#পারস্য সাম্রাজ্য
Explore tagged Tumblr posts
Text
পারসীয় সভ্যতার আদোপান্ত
আজকের ইরান দেশটিকে প্রাচীনকালে পারস্য বলা হতো। আর্যজাতির যে শাখা ইরানের দক্ষিণে বসতি স্থাপন করে তারাই পারসিক। পারসিকদের প্রাণ কেন্দ্র ছিল ‘পারসিপলিস’। আর ইরানের উত্তর অংশে যারা বসতি স্থাপন করে তারা মিডীয় নামে পরিচিত ছিলো। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে পারসীয়রা একটি সভ্যতা গড়ে তোলে। তাদের এই উন্নত সভ্যতাকে পারস্য সভ্যতা বলা হয়ে থাকে। পারস্য সাম্রাজ্যের অপর নাম একমেনিড সাম্রাজ্য।
পার্সিয়ান সাম্রাজ্য নামটি…
View On WordPress
#persian-empire#গ্রীস#জরথুস্ত্রবাদ#জেরজেস দ্য ফার্স্ট#পারস্য সাম্রাজ্য#পার্সিয়ান নবী জরথুস্ত্র#পার্সিয়ান সাম্রাজ্য#পার্সেপলিস#পৃথিবীর প্রথম একেশ্বরবাদ ধর্ম#ব্যাবিলন#সাইরাস দ্য গ্রেট#সুসা ও একরাটানা
0 notes
Text
ইতিহাসের এই দিনে
নিউজনাউ ডেস্ক: আজ বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০২২। নিউজনাউয়ের পাঠকদের জন্য ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যুসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয় ত��লে ধরা হলো: ঘটনা: ১৬৫৮: মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৭১৩: রাশিয়ার জার পিটার দ্য গ্রেটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী পারস্য উপসাগরের পানিসীমা পর্যন্ত নিজেদের সাম্রাজ্য। ক্রমবিস্তারের লক্ষ্যে জর্জিয়াকে…
View On WordPress
0 notes
Link
0 notes
Photo
New Post has been published on https://www.paathok.news/72105
ইতিহাসে ২১ জুলাই
.
১০০৫ সালের এই দিনে স্পেনের বিখ্যাত মুসলিম গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক ইবনে সাম্হ মৃত্যুবরণ করেন।
১৬২০ সালের এই দিনে ফরাসি জ্যোর্তিবিদ জিন পিকার্ডের জন্ম।
১৬৫৮সালের এই দিনে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন।
১৬৬৪ সালের এই দিনে প্রখ্যাত ইংরেজ কবি ম্যাথিউ প্রায়রের জন্ম।
১৬৯৩ সালের এই দিনে নিউকাসল-আপন-টাইনের ১ম ডিউক, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টমাস পেলহ্যাম-হোলস জন্মগ্রহন করেন ।
১৭১০ সালের এই দিনে খ্যাতনামা জার���মান শল্যচিকিত্সক পল মোরিংয়ের জন্ম।
১৭১৩ সালের এই দিনে রাশিয়ার জার পিটার দ্য গ্রেটের ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী পারস্য উপসাগরের পানি সীমা পর্যন্ত নিজেদের সাম্রাজ্য ক্রমবিস্তারের লক্ষ্যে জর্জিয়াকে ইরান থেকে পৃথক করার প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল।
১৭৬২ সালের এই দিনে সড়ক নির্মাণের পথিকৃত্ টিমোথি হাইনম্যানের জন্ম।
১৭৯৬ সালের এই দিনে স্কটল্যান্ডের জাতীয় কবি রবার্ট বার্নসনের মৃত্যু।
১৭৯৮ সালের এই দিনে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট মিসরের যুদ্ধে জয়লাভ করেন ।
১৮১৬সালের এই দিনে সংবাদ সংস্থা রয়টারের প্রতিষ্ঠাতা পল জুলিয়াস ফন রয়টারের জন্ম।
১৮৩১ সালের এই দিনে নেদারল্যান্ডের অন্তর্গত বেলজিয়াম স্বাধীনতা লাভ করে।
১৮৬৬ সালের এই দিনে লন্ডনে কলেরায় শতাধিক লোকের মৃত্যু হয় ।
১৮৮৩ সালের এই দিনে ভারতের প্রথম রঙ্গমঞ্চ স্টার থিয়েটারের উদ্বোধন।
১৮৮৪ সালের এই দিনে লর্ডসে প্রথম ক্রিকেট টেস্ট ম্যাচ শুরু হয় ।
১৮৮৮সালের এই দিনে ব্রিটিশ নাগরিক জন বয়েড ডানলপ বায়ুচালিত টায়ার আবিষ্কার করেন।
১৮৯৯ সালের এই দিনে জনপ্রিয় মার্কিন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্প রচয়িতা ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের জন্ম।
১৯০৬ সালের এই দিনে আইনজ্ঞ ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু।
১৯৩০ সালের এই দিনে হিন্দি গানের গীতিকার আনন্দ বকসীর জন্ম হয় ।
১৯৪৩ সালের এই দিনে দৌড়বিদ চার্লস উইলিয়াম প্যাডকের মৃত্যু হয় ।
১৯৪৬ সালের এই দিনে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট গোয়ালবার্তো ভিলারয়লের মৃত্যু ।
১৯৫১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মুসলমান মহাকবি কায়কোবাদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৫৪ সালের এই দিনে জেনেভা সম্মেলন শেষে ভিয়েতনাম এবং ফ্রান্সের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৫৯ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক শক্তিচালিত প্রথম বানিজ্যতরী সাগরে ভাসানো হয়।
