#সীতার অগ্নিপরীক্ষা
Explore tagged Tumblr posts
Text
ছোট করে একটা ধর্মীয় কাহিনি বলি। এক লোক তার স্ত্রী কে নিয়ে যাত্রা করেছিলো, সাথে ছিলো তাদের এক রিলেটিভ। লোকটার স্ত্রী এক রাজা দ্বারা অপহরণ হয় এবং একপর্যায়ে তার স্ত্রী অক্ষত অবস্থায় মুক্ত হন। কি ভাবছেন কাহিনিটা সাম সীতার লাক্সমান আর রাবণের সাথে মিলে যাচ্ছে?? আমি যদি বলি এটা আরও একটা কাহিনির সাথে মিলে যায় তাহলে কেমন হবে??? একই কাহিনি ইয়াহুদি, ক্রিসচিয়ান, আর মুসলিমদের কমন নবী ইব্রাহীমের বেলায়ও হয়েছে। একটু এদিক সেদিক আর কি। ছবিতে দেখুন। • রাম+আব্রাহাম • সিতা+সারাহ • লাক্সমান+লূত • রাবণ+ফেরাউন যারা অন্য ধর্ম নিয়ে স্টাডি করেন না তাদের কাছে হয়তো এসব কিছুর কোন অর্থ নেই তবে আমি বা আমরা যারা বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে স্টাডি করি তাদের কাছে সব কিছু অনেক অর্থ বহন করে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে দুটো কাহিনীর ক্যারেকটার এবং ঘটনার অনেকাংশে মিল কি কাকতালীয় নাকি অন্য কিছু???? যদি কাকতালীয় হয় তাহলে এখানে আর কোন প্রশ্ন নেই আর যদি না হয় তাহলে হাজার প্রশ্ন দাঁড়িয়ে।
#সীতার অগ্নিপরীক্ষা#রাম সীতার ছবি HD#রাম সীতার কাহিনী#রাম সীতার বিবাহ#রাম সীতা লব কুশ#রাম সীতার লব কুশ সম্পূর্ণ অধ্যায়
0 notes
Photo
New Post has been published on https://paathok.news/104347
নারী: অপার রহস্য, অপার বিস্ময়
.
সভ্যতার ক্রম বিকাশের ধারার সাথে তাল মিলিয়ে আজ এই রোবটিক্স যুগ পর্যন্ত সমাজের বিবর্তন, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য এক কথায় নারীর সার্বজনীন উপস্থিতিই প্রমাণ করে। নারী- তুমিই সার্থক কারিগর, তুমিই অনুপ্রেরণা, তুমিই রহস্যের অপার বিস্ময়। দ্রোহের কবি-প্রেমে কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কথা না লিখে পারছি না নারীর মহিমাকে ব্যাখ্যা করতে, “এ পৃথিবীর যত ��হান কীর্তি, অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” অন্যপক্ষে নারীর জন্য যুদ্ধ-বিগ্রহ, খুন-ধর্ষণ, হানাহানি-রক্তারক্তিও কম ঘটেনি। পৃথিবী সৃষ্টি থেকে আজ পর্যন্ত আমরা জানি আদম (Adam) ও বিবি হাওয়ার (Eav) ‘গন্ধম’ ফল খাওয়ার কাহিনী, মিশরের রাণী ‘ক্লিওপেট্রার’ (Philopator / Cleopatra VII) কাহিনী, ‘হেলেন’ অব ট্রয়ের জন্য ট্রয় নগরী ধ্বংসের কাহিনী (অনেকেই বলেন ট্রয় নগরী যখন জ্বলছিল তখন ট্রয়ের শাসক ‘নিরো’ হেলেনের প্রেমের মোহে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন)। আরো জানি, মোগল সাম্রাজ্যের প্রেমিক সম্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি ‘তাজমহল’ এর কথা। “রোমিও-জুলিয়েট” কিংবা টাইটানিক মুভির “রোজ- জ্যাক” এর মতো কাহিনী বাস্তব জীবনেও কম নেই। যেভাবেই বিবেচনা করা যাক না কেন, বিশ্ব সৃষ্টি থেকে আজ অবদি পুরুষের প্রেম-প্রেরণা, মোহ-ভালবাসা, সুখ-দুঃখ, যন্ত্রণা-হিংস্রতার প্রধান এবং অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ‘নারী’। নারীর সামাজিক অবস্থান, বিবর্তন, শরীরতত্ত্বীয় গঠন রহস্য, শরীর কেন্দ্রিক বিপণন বাণিজ্য বিবেচনায় রেখেই আজকের এই লেখাটি…
নারীর বয়সভিত্তিক ভাবগতি এব�� প্রকৃতি
শাব্দিকভাবে, নারী হলো এমন একটা শব্দ যা দ্বারা সকল বয়সের স্ত্রী লিঙ্গকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ মেয়ে, কন্যা, জায়া, ভগ্নি, জননী, মহিলা এ রকম অসংখ্য প্রতিশব্দে বোঝানো যায়। যদিও এর দ্বারা নারীর প্রকৃত ধারণা পাওয়া যায় না। একটু খোলাসা করে বললে, একটি বালিকার আচরণ আর একজন ৩০ উর্ধ্ব মহিলার আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গিতে বিস্তর ফারাক থাকবে। বোঝার সুবিধার্থে আমরা বয়সের সীমারেখা ধরে নিচ্ছি। নাবালিকা বলতে সাধারণত সেই সকল নারীকে বোঝায় যাদের বয়স এখনও ১৮ হয়নি, তরুণী বা যুবতী বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যে নারীর বয়স ১৮ উর্ধ্ব কিন্তু ৩০ এর কোটা পেরোয়নি, আর ধরেই নিচ্ছি ৩০ উর্ধ্বরা হচ্ছেন মহিলা। সাধারণত বয়োঃসন্ধি কালে নর-নারীর শারীরিক অবকাঠামোগত পরিবর্তন দেখা যায়, যা তাদের নিজেকে আলাদা করে ভাবতে শেখায়। টিনজার অবস্থায় নারী তার সব ধরণের আচরণে আবেগকে প্রাধান্য দেয়, সামান্য অখুশিতে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখায়। কারো প্রতি অকার���ে রেগে যাওয়া, খাবার বন্ধ করে দেয়া, কথা বলা বন্ধ করা, উস্কানি বা অসৌজন্যমূলক কাজ করা, নিজেকে অকারণে কষ্ট দেয়া, এমনকি আত্মহননের মতো কাজ করতে দ্বিধা করে না।
.
তরুণী পর্যায়ে আসতে আসতে নারী তাকে মূল্যায়ন করতে শেখে অনেকটা প্রিন্সেস বা তিলোত্তমা প্রেয়সীর মতো, শারীরিক সৌন্দর্য্য এবং কামাবেগকে তারা ভাবে অনেকটা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সপিং করার মতো l তাদের আকর্ষণ তৈরি হয় দামী পোষাক, হাতব্যাগ, ডায়মন্ডের মতো মূল্যবান পাথর, বাহারি জুতোর কালেকশন, যা অর্জন করতে তারা নৈতিকতা – অনৈতিকতার ভেদাভেদ ভুলে যায় l তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে কান্ডজ্ঞানহীন ভাবে স্বেচ্ছাচারী করে তুলতে পিছপা হয় নাl পরিবারের ঘনিষ্টজনদের চেয়ে বন্ধু – বান্ধবকে তারা বেশী প্রধান্য দেয়, তাদেরকে নিয়ে ঠাটবাট দেখিয়ে চলার চেষ্টা করেl আর, এ পর্যায়েই নারী “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ” এর মতো বিপদজনক অবস্থানে থাকে, তারা চায় নিঃর্শতে এবং যে কোন মূল্যে বিপরীত লিঙ্গ তাকে হাসিল করতে ব্যতিব্যস্ত থাকুক l রাতারাতি খ্যাতি অর্জন বা নিজেকে সমাজে ‘সেলিব্রেটি’ হিসেবে উপস্থাপনে, মূল্যবোধ এবং সামাজিকতাকে তোয়াক্কা না করে অনেকেই না বুঝে বেপরোয়া বিপদগামী হয়ে উঠে, সস্তা করে তুলে তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থান, শিকার হয় নানা প্রতারণার, হয়ে যেতে পারে মাদকাসক্ত l তবে বেশীর ভাগ নারীই তাদেরকে ‘প্রিন্সেস’ থেকে ‘লেডি’ পর্যায়ে সহজেই উত্তরণ ঘটাতে পারে l যদিও আজকের মূল্যবোধহীন সমাজ ব্যবস্থায় পদস্খলিত বালিকা – যুবতীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে l আবার, এই নারী যখন যুবতী থেকে মহিলা পর্যায়ে উন্নিত হয়, তখন তার আবেগকে যুক্তিতর্কে শাণিত করে পরিস্কারভাবে উপস্থাপন করতে শিখে যায় l তখন তার শারীরিক সৌন্দর্যের চেয়ে মানবিক গুণাবলী, মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক ও পারিবারিক দ্বায় সমূহকে বেশী আগ্রহের সাথে বিবেচনা করেন l বন্ধু বা সঙ্গী নির্বাচনে এই নারী প্রাধান্য দেয় পুরুষের ব্যক্তিত্ব, দ্বায়িত্বশীলতা, তার প্রতি কতটা সংবেদনশীল ও সহনশীল; এবং সর্বোপরি কি ধরণের মেধা – মনন ও মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন l এ পর্যায়ে নারী ব্যক্তি স্বাধীনতার চেয়ে পারস্পারিক বোঝাপড়া, ভাবাবেগের চেয়ে নিরেট বাস্তবতাকে তার জীবনের উপজীব্য বিষয় করে তুলে l
নারীবাদ : চিন্তন ধারা সমূহ – স্কুল অব থট (School of Thought)
নারীকেন্দ্রিক চিন্তাধারার বেশ কয়েকটি চিন্তন (Thought) রয়েছে l নারীর অধিকার নিয়ে প্রথম সোরগোল তৈরী হয় ১৭৯২ সাল বা তারও কিছু আগে, যখন মেরী ওলষ্টোনকাফ্ট (Mary Wollstonecraft) তার “নারীর অধিকার কেন্দ্রিক যৌক্তিকতা ( A Vindication of the Rights of Woman)” আর্টিকেলটি প্রকাশ করেন l নারীবাদী চিন্তাধারার পদ্ধতি গুলো, ডিসিপ্লিন আকারে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেন ইলেন সোল্টার (Elaine Showalter) l এগুলোর মধ্যে প্রধান হলো: সাধারণভাবে প্রচলিত ধারণা, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, শরীরতত্ত্বীয় গঠন, বিবর্তনবাদ, চিন্তনজগত, মনোজগত, মনোবিশ্লেষণ, লিঙ্গভেদ, জ্ঞান ও শিক্ষণ প্রক্রিয়া, সর্বশেষ স্ত্রীবাদী ভাবনা l এছাড়াও রয়েছে সমন্বয়বাদী এবং মানবতাবাদী চিন্তাধারা l
সামাজিক অবস্থান এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
সামাজিকভাবে আমাদের প্রচলিত ধারণা হলো নারী হলো কোমল তুলতুলে ধরণের কেউ, যারা খুবই মমতাময়ী l যার মধ্যে স্নেহ, প্রেম, আবেগ, রোমান্স, ভালবাসা টাই-টুম্বর ভাবে পরিপূর্ণ l যারা সহজে কঠোর, সহিংস, হিংস্র বা প্রতিশোধপরায়ণ হয় না l তারা স্নেহময়ী মা, মায়াময়ী বোন, প্রেমময়ী প্রেয়সী, প্রিয়তমা সঙ্গিনী, যারা নিজেদের সুখ – আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে নিজেদেরকে বিলীয়ে দিতে ব্যতিব্যস্ত l এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে তারা নিজেদেরকে সমাজে পুরুষের চেয়ে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করে l শিল্প, সাহিত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র, নাটক – নাটিকা, গল্প, উপন্যাস, গান, কবিতায় এই নারীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ l ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নারীকে পুরুষের সহধর্মিণী, সহযোগী এবং পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে l যদিও বা পূরানে সীতার সতীত্ব প্রমাণের অগ্নিপরীক্ষা কিংবা দ্রুপদীর বস্ত্র হরণের মতো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে l মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থায় সতীদাহ প্রথা কিংবা বিধবাকে গয়া অথবা কাশিতে নির্বাস দেবার কুসংস্কার ভারতবর্ষে চালু ছিল l ইসলামে নারীকে রক্ষণশীল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, পর্দাপ্রথা বা হিজাবের মাধ্যমে নারীকে পরপুরুষ এবং দৃষ্টি কামলোভী নিকৃষ্ট পুরুষের হাত থেকে রক্ষার কথা বলা হয়েছে l ইহুদী বা খৃষ্টধর্মেও ইসলাম ধর্মের মতো নারীর বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যদিও বা পুজিবাদী এবং ভোগবাদী সমাজ কাঠামোর জন্য সর্বত্রই এসকল বিধি বিধান অগ্রাহ্য করা হচ্ছে l বৌদ্ধধর্মে নারীকে সামাজিকভাবে উত্তরাধিকারিণী হিসাবে বলা হলেও তাদেরকে পুরুষের সেবাসঙ্গী বা বিনোদনসঙ্গী হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে l সর্বোপরি, সকল ধর্মেই নারীকে পরম শ্রদ্ধেয়, পরম পূজনীয় মাতৃরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে, বলা হয়েছে “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহশত / জান্নাত / ��্বর্গ্য নিহিত রয়েছে l
.
