গ্রহণ করে গিয়েছিলেন। আর তাদেরই অনুসরণে গোত্রের প্রায় সব লোকেরাই ইসলাম কবুল করে ফেলেছিলেন।
অতঃপর নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষে হুজুর যখন তাঁর সঙ্গীদেরকে নিয়ে মদীনায় হিজরত করলেন, তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, মদীনার প্রভাবশালী নেতা এবং তাদের এলাকাটাও হুজুরের নিয়ন্ত্রনে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। ফলে ইসলামের যাবতীয় বিধানমালা কার্যকর করার ব্যাপারে বাহিরের হস্তক্ষেপ ব্যতিত ভিতরের দিক থেকে আর তাকে কোন প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করতে হবে না। মদীনায় ইহুদিদের যে দুটি গোত্র বাস করত, ইতিপূর্বে রসূল (সঃ) তাদেরকে সন্ধিসূত্রে আবদ্ধ করে ফেলেছিলেন।
সুতরাং আল্লাহর নবী কালবিলম্ব না করে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার নিমিত্ত ছোট অথচ সম্ভাবনাময় একটি ইসলামী রাষ্ট্রের বুনিয়াদ স্থাপন করলেন। এখন প্রয়োজন ছিল এই রাষ্ট্রের পরিচালনার জন্য যাবতীয় বিধি-ব্যবস্থার। উহাই পর্যায়ক্রমে মাদানী সূরাসমূহের মাধ্যমে নবীর জীবনের বাকী দশ বছরে অবতীর্ণ থাকে।
রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা সম্পর্কিয় যাবতীয় মৌলিক আইন, যেমন ফৌজদারী কানুন, উত্তরাধিকারী সম্পর্কীয় আইন, বিবাহ-তালাক সম্পর্কীয় বিধি ব্যবস্থা, জ���কাত-ওশর প্রভৃতি অর্থনৈতিক বিধান এবং যুদ্ধ-সন্ধি সম্পর্কীয় হুকুম-আহকাম হল মাদানী সূরাসমূহের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
মক্কায় কোন ইহুদি গোত্র বাস করতে না এবং মুনাফেকদেরও (সুবিধাবাদী শ্রেণী) কোন সংগঠিত দল তথায় ছিল না। ফলে মক্কী সূরাসমূহে এদের সম্পর্কে বিশেষ কোন আলোচনা দেখা যায় না। কিন্তু মদীনায় এ দুটি শ্রেণীই ছিল এবং বাহ্যিক দিক দিয়ে এরা মুসলমানদের শুভাকাঙ্খী বলে নিজেদেরকে জাহির করলেও ভিতরে ভিতরে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। ফলে আল্লাহ মাদানী সূরাসমূহের মাধ্যমেই এদের কুটিল ষড়যন্ত্রের কথা নবীকে জানিয়ে দেন এবং ইহুদি ও মোনাফেকদেরকে তাদের জঘন্য পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করে দেন।
আরববাসীদের উপর কোরআনের আশ্চর্য প্রভাব
কোরায়েশদের শত বাধা সত্ত্বেও দিন দিন যে ইসলামের প্রভাব আশ্চর্যজনকভাবে বেড়ে চলছিল তার মূলে ছিল পবিত্র কোরআনের অলৌকিক প্রভাব। নিম্নের ঘটনা কয়টিই উহার বাস্তবতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
প্রথম দিকে প্রায় তিন বছর কাল হুজুর (সঃ) ইসলামের দাওয়াত গোপনে দিতে থাকেন। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশে তিনি প্রকাশ্য দাওয়াতের সূচনা করেন, আর এই সময়ই শুরু হয় কোরায়েশদের সাথে সংঘাত। এ সময় কোরায়েশরা একদিকে মুহাম্মদের (সঃ) দরিদ্র ও দুর্বল সাথীদের পরে নানারূপ শারীরিক নির্যাতন শুরু করে এবং অন্যদিকে স্বয়ং হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) নানারূপ প্রলোভন দ্বারা সত্য পথ হতে বিরত রাখার চেষ্টা করে।
নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে কোরায়েশ নেতাদের প্রস্তাবক্রমে তাদের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ওৎবা বিন রাবিয়াকে হযরত মুহাম্মদের (সঃ) নিকট একটি আপোষ প্রস্তাব নিয়ে পাঠান হয়। ওৎবা হুজুরের খেদমতে হাজির হয়ে এই মর্মে প্রস্তাব পেশ করে যে, “হে মুহাম্মদ (সঃ) তুমি এ নতুন মতবাদ পরিত্যাগ কর , তাহলে তোমাকে আমাদের নেতা করে নেব। যদি তুমি ধনের আকাঙ্খা কর, তাহলে আমরা তোমাকে আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ ধনী করে দেব আর যদি তুমি সুন্দরী মহিলার লোভ রাখ, তাহলেও আমরা তোমার সে বাসনা পূর্ণ করে দেব”। হুজুর বললেন, নেতৃত্ব, ধন আর নারী কেন। তোমরা যদি আমার এক হাতে আকাশের সূর্য ও অন্য হতে চন্দ্রও এনে দাও তবুও আমি এ মতবাদ ত্যাগ করতে পারব না। অতঃপর হুজুর সূরায়ে হাঁমিমের কয়েকটি আয়াত তার সামনে তেলওয়াত করলেন।
