Don't wanna be here? Send us removal request.
Text
"𝙼𝚊𝚢𝚋𝚎 𝚝𝚑𝚒𝚜 𝚠𝚘𝚛𝚕𝚍 𝚒𝚜 𝚊𝚗𝚘𝚝𝚑𝚎𝚛 𝚙𝚕𝚊𝚗𝚎𝚝'𝚜 𝚑𝚎𝚕𝚕."
~ 𝙰𝚕𝚍𝚘𝚞𝚜 𝙷𝚞𝚡𝚕𝚎𝚢
মায়াং। চারপাশে রাইবন দিয়ে ঘেরা অনিন্দ্য সুন্দর এক জায়গা। অসীম এক বিস্তৃত অবনি জুড়ে জায়গাটা ঠিক কোথায় স্বয়ং মায়াংবাসীরাও জানে না। পুরোটাই জল, অদৃশ্য জলে টইটুম্বুর নীলচে এক জগৎ। পায়ের তলায় কোমল ঘাসের ডগা, বৃক্ষের সবুজ নরম পাতা, মাথার উপরে ঈষৎ নীলচে টলটলে জলময় ��সমান। সবকিছু ভীষণ মায়ামাখা।
নদীশ্বরী এই জগতের স্রষ্টা। অনেক যত্ন করে তিনি তৈরী করেছেন এই জগত ও জগতের প্রত্যেক প্রাণীকে। প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে ছিল নদীশ্বরীর নিখুঁত পরিকল্পনা। সবশেষে নদীশ্বরী সৃষ্টি করেছিলেন ভীষণ সংবেদনশীল এক কোমল প্রাণী, মৃগ। মায়াং এর শুদ্ধতম প্রাণী এই মৃগ। যে প্রাণীকে নদীশ্বরী দিয়েছিলেন সর্বাধিক স্বাধীনতা। আর নদীশ্বরীর অনেক আদুরে এই সৃষ্টিকে হত্যা করেই অভিশপ্ত হয় এক কিশোরী। শাস্তিস্বরূপ করতে হয় নরক যাত্রা। প্রাণ নেওয়া এবং দেওয়ার মধ্যকার পার্থক্য বুঝতে পারার পরেই খণ্ডন হবে যে শাপ। প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ।
জলবিহঙ্গম বিউসেরাসের পিঠে চড়ে পরিবার, প্রিয় ডোডো পাখি, পরিচিত জগত, নিজের শৈশবকে পেছনে ফেলে পারি জমাতে হয় নরকে। যেখানের রৌদ্রতেজে শরীর গলে যায়। প্রকৃতপক্ষেই নরক। এতোকিছুর পরেও নরকের গিয়ে কিশোরী জড়িয়ে পরে সৃষ্টিজগতের সবথেকে শুদ্ধতম বন্ধনে। আচ্ছা এইসব কিছুই কী পূর্ব নির্ধারিত ছিল?
গল্পটা এই শুদ্ধতম অনুভূতির, মিলনের, যা পাওয়ার জন্য আলো অন্ধকার দু'দিকের পথই মাড়িয়ে আসতে হয়। যে মিলনের প্রতিটা গল্পের কোণায় রচনা হয় একটি করে বিসর্জনের গল্প। গল্পটা একজন মৃগয়ার, স্রষ্টাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে যাকে গ্রহণ করতে হয় নির্বাসিত জীবন। এবং সবশেষে গল্পটা সৃষ্টি ও স্রষ্টার।
মৃগয়া তে দুইটা ওয়ার্ল্ড রয়েছে। একটা হচ্ছে প্রাইমারি ওয়ার্ল্ড আরেকটা সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ড। সংক্ষেপে প্রাইমারি ওয়ার্ল্ড হলো আমাদের পরিচিত এই চেনাজানা জগত আর সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ড হলো লেখক যে জগতটা নিজস্ব কল্পনাশক্তির মাধ্যমে ভিন্নভাবে তৈরী করেছেন। মায়াং হলো এই বইয়ের সেকেন্ডারি ওয়ার্ল্ড।
মায়াং এর কোনো মানচিত্র বইয়ে না থাকলেও লেখক সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয়গুলো এতো বিস্তারিতভাবে লিখেছেন যে খুব সহজেই মায়াং এর ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। মায়াং এর সবথেকে ক্ষমতাধর স্থান ইথেমপেলি; যেখানে প্রকট হন নদীশ্বরী। এছাড়াও পুরো মায়াং এ জল সরবরাহ ব্যবস্থারও রয়েছে নিজস্ব ভিন্ন এক পদ্ধতি। মায়াং এ সময় খুবই ধীরে প্রবাহিত হয় কালডোরার প্রভাবে; বৃক্ষরা ঘুমালেই অতিক্রান্ত হয় দিন, যার কারণে মায়াং এর প্রকৃত সময় কারো জানা নেই। পুরো বই জুড়েই ছিল এসব ডিটেইলিং। ভিন্ন জগত হওয়ার পাশাপাশি এই জগতের রয়েছে ভিন্ন ধরনের বাসিন্দা। মায়াল, থোমন, কালখাটুস, ঔশ্যাল, খৌম, রেভান যার মধ্যে ��ল্লেখযোগ্য। এরকম খুঁটিনাটি বর্ণনা দিয়ে লেখক চমৎকার ভাবে ওয়ার্ল্ড বিল্ডিং করেছেন এবং এই ভিন্ন ওয়ার্ল্ডের সম্পূর্ণ ম্যাকানিজমটা পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। ফলে ভিজুয়ালাইজ করতে বেগ পেতে হয়নি।