১৯৬৮ সালের এই দিনে আসামের করিমগঞ্জে দিব্যেন্দু ও জগন্ময় বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় শহীদ হন।
১৯৭২ সালের এই দিনে ভুটানের রাজা জিগমে দোরি ওয়াংচুকের মৃত্যু হয় ।
১৯৭২ সালের এই দিনে আমেরিকান অ্যাথলেট র্যালফ ক্রেগের মৃত্যু হয় ।
১৯৭৬সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল আবু তাহেরের ফাঁসি কার্যকর।
২০১২ সালের এই দিনে ইংলিশ ক্রিকেটার ডন উলসন মৃত্যুবরণ করেন ।
0 notes
Text
পারস্য সভ্যতা- উত্থান ও বিকাশ (১ম ভাগ)
পারস্য সভ্যতা: আকিমানিদ সাম্রাজ্য-মেসিডোনিয় শাসন-জরথুস্ত্রবাদ-সিলুসিদ শাসন
পারস্য সভ্যতা মেসোপটেমিয়ারনব্য ব্যবিলনীয় সাম্রাজ্য ও মিশরের কুশাইট রাজ্য করায়ত্ত্ব করে প্রায় অর্ধ-পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল। মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের পূর্বের উত্তর-দক্ষিণ অঞ্চল হতে পারস্য সভ্যতার উত্থান হয়। বর্তমান ইরানের আগের নামও পারস্য। তবে এখন ইরান বলতে যে ভূখণ্ড বোঝায়, ���ারস্য বললে তার থেকে বহুগুণ বড় এক অঞ্চল বোঝাত। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে ইরানীয় মালভূমিতে একটি জাত�� বসতি স্থাপন করে। জাতিগত ভাবে এরা আর্য নামে পরিচিত। এদের মধ্যে ঐতিহাসিক ভাবে মেদেস, পার্থীয় ও পারসিক গোত্রগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মেদেস গোত্রীয় লোকেরা মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশে বাস করা শুরু করেছিল। এ অঞ্চল মেদেস (বা মেদেয়া) নামে পরিচিত হয়। ইরানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পার্থীয়রা বাস করত বলে এটি পার্থীয়া নামে পরিচিত। পারসিক জাতির লোকেরা মালভূমির দক্ষিণ অংশে বাস করা শুরু করে। এ অঞ্চলটির নাম পার্সিস বা পার্সিয়া। এ অঞ্চলে যারা বাস করতো তাদের পারসিক বলা হতো। এই পারসিকদের হাতে গড়ে ওঠে পারস্য সভ্যতা। পারসিক ও মেসোপটেমিয়ার মাঝে পশ্চিমে পারস্য উপসাগরের কোল ঘেঁষে প্রায় মেসোপটেমিয়ার সমসাময়িক আরও একটি বিখ্যাত অঞ্চল ছিল যার নাম ইলাম। সুসা, আওয়ান ও আনশান ছিল এ অঞ্চলের তিন বিখ্যাত শহর। মেদেস-পার্থিয়া-পার্সিয়া-ইলাম খ্রি.পূ. সপ্তম শতকে পারসিকদের প্রথম বড় নেতা ছিল যুদ্ধবাজ সেনাপতি হাখমানেশ বা আকিমিনিস। তার মৃত্যুর পরে পুত্র তেইপেস ক্ষমতায় আসে। সে ছিল ইলামের আনশানের রাজা। তেইপেসের দুই পুত্র- সাইরাস (১ম) ও আরিয়ারামনেস। পিতার মৃত্যুর পরে আনশানের ক্ষমতায় বসে সাইরাস। তার রাজত্বকাল ছিল ৬০০-৫৮০ খ্রি.পূ.। এর পরে সাইরাসের পুত্র কামবাইসেস (১ম) প্রায় বিশ বছর আনশান শাসন করে। এর পরে কামবাইসেসের পুত্র সাইরাস (২য়) পারসিকদের রাজা হন। এর পর পারসিকদের ভাগ্য পরিবর্তিত হয়। শুরু হয় পারস্য সভ্যতার জয়যাত্রা। কুরোশ মেদেসীয়দের পরাজিত করে এবং ব্যাবিলনে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে। সাইরাসের অধীনে পারস্য এশিয়ার অন্যতম মহাশক্তিতে পরিণত হয়। সাইরাসের পুত্র কামবাইসেস (২য়) মিশর বিজয় করে পারস্য সভ্যতার বিস্তার ঘটায়। পরবর্তী সময়কালে দারিয়াস ও জার্কসিজদের হাত ধরে এ সভ্যতা পশ্চিমের বলকান অঞ্চল (বর্তমান আলবেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কসোভো, বুলগেরিয়া, মন্টেনিগ্রোর অধিকাংশ এবং ক্রোয়েশিয়া, গ্রিস, ইটালি, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া ও তুরস্কের কিছু অংশ) ও পূর্বের সিন্ধু সভ্যতা (বর্তমান ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান) পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। আকিমানিদ সাম্রাজ্য (৫৫০-৩৩০ খ্রি.পূ.) পারস্য সভ্যতার প্রথম সাম্রাজ্যের নাম আকিমানিদ সাম্রাজ্য। রাজা আকিমিনিসের নামে এ সাম্রাজ্যের নামকরণ করা হয়। তবে এ সাম্রাজ্যের শুরু করে সাইরাস দ্য গ্রেট (বা সাইরাস ২য়)। সাইরাসের পরে এ সাম্রাজ্যে আরো দুই বিখ্যাত শাসকের আবির্ভাব ঘটে। এদের একজনের নাম দারিয়ুস, অন্যজন জার্কসিজ। মহান সাইরাস (২য়) (রাজত্ব ৫৫৯-৫৩০) সাইরাসের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিