#porijayi

[saaiwritez]

Porijayi - Episode 3

"হাই হ্যান্ডসাম!"

ফেসবুকে পিং হতেই রৌনক মোবাইল এ চোঁখ বুলিয়ে দেখে নিল পূরবীর পাঠানো ম্যাসেজটা। মুখের কোণে একটা আলতো হাসি খেলে গেল রৌনকের। 

"বলুন ম্যাডাম, কি সাহায্য করতে পারি।"

" বাব্বা, মশাই যে দেখছি খুব ভালো মুডে আছে। শোননা, বিনীতকে তোর মনে আছে?"

" টপার বিনীত! সরি টপার তো তুই ছিলি।"

"আবার শুরু করলি? শোননা, বিনীত কাল আমাকে ইন্ভাইট করেছে। ও ওর নতুন নভেলের সাক্সেস পার্টি রেখেছে। "

" ভালো তো, যা। বাড্ডি লোগো কি বাড্ডি ব্যাতেন!"

"ঊফ্ফ ! তুই থামবি। কল কর। সবটা গুছিয়ে বলছি।"

রৌনক পূরবীকে কিছুক্ষণ এর মধ্যে ফোন করল।

" আ্যাই রন, তোকেও তো নিয়ে আসতে বলেছে। আমরা এক সাথে যাবো।���"

" আমাকে? আমাকে হঠাৎ! "

" আমি আমাদের কথা বলেছি। ও বলেছে তোকে যেন অবশ্যই নিয়ে যাই।"

" দারুণ ব্যাপার। আমাকে কি তোর ফ্যেগলু মনে হয়? তুই বলবি আর আমি লেজ দোলাতে দোলাতে চলে যাব, আর আমাদের ব্যাপারটা রাষ্ট্র না করলেই নয়?"

" মানে, তোর অসুবিধাটা কোথায়!"

" শোন পূরবী, ইট্স ইন এ ভেরি আরলি স্টেজ। কিছুদিন যাক, যদি সব ঠিক থাকে দেন জানাবো।"

" তোর মনে এত ডাউট কেন অ্যাবাউট আওয়ার রিলেশনশিপ ?" 

" আছে, আমি দশ বছরের সম্পর্ককেও ভেঙে যেতে দেখেছি। তাই।"

" সো ইউ আর নট কামিং, রাইট।"

" ইউ গো অ্যান্ড এনজয়!"

" আমাকে নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না রন। বাই!"

ফোনটা কেটে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো পূরবী। এই ছেলেটা যে স্কুল জীবনে পূরবীকে পাগলের মতো অনুসরণ করতো, রাস্তা ঘাটে, টিউশন যাওয়ার পথে সব জায়গায়, সে আজ কেমন যেন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিসের এত নিরাপত্তাহীনতা? রৌনক এখনও কি পূরবীকে আগের মতোই ভালোবাসে। আদৌ বাসতো, নাকি সবটাই মোহ! এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোঁখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লেগেছে খেয়াল করেনি পূরবী। পূরবী ঠিক করলো বিনীতকে জানিয়ে দেবে ও পার্টিতে যেতে পারবে না, কারণ হিসেবে বলবে শরীরটা ওর বিশেষ ভালো না। মানুষ প্রেমে পড়লে কেমন যেন স্বার্থপর হয়ে যায়। এই বন্ধুটার পাশে সুখে দুঃখে সবসময় থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আজ কেমন মিথ্যে অজুহাতে তার এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ দিনে গরহাজির থাকছে পূরবী শুধুমাত্র ভালোবাসার মানুষটির উপর অভিমান করে। যাই হোক বিনীতকে জানিয়ে দিতে হবে, তার জন্যই উদ্যত হলো পূরবী।

************

ইরিনাকে ফোন করে পূরবীকে নিয়ে সমস্ত অভিযোগ গড়গড় করে বলতে লাগল রৌনক। ইরিনা পুরোটা শুনে পূরবীর কোনো দোষ খুঁজে পেলো না। 

" শোনো রৌনক, তোমার গার্লফ্রেন্ডের এখানে কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। ও কী ভুল করেছে সেটাই তো বুঝলাম না। এই মেল ডমইনন্স ব্যাপারটা আমার কাছে দু চক্ষের বিষ। "

" তুমি ও ওর সাইড নিলে। বাহঃ বেশ ভালো। তোমাকে নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষ ভাবতাম। আজ তোমার ও আমায় খারাপ লাগছে!"

