সাংবাদিকদের জীবন কথা
শুরুর কথা:
এবারের বই মেলায় প্রায় ৭০ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে বলে খবর এসেছে। মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকার যুগে বাংলাদেশের মানুষ এতো বিপুল পরিমান বই কিনছে সেটা অনেক বড় ব্যাপার!
মেলা থেকে আমি নিজের জন্য একটিই বই কিনেছি। সেটি হল এই সময় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত “অতি সাধারণ এক সাংবাদিকের কথা”। অনেকটা আত্ম-জীবনীমূলক বইটি লিখেছেন সাংবাদিক আলম রায়হান। “অনেকটা আত্মজীবনী লিখেছি এই কারণে যে বইটি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী গ্রন্থ “অর্ধেক জীবন” বা বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী “ এর মতো নয়। হুট করে গল্প করার ছলে সাংবাদিকতার পথে হেঁটে চলার অভিজ্ঞতার কথা বলে গেছেন আলম রায়হান। আবার কোথাও আগের ঘটনার সাথে মিলে যায় এমন বর্তমান ঘটনার কথাও লিখেছেন তিনি। যেমন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া “অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী” এরশাদের সময় গৃহ বন্দী ও গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ২০০৭-২০০৮ সালের “অস্বাভাবিক” তত্ত্বাবধায়ক সরকারের” সময়ে দুই নেত্রীর গ্রেফতারের কথা তুলে ধরেছেন। তাই বইটিতে ঘটনার পর ঘটনা বলে যাওয়ার ব্যপারটি নেই। প্রাসঙ্গিকভাবে সব জায়গায় এসেছে বর্তমান সময়ের কথাও।
মানুষের যাপিত জীবনটাই কথামালা দিয়ে সাজানো। সেখানে থাকে নানা উত্থান-পতন, সুখ ও কষ্টের গল্প। কিন্তু সাংবাদিকের জীবন শুধু আপন জীবনের গল্প অবর্তিত হয় না। কারণ একজন সাংবাদিকের বিভিন্ন অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সাথে নিবিড় যোগাযোগ থাকে। তাই সাংবাদিকও দৃশ্যমান ঘটনার পাশাপাশি অদৃশ্য বহু ঘটনার নিরব স্বাক্ষী হয়ে যান। বইটিতে তেমন বহু ঘটনা ও ব্যক্তির রাজনৈতিক চরিত্র খুঁজে পাওয়া যাবে।
স্বাধীনতার প্রথম দশকের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদের চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। কারো কারো হাঁড়ির খবরের কিছুটা তুলে ধরেছেন এক সময়ের জনপ্রিয়“ সাপ্তাহিক সুগন্ধা” ‘র সম্পাদক। যিনি গেদু চাচার খোলা চিঠি লিখে পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
বইটির লেখক অভিনবভাবে উদাহরণ দিয়ে তাঁর চোখে দেখা বিষয়গুলো নিয়ে গল্প করেছেন। ছাত্র জীবনে “বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের রাজনীতির বিভ্রান্তিতে” জড়িয়ে যাওয়া আলম রায়হান জেনারেল জিয়ার সাথে কর্ণেল তাহের ৭ নভেম্বের কেন্দ্রীক অভ্যত্থানের ঘটনাকে “জাসদের আত্মহননের প্রেম” বলে উল্লেখ করেছেন। এতো সংক্ষেপে জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল ও কর্ণেল তাহেরের ফাঁসির কথা অনেকেরই হয়ত পড়া হয়নি। আবার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, “অতি বিপ্লবী হিসেবে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে জাসদে আশ্রয় নিয়েছিলো স্বাধীনতা বিরোধীরা”। স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুর্নবাসনের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে “উদার জমিনের স্বর্ণদ্বার খুলে দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া”।
বই পড়ার সময় মনে হবে, কোনো এক দারুণ গল্পবাজ মানুষ আপনার পাশে বসে গল্প করে যাচ্ছে। আর আপনি তা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেই যাচ্ছেন। ৩৮ বছর আগের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিএফপিকে “দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত সংস্থা” (পৃষ্টা-১৬) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পত্রিকার সার্কুলেশন অনুযায়ী সরকারী বিজ্ঞাপনের মূল্য নির্ধারণ করা হয়। যে সব পত্রিকা ৫০০ কপি ছাপানো হয় এমন পত্রিকাকে সার্টিফিকেট দেয়া হতো হয় ৫০,০০০। কিংবা ১৫০০ ছাপানো হতো এমন পত্রিকাকে ১৫০০ এরপর দুইটি শূণ্য বসিয়ে দেড় লাখ ছাপানো হচ্ছে বলে প্রতিবেদন দেয়া হতো। সেই কথাই তুলে ধরেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বহু রাজনীতিকের সাথে যোগাযোগ ছিলে আলম রায়হানের। অনেকের সাথে পরিবারের সদস্যদের মতো উঠা-বসা ছিলো তাঁর। এমনটা এখন হয়ত দেখাই যায় না। কারণ সাংবাদিদের গায়ে দলীয় সীল পড়ে গেছে। কিংবা দলীয় সিল মেরে নিতে হয়। নয়ত চলা যায় না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, শেখ রেহেনা, কমরেড তোহাসহ বহু রাজনীতিকের স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন তিনি। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুর “নেপথ্য খুনী” খোন্দকার মোস্তাকও আছেন। খন্দকার মোস্তাককে এক প্রশ্ন করে চাকুরীতে দূর্বল হয়েছিলেন তিনি। “ যেটাকে “মোস্তাকের পালক সম ধাক্কা” হিসেবে মনে করেছেন লেখক।
স্বাক্ষাতকার পাওয়ার কৌশল
১. অনাগত সাংবাদিকদের জন্য বইটি অবশ্য পাঠ্য হতে পারে নানা দিক বিবেচনায়। পাওয়া যাবে সংবাদ পত্র ও সাংবাদিকের জীবন যাত্রারা হিসেব-নিকেষ। রাজনীতিকদের ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। যেমন বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ রেহেনাকে “ইন্টারভিও না পেলে চাকুরী চলে যাবে” এমন কথা বলে মনস্তাত্ত্বিকভাবে দূর্বল করেন। পরে “রাজনৈতিক প্রশ্ন না করার শর্তে” ইন্টারভিও পেয়েছিলেন। অবশ্য সে কথা রাখেনি। সাংবিদকরা যা সব সময়ই করে!
২. স্বৈরশাসক এরশাদ এর সময় বিবিসির সাংবাদিক আতাউস সামাদকে গ্রেফতার করা হয় ১৯৮৭ সালের নভেম্বরে। পুলিশ হেফাজতে থাকা আতাউস সামাদের ইন্টারভিও নেয়ার এ্যাসাইনমেন্ট দেন সম্পাদক। পিজি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসাপাতালের করিডোরে দাঁড়ানো কয়েকজন পুলিশকে দেখার পর “এমন একটা ভাব নিলাম যেন আমি কোনো সংস্থার লোক, বললাম সব ঠিক আছে! কাউকে ঢুকতে দেবেন না। এই বলে আমি করিডোরে ঢুকে পড়লাম। আর দরজায় বসা দুই পুলিশের দিকে অর্থপূর্ণ লুক দিয়ে রুমে ঢুকে পড়লাম”।
৩. এরশাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট সংবাদ মাধ্যম বিমুখ বিচারপতি নূরুল ইসলামের স্বাক্ষাতকার পাওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন তাঁরই স্ত্রী কে। “খোঁজ খবর নিলাম ভাইস প্রেসিডেন্ট এর পরিবারের কে কি করে। জানা গেলো তার স্ত্রী জাহানারা আরজু কবি। “ আগে ফোন না করে ভাইস প্রেসিডেন্ট অফিসে থাকাকালে দুপুরে গিয়ে হাজির হলাম তাঁর ওয়ারীর বাসায়। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দেখা করতে চাইলাম কবি জাহানারা আরজুর সাথে”। এভাবেই ভাইস প্রেসিডেন্ট এর ইন্টারভিও নিয়ে স্বার্থ উদ্ধার করেছিলেন।
হতাশা ভরা সাংবাদিকদের জীবন
আরো দুইযুগ পরে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা নিয়ে হয়ত গবেষণা হতে পারে। বহু স্বপ্ন নিয়ে আসা তরুণরা কে সাংবাদিকতা পেশায় স্থায়ী হতে পারছে না? হতাশা মাথায় নিয়ে কেন চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়? আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হয়ে শেখ হাসিনার দেশে ফেরেন ১৯৮১ সালে। ওই বছরই ৩০০ টাকা বেতনে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন লেখক। এক যুগ পর সাপ্তাহিক সুগন্ধায় বেতন পেতেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। সে সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো সাপ্তাহিকটি। এক সময়ে সফলতার শিখরে আহরণ করা একজন সাংবাদিক; এখন ভালো কোনো পত্রিকা বা টেলিভিশনে জায়গা করে নিতে পারছেন না। তাই “ফ্রীল্যান্স হিসবে লিখা-লিখি” করছেন তিনি। পত্রিকা ও টেলিভিশনে খ্যাতনামা বহু সাংবাদিক তাঁর সহকর্মী ও অধীনে থেকে কাজ করেছেন। প্রথম জীবনে আমিসহ অনেকেই তিনি গড়ে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তবুও মিডিয়া নিয়ে নিদারুণ ভাবে বলেছেন, “ মিডিয়ার সবখানেই নিয়ন্ত্রণ রেখার নেতৃত্বে অসীনরা…. এক সময় আমার জুনিয়র, অনুকম্পাপ্রাপ্ত অথবা তাদের মুরুব্বিরা। এরা আমাকে সম্মান করেন, ভালোওবাসেন কিন্তু পাশে, অথবা উপরে বা নিচে বসানোর অব্যক্ত আবেদন নীরবে এড়িয়ে গেছেন অনেকে। এটিই বাস্তবতা”।
আবার লিখেছেন, “চাকুরী পাওয়ার সুযোগ কমতে কমতে খুবই শীর্ণ হয়ে গেছে দখল আর দূষণে মৃত প্রায় নদীর মতো”। এর মধ্যে দিয়ে বইটি “অতি সাধারণ এক সাংবাদিকের জীবন কথা” থাকেনি। হয়ে গেছে সাংবাদিকদের জীবন কথা। আমরা জানি এটা শুধু আলম রায়হানের অভিজ্ঞতাই নয়, বহু সাংবাদিকের “জীবন থেকে নেয়া” প্রতিচ্ছবিই একেঁছেন এই লিখার যাদুকর।
বহু মামলা ও জেলে দুইবার
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই সরকারের সময়ই তার জেলা যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো। প্রথমবার ঢাকার মেয়র মির্জা আব্বাসের মানহানির মামলায় জেলে গিয়েছিলেন। তবে মির্জা আব্বাসের মামলায় উপযাচিত হয়ে জামিন করিয়ে দিয়েছিলেন এখনকার খাদ্য মন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। এ জন্য “হাতাহাতির মতো অবস্থা করেও” টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়াকে বলেছেন, “অদ্ভত অভিজ্ঞতা”। আর আওয়ামী লীগের সময় জেলে ছিলেন ১৭ দিন।
কোথায় হারিয়ে গেলো সাপ্তাহিক পত্রিকা?
সাপ্তাহিক জনকথা, জনতার ডাক, ঝরনা, রিপোর্টার, সন্দ্বীপ, ফসল, সুগন্ধা, সুগন্ধা কাগজ ও বহু দৈনিক পত্রিকার বের হতো স্বাধীনতার দ্বিতৃীয় দশক। এরমধ্যে বহু দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা বাজারে আর দেখাই যায় না। কেন এতো পত্রিকার বের করা হতো? এসব পত্রিকায় অর্থায়ন কারা করতো? কেন করা হতো? এসব হতে পারে একটা গবেষণার বিষয়। তবুও তিনি নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছেন মিডিয়ার অর্থায়নের কর্দয সেই দিক। “প্রচলিত সরল পথে হেঁটে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখা প্রায় ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। ফলে ঝলমলে সাফল্যের ভিত্তি হিসেবে থাকে কুৎসিত ক্লেদ”। তবে দৈনিক পত্রিকাগুলো “গরু কিনলে বাছুর ফ্র মতো বালখিল্য প্রবনতায় আক্রান্ত হয়ে” পত্রিকাগুলো প্রতি সপ্তাহে একটি ম্যাগাজিন দেয়াকে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকার হারিয়ে যাওয়ার পেছেন দায়ী করেছেন তিনি। সাথে যোগ করেছেন “উপযুক্ত লোকবলের আকাল”কে।
৭৫ এর খুনী চক্রের অর্থায়নে মিডিয়া
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই থেমে ছিলো না খুনী চক্র। চালিয়ে গেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণা। সেজন্য হাতিয়ার হিসেবে বের করেছে পত্রিকা। দৈনিক মিল্লাতের সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ ফারুক সাপ্তাহিক জনকথায় “নিম্ন মানের আওয়ামী বিরোধী বিষোদগারে ভরপুর” লিখা পাঠাতো। যা জনকথার সম্পাদক “আমাদের লোক; জোড়াতালি দিয়ে” ছাপানোর নির্দশে দিতেন। দাপুটে সব রাজনৈতিক নিউজ করার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পাদকের আস্থা অর্জন করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর “নেপথ্য খুনী মোস্তাকে” এক প্র্রশ্ন করার পর চাকুরী বাঁচিয়ে রাখার হুমকীতে পড়ে যান তিনি। তখনই জানতে পারেন, “পত্রিকার যে পলিসি তাতে খোন্দকার মোস্তাক বা ফারুক-রশিদের বিষয়ে নেগিটিভ ধারণা পোষণ করা যাবে না।“ পরে জেনেছেন পত্রিকাটি চলে খুনী ফারুক-রশিদের টাকায়। এ কথা শুনার পরই সাথে সাথে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনীচক্র মুখোশ হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন আমেনা বেগমকে”। প্রতি সপ্তাহে পত্রিকা বের হওয়ার দুই দিন আগে ফারুক-রশিদের দেয়া চেক আমেনা বেগমের বাসা থেকে নিয়ে আসতেন সম্পাদক। “ আমেনা বেগম ছিলেন ফারুক-রশিদের ক্যাশিয়ার”।
সাপ্তাহিক জনকথা, সাপ্তাহিক মিল্লাত ও সাপ্তাহিক ঝর্ণাসহ বহু পত্রিকায় পৃষপোষকতা করেছিলো ৭৫ এর খুনী চক্র। যা জানা যায় বইটি থেকে। এখনো মিডিয়া ও অনলাইনে দেশ বিরোধী প্রচারণায় ৭৫ এর খুনী চক্র ও যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরাধীকারীরা টাকা ঢালছে বলেই আমার মনে হয়।
নেতাদের একি কদর্য চেহারা!
সেই খুনী চক্���ের সাথে গোপনে নিবিড় যোগাযোগ দেখেছেন এক সময়ের জাসদ পরে আওয়ামী লীগ আর এখন নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার সাথে। “কর্তৃপক্ষের নির্দেশে” পত্রিকার সিডিউল পিছিয়ে দিয়ে “মান্নার দেয়া ৭৫ মিনিটের বক্তব্যকে লীড করে” প্রত্রিকা প্রকাশ করা হয়।
বিএনপি নেতা জয়নুল আবেদীন ফারুক, আসাদুজ্জামান রিপনসহ অনেকের বিভিন্ন সময়ে নিচে নামার চাক্ষুষ বর্ণনা পাওয়া যাবে বইটিতে।
শেষের কথা
“শেষ হইয়াও হইলো না শেষ” এমন করেই লিখাটা শেষ হয়ে গেছে। যাদিও “প্রথম খন্ডের সমাপ্তি” বলা হয়েছে। পুরো বইটিতে কোনো পরিচ্ছদ নেই। পড়তে গিয়ে এটাকে এক ধরণের অসুবিধা বলে মনে হয়েছে আমার। যত ভালো গল্পই হোক টানা নিশ্চয়ই পড়া যায় না। আগেই বলেছি নিজেস্ব ঢং এ লিখা হয়েছে বইটি। তবে বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে যাদের সামগ্রিক একটা ধারণা, আছে তাদের কাছে বইটি পড়তে অনেক বেশি ভালো লাগবে। হয়ত মনে হবে, অনেক কিছুই জানা গেলো বইটি থেকে, যা অন্য কোনো বই এ নেই। একজন মানুষের সাংবাদিকতা পেশায় আসা থেকে শুরু করে এই পেশার উত্থান- পতনের নানা দিক বুঝা যাবে বইটি থেকে। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখা বইটিতে অভিনবভাবে উপমা ব্যবহার করা হয়েছে, তাই সহজেই বইটিতে ডুবে যাওয়া যায়। যা লেখকের অন্যতম গুণ বলেই আমার মনে হয়েছে।
0 notes
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক
Kawsar Jahan Shimo
April 22, 2016 ·
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১ম পাতা )
রচয়িতাঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ-২১/০৪/২০১৬
রেহেনা আক্তার । বয়স চব্বিশ বছর । বিবাহ হয়েছে মাত্র এক মাস হলো ।নতুন বিবাহ ,
এর পাশাপাশি সে একটা ছোট চাকরি করে থাকে । জন স্বাস্থ্য উন্নয়ন সোসাইটিতে ।স্বল্প
বেতনের চাকুরী ।বিবাহের পরে তার এ চাকুরীটা এখন ও বহাল আছে । এখনো ছাড়েনি ।
আজকে ফেব্রুয়ারী মাসের পাঁচ তারিখ ।সে এসেছে অফিসে মাসিক রিপোর্ট জমা দেওয়ার
জন্য। অফিসে প্রবেশ করতেই সে দেখলো যে তার বান্ধবী তামান্না ও বসে আছে । সে মুহুরীগঞ্জ শাখায় কাজ করে ।
হাস্যোস্পদ মুখে সে রেহেনাকে দেখে বললো ,' কি ব্যাপার রেহেনা , তুমি এত ধীরে ধীরে হাঁটছ ,
তোমার নতুন বিয়ে হয়েছে ।তোমার মনে তো এখন স্ফূর্তি থাকার কথা ' ।
রেহেনা তার বান্ধবী তামান্নার কথা শুনে ফিক করে এক গাল হাসলো ।
তার পর বিষন্ন দৃষ্টিতে বান্ধবীর মুখপানে চেয়ে বললো , 'বিয়ে হলে মানুষ বুঝি সুখে
থাকে ' ?
তামান্না বিস্মিত হলো রেহেনার কথা শুনে । সে রেহেনার মুখের অবয়বে ভালো করে
তাকিয়ে দেখলো , সে মাথাটা ও ভালো করে আঁচড়ায়নি । সে পুনরায় বললো , ' তুমি এত অগোছালো কেন ' ?
সে রেহেনার হতাশাগ্রস্থ মুখপানে চেয়ে বললো , ' কেন ? আমাদের আশেপাশে যত জনের
বিয়ে হয়েছে সবাইকে বিবাহের পরে তো অনেক আনন্দে থাকতে দেখলাম ' ।
রেহেনা জানালার দিকে অফিসের সামনে লাগানো গাছ - গাছালি , সাজানো বাগানের দিকে উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ।
Kawsar Jahan Shimo
April 22, 2016 ·
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (২য় পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ২২/০৪/২০১৬
উদাসীন ভাবে তাকিয়ে থেকে রেহেনা বললো ,' সবার জীবন তো আর এক রকম হয় না ।
হয়ত কেউ কেঊ ভালো থাকে , আর কেঊ কেঊ ভালো থা��ে না ' ।
রেহেনার কথা শুনে আশ্চ র্য হয়ে গেল তামান্না ।
তামান্না বিপরীত দিক থেকে প্রশ্ন করলো , ' কেন , তুমি ভালো নেই ' ?
রেহেনা দীর্ঘ নি;শ্বাস ফেলে বললো , ' নাহ , ভালো নেই । ঐ যে , রেহেনা একটা আংগুল
উপরের দিকে বক্ররেখার মতো করে নির্দেশ করলো , ' ঐ যে যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে , তিনি জানি কেমন ' ?