শরীরতত্ত্বীয় গঠন রহস্য এবং বিবর্তন
একটি নারী জন্মানোর সময়ই তার সমস্ত তথ্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে l তার শারীরিক গঠন স্লিম হবে না মোটা নাদুসনুদুস হবে, নজরকাড়া সুন্দরী না সাধারণ টাইপের হবে, তার গ্ল্যামার ক্ষণস্থায়ী না চিরস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করে তার বংশগতির ধারায় পাওয়া ‘জিন’ এর উপর l জিন হচ্ছে মানুষের জীবকোষের অভ্যন্তরে ক্রোমোজোমে থাকা এক ধরণের অম্লধর্মী যৌগিক পদার্থ, যা জীবকোষের মৌলিক উপাদান ডি.এন.এ (DNA) ডি অক্সি রাইবো নিউক্লিয় এসিড l জিন আমাদের বংশগতির ধারক ও বাহক l পিতা-মাতার শারীরিক ও মানসিক ভাল-মন্দ তাদের সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পাওয়ার মূলে রয়েছে এই জিন l চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় চার ধরণের জৈব ক্ষার – অ্যাডেনিন, গুয়েনিন, সাইটোসিন এবং থাইনিন দিয়ে ডি.এন.এ তৈরি হয় l সত্যি বলতে ডি.এন.এ অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণুর সমন্বয়ে তৈরি একটি অণু l উপরের জৈব ক্ষারগুলো যে কোন একটির সাথে পাঁচটি কার্বনযুক্ত শর্করা অণু এবং একটি ফসফেট বা ফসফরিক এসিড অণু মিলে যে বৃহত্তর যৌগ অণু তৈরি করে, তাকে বলে নিউক্লিওটাইড l এই নিউক্লিওটাইডে সুসজ্জিত আকারে থাকে আমাদের জন্মের, বেড়ে উঠার, বিকশিত হওয়ার সমস্ত তথ্যাদি l এই সকল রাসায়নিক উপাদান নারী – পুরুষ উভয়ের দেহেই ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় বিদ্যমান থাকে l তারপরও প্রকৃতিগতভাবে না���ীকে ‘বায়োলজিক্যালি’ আলাদা করা যায় সন্তান ধারণ ও তৎসংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়ার জন্য l নারী সাবালিকা হওয়ার পর থেকে প্রতিমাসে তার শরীর সন্তান ধারণের জন্য সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে, আর সন্তান ধারণে ব্যর্থ হলে তা রজক্ষরণের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়, যা সাধারণ ভাষায় ‘মাসিক’ (Menstruation) নামে পরিচিত l মতান্তরে অনেক মনোবিদ মনে করেন, মাসিকের ভিন্ন ভিন্ন সপ্তাহে নারীর আচরণে ‘অম্ল – মধুর’ পার্থক্য বিরাজ করে, কখনও কখনও খুবই ক্রেজি মারমুখী, কখনও কখনও ঝড় শেষে শান্ত প্রকৃতির মতো, আবার কখনও প্রেমময়ী স্নেহময়ী কাক্ষিত নারী l সাধারনত টিনইজার সময় থেকে যুবতী কাল পর্যন্ত তাদের মধ্য এ জাতীয় আবেগতাড়িত ব্যবহার বেশী পরিলক্ষিত হয়, যা নারীকে করেছে আরো রহস্যময়ী l যদি মাসিকের সাধারণ নিয়মের কোন ব্যত্যয় ঘটে তা হলে তাকে নারীত্বের অস্বাভাবিকতা বলে ধরে নেয়া হয়, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা খুবই মামুলি ঘটনা l সন্তান ধারণ ও জন্মের পর তাকে প্রকৃতিগতভাবে বাঁচিয়ে রাখতে নারীর বুকে থাকা অসমান্তরাল দুটি নমনীয় গ্রন্থি দিয়ে জীবনরস নিঃসৃত হয়, যা তার সন্তানের খাদ্য হিসাবে বিবেচিত হয় l নারী জীবনের অপর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যটি হলো তার রজনিবৃত্তি বা মেনোপেজ (Menopause) , অর্থাৎ এমন এক সময় আসে যখন নারী আর সন্তান ধারণ করতে পারেন না l সাধারণত সেই সময়টা আসে ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে, যদিও এই বিষয়টি নারীর বেড়ে উঠা, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল l এসময় নারীর জৈবিক উদ্দামতা, উত্তেজনা, পুরুষের সাথে মিলিত হবার বাসনা একেবারেই কমে যায় l রজনিবৃত্তি যা প্রকৃতিগতভাবে নারীর জীবন থেকে কেড়ে নেয় জৈব আনন্দ উল্লাস, হঠাৎ করেই নারী অকাল বার্ধ্যকে পৌছায় l এ সময় নারীর জীবন নিবেদিত থাকে সংসার, সন্তানের লালন পালন এবং পরিবারের প্রতি ভালবাসায় l নারীর মাতৃত্ব বা প্রজনন প্রক্রিয়ার জন্যই নারী সম্পূর্ণরূপে পুরুষ থেকে আলাদা এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী l আর এটাই নারী জীবনের অপার রহস্য, অপার বিস্ময় l নারীর তুলনায় একজন পুরুষ আরো দীর্ঘদিন জৈবিকভাবে সক্রিয় থাকে, পুরুষ সাধারণত ৭০/৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত পূর্ণ সক্ষম থাকে l প্রকৃতিগতভাবে নারীর যৌবনও আসে তাড়াতাড়ি, সাধারণত ১৫ বছর বা তার পূর্বেই নারী সন্তান ধারণ করতে পারে কিন্তু প্রজনন স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে ১৮ বছরের নিচে সন্তান ধারণকে নিরুৎসাহিত করা হয় l আবার ৩৫ উর্ধ্ব নারীর সন্তান ধারণে নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই ২০ – ৩০ বছরই নারীর সন্তান ধারণের উপযুক্ত সময় l আবার ৩০ উর্ধ্ব অবিবাহিতা নারীর বা বিলম্বে বিয়ে হওয়া নারীর স্তন ক্যান্সারসহ অন্যান্য মেয়েলি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় l এসকল কারণে ৩৫ উর্ধ্ব নারীর মধ্যে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয় l যার ফলশ্রুতিতে তাদের মনোজগতে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করে, আবার অনেকের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতাও দেখা দেয় l
.
পশ্চিমা নারীবাদী চিন্তাধারায় নারীই তার শরীরের পূর্ণ স্বাধীনতার অধিকারী l পুরুষ তার মনোজগতের সাথে সম্পৃক্ত, ক্ষেত্র বিশেষে একে অন্যের পরিপূরক l বিখ্যাত নারীবাদী লেখিকা সুসান ব্রোডো (Susan Brodo) প্রথম নারীর দ্বৈতস্বত্তা, অর্থাৎ মন ও শরীরের সংযোগ নিয়ে পূর্বের দার্শনিক, যেমন এরিস্টটল (Aristotle) এবং হেগেল (Hegel) এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, মনের আবাস হলো শরীর, শরীর সায় না দিলে কোন মানবিক সম্পর্ক গড়ে উঠা অসম্ভব l পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারী নিয়ন্ত্রিত এবং অবদমিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত l প্রচীন ভারতবর্ষে অক্ষম পুরুষেরা গোপনে ‘নিয়োগ’ পদ্ধতিতে বিবাহিতা নারীদের বাধ্য করতেন নিয়োগকৃত পুরুষটির সাথে মেলামেশা করতে এবং সন্তানবতী হতে l যারা প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপ��ধ্যায়ের “সেই সময়” উপন্যাসটি পড়ছেন, তারা হয়ত মনে করতে পারবেন উপন্যাসের মূল চরিত্র নবীণকুমারের জন্ম রহস্য l প্রকৃতিগতভাবে বেশীর ভাগ নারীই মাতৃত্বের স্বাদ আস্বাদন করতে চায় l মাতৃত্বই করছে নারীকে অতুলনীয়া মহিমান্বিতা, পুরুষ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা l মাতৃত্ব বা প্রজনন প্রক্রিয়ায় পুরুষের ভুমিকা খুবই গৌণ, শুধুমাত্র স্পার্ম (Sprematozoa) সময়মতো দান করা ছাড়া, বাদ বাকী গোটা প্রক্রিয়ার প্রত্যক্ষ শারীরিক দায়িত্ব নারীর একাই বহন করতে হয় l অষ্ট্রেলিয় এক বাচ্চার পিতার নাম দেখে খুবই অবাক হয়েছিলাম, পিতার নামের সাথে লিখা রয়েছে আগন্তক পিতা (Strange Father), যা বুঝতে অন্য অষ্ট্রেলিয়ানের দ্বারস্থ হতে হয়েছে এবং যা বুঝেছি তা অনেকটাই স্পার্ম দানের মতো বিষয়, তবে নারীটি জানেন তার গর্ভের সন্তানটির পিতা কে l আর এখনতো বিজ্ঞান নারীকে আরো স্বাধীনতা দিয়েছে মাতৃত্বের মতো বিষয়ে, যা হলো কৃত্রিম প্রজনন l বিবাহিত পুরুষটি কোন কারণে ‘বন্ধ্য’ হলে বা বিয়েতে কোন নারী অনিচ্ছুক বা কোন কারণে পুরুষ বিদ্বেষী হলেও নারী�� মাতৃত্ব গ্রহণে কোন বাধা নেই l বিংশ শতকের আশির দশকে পাশ্চাত্যে স্থাপিত হয়েছে স্পার্ম ব্যাংক (Sprem Bank), নাম না জানা পুরুষের দানকৃত স্পার্মে অনেক নারীই সেখানে মাতৃত্বের স্বাদ নিচ্ছেন, সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে উদ্ভট সব সংখ্যা এবং অক্ষর l জার্মানীর হিটলারের একটি মনোবাসনার কথা না জানিয়ে তৃপ্তি পাচ্ছি না, তিনি ভেবেছিলেন উন্নততর মানুষের স্পার্মে নতুন প্রজন্ম তৈরির কথা l আচ্ছা, বিজ্ঞান তো এমন কিছু করে বসবে না যে, প্রাকৃতিগতভাবে পুরুষের স্পার্মেরই দরকার হবে না, ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম স্পার্ম তৈরি হবে, কিংবা ‘ক্লোন’ পদ্ধতিতে ‘ডলি ভেড়া’র মতো মানুষ তৈরি হবে, শুধুমাত্র এককালীন মানব কোষ সংরক্ষণের মাধ্যমে l তবে এতে নারী – পুরুষ কারোই দরকার হবে না, থাকবে না নারী – পুরুষের আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণের মতো প্রশ্ন l তবে এতে কিন্তু ঘটবে না নতুন শংকরায়ন কিংবা বংশগতির বিবর্তনের নব্য ধারা l ভিন্নমতে বললে, চূড়ান্ত নারীবাদী চিন্তাধারার প্রভাবে এবং একপেশে পুরুষবিদ্বেষী চিন্তাধারার ফলে, পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থায় তৈরী হয়েছে স্বজাতিক যৌনভাবনা (Homosexuality) যেমন, গে (Gay) বা লেসবিয়ান (Lesbian) এর মতো অপ্রাকৃতিক জনগোষ্ঠী l প্রকৃতির দিকে একটু মনোযোগ সহকারে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যাবে, একমাত্র এককোষী অনুন্নত প্রাণী ছাড়া, সকল পশু – পাখি – প্রাণীই নর – নারীতে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে l মানুষ চিন্তায় – মেধায় সবচেয়ে উন্নত, অথচ তারাই করছে সবেচেয়ে বেশীমাত্রায় অনাচার, অপ্রাকৃতিক কাজ l যার ফল��� একদিন ভেঙ্গে যেতে পারে প্রথাগত সমাজ কাঠামো l অতিস্বাধীনচেতা চিন্তাধারাই একদিন তৈরী করতে পারে স্বেচ্ছাচারী অসুস্থ সমাজ কাঠামো, যার ফল হতে পারে অত্যন্ত ভয়ংকর l
লিঙ্গভেদ এবং বৈষম্য
নারীবাদী চিন্তাধারায় সবসময়ই দাবি করা হয়, লিঙ্গভেদে মানুষের যে পার্থক্য তা জিনগত নয়, এটা বরং মানুষ সৃষ্ট সমাজ বা সংস্কৃতির পরিণাম l সব বিষয়েই নারী পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে l সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগ, উপযুক্ত শিক্ষায় সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্য দুর করা সম্ভব l আমাদের দেশে এখন নারী শ্রমিকরা বিভিন্ন পেশায় লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে কম বেতন পান l পুরুষ হয়তবা বাহি্যক শারীরিক শক্তিতে কিছুটা এগিয়ে আছে, কিন্তু ব্যাথা – হতাশা সহ্য করার ক্ষমতা নারীর বেশী l তাছাড়া পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার ক্ষমতা নারীরই অনেক বেশী l আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একজন নারী বিয়ের পর স্বামীর পরিবারে এসে কিছুদিনের মধ্যে মিলেমিশে সেই পরিবারের একজন হয়ে উঠছেন l যদিও পশ্চাৎপদ সমাজ ব্যবস্থায় এখনো নারী কম শক্তিশালী ভোগের পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় l কিছুদিন আগেও আফগানিস্তানে নারীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত করার পায়তারা করা হয়েছে, পরিবারের প���রুষ ছাড়া বাইরে বের হতে দেয়া হতো না, পরিবারের কোন সিদ্ধান্তে তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হতো l পাকিস্তানের কোন কোন অঞ্চলেও আফগানিস্তানের মতো অবস্থা বিরাজ করছে l সৌদি আরব সহ গোটা আরব জাহানে নারীকে বিভিন্ন ভাবে অবদমিত এবং নিয়ন্ত্রিত করে রাখা হচ্ছে l মাত্র কিছুদিন পূর্বে সৌদি নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছে l সার্বিক বিবেচনায়, সুশিক্ষার অভাব এবং রক্ষণশীল চিন্তাভাবনাই এর পেছনে কাজ করছে l সম্ভবত নেপোলিয়ন বলেছিলেন – আমাকে একজন সুশিক্ষত মা দাও, আমি তোমাদের উন্নত জাতি উপহার দেব l
.