" মাথাটা কি তোমার খারাপ হলো নাকি রৌনক। দেখো, পূরবী তোমাকে ভালোবাসে। ওর ইমোশনটা বোঝার চেষ্টা কর। ও নিজের কাছের বন্ধুদের তোমার কথাটা বলতে চায়, সেয়ার করতে চায়। কেন জানো? তুমি ওর জীবনের সা��ে এমন ভাবে জড়িয়ে পড়েছো যে ও ওর প্রত্যেকটা মুহূর্তে তোমার সাথে থাকতে চায়, তোমায় নিয়ে ভাবতে চায়। ওর সার্কেলে তোমাকে যুক্ত করতে চায়। বুঝতে পারছো ওর লাইফে তোমার প্রায়োরিটি ? এবার চুপচাপ গিয়ে পূরবীকে ফোন করো। শোনো না, আমার একটা ফোন আসছে, আমি রাখলাম।"

ফোনটা কেটে দিয়ে ইরিনা দেখলো, মোহনা কল করছে। 

ফোনটা রিসিভ করতেই ওই দিক থেকে মোহনার উচ্ছ্বসিত কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো:

" ইরু বেবি, আই অ্যাম সো হ্যাপি!" 

"তুই কই?"

" কলকাতা"

"কবে এলি? জানাসনি কেন?"

" ডার্লিং, শোন শোন। আমি আজই ফিরেছি। একটা ইনভিটেশন আছে। তুই কাল ফ্রি তো। "

" হ্যা, ব্যাপারটা খুলে বলবি!"

" একটা ইনভিটেশন আছে ফ্রম আ ভেরি স্পেশাল পার্সন। আমাকে আর তোকে দুজনকেই যেতে বলেছে। আমি ওকে স্ট্রেট জানিয়ে দিয়েছি আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে ছাড়া কোথাও যাই না।"

" মানুষটির নাম পরিচয় কিছু আছে, নাকি ভিনগ্রহী?"

"সারপ্রাইজ ডার্লিং, সারপ্রাইজ। আমি রাখলাম, তুই কাল রেডি হয়ে থাকবি। কী পড়বো তাই নিয়ে রাতে ফোন করবো।"

" আচ্ছা, রাতে কথা হবে।"

*******

মধ্যরাত। পূরবীর ফোনটা হঠাৎ করে বেজে উঠলো। অপর প্রান্তে রৌনক। 

"জেগে আছিস?"

"হ্যা, রৌনক। কিছু বলবি?" (রেগে গেলে পূরবী রৌনককে রন থেকে রৌনক বলে ডেকে থাকে! সারাদিন কান্নাকাটির জন্য গলা বসে গেছে পূরবীর।)

"রেগে আছিস?"

"একদমই না। বাই দ্যা ওয়ে, আমি বিনীতকে জানিয়ে দিয়েছি, কাল যাচ্ছিনা।"

"সরি! শোননা, কাল লাল গাউনটা পড়িস। আমি ব্লু ব্লেজারটা পড়র।"

"বললাম তো যাব না!"

"প্লিজ সরি বললাম তো। "

"হঠাৎ এত করুণার কারণ?"

"করুণা না, ভুল করেছি। আমার সুন্দর মিষ্টি প্রেমিকাকে কাঁদিয়ে আমি কি ভালো থাকতে পারি? "

" তুই না যাচ্ছে তাই! আর শোন তুই মারুন কালারের ব্লেজারটা পড়িস!"

" একটা কথা ছিল!"

" আবার কি?"

" কাল রাতে ফেরার পথে তোর ফ্ল্যাটে থেকে গেলে তোর কি অসুবিধা আছে?"

"অনেক রাত হয়েছে, ঘুমো রন। কাল কথা হবে।লাভ ইউ!"

"লাভ ইউ টু।'

রৌনক ফোনটা রেখে দিল। মুখে মিষ্টি হাসি ফুটেছে। উল্টোদিকে, পূরবী রৌনকের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা খুলে ওর ছবিগুলো দেখতে দেখতে কখন ঘুমিয়ে পড়ল, নিজেই বুঝলো না। 

*****

[sentoornetwork]

এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর ডাকে পালিত হল পরিযায়ী শ্রমিক বাঁচাও দিবস

New Post has been published on https://sentoornetwork.com/suci-party-protest-against-labour-problem-during-the-lockdown-period/

এসইউসিআই (কমিউনিস্ট)-এর ডাকে পালিত হল পরিযায়ী শ্রমিক বাঁচাও দিবস

  নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিযায়ী শ্রমিকেরা হেঁটে হেঁটে তাঁদের বা��়ির পথে চলেছেন। লকডাউনের জেরে আটকে-পড়া শ্রমিকেরা কখনও চারশো কখনও চোদ্দোশো মাইল হাঁটার লক্ষ্য নিয়ে দেশের বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। পথে কারওর চপ্পল ছিঁড়েছে, কারওর পায়ে ফোসকা পড়েছে, কারওর পা হয়েছে রক্তাক্ত। তবুও লক্ষ্যে স্থির বাড়ি তাঁদের পৌঁছতেই হবে। অনেকেই বাড়ি পৌঁছনোর আগেই মৃত্যুর কোলে ঢ্লে পড়েছেন। দেশে ফেরর আগেই চলে গেলেন না-ফেরার দেশে। সংবাদমাধ্যমে এসব দেখে, শুনে, পড়ে সারা দেশের সচেতন মানুষ আজ ভারাক্রান্ত। সমস্যাজর্জরিত পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বহু মানুষ মানবিকতার খাতিরে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন। তাঁদের জন্য জল ও খাদ্যের ব্যবস্থা করছেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতায় শামিল হয়েছেন। এই চতুর্থ দফার লকডাউন পরিস্থিতিতেই,এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে আজ উনিশে মে পরিযায়ী শ্রমিক বাঁচাও দিবস পালনের আহ্বান রাখা হয়।

এই এই আহবানে সাড়া দিয়ে সারা দেশজুড়ে আজ বিডিও অফিসে, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে ডেপুটেশন জমা দেওয়া হয়। সামাজিক এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দলের কর্মীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।কর্মসূচির অংশ হিসেবে হাজরা মোড়ে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য তাঁদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণ ও পরবর্তী কর্মসূচি সম্বন্ধে মানুষের কাছে বলেন।

জয়নগরে মিছিলে নেতৃত্ব দেন এস ইউ সি(কমিউনিস্ট) দলের প্রাক্তন বিধায়ক অধ্যাপক তরুণ নস্কর।

আরও পড়ুন:    বাংলা সাহিত্যের রত্ন

[saaiwritez]

Porijayi - Episode 2

সিগারেটটা ঠোঁটের ডগায় লাগিয়ে পকেট থেকে লাইটারটা বের করতেই যাবে, ঠিক তখনই কেউ জ্বলন্ত লাইটারটা মুখের সামনে এগিয়ে দিতেই সিগারেটটা মুখ থেকে নামিয়ে অবাক ভাবে চেয়ে রইলো রৌনক। পূরবীকে এতদিন পর দেখে যেমন খুশি হয়েছে রৌনক, তেমনই তার এমন অদ্ভুত আচরণে একটু হকচকিয়ে গেল।

"বাবাঃ ! তুই কবে থেকে লাইটার ক্যারি করিস?"

" পুনেতে যবে থেকে সিফ্ট হলাম তবে থেকে। কেন, মেয়েরা ক্যারি করতে পারে না বুঝি?"

" পারবেনা কেন? বাট সবার কাছ থেকে তো সব কিছু এক্সপেক্টেড নয়। খাশ করে তোর থেকে তো নয়ই।"

"কেন, আমি এলিয়েন নাকি?"

