Text
খারাপও কিন্তু খারাপ নয়!
সন্ন্যাস��, সাধুসন্ত - এরা নমস্য, যদিও আমি ভীষণ সন্তর্পণে এঁদের পাশ কাটিয়ে বেড়াই।
তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, হঠাৎ একদিন, এক মুহূর্তের দেখায়, একজন নাগা-সন্ন্যাসী আমায় ইঙ্গিতে ও এক কথায় দেখিয়েছিলেন আমার উদ্দিষ্টের পথে এগুনোর উপায়।
তাঁর দেখানো সে পথটাই আমি আঁকড়ে চলেছি ও আজও চলছি। দেখি শেষে কোথায় গিয়ে পৌঁছাই!
আমার একান্ত আপন ও একান্ত নিজস্ব অভিজ্ঞতার অনুভূতি আমাকে বলে -
পাওয়া গড়ে প্রেমকে। (এটা এখন আমার মনে হয়।) মানে? এককথায়, "লাভ" (পড়ুন প্রাপ্তি) থেকে "লাভ" (পড়ুন, Love)।
তাঁর কথায় একটু হেঁটেই ফল পাওয়া, সে ফলের ফলে আরো পাবার লোভ বেড়ে চলে, আরো পাবার নেশা এসে জড়িয়ে ধরে আমাকে, সেই নেশাতেই তো আরো হাঁটা - আরো আরো পথ চলা!
তাই, সন্ন্যাসী, সাধুসন্ত মানেই খারাপ বা ভালো, এ কথা বলার রুচি আমার গেছে কেটে। তাছাড়া, খারাপকে খারাপ বলার যুক্তিটাও আমার গেছে হারিয়ে -
"কোন পথ যেখানেতে নেই সেখানেই মেলে এক খেই আরেক আশার সব পথ হারাবার পর বুঝি খোঁজ মেলে আপনার।" (হারিয়ে, প্রেমেন্দ্র মিত্র।)
খারাপ, দেওয়ালে পিঠ ঠেকলে, তবেই না গানের কলি হয় - "বেলা-শেষের ছায়ায় পাখিরা যায় আপন কুলায়-মাঝে!"
"দিনে মোর যা প্রয়োজন বেড়াই তারি খোঁজ করে"-তে ক্লান্ত হলে, আপন কুলায়-মাঝে যে স্বস্তি ও শান্তি, সে ফল পাবার ফলে, সে ফল আরো আরো পাবার লোভ তখন তার বেড়ে যায়, সুন্দরের পথে পথচলা তার এমনিভাবেই শুরু হয়!
খারাপ যদি সুন্দরের প্রস্তুতিই হয়, তাকে খারাপ বলে অভিহিত করাটা সত্যিই কি আর যায়?
মানে?
শেষে, খারাপও কিন্তু খারাপ নয়!
0 notes
Text
কে আমায় নিত্য পোড়ায়?
আপনি যা, আমিও তা। দুজনের প্রেমিকা বা প্রেমিক, নাম আপনি তার দেন যাই, আপনার-আমার বা সবার প্রেমের সে জন কেবল একজনাই।
সে জন হ'ল জীবন।
নিজের জীবনটাই আপন আপন প্রথমপ্রেম ও সবচেয়ে বড় প্রায়ওরিটি।
প্রিয়তমা বা প্রিয়তম সে তাই।
তবু কারো প্রেম নিকষিত হেম, আর কারো কারো ক্ষেত্রে সেটা জ্বলেপুড়ে খাক হওয়া ছাই।
প্রেম, নিকষিত হেম, হ'ল হওয়ার সাধনা, কলুষিত নয়, নয় অপবিত্র আকুলতাভরা পাওয়ার ছটফটানিতে ভরা চেষ্টায়।
আর হওয়ার সাধনা হ'ল প্রেমে ডুবে প্রেমের জনকে দেখতে দেখতে, তাকেই ভাবতে ভাবতে, ধ্যানে-মননে, নিজে নিজের ভিতরে ভেঙে ভেঙে যেতে যেতে, তারই মতো হয়ে ওঠা। জীবন যেমন, তাকে তেমনটাই অবলোকন ও মনন করতে করতে তাতে নিজের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্য যত, তা সব ডুবিয়ে মেরে, জীবনসত্যকে নিজের ভাবনা ও চলনায় আপনাতে আপনাতে, প্রেমে, একদিন প্রিয়তমা ও আমি, এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকার একাকার হয়ে ওঠা।
