কবি মোহাম্মদ ইরফানুল হক এর সমস্ত "উক্তি ও কথা"
Kobi Mohammad Irfanul Hoque "Ukti O kotha" Kobi Irfan - "কবি ইরফান"
কিছু অসমাপ্ত কবিতা হয়।
খুবই....চিরন্তন সত্যি।
১/ তারিখঃ ০৮/০৭/২০২২
সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন,
প্রত্যাশী দের জন্য' অনেকটা কষ্টের হয়।
২/ তারিখঃ ০১/০৭/২০২২
আমি শিক্ষিতদের চাইতে জ্ঞানী ব্যক্তির সাথে চলতে/কথা বলতে পছন্দ করি।💕🥀🌹
৩/ তারিখঃ ০৫/০৬/২০২২
সত্য বলিয়াছ তুমি, তবে তা সত্য নয়!
মিথ্যা বলিয়াছে, মন্ত্রী মশাই, ই'হা সত্য হয়।
তবে কথাটা আন্তরিক নয়, তবে তা বাস্তবিক সত্য হয়।
হোকনা সেটা ছোট বা বড় তবে তাহ সত্য।
___বাস্তবিক সত্য-০.২
৪/ তারিখঃ ১৫/০৬/২০২০
তোমাদের কাজকে ঘিরে, পুরো জাতি ধ্বংসের পথে।
ধ্বংস কাউ কে উদ্দেশ্য করে হয় না!
হয়ে যায় যখন কিছু'ই করার থাকে না! মেনে নিতে হয় এটাই বাস্তবতা
৫/ তারিখঃ ০৮/০৬/২০২২
।
কবি কখনো বেকার কিছু, নাহি ভাবে। সবই হবে কবিতার অংশ হিসেবে।
৬/ তারিখঃ ০৮/০৭/২০২২
হাজারো মানুষের ভিড়ে যখন একা মনে হয়!
তাহার থেকে বড় একা আর কিছুই নয়।
৭/ তারিখঃ ০৮/০৭/২০২২
মহিমান্বিত রব তোমায় দিয়েছেন সব
তার পরে-ও বলো; ভালো নেই আমি বুকে কষ্টের পাহাড়খনি!
8/ তারিখঃ ৩০/০৬/২০২২
ঠান্ডা আবহাওয়া যেমনই হৃদ জুড়ে। তেমনি মুগ্ধ করে, আর মস্তিষ্ক পরিস্কার রাখতে সাহায্য করে।
৯/ তারিখঃ ১৩/০৬/২০২২
অতীত'কে ভুলে যাও
বর্তমান'কে সুন্দর করও
ভবিষ্যত সুন্দর হয়ে যাবে।
যদি'তা ভাগ্যে তোমার থাকে।
১০/ তারিখঃ ১৫/০৬/২০২২
সময়ের সাথে বদলে যায়...
আপনার সেই আকাশ চোয়া চিন্তা, ভাবনা।
১১/ তারিখঃ ২২/০৬/২০২২ ইংরেজি
বাস্তবিক সত্য সমূহ গায়ে লাগে. অনেকটাই অনেকটাই কাটা যুক্ত; তবে তাহ সত্য।
১২/ তারিখঃ ২২/০৬/২০২২ ইংরেজি
।
কিছু কথা আছে যা আন্তরিক নয়...তবে বাস্তবিক হয়।
হোকনা সেটা ছোট বা বড়, তবে তাহা সত্য।
সত্য বলিবে তুমি' গায়ে লাগবে তার।
তাহা'ই প্রমাণ করে; সত্য বলি আছো যাহ্।
কিছু কথা বাস্তবিক, তবে আন্তরিক নয়।
___"বাস্তবিক সত্য-০.১"
১৩/ তারিখঃ 06/06/2022
।
লুটে খাবে আমাদের তারা, চেয়ে চেয়ে দেখব আমরা।
পরে গিয়ে বলবো" সেত খেয়ে দিলো, আমাদের অর্থায়ন।
টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলো, কোন এক "দেশ নয়ন"।
এই ভাবেই হবে- হয়তো আমাদের উন্নয়ন।
১৪/ তারিখঃ ১০/০৭/২০২২
।
আমি এমন একজন ব্যাক্তি;
যার নাই কোন শক্তি।
রব আমায় যাহা দিয়াছে,
তাতেই আমি সন্তুষ্টি।
🌹🥀আলহামদুলিল্লাহ🥀🌹
১৫/ তারিখঃ ১২/০৭/২০২২
কারোই প্রকাশ���য নম্রতা দেখে তার সম্পর্কে এমনটা না ভাবা উত্তম। যেমন; হয়তো তার তেমন পাওয়ার (ক্ষমতা) নেই অথবা সে খুব সহজ সরল, নম্র, ভদ্র।
সহজ সরল, নম্র, ভদ্রতার আড়ালে লুকাইত থাকে মারাত্মক হিংস্রতা। সঠিক সময়ে তাহ প্রকাশিত হবে কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। কিছুই করার থাকবেনা আফসোস ব্যতিত
১৬/ তারিখঃ ১৭/১৫/০৭/২০২২
আমরা যতই বড় বড় কথা লিখি ততো বড় নাই।
আমরা যতই ক্ষমতা দেখাই, কিন্তু ততো ক্ষমতার অধিকারীও আমরা নই।
▪️যদি হতাম তাহলে, আমাদের সকল ইচ্ছাকৃত কাজে বিজয় অর্জন আমরাই করতাম।
▫️মানে আমাদের বুঝতে হবে আমরা যতই ক্ষমতা দেখাই। সেই সকল ক্ষমতা আমাদের নয়। আমরা কিছু সময় তা ব্যাবহার করছি একটি সময়ে তাও আমাদের থেকে বিদায় নেবেন। আমরা শুন্য হয়ে যাবে।
🔻সময় থাকতে ক্ষমতার অপব্যবহার পরিহার করুন। সময় সবসময় এক হয়না! সময় পরিবর্তিত হয়।
১৮/ তারিখঃ ১৭/০৭/২০২২
আপনি চিন্তিত হবেন না! যখনি কোন কষ্টের সম্মুখীন হোন।
হতে পারে সেই কষ্টের মাধ্যমে আপনার জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। আল্লাহ জানেন আপনার জন্য কোনটি ভালো কোনটা খারাপ। হয়তো কিছু সময় অথবা, দীর্ঘ সময় আপনাকে কষ্ট পেতে হবে। তবে চিন্তা করবে না এরপরে আপনি সুখ পাবেন/ সুখী হতে পারবেন।
১৯/ তারিখঃ ১৭/০৭/২০২২
হতাশা কখনো আপনাকে শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে না! নিজের ভিতরে মনোবল রাখুন। নিজেকে বলুন আমার জন্য আল্লাহ আছে।
তিনি যা জানেন তা কেউই জানি না! বা কল্পনাও করতে পারবো না। এতে রয়েছে আল্লাহ সুন্দর পরিকল্পনা যা হয়তো এ মূহুর্তে আমি বুঝতে সক্ষম নয়ই।
কিন্তু আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ।
২০/ তারিখঃ ১৭/০৭/২০২২
আপনি অনেক ভাই ও বোনদের দেখবেন তারা বলে;
আল্লাহ কেন আমাকে এত কষ্ট দেন? আমিতো কোনো অন্যায় করিনি, আমি তো কখনো কারো খারাপ চাইনি; তারপরও কেন আমার সাথে এমনটা ঘটে। আমিতো সদাসর্বদা সকলের জন্য ভালো ও কল্যাণ কামনা করি!?.
আমারা বারবার একটা কথা ভুলে যাই;
আল্লাহ তাকে বেশি পরীক্ষা করেন যাকে আল্লাহ তা'য়ালা পছন্দ করেন। তো আপনাকে আল্লাহ তা'য়ালা পছন্দ করেন এজন্য আপনাকে পরীক্ষা করেন। আপনি যদি আল্লাহর সকল পরিক্ষা উত্তির্ন বা বিজয়ী হতে পারেন তাহলে পরবর্তীতে আপনার জন্য সুখ রয়েছে।
২১/ তারিখঃ ১৫/০৭/২০২২
আপনার ঘরে নারী থাকার পরে-ও আপনি অন্য নারীকে বিরক্ত করেন।
এর মানে হয়; আপনার ঘরে যদি নারী না থাকতো, তাহলে আপনি সেই সকল নারীকে ধর্ষণ করতেন।
__খারাপ পুরুষদের প্রদান হচ্ছে, ঐ সকল পুরুষ যারা নারীদেরকে উত্তপ্ত করে।
0 notes
সাগর আই লাভ ইউ (পর্ব ১০) আলমারির গল্প হল, আবার স্রোতস্বিনীতে ফিরে আসি। ন্যাপকিনে দিয়ে টেবিলে পড়া কফি মুছে বললাম,‘স্রোতস্বিনী, তোমার কথা ঠিক মতো বুঝতে পারছি না।’ স্রোতস্বিনী বলল,‘না বোঝার মতো তো কিছু বলিনি সাগর। একজনকে কিডন্যাপ করতে হবে। আমি তার জন্য খরচ করব। ভালই খরচ করব। তুমি রাজি আছো কিনা বলো। খুব সহজ একটা প্রস্তাব। এর মধ্যে কোনও জটিলতা নেই।’ আমি নিজেকে সামলে নিয়ে হাসলাম। বললাম,‘সহজ প্রস্তাব! কিডন্যাপ সহজ কাজ? সে যাই হোক, এর জন্য আমাকে কেন দরকার? এই ধরনের কাজ করবার জন্য ভাড়াটে লোক পাওয়া যায়। সুপারি দিলেই পাওয়া যায়। সুপারি কি জানো? কাজের জন্য টাকা। ফেল কড়ি, মাখো তেল। তোমার এই কাজেরবেলায় ফেল কড়ি করো কিডন্যাপ।’ স্রোতস্বিনী কফির মাগ হাতে তুলে নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে বলল,‘পান, সুপারি, চুন কিছুই দেব না। আমার কোনও ভাড়াটে গুন্ডা দরকার নেই। আমি চাই কাজটা তুমি করো। কোনো ভাড়াটে লোক ছাড়াই করো।’ ভাগ্যিস কফি খাচ্ছিলাম না। খেলে এবার আর শুধু চলকে পড়ত না, বিরাট বিষম খেতে হত। স্রোতস্বিনী কি সেন্সে আছে? ও আমাকে কিডন্যাপার হতে বলছে? স্রোতস্বিনী আমার মনের কথা বুঝতে পারল। বলল,‘ তোমার নিশ্চয় মনে হচ্ছে, আমি সেন্সে নেই, পাগলামি করছি। তাই তো?’ আমি বললাম, ‘এ কথা মনে হওয়া কি খুব অন্যায় স্রোতস্বিনী? আমার কোন গুণ দেখে তোমার মনে হল, কিডন্যাপের কাজে আমি একজন পারদর্শী?’ ‘পারদর্শী নও বলেই আমি তোমাকে চাইছি। প্রফেশনাল ক্রিমিনাল দিয়ে এই কাজ আমি করতে চাই না সাগর। প্রফেশনাল নেওয়ার হাজার সমস্যা। সবথেকে বড় ঝামেলা বাইরের লোক বিষয়টা জেনে যাবে। আমি এটা চাই না। তুমি পারবে কিনা বলো।’ আমি চুপ করে রইলাম। নিজেকে কিডন্যাপার হিসেবে ভাববার চেষ্টা করলাম। খবরের কাগজে তো কতরকম অপহরণের গল্প পড়ি। সিনেমাতেও দেখেছি। আমি সেগুলোর সঙ্গে নিজেকে মেলবার চেষ্টা করলাম। কালো কাচে ঢাকা মস্ত গাড়ি ফস্ করে এসে পাশে দাঁড়াবে। আমি ঝট্ করে গেট খুলে নেমে পড়ব। হাতে থাকবে ক্লোরোফর্ম ভেজানো রুমাল। সেই রুমাল আমি চেপে ধরব নাকে। তারপর পাঁজাকোলা করে তুলে ঢুকিয়ে নেব গাড়িতে। সাঁই করে গাড়ি চলে যাবে। আরও আছে, শুনি বড়লোকেরা মর্নিংওয়াকে বেরিয়ে কিডন্যাপারের পাল্লায় পড়ে। মর্নি শোজ দ্য ডে -এর মতো মর্নিং শোজ দ্য কিডন্যাপিং। আমি কি তাই করব? করতে পারি। ভোরবেলা ময়দানে ঘাপটি দিয়ে থাকব। মোটাসোটা ভুঁড়িওলা, হাতের দশটা আঙুলে হিরের আংটি পরা কাউকে দেখলে ঝাঁপিয়ে পড়ব। আবারা বাড়িতে থেকে কলিংবেল টিপে অপহরণের ঘটনাও কোনও কোনও সিনেমায় দেখেছি। এই ধরনের অপহরণে দরজা খুললেই পেটে রিভলবার ঠেকাতে হয়। নিচু গলায় বলতে হয়,‘স্যার, রাস্তায় গাড়ি রাখা আছে। চলুন আমরা দু’জন গাড়িতে করে ঘুরে আসি। গাড়িতে রবীন্দ্রনাথের গানের ব্যবস্থা আছে। গানের নাম তোমরা যা বলো তাই বলো আমার লাগে না মনে। গায়িকার নাম, শ্রাবণী সেন। গাড়িতে বসে শুনবেন। আসুন স্যার।’ আমাকে কোন ভূমিকায় মানাবে? এবার বেশ থ্রিলড্ লাগছে। ভিতরে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা অনুভব করছি। তার ওপর একটু আগেই স্রোতস্বিনী বুঝিয়ে দিয়েছে, আমাকে সে ‘বাইরের মানুষ’ মনে করে না। এর তো একটা দাম আছে। স্রোতস্বিনী ভুরু কুঁচকে বলল,‘কী হল? কিছু বলছো না যে, ভয় করছে?’ আমি হেসে বললাম,‘তা খানিকটা ��ো করছেই। তবে ইন্টারেস্টিংও লাগছে। এই ধরনের অ্যাসাইনমেন্ট করবার চান্স কি আর কখনও পাব? এবার স্রোতস্বিনী তুমি কি আমাকে ঘটনাটা পুরো বলবে?’ ‘না, আগে তুমি ডিশিসান নাও।’ আমি নিচু গলায় বললান,‘মনে হচ্ছে, ডিশিসন আমি নিয়ে ফেলেছি।’ স্রোতস্বিনী চোখ সরু করে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল। বলল,‘এখন ঝোঁকের মাথায় কোনও ডিশিসন নেওয়ার দরকার নেই। তোমাকে ঠিক দু‘দিন সময় দিলাম। টু ডেজ। বুধবার ঠিক এই জায়গায়, এই সময়ে তোমার সঙ্গে দেখা করব। তুমি যদি ইয়েস বলো তখন সবকিছু বলব। টাকা -পয়সার কথা হবে।’ আমি হেসে বললান,‘তোমার কাছ থেকে যদি টাকা না নিই?’ স্রোতস্বিনী একটুও না ভেবে বলল,‘তাহলে কাজ তোমাকে দিয়ে করাব না।’ ‘কাকে কিড্ন্যাপ করতে হবে সেটা কি জানতে পারি?’ স্রোতস্বিনী সহজ গলায় বলল,‘না, তবে এইটুকু বলতে পারি, কিড্ন্যাপ করতে হবে এক ঘন্টার জন্য। ওনলি ফর ওয়ান আওয়ার। মে বি লেস দেন দ্যাট। আরও কম হতে পারে।’ এক ঘন্টার অপহরণ! আমার বিস্ময় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আজ স্রোতস্বিনী একটার পর একটা ছক্কা হাঁকিয়ে চলেছে। ‘এক ঘন্টার জন্য ধরে আনব! এর মানে কী স্রোতস্বিনী?’ স্রোতস্বিনী বলল,‘মানে খুব সহজ। কিডন্যাপের এক ঘন্টার মধ্যে তাকে মুক্ত করে দেওযা হবে। সে যেখানে খুশি যেতে পারে। ব্যস এর বেশি আজ আর বলব না। আগে তুমি মন স্থির করও সাগর। তোমার মনে যেটুকু দ্বিধা রয়েছে সেটুকু আগে কাটুক।’ স্রোতস্বিনীর কাছ থেকে বেরিয়ে আমি উদ্দেশ্যহীনভাবে এলোমেলো ভাবে হাঁটতে লাগলাম। কলকাতার মতো ব্যস্ত শহরে সবাই ছোটে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। কাজে যাওয়ার লক্ষ্যে, বাড়ি ফেরবার লক্ষ্যে, বড়লোক হবার লক্ষ্যে, মানুষকে ঠকাবার লক্ষ্যে। কেউ কেউ দান ধ্যানের জন্যও ছোটাছুটি করে, কেউ চলে আনন্দের সন্ধানে। কেউ খোঁজে মৃত্যুকে। এরকম একটা শহরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটার মজাই আলাদা। নিজেকে মনে হয়, শহরের সব থেকে সুখী মানুষ। আমার কিছু চাওয়ার নেই। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম লেকের কাছে। লেকে এখন অনেক আলো। আমি একটা ফাঁকা, তুলনামূলক ভাবে অন্ধকার জায়াগা খুঁজে নিলাম। বেঞ্চে বসলাম গা এলিয়ে। খানিক দূরেই লেকের জল টলমল করছে। চাঁদের আলো এসে পড়েছে। আলো আর জলে গলাগলি, কানাকানি চলছে। আমি মন পেতে তাদের সেই কানাকানি শুনতে লাগলাম। চাঁদের আলো বলছে—জানো একটা মজার ঘটনা ঘটেছে। লেকের জল—তোমার তো সবই মজার কথা। চাঁদের আলো—অবশ্যই। আমি সবসময় মজায় থাকি, তাই আমার কথাগুলোও মজার। লেকের জল—সেকী, সবসময় মজায় থাকো! তোমার মন খারাপ লাগে না? চাঁদের আলো—লাগাবে না কেন ? অবশ্যই লাগে। অন্য কারও মন খারাপ দেখলেই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। তখন আমি মন ভাল করবার মতো নানা কাণ্ড করি। সবার মন ভাল হয়ে যায়, আমারও। লেকের জল—কী রকম সব কাণ্ড? চাঁদের আলো—তোমাকে বলব কেন? লেকের জল—একটা তো শুনি। চাঁদের আলো—আচ্ছা একটা ঘটনা বলছি। কাউকে বলেতে পারবে না। প্রাইভেট ঘটনা। লেকের জল—আচ্ছা বলব না। চাঁদের আলো— দুটো ফুটফুটে ছেলেমেয়ে সিকিম পাহাড়ের বন বাংলোতে গেছে হানিমুনে। দু’দিন ধরে চলছে ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি। যতই হানিমুন হোক সারাদিন ঘরে বন্দি থেকে ছেলেমেয়ে দুটি ক্নান্ত এবং বিরক্ত। আদর, ভালবাসাবাসিরও তো একটা সীমা আছে। এদিকে বাংলোর কেয়ারটেকার, কুক বৃষ্টির কারণে দিয়েছে ডুব। খাওয়া দাওয়ায় পড়েছে টান। লাঞ্চ হয়েছে কেক আর পটোটা চিপসে। বিকেল কফি-পকৌড়া জোটেনি। কেলেঙ্কারি সিচ্যুয়েশন। সন্ধ্যর সময় নতুন বর বউতে লাগল ঝগড়া। এই বর্ষায় জঙ্গলে নিয়ে আসার জন্য মেয়েটি দায়ী করতে লাগল ছেলেটিকে। ছেলেটিও গেল রেগে। সে বেলে, বর্ষাকালে বিয়ে হলে, হানিমুন তো শীতকালে হতে পারে না। যেখানেই যাওয়া হত সেখানেই বৃষ্টি জুটত। তার কোনও দোষ নেই। বৃষ্টি সে নামায়নি। মেয়েটি গেল আরও খেপে। সে বলল, হানিমুন ক’দিন পিছিয়ে দিলে কী ক্ষতি হত? ছেলেটি বলল, আমার সব বন্ধুই বিয়ের দু’দিন পরেই হানিমুনে গেছে। হানিমুন ইউনিভার্সিটির পরীক্ষার ডেট নয় যে ইচ্ছে মতো পিছিয়ে দেওয়া যায়। মেয়েটি রেগে গিয়ে স্বামীকে বলে, তোমার উচিত ছিল, আমার বদলে ওই বন্ধুদের নিয়ে হানিমুনে আসা। ছেলেটি এতে যায় খেপে। বলে, বিয়ে করাটাই তার বিরাট ভুল। এতে রাগারগি তুমুল চেহারা নেয়। ছেলেটি বাংলোর বারান্দায় চলে যায়। ভেজা বেতের চেয়ারে বসে সিগারেট টানতে থাকে। মেয়েটি ঘরে শুয়ে কাঁদতে থাকে। লেকের জল—তারপর? চাঁদের আলো—হানিমুনে উঁকি মারা মোটে উচিত নয়। কিন্তু এমন সুন্দর দুটো ছেলেমেয়ের মন খারাপ দেখে আমারও মন খারাপ হয়ে গেল। এই তো খানিক আগেও ওরা দুজন পাগলের মতো পরস্পরকে আদর করছিল, এখন শুরু হয়েছে কান্নাকাটি। আহারে। তখন আমি অ্যাকশন শুরু করলাম। লেকের জল—কী অ্যাকশন? চাঁদের আলো—বৃষ্টি থামিয়ে, মেঘ কাটিয়ে বেরিয়ে এলাম। ছড়িয়ে পড়লাম, পাহাড়ের চূড়োয়, জঙ্গলের পাতায়, পাহাড়ি পথে। গড়িয়ে গেলাম খাদে, ভেজা পাথরের গায়ে। সেই ছেলে ছুটে এল ঘরে। নববিবাহিতা স্ত্রীকে বলল, চল চল, বাইরে আগুন লেগেছে। চাঁদের আলোর আগুন। কী যে সুন্দর লাগছে! দেখবে