"তা বলতে, স্কুল লাইফে একদিন ও ভালো করে কথা বলেছিস। সারাক্ষণ পড়াশোনা করতে ব্যস্ত!আর আমার মতো বখাটে ছেলেদের তো তোর কাছে দু চক্ষের বিষ।পারলে ফু�� মেরে উড়িয়ে দিবি এমন অ্যাটিটিউড ছিল!"

" বুঝলাম। সিগারেটটা ধরা। আমিও কাউন্টার মারবো।"

" এখানে দাঁড়িয়ে আমার সাথে সিগারেট খাবি।"

" ইয়েস বাবু খাবো, ধরাবি তুই।"

অগত্যা রৌনক সিগারেটটা ধরাতেই, ওর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পূরবী সুখটান দিতে লাগল।রৌনক অবাক হয়ে দেখলো, পূরবী কতটা পাল্টে গেছে। স্কুল লাইফে এত রিসার্ভ থাকা মেয়েটা আজ কি ভীষণ ডাকাবুকো। স্কুলে রৌনকের বিশেষ সখ্যতা ছিল না পূরবীর সাথে, যদিও রৌনক মনে মনে পূরবীকে ভালোবাসতো, সাহস করে বলতে কোনদিনই পারেনি। স্কুল শেষ করে রৌনক স্কটিশ চার্চ কলেজে ইংলিশ অনার্স এ ভর্তি হয়, আর পূরবী ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরি করতে পুণেতে পারি দেয়। রৌনক ও এতদিনে একটা নামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ইংলিশ টিচার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। স্কুলের পর দুজনেরই কোন যোগাযোগ ছিল না। আগের বছর লিংকড-ইনে পূরবীর প্রোফাইল ভেসে ওঠে রৌনকের স্ক্রীনে। প্রোফাইল চেক করলেও কনেক্ট করার সাহস পায়নি রৌনক। পরের দিন পূরবী রিসেন্ট ভিউয়ার লিস্টে রৌনকের প্রোফাইল দেখে নিজেই কনেক্ট রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল । রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করতেই ম্যাসেজ আসে- কিরে আমার ছবি দেখে চিনতে পারিসনি?

চিনতে পারবে না আবার। যাকে ঘিরে শৈশবের এত স্মৃতি, যার কল্পনায় দিনের অনেকটা সময় কেটে যেত তাকে চিনবে না রৌনক। আসলে বয়স বাড়লেও সাহসটা বাড়েনি। ভয়, প্রত্যাখানের ভয়। তাই কানেক্ট হওয়ার পরও যখন পূরবীর মোবাইল নম্বর পেয়েছিল রৌনক, নিজের থেকে কল করে উঠতে পারেনি। তবে বুক ভরা ভয় নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ এ পিং করেছিল পূরবীকে।পূরবী নম্বরটা পেয়েই সটাং কল করে বসে রৌনককে। দেড় ঘন্টার উপর কথা চলে। তারপর থেকে রোজই একই ভাবে দুজনে ঘন্টার পর ঘন্টা বকে চলে। বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্বের জায়গায় থাকে না, পূরবী বুঝে গেছিল, এই ভিতুটার দ্বারা কিছু হবে না। নিজেই মনের কথা জানিয়েছিল। পূরবী রৌনকের জন্যই তড়িঘড়ি ছুটি নিয়ে ছুটে আসে কলকাতায়। ওর সান্নিধ্যে, ওর সাথে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে যাবে, আর ব্যাগ ভর্তি প্রেমের মুহূর্ত স্মৃতিতে বোঝাই করে নিয়ে যাবে কর্মস্থলে। ওই স্মৃতি সম্বল করেই বাকি বছরটা কাটিয়ে দেবে।

কলকাতায় পূরবী এলো আর বিনীতকে এখনই যেতে হলো হলদিয়ায়। কতদিন ওর সাথেও বসে আড্ডা মারা হয়নি। স্কুলে পড়তে পূরবীর গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বভাবের জন্য খুব বেশি বন্ধু ছিল না। বইএর মধ্যে ডুবে থাকতো সারাক্ষণ । মেধাবী ছাত্রী আর ভালো রেজাল্ট এর দরুন কিছু সুবিধা ভোগী বন্ধু ছিল বটে, কিন্তু তারা কি আদৌ বন্ধু? ব্যতিক্রমী ছিল বিনীত। ও নির্দ্বিধায় বন্ধুত্ব করতে হাত বাড়িয়ে দিলো। তার পর থেকে বিনীত পূরবীর জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিনীত‌ পূরবীর সব ডার্ক সিক্রেট জানে, পূরবীও বিনীতের। শুধু পূরবীর বলা হয়ে ওঠেনি রৌনকের কথা।

রৌনক মাটির ভাড়ে করে দু কাপ চা নিয়ে এলো, সাথে দু প্লেট পেটাই পরোটা। পূরবী পরোটাতে কামড় দিয়ে বললো, -"এরপর আমরা কোথায় যাচ্ছি।"

"তুই বল!"

" ইকো পার্ক যাবি। "

" সে তো অনেক দূরে। ক্যাবে অনেক টাকা পড়ে যাবে।"

" শোন, টাকার চিন্তাকে গুলি মার। হয়েন আই অ্যাম হেয়ার, নাথিং টু ফিয়ার। তুই ক্যাব বুক কর তো, হাড়ে কঞ্জুস।"

" তোর ফোনেও তো অ্যাপটা আছে তুই ই বুক কর, আর টাকাটা বড় কথা না, আসে পাশে অনেক জায়গা থাকতে ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুর যাওয়াটা বিলাসিতা।"

"আরে বাবু, কি হলো তোর। রাখ তো টাকা কড়ির কথা। আমি তোর সাথে এখন অনেকটা সময় কাটাতে চাই। ", কথা বলতে বলতেই ক্যাব বুক করে ফেলেছে পূরবী, " গাড়ি আসতে সাত মিনিট দেখাচ্ছে। চল রাস্তাটা পার হয়ে দাঁড়াই।"

পাক্কা সাত মিনিটের মাথায় গাড়িটা এসে দাঁড়ালো ওদের কাছে, রৌনক আর পূরবী গাড়িতে উঠে পড়তেই গাড়িটা ছুটে চললো গন্তব্যের দিকে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে হাল্কা করে গান ভেসে আসছে, - ' আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো', পূরবীর মুখে হাল্কা হাসি ফুটে উঠল। রৌনকের কাঁধে মাথা রেখে চোঁখ বন্ধ করে ওর শরীরের মিষ্টি গন্ধ উপভোগ করতে লাগল। 

[saaiwritez]

Porijayi - Episode 1

জানলা দিয়ে একটার পর একটা দৃশ্য উধাও হতে লাগলো , আর ট্রেনটা তাল মিলিয়ে সমান দ্রুততার সাথে এগোতে লাগলো গন্তব্যে। আজ কিছুই যেন ভালো লাগছিল না বিনীতের। মাথার মধ্যে সব যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ভীষণ ক্লান্ত লাগছে আজ। ঘুমে চোঁখ দুটো বুঁজে আসছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল তা বুঝতে পারেনি বিনীত, ঘুম ভাঙলো একটা হাল্কা ঝাঁকুনিতে।

"শুনছেন, একটু সরে বসবেন। " - এমন স্নিগ্ধ কোমল কণ্ঠস্বরে কেউ অনুরোধ করলে কি তা ফেলা যায়! বিনীত একটু সরে বসতেই , বছর বাইশ তেইশের এক তরুণী নিজেকে তিনজনের সিটে জায়গা করে নিলো। এমনটি হামেশাই হয়। তিন জনের জায়গাতে চারজন ঠেঁসাঠেঁসি করে বসে থাকে। অন্যান্য দিন বড্ড রাগ হলেও আজ কিন্তু রাগটা এলো না। লাবণ্যময়ীর করুণ চাহনিতে কোথায় যেন সব রাগই জল হয়ে গেছে।

বিনীত আগারওয়াল, পেশায় লেখক, বেশ কিছুদিন যাবৎ নাম ধাম হয়েছে একটু। মূলত ইংরেজি ম্যাগাজিনে ওর গল্প বেড়োলেও শেষ লেখাটা লিখেছে বাংলাতেই। অবাঙালি হলেও, বাংলায় জন্ম কর্মসূত্রে বাংলা ভাষাটা ভালোই রপ���ত করে ফেলেছে। কলকাতার বুকে ওর বই হইহই করে বিক্রি হলেও , শহরতলীর দিকে বাজার বেশ মন্দা। ওর মনে হয়েছে , বাঙালিদের মন�� অদ্ভুত নষ্টালজিয়া কাজ করে, রবি ঠাকুর, শরৎচন্দ্র, শরদিন্দু বাবুরা আজও তাদের মনে বিরাজ করলেও, নবাগতদের না স্থান জোটে এই ছোট শহরের পাঠকদের মনে, না জোটে বুক রাকের কোণে।

আদ্রায় ট্রেনটা দাঁড়াতেই অধিকাংশ প্যাসেঞ্জার নেমে গেল। বিনীতের মুখোমুখি এসে বসলো সেই লাবণ্যময়ী তরুণী, যার অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চেপে চুপে বাকি সফযরটা কাঁটিয়ে দিতে রাজি ছিল বিনীত। তরুণীটি মন দিয়ে একটা বই পড়ে চলেছে। আধুনিক কালের একজন স্বনামধন্য লেখিকার একটা রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাস। অনেকক্ষণ ট্রেনটা না ছাড়ায় এবার তরুণীটি ভ্রু কুঁচকে বইটা রেখে বাইরের দিকে তাকালো। রোদটা মুখে পড়তেই ,রোদের উষ্ণ আভাতে গাল দুটো গোলাপী হয় উঠলো। বিনীতের নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে লক্ষ্য করে তরুণী এবার বলে উঠলো, " এতক্ষন ধরে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে আছে কেন বলুন তো, কিছু প্রবলেম হলো নাকি?"

"বুঝতে পারছি না। যাই নীচে নেমে দেখে আসি।"

"দাঁড়ান, আমিও আসছি।"

সামনে কারা লাইনে বসে আছে, ট্রেন অবরোধ করেছে। একটু আগে একটা মাল গাড়ি একটি গরুকে ধাক্কা মেরেছিল, সেই অবলা প্রাণীটাকে হত্যা করার প্রতিবাদে তাই অবরোধ।

"কেলো করেছে। এবার উপায়। আপনি দেখুন না সোর্স খাটিয়ে কিছু করতে পারেন কিনা!"

"আমি!"

"এই যে হ্যালো, মিষ্টার বিনীত আগারওয়াল, এত বিনয়ী হওয়ার দরকার নেই। কি ভাবলেন, আপনাকে দেখে ব্লুশ করিনি, কোনো ফ্যান গার্ল মোমেন্ট ক্রিয়েট হলো না।ধরেই বসলেন, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। আচ্ছা, প্রত্যেকটা মানুষের অভিব্যক্তি এক হওয়াটা কি খুব জরুরী। দেখুন না কাউকে বলে কিছু করতে পারেন কিনা। বাই দ্য ওয়ে 'হাল ছেড়ো না বন্ধু' উপন্যাসটা বেশ ভালো লাগলো। নেক্সট ইয়ার এর সিক্যুয়েল আসছে তো!"

" ওয়েট! ওয়েট! আপনি তো মারাত্মক মশাই! আপনি আমায় তো চেনেন, কিন্তু আমি তো আপনার নামটুকু ও জানতে পারলাম না।"

" জেনে কিছু লাভ আছে? " এমন সময় হর্ণ বাজিয়ে ট্রেনটি চলতে শুরু করল।

" আরে ট্রেন ছেড়ে দিলো! চলুন ।" বলে, বিনীত টুক করে উঠে হাত বাড়িয়ে দিলো সহযাত্রীর উদ্দেশ্যে। দুজনেই

কামড়ায় উঠে নিজের নিজের সিটে বসে পড়লো। বিনীত চুপ করে বসে ইয়ারপডটা কানে গুঁজতে যাবে, অপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ এলো, " গান শুনবেন না আড্ডা দেবেন?"