কাম উত্তেজনা এবং রসায়ন
নারীর কাম উত্তেজনার আধার যেমন সুন্দর স্বাস্থবান পুরুষ, তেমনি পুরুষের আকর্ষণ হচ্ছে নারীর সৌন্দর্য্যমন্ডিত অবয়ব l আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে “মণিকা – ক্লিনটন” কেলেংকারির কথা l কাম উত্তেজনা আর এর রসায়নে পৃথিবীর পরাশক্তি আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মজে ছিলেন সুন্দরী লাস্যময়ী তন্বী তরুণী মণিকার আকর্ষণে l বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর প্রতি পুরুষের প্রেমানুভূতি, নারীর রূপের প্রশস্তির পেছনে রয়েছে ‘হরমোন’ নামের একটি রাসায়নিক উপাদান l টেষ্টোটেরন এবং এষ্ট্রোজেন নামক দু’ধরণের হরমোনের ক্ষরণের কারণে একজন নারী কতটা নরম তুলতুলে হবে নাকি পুরুষালি বৈশিষ্ট্��ের হবে, তা নির্ভর করে l মূলত এষ্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রার কারণে নারীর শারীরিক অবকাঠামো আদর্শ আকর্ষণীয়া হয়ে উঠে l অনেক সময় নারীর বাহি্যক গঠনে পুরুষের মতো লোম দেখা যায়, যা টেষ্টোটেরন হরমোনের আধিক্যের কারণে ঘটে l আবার এ দু’টো হরমোনের তারতম্যের কারণে নারী পুরুষে রূপান্তরিত হচ্ছে কিংবা পুরুষ নারীতে l নারীর কাম উত্তেজনার পেছনেও রয়েছে হরমোনের সরাসরি ভূমিকা l গ্রীক শব্দ “হরমাও” থেকেই হরমোন শব্দটির উৎপত্তি l “হরমাও” শব্দের অর্থ হলো ‘আমি উত্তেজনা সৃষ্টি করি’; সেজন্যেই বলা হয় হরমোন হচ্ছে উত্তজনা তৈরির রাসায়নিক উপাদান l হরমোন হচ্ছে অন্তক্ষরা গ্রন্থির নির্যাস এক ধরণের উত্তেজক রস, এক বিশেষ ধরণের প্রোটিন l দেহে বিভিন্ন ধরণের হরমোন নিঃসরণ ঘটে যা আমাদের জীবদেহের জন্ম থেকে মৃত্য পর্যন্ত নানা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য দায়ী l নারী পুরুষের প্রেম – ভালবাসা, কাম – তৃষ্ণা, এবং মানবিক – শারীরিক তীব্র অনুভূতির পেছনে যে সব রাসায়নিক উপাদান গুলো কাজ করে, তারমধ্যে রয়েছে — ডোপামিন, নোরপিনেফ্রিন, কোনিলেথিলমিন (পিইএ), এম্পিটামিনস, অ্যানড্ররফিন, অক্সিটসিন ইত্যাদি l তবে অ্যানড্ররফিন ও অক্সিটসিন শরীরে যতবেশী নিঃসুত হবে ততোবেশী নারী – পুরুষ পরস্পরের প্রতি তীব্র আকর্ষন অনুভব করবে l এ জাতীয় রাসায়নিক উপাদান নারীর মস্তিস্কের নিউরো-ট্রান্সমিটার গুলোকে কামাবেগের প্রতি সক্রিয় করে তুলে l কামাবেগে নারীর শরীরে যে লক্ষণ গুলো সুস্পষ্ট হয়, মোটামুটি ভাবে সেগুলো হলো – পেশী টান টান হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপের পরিবর্তন, বুক শক্ত হয়ে যাওয়া, ঠোঁট স্ফীত হয়ে যাওয়া, বিশেষ স্থানের টিস্যুর আয়তন বৃদ্ধি ও রসক্ষরণ, এবং নারীর চোখে মুখে আর্দ্রভাব বিরাজ করা l যে দৃষ্টিকোণ থেকেই ব্যাখ্যা করি না কেন, একজন পূর্ণ যৌবনা নারীর সংস্পর্শে যেমন একজন পুরুষের প্রতিক্রিয়া হয় তেমনি নারীটিরও হয়, এটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সাড়া l কারণ আমরা জৈব প্রাণী, আর এটা বায়ো-কেমিক্যাল প্রতিক্রিয়া, বিজ্ঞান তেমনটিই বলে l এছাড়া নারী তার মনোজগতে এবং কল্পনায় তার পুরুষ সঙ্গীর কথা ভেবেই নিজ শরীরে কাম রসায়ন সৃষ্টি করতে পারে l একই ভাবে পুরুষও সেই অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে এবং ক্ষরণের মাধ্যমে কাম রসায়নের ইতি ঘটায় l পার্থক্য এটুকুই নারী তার মনোদৈহিক রসায়ন সৃষ্টিতে সামগ্রিকভাবে সম্পৃক্ত থাকে আর একই সময়ে বেশ কবার চরম সুখানুভূতি লাভ করে, যা পুরুষের পক্ষে অসম্ভব ব্যাপার l নারীবাদী চিন্তাধারায় পুরুষশাসিত সমাজে নারীর কামাবেগ পুরুষ দ্বারা প্রণীত নিয়মাবলী দিয়ে নিয়ন্ত্রিত, যা ছিনিয়ে নিয়েছে নারীর দেহের অধিকার l নারী একাধারে নিয়ন্ত্রিত এবং অবদমিত l যৌন আকাংক্ষা একটি দুর্দমনীয় প্রাকৃতিক ঘটনা যা প্রতিটি উন্নত প্রাণীর প্রবৃত্তি, যার শেষ পরিণতি হচ্ছে বংশগতির দ্বারা রক্ষা করা l বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে, নারী যৌন কর্মকান্ডে প্রাকৃতিকভাবে সহনশীল এবং ধৈর্যশীল l ফ্রয়েড এর মতো আধুনিক মনোবিদ বলেছেন, নারী কাম রসায়নে অক্রিয় ( Passive) আর পুরুষ সক্রিয় (Active) এটি ভুল ব্যাখ্যা l মূলত এটা উভয়ের পারস্পারিক সহযোগিতাপূর্ণ একটি সুখানুভব, হয়ত সাড়ার দিক থেকে নারী ধীরলয় l সুসান ব্রোডো (Susan Brodo) মতে নারীর শারীরিক প্রস্ততির আগে মানসিক আবেগ অপরিহার্য l
মানবতাবাদী, সমন্বয়বাদী এবং বিবর্তনবাদী ভাবনা
সভ্যতা বিকাশের পূর্বে, মানুষ যখন গুহায় বাস করত তখন বন্য প্রাণীর আক্রমণ এবং নিজেদের খাদ্য সংগ্রহে নারী – পুরুষ নির্বিশেষে সমানে সমান অংশিধারী হিসেবেই জীবন যাপন করত l নিউইয়র্ক টাইমসের বিজ্ঞান বিভাগের লেখিকা ছিলেন নাটালি এঞ্জিয়ার (Natalie Angier), সে তার “উইমেন : এন ইন্টিমেট জিওগ্রাফী (Woman : An Intimate Geography) বইয়ে লিখেছেন – ঐতিহাসিকভাবেই নারী পুরুষের সমকক্ষ এবংক্ষেত্র বিশেষে পুরুষের চেয়ে সম্ভবণাময় l ইতিহাস বলে, নব্য প্রস্তরযুগে শিকারী মানুষ সম্পর্কে যে পুরুষ কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা ছিল তা পূর্ণ সত্য নয়, সত্যটি হলো সেখানে নারীর অংশীদারি ছিল সমানে সমান l আধুনিক যুগের স্বাধীন নারীর মতো, প্রাগৈতিহাসিক কালেও নারী ছিলো স্বাধীন, নারীর বন্দীদশার শুরু মধ্যযুগে l নারীর মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য আমরা দেখি তা সৃষ্টির বৈচিত্র্য, তার রহস্যের অপার বিস্ময় l বিবর্তনবাদীদের মতে নারী পুরুষের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে l তাতো রয়েছেই, পুরুষের গর্ভ থেকে তো আর সন্তান জন্ম নিতে পারে না l নারীবাদীরা চান মধ্যযুগে নারীর প্রতি যে বৈষম্য হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে l তারা এখন সবক্ষেত্রেই নারীকে পুরুষে সমপর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত করার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে l পুরুষের পাশাপাশি নারীকে তার নিজ অবস্থান থেকে বিকশিত হতে হবে, এ ক্ষেত্রে পুরুষ তার সহায়ক শক্তি হবে, এটাই মানতাবাদী ভাবনা l নারী পুরুষের ভিন্ন ব্যক্তিত্ব, ভিন্ন স্বত্তা, ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক গঠন সত্ত্বেও উভয়ের সমান অংশগ্রহনে আজকের যুগের প্রতিটি কর্মকান্ড পরিচালিত হব, এটাই সমন্বয়বাদী ভাবনা l তাই ন্যায়সংগত ও ন্যায্যতার বিবেচনায় প্রত্যেকের অধিকার নিশ্চিত হবে মানবিক মূল্যবোধের আলোকে, সেটাই হউক নারী অধিকারের প্রত্যাশা।
নারীর শরীর কেন্দ্রিক বিপণন বাণিজ্য
.