অন্যদিকে প্রাইমারি ওয়ার্ল্ডে নতুন বিবাহিত দম্পতি আজিজ ও সায়রা৷ এই ওয়ার্ল্ডের কাহিনিও মায়াং এর কাহিনির পাশাপাশি সমান্তরালভাবে এগিয়েছে। এই ওয়ার্ল্ডের বেশ কিছু বিষয় শুরুদিকে বেশ ঘোলাটে ও অতিপ্রাকৃত লাগলেও সময়ের সাথে সাথে তা খোলাসা হয়েছে। আজিজ ও সায়রার পাশাপাশি আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো মনসুর। এই চরিত্রের কর্মকাণ্ড, সেক্সুয়াল ডিজায়ার অনেকের কাছে সস্তা, থার্ড ক্লাস লাগতে পারে তবে এখানে বুঝতে হবে মনসুরের মাইন্ডসেট। তার মাইন্ডসেট অনুযায়ী, তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এসবই ঠিক আছে। এছাড়া বইয়ে একটা বিশেষ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুবই স্বল্প পরিসরে পুলিশ ইনভেস্টিগেশনের বর্ণনা দেওয়া আছে, এই অংশটা অনেকের কাছে অপ্রয়োজনীয় লাগতে পারে কিন্তু এই অংশেরও প্রয়োজন ছিল, তা পাঠক একটু সচেতনভাবে পড়লেই ধরতে পারবে বলে আশা করা যায়।
পুরো বইয়েই এতো সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম ডিটেইলিং রয়েছে যে তাড়াহুড়ো করে পড়লে অনেক কিছুই মিস হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। শেষে গিয়ে অনেকে কিছু জিনিস রিলেট নাও করতে পারেন। কেননা ধড়মড়িয়ে পড়ে যাওয়ার মতো বই এটা না। এই বইটা পড়ার সময় একটু মনোযোগী হতেই হবে। বইয়ে কিছু জিনিস লেখক সরাসরি বলে দেননি; বলে না দিলেও সচেতন পাঠক মাত্রই সেই বিষয়গুলো বুঝতে পারবেন।
ফ্যান্টাসি বই হলেও গতানুগতিক ধাঁচের থেকে ভিন্ন এর প্লট। সবমিলিয়ে উপভোগ্য একটা সময় কেটেছে মৃগয়ার সাথে। ফ্যান্টসির ভক্ত না হলেও সকল ধরনের পাঠকদেরই হয়তো ভালো লাগবে এই সৃষ্টি ও স্রষ্টার গল্প।
লেখক সাখাওয়াত হোসেন দীর্ঘদিন যাবত অনলাইনে লেখালেখি করলেও তার কোনো লেখাই আমার আগে পড়া হয়নি। ফলে লেখকের লেখনী সম্পর্কে কোনোরকম ধারণা ছিল না। কিন্তু বইটা পড়তে গিয়ে মুগ্ধ হলাম লেখকের গদ্যশৈলীতে। বাংলা শব্দের খেলার ছড়াছড়ি ছিল বইয়ে। যথাযথ শব্দচয়ন, বাক্যগঠনের মাধ্যমে লেখক পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন নীলচে আলোময় ���ায়াবী এক জগতকে।
বইয়ে বানান ভুল ছিল না তেমন। থাকলে দুই একটা টাইপো থাকতে পারে, আমার চোখে পড়েনি। দুই যায়গায় নাম বিভ্রাট রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে লেখক অবগত, পরবর্তী মুদ্রণে ঠিক করা হবে ভুলগুলো। বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়ে বলতে গেলে, প্রচ্ছদটাও আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে; প্রচ্ছদে যেন প্রতিফল��ত হচ্ছে এক টুকরো মায়াং। বইয়ের প্রোডাকশন ও বেশ ভালো। পাঠক হিসেবে বইয়ের দামটা অনেক বেশিই মনে হয়েছে। তবে প্রতিটা প্রকাশনীরই নিজস্ব পলিসি রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আর কিছু বলার নেই।
মৌলিক ফ্যান্টাসি নিয়ে আমাদের দেশে আগে খুব বেশি কাজ না হলেও বিগত বছরগুলো থেকেই মোটামুটি ফ্যান্টাসির পালে হাওয়া লেগেছে। আর এই মৌলিক ফ্যান্টাসিতে আরেকটা দারুণ সংযোজন হলো "মৃগয়া।" এই বইটা আসলে আরো পাঠক, আরো আলোচনার দাবিদার।
রিভিউয়ার - কাজী হাসান জামিল
বইয়ের নাম: মৃগয়া
লেখক: সাখাওয়াত হোসেন
জনরা: ফ্যান্টাসি নভেল
প্রকাশনী: পেন্ডুলাম প্রকাশনী
প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২৩
প্রচ্ছদশিল্পী: পেন্ডুলাম টিম
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩০৪ পৃষ্ঠা
মুদ্রিত মূল্য: ৫৯০ টাকা
#bibliophile#book photography#book blog#book review#bookish#books#books & libraries#bookworm#fantasy#novel#bangladesh#bangla book#bangla fantasy#literature#bangla literature#literary fiction#literary masterpiece
2 notes
·
View notes