"আমি অচেনা মানুষের সাথে কথা বলি না।"

" তাই! " বলে ফিক করে হেসে বলে উঠলো, " হ্যালো আই আ্যম মোহনা।"

আড্ডা চললো বেশ অনেকক্ষণ। ট্রেনটা কখন হলদিয়া এসে পৌঁছেছে, দুজনেই খেয়াল করেনি। এটাই অন্তিম স্টেশন, তাই দুজনকেই নামতে হবে।

" তাহলে আশা করি আবার দেখা হবে?"

" ভাগ্যে থাকলে নিশ্চয়ই হবে মিস্টার আগরওয়াল।"

" আবার, মিস্টার আগরওয়াল। কল মি বিনীত। মোবাইল নম্বর কি পাওয়া যাবে?"

" না, আবার যদি দেখা হয় তখন পাবে। টিল দেন বাই।"

ব্যস। ভাগ্যের হাতে কাহিনির ভবিতব্য বাজী রেখে দুজন দুজনের গন্তব্যের দিকে এগোতে লাগলো। বিনীত দেখলো, মোহনা একটা লাল হণ্ডা অ্যামেজ এ উঠে হুশ করে ওর সামনে দিয়ে বেড়িয়ে গেল। ওদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধীর পদক্ষেপে বাবার পাঠানো স্কর্পিওতে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

[sentoornetwork]

পরিযায়ী

New Post has been published on https://sentoornetwork.com/poem-by-timir-deb/

পরিযায়ী

  তিমির দেব

যে শব্দটা পাখিদের জন্য প্রযুক্ত জেনেছি এতকাল পোস্টমর্টেম টেবিলে শোবার আগে দেখছি তদ্রুপ উপাধি পেয়ে সারা ভারতের পথে তাদের পদযাত্রা—

কোনো শ্লোগান নেই, কোনো প্ল্যাকার্ড নেই, নেই কোনো রাষ্ট্রবিরোধী হুংকার

সোনালি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে পায়ের নীচে আঁকা হ’য়ে যাচ্ছে খরায় পোড়া জমির অবিকল ছবি…

কোনো মৃতদেহ নয় সংবাদ জগতের সমস্ত মাধ্যম জুড়ে প্রকাশিত হল রেললাইনে পড়ে আছে রক্তমাখা রুটি অসামান্য চলচ্চিত্রের প্রতীকী ব্যবহার যেন

সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের ঘোষণায় রাষ্ট্র দায়হীন

শ্রমিক শব্দটা লিখতে কেঁপে উঠছে হাত কারণ মাসটা ‘মে’ , শুরুতে রক্তজয়ের ইতিহাস…

এভাবেই ঘরে ফেরার জন্য মানুষ পরিযায়ী হ’লে মুছে যাবে রাষ্ট্রের সীমানা

ছবি: গুগুল

আরও পড়ুন:    দু’টি খবর মাথা নত করে দেয়

[sentoornetwork]

দু'টি খবর মাথা নত করে দেয়

New Post has been published on https://sentoornetwork.com/two-news-which-bring-shame-upon-us/

দু'টি খবর মাথা নত করে দেয়

  নিজস্ব প্রতিনিধি: বছর তিরিশ-বত্রিশের তিলোকি কুমার প্রায় ১৬০০ কিমি পাড়ি দিয়ে কাজ করতে গেছিলেন সুরাটের এক পোশাক তৈরির কারখানায়। লকডাউনের জেরে আটকে গেলেন সুরাটে। লক্ষ লক্ষ আটকে-পড়া শ্রমিকের তিনিও ফিরতে চাইলেন নিজের শহর উত্তরপ্রদেশের পিপরাইচে। সুযোগ পেলেন না শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে চাপার। অগত্যা ঠিক করলেন হন্টন দেবেন।