নারীর শরীর পৃথিবীতে নানাবিধভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে l বিজ্ঞাপণে, চলচ্চিত্রে, পণ্যপ্রদর্শনীতে, যৌন বিনোদন এবং সরাসরি পতিতাবৃত্তিতে নারীর ব্যবহার বিপদজ্জনক মাত্রায় বেড়েছে l নারীবাদীরাও বিস্তর কর্মকান্ড করছে এসব ঠেকাতে l একটি মুভির কথা উল্লেখ না করলেই নয় l মুভিটির নাম ” Human Trafficking” মানব পাচার l মুভিটিতে দেখানো হয়েছে কিভাবে ইষ্ট ইউরোপ থেকে সুন্দরী টিনইজার মেয়েদের মিডিয়াতে স্টার বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে আমেরিকায় নিয়ে এসে দেহব্যবসায় বাধ্য করানো হয় l সেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে পাচারকারী চক্র, রিক্রুটমেন্ট এজেন্সী, মডেলিং এবং শো-বিজনেসের কর্তারা সংঘবদ্ধভাবে নারীর শরীরকে উপজীব্য করে মুনাফা অর্জন করছে সারা বিশ্বে l মুভিটিতে সিকিউরিটি সার্ভিসের এক কর্তাব্যক্তির একটি উক্তি ছিল এরকম – “বাস্তবতা হলো, তুমি যে কোন ড্রাগ একবার বিক্রি করতে পারো কিন্তু একটি নারী তুমি প্রতিদিন কয়েকবার করে বিক্রি করতে পারবে, তা দিনের পর দিন বিক্রি করতে পারবে (You can sell a drug once, but a women you can sell more than once each day and everyday — This is the reality) l” এশিয়ার মধ্যে জাপানে রয়েছে যৌন শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজার l থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মায়ানমার, রাশিয়া সহ পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো থেকে জাপানে নারীদের পাঠানো হয় বিনোদন কর্মী হিসাবে l বাংলাদেশ, ভারত কিংবা পাকিস্তানে খুবই অস্বাস্থকর পরিবেশে সস্তা ধরণের পতিতাবৃত্তি চলছে l এ অঞ্চলের নারীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মধ্যপ্রচ্যে, যার মূল কারণ হচ্ছে এ অঞ্চলের বহু শ্রমিক সেখানে কাজ করে l আধুনিক পতিতাবৃত্তির ধরণটাই পাল্টে গেছে, পতিতাবৃত্তির (Prostitution) আধুনিক অর্থ হলো – তোমার যে কোন সুবিধায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারীর / পুরুষের শরীরের ব্যবহার l নারীর শরীরকেন্দ্রিক বিপণন বাণিজ্যের অংশ হিসেবে, আজকাল তো হর – হামেশাই ডিজে পার্টির আড়ালে চলছে মূলত ড্রাগ আর সোসাইটি গার্লদের নিয়ে রমরমা দেহব্যবসা l সময়ের সাথে সাথে চিহ্নিত পতিতাদের ছাড়াও, পর্যটন, আতিথেয়তা, স্বাস্থসেবা, বিনোদন স্থাপনাগুলোতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছে স্মার্ট চৌকশ ইংরেজী জানা উচ্চশিক্ষিতা সব নারী, যাদের গোপন (hidden) এজেন্ডা হচ্ছে সময় এবং শরীর বিক্রি আধুনিক সব শব্দে যেমন, অগ্রযাত্রী – এসক্ট (Escort), ভ্রমনের নিরাপদ সঙ্গী – ট্র্যাভেলস বিলংগিংস (Travels Belongings), একরাতের সঙ্গী – ওয়ান নাইট ষ্ট্যান্ড (One Night Stand), আনন্দদানকারী সঙ্গী – প্ল্যাজেন্ট কোমপেনিয়ন (Pleasant Companion) l ফোনে এডাল্ট কথোপকথন তো এখন পুরাতন বিষয়, এখনতো ইন্টা��নেটে নাম না জানা দেশের সুন্দরী নারীরা ইনবক্স করে স্কাইপ (Skype) কিংবা ইন্সটাগ্রামে (Instagram), সামান্য টাকার বিনিময়ে এডাল্ট ভিডিও চ্যাট করতে l নারীর শরীর কেন্দ্রিক বিপণন বাণিজ্যের সর্বশেষ সংযোজনটি হলো ‘গর্ভাভাড়া’ যা পাশ্চাত্যে শুরু হয়েছে বহুআগে l এটা কৃত্রিম প্রজননের একধরণের ব্যবস্থা l কোন একটা দম্পতি তাদের শারীরিক অক্ষমতার কারণে সন্তান ধারণ করতে পরছেন না, তখন তাদের ‘শুক্র-সতেজ-ডিম্ব’ টাকার বিনিময়ে ভাড়া করা কোন নারীর শরীরে ‘টেষ্ট টিউব’ পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন করা হয় l নারীর এ সার্বিক অধঃপতন, এ বহুমুখী বিপণন বাণিজ্য আজকের এই ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কিভাবে রুখবেন !
.
উপসংহার
‘নারী’ শব্দটি বলার সাথে সাথে একটি বিশেষ অবয়বই ভেসে উঠে মনের পর্দায়, যে নারী আমাকে গর্ভেধারণ করেছে এটা নিশ্চয়ই সে নয় l নারী বলতে বিশেষ কিছু অন্তর্নিহিত গুণাবলী, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা আগে ভাবি না, আগে ভাবি তার শরীরের কথা l চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে নারীকে এখন আর সংজ্ঞায়িত করা যাবে না l নারী এযুগে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে, ক্ষেত্র বিশেষে পুরুষের চেয়ে এগিয়ে আছে l কয়েকদিন আগে জি-বাংলা সিনেমায় কলকাতার একটা বাংলা সিনেমা দেখলাম নাম “একলা চল” যার সার কথা হলো, একজন সিঙ্গেল মাদারের কন্যা বিয়ে না করে পিতা ছাড়া সন্তানের মা হতে চায় l অর্ধশতকের বেশী প্রত্যক্ষ নারীবাদী আন্দোলনের ফলে নারী এখন তার পুরুষ সহযোগী ছাড়াই চলতে শিখেছে l সর্বক্ষেত্রে তারা যেমন সমান তালে এগিয়েছে, তেমনি বিপণন বাণিজ্যে আরো বেশীই নিজেকে পণ্য করেছে l কোথায় যাব আমরা, শিক্ষক যারা সমাজ বিনির্মাণের কারিগর তারাও তো অনৈতিকভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে তাদের ছাত্রীদের সাথে, যা প্রফেশনালি গুরুতর অপরাধ l আমাদের আস্থা বিশ্বাসের সকল দরজা প্রতিদিনই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমাদের এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কি ! আজকাল অনেক আধুনিক নারীই মনে করে পুরুষের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক বন্ধন অনেকট দীর্ঘমেয়াদী পতিতাবৃত্তির মতো, একঘেঁয়ে ব্যাপার l সামাজিক বন্ধনহীন লিভ টোগেদার (Live Together) বা বন্ধনহীন ঘর-গৃহস্থালি সম্পর্ক (Domestic Relationship) কখন যে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমাদের রক্ষণশীল সমাজ কাঠামোতে ঢুকে পরেছে তা টেরই পাইনি l হর – হামেশাই নারী – পুরুষ জড়িয়ে যাচ্ছে পরকীয়ায় বা বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে, যার ফলশ্রুতিতে ভেঙ্গে যাচ্ছে সাজানো সংসার, সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পরিবারের ছোট্ট শিশুরা l তৈরী হয়েছে গে, লেসবিয়ানদের ��তো অপ্রাকৃতিক জনগোষ্ঠী, নাম না জানা পুরুষের স্পার্মে (Sprem) মাতৃত্বই বুঝি এখনকার স্বাধীনচেতা নারীদের স্মার্টনেস, এসবই কি আধুনিক নারীবাদী আন্দোলনের ফসল, নাকি নারী নিজেই নিজেকে অবমূল্যায়নের প্রয়াশ ! নিচে নারীকে নিয়ে লিখা আমার কয়েকটি বাক্য দিয়ে আজকের মতো শেষ করছি l “নারী তুমি অরণ্য দেখে ভয় পেলে ! তোমার চোখে যে ভয়, তা অরণ্যের নীরবতায়, আমার হৃদয়ের বিষন্নতায়, নিশির আলো আধারীর মোহময়তায়, কাছে এসে দেখো, কিসে তোমার ভয়?” — নারী তুমি আমার চোখে অপার রহস্য,অপার বিস্ময় l মূল লেখা : জানুয়ারি ২৯, ২০১৫ ইং l সকাল: ০৪ : ২০ সংশোধন : জানুয়ারি ৩১, ২০১৫ ইং l রাত : ১১ : ৪৫ গোলপুকুর পাড়, ময়মনসিংহ l পাদটিকা: লিখাটি নবীশ স্থপতি “রেহনুমা রাফসান নিশি” কে উৎসর্গ করা হয়েছে l গত ডিসেম্বরে’ ২০১৪ এক ঘরোয়া আড্ডায় তার সাথে নারীর অবস্থান এবং নারীবাদ নিয়ে কথা হচ্ছিলো, তখনই বলেছিলাম এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত লিখার কথা l বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মিস. তাসলিমা রহমান সেতু, এমবিবিএস (এ্যালামনাই-এমএমসি’ ৪৫ ব্যাচ) এর প্রতি, তার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য এবং সংশোধনীর জন্য l
মোকাম্মেল হক, লেখক, গবেষক
0 notes
Photo
তোমার চরিত্রে আমার সন্দেহ হয়েছে,নেত্ররোগীর সম্মুখে যেমন দীপশিখা,আমার পক্ষে তুমি সেইরূপ কষ্টকর। তুমি রাবণের অঙ্কে নিপীড়িত হয়েছ,সে তোমাকে দুষ্ট চোখে দেখেছে,এখন যদি তোমাকে পুনর্গ্রহণ করি তবে কি করে নিজের মহৎ বংশের পরিচর দেব? যে উদ্দেশ্যে তোমাকে উদ্ধার করেছি তা সিদ্ধ হয়েছে,এখন আর তোমার প্রতি আমার আসক্তি নেই,তুমি যেখানে ইচ্ছা যাও। আমি মতি স্থির করে বলছি- লক্ষণ ভরত শত্রুঘ্ন সুগ্রীব বা রাক্ষস বিভীষণ, যাকে ইচ্ছা কর তার কাছে যাও, অথবা তোমার যা অভিরুচি তা কর। সীতা,তুমি দিব্যরুপা মনোরমা, তোমাকে স্বগৃহে পেয়ে রাবণ অধিককাল ধৈর্যাবলম্বন করেনি
বহু লোকের সমক্ষে রামের মুখে এই রোমহর্ষক অশ্রুতপূর্ব কথা সীতা লজ্জায় যেন নিজের গাত্রে প্রবিষ্ট হলেন।তিনি অশ্রুজল মুছে গদগদস্বরে বললেন-নীচ ব্যক্তি নিচ স্ত্রীলোককে যেমন বলে তুমি আমাকে সেইরুপ বলছ কেন? যখন হনুমানকে লংকায় পাথিয়েছিলে তখন আমাকে বর্জনের কথা জানাওনি কেন? আমি তখনই জীবন ত্যাগ করতাম, তোমাদের অনর্থক কষ্ট ��েতে হত না। পরাধীন বিবশ অবস্থায় রাবণ আমার গাত্র স্পর্শ করেছিল,এই দোষ আমার ইচ্ছাকৃত নয়।
আমার অধীন যে হৃদয় তা তোমারই ছিল;কিন্তু যখন আমি নিজের কর্ত্রী নই তখন পরায়ত্ত দেহ সম্বন্ধে কি করিতে পারি? আমাদের দীর্ঘকাল সসংগ হয়েছে,পরস্পরের প্রতি অনুরাগ বৃদ্ধি পেয়েছে,এতেও যদি তুমি আমাকে না বুঝে থাকো তবে আমার পক্ষে তা চিরমৃত্যু।জনকের নামে আমার পরিচয়, বসুধাতল থেকে আমার উৎপত্তি,এসব তুমি গ্রাহ্য করলে না ;তুমি চরিত্রজ্ঞ,কিন্তু আমার মহৎ চরিত্রের সম্মান করলে না।বাল্যকালে তুমি আমার পাণিগ্রহন করেছিলে,তাও মানলে না,আমার ভক্তি চরিত্র সবই পশ্চাতে ফেলে দিলে।