একদিন ইউটিউবে ভীমসেন যোশীজীকে গাইতে দেখছিলাম, তাকে দেখতে দেখতে কেমন আত্মহারা হয়ে কি এক মন ভালো করা ভাবনায় ডুবে গেছিলাম। লিখেছিলাম -
"আমার মনে হয়, তিন ধরণের মানব ও মানবী গান গায় -
=> গায়ক বা গায়িকা - শ্রোতাকে যে বলতে চায় - আমি গাইছি তুমি শোনো আমাকে।
=> নায়ক বা নায়িকা - যে শ্রোতাকে বলে - আমি গাইছি তুমি দেখো আমাকে।
=> সাধক বা সাধিকা - শ্রোতার প্রতি অনুরোধ যার - আমি গাইছি তুমি তাতে দেখো স্বরের ও সুরের একে-অপরের প্রেমে জ্যোৎস্নারাতের বনে ঝুলনখেলার মিলনমেলাখানা।
তোমাকে শোনায় বা তোমাকে দেখায় আকর্ষণ আমার নাই।
কৃষ্ণ-রাধার সে মিলনমেলার দরশণে দরশণে ��িজেকে ডুবিয়ে আমি অসীমকে ছুঁতে চাই।
তোমার দরজায় দস্তক তো আমি দিতে চাই, যদি হও তুমি কোনও এক তানসেন বা কোনও এক মীরাবাঈ।"
আমার আপন জীবনই আমার প্রিয়তমা, অনুভবে অনুভবে তা আমি বারবার পাই - জীবনই তো সেই মীরাবাঈ, আমিও যার মতো হয়ে উঠতে চাই।
আমি জীবনকে চাই, আর জীবন?
চিরন্তন সত্যের সুরে, নিজেকে স্বর করে, স্বরে-সুরে, মিলনমেলার ঝুলনখেলায় সে মেতে উঠতে চায়। আমি তাকে ভালোবাসলাম না বাসলাম না, তাকে আমি ভালোবাসতে পারলাম, না কি পারলাম না, না থেকে তার অপেক্ষায়।
আমি একদিকে আমার আপন ইচ্ছে-অনিচ্ছে, আমার এই ক্ষুদ্র আমির চাওয়া-পাওয়ার রঙে জীবনকে আমার রাঙাতে চাই, তাকে আমার রঙে রাঙিয়ে আমার স্তরে নামিয়ে, আমার একার করে আমার বুকের আলিঙ্গনে বেঁধে, তাকে আমার একার অধিকারে ধরে রাখতে চাই!
তাকে আমি নাচাতে চাই, ওঠাতে চাই, বসাতে চাই, খেলাতে চাই - আমার ইচ্ছে-অনিচ্ছে আর চাওয়া-পাওয়ার মিহি সুতোয় তাকে বেঁধে। মেরিমর্জির পুতুলখেলায়।
আবার এই আমিই, আমার সীমাবদ্ধতায় যখন কাঁদি, ছটফটাই, তখন এই মীরাবাঈয়ের সঙ্গ-আনন্দে নিজেই মীরাবাঈ হয়ে উঠে, সে যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হয়ে যেতে চাই।
... এই দোদ্যুলদোলায়, সারা সারাটা জীবন আমার কেটে যায়!
এইটাই সেই আমি যে ভালো তো বাসতে চাই, কিন্তু, আমার অজ্ঞ-অহংয়ের ফাঁদে, বাঁধতে চেয়ে আমার প্রেমকে একান্ত আমার অধিকারে একান্ত আমারই করে তাকে ধুলোয়-কাদায় নামিয়ে এনে, আপন ভালোবাসার জনের ভালোবাসা আমি আমার মুদ্রাদোষেই হারাই।
নিজে পুড়ি, আর সকলকেও পোড়াই। আর ভাবি - কে আমায় নিত্য পোড়ায়?
© Siva Prasad Mukherjee.
1 note
·
View note