#ফারাক্কাবাঁধ
Explore tagged Tumblr posts
Text
৯০ বছর বয়সী এক নেতার লংমার্চে নেতৃত্ব দেয়ার গল্প
স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশের পরিবেশ এবং নদী-নালার উপর বড় এক ধরনের অন্ধকার এসে হাজির হয়। বাংলাদেশ-ভারত চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা নদীর উপর একটি বাঁধ নির্মাণ করে ভারত। বাংলাদেশের সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বাঁধটি। এই বাঁধের জন্য শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানির জন্য হাহাকার তৈরি হয়।
১৯৭৬ সালের ১৬ই মে ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের দিকে একটি মিছিলের আয়োজন করেন বাংলাদেশের সুপরিচিত রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী যখন ফারাক্কা লং মার্চের নেতৃত্ব দেন তখন তার বয়স ৯০ বছরের বেশি।
১৯৭৬ সালের শুরুর দিকে মাওলানা ভাসানী বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১৮ই এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ফেরার পর মাওলানা ভাসানী ঘোষণা দেন ভারত যদি বাংলাদেশকে পানির অধিকার ফিরিয়ে না দেয় তাহলে তিনি লংমার্চ করবেন। তখন অনেকে বেশ চমকে গিয়েছিল; কারণ ৯০ বছরের একজন মানুষ ঘরে থাকার কথা তখন কিনা সে লংমার্চ এর ডাক দিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৮শে এপ্রিল মাওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে লংমার্চ সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৬ সালের ২রা মে মাওলানা ভাসানীকে প্রধান করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট 'ফারাক্কা মিছিল পরিচালনা জাতীয় কমিটি' গঠিত হয়। এই লংমার্চের আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে একটি চিঠি লিখেন আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। সে চিঠিতে মিসেস গান্ধির কাছে লংমার্চের কারণ বর্ণনা করেন ভাসানী। সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান, আনোয়ার জাহিদ এবং সিরাজুল হোসেন খান এ চিঠি তৈরি করতে আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সহায়তা করেন।
এরপর ১৬ই মে রাজশাহী শহর থেকে লংমার্চ করার ঘোষণা দেন তিনি।
মোনাজাত উদ্দিনের স্মৃতিচারণমূলক লেখা 'পথ থেকে পথে' বইতে সেই লংমার্চের কিছু বিষয় বর্ণনা করেছেন।
মোনাজাত উদ্দিন লিখেছেন, "মিছিলের আগে মাদ্রাসা ময়দানে জনসভা। ভাসানী এলেন নীল গা��়িতে চেপে। জনসমুদ্র গর্জে উঠল। খুব অল্প সময়ের জন্য তিনি বক্তৃতা করলেন। বহু সাংবাদিক, বহু ফটোগ্রাফার।"
লংমার্চের ৬৪ কিলোমিটার যাত্রা ছিল বেশ কঠিন। সবচেয়ে বড় আশংকা ছিল মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে। বয়স ৯০ বছরের বেশি; তার উপর সদ্য হাসপাতাল ছাড়া পেয়েছেন।
জাতীয় কৃষক সমিতির আবু নোমান খান সে লংমার্চ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন 'মজলুম জননেতা: মাওলানা ভাসানী স্মারক সংকলন' বইতে।
আবু নোমান খান লিখেছেন, লংমার্চের মিছিল রাজশাহী থেকে প্রেমতলী, প্রেমতলী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মনকষা এবং মনকষা থেকে শিবগঞ্জ পর্যন্ত ৬৪ মাইল অতিক্রম করবে।
'মাওলানা ভাসানীর জীবনস্রোত' শিরোনামে একটি লেখায় সেই লং মার্চ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন জাতীয় কৃষক সমিতির সাবেক সপ্তর সম্পাদক আবু নোমান খান।
"মিছিলের শুরুতে ভাসানীসহ নেতৃবৃন্দ পুরোভাগে দাঁড়ান। মিছিলটি তিন মাইল দুরে রাজশাহী কোর্ট এলাকায় যেতে না যেতেই মুষলধারে বৃষ্টি নামে। তা সত্ত্বেও লক্ষ জনতার মিছিল এগিয়ে চলে। এগারো মাইল অতিক্রম করে প্রেমতলী পৌঁছে। তখন দুপুর দুটো," লিখেছেন আবু নোমান খান।
সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেল তিনটা নাগাদ লংমার্চ আবারো যাত্রা শুরু করে। এরপর প্রায় ২০ মাইল পথ অতিক্রম করে রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছে মিছিলটি। রাতে সেখানেই তারা অবস্থান করেন। পরদিন সকাল আট ৮ টায় আবারো যাত্রা শুরু করে লংমার্চ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আরো ছয় মাইল পথ অতিক্রম করে কানসাট পৌঁছায়।
দুপুরের মধ্যে মিছিলটি পৌঁছে কানসাটে।
আবু নোমান খানের বর্ণনায়, "পথের দুধারে সারি বেঁধে দাঁড়িয়েছে হাজার-হাজার মানুষ - উদ্দেশ্য ফারাক্কা লং মার্চ-এর মিছিলকারীদের অভ্যর্থনা জানানো। মিছিলকারীদের পানি ও বিভিন্ন খাবার খাইয়েছেন তারা। "
বিকেল চারটার দিকে সেখানে জনসভায় বক্তব্য রাখেন মাওলানা ভাসানী। সে জনসভায় তিনি বলেন, ফারাক্কা সমস্যার সমাধানের জন্য ভারত যদি বাংলাদেশের মানুষের দাবি উপেক্ষা করে তাহলে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু হবে।
আর এভাবেই মাওলানা ভাসানীর ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের সমাপ্তি ঘটে।
2 notes
·
View notes