তামান্না পুনরায় প্রশ্ন করলো , ' কেমন প্রকৃতির বুঝলাম না তো -
রেহেনা বললো , ' এই ধর , বিয়ের পর থেকে অফিসে আসতে দিতে চাছে না । মানে আসার
ব্যপারে উনি আমার সাথে সম্মত হয় না । এটা আমার জন্য কতটা কষ্টদায়ক , একবার
তুই ভাবতে পারিস । আর একটা কথা , প্রতিদিন দশ বার করে বলতেছে চাকরি ছেড়ে দিতে । এই রকম ছোট চাকরি করার দরকার নেই ' ।
রেহেনার কথা শুনে তামান্না ভীষন রকম চিন্তিত হলো । কিন্তু , তাকে কি পরাম র্শ
দিবে সেটা সে ভেবে পেল না ।
খানিকটা মুহূর্ত চুপচাপ থেকে সে বললো , ' তোমার আম্মুকে তোমার বরের সাথে কথা
বলতে বল '
রেহেনাতো সামনে পড়ে থাকা ডেস্ক টেবিলের উপর উপর মাথাটা ঠুঁকে ঠুঁকে আছাড় খেতে
থাকে , শোকে কষ্টে তার হৃদয় বিদীর্ণ হতে লাগলো
Kawsar Jahan Shimo
April 24, 2016 ·
গল্পের নামঃ- সম্প র্ক (৩য় পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ-২৩/০৪/২০১৬
রেহেনা তামান্নার দিকে তাকিয়ে বললো ,'তুই বলছিস মায়ের সাথে সাক্ষাত করাতে । সে তো আমার মায়ের নাম পর্যন্ত শুনতে পারে না । আমার মাকে অভিহিত করে বেশ্যা বলে -
শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পর মায়ের কাছে দুইবার মোবাইল করেছি , প্রত্যেকবার আমার হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়েছে । বার বার আমাকে শাসিয়েছে সে যেভাবে বলে সেভাবে যাতে চলি ' ।
কথা গুলো বলে রেহেনা দীর্ঘ নি;শ্বাস ফেললো ।
রেহেনার কথা শুনে তামান্না দুঃখ পেল । সে ভীষন কষ্ট পেল রেহেনার বিবাহের পরের
জীবন্টা উপলদ্ধি করে ।
রেহেনা আর তামান্নার বন্ধুত্ব প্রায় চার বছরের সম্পর্ক । রেহেনার ্কষ্ট তার নিজের
কষ্ট বলে মনে হয় অথচ সে কোন সমাধান দিতে পারছে না রেহেনার দু;খ লাঘবের জন্য ।
Kawsar Jahan Shimo
April 25, 2016 ·
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (৪র্থ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ-২৪/০৪/২০১৬
অযাচিত যন্ত্রনা নিয়ে রেহেনা আর তামান্না মাসিক রিপোর্ট গুলো অফিসে জমা দিলো ।
তারা অফিস থেকে বের হলো ।
রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় তামান্না জিজ্ঞাসা করলো , ' তোমার শ্বশুরবাড়ির বাকী সবাই কেমন ? শ্বাশুড়ী - ননদ এদের সাথে তোমার সা্মঞ্জস্য হছে কিনা -
কতগুলো অফিসের সামনের রাস্তা দিয়ে তারা হেঁটে যাচ্ছিল ।
শ্বশুর - শ্বাশুড়ী , ননদ এদের আচার - আচরণের কথা বলতে পারলো না রেহেনা । এতবিধ সমস্যার কথা তার বান্ধবীর কাছে বলে নিজেকে আর নীচ করতে চাইলো না ।
তার পর ও মুখ ফসকে বলে ফেললো , ' সাত দিনের মাথায় আমি যে পুনরায় শ্বশুরবাড়িতে গেলাম তখন বেশি পরিমাণ ফিরতি নাস্তা পিঠা -পুলি দেয় নাই , বিয়ের
সময় সামিয়ানার মধ্যে আমার বর ভালো নজর পায় নি , এক মাস হয়ে গেল ঘরের মধ্যে Furniture এসে পোঁছে নাই এই সমস্ত বিষয় নিয়ে ননদেরা কথা শুনায় ।
আর , আমার শ্বাশুড়ী বলে , বউ চালাক - চতুর না । বাইরে থেকে কোন মেহমান আসলে বাড়ির বউয়ের আচরণগত বিষয় নিয়ে ঢাক -ঢোল পিটায় ।আমার মাকে শুনিয়ে
শুনিয়ে কথা শুনায় ' ।
আর সে দিন ও আমার শ্বাশুড়ীর ভালো - মন্দ জানার জন্য মোবাইল করেছে । আর ,
তখনি আমার শ্বাশুড়ী সুযোগ পেয়ে এক চোট নিয়েছে । এই যেমন;- আমি ঘুম থেকে দেরীতে উঠি । ধর্ম- কর্মে আগ্রহ নাই , বাড়িতে অতিথি এলে অভদ্রতার লক্ষণ প্রকাশ
করি । যেমনঃ- সালাম করি না , সাংসারিক কাজে দক্ষ না , আর রান্না- বান্নায় তো
গদাই - লস্কারি –
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক ( ৫ম পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ-২৬/০৪/২০১৬
সে যাক গে , তামান্না , তুমি আমার এত সব সমস্যার কথা শুনেই বা কী করবে ? এসব
থাক , আমার মন ধবংস হুওয়ার পথে ।
কিছুক্ষনের জন্য সে থামলো । তারা রাস্তার এক বাঁক ঘেষে হাঁটছিল । আর , পাশ ঘেঁষে
পথচারী আর রিকশা যাতায়াত করছিল ।
তামান্না রেহেনাকে জিজ্ঞাসা করলো , ' রেহেনা , তুমি কি এখন তোমার বাবার বাসায় যাবে ' ।
রেহেনা বিষন্ন চিত্তে অপ্রতিভ হয়ে বললো , ' আমার স্বামী তো আমাকে যাওয়ার জন্য নিষেধ করেছে । তারপর ও আমি শুনেছি আমার মায়ের শরীর টা ভালো নেই । মাকে একবার দেখে যেতে ইচ্ছে করছে । বাবার বাসায় কিছুক্ষন থেকে তারপর শ্বশুরবাড়িতে চলে যাবো ' ।
ডাকবাংলা রোড় সড়কে আস্ তে অনেক রিকশা তারা দেখতে পেল । একটা রিকশাকে
রেহেনা ডাকলো । তামান্নাকে বিদায় সম্ভাষন জানিয়ে রেহেনা রিকশায় উঠলো ।
Top of Form
সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬
সম্পর্ক ( ষষ্ঠ পাতা )
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক ( ষষ্ঠ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ-২৭/০৬/২০১৬
রেহেনা রিকশায় চড়ে বাড়ীর সামনে এসে হাজির হলো । সে রিকশা থেকে নামলো -
রিকশা ওয়ালা জিজ্ঞাসা করলো , " আপা , বাড়িটা কি আপনাদের ?"
রেহেনা তার হাতে ঝুঁলিয়ে রাখা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে দশ টাকার একটা নোট বের করলো , রেহেনা দেখলো , " এই রিকশা
ওয়ালা লোকগুলো বিনা প্রয়োজনে আগ বাড়িয়ে কথা বলে ।
রেহেনা লোকটির সাথে তেমন কিছুই বললো না । কেবলমাত্র " হুঁ " বলে একটা শব্দ করলো ।
রেহেনা বললো , " ধরেন , ১০ টাকা রিকশা ভাড়া ।"
রেহেনা ১০ টাকা রিকশাওয়ালা্র দিকে এগিয়ে দিলো ।
রিকশা ওয়ালা বললো , " আপা , ভাড়া তো পনের টাকা । এটা Rate ভাড়া ।"
রিকশাড্রাইভার ভাড়া নিলো না । আর ও পাঁচ টাকা ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো ।
রেহেনা রিকশা ওয়ালা লোকটার উপর ভীষণ বি্রক্ত হলো ।
অগত্যা সে আর ও পাঁচ টাকা তার হাতের উপর ছুঁড়ে দিয়ে হনহন করে চলে গেল ।
সিঁড়ি দিয়ে হনহন করে এগিয়ে চলে সে উপরে উঠে গেল ।
ঘরে প্রবেশ করে সে দেখতে পেল তার মা রুটি তৈরি করছে । এই সকাল এগারটায় মা রুটি বানাচ্ছে । সে রীতিমত আশ্চ্র র্য হয়ে গেল ।
সে তার হাতে ঝুলন্ত ব্যাগটা টেবিলের এক কোণে রেখে মাকে সালাম করতে গেল ।
মা সালমা বানু মেয়ে রেহেনাকে এই সকালে দেখতে পেয়ে ভীষণ খুশী হলো ।কিন্তু, চিন্তিত হলো মেয়ের
মুখ খানা দেখে । সুন্দর , সুশ্রী মুখটা এই কয়দিনে কেমন মলিন , শুকনো , কুতসিত হয়ে গেল । অজানা এক আশঙ্কায়
তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো ।
চিন্তিত মুখে মা বললো , " কিরে রেহেনা , তুই এত শুকিয়ে গেছিস কেন ? "
রেহেনা এই প্রশ্নের বিপরীতে কোন কথা বলতে পারলো না ।
তার মা কী বুঝলো কে জানে , মেয়ের জন্য চিন্তিত হয়ে তার দু' চোখে পানি চলে এলো ।
রেহেনা দেখলো যে তার মা আবেগতাড়িত হয়ে আরেক কান্ড বাঁধিয়ে বসছে ।
রেহেনা প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে মাকে এক পাশে সরিয়ে দিয়ে বললো , " মা , সর তো , আমি তোমার রুটিগুলো তৈরি করে দিচ্ছি ।
মা এক বুক ক ষ্ট পেয়ে বললো , " কী করবো মা , সকাল থেকে কাজের বুয়াটা আসেনি । সেইজন্য তোর আব্বুর খাবার
দাবার তৈরি করতে আমার অনেক ্ ক ষ্ট হয়ে যাচ্ছিল ।"
রেহেনা দেখলো যে , বাস্তবিকই সত্যি কথা , তার মায়ের ক ষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে । এই জন্য রেহেনা নিজে থেকে কাজগুলো
করে দিতে লাগলো ।
প্রথমে রেহেনা খুব সুন্দর মসৃণ করে রুটিগুলো গড়িয়ে দিলো । রেহেনা রুটি বেলছিল আর মা য়ের সাথে কথা বলছিল -
তার মা তাকে জিজ্ঞাসা করলো ," হ্যাঁ রে রেহেনা , তোর শ্বাশুড়ী কেমন আছে ।"
রেহেনা কিয়তক্ষ্ণ থামলো , তারপর ধীরে ধীরে বললো , " আছে তো ভালোই ।"
সম্পর্ক (৭ম পাতা )
গল্পের নাম ঃ- সম্পর্ক ( ৭ম পাতা )
রচয়িতা ঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ২০/০৭/২০১৬
সে আসলে ম ন্দ কোন কথা বলতে পারলো না ।তার মুখ দিয়ে কোন কথা ফুটলো না ।
সে মনে মনে ভাবছিল , এত কথা মাকে যদি বলে তাহলে মায়ের টেনশন বৃদ্ধি পেয়ে স্ট্রোক করার সম্ভাবনা আছে ।
সে জন্য সে কোন গোপন কথা প্রকাশিত করতে পারলো না ।
সে কথা বলতে বলতে রুটিগুলো দ্রুত তৈরি করে দিলো । রুটি বানানো শেষ হলে সে একটি থালায় ভরে সেগুলো নিয়ে
সেঁকতে চলে গেল গ্যাসের চুলোর ওখানে ।
তার মা ডাইনিং টেবিলের ওখানে একটি চেয়ার পেতে বসে আছে । ওখান থেকে বললো , " হ্যাঁরে , রানু , তুই কি আজকে থাকবি না ?"
রেহেনা বলল , " না মা , আমি তো এখানে থাকবো এ কথা বাড়িতে বলি আসি নাই । তোমাদের জামাইয়ে তো জানে না ।
সেইজন্য আমাকে কিছুক্ষন পরে চলে যেতে হবে ।"
রেহেনার মা সালমা বানু বলল ," তাহলে তুই মোবাইল করে বলে দেয় না জামাইকে যে তুই এখানে থাকবি ।"
রেহেনা রুটি সেঁকতে বললো ," আমার শ্বাশুড়ী অসূস্থ । উনি একা একা অনেক কাজ করতে পারে না , এই জন্য এখন থাকতে পারবো না । আর , সব চাইতে বড় কথা হলো আমি বাড়িতে বলে আসি নাই । সেই জন্য আমাকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে ।
সালমা বানু মেয়ের কথা শুনছিল আর ক্ষনে ক্ষনে দীর্গশ্বাস ফেলছিল ।
রেহেনা মাকে জিজ্ঞাসা করলো , " মা , বাবা কি এখনো সামনের রুমে শুয়ে আছে ?"
সালমা বানু বললো , " তোর বাবা বিছানা থেকে উঠে আর কী করবে ? শুধু শুধু আমার কাজ বাড়ায় ।"
সালমা বানু মেয়েকে বললো , " রানু , তুই এক কাজ কর , রুটিগুলো হয়ে গেলে তোর বাপকে রুটি আর তরকারীটা দিয়ে আয় ।"
রেহেনা রুটি সেঁকতে সেঁকতে হঠাত করে অমনোযোগী হয়ে পড়লো । একটা রুটি পোড়া গেল । রুটির এক পিঠে কালচে
দাগ হয়ে গেছে । সেটা সে এক পাশে নামিয়ে রাখলো । রেহেনা বাকী রুটিগুলো দ্রুততার সাথে সেঁকে নামালো ।
সে ট্রেতে ভরে পাঁচ / ছয়টি রুটি আর এক বাটি তরকারি নিয়ে বাপের কাছে ছুটে চললো ।
তার বাবা আমিনুল হক সবেমাত্র বিছানায় উঠে বসলো । মশারিটা গুটাচ্ছে । রেহেনা ট্রে - টা টেবিলে রেখে বাবাকে বললো , " আব্বা , আপনি কেমন আছেন ? আমি তো কিছুক্ষণ পূর্বে এলাম , কিন্তু আপনি ঘুমাচ্ছিলেন বিধায় আপনাকে
জাগাতে আসিনি ।"
এই সময়ে পিতা মেয়েকে দেখতে পেয়ে দ্বিধাগ্রস্থ মনে হলো ।
আমিনুল হকের দীর্ঘদিনের অভ্যাস । ঘুম থেকে উঠার সাথে সাথে এক দলা থুথু আওড়াতে থাকে । দীর্ঘক্ষন এ রকম করতে করতে সকলের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন । কেউ কেউ বিরক্ত হচ্ছে কি হচ্ছে না সেই দিকে তার খেয়াল নেই ।
আজকে ও সেই রকম করতে লাগলেন । পিতা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কন্যাকে প্রশ্ন করলেন , " তুমি একা একা এলে যে ,
মঈন কোথায় ? "
মঈন হচ্ছে রেহেনার স্বামী । রেহেনা বাবার কথা শুনে আশ্চার্যান্বিত হলো । তার বাবাকে দেখে মনে হলো , অসময়ে মেয়ে বাপের বাড়িতে আসাতে বাবা খুশী হয় নি ।"
রেহেনা ওই বিষয়ে কোন কথা না বলে শুধু বাবাকে বললো , " বাবা আপনার জন্য রুটি আর তরকারী নিয়ে এলাম । খেয়ে নেন ।"
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক ( ৮ ম পাতা )
লেখকঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ১৮/০৮/২০১৬
রেহেনাকে তার বাবা প্রশ্ন করলো , " তুমি একা এলে যে রেহেনা , মঈন এলো না যে -
রেহেনা ভাবলো যে , তার বাবা " জামাই এলো না কেন ? " "জামাই এলো না কেন ? " এই প্রশ্ন করে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে । অথচ সে কোন উত্তর দিতে পারছে না ।
সে আর ও ভাবছিল , " বিয়ের পর একা একা কোন জায়গায় যাওয়া যায় না - স্বামী ব্যতীত ।"
একা একা গেলে সকলে প্রশ্ন করে করে তাকে অহেতুক বিরক্ত করে যাবে ।
সে তার বাবাকে শুধু বললো , " বাবা তোমাদের জামাইয়ের কাজ আছে সেই জন্য আসতে পারে নাই ।"
তার বাবা জানালা দিয়ে এক দলা থুঁথুঁ " থঁ" করে ফেললো । জানালার পাশ থেকে হেঁটে হেঁটে এসে সোফায় বসলো ।
খানিক জিরিয়ে প্রশ্ন করলো , " জামাইয়ের অনুমতি নিয়ে এসেছ ?"
রেহেনা তো বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়লো ।
তার বাবার সামনে যতবারই আসবে তাকে শুধু এই রকম প্রশ্ন করতে থাকবে । আর , সে কোন উত্তরই দিতে পারবে না ।
সে এখান থেকে কেটে পড়তে চাইলো । কিন্তু , তার বাবার জন্য পারছিল না । তার বাবা তাকে একটার পর একটা প্রশ্ন করতে লাগলো ।
রেহেনা এবার থতমত খেয়ে বললো , " হ্যাঁ বাবা , হ্যাঁ বাবা , আমি তো বলেই এসেছি -
সে হাত দুটো দু'দিকে প্রসারিত করে বললো , " আমি তো সবাইকে বলে এসেছি ।"
কিছুক্ষণ থেমে দ্রুতগ্রতিতে বললো , " বাবা , তুমি তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে ফেল ।নয়তো তোমার "Sugar nill " হয়ে যাবে ।
সে আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত গতিতে ওখান থেকে চলে এলো ।
মায়ের সামনে এসে সে হাঁফাতে লাগলো । জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে । আর , সামনে টেবিলের মধ্যে রাখা জগ থেকে এক গ্লাস পানি খেল ।
তার মা হতবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল , কি হয়েছে বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসা করলো , কি হয়েছে রে , রেহেনা । এই রকম করছিস কেন ?"
রেহেনা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো , " মা ,বাবা না আমার সাথে যা শুরু করেছে । শুধু প্যাচাল পাড়ে । আর ভালো লাগে না আমার -
রেহেনার মা বললো , "তোর বাবা তো সব সময় ও রকম । সে টা তো তুই জানিস । এ গুলো নিয়ে বলে আর কি করবি ?"
সে হতবাক চক্ষে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো , " কিন্তু , তাই বলে আমি এতদিন পরে এলাম আর বাবা আমার একটু
খোঁজ - খবর নিবে না । না , তা না করে আমি কেন এসেছি এটা জিজ্ঞাসা করছে ?"
রেহেনা নিজের হাত দুটো পশ্চাতে সরিয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো , " How strange !"
রেহেনা হতাশাগ্রস্থ ভীষন্ন মন নিয়ে গালে হাত দীয়ে বসে পড়লো -
তার মা মেয়ের শুকনো মুখ দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লো । মেয়েকে তাগাদা দিয়ে বললো , কি ব্যাপার রানু , বসে আছিস কেন ? "
Top of Form
বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬
মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১৬
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক ( ৯ম পাতা )
লেখকঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ১৫ /১১/ ২০১৬
রেহেনা "না" সূচক মাথা নাড়লো । রেহেনা বললো , " না, মা , আমার পেটে ক্ষিধে নেই । কিছুই খেতে ইচ্ছে
করছে না ।"
সালমা বানু স্বান্তনা দিয়ে বললো , " তুই তোর বাবারই সন্তান ।তোর বাবাকে তো তুই চিনিস । শুধু শুধু
বাবার উপর রাগ করছিস কেন ?"
রেহেনা এক পলক মায়ের দিকে তাকালো । কিন্তু , মুখে কিছু বলছে না । সে চুপচাপ বসে আছে ।
রেহেনার মা তাকে বললো , " আলমারীর উপর আমার সব ঔষধ একটা বক্সে জমা রাখা আছে । সেখান থেকে ডায়াবেটিসের ঔষধটা নিয়ে আয় তো ।"
রেহেনা মায়ের কথা শুনে দ্রুতগতিতে হেঁটে ডায়াবেটিসের ওষধটা আলমারির উপর থেকে নিয়ে এলো ।
মায়ের হাতে এনে দিলো । জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে দিলো । মা ঔষধটা খেলো ।
রেহেনার মা ঔষধ খেতে আফসোস করে বলছিল , " সারা জনম ঔষধ খেয়ে পার করলাম । কিন্তু কোন
লাভের লাভ কিছুই হলো না ।"
মিনিট বিশেক অপেক্ষা করার পর সালমা বানু সকাল বেলার খাওয়া কয়েকটা রুটি খেলো । আর । খেতে খেতে সালমা তার মেয়েকে তাগাদা দিচ্ছিল , কিছু খেয়ে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য।
অগত্যা মায়ের পীড়াপিড়ীতে রেহেনা রান্নাঘরে গিয়ে ভাতের পাতিল থেকে এক প্লেট ভাত নিয়ে এলো । প্লেট নিয়ে টেবিলে এসে ব��লো । এক পেয়ালা তরকারী টেবিলে পূর্ব থেকে ছিল । সে ওখান থেকে মাছ আর ঝোল নিল । ধীরে ধীরে রেহেনা প্লেটের ভাতগুলো গিলছিল । খাওয়ার প্রতি তার তেমন কোন
আগ্রহ ছিলো না । মায়ের অনুরোধের কারণে সে খেতে বসলো । রেহেনার মা রুটি খেতে খেতে বলছিলো ,
" বাথরুমে আমার একটা অপরিস্কার কাপড় পড়ে আছে । কিন্তু , আমার শক্তিতে কুলোচ্ছে না ধোঁয়ার জন্য ।
রেহেনা মায়ের কথা শুনে বললো , " খাওয়ার পরে আমি তোমার কাপড় ধুঁয়ে দিবো মা ।"
রেহেনা এতক্ষণ ধীরে ধীরে ভাত খাচ্ছিল । মায়ের প্রয়োজনীয় কাজের কথা শুনে এবার খাওয়ার গতি বাড়ালো ।
রেহেনার ভাত খাওয়া শেষ হলো । অতঃপর , সে বাথরুমে ঢুকলো । মায়ের পূর্ব্ দিনের পরিধেয় কাপড়
ব্লাউজ এগুলো সব সার্ফ এক্সেল পাউডার দিয়ে বালতিতে ভেজানো অবস্থায় আছে । সে বালতি থেকে এগুলো তুলে ভালোভাবে কাঁচতে লাগলো । মায়ের কাপড় পরিস্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ছাদের উপর দিয়ে এলো ।
প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারতে এবং মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে বিকেল তিনটা বেজে গেল । এর পর
সে আর দেরী করতে চাইলো না , এমনিতে অনেক বিলম্ব হয়ে গেছে ।
ভ্যানিটি ব্যাগটা হাতে নিয়ে সে বের হয়ে গেল ।
সে যখন শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছালো তখন বেলা সাড়ে তিনটার মতো বাজে ।
দরজা দিয়ে যখন প্রবেশ করলো তখন কাউকে দেখতে পেল না । তার শ্বাশুড়ী কোথায় আছে - কে জানে ?