চল। বারান্দায় এসে মেয়েটি তার বরকে চুমু খেয়ে বলল, ভাগ্যিস তুমি এখানে এনেছিল। তোমাকে বিয়ে না করলে এই রহস্যময় সৌন্দর্য দেখাই হত না। খানিক পরে দেখি ওরা পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটছে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। মাঝেমাঝে কানে কানে কথা বলছে আর হাসছে। জ্যোৎস্না ভেজা পথ বেয়ে যাচ্ছে নিচের এক গ্রামে। সেখানে নাকি ধোঁয়া ওড়া গরম রুটি আর তরকা মিলবে। এরপরেও মন ভাল হবে না? লেকের জল—তাহলে বলছো বৃষ্টি খারাপ? চাঁদের আলো—মোটেও নয়। বৃষ্টি হয়েছিল বলেই তো আমাকে অত ভাল লেগেছে। লেকের জল আর চাঁদের আলোর কানাকানি শুনতে শুনতে কখন যে বেঞ্চে বসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হয়তো ঘুমের মধ্যেই ওদের কানাকানি শুনেছি। ঘুম ভাঙল অনেক রাতে। মাথার ওপর চাঁদ ঢলে পড়েছে। ধড়ফড় করে উঠি। চোখ কচলাতে গিয়ে শুনি এক রিনরিনে কণ্ঠস্বর। তাকিয়ে দেখি হাত দুয়েক দূরে একটা মেয়ে বসে আছে। ‘দাদা, একটা বিপদে পড়েছি।’ অন্ধকারে মেয়েটিকে ভাল করে দেখতে পাচ্ছি না। মুখটা অন্ধকারে। শুধু বুঝতে পারলাম, মেয়েটা একটু বেশি রোগা, আর পরেছে সালোয়ার কামিজ। পোশাকের রঙ মনে হচ্ছে কালো। আবার নাও হতে পারে। মেয়েটা মুখে ‘বিপদ’ বললেও, হাবেভাবে শান্ত। গভীর রাতে পার্কে আসা মেয়েরা বেশিরভাগ সময়ে ‘বিপদ’ দিয়ে গল্প শুরু করে। একটা সময় বলবে, আমি কি তাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌছে দিতে পারি? বাড়ি কাছেই। বালিগঞ্জ স্টেশনের গায়ে, রেল লাইনের পাশে ঝুপড়িতে। বাড়ি পৌছোনোর পর যদি ইচ্ছে হয়, ঝুপড়িতে আজ রাতটা কাটাতেও পারি। সব ব্যবস্থা আছে। অতি পুরোনো গল্প। এই ধরনের সময় ‘ভাল ছেলে’দের কী করতে তারও নিয়ম আছে। মেয়েটিকে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করা এবং এখান থেকে উঠে যাওয়া। আমার নিয়ম মানতে ইচ্ছে করেছে না। এই গভীর রাতে মেয়েটিকে যে ঘরবাড়ি, সংসার ছেড়ে পার্কে এসে বিপদের গল্প ফাঁদতে হচ্ছে তার জন্য আমিও দায়ী। পালিয়ে গিয়ে ‘ভাল ছেলে’ সাজতে পারব, দায় এড়াতে পারব না। ‘দাদা, আপনি কি আমার বিপদের ঘটনাটা একটু শুনবেন?’ গলাটা একটু বেশি রিনরিনে না? মেয়েটি কি গলা বদলে কথা বলছে? আমি সোজা হয়ে বসলাম। অন্ধকার চোখ সয়ে আসছে। আই বল, রেটিনা কম আলোর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছে। মেয়েটিকে এবার আরও খানিকটা বেশি দেখতে পাচ্ছি। বয়স বেশি হবে না। ষোল-সতেরো? নাকি আর একটু কম? আমি উদাসীন গলায় বললান, ‘না, শুনব না। আমি আদ্দেক ঘুমিয়েছি, এখন বাকি আদ্দেকটা ঘুমোবো। আমার কাছে কোনও টাকা-পয়সা নেই, আমাকে বিপদের গল্প শুনিয়ে কোনও লাভ দবে না।’ ‘দাদা, আমার টাকা পয়সা লাগবে না।’ ‘বাঃ, শুনে ভাল লাগল। তুমি এখান থেকে চলে গেলে আরও ভাল লাগবে। বেঞ্চে টানটান হয়ে শুয়ে পড়তে পারব।’ বনলতা আমার কথায় গা করল না। সে একই রকম শান্ত ভাবে বলল,‘আপনি যদি আমাকে তাড়িয়ে দেন, আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে। ওরা হয় আমাকে অত্যাচার করবে, নয় খুন করবে। আমি কোনওরকমে পালিয়ে এসেছি।’ নতুন গল্প। ‘বাড়ি ফেরবার পথ হারিয়ে ফেলছি’ র বদলে খুনের গল্প। বেঁচে থাকবার জন্য মানুষকে কত গল্পই না বানাতে হয়।’ আমি একই রকম নিস্পৃহ গলায় বললাম,‘কে খুন করবে?’ মেয়েটি মুখে ওড়না চাপা দিয়ে কিশোরী ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। চলবে… গত পর্বের লিংক – ৮ম পর্বের লিংক – ৭ম পর্বের লিঙ্ক – ৬ পর্বের লিঙ্ক –
0 notes
ছায়াঘর
(দুই)
বিড়ালটা যেন কাঁদছে ! এমন স্বরে আগে কখনো বিড়ালের মিউমিউ শুনেছে বলে দিলরুবা মনে করতে পারে না । ওর ঘুম ভেঙে যায় অন্য আরেকটা শব্দে, খুঁট খুঁট খুঁট খুঁট...নাহ ঠিক খুঁট খুঁট ও নয় - ধুপ ধুপ ধু ধুপ ধুপ...
তার সাথে যেন তাল মিলিয়ে সংগত করছে বিড়ালের কান্না, মিউউউ মিউউউ মিউউ...
ঘরের ভিতর কারা যেন নড়াচড়া করছে ... ধাতব ভারী কিছুর ঘরর ঘরর, ধুপ ধুপ মিউউউ মিউউউ মানুষের গলার ফিসফাস কাছের চুড়ির টুং টাং মিলে মিশে কানের ভিতর অচেনা বিচিত্র এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়... সে অনুভূতির ভিতর হাবুডুবু খায়...খেতে খেতে অচেনা সে অনুভূতি নিয়ে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে থমকে যায় আচমকা…আম্মার গলায় ফিসফাস কেমন যেন অদ্ভুত লাগে... জরি, রহিমা খালা, মনির’র গলার অস্ফুষ্ট আলোচনা শুনতে শুনতে ওর ছোট শরীরে এবার ভয়ের শিরশিরানি টের পায়... বাড়ির সবাই এক সাথে এখানে এত রাতে কি নিয়ে কথা বলছে? এত রাতে এত গোপনে কি হচ্ছে ?