ওৎবা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উহা শ্রবণ করল। তার বাকশক্তি হয়ে গেল এবং ভিতর হতে সে তার সমস্ত শক্তি ও সাহস হারিয়ে ফেলল। অতঃপর সে সেখানে ফিরে গেল, যেখানে কোরায়েশ দলপতিরা তার পথ চেয়েছিল এবং মনে মনে একটি শুভ সংবাদের আশা করছিল।
ওৎবা কোরায়েশ নেতাদেরকে লক্ষ করে বলল, দেখ তোমরা মুহাম্মদকে বাধা দিও না। অতঃপর যখন তাঁর দাওয়াত কোরায়েশদের এলাকার বাইরে চলে যাবে, তখন অ-কোরায়েশদের সাথে মুহাম্মদের (সঃ) সংঘর্ষ হবে। সে সংঘর্ষে যদি মুহাম্মদ (সঃ) পর্যুদস্ত হয়, তাহলেও তোমাদের লাভ। কেননা তোমাদের শত্রু ধ্বংস হল, অথচ তোমাদেরকে সংঘাতে লিপ্ত হতে হল না। আর যদি মুহাম্মদ (সঃ) জয়ী হয়, তাহলেও তোমাদের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। কেননা তোমাদের কোরায়েশ বংশেরই একটি লোক আরবদের নেতা হবে।
এহেন প্রস্তাবে উপস্থিত নেতারা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল এবং অনুসন্ধান করে জানতে পারল যে, মুহাম্মদের (সঃ) মুখ নিঃসৃত কোরআনের বানী শুনেই ওৎবা অভিভূত হয়ে পড়েছে, ফলে মুহাম্মদের সম্পর্কে সে নমনীয় মনোভাব গ্রহণ করেছে।
অনুরূপ আর একটি ঘটনা ঘটে আবিসিনিয়ায়। তখন নবুয়তের পঞ্চম বর্ষ। কোরায়েশদের উৎপীড়নে জর্জরিত হয়ে হুজুর (সঃ) প্রথমে ষোলজন এবং পরে তিরাশিজন মুসলমান নর-নারীর দুটি দলকে আবিসিনিয়ায় প্রেরণ করেন। আবিসিনিয়ার ইসায়ী শাসক নাজাশী ছিলেন অত্যন্ত সুবিচারক এবং প্রজাবৎসল। তিনি মুসলমানদেরকে তার দেশে বসবাসের আদেশ দিলেন। এদিকে কোরায়েশ সর্দারগণ এটা জানতে পেরে একটি যোগ্য প্রতিনিধি দলকে প্রচুর উপঢৌকনসহ নাজাশীর দরবারে পাঠাল। তারা নাজাশীর খেদমতে হাজির হয়ে উপঢৌকন পেশ করে বলল, মহারাজ, আমাদের কিছু যুবক-যুবতী কিছু গোলাম আমাদের নেতাদের অবাধ্য হয়ে তাদের অনুমতি (ছাড়পত্র) ছাড়াই আপনার দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে ফেরৎ নেয়ার জন্যই আমাদেরকে আপনার খেদমতে পাঠান হয়েছে। দয়া করে আপনি তাদেরকে আমাদেরকে হাতে সমর্পণ করবেন। দরবারীরাও পলাতকদেরকে ফেরৎ দেয়ার পক্ষে মত দিলেন। কিন্তু বাদশাহ্‌ বললেন, তাদের বক্তব্য না শুনে আমি তাদেরকে ফেরত দিতে পারিনা। অতঃপর তাদেরকে ডাকা হল এবং কেন তারা দেশ ত্যাগ করে এসেছে তা বলতে বলা হল।
মুসলিম দলের নেতা হযরত আলীর ভ্রাতা হযরত জাফর দাঁড়িয়ে বললেন, জাহাঁপনা’ আমরা ইতিপূর্বে মূর্তিপূজাসহ নানারূপ কুসংস্কারে লিপ্ত ছিলাম। মারামারি, খুন-খারাবী, রাহাজানী ও লুটতরাজ ছিল আমাদের নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ। ইতিমধ্যে আল্লাহ মেহেরবানী করে আমাদের ভিতরে একজন নবী পাঠালেন। তিনি আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব গ্রহণ করতে, সত্য কথা বলতে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে, গরীব মিসকিনদের প্রতি সদয় হতে এবং খুন-খারাবী ও লুটতরাজ পরিত্যাগ করে পবিত্র জীবন-যাপন করতে আহ্বান জানালেন। আমরা তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে তার দ্বীন গ্রহণ করি। ফলে আমাদের গোত্র নেতারা আমাদের প্রতি রুষ্ট হয়ে আমাদেরকে নানারূপ নির্যাতন শুরু করে। আমরা তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আমাদের পয়গাম্বরের আদেশে আপনার দেশে হিজরত করে এসেছি। এখন যদি আপনি আমাদেরকে এই কোরায়েশ দূতদের হাতে অর্পণ করেন তাহলে আমাদের আর কোন উপায় থাকবে না।
বাদশাহ হযরত জাফরের এই তেজস্বীনি ও হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য শুনে খুবই প্রীত হলেন এবং বললেন, তোমাদের পয়গাম্বরের উপরে যে কালাম অবতীর্ণ হয়েছে তার কিছু আমাকে শুনাতে পার? হযরত জাফর, হযরত ঈসা ও হযরত মরিয়ম সম্পর্কীয় সূরায়ে মরিয়মের কয়েকটি আয়াত সুললিত কন্ঠে পাঠ করে তাকে শুনালেন। নাজাশীর দু’চোখ গড়িয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হতে লাগল। তিনি অন্তরে এক স্বর্গীয়-শান্তি অনুভব করলেন এবং বললেনঃ সৃষ্টিকর্তার শপথ ইঞ্জিল আ�� যে কালাম এখন আমাকে শুনান হল উভয়ই একই মূল হতে এসেছে।
0 notes