আজকে যেহেতু তার আসার বিলম্ব হয়েছে সেহেতু দুপুরবেলার রান্না তার শ্বাশুড়ী রান্না করেছে , এটা বোঝা যাচ্ছে ।
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১০ ম পাতা )
লেখকঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ২৭/১১/২০১৬
রেহেনা রুমের ভিতর ঢুকে দেখতে পেল তার স্বামী মঈন বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে আছে । অগ্নিমূর্তি ধারণ
করে আছে এই লোকটি ।
রুক্ষ স্বরে - কর্কট কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো , " তুই কোথায় গেছিলি ?"
রেহেনার স্বামী যে কর্কশ্কন্ঠে কথা বলছিল রেহেনা ভীত , শঙ্কিত চাহনিতে দৃষ্টিপাত করে বললো , " মা'য়ের কাছে গেছিলাম । এই জন্য দেরী হয়ে গেছে ।"
মঈনের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট । সে সিগারেট টেনেই চলেছে । রেহেনার কথা শুনে তার মাথায় রক্ত উঠে গেল । সে ধপাস করে বিছানা থেকে রেহেনাকে হেঁচকা টান মেরে নিকটে এনে তার হাতের বাহুর মধ্যে
জ্বলন্ত সিগারেট গেঁথে দিল ।
রেহেনা তো এক সিগারেটের ছ্যাঁকা খেয়ে জ্ঞান হারালো ।
কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল , সে জ্ঞান -ট্যান কিছুই হারায়নি । শুধু আত্নচিতকার করতে করতে কাতরাতে
থাকলো ।
টেবিলের মধ্যে এক জগ পানি পড়েছিল ।সে সেটা হাতের মধ্যে জোরে জোরে ঢালতে লাগলো ।
রেহেনা প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে বললো , " আপনি এ রকতে করতেছেন কেন ? কি করেছি আমি ?"
মঈন এবার জোরে এক টান মেরে স্ত্রীকে বললো , " তোরে না বলেছি তোর বাপের বাসায় যেতে পারবি না । তুই আমার কথা শুনিস নি কেন ? "
এই কথা বলার সঙ্গে মঈন চোখ ঊল্টিয়ে জোরে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো ।
একেবারে বাম গালে হাতের পাঁচ আংগুল বসে গেল ।
বিছানায় এক ধাক্কা খেয়ে বিছানায় উঁপুড় হয়ে পড়ে গেল ।
রেহেনা মাথা নিচু করে অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলো । রুমের দরজা বন্ধ ছিল কেউ তাকে রক্ষা করার
জন্য সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলো না ।
রেহেনার স্বামী মঈন এক পা দিয়ে ঠেলে বিছানার মধ্যখানে নিয়ে এলো রেহেনাকে ।
উতকট ভাষায় মঈন বলতে লাগলো , "তুই তোর বাপের বাসায় যাস নি ।"
চোখ রাঙ্গিয়ে বউয়ের দিকে মুখটাকে ব্যাগ্রের মত হা করে ( মনে হচ্ছিল এক্ষুনি গিলে খাবে ) বললো , "
কোন চিবায় গেছিলি , এখনো সত্যি করে বল ?"
একটি মাছকে মানুষ যে রকম উলটে - পালটে দেখে সে রকম করে রেহেনাকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলো ।
রেহেনা বিমূড় হয়ে গেল । তার মুখে কথা জোগালো না । সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো ।
সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১১ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ১১/১/২০১৭
এখানে একটা বয়স্ক মহিলা বসে আছে ।তিনি হচ্ছেন ডালিমের মা । পাশের বাড়ির এই মহিলা একটি পুরাতন সাদা শাড়ি পরেছে । কিন্তু , গায়ে ব্লাউজ নেই ।বুড়ীর দুই স্তন শরীর থেকে ঝুলে আছে । ডালিমের মা রেহেনাকে দেখে বললো ,"" কি গো বঊ মা সারাদিন শুইয়া – বইস্যা দিন
কাটাও কেন ? শ্বাশুড়ীর সাথে হাতে হাত লাগিয়ে সংসারের কাজ – কর্ম করতে পার না –
ডালিমের মায়ের পাশাপাশি মোড়া পেতে বসে আছে বাবলু’র মা । বাবলু’র মা সম্পর্কে রেহেনার চাচী শ্বাশুড়ী হয় । বাবলুর মা বঊকে উদ্দেশ্য করে বললো , ‘"তোমার শ্বাশুড়ী তো সারা জনম
কম কষ্ট করেনি ছেলে পুলে আর সংসার নিয়ে । আমরা তো সব দেখেছি , আমাদের চোখের সামনে দিয়ে বউ হয়ে এলো এই বাড়িতে ।’’
দীর্ঘনি;শ্বাস ফেলে বাবলু’র মা বললো ,"" এমন কত শত দিন গেছে তোমার শ্বাশুড়ীর এক কাঁখে
কলসি ছিলো , আরেক কাঁখে ছোট শিশু কোলে নিয়ে কাজ করতে হয়েছে । কিন্তু , কী পোড়া
কপাল , সাহায্য করার জন্য এই বাড়িতে কোন মানুষজন ছিল না ।’’
পাশে মোড়া পেতে বসে আছে পিনু’র মা । পিনু’র মা হচ্ছে রেহেনার জেঠী শ্বাশুড়ী ।পিনু’র মা কথা টেনে নিয়ে বললো ,""এখনো তোমার শ্বাশুড়ীর পোড়া কপাল । এই বয়সে ও তোমার শ্বাশুড়ীকে ভাত রান্না করতে হচ্ছে তার ছেলের বঊ বাড়িতে উপস্থিত থাকা স্বত্ত্বে ও ।’’
পিনু’র মা মিনিটখানেক থামলো , পরমূহূর্তে চিবানো পান গলায় ফেলে বললো , ‘"তুমি চলে গেলে
অফিসে । আর তোমার শ্বাশুড়ী রান্নাঘরে মাথা কুটে মরে । এটা কি ঠিক করলা , তুমিই বল বউ ?
রেহেনা তো আশ্চর্য হয়ে গেল এ সব বয়স্ক মহিলার কথা – বার্তা শুনে । তার স্বামীকে নিয়ে কী রকম যন্ত্রনাদায়ক দিন অতিবাহিত হচ্ছে একমাত্র সেই জানে !
রেহেনা আরো ভাবলো , এই সমস্ত মহিলারা তার বিরুদ্ধে দল পাকাচ্ছে । আচ্ছা , এই সব মুরুব্বীদের দোষ কী ? সে যে আজকে বাড়িতে ছিলো না এ কথা এরা জানলো কী করে ? তার
শ্বাশুড়ী যদি না বলে –
রেহেনা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তার শ্বাশুড়ী মেহেরুন্নেসা বললো , ‘"কী ব্যপার বউ , দাঁড়িয়ে আছ কেন ? তোমার চাচীদের জন্য চা বানা ও ’’ ।
রেহেনা কী যেন ভাবছিল । আনমনা উদাস দৃষ্টিভঙ্গিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । শ্বাশুড়ীর চা তৈয়ারির আদেশ শুনে মাটির চুলোর দিকে হেঁটে গেল ।
একটি কাপ মেপে মেপে ছয় কাপ পানি চুলোর উপর দিলো । কিন্তু , প্রথম পাঁচ মিনিট তার চুলা ধরাতে কষ্ট হচ্ছিল । ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল পুরো জায়গাটা । ধোঁয়া চোখে লাগাতে তার দুটো চোখে পানি এসে গেল । সে দ্রুত চা –নাস্তা প্রস্তুত করতে চাইছিল । কিন্তু , অহেতুক কারনে
আরো বিলম্ব হয়ে যাচ্ছিল ।
বড় পাকের ঘর থেকে মহিলাদের কোলাহল শোনা যাচ্ছিল ।ওখান থেকে তার স্বাশুড়ী তাগাদা দিচ্ছিল , কি ব্যাপার বঊ , এত দেরী করছ কেন , চা নাস্তা আনতে –তোমার চাচীরা তো ঊঠে চলে যাচ্ছে ’’ ।
একটি ট্রে-তে সাজিয়ে কাপের মধ্যে দুধ চিনি ঢেলে রেহেনা চা তৈরী করলো । একটি প্লেটে কিছু
বিস্কিট নিয়ে সে বড় পাকের ঘরে এলো।
সকলের হাতে রেহেনা চা তুলে দিলো ।
চা খেতে খেতে পিনু’র মা বলছিল , ‘ শীত তো এসে গেল , মেহেরুন , পিনু’র শ্বশুরবাড়িতে শীত পিঠা দেওয়ার জন্য তোড় জোড় শুরু করেছি এর মধ্যে । তোমাদের ঢেঁকিতে গুঁড়ি করার
জন্য এক মণ চাল নিয়ে আসবো ’’ ।
সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১২ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ১৭/ ০১ /২০১৬
মেহেরুনের দু’ চোখ কপালে উঠে গেল পিনু’র মার কথা শুনে । মেহেরুন বললো ,"" এক মণ
চাল ! এগুলো তো তুমি কলে ছাটা মিলে দিতে পার ’’ ।
পিনু’র মা বললো , ‘" কি আর করবো মেহেরুন , সেটা করার তো উপায় নেই । আমার বেয়ান বলে দিয়েছে কলে ছাটা গুঁড়ি দিয়ে পিঠা খাবে না । ওনার নাকি পিঠা খেয়ে বুক জ্বালাপোড়া করে ’’ ।
মেহেরুন ভ্রু – কুঁচকে বললো ,"" বলো ্কী আসকির !তোমার বেয়ান তো তোমাকে মেরে ফেলবে
মনে হচ্ছে ।ঢেঁকিতে এত গুঁড়ি করা কি চাট্রিখানি কথা –
মেহেরুন্নেসা বিড় বিড় করে খোদার নাম নিতে ���াগলো ।
পিনু’র মা এক বুক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো , মরে মরে ও তো আমাকে সব কাজ করতে হচ্ছে ।
কোন কুলক্ষনে যে আমার পাঁচ মেয়ে হলো ? মেয়েদেরকে বিয়ে দিয়ে আমি কী শান্তিতে আছি ?
একদিন বড় মেয়ের জামাই , আরেকদিন মেজ মেয়ের জামাই । আমার ঘরে মেহমান তো লেগেই
আছে । সব কিছু তো আমাকে কষ্টে- শিষ্টে সামলাতে হচ্ছে ’’ ।
পিনু’র মা কথার মাঝখানে থামতে পারলো না , ঘন ঘন দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিচ্ছে আর বুকের কাপড়খানি বার বার আলগা করে বাতাস করতেছে ।
পিনুর মা পুনরায় বলা শুরু করলো , ‘" শুধু কী মেহমান , আজকে এ মেয়ের ঘরে নাতী – নাতিন হলো সঙ্গে- সঙ্গে পোশাক পাঠা ও , ছাগল , মিষ্টি কবুতরের বাচ্চা সবই পাঠাতে হবে , আবার , আরেক মেয়ের বাড়িতে শীতের দিনে পিঠা , মৌসুমের দিনে ফল পাঠা ও । ঈদের সময়
প্রত্যেকের বাড়িতে পোশাক – আশাক ভরপুর করে দাও । নইলে কী আর মান সম্মান থাকতেছে।
সারা বছর এভাবে তো লেগেই আছে । আর , এ দিকে আমার আর তোমার ভাসুরের নিঃশ্বাস বন্ধ
হয়ে যাবার যোগাড় ।
রেহেনার চাচী শ্বাশুড়ী , জেঠী শ্বাশুড়ী সকলে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনায় মশগুল আর ঐ সময়ে রেহেনা যে স্থান ত্যাগ করলো কেঊ টেরই পেলো না ।
রেহেনা ছোট রান্নাঘর ছেড়ে বড় ঘরে অর্থাv বসবাসের ঘরে চলে এলো । সে তার বেড রুমে
প্রবেশ করলো । খাটের তলায় সে একটা পুরাতন ব্যাগের মধ্যে তার মূল্যবান বইগুলো গুছিয়ে রেখে
ছিলো সে গুলো বের করলো । বইগুলো সব বিছানার উপর রাখলো । এই বইগুলো
হচ্ছে তার বেঁচে থাকার শক্তি । একটি একটি করে পয়সা সঞ্চয় করে সে এই বইগুলো ক্রয় করেছে । এই বইগুলো হচ্ছে তার বেঁচে থাকার উvস । যখন এক একটি বই সে পাঠ করে তখন
নব উদ্যমে কাজ করার শক্তি পায় , সঞ্জিবনী হয় । রেহেনা সব বইগুলো এক সাথে বুকের মাঝে
আগলে ধরে । সে চক্ষু মুদ্রিত করে , কি যেন ভাবলো রেহেনা ।
মিনিট কয়েক পরে সে যখন দু’ নয়ন মেলে ধরলো তখন ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো । তার
স্বামী মঈন সামনে দাঁড়িয়ে আছে । মঈনের দু’ চক্ষু বিস্ফোরিত হচ্ছে । যেন আগুন ঝরছে । আচ্ছা , তার স্বামী মঈন তার দিকে বিস্ফোরিত চক্ষে তাকিয়ে থাকে কেন ? বারুদ বিস্ফোরিত হবে মনে হচ্ছে ? এক্ষুনি এ ঘরে আগুন জ্বলবে ।
রেহেনা তার বুকের মধ্যে বইগুলো আগলে চেপে ধরে আছে ।
মঈন জিজ্ঞাসা করলো রেহেনাকে , "" কি ব্যপার , তোমার কাছে এত গুলো বই কোথা থেকে ’’?
বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০১৭
শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১৩ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ২১ / ০১/২০১৭
রেহেনা কি বলবে বুঝতে পারছে না । তারপর ও দুরু দুরু বক্ষে সত্যি কথাটাই জানালো । এ গুলো তো আমি বাবার বাড়ি থেকে এনেছি ’’ ।
মঈন স্ত্রীর কথায় অসন্তুষ্ট হলো সে বললো , এ সব ছাইপাশ কেন পড় ? কই ,
তোমার কাছে তো কোন হাদিস , কোরআন শিক্ষার বই দেখছি না ’’।
আচমকা রেহেনাকে স্তম্ভিত করে দিয়ে মঈন সবগুলো বই এক টান মেরে বললো , ‘"এগুলো বারান্দায় রেখে আসি , এদিকে দাও , দাও দেখি ’’।
রেহেনা তো যক্ষের ধনের মতো আগলে রাখা বইগুলো এ ভাবে হাতছাড়া হয়ে যাওয়াতে তার তো
হৃvস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো ।
রেহেনা তখন স্বামীর পা চেপে ধরে কাঁদতে লাগলো । সে আকুতি জানিয়ে বললো ,""এই বইগুলো
নিবেন না । এ গুলো হচ্ছে আমার প্রিয় বই ’’ ।
মঈন পিছনের দিকে এক মুহূর্ত আর তাকালো না ।স্ত্রীর কোন কাকুতি – মিনতিই তার কর্ণকুহরে
প্রবেশ করলো না ।
মঈন ভাবতে লাগলো ,"" তার স্ত্রীর যদি এত সব অভ্যাস থাকে তো তার সংসারের প্রতি কোন
মনযোগ থকবে না ’’
মঈন পিছনের দিকে একবার ও না তাকিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল । একগাঁদা বই পুকুরের জলের
মধ্যে নিক্ষেপ করলো । এই সব বইপত্র তার অসহ্য ঠেকে ! অসহ্য !
ভোরবেলা রেহেনার শ্বাশুড়ী মেহেরুন্নেসা নামাজ কালাম শেষে রান্নাঘরের দিকে গেল। দেখলো , সমস্ত ঘর অরিচ্ছন্ন , এখনো বাড়ির বউ বিছানা ছাড়েনি । রান্নাঘরের কোন কাজ – কর্মে হাত
লাগায়নি ।অপরিষ্কার ঘর পড়ে আছে , সকালবেলার নাস্তাপানির কোন বন্দোবস্ত নেই । এত অগোছালো ঘর দেখে মেহেরুন্নেসা নিজের কপালকে দোষারোপ করতে লাগলো । আর , বিড়বিড়
করে গালি-গালাজ করতে লাগলো ।
মেহেরুন্নেসা নিজে কাজ – কর্মে হাত লাগালো । আর , উচ্চস্বরে বলছিল , এই সব শহুরে মেয়ে
আজকে বিয়ে করানোর কারনে তার সংসারটা উচ্ছন্নে যাচ্ছে । নয়তো গ্রাম থেকে যদি তার ছেলেকে
বিয়ে করনো হতো তাহলে আজকে তার সংসারের এমন হাল হতো না । মেহেরুন্নেসা আর ও ভাবছে
, ‘"আচ্ছা , শহরের মানুষেরা কি ভাত খায় না । এমন অলস কি করে হয় ’’ !
মেহেরুন্নেসা নিজের কপালে আছাড় খাচ্ছে আর ঘর ঝাড়ু দিচ্ছে ।
আর , তখন ধীরে ধীরে রেহেনা রান্নাঘরের দিকে আসছিল বিষন্ন , নিরাসক্ত মন নিয়ে ।
রেহেনাকে দেখে তার শ্বাশুড়ী বলল , "" কি ব্যপার বউ , এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠো কেন ?
সকালের নাস্তা কখন তৈরী করবে ? তাড়াতাড়ি করে বাসি ছাই গুলো ফেলে আটা ধরÚ '' ।
রেহেনার মুখে কোন রকমের আভা নেই ।রেহেনা গতকালকের রান্নার ছাইগুলো তুলে ঘরের পিছনে
গর্তে ফেলে দিয়ে এলো ।সব কাজে তার ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল । রান্নাঘরে এসে সে চুলা
ধরালো । একটা পাতিলে অল্প পানি নিয়ে ঝাল দেওয়া আরম্ভ করলো , উতরানো পানিতে প্যাকেটের আটা ছেড়ে দিলো ।
আটা ধরা শেষ হয়ে গেলে সে পিঁড়ি আর বেলুন নিয়ে রুটি বেলতে বসলো ।
বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৭
Let us movement violence against women -
সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭
এ দেশের নারীরা শারিরীক ও মানসিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় ।
যেখানে জীবন যাচ্ছে যেমন !
শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১৪ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ১ /২৩ /২০১৬
রেহেনা রুটিগুলো বেলছিল । তার কী যে হলো কে জানে ! সব রুটি বাঁকা - বুঁকা হয়ে যাচ্ছিল , তার কাছে মনে হচ্ছিল সে সুন্দ্ র করে , মসৃণ করে রুটি বেলতে জানে না । এ কাজে তার কোন দক্ষতা নেই । নাকি সে অমনোযোগী হয়ে পড়লো কাজে ! কত কী সে ভাবছিল,!
এমনি করে এক ঘন্টা সময় পার হলো ।রুটি বেলা আর শেষ হয় না । রুটি বেলার কাজটা
তার জঘন্য যন্ত্রনাদায়ক কাজ বলে মনে হয় সব সময় ।
রুটি বেলা শেষ হলে সে চুলোর মধ্যে এগুলো সেঁকতে গেল ।
রুটি সেঁকা শেষ হলে সে এ গুলো খাঁচায় ভরে ভাজ করে ঝুলন্ত ছিক্কার মধ্যে তুলে রাখলো।
এতঃপর সে ঘরের দিকে গেল ।
কিছুক্ষণ পর মঈন এলো রান্নাঘরে নাস্তা খাওয়ার জন্য ।তার মা মোড়া পেতে বসে আছে ।
মঈন রান্নাঘরে প্রবেশ করেই মাকে পেয়ে বললো , ' কি ব্যপার মা , এত বেলা হয়ে গেল ,
তারপর ও নাস্তার জন্য ডাকছ না , কি হয়েছে কি মা -
তার মায়ের তো মনে হলো , মুখে খিস্তি - খেঊড় ছুটছে -
এমন একটা ভাব চলে এলো আচমকা , এক লাফ মেরে চুলোর পাশে অবস্থিত ঝুলন্ত ছিক্কার ওখানে গিয়ে ' ঝাঁপি ' থেকে রুটি কয়টা তুলে এনে ছেলের সামনে মেলে ধরলো ।
রাগে ফেটে পড়তে পড়তে বললো , ' তোর বউয়ের রুটি বানানোর ছিরি , তুই ভালো করে দেখে নেয় ' ।
মেহেরুন্নেসা মুখে বক্র হাসি হেসে বললো , ' এই তিন কোনা , চার কোনা রুটি গুলো দিয়ে তুই কিভাবে নাস্তা করবি বল তো দেখি মঈন ' ?
মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক ( ১৫ পাতা )
লেখকঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ২৬/ ০১ /২০১৬
আর তখনি, মেহেরুন্নেসার গলা ভয়াবহ রকমের বড় হয়ে গেল । উচ্চস্বরে মঈনের সামনে বলতে লাগলো , '' তোর বউয়ের জন্য আমার সংসারটা উচ্ছন্নে গেল '' ।
মঈন ও কম যায় না , একেবারে মায়ের সাথে মুখ লাগিয়ে বলতে লাগলো , '' বিয়ের আগে তো ঐ জায়গায় বিয়ে করানোর জন্য তুমি পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলে , আর , এখন বউ
তোমার কাছে ভালো লাগে না -
চেলের কথা শুনে মা ভেংচি কেটে বললো , '' আঁরে , ��ী বলছিস তুই , আমি কীভাবে জানি , এই অজাত মেয়ে ঘরে এসে জুটবে । যে একটি কাজ ও ভালো মত করতে পারে না '' ।
মঈন মাকে স্বান্তনা দিয়ে বললো , সব সময় মানুষকে সুযোগ দিয়ে দেখতে হয় , সে পারবে
কি , পারবে না , তোমার ছেলের বউকে ও সময় দাও , দেখ ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে '' ।
ছেলে বলে গেল সব কথা পট পট করে । আর , তার মা এসব কথা শুনতে চাইছিল না ।
ছেলের কথা শুনে তার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিল
শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নাম;- সম্পর্ক (১৬ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ০১/২৯/২০১৭
মঈন বললো , ‘" সে যাক গে , মা , বিকেলে আমার কয়েকজন বন্ধু আসবে , কিছু নাস্তা তৈরী করে রেখো ।
ছেলের কথা শুনে মেহেরুন্নেসা উত্তেজিত হয়ে গেল । গলা ছড়িয়ে উত্তেজিত ভঙ্গিমায় বললো , ‘"ও
সব পিঠা- টিঠা আমি বানাতে পারবো না । চুলোর মধ্যে গেলে আমার গায়ের চামড়া জ্বলে যায় ।
তুই জানস না , ডাক্তার আমাকে আগুনের তাপে যেতে নিষেধ করেছে । তোর বউকে রান্নাঘরে আসতে বল –
মঈন তার মায়ের চেঁচানো গলা দেখে ওখান থেকে চলে এলো ।
সে বড় ঘরে এসে তার রুমে প্রবেশ করলো । সে দেখলো যে , তার বউ রেহেনা চিv হয়ে শুয়ে
বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে আছে । আর , পা দুটো দোলাচ্ছিল ।
এ দৃশ্য দেখে সে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না । তার মাথায় রক্ত উঠে গেল । সে রেহেনার পশ্চাদ্দেশ উদ্দেশ্য করে জোরসে করে দুটো লাথি মেরে বসলো ।
সোমবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১৭ পাতা )
কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ৩১ / ০১ / ২০১৭
রেহেনা প্রথমে কোন কিছু ঠাহর করতে পারলো না । পরমুহূর্তে যখন এ রকম অপমান মূলক আচরণের শিকার হলো বুঝতে পারলো তখন লজ্জায় , ঘৃনায় , নিজের প্রতি ধিক্কার দিয়ে সে
উপুঁড় হয়ে পড়ে রইলো । আর , একটি কথা ও সে কারো সাথে বলতে পারলো না ।
এভাবে কতটা সময় পার হলো সে জানে না । ঘন্টার পর ঘন্টা চলে গেল সে বিছানায় পড়ে থেকে
যন্তনায় কাতরাচ্ছে । চলন্ত ফ্যানটার দিকে শূন্যমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ।
রাত্রিবেলা রেহেনা একপাশে ফিরে শুয়ে আছে । আর , তার স্বামী মঈন অন্য পাশে ফিরে শুয়ে আছে । স্বামী – স্ত্রী দুইজনের মুখ চাওয়া – চাওয়ি বন্ধ ।
হঠাv করে রেহেনার মোবাইল বেজে উঠলো । রেহেনার শিয়রে মোবাইলটা অবস্থান করছে ।রেহেনা
অগ্রসর হয়ে মোবাইলটা ধরতে যাচ্ছিল , তার পূর্বেই খপ করে মঈন মোবাইলটা নিয়ে নিলো ।
রেহেনা এবার কথা না বলে থাকতে পারলো না । রেহেনা বললো , “দিন , আমার মোবাইল আমাকে দিন –
কিন্তু , মঈন মোবাইল দিলো না । সে শুধু মুখে বললো , “ কোন মাগীর পো আজকে মোবাইল
করেছে , আজকে আমি দেখে নেব ” ।
সে এবার মোবাইলটা নিয়ে যে নম্বর থেকে ফোন এসেছে সেখানে করতে লাগলো ।
প্রথম কয়েকবার মোবাইলে ফোন গেল কিন্তু মোবাইল কেউ রিসিভ করছে না । এই রকম ঘটনা দেখে সে
সন্দিহান হয়ে উঠলো স্ত্রীর প্রতি ।
সে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললো , কি ব্যপার , তোমার মোবাইলটা রিসিভ করতেছে না কেন ” ?
মঈন স্ত্রীর উপর ক্ষেপলো । উত্তেজিত কন্ঠস্বরে বললো , তোর চেনাজানা আছে কিনা সেটা এক্ষুনি
প্রমান হবে । তুই চুপ থাক ” ।
মঈন অনবরত ফোন করেই চলেছে । অনেকক্ষন পরে , মোবাইলটা রিসিভ হলো ।
মঈন দেখলো যে , যে ফোন ধরেছে সে টেনে টেনে কথা বলছে , মঈন বললো , “ আপনি কে ”?
অপরপ্রান্ত থেকে বললো , “ আপনি কে লা –
মঈন এত বি্রক্ত হলো ইচ্ছে করছিল ঐ লোকটিকে জুতো দিয়ে পেটায় । স্ত্রীর মোবাইলে কোন পুরুষ মানুষের ফোন সে একদম সহ্য করতে পারে না ।
মঈন চেঁচিয়ে উঠলো মোবাইলের এই প্রান্ত থেকে , সে ক্রুদ্ধ স্বরে চেঁচাতে লাগলো । সে বললো ,
“আঁরে , এই শালা , মাগীর পো – তুই আমার স্ত্রীর নাম্বারে ফোন করেছিস কেন ? তোকে গিলে
খাবো – শালা BloodY .
বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১৮ পাতা )
রচনাকারীঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ-০৩/০২/২০১৭
বক বক করতে লাগলো মঈন কিছুক্ষন । স্ত্রীর সাথে একটি কথা ও বললো না ।
কেবলমাত্র ঘর থেকে বের হওয়ার আগে বলে গেল , “ তোমার মোবাইলে নতুন একটা সিম এনে দেবো , এটা আর ব্যবহার করতে পারবে না ” ।
এই সামান্য কারনে মোবাইলের সিম পরিবর্তন করে ফেলবে । সামান্য কারনে মোবাইলের সিম পরি
বর্তন করে ফেলবে শুনে রেহেনা আশ্চর্য হয়ে গেল ।
রেহেনা বিছানার এক পাশে শুয়ে ভাবছিল , আচ্ছা , তার স্বামী এমন হীন সংকীর্ণ মানসিকতার
স্বভাবের কেন ? সারাদিন তাকে সন্দেহ করে বেড়ায় । আর , তাকে personal properties মনে
করে । তার কোন স্বাধীনতা ্নেই ।যেমন ইচ্ছা তাকে পরিচালনা করবে ।
এর পরের কয়েকদিন রেহেনা আর মঈনের কথা বন্ধ । রেহেনার কাছে কোন কিছু ভালো লাগে না
রান্নাঘরে যায় , আসে । ভাত তরকারী রান্না করে ।
মঈন রান্নাঘরে খেতে বসে , তার কাছে সব বিস্বাধ লাগে । তার সামনে তার স্ত্রী বসে াছে । সে
প্লেটের সব ভাত ঢেলে ফেলে দিয়ে চলে যায়। যেতে যেতে গজ গজ করতে থাকে আর বলে ,
“ এই পঁচা খানা বসে বসে তুই গিলতে থাক ।”
স্বামীর এই কীর্তিকলাপ দেখে রেহেনা বাম গালে হাত দিয়ে বসে থাকে । আর , মানসিক যন্ত্রনায়
ভুগতে থকে ।
একদিন বিকেলবেলা ঘরের বাডামের মধ্যে বসে আছে রেহেনা , পা দুটো ছড়িয়ে – ছিটিয়ে । বিষন্ন
দৃষ্টিতে চেয়ে আছে দিগ্ন্ত সীমাহীন দৃষ্টিপানে । তার শ্বাশুড়ী সে পথ দিয়ে যাচ্ছিল , রেহেনাকে দেখে
থুঁ থুঁ ফেললো । এক হাত গলা বাড়িয়ে মেহেরুন্নেসা বললো , বাড়ির বঊ কিভাবে বসতে হয় সে টা ও
তুমি জান না ” ।
দীর্ঘক্ষন রেহেনা একা একা বসে আছে । এক বুককষ্টে রেহেনার গলা ধরে এলো । সে কোন কথাই বলতে
পারলো না ।
রেহেনার মাথায় ঘোমটা ছিল না । সেটা দেখে তার শ্বাশুড়ী ঝনাv করে বললো , “ মাথায় ঘোমটা
দে , চুলগুলো বাঁধ , পেত্নি তোকে গিলে খাবে ” ।
অশ্রুত অনেক কথা বলতে বলতে রান্নাঘরের দিকে তার শ্বাশুড়ী চলে গেল ।
রেহেনা বাডামের ওখান থেকে উঠে চলে এলো ।সে রুমের মধ্যে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লো , কাত
হয়ে শুয়ে আছে ।হঠাv করে তার মোবাইল বেজে উঠলো । সে ফোন ধরলো ।
অপরপ্রান্ত থেকে কথা শুনে বুঝা গেল জেলা অফিস থেকে মোবাইল করেছে । প্রথমে সে কর্ণপাত
করতে পারলো না । পরক্ষনে যখন বুঝতে পারলো , জেলা প্র্কল্প পরিচালক মোবাইল করেছে , সে
দড়মড় করে উঠে বসে পড়লো ।
রেহেনা অপ্রস্তুত হয়ে বললো , “ জ্বী স্যার , জ্বী স্যার বলেন , আমি রেহেনা আক্তার বলতেছি ।”
অপরপ্রান্ত থেকে বললো , “ শোন রেহেনা , আমি তোমাদের D.D গৌতুম কৃষ্ণ পাল বলতেছি ,
সামনের সপ্তাহের ২৬ ও ২৭ তারিখে জেলা অফিসে তোমাদের ট্রেনিং আছে । সকাল দশটা বাজে
জেলা অফিসে চলে আসবে ।”
রেহেনা ট্রেনিং এর কথা শুনে বললো , “ ঠিক আছে স্যার , ঠিক আছে স্যার , আমি চলে আসবো
স্যার ।”
ফোনে কথা বলা শেষ হলে রেহেনা মোবাইলটা রাখলো ।
সে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার স্বামী মঈনুল ইসলাম ঘরে ঢুকছে ।
রেহেনাকে মোবাইলে কথা বলতে দেখে সে জিজ্ঞাসা করলো , “ কে ফোন করেছে ?”
শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক (১৯ পাতা )
লেখকঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ০৫ /০২ /২০১৭
রেহেনা বললো ,"" আমাদের জেলা অফিস থেকে ডি.ডি স্যার ।
এ কথা বলে সে একপাশে সরে গেল এবং মাথা নীচু করে রইলো ।
মঈন বিছানার একপাশে বসতে বসতে বললো , “ তো তোমাদের ডি ডি সাহেব কি বলেছে ?”
রেহেনা স্বামীর দিকে না তাকিয়ে বললো , “ সামনের সপ্তাহে ট্রেনিং আছে ।”
রেহেনার স্বামী মঈন সাফ সাফ জবাব দিলো ,ও সব ট্রেনিং – ম্রেনিং বাদ দাও । আর , যাইতে
পারবি না । আচ্ছা , তুই এত নষ্ট কেন আমারে বলতো , বিয়ের আগের নষ্টামি তোর এখন ও বন্ধ হলো না ।”
স্বামীর এ সমস্ত বিভvস কথা শুনে রেহেনার সমস্ত শরীরে রি রি করে উঠলো ।
মঈন ঘরের এক কোনায় থুথু ফেললো , সে কুvসিত শব্দ করে বললো , “ ঐ সব দুই টাকা দামের
চাকরি করার স্বপ্ন বাদ দে , ঘর –সংসারের প্রতি মনোনিবেশ কর –
মঈন আরেক দিকে তাকিয়ে বললো , “ ঐ সব ট্রেনিং এ যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দে ---
রেহেনা বললো , “ বাদ দেব কেন?”
স্বামীকে সে প্রশ্ন করে বসলো , “ বাদ দেব কেন ?”
রেহেনা স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করতে লাগলো ।
মঈন দেখলো , তার স্ত্রীর চোখ দুটো বড় হয়ে যাচ্ছে । মঈন হাতের আংগুল উঁচিয়ে বললো ,
চুপ , একদম চুপ , চোখ নামা বলছি –
চোখ কটকট করে হাত দুটো খামচি মেরে বললো , “ একেবারে খুন করে ফেলবো , বেশি কথা
বললে , মঈন রেহেনার টুটি চেপে ধরতে চাইলো ।
রেহেনা হঠাv করে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হয়ে যেতে লাগলো । তার সমস্ত শরীর রাগে কাঁপতে লাগলো ।
এই লোকটার প্রতি দিনে দিনে সে বিষিয়ে যাচ্ছে , সহ্য করতে পারতেছে না । রেহেনার বামপাশে
অবস্থিত টেবিলের উপর একটি খালি গ্লাস পড়েছিল , রাগের চোটে কাঁপতে না পেরে রেহেনা সেটা স্বামীর
প্রতি নিক্ষেপ করে বসলো ।
ভাগ্যিস , তার স্বামী সরে গেল , নইলে এক্ষুনি তার মাথা কেটে গিয়েছিল ।
দুইদিন পরে রেহেনার বান্ধবী তামান্না ফোন করলো ।
তামান্না বললো , “ কি ব্যপার রেহেনা , অনেক দিন ধরে তোমার তো কোন যোগাযোগ নেই ।
শ্বশুরবাড়িতে তুমি কেমন আছ ?
রেহেনার মন – মেজাজ ভালো নেই । স্বামীর সাথে তার ঝগড়া হয়েছে । রেহেনা অশ্রুবিগলিত
কন্ঠে বললো , “ কী করে ভালো থাকবো , তামান্না ? এই সমাজে সব মেয়েদের স্বামীরা
কী রকম ? আর , আমার স্বামী কী রকম ?
সব সময় শুধু আমার সাথে ঝগড়া করে । বাধা দেয় । ভালো লাগে না ।
তামান্না অপর প্রান্ত থেকে বললো , “ তোমার স্বামীর অভ্যাসগুলো তাহলে এখন ও পরিবর্তন হয় নি ।
তামান্নার কথা শুনে রেহেনা দীর্ঘশ্বাস ফেললো , সেই দীর্ঘনিঃশ্বাসের আভাস শুনে তামান্না চিন্তিত হয়ে
পড়লো ।
তামান্না বললো , “ আচ্ছা , এখন আসল কথায় আসি , তুমি কি ট্রেনিং করতে আসবে না ।”
রেহেনা বললো , “ স্বামী যদি আসতে না দেয় , তাহলে কিভাবে আসবো ?”
তামান্না রেহেনার কথা শুনে বললো , “ শোন রেহেনা , তুমি হয়েছ একটা ভী��ু প্রকৃতির মেয়ে ।
সারাক্ষন তুমি তোমার স্বামীকে ভয় পাচ্ছ । এভাবে ভয় পেয়ে তুমি তোমার কাজ থেকে গুটিয়ে যেতে পার না । সাহসের সাথে তোমাকে সকল কিছু মোকাবেলা করতে হবে । প্রতিরোধ
করতে হবে ।”
মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক ( ২০ পাতা )
লেখকঃ- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- 0৯/০২/২০১৭
তামান্না এক মুহূর্ত না থেমে বললো , “ আমি আমার কথা বললাম ।এবার তুমি ভেবে দেখ ।”
এরপর আরো কিছুক্ষণ তামান্না আর রেহেনা ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলে মোবাইল রাখলো ।
রাত্রে শুয়ে শুয়ে রেহেনা তার বান্ধবী তামান্নার কথাগুলো ভাবছিল ।বারংবার মাথার মধ্যে ঘুরেফিরে
আসছিল ,
“ সাহস সঞ্চয়
প্রতিরোধ
সাহস সঞ্চয়
প্রতিরোধ ”
সে কী সাহস সঞ্চয় করবে ? তার বুকখানি ফুঁলে ফুঁলে উঠতে লাগলো । সে ভাবছিল –
জন্ম সত্য
মৃত্যু সত্য
বিবাহ সত্য
আর , বিয়ের পরে সংসার টিকিয়ে রাখা সত্য । রেহেনা তো মহাফ্যাসাদে পড়ে গেল । তার মাথা
ঘুরছিল , উপরে চলন্ত ফ্যানটা দিয়ে ও তার মাথা প্রশান্ত হচ্ছিল না ।
আজকে ২৬ তারিখ । রেহেনার সকাল দশটা থেকে ট্রেনিং আছে । রেহেনা তার বেডরুমের মধ্যে
প্রস্তুত হচ্ছিল । সকাল সাড়ে আটটার মতো বাজে । রেহেনার কাছে ছোট্র একটা আয়না ছিল,
সেটা ধরে ধরে সে মুখে স্নো মাখছিল ।
তার স্বামী মঈন মনে হয় রান্নাঘরে ছিল , সে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো । রেহেনা তখন চুল আচড়াচ্ছিল , চুলে বিলি কাটছিল ।
রেহেনাকে সাজগোজ করা অবস্থায় দেখতে পেয়ে মঈন জিজ্ঞাসা করলো , “ কী ব্যাপার তুই রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছিস ?”
রেহেনা সপ্রতিভ হয়ে বললো , “ আপনাকে তো বলেছি , আজকে আমার ট্রেনিং আছে ।”
মঈন এবার বললো ,"" আজকে তুই যেতে পারবি না , দুপুরবেলায় ঢাকা থেকে আমার মামারা আসবে ।অনেক রান্না – বান্না করতে হবে । মা একা একা সামলাতে পারবে না ।সেইজন্য তুই
আজকে যেতে পারবি না ।”
রেহেনা স্বামীর এ সমস্ত কথা মেনে নিতে পারলো না , সে বললো , “ কিন্তু , আজকে আমাকে
যেতেই হবে , আজকে আমাকে যেতেই হবে । ট্রেনিংয়ে না গেলে আমার চাকরি থাকবে না ।”
হঠাv করে তার প্রসারিত হাত মুষ্টীব্দ্ধ হয়ে এলো ।
সহসাই তার হাত উঁচু হয়ে গেল । সে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হয়ে গেল ।
রেহেনা বললো ,"" দেখেন , আজকে কোন বাধা দিবেন না । আজকে আমাকে যেতে দিন । আমার
বিলম্ব ঘটছে ।
মঈনের মুখ বিষিয়ে উঠলো , “ সে দাঁত কিট মিট করে বললো , “ যদি যেতে চাস , সারা জিন্দেগীর জন্য যা – এ বাড়িতে আর ফিরবি না ।”
মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
গল্পের নামঃ- সম্পর্ক ( শেষ পাতা )
রচনাকারী- কাওসার জাহান শিমু
তারিখঃ- ০২/১৫/২০১৭
রেহেনা স্বামীর কথা শুনে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল । সে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো না ।
দু’ হস্ত প্রসারিত করে আংগুল উঁচিয়ে জবাব দিলো , “ তবে তাই হবে , তবে তাই হবে , আপনার
জন্য আমার জীবন বিষিয়ে উঠেছে । আমি এ থেকে মুক্তি পেতে চাই ।”
রেহেনা আর এক মিনিট ও অপেক্ষা করলো না । কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বের হয়ে গেল ।
রেহেনা সবেমাত্র আঙ্গিনা ডিঙ্গিয়ে বাগানবাড়ি অতিক্রম করলো ।
এক পা রাস্তায় দিতে সে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো , তার সামনে তার স্বামী মঈন দাঁড়িয়ে আছে । তার নয়ন যুগল রক্তজবার মতো লাল টকটকে হয়ে আছে ।
সে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো এবং বললো, “ তুই তাহলে আমার কথা শুনবি না , শুনবি না , না –
তার ভয়ংকর চিvকারে রেহেনার কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়ে গেল । সে যখন আরেক পা অগ্রসর হলো
তখন একটা বড় ছোরা দেখে সে ভয়ে দৌঁড়াতে চাইলো । আর , তখনই মঈন তার হাতের ছোরা
স্ত্রী’র বাহুতে বিদ্ধ করে দিলো । আর , সাথে সাথে রেহেনা প্রচন্ড ব্যথায় কঁকিয়ে উঠলো আর
গগনবিদারী আর্তচিvকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেল । সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো , আর
পথের মধ্যে রক্তের স্রোতে ভেসে যেতে লাগলো ।
বিঃদ্রঃ- এ ভাবে রেহেনা আর মঈনের জীবনে একটির পর একটি ঘটনা ঘটতে থাকে । হয়তো বা
তাদের সম্পর্ক একদিন ভেঙ্গে যায় কিন্তু সম্পর্ক হচ্ছে এমন এক বিষয় সকল সম্পর্ক প্রতিনিয়ত মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায় ।
সমাপ্ত
0 notes