তিলোকি কুমারের চটি জোড়া ছিঁড়ল উত্তরপ্রদেশে প্রবেশের পূর্বেই। এবার খালি পায়ে হাঁটা শুরু। হাঁটতে হাঁটতে পায়ে ফোস্কা। ফোস্কা ফ��টে পা রক্তাক্ত। পথে খাবার মিললেও চটি বা জুতো মেলেনি। রক্তাক্ত খালি পায়ে তিলোকিকে হাঁটতে দেখে কয়েকজন সহৃদয় মানুষ জুতো কেনার জন্য টাকা দিতে চেয়েছিলেন তাঁকে। তিনি নেননি তাঁদের টাকা। টাকা নিয়ে জুতো কিনব কি করে! তাই সেইসব সহৃদয় মানুষের অর্থসাহায্য হাত পেতে নেননি। বরং বলেছেন, একজোড়া চপ্পল দিন না বাবু।

রাজস্থানের ভরতপুর থেকে উত্তরপ্রদেশের বরেলিতে রওনা দেওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন আর এক পরিযায়ী শ্রমিক মহম্মদ ইকবাল খান। প্রায় তিনশো কিমি রাস্তা। সঙ্গে  শারীরিকভাবে হাঁটতে অক্ষম তাঁর পুত্রসন্তান। তাই কপর্দকহীন ইকবাল ভরতপুরের এক গ্রামবাসীর সাইকেল চুরি করলেন। ইকবাল তো আর চোর নন, তিনি লকডাউনের জেরে আটকে-পড়া এক পরিযায়ী শ্রমিক। তাই বাধ্য হয়ে সাইকেল চুরি করাতে অনুতপ্ত ইকবাল। তিনি সাইকেলের মালিককে ছোট্ট এক চিরকুটে লিখলেন, আপনার সাইকেলটা নিয়ে গেলাম। আমার সন্তানের জন্য করতে বাধ্য হলাম। ও হাঁটতে অক্ষম। এতটা পথ যেতে পারবে না। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

দেশের দুই প্রান্তে দুই পরিযায়ী শ্রমিকের দুই কাহিনি মাথা নত করে দেয়। অভুক্ত সমস্যাজর্জরিত পরিযায়ী শ্রমিকের সততা মুগ্ধ করে।

ছবি: গুগুল

আরও পড়ুন:    হুগলির একমাত্র বৌদ্ধমন্দির জৌলুস হারাচ্ছে 

[sentoornetwork]

অধীরের তোপ

New Post has been published on https://sentoornetwork.com/adhir-chaudhury-accused-state-govornment/

অধীরের তোপ

  নিজস্ব সংবাদদাতা: লকডাউনে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ রাজ্যে ফেরানো নিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বারবার চিঠি দেওয়া এবং তাঁদের ঘরে ফিরিয়ে আনার জন্য রেলমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, সবরকমের সাহায্যের ব্যাপারে এগিয়ে গেছেন সংসদের কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা অধীর চৌধুরী। তাঁর জেলা মুর্শিদাবাদ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভিনরাজ্যে কর্মরত। তাঁর মতে, এই সমস্ত শ্রমিকরা আটকে পড়ে ভীষণ দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাই ক্ষমতায় না-থাকলেও, এঁদের সাহায্য করতে চেষ্টা করছি যথাসাধ্য। সোমবার এক ভিডিয়ো বার্তায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে প্রশ্ন ছোড়েন, কেন্দ্র ইতিমধ্যে ৩০০টি স্পেশাল ট্রেন চালিয়েছে এই পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে, এখন মুখ্যমন্ত্রী জানান জেলাভিত্তিক এই রাজ্যে কতগুলি ট্রেন লাগবে? তিনি আরও বলেন, যদি তাঁদের ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রী না-পারেন, তবে তিনি প্রয়োজনীয় ট্রেন বন্দোবস্ত করে শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনবেন। কয়েকদিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় এক চিঠি পাঠান পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর বিষয়ে অসহযোগিতা করার জন্য। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্য তোপ দেগেছিল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। আর সোমবার ফের সেই একই বিষয়ে নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন এই কংগ্রেস নেতা। বাংলায় এখনও পর্যন্ত কোভিডি আক্রান্তের সংখ্যা দু’হাজার ছুঁই ছুঁই।

আরও পড়ুন:   মা ছাড়া ভাবা যায় না