আবার মনে হয় স্বপ্ন দেখছে না তো? রোজ রাতেই সে নানা রকম স্বপ্ন দেখে...তার ধারণা সারা রাত ধরে সে স্বপ্ন দেখে, ঘুম আসে স্বপ্নের উপর ভর করে, ঘুম ভাঙেও স্বপ্নের মাঝ পথে…ওর আফসোস স্বপ্ন প্রায়ই সম্পূর্ণ টা দেখতে পায় না, ঘুম ভেঙ্গে যাবার কারণে ।
সকালে ঘুম থেকে জেগে নাস্তা করে ওর প্রথম কাজ হয় ছোট বোন রুখশানা কে স্বপ্নের কথা মজা করে, চোখ মুখে নানা ভাবের খেলা দেখাতে দেখাতে ইনিয়ে বিনিয়ে বলা...অনেক সময় প্রায় কিছুই মনে থাকে না, তাতে ওর বয়েই গেছে, বানিয়ে বানিয়ে বলে যায় সে...বানিয়ে বানিয়ে চুইংগামের মত লম্বা করতে করতে স্বপ্ন দৃশ্যকে সে টেনে লম্বা করে... মাঝে মাঝে তার সন্দেহ হয়, রুখশানা কি সব কথা ওর বিশ্বাস করে? কিন্তু, তার মন খারাপ করা দেখে সে সন্দেহ দূর হয়ে যায়...
প্রতিদিন সকাল বেলা স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনতে শুনতে রুখশানা মন খারাপ করবেই করবে...
কেমন করে যেন রুখশানার ধারণা জন্মেছে - ওর থেকে মাত্র দেড় বছরের বড় বোন দিলরুবার বিশেষ কোন ক্ষমতা আছে, যা ওর নিজের নেই...কখনো বলতে দেরী হলে, মাঝে মাঝে যা সে ইচ্ছা করেই করে, রুখশানা ওকে আড়চোখে কিছুক্ষন দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
আইজকু কিতা দেখছ আফা?
সেসব দিনে দিলরুবার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি ভর করে...সে ধীরে সুস্থে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে জবাব দেয়,
উবা ( দাড়া ) কইরাম...বালা লাগের না...অউ মাত্র ঘুম থাকি উঠছি ...
তারপর, আড় চোখে হেনার উস্কুস ভাব, শুনার জন্য অধির আগ্রহ, এসব দেখে আর মুখ টিপে হাসে, ভাবে, যতখানি সম্ভব বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে হবে আজ...
দিলরুবা একদিন স্বপ্ন বলতে শুরু করল এভাবে,
মনো আছেনি তর গতবার য্যন তুই আরি (হারিয়ে যাওয়��) গেছলে অষ্টমীর বান্নিত (মেলা) গিয়া?
হেনা দুদিকে না সূচক মাথা নাড়ে...সে কিছুতেই মনে করতে পারেনা...আসলে এরকম কোন ঘটনাই ঘটে নি...
ধুর! তুই কিচ্ছু মন��� রাখতে পারছ না...
আমি আইজ স্বপ্ন দেকছি তুই আরি গেছচ...তরে আর পাইরাম না...আস্তা বান্নি ঘুরিয়া রহিমা খালা আর আমি তরে তুকাইছি...এক বেটায় কইল তরে কুছকরে (ছেলেধরা) ধরিয়া নিছেগি মনে অয় ...
কোনখান বুলে ফুল (পুল) বানাইব, ফুল বানাইতে বচ্ছাইন্তর মাথা কাটিয়া রক্ত দেওয়া লাগে...বেটায় আরো কইচে আর পাওয়ার আশা নাই...বাড়িত গিয়া যেন দরগাত শিন্নি দেই, তেইলে ফাইলেও ফাইতাম ফারি...
বলে আর খিক খিক করে হাসে সে...
সব শুনে ফোলা ফোলা গাল দুটো আরও ফুলে উঠে রুখশানার । তার কান্না পেয়ে যায়...
তুমি আসরায় (হাসছ ) কেনে...? দিলরুবা তাড়াতাড়ি বলে উঠে, আসরাম?...কই? বলে এবার ও সত্যি সত্যি মুখ বেজার করার ভান করে...
তে কিতা অইছে?... বুঝা যার তুই কান্দি দিবে...ইতা ত আর হাচা নায়...স্বপ্ন হাচা অয়নি?
এবার সত্যি সত্যি রুখশানা কেঁদে ফেলে ... মনে মনে ভাবে আর কখনো সে বোনের কাছে স্বপ্নের কথা জানতে চাইবে না...
তুমি অতোতা (এতো) কেম্নে দেখো!? আমি দেখি না কেনে?
তে দেখছ না কেনে? কে না করছে তরে? বলেই দিলরুবা হাসি লুকোতে রুখশানার পাশ থেকে উঠে চলে যায়...
এখন পাশ ফিরে থাকা ঘুমন্ত ছোট বোনকে দেখে দিলরুবা, গভীর ঘুমের ভিতর ডুবে আছে । নড়াচড়ার কোন নাম নেই...
এই অদ্ভুতুড়ে রাত দুপুরে এসব কথা মনে পড়তেই চিকন একটা ব্যাথা টের পায় বুকের গভীরে কোথাও ... তবে তা কিছুক্ষনের জন্য মাত্র... পরমুহুর্তেই ভাবতে শুরু করে - আজ রাতের কথা কেমন করে রসিয়ে রসিয়ে কাল সকালে বলবে...
ঘরর ঘরর ধুপ ধুপ ধুপ...শীত নয়, তবু শীত শীত লাগতে থাকে দিলরুবার । পাতলা কাঁথাটা টেনে গায়ে দেবার চেষ্টা করে সে । প্রায় রাতেই ঘুম ভেঙে গেলে দেখে কাঁথাটা কেমন করে যেন রুখশানার ছোট শরীরের সাথে জড়িয়ে মড়িয়ে গেছে । আস্ত একটা বড় কাঁথা কিভাবে শুধু একজনকেই রাতের বেলা আপন করে নেয় - ভেবে কূল পায় না সে । অনেক রাতে কাঁথা টানতে গিয়ে হেনার উঁ উঁ করাতে ছেড়ে দিয়ে, গুটিসুটি মেরে শুতে হয়েছে । কাল সকালেই আম্মাকে আরেকটা কাথার জন্য বলতে হবে...
টুং টাং টাং...
শব্দগুলো কানের ভিতর গিয়ে তীব্র ভাবে ইন্দ্রিয়ে পৌঁছার সাথে সাথে কান খাড়া করে
বিছানার উপর উঠে বসবে কি না যখন ভাবছে - তখন আম্মার ধাতব স্বর মনে করতেই উঠে বসার ইচ্ছা টাকে ছেড়ে দিতে হয় । চোখ দুটি সম্পুর্ণ মেলে এবার আধো অন্ধকারে মানুষজনের নড়াচড়া দেখে... এক নজরে কাউকে পৃথক করা যায় ন ।
আম্মার বিশাল, কালো সেগুন কাঠের ভারী পালঙ্ক সরাতে মনে হচ্ছে ওদের প্রাণ বেড়িয়ে যাচ্ছে... আম্মার মৃদু ধমক শুনতে পায় এবার । কাকে ধমক দেয় আম্মা? ঘুম এখন পুরোপুরিই গেছে...মনে হয় না এবার সে আর স্বপ্ন দেখছে...
মনির’র গলা শুনতে পায়,
মাইজী, আপনে হরউকা...পাও লাগব...
দিলরুবা হাতের তালুতে মুখ ঢেকে, আঙুল গুলো ফাঁক করে দেখার কসরত করে... আম্মার গলায় এবার ফিসফিসানি.... ইশ ! কিছুই প্রায় দেখতে পাচ্ছে না সে...