সীতা সরোদনে লক্ষণকে বললেন,তুমি আমার চিতা প্রস্তুত কর,স্বামী অপ্রীত হয়ে সর্বসমক্ষে আমাকে ত্যাগ করেছেন,আমি অগ্নিপ্রবেশে প্রাণ বিসর্জন দেব।লক্ষণ সরোষে রামের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন,অবশেষে আকার ইংগিতে তার মনোভাব বুঝে চিতা রচনা করলেন।সেখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা কেউ কালান্তক যমতুল্য রামকে অনুনয় করতে বা তার দিকে চাইতে সাহসী হলেন না।অধোমুখে উপবিষ্ট রামকে প্রদক্ষিণ এবং দেবতা ও ব্রাম্মণকে প্রণাম করে সীতা যুক্ত করে অগ্নিকে বললেন,যদি আমার হৃদয় চিরকাল রাঘবের প্রতি একনিষ্ঠ থাকে,ইনি যাকে দুষ্ট মনে করেন সেই আমি যদি শুদ্ধচরিত্রা হই তবে লোকসাক্ষী অগ্নিদেব আমাকে রক্ষা করুন। এই বলে সীতা নিঃশঙ্কচিত্তে অগ্নিপ্রবেশ করলেন।
রামের সীতা প্রত্যাখ্যান (সর্গ ১১৪-১১৫) সীতার অগ্নিপরীক্ষা (সর্গ ১১৬-১১৮)
3 notes
·
View notes
Text
রামায়ণ মহাকাব্যের সহজপাঠ- চরিত্র অভিধান
রামায়ণ মহাকাব্যের চরিত্র চিত্রণ
রামায়ণ মহাকাব্য এক অসাধারণ সাহিত্য। বাংলা সাহিত্যে ও ভাষায় রামায়ণ মহাকাব্যের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। বাংলা ভাষার অমুত সূধা পান করতে হলে রামায়ণ-এর মতো মহাকাব্য গুলোর চরিত্র ও ঘটনাবলী সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। রামায়ণ মহাকাব্যের কিছু চরিত্র সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। তবে এ মহাকাব্যের অনেক চরিত্র সম্পর্কে আমাদের তেমন ধারণা নেই। হিন্দু পুরাণের বিশালতা, তথ্যের জটিলতা ও অস্পষ্টতার কারণে রামায়ণ-এর মতো মহাকাব্য আমাদের জন্য সুখপাঠ্য হয়ে ওঠে না। রামায়ণ-কে সহজপাঠ্য করে তুলতে এ মহাকাব্যের চরিত্রগুলোকে সহজ ও বোধগম্য করে তুলে ধরা হলো। হিন্দু পুরাণগুলোতে দুটি শুক্তিশালী রাজবংশের পরিচয় পাওয়া যায়- সূর্য বংশ ও চন্দ্র বংশ। সূর্য বংশকে ঘিরে রামায়ণের চরিত্রাবিধান তৈরী হয়েছে। তাই এ মহাকাব্যের চরিত্রগুলো বোঝার জন্য সূর্য বংশ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। হিন্দুধর্মের তিন প্রধান দেবতা-ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব। ব্রহ্মা সৃষ্টি, বিষ্ণু লালন ও শিব প্রলয়ের দেবতা। শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়কর্তা- পরমেশ্বর (বা মহেশ্বর) হিসেবেও স্বীকৃত। এই তিন দেবতাকে- ব্রহ্মা (পৃথিবী) সৃষ্টি, বিষ্ণু (জল) লালন ও শিব (আগুন)- এক সঙ্গে ত্রিমূর্তি বলে। ব্রহ্মার মানস সন্তান (মানসপুত্র, মানসকন্যা) ছিল। মানসপুত্ররা প্রজাপতি (বা ঋষি, মহর্ষি, মহ��মুনি ) নামে পরিচিত। এই সন্তানগণ তার শরীর থেকে সৃষ্টি হয়নি, মন থেকে সুষ্টি হয়েছে। এই কারণে এদেরকে মানসপুত্র বা মানসকন্যা বলা হয়। ব্রহ্মার ঠিক কতজন মানস সন্তান ছিল তা বলা মুশকিল। সচরাচর যে সকল মানসপুত্রের নাম নাম পাওয়া যায় তারা হলো- সপ্তর্ষি (মরীচি, অত্রি, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ), দক্ষ, ভৃগু, নারদ, বিশ্বামিত্র, জমদগ্নি, ভরদ্বাজ, কশ্যপ, পর্বত ইত্যাদি। এই প্রজাপতিরাই মানবজাতির আদিপিতা। এরা ব্রহ্মাকে পৃথিবী সৃষ্টির কাজে সহায়তা করেছিলো। দক্ষ তার কন্যাদেরকে (অদিতি, দিতি, বিনতা ইত্যাদি) কশ্যপকে সমর্পণ করেছিলো। এর মধ্যে এক কন্যা অদিতির গর্ভে দেবতা, আরেক কন্যা দিতির গর্ভে দানবদের জন্ম হয়।হিন্দুশাস্ত্রে রাক্ষস বা অসুর, রাক্ষস ও দানব ভিন্ন। রাক্ষস ও দানবদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিলো না। অদিতির গর্ভের দেবতারা আদিত্য (সূর্য দেবতা) নামে পরিচিত। এদের সংখ্যা বারো (মতান্তরে ৭ বা ৮) জন বলে এদেরকে একত্রে দ্বাদশ আদিত্য বলে। এই দ্বাদশ আদিত্যের এক জনের নাম বিবস্বান। বিবস্বানের পুত্রের নাম বৈবস্বত মনু। তিনি ছিলেন একজন মহামুনি। বৈবস্বত মুনির পুত্রের নাম ইক্ষ্বাকু (ইক্ষবাকু)। তিনি ইক্ষবাকু রাজবংশ তথা সূর্যবংশের প্রথম রাজা। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশে অযোধ্যা শহরকে কেন্দ্র করে কোশাল রাজ্য (খ্রি.পূ ৭০০-৫০০) গড়ে তুলে ছিলেন। তার শত পুত্র ছিল। এদের এক জনের নাম ছিল নিমি। সে ছিল মিথিলা (Kingdom of Videha) রাজ্যের রাজা। সূর্যবংশীয় রাজাদের বংশ পরম্পরায় কোশাল রাজ্য শাসন চলতে থাকে। এদের এক জনের নাম ছিল দিলীপ। দিলীপের পুত্র রঘু, রঘুর পুত্র অজ ও অজের পুত্র দশরথ। অন্যদিকে, নিমির বংশ পরম্পরায় মিথিলার শাসনে যে রাজা আসে তার নাম জনক। কোশাল রাজ্যের অযোধ্যায় রাজা দশরথের ঘরে রাম আর মিথিলায় রাজা জনকের ঘরে সীতার জন্ম হয়েছিল। রাম ও সীতা রামায়ণ মহাকাব্যের অন্যতম প্রধান চরিত্র। কৌশল্যা, কৈকেয়ী ও সুমিত্রা রাজা দশরথের তিন স্ত্রী। কিন্তু তাদের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। পুত্র সন্তানের জন্য সে এক যজ্ঞের আয়োজন করে। যজ্ঞের পায়েস সে দুই ভাগ করে কৌশল্যা ও কৈকেয়ীকে দেয়। এরা দুজন মিলে তাদের পায়েসের অংশ সুমিত্রাকে দেয়। কৌশল্যার গর্ভে এক পুত্র রাম (জ্যেষ্ঠপুত্র), কৈকেয়ীর গর্ভে এক পুত্র ভরত ���বং সুমিত্রার গর্ভে দুই পুত্র লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন (যমজ) মোট চার সন্তানের জন্ম হয়। সীতা রামের স্ত্রী এবং রাম ও লক্ষণ বৈমাত্রেয় ভ্রাতা। রামায়ণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র মন্থরা। মন্থরা রাণী কৈকেয়ীর কূটবুদ্ধি সম্পন্না কুঁজো দাসী। রাজা দশরথের শম্বরাসুরের সাথে যুদ্ধ করেছিলো। এ যুদ্ধে সে আহত হয়। এ সময় মন্থরা দশরথকে সেবা করে সুস্থ করে তোলে। দশরথ তাকে দুটি বর (ইচ্ছাপূরণ) দিতে চেয়েছিল। যখন রামের রাজ্যাভিষেকের আয়োজন চলছিল, তখন মন্থরা সেই দুটি বর চায়। একটি ভরতকে রাজ্যে অভিষিক্ত করা এবং দ্বিতীয়টি রামকে চৌদ্দ বছরের জন্য বনে পাঠানো। সত্য রক্ষার জন্য দশরথ এই বর দিতে বাধ্য হয়। এ বিষয়ে ভরতের কোন ইচ্ছা না থাকলেও কৈকেয়ী মন্থরাকে সহায়তা করেছিল। রামের বনবাসের ষষ্ঠ দিন দশরথ পুত্রশোকে মারা যায় । রাম হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। হিন্দু ধর্মালম্বীরা বিষ্ণুর দশাবতারে (মতান্তরে বাইশ) বিশ্বাস করে। অবতার হলো কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে দেবতাদের মানুষ রূপে জন্মগ্রহণ। বিষ্ণু এ যাবৎ নয় বার অবতার রূপে এসেছে। এ রূপ গুলো হলো- মৎস্য (মাছ), কূর্ম (কচ্ছপ), বরাহ (বন্য শূকর), নৃসিংহ (অর্ধ মানুষ অর্ধেক সিংহ), বামন (খর্বকায় মানুষ), পরশুরাম (পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রাম), রাম (অযোধ্যার যুবরাজ), বলরাম (শ্রীকৃষ্ণের ভ্রাতা) ও গৌতম বুদ্ধ (বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা)। (মতান্তরে, শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অষ্টম ও তার ভাই বলরাম নবম অবতার)। কল্কি হিসেবে ভবিষ্যতে বিষ্ণুর অবতারণা হবে বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করে। রামের দুই যমজ পুত্রের নাম লব ও কুশ। সীতার দ্বিতীয়বার বনবাস কালে এদের জন্ম হয়। রামের সাথে লব ও কুশের একবার যুদ্ধ হয়েছিল। এ যুদ্ধে রাম পরাজিত হয়। দেবতা ইন্দ্র ব্রহ্মার এক মানস কন্যা অহল্যাকে ধর্ষণ করেছিল। রামের পা স্পর্শ করে এই অহল্যার শাপমোচন হয়েছিল। রামের মতো সীতাও এক অবতার। সে দেবতা বিষ্ণুর স্ত্রী ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর অবতার। সীতার জন্ম একটু অস্বাভাবিক। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জমি চাষ করার সময় লাঙলের আঘাতে ভূমি বিদীর্ণ করে সীতার জন্ম হয়। সীতা চরিত্রের মূল লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো সীতার সতীত্ব বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে, দুই বার বনবাসে যেতে হয়েছে, এবং অবশেষে লজ্জা ও ক্ষোভে জগদ্ধাত্রীর সহায়তায় তাকে পাতালে প্রবেশ করতে হয়েছে। রামায়ণের কয়েকটি সংকলনে মায়া সীতা বা ছায়া সীতা নামে একটি চরিত্রের অবতারণা করা হয়েছে। রাবণ আসল সীতার স্থলে তাকে হরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। আরো মনে করা হয়, সীতা পূর্বজন্মে বেদবতী ছিলেন, যাকে রাবণ উৎপীড়ন করার চেষ্টা করেছিল। পরজন্মে সীতা দ্রৌপদী বা দেবী পদ্মাবতী রূপে পুনর্জন্ম লাভ করে। রামের ভাই লক্ষ্মণকে শেষনাগের অবতার মনে করা হয়।। কশ্যপ মুনির ঔরসে কদ্রুর গর্ভে জন্ম নেয়া সাপ শেষনাগ। এর অন্য নাম বাসুকি বা অনন্তনাগ। দেবতা শিবের গলায় যে সাপটি পেঁচানো থাকে এটাই শেষনাগ। এর বোনের নাম মনসা (এ সর্প দেবী শিবের কন্যা হিসেবেও পরিচিত। অন্যনাম নিত্যা, পদ্মাবতী ইত্যাদি)। লঙ্কার যুদ্ধে লক্ষণ রাবণের পুত্র মেঘনাদকে বধ করেন। লক্ষ্মণ সীতার ছোট বোন উর্মিলাকে বিবাহ করেছিলেন। তার দুই পুত্রের নাম ছিল অঙ্গদ ও চন্দ্রকেতু। বর্তমান উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী লক্ষ্ণৌ শহরটি সে প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে ধারণা করা হয়। রামের আরেক ভাই ভরত। রাম বনবাসে থাকা কালে ভরত অযোধ্যার রাজা ছিলো। রামের প্রত্যাবর্তনের পর সে রামকে রাজ্য ফিরিয়ে ভরত সীতার চাচাতো বোন (কুশধ্বজের কন্যা) মাণ্ডবীকে বিয়ে বরে। তক্ষ ও পুষ্কল নামে তাদের দুই পুত্র। লক্ষণের ছোট ভাই শত্রুঘ্ন। সে কুশধ্বজের কন্যা শ্রুতকীর্তিকে বিয়ে করে। তাদের পুত্র সুবাহু ও শত্রুঘাতী। শত্রুঘ্ন মথুরা রাজ্যের মধুদৈত্যের পুত্র লবণাসুরকে হত্যা করে। কৌশল্যার গর্ভে দশরথের কন্যা রামের বড় বোন শান্তা। দশরথের ভায়রা অঙ্গরাজ (বঙ্গদেশ) রোমপাদ শান্তাকে দত্তক নিয়েছিল। শান্তা ঋষ্যশৃঙ্গকে বিয়ে করেছিল। ঋষ্যশৃঙ্গের হরিণের মতো শিং ছিলো। সে দশরথের পুত্র সন্তানের জন্য যজ্ঞের আয়োজন করে। রামায়ণের একচি ছোট চরিত্র অন্ধ ঋষিদ্বয় শান্তনু এবং মলয়ার পুত্র শ্রবণ কুমার। সে নিষ্ঠার সঙ্গে অন্ধ মা-বাবার সেবা করতো। শ্রবণ নিজে মা-বাবাকে একটি ভারে তুলে এদিকে সেদিকে নিয়ে যেতেন। একদিন রাজা দশরথ শিকারের উদ্দেশ্যে বনে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। শ্রবণ বাবা-মার জন্য নদীতে জল আনতে গিয়েছিল। পানিতে শব্দ শুনে সেখানে তীর মারে দশরথ, মারা যায় শ্রবণ কুমার। শ্রবণের মা-বাবা দশরথকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিলো যে, তারও পুত্রশোকে মৃত্যু হবে। রামায়ণে উল্লিখিত স্থানসমূহের মধ্যে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ- কোশাল, মিথিলা, অঙ্গদেশ, দণ্ডকারণ্য, কিষ্কিন্ধা ও লঙ্কা। কোশাল, মিথিলা ও অঙ্গদেশের কথা উপরে বলা হয়েছে। বাকী স্থানগুলোর একটি দণ্ডকারণ্য। বিশাল এক অরণ্যময় অঞ্চল ভারতের বর্তমান মধ্যপ্রদেশ, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র এই চারটি রাজ্য ব্যাপী বিস্তৃত। এখানে রামের সাথে সুগ্রীবের দেখা হয়। কিষ্কিন্ধা ছিল বানরদের রাজ্য। ভারতের বর্তমান কর্নাটক প্রদেশের বেল্লার জেলা সংলগ্ন অঞ্চলে এ রাজ্য ছিল। আর লঙ্কা কথা তো আমরা সবাই জানি, এটি শ্রীলংকা। রামায়ণ মানচিত্র প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, “বানর” (vanara) একটি সংস্কৃত শব্দ। ‘বান’ হলো ‘বন’ আর ‘নর’ হলো ‘মানুষ’। শব্দগত ভাবে ‘বানর’ অর্থ ‘বনমানুষ’। হিন্দু ধর্মে ‘বানর’ বলতে এক ধরনের সম্প্রদায়ের মানুষকে বোঝানো হতো যারা বনে বাস করতো। সুতরাং, কিষ্কিন্ধা ছিল বানরদের রাজ্য, অর্থাৎ ঐ স��ল সম্প্রদায়ের লোকের রাজ্য। এ নিবন্ধে বানর শব্দে monkey নয়, ঐ সম্প্রদায়ের লোককে বোঝানো হয়েছে। রামায়ণে দুটি মজার পাখি আছে- জটায়ূ ও গরুড়। কশ্যপ ও বিনতার এক সন্তানের নাম ছিল অরুণ। সে দ্বাদশ আদিত্যের কোন এক সূর্য দেবতার অশ্বচালক ছিল। সে অরুণী নামে পুনর্জন্ম লাভ করে ও বানর বৃক্ষরাজকে বিয়ে করে। এদের পুত্রের নাম সুগ্রীব ও বালী। রামায়ণ মহাকাব্যে এদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। জটায়ূ অরুণের সন্তান। রাবণ যখন সীতাকে হরণ করছিল তখন জটায়ু তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে; কিন্তু পারেনি৷ সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের লেখক চরিত্রের ছদ্মনাম জটায়ূ (লালমোহন গাঙ্গুলি)। জটায়ুর এক সহোদর ছিল, সম্পাতি। সীতাকে খুঁজতে সবাই যখন ব্যর্থ হলো, তখন এ শকুন লঙ্কায় সীতাকে খুঁজে পায়। এ জন্যই বলে শকুনের চোখ। অরুণের ভাইয়ের নাম গরুড়। সে ছিল দেবতা বিষ্ণুর বাহন। লঙ্কা যুদ্ধে গরুড়ের ভূমিকা আছে। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও মঙ্গোলিয়ার জাতীয় প্রতীকে গরুড় রয়েছে। এই গরুড়ের নামে ইন্দোনেশিয়ার বিমান সংস্থার নাম রাখা হয়েছে। বায়ু (বা পবন, প্রাণ) নামে হিন্দুদের এক দেবতা আছে। তার মানস পুত্র হনুমান। (বায়ু দেবতার আরেক মানস পুত্রের নাম ভীম। সে মহাভারত মহাকাব্যের পঞ্চপাণ্ডব এর একজন)। হনুমানের মা অঞ্জনা ছিল পুঞ্জিকস্থলা নামের এক অপ্সরার মানব রূপ। অপ্সরা হলো মেঘ এবং জল থেকে উদ্ভুদ্ধ নারী আত্মা। দেবতা বায়ু দেবতা শিবের শক্তি এই অঞ্জনার গর্ভে সঞ্চার করলে কিষ্কিন্ধার বানর কেশারির ঔরষে বানর হনুমান জন্ম নেয়। চিরকুমার হনুমান শক্তি, জ্ঞান ও ভক্তির প্রতীক ও এক জন দেবতা। এ জন্য হনুমানকে শিবের অবতারও বলে। রামায়নের পটভূমিতে কিষ্কিন্ধার রাজা ছিল বৃক্ষরাজ ও অরুণার পুত্র বানর বালী। তার ভাই সুগ্রীব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বানরবীর। কিন্তু বালী সুগ্রীবকে নির্বাসনে পাঠায় ও তার স্ত্রী তারাকে বলপূর্বক নিজের রানী করে। রাম সুগ্রীবকে সহায়তা করে। পিছন থেকে তীর ছুড়ে রাম বালীকে হত্যা করে। সুগ্রীব কিষ্কিন্ধা রাজ্য ফিরে পায়। বালীর পুত্রের নাম অঙ্গদ (লক্ষণের এক পুত্রের নামও অঙ্গদ। দু’জন ভিন্ন)। সুগ্রীব অঙ্গদকে যুবরাজের মর্যাদা দিয়েছিল। বানর রাজ্যের আরেক চরিত্র জাম্ববান। রামকে সহায়তা করতে দেবতা ব্রহ্মা তাকে সৃষ্টি করেছিল। তবে জাম্ববান ছিলো ভাল্লুক প্রজাতির। এই জাম্ববানের কন্যা জাম্ববতী (দূর্গা বা পার্বতীর অবতার) শ্রীকৃষ্ণের এক স্ত্রী। রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্যসমূহে প্রবাদপ্রতিম প্রধান পাঁচটি নারী চরিত্র আছে। এদেরকে পঞ্চকন্যা বলে। এর মধ্যে রামায়ণে তিনটি ও মহাভারতে দুটি। রামায়ণের চারটি চরিত্র হলো অহল্যা, মন্দোদরী (রাবণের স্ত্রী) আর এই সুগ্রীবের স্ত্রী তারা (দেবতা বৃহস্পতির স্ত্রীর নামও তারা, তবে ��ুই জন ভিন্ন)। মহাভারতের দুই জন হলো দ্রৌপদী ও কুন্তী। একটু অবাক করার বিষয় এই যে, এই পাঁচ জনের মধ্যে সীতার নাম নেই। (১) এবার লঙ্কার রাক্ষসদের কথা। ব্রহ্মার মানসপুত্রের মধ্যে যে সপ্তর্ষি ছিল তাদের এক জনের নাম পুলস্ত্য। বিশ্রবা মুনি, অগস্ত্য মুনি, রাক্ষস ও কিন্নর (ঘোড়ার মতো মুখ ও মানুষের মতো দেহবিশিষ্ট স্বর্গীয় সুকন্ঠ গায়ক) এই পুলস্ত্যর সন্তান। বিশ্রবার ঔরসে দেববর্ণিনীর (ঋষি ভরদ্বাজের মেয়ে/স্ত্রী) গর্ভে কুবের নামে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। কুবের ছিল ছিলেন ধনৈশ্বর্যের দেবতা৷ বাংলায় এ জন্য ‘কুবেরের ধন’ বাগধারা আছে। বিশ্রবার ঔরসে রাক্ষসী নিকষার (কৈকসী বা কেশিনী) গর্ভে জন্ম নেয় তিন পুত্র ও এক কন্যা। তিন পুত্র রাবণ, কুম্ভকর্ণ ও বিভীষণ। কন্যার নাম শূর্পণখা। রামায়ণ মহাকাব্যে এদের সবারই যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। রাবণের প্রকৃত নাম দশগ্রীব। সে রামায়ণের প্রধান খলনায়ক (বা অ্যান্টাগনিস্ট)। সে ছিল লঙ্কা দ্বীপের রাজা। রাবণের দশ মাথা ও দশ হাত ছিল। সে কখনো নিষ্ঠুর শাসক ছিল না। রাবণ এবং তার ভাই কুম্ভকর্ণ এক সময় দেবতা বিষ্ণুর দ্বাররক্ষক ছিলো। রাবণ ছিল অসামান্য বীণাবাদক, দক্ষ চিকিৎসক ও জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী। চার বেদ এবং ছয় উপনিষদ তার নখদর্পণে ছিল। মাইকেল মদূসুদন দত্ত মেঘনাবধ কাব্য-এ রাবণকে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে চিত্রিত করেছেন। রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীর কথা আগেই বলেছি। সে ছিল অসুরদের রাজা মায়াসুর ও অপ্সরা হেমার কন্যা। রাবণ ও মন্দোদরীর দুই পুত্র- মেঘনাদ (বা ইন্দ্রজিৎ) ও অক্ষয়কুমার। মন্দোদরী চরিত্রের সাথে মহাভারতের গান্ধারী চরিত্রের বেশ মিল। দু’জনই নীতিপরায়ণা, ধর্মপ্রাণা কিন্তু অতিমাত্রায় পতিব্রতা। রাবণের অন্য স্ত্রী ধন্যমালিনীর গর্ভে রাবণের সন্তানরা হলো অতিকায়, নারান্তক ও দেবান্তক। রাবণের আরেক পুত্রের নাম ত্রিশিরা। এ রকমও প্রচলিত আছে যে, সীতা আসলে রাবণ ও মন্দোদরীর কন্যা। রাবণের শ্বশুর মায়াসুর রাবণকে সাবধান করেছিল যে, মন্দোদরীর কোষ্ঠীতে আছে, তার প্রথম সন্তান তার বংশের ধ্বংসের কারণ হবে। তাই এই সন্তানটিকে জন্মমাত্রই হত্যা করতে হবে। মায়াসুরের উপদেশ অগ্রাহ্য করে রাবণ মন্দোদরীর প্রথম সন্তানকে একটি ঝুড়িতে করে জনকের নগরীতে রেখে আসেন। জনক তাকে দেখতে পান এবং সীতারূপে পালন করেন। (২) ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদ সমগ্র মানব, দানব, অন্যান্য সৃষ্টি ও দেব-দেবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বীরযোদ্ধা ছিল। সে ছিল দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য-এর শিষ্য। সে দুইবার রাম ও লক্ষ্মণকে পরাভূত করে। কিন্তু তৃতীয় বারে তার চাচা বিভীষণের সহায়তা�� কারণে লক্ষ্মণ যজ্ঞাগারে উপস্থিত হয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় তাকে বধ করে। মেঘনাদ নাগরাজ শেষনাগের কন্যা সুলোচনাকে বিবাহ করেছিলেন। (মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত মেঘনাদবধ কাব্য-এ মেঘনাদের স্ত্রীর নাম প্রমীলা।) ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ প্রবাদের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। এই প্রবাদের মূলে রয়েছে রাবণের ভাই বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা। রাম ও রাবণের মেঘের অন্তরালে যুদ্ধ চলাকালে রাম রাবণকে চিহ্নিত করতে পারছিল না। তখন বিভীষণ রামকে রাবণ হত্যার উপায় জানিয়ে দিয়েছিল। রাবণ-বধের পর বিভীষণ লঙ্কার সিংহাসনে বসে। সে রাক্ষস নীতি ছেড়ে ধর্মের পথে চলা শুরু করে৷ তার স্ত্রী সরমা ও কন্যা নাম্নী ও ত্রিজটা। রাবণের আরেক ভাইয়ের নাম কুম্ভকর্ণ। সে ধার্মিক, বিচক্ষণ ও অজেয় ছিলো। দেবতা বিষ্ণু কুম্ভকর্ণের প্রতি বেশ সদয় ছিলো। সে তাকে বর চাওয়ার জন্য বললো। কুম্ভকর্ণ ‘ইন্দ্রাসন’ বলতে চেয়েছিলো; কিন্ত দেবতা ইন্দ্রের অনুরোধে দেবী সরস্বতী তার জিহ্বা আড়ষ্ট করে দেয়। ফলে সে ‘নিদ্রাসন’ চেয়েছিলো (অথবা 'নির্দেবত্বম' (দেব নির্বাণ) চাওয়ার বদলে 'নিদ্রাবত্বম' চেয়েছিলো)। সে টানা ছয়মাস যাবৎ ঘুমিয়ে থাকতো এবং ঘুম ভাঙলে হাতের সামনে যা পেত তা-ই খেয়ে ফেলতো। লঙ্কাযুদ্ধে কুম্ভকর্ণ রামের হাতে নিহত হয়। স্ত্রী বজ্রমালার গর্ভে কুম্ভকর্ণের দুই পুত্র- কুম্ভ ও নিকুম্ভ; আর স্ত্রী কর্কটীর গর্ভে এক পুত্র ভীমাসুর। রাবণের এক বোন শূর্পণখা। শূর্পণখা অর্থ ‘কুলার মতো নখ’। সে বিদ্যুজ্জিহ্বা (বা দুষ্টুবুদ্ধি) নামের এক দানবকে বিয়ে করেছিলো। এতে রাবণ তার উপর অখুশী ছিলো। দুষ্টুবুদ্ধি রাবণকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। তবে রাবণ তাকে মেরে ফেলে। শূর্পণখা রাবণের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিধবার জীবন-যাপন শুরু করে। এ সময় সে শাম্ভৃ নামে এক পুত্রসন্তান জন্ম দেন৷ ঘটনাক্রমে শাম্ভৃ লক্ষ্মণের হাতে নিহত হন৷ পঞ্চবটীবনে (বর্তমান মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাশিক জেলাঞ্চল) রাম-লক্ষণকে দেখে শূর্পণখা তাদের প্রেমে পড়ে। রাম ও লক্ষণ দু’জনেই সে প্রেম নাকচ করে দেয়। শূর্পণখা রেগে গিয়ে সীতাকে আঘাত করতে উদ্যত হয়৷ তখন লক্ষ্মণ তার অসি দিয়ে শূর্পণখার নাক-কান কেটে দেয়। লঙ্কায় ফিরে শূর্পণখা সীতাকে বিবাহ করার জন্য রাবণকে প্ররোচিত দেয়। এ সূত্র ধরেই রাবণ সীতাকে অপহরণ করেছিল। রাবণের সীতা হরণের সাথে গ্রিক পুরাণের প্যারিসের হেলেন অপহরণ ঘটনার মিল রয়েছে। দণ্ডকারণ্যে তাতাকা নামে এক রাক্ষসী ছিল। তার দুই সন্তান মারীচ ও সুবাহু ঋষিদের যজ্ঞে বিঘ্ন ঘটাতো। এ দুই জন রাম কর্তৃক নিহত হয়েছিলো। মারীচ সোনার হরিণ সেজে রাবণকে সীতা হরণে সহায়তা করেছিলো। লক্ষণে সাথে এ সোনার হরিণের ঘটনা সূত্রে ��ন্য বাংলায় ‘সোনার হরিণ’ বাগধারা প্রচলিত হয়েছে। মারীচের পুত্রের নাম ছিলো কালনেমি। হনুমানকে মারতে পারলে লঙ্কারাজ্য ভাগ করে নেওয়া যাবে একথা জানতে পেরে কালনেমি হনুমান নিধনের আগেই লঙ্কা ভাগাভাগি করার কল্পনা করেছিল। এ জন্য বাংলায় ‘কালনেমির লঙ্কাভাগ’ বাগধারা প্রচলিত হয়। এর অর্থ কোনো বস্তু লাভ করার আগেই তা উপভোগ করার অলীক কল্পনা। (উল্লেখ্য, হিন্দু পুরাণে কালনেমি নামে আরো একটি চরিত্র আছে। সে হলো অসুররাজ হিরণ্যাক্ষের পুত্র। দেবতা বিষ্ণু তাকে হত্যা করেছিলো।) শবরী ছিল এক শিকারীর (ব্যাধ) কন্যা। নররূপী নারায়ণকে (রাম) দেখার জন্য সে হাজার হাজার বছর মতঙ্গ মুনির আশ্রমে অপেক্ষা করেছিল৷ রামের দেখা পাওয়ার পরে সে মারা যায়। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের সপ্তমী তিথি শবরী জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়। রামায়ণের অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে এক অদ্ভূত চরিত্র মান্ধাতা। মান্ধাতা হলেন সূর্য বংশের এক রাজা যুবনাশ্বের পুত্র। মান্ধাতা মাতৃগর্ভে নয়, পিতৃগর্ভে জন্মেছিল। যুবনাশ্বরের সন্তান ছিল না। তাই সে মুনিদের আশ্রমে গিয়ে যোগ সাধনা শুরু করে। মুনিরা সবাই মিলে যুবনাশ্বর জন্য যজ্ঞ করে কলসি ভর্তি মন্ত্রপূত জল বেদিতে রেখে দিল। এই কলসির জল যুবনাশ্বর স্ত্রী পান করলে গর্ভবর্তী হবে। কিন্তু বিধিবাম! রাতে তীব্র তেষ্টা পেলে যুবনাশ্বর সেই জল পান করে। য��বনাশ্বর গর্ভ লাভ হলো। যুবনাশ্বরের পেটের বাম দিক চিড়ে মান্ধাতাকে বের করা হয়। মান্ধাতা হলেন প্রথম সিজারিয়ান শিশু। মান্ধাতা পৃথিবী জয়ের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু লবনাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে সে নিহত হয়। মান্ধাতার শাসন ছিলো সত্য যুগে। তার পরে দ্বাপর, ত্রেতা যুগ পার হয়ে এখন কলি যুগ। সে জন্য অনেক বছরের আগের কিছু বোঝাতে এখন ‘মান্ধাতার আমল’ বাগধারা ব্যবহৃত হয়। (১) Devika, V.R. (অক্টোবর ২৯, ২০০৬)। "Women of substance: Ahalya"। The Week। 24 (48): 52। (২) Mani, Vettam (১৯৭৫)। Puranic Encyclopaedia: A Comprehensive Dictionary With Special Reference to the Epic and Puranic Literature। Delhi: Motilal Banarsidass। Read the full article
0 notes
Text
রাম- রাবণ যুদ্ধ, সীতার বনবাস ও অগ্নিপরীক্ষাঃ রামায়ণের সহজ কাহিনী
কোশল রাজ্যে ছিল এক রাজা, নাম তার দশরথ। ত��ন রাজ্যের তিন রাজকন্যা ছিল রাজার তিন স্ত্রী- কোশল রাজকন্যা কৌশল্যা, কেকয় রাজকন্যা কৈকেয়ী আর সিংহলের রাজকন্যা সুমিত্রা। তিন তিনটি স্ত্রী থাকলেও কোন সন্তান হচ্ছিল না রাজা দশরথের। মুনির নির্দেশে পুত্র সন্তানের জন্য পুত্রেষ্টি যজ্ঞ আয়োজন করেন রাজা দশরথ। যজ্ঞ থেকে একটা ফল লাভ করেন যজ্ঞের মুনি ঋষ্যশৃঙ্গ, সেই ফল রাজাকে দিয়ে তার পত্নীদের খাওয়াতে বলেন তিনি। সেই মোতাবেক রাজা ফল নিয়ে দুই ভাগ করে তার প্রধান দুই রানী কৌশল্য আর কৈকেয়ীকে খেতে দেন। কিন্তু সুমিত্রাকে পুত্রলাভের ফল দেয়া হল না, দুঃখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাণী। ছোট রাণীর কান্নাকাটি দেখে কৌশল্যার দয়া হয়। নিজের ফল দু'ভাগ করে একভাগ সুমিত্রাকে দেন তিনি। যথাসময়ে কৌশল্যার গর্ভে রাম, কৈকেয়ীর গর্ভে ভরত এবং সুমিত্রার গর্ভে লক্ষ্মণ আর শত্রুঘ্ন নামে দুই যমজ পুত্রের জন্ম হয়। ঠিক সেই সময় রাবণ নামে এক রাক্ষসরাজ প্রচণ্ড প্রতাপে লংকায় রাজত্ব করছিল। ব্রহ্মার বরে অমর হয়েছিল সে। মূলত রাক্ষসরাজকে হত্যার জন্যই কৌশল্যার গর্ভে মানুষ রূপ ধারণ করে জন্ম নিয়েছেন বিষ্ণু। কারণ, ব্রহ্মার বরপ্রাপ্ত রাবণকে খুন করতে পারবে শুধুমাত্র কোন মানুষ। অস্ত্রবিদ্যা ও শাস্ত্রবিদ্যা- উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করে চার রাজকুমার। একবার দশরথের সভায় উপস্থিত হন মুনি বিশ্বামিত্র। ঋষির আশ্রমে উপদ্রবকারী রাক্ষসদের বধ করার জন্য রাজার কাছে সাহায্য চান তিনি। এই কাজের জন্য রামকে নির্বাচন করেন বিশ্বামিত্র। রামের বয়স তখন কেবল ষোলো। ছায়াসঙ্গী লক্ষ্মণকে নিয়ে ঋষির আশ্রমে যায় রাম। দু'জনকেই বিশেষ অস্ত্রশিক্ষা দেন মুনি বিশ্বামিত্র, সেই সাথে নানান অলৌকিক অস্ত্রশস্ত্র প্রদান করেন। সেই শিক্ষা আর অস্ত্র ব্যবহার করেই রাক্ষসদের বধ করতে সক্ষম হয় রাম-লক্ষ্মণ। সেই সময়ে মিথিলার রাজা ছিলেন জনক। পুত্রলাভের আশায় যজ্ঞ করার উদ্দেশে জমিতে লাঙল চালানোর সময়, ঠিক লাঙলের রেখায় একটি শিশুকন্যাকে কুড়িয়ে পান তিনি। কন্যাটিকে ভগবানের দান মনে করে লালন পালন করতে থাকেন রাজা। কন্যার নাম রাখা হয় সীতা। কারণ, সংস্কৃতে লাঙলের কর্ষণ রেখাকে সীতা বলা হয়। কিন্তু এই সীতা হলো বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী। স্বামীর সাথে সাথে পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়েছেন তিনি-ও। কন্যা বিবাহযোগ্যা হলে বিয়ের জন্য স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করেন রাজা জনক। তাকে একটি ধনুক উপহার দিয়েছিলেন শিব। রাজা প্রতিজ্ঞা করেন, যে ব্যক্তি এই ধনুকে গুণ টানতে পারবে, তার সাথেই বিয়ে হবে অপরূপা সীতার। রাম-লক্ষ্মণকে নিয়ে সেই স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হন ঋষি বিশ্বামিত্র। ��েবলমাত্র রামই সেই ধনুকে গুণ পরাতে সক্ষম হয়। এমনকী রাক্ষসরাজ রাবণ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় ওখানে। প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী, মহাসমারোহে রামের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় সীতার। শুধু তাই নয়, দশরথের অন্যান্য পুত্রদের সঙ্গে জনকের অন্যান্য কন্যা এবং ভগিনীকন্যাদের বিয়ে হয়। মিথিলায় বিশাল জাঁকজমকের সাথে উদযাপিত হলো বিয়ের মহা উৎসব। অতঃপর নববিবাহিত চার রাজকুমার তাদের স্ত্রীদের নিয়ে ফিরে আসে অযোধ্যা নগরে। রাম-সীতার বিয়ের বারো বছর পর রামকে যৌবরাজ্যের দায়িত্ব অর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন বৃদ্ধ রাজা দশরথ। কোশল রাজসভায় তার উপস্থাপিত ইচ্ছাকে সমর্থন জানায় সবাই। কিন্তু অভিষেক অনুষ্ঠানের ঠিক আগেরদিন দাসী মন্থরার কুমন্ত্রণায় কৈকেয়ীর ঈর্ষা জেগে উঠে। অতীতে কৈকেয়ীকে দুটি বর দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন রাজা দশরথ। এই সুযোগ কাজে লাগালেন কৈকেয়ী। রাজার কাছে দাবি করলেন রাণী- রামকে চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে পাঠাতে হবে এবং ওর স্থলে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে হবে ভরতকে। প্রতিজ্ঞা রক্ষার জন্য কৈকেয়ীর কথা মেনে নেন রাজা। পিতার আদেশ মেনে নেয় রাম। স্ত্রী সীতা আর ভাই লক্ষ্মণকে সাথে নিয়ে বনবাসে যায় সে। পুত্রের এই হাল সইতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেন শোকে কাতর দশরথ। তখন মাতুলালয় নন্দীগ্রামে ছিল ভরত। পিতার মৃত্যুসংবাদ শুনে অযোধ্যায় ফিরে আসে ও, জানতে পারে মায়ের কুটিল চক্রান্তের কথা। তাই সেই রাজপদ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে সে। রামকে খুঁজতে খুঁজতে বনে উপস্থিত হয় ভরত। ভাইকে অযোধ্যায় ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে ও। কিন্তু পিতার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করতে রাজি হয় না রাম, চোদ্দ বছর শেষ না হলে অযোধ্যায় ফিরে যাবে না বলে জানিয়ে দেয়। তখন রামের খড়ম দুটি চেয়ে নিয়ে আসে ভরত। রাজ্যে ফিরে সেই খড়ম দুটিই সিংহাসনে স্থাপন করে রামের নামে রাজ্যশাসন করতে শুরু করে সে।
পিতার আদেশ মেনে স্ত্রী সীতা আর ভাই লক্ষ্মণকে সাথে নিয়ে বনবাসে যায় রাম এদিকে গোদাবরী নদীর তীরে পঞ্চবটী বনে কুটির তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করে রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ। একদিন সেই বনে ভ্রমণ করতে আসে রাবণের বোন সূর্পণখা, পথিমধ্যে রাম-লক্ষ্মণের সাথে দেখা হয় তার। রাম-লক্ষ্মণকে প্রলুব্ধ করতে সুন্দরী রমণীর ছদ্মবেশ নেয় সূর্পণখা, তবে ব্যর্থ হয়। তখন ক্রোধে অন্ধ হয়ে সীতাকে ভক্ষণ করতে যায় সে। কিন্তু খড়গের আঘাতে সূর্পণখার নাক-কান ছিদ্র করে দেয় লক্ষ্মণ। বোনের দুর্গতির কথা শুনে সৈন্য নিয়ে রাম-লক্ষ্মণকে আক্রমণ করে সূর্পণখার অপর দুই রাক্ষস ভাই খর এবং দুষন। তবে সবাইকে বধ করে রাম। পুরো ঘটনা জানতে পেরে প্রতিশোধ নিতে সীতাকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করে রাবণ। এই কাজে মারীচ নামে এক মায়াবী রাক্ষসের সাহায্য নেয় সে। স্বর্ণমৃগের ছদ্মবেশ ধরে সীতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে মারীচ। স্ত্রীর কথায় হরিণটিকে ধরতে যায় রাম। কিছু্ক্ষণ পর রামের গলা নকল করে আর্তনাদ করে উঠে মায়াবী মারীচ। স্বামীর ক্ষতি হওয়ার আশংকায় লক্ষ্মণকে রামের সন্ধানে যেতে অনুরোধ করে সীতা। লক্ষ্মণ বারবার মনে করিয়ে দেয়- রাম অপরাজেয়, তার কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু সীতার কথায় অবশেষে ভাইয়ের সন্ধানে রওনা হয় লক্ষ্মণ। তবে বধূমাতাকে সতর্ক করে দেয় সে, কুটিরের চারিদিকে কাটা গণ্ডীর বাইরে যেন না যায় সীতা। এমন একটি সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল রাবণ। ঋষির ছদ্মবেশে সীতার কাছে ভিক্ষা চাইতে আসে সে। রাবণের ছলনা না বোঝায়, ভিক্ষা দিতে গণ্ডীর বাইরে চলে যায় সীতা। এই সুযোগে জোর করে সীতাকে রথে তুলে নেয় রাবণ। দূর থেকে সীতার অপহরণ দেখতে পায় শকুন জটায়ু। সীতাকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে ও। কিন্তু রাবণের হাতে গুরুতর আহত হয়ে ভূপাতিত হয় পাখিটি। লংকায় অশোক কানন বনে সীতাকে নজরবন্দী করে রাখে রাবণ, পাহারায় থাকে চেড়ী নামের একদল রাক্ষসী। রামের স্ত্রীর রূপে মুগ্ধ হয়ে ওকে বিয়ে করতে চায় রাক্ষসরাজ। কিন্তু প্রস্তাবটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে পতিভক্ত সীতা। এদিকে জটায়ুর কাছে সীতা-হরণের সংবাদ পায় রাম আর লক্ষ্মণ। সাথে সাথে সীতাকে উদ্ধারের জন্য যাত্রা শুরু করে দু’জন। পথে শবরী নামে এক বৃদ্ধা তপস্বিনী সুগ্রীব আর হনুমানের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেয় তাদের। তাই বানর রাজ্য কিষ্কিন্ধায় যায় রাম-লক্ষ্মণ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বানরবীর হনুমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রাম ও লক্ষ্মণের। কিষ্কিন্ধার নির্বাসিত রাজপদ প্রার্থী সুগ্রীবের অনুগত হনুমান। তাই সুগ্রীবের সঙ্গে মিত্রতা করে রাম। দু’জনে মিলে বালীকে হত্যার পরিকল্পনা করে ওরা। ঠিক করা হয়, যখন বালীকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করবে সুগ্রীব, তখন পিছন থেকে তীর মেরে বালীকে হত্যা করবে রাম। কারণ ইন্দ্রের বরের ফলে বালীকে সামনে থেকে হত্যা করা ছিল অসম্ভব। পরিকল্পনা মতো তাই হলো। মৃতপ্রায় বালী রামকে প্রশ্ন করল, কেন ওকে হত্যা করেছে সে? রাম জবাব দিল, অন্যায়ভাবে সুগ্রীবকে রাজ্যচ্যুত এবং জোর করে ওর স্ত্রী তারাকে নিজের রাণী করেছে বালী। তার ফলেই মৃত্যু হয়েছে ওর। নিজের অন্যায় বুঝতে পারল বালী, রামকে ধন্যবাদ জানিয়ে অবশেষে মৃত্যুবরণ করল। কিষ্কিন্ধার সিংহাসন ফিরে পেল সুগ্রীব। রামের সাহায্যের জন্য সীতার অনুসন্ধানে বানর দল পাঠায় সে। উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিমগামী দলগুলি ব্যর্থ হয়ে ফিরে এল। অঙ্গদ আর হনুমানের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণগামী দলটি খবর পায়, সীতাকে লংকায় বন্দী করে রেখেছে রাবণ। সীতার খোঁজে সেখানে ��পস্থিত হয় হনুমান। বিশাল শরীর ধারণ করে এক লাফে সাগর পার হয়ে এসেছে সে। রাবণের প্রাসাদে গুপ্তচরবৃত্তি করতে শুরু করল ও। অবশেষে অশোকবনে সীতার সন্ধান পায় হনুমান। রাবণের সাথে বিয়েতে রাজি করার জন্য সীতাকে ভয় দেখাচ্ছিল চেড়ীরা। সুযোগমতো, সীতাকে রামের আংটি দিল হনুমান, সেই সাথে তাকে স্বামীর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইল। কিন্তু রাজি হলো না সীতা। বদলে বলল সে, রাম যেন শীঘ্রি রাবণকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে তার অপমানের প্রতিশোধ নেয় এবং তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। অতঃপর লংকায় ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় হনুমান, এমনকী রাবণের বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে পর্যন্ত বধ করে ও। তারপর ধরা দেয় রাবণের লোকদের কাছে। রাজসভায় উপস্থিত হয়ে সীতাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য রাবণকে উপদেশ দেয় হনুমান। কিন্তু তার কথা অবজ্ঞা করে রাবণ, বদলে লেজে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর হনুমান নিজের লেজের আগুনে পুরো লঙ্কাপুরী প্রায় ভস্মীভূত করে ফিরে আসে। কিষ্কিন্ধায় ফিরে রামকে সীতার খবর দেয় অঙ্গদ আর হনুমানের দল। হনুমানের কাছ থেকে সীতার খোঁজ পেয়ে দক্ষিণ সমুদ্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে বানর সেনাবাহিনীসহ রাম-লক্ষ্মণ। সমুদ্রতীর থেকে তাদের সাথে যোগ দেয় রাবণের অনুতপ্ত ভাই বিভীষণ। বানরদের তৈরি সেতু ব্যবহার করে লংকায় প্রবেশ করে রামের দল। লংকায় রাম এবং রাবণের মধ্যে এক বিশাল এক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে হেরে যায় রাবণ, নিহত হয় রামের হাতে। বিভীষণকে লংকার সিংহাসনের দায়িত্ব দিয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে আসে রাম। দীর্ঘদিন রাক্ষসপুরীতে বসবাসকারী সীতার সতীত্ব নিয়ে সন্দেহ জাগে রামের মনে। সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে সতীত্ব প্রমাণ করতে বলে তার স্বামী। স্বামীর সন্দেহ দূর করতে অগ্নিতে প্রবেশ করে সীতা। স্বয়ং অগ্নিদেব আবির্ভূত হয়ে সীতার পবিত্রতার ঘোষণা দেয়। কিছুদিনের মধ্যেই বনবাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। অযোধ্যায় ফিরে আসে রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ। ধুমধাম করে রামের রাজ্যাভিষেক হয়। সীতাকে নিয়ে সুখে সংসার করতে লাগল রাম। এদিকে অগ্নিপরীক্ষিতা হওয়া সত্ত্বেও সীতাকে নিয়ে নানান গুজব ছড়াতে শুরু করে অযোধ্যার মানুষ। তাই বিচলিত হয়ে সীতাকে নির্বাসনে পাঠায় রাম। সন্তানসম্ভবা সীতা আশ্রয় নেয় ঋষি বাল্মীকির আশ্রমে। সেখানেই তার যমজ পুত্রসন্তান লব আর কুশের জন্ম হয়। লব-কুশকে তাদের পিতৃপরিচয় জানানো হয় না। বাল্মীকির কাছ থেকে রামায়ণ গান শেখে ওরা। ইতিমধ্যে রাম অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করলে লব-কুশকে নিয়ে ওখানে উপস্থিত হন বাল্মীকি। সভায় রামায়ণ গান গেয়ে শোনায় লব আর কুশ। সীতার বনবাসের গান শুনে দুঃখিত হয় রাম। তখন সীতাকে রামের সামনে নিয়ে আসেন বাল্মীকি। কিন্তু রাম আবারও সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলায় অপমানিত অনুভব করে সে। মাতা ধরিত্রীকে আহ্বান জানায় সীতা, তিনি এসে সীতাকে নিয়ে পাতালে চলে যান। এরপর রাম জানতে পারে, লব এবং কুশ আসলে তারই সন্তান। পরবর্তীকালে পৃথিবীতে অবতাররূপে তার কাজ শেষ হলে, দুই পুত্রের হাতে শাসনভার ছেড়ে দেয় রাম। সরযূ নদীতে আত্মবিসর্জন দেয় সে, ফিরে আসে দেবালয়ে। লেখকঃ আফরানুল ইসলাম সিয়াম তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, কিশোর রামায়ণ (সেবা প্রকাশনী) Read the full article
1 note
·
View note