ভাল মত সব কিছু না দেখতে পেলে, সকালে আফসোস করতে হবে... রুখশানা যদিও সত্যি মিথ্যা দিয়ে বলে দেবে দেখা না দেখা মিশিয়ে, তবু, নিজের মনের তীব্র কৌতূহল তাতে বাঁধ মানছে না । দিলরুবা এবার বিছানায় উঠে বসার ফন্দি আঁটে । শুয়ে থেকে তেমন কিছুই দেখতে পাচ্ছে না...
বাপ্রে অত্ত ভার... রহিমা খালার গলা ।
সাথে আরো কয়েকজনের কোরাস...
স্পষ্ট বুঝতে পারে সে...
দিলরুবা কাঁদতে শুরু করে... এ ছাড়া কোন উপায় নেই, চোখে জল না থাক্লেও এরকম কান্না মাঝে মাঝে কাজে দেয়...
হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছে সে, জানে এবার আম্মা তার কাছে এসে দাঁড়াবে, জানতে চাইবে কান্নার কারণ । দিলরুবা কুই কুই করে কাঁদে , আর কান খাড়া করে অপেক্ষা করে কিছু একটা শুনার - কিন্তু ওদিকে কোন সাড়া শব্দ নেই...
কান্নার শব্দ এবার আরো কিছুটা বাড়িয়ে দেয় । কোন শব্দ নেই। যেন এতক্ষণ কোথাও কিছুই ঘটেনি, সে কি আসলেই স্বপ্ন দেখছিল... কান্নার আওয়াজ এবার কমিয়ে দিয়ে সমগ্র ইন্দ্রিয় খাঁড়া করে বুঝার চেষ্টা করে...
লন্ঠনের ঘোলাটে চিমনির, ভৌতিক আলো ঘরের কোথাও ঠিক সেভাবে পৌঁছায় না । দিলরুবা ভালমত কিছু বুঝে উঠার আগেই, কেউ এসে মুখে থেকে তার হাতটা সরিয়ে দেয়...
কিতা অইছে? কান্দছ কেনে?
সে তথমথ খেয়ে কান্নার গতি বাড়াবে কি না, বুঝা না বুঝার দন্ধে দুলতে দুলতে উত্তর দেয়,
রুখশানায় আমারে লাথ মারছে আম্মা...
লাথ মারছে বালা করছে !
আর লাথ ত তরে কাইল রাইত মারল...কাইল রাইত কানলে, তাই ত দেখি ঘুমার...চোখ বন্ধ করিয়া ঘুমা অকন ..কুনু কান্দা কান্দি নাই কইলাম...
আম্মার মুখ না দেখেও সে বুঝতে পারে ভুল করে ফেলেছে । গতকাল না, পরশু রাতে সে একই কথা বলেছিল - সে রাতে সত্যিই আসলে মেরেছিল। যথাসম্ভব নিজের কথায় দাঁড়িয়ে থেকে জোর দিয়ে বলে,
তাই ত রোজোই মারে, কেথা নেয় গি টানিয়া, ঘুমাইতাম পারি না আমি...
মরিয়া হয়ে রুখশানার বিরুদ্ধে কথাগুলো বলে সত্যি সত্যি খারাপ লাগতে থাকে ওর... নিজেকে বাঁচাতে বলতে হয়েছে, আম্মা হয়ত যেকোন মুহুরত্যে থাপ্পড় মেরে দেবে...আম্মার হাতের থাপ্পড় খেয়ে একদিন ওর মাথা ঘুরে গিয়েছিল...
কান্না থামিয়ে, গলার স্বর যথাসম্ভব কোমল করে জিজ্ঞেস করে,
কিতা কর ও আম্মা?
চুউপ! ...ঘুমা কইলাম... পরতেক রাইত তাইর আছেও একটা না একটা...
বন্ধ কর চউক...
দিলরুবা তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেলে...কতক্ষণ চোখ বন্ধ করেছিল বলতে পারবে না - কারো কোন সারা শব্দ নেই, এমনকি আম্মারও না । চলে গেছে মনে হয় বিছানার কাছ থেকে ...
মনে হচ্ছে সবার হাত থমকে আছে । কেউ শ্বাস পর্যন্ত ফেলছে না...
ইলাখান কাম বন্ধ করিয়া বই থাকলে ত রাইত পোয়াই যাইব ভাবি...
রহিমা খালার পরিষ্কার কথা শুনে বুঝতে পারে ও জেগে আছে বলেই হয়তবা কাজ আটকে আছে...
কিছুক্ষণ পর সে সাহস করে চোখ মেলে মাথা সামান্য উপড়ে তুলে দেখতে পায়, ছায়ার মত কয়েকটা মানুষ মেঝেতে গোল হয়ে বসে আছে... আম্মা কোথায় সে ঠিক ক ধরতে পারে না । রহিমা খালার কথা শুনে আম্মা কোন উত্তর করে না...আম্মার এই ব্যাপারটা তার একেবারেই ভালো লাগে না । এই যে ইচ্ছা না হলে কারো কোন কথার জবাব দেয় না...
যে প্রশ্ন করে তাকে ধর্য্য ধরে বসে থাকতে হয়...কখন আম্মার মর্জি হবে উত্তর দেবার সে অপেক্ষায়...ওদের দুই বোন, আব্বা, কাজের লোকেরা এমন কি এই বাড়ির ঘর দোর, গাছ পালা, পুকুর ঘাট, এই বাড়ির উপর বয়ে চলা, মেঘ-রোদ-বৃষ্টি সব, সব আম্মার মর্জি মত চলে ... আব্বা আমেরিকায় থাকে । প্রতিবছর নিয়ম করে এক বার আসে...
আব্বা যত দূরেই থাকুক, দিলরুবার দৃঢ় ধারণা, আম্মা সব দেখতে পায়, সব জানে...মাঝে মাঝে আব্বার সাথে আম্মা যখন কথা বলে - ও অবাক হয়ে ভাবে আম্মা এই বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থেকে এতো কিছু জানে কেমন করে ...!
কেউ কোন কথা বলছে না আর । হয়ত আম্মার পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় বসে আছে সবাই... এখন আর গোল হয়ে বসে নেই । দিলরুবা আলো - অন্ধকারের আবছায়ার মাঝে দেখতে পায়, রহিমা খালা মেঝেতেই শুয়ে আছে...দিলরুবার কষ্ট হয় রহিমা খালার জন্য ।
বেচারীর কেউ নেই, ওদের বাড়িতে দিনরাত পরে থাকে... গ্রামের লোকেরা বলাবলি করে,
রহিমা খালা নাকি আম্মার ডান হাত... একথার অর্থ সে ঠিক ক বুঝে না, আবা��� কিছুটা যেনো বুঝেও...
দিলরুবাকে এই বুঝা না বুঝার দোলাচলে থাকতে হয় প্রায় সময় । কাউকে কিছু জিজ্ঞেস ও করা যায় না । জিজ্ঞেস করার মত কেউ নেইও । তার নিজের ধারণা, সে বেজায় বুদ্ধিমতী । বেশীরভাগ সময় চুপচাপ গোবেচারা ভাব নিয়ে থাকে বলে বাড়ির সবাই - এমনকি সব আত্মীয় স্বজন তাকে বোকা, সরল একটা বাচ্চা মনে করে । একমাত্র রুখশানা ছাড়া । কেমন করে যেন ছোটবোনটার ধারনা জন্মেছে তার বড়বোন'র এমন কিছু ক্ষমতা আছে যা অন্য কোন বাচ্চার নেই !
রুখশানার স্বভাব আবার ওর উল্টো। কথায় কথায় হাউকাউ করে বলে সবার ধারণা রুখশানা'র ওর থেকে অনেক বেশি বুদ্ধি । মনে মনে হাসে দিলরুবা...
আম্মার গলার শব্দ পেয়ে সে শরীর শক্ত করে খাটের সাথে মিশে থাকার কসরত করে । শব্দহীন থেকে সব শুনতে হবে এখন, এবার আর কান্নাকাটি করা চলবে না...
আরম্ভ করও অখন...
মাইঝি আমার মনে অর আফা অখন ও ঘুমাইছইন না...আরক্টুক বার (অপেক্ষা) ছাইতাম নি?
রাইত যে শেষ অই যার দেখ্রায় না নি? কামও লাগও ...
দিলরুবা রহিমা খালার আওয়াজ শুনতে পায় । বেচারী ঘুমিয়ে পরেছে ..... আম্মা গলায় অদ্ভুত বিরক্তি সূচক ধ্বনি করে ...
দেখ অবস্থা ! অখন অলা ঘুমাইবার সময় নি?
রওশন ও আম্মার সাথে এক মত হয়ে বলে,
আম্মা ধাক্কা দিয়া তুলি দেই বেটিরে? দেখউকা অবস্তা...
রওশন কে দিলরুবা মোটেই দেখতে পারে না । সারাক্ষণ মনে হয় তার মাথার ভিতরে শয়তানি বুদ্ধি গিজ গিজ করছে। ওদের বাড়ির পাশেই গুচ্ছ কিছু ঘর বানিয়ে ওরা থাকে...পাশাপাশি কয়েকটি পরিবার। সবাই ওদের রিফুজ্যি বলে ডাকে। ভারত থেকে নাকি ওরা এখানে এসেছে । রওশনের পরিবারে আছে ওর মা এবং বড় এক ভাই । শহরে রিক্সা চালায় । মা তেমন কাজ কর্ম করতে পারে না। তাদের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসে । মেয়ের অছিলায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকে রান্নাঘরের দাওয়ায়। দিলরুবার সন্দেহ হয়, মেয়ে লুকিয়ে তার মা’র শাড়ির আঁচলের তলায় রান্না ঘর থেকে এটা সেটা পাচার করে । আম্মাকেও মাঝে মাঝে বলতে শুনেছে এসব কথা। তবু আম্মা যে কেন ওকে রেখেছে...রহিমা খালাকে মনে হয় আম্মা তাড়িয়ে দিলে রওশন খুব খুশী হবে । হাস্না দেখেছে, কোন কিছু একটু এদিক সেদিক হলেই, সব সময় রহিমা খালার উপর দোষ চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে সে । আম্মাও তেমন একটা কিছু বলে না রওশন কে....কেন যে বলে না...আম্মার আরো কঠোর হওয়া উচিত ।
দিলরুবার মনে হয়, আম্মা অধিকাংশ সময়ই সঠিক কাজটি করে না...সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, আম্মার মত বড় হলে সে কখনই আম্মার মত হবে না...
সবাই কাজে লেগে গেছে আবার । টুং টাং ঘরর ঘরর শব্দ শুরু হতেই দিলরুবা মাথাটা সামান্য বালিশের উপর খাড়া করে দেখার লোভ সামলাতে পারে না ।
লোহার সিন্দুক টা প্রাণপণে ঠেলতে ঠেলতে বড় মত একটা গর্তের ভিতর ফেলে তিনজনে মিলে । তারপর সবাই মিলে গর্তের ভিতর মাটি ফেলে ভরাট করতে থাকে... মাটি ভরা শেষ হলে দ্রুত হাতে রওশন গর্তের মুখটা লেপতে থাকে । বিস্ময় বিস্ফারিত চোখে এসব দেখতে দেখতে দিলরুবার ছোট বুকটা দ্রুত গতিতে উঠানামা করে । এসবের মানে কি !? আর আগে এমন অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার সে কখনই দেখেনি... মনির মাটির লাল কলসি থেকে টিনের মগে পানি ঢেলে ঢক ঢক করে গিলতে থাকে । আমারে দে রে মনির...গলা হুকাইগেছে...আর পাররাম না রে বাপ...
রহিমা খালাকে পানি এগিয়ে এগিয়ে দিতে দিতে মনির রওশন কে দিবে কি না জিজ্ঞেস করে, রওশন ঝামটা দিয়ে বলে, তুমরা পানি খাও, অই কাম করিয়াই জান হুকাই গেছে তুমরার...
দিলরুবার মনে হয় এখন রওশন কে একটা তাপ্পড় মারতে পারলে ওর খুব সুখ হত...
আম্মা নিজের চেয়ারে বসে ছিল এতক্ষন ঝিম মেরে....এখন কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করার নির্দেশ দেয় । দিলরুবার মাথার পিছন দিক ব্যাথা করতে থাকে । সে আস্তে করে মাথাটা বালিশে লাগিয়ে মৃদু একটা নিঃশ্বাস ফেলে । এত সব কিভাবে কেমন করে সকাল হলে রুখশানা কে বলবে তার কথোপোকথন চালাতে থাকে তার নিজের সাথে । বলার আগ প্ররযন্ত মাথাটা হাল্কা হবে না কিছুতেই। এর আগের সত্যি মিথ্যা বানিয়ে বলা স্বপ্নের সাথে আজকের রাতের ঘটনার কোনই মিল নেই । এরকম ঘটনাও যে ঘটতে পারে সে আগে ধারণাও করতে পারে নি...!
সবাই মিলে এবার আম্মার পালঙ্ক আবার আগের জায়গায় নেবার কসরত করে । সিন্দুকের চেয়ে কম ভারী নয় সেটা, এত দিনের প্রিয় এই জিনিষটার প্রতি এখন, এই মুহুর্ত্যে ভারী বিরক্ত বোধ করে সে । আম্মা কাজে ব্যস্ত থাকলে সন্ধার পর এই পালঙে র রেলিঙে বসে তারা দু’বোন মিলে কত মজার মজার খেলা খেলে । একটা রেলিঙ ওর বাড়ি , অন্যটা রুকশানার । দু'জন দু’দিকে বসে দুলে দুলে কথা বলে.... যার যার বানানো সংসারের খোঁজখবর নেয় । মাঝে মাঝে একজন আরেকজনে বাড়ি যায়, মানে দুজন একই রেলিঙে বসে । আম্মার সাড়া শব্দ পেলেই দু'জন ধুপধাপ নিচে গড়িয়ে পরে যায় । গড়িয়ে পরেতে গিয়ে প্রায় সময়ই রুখশানা রেলিঙে আঘাত পায়... তখন বিরক্তির সীমা থাকে না দিলরুবার । ব্যাথা পেয়ে ভ্যা করে যখন ও কাঁদে, তখন আম্মা রেগে গিয়ে দুজনকেই আরও দু'ঘা বসিয়ে দিতে ছাড়ে না...
ছোটবোনটার জন্যই সব সময় তাকে খুব সাবধানে খেলতে হয়.... তারপরও সব সময় একটা না একটা অঘটন সে মাঝে মাঝেই ঘটায়... একবার তাড়াহুড়া করতে গিয়ে তাকে সুদ্ধু নিয়ে একেবারে নীচে মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল । রুকশনার উপড়ে পড়েছিল সে, কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে আম্মা সেদিন কাউকেই মারেনি ।
ব্যাথা পাওয়ার কথা ভুলে সেদিন বেশ ভাল লেগেছিল তার, বোনকে সরিয়ে দুজনে বই নিয়ে পড়তে বসেছিল। বই নিয়ে পড়তে বসার বুদ্ধি অবশ্য তার নিজের। সে খেয়াল করে দেখেছে, কোন অপরাধ করার পর সাথে সাথে বই নিয়ে পড়তে বসলে, আম্মার হাতে হেনস্তা হবার আশঙ্খা কম থাকে - তবে অপরাধের মাত্রার উপর তা অনেকটা নির্ভর করে...
সকালে নাস্তা খেতে বসে সবাইকে লক্ষ্য করে দিলরুবা । আম্মার ডাকাডাকি ছিল্লাচিল্লিতে অনেক কষ্টে ঘুম জড়ানো চোখে বিছানা ছাড়তে হয়েছে। নিজে ঘুমায় না, কাউকে ঘুমাতেও দেয় না, সকাল হলেই হাউকাউ ! হাস্নার মাঝে মাঝে মনে হয় ইস! একটা নরম সরম আম্মা হলে জীবনটা কতই না আনন্দের হতো ...
রুখশানা তখনো ঢুলু ঢুলু চোখে নাস্তার জন্য বানানো, ঢলঢলে খিচুড়ি মুখে পুড়ছে । আঙুলের ফাঁক গলে তার অনেকটাই পড়ছে আবার প্লেটে । দিলরুবা এই জিনিষ কিছুতেই খেতে পারে না। ওর দু’চোক্ষের বিষ এই অদ্ভুত অখাদ্য জিনিষটা । সবার মজা করে খেতে দেখলে তার বিবমিষা জাগে । বমি আস্তে চায়...ওকে তাই অন্য কিছু বানিয়ে দেওয়া হয় । অন্য কিছু বানিয়ে দেবার দায়িত্ব পরে রহিমা খালার উপর... কখনো রুটি বানিয়ে কখনোবা আগের রাতের বাসি ভাত পেয়াজ কুঁচি ডিম দিয়ে তেলের মধ্যে ভেজে দেয়, যা তার সব থেকে প্রিয় সকালের নাস্তা...
আজ তার জন্য আলাদা কিছু বানানো হয় নি । যেন সবাই ভুলেই গেছে তার কথা, সে যে এই অখাদ্য খাবার খেতে পারে না - সেটা যেন কারো মনেই নেই...
দিলরুবার ভীষণ মন খারাপ হয় । সবার আচার আচরনে, চলাফেরায় আজ সকাল্টা কেমন অন্য রকম লাগতে থাকে তার। কালকে রাতের ঘটনা এখন ও কিছুই বলা হয় নি রুখশানাকে ... বলার সময়ই পায় নি, সেরকম যেন আজ ইচ্ছাও করছে না ...
কোন মতে জাউ কয়েক বার গিলে, সে তড়িগড়ি শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকে। এখন সবাই রান্না ঘরে নাস্তা খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত - এক্ষুনই গিয়ে আম্মার পালঙের তলাটা পরীক্ষা করে দেখতে হবে...খাওয়া শেষ হতে না হতেই আম্মা বাজখাই গলায় বলে,
বই লইয়া পরতে বও...
বইরাম আম্মা...
বলেই তড়িঘড়ি করে ছুট দেয় সে ...
শোবার ঘরে ঢুকে হাস্নার মন্টাই খারাপ হয়ে যায়, আম্মার পালঙের নীচে একগাদা জিনিষ ! কোথা থেকে আসলো এতসব? খাতা লেপ রাখার একটা বড় তোরঙ, এবং আশে পাশে আরো নানা হাবিজাবি জিনিষ দিয়ে ভরা ...
আম্মার পায়ের শব্দে সে তাড়াতাড়ি ���রে গিয়ে বই হাতে নিয়ে নেয়.... আম্মার সাথে রওশন এবং মনির ঢুকে । রওশনের হাতে মাটি গোলা গামলা । তাকে বই হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মা প্রচন্ড একটা ধমক দেয়,
ইখানো কিতা করছ? পড়তে পড়তে উল্টাইলাইরা...কি আমার পউররা অইছইন...যা ইখান থাকি...
অদ্ভুত অসংগত অকারণ এই খামকা রাগের কারণ বুঝতে না পেরে দিলরুবা প্রথমটায় ধরতে পারে না আম্মা কি এসব বকাঝকা তাকেই করছে কি না...
দেখ�� আবার উবাই থাকছে...!
ই আফা একটুক সিধা আম্মা, কতা বুঝইন না, আমি বুঝাইয়া কইরাম...
আফা অখন যাও চাইন ইখান থাকি, বারর ঘর গিয়া খেলাও, আম্রারে একটা জরুরী কাম করতে দেও...
রওশনের পরের কথাগুলো ঠিকঠাক মত শুনার আগেই সে বাইরের বারান্দা পার হয়ে গেছে, বেরুবার আগে শুধু আম্মার মুখের দিকে তাকাতে গিয়ে দেখে, আম্মা কটমটে চোখে রওশন কে দেখছে...
আচমকা অকারণ পাওয়া দুঃখ রাগ অপমান তার ছোট মাথাটার ভিতর সূচ ফোঁটায়... উঠানে পা দিয়ে তার মনে হয় এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি পারে সরে যাওয়া দরকার। রাগে তার পা জোড়া ভারী ভারী লাগে.... এর আগে বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আম্মা তাকে এভাবে বকা তো দূরে থাক, কটু কথা প্ররযন্ত বলেনি । বই হাতে দেখলে আম্মার চেহারায় একটা আলগা আনন্দ ভাব ছড়িয়ে পরতে দেখেছে সে সব সময়... র ও শনের দিকে কটমট করে তাকানোর কারণে কিছুটা সান্তনা পায়...আম্মা যদি রওশন কে এখন দু ঘা লাগায় খুব খুব খুশী হবে সে ...
দুপুরে খেয়ে দেয়ে অন্যদিনের মত ঘুমুতে যাবে কিনা বুঝতে পারে না দিলরুবা । রুখশানা তাকে হাত ধরে টানে... সকালের ঘটনার পর থেকে শোবার ঘরে আর ঢুকে নি সে । আজ সারাদিন ধরে এখানে সেখানে ঘুরাঘুরি করেছে কেবল । কিছুই ভাল লাগছে না । হেনাকে অনেক বার বলতে গিয়েও কিছুই বলা হয় নি...
ঘরের ভিতর ঢুকবে কি ঢুকবে না করে করেও অবশেষে ঢুকে সটান নিজেদের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরে । ঘরের ভিতর এখন কেউ নেই, আম্মা ভাত খাচ্ছে । খাওয়া শেষে এসে দেখে যদি আবার রাগ করে, কিছুই বুঝা যাচ্ছে না, ঘুমের ভান করে পরে থাকাই বরং ভাল । কিছুক্ষণ বক বক করে রুখশানা ঘুমিয়ে পরার পর, সে নিজেকে আবিষ্কার করে আম্মার পালঙ্কের পাশে উবু হয়ে তলার দিকে তাকিয়ে আছে….
চোখ বড় বড় করে দেখে, চারকোণা আকারে বেশ বড় একটা জায়গা জুড়ে ফেটে চৌচির হয়ে আছে । জায়গাটা
আবার নতুন করে লেপা হয়েছে...আগে রাখা জিনিষগুলোর কিছুই আর নেই...
চলবে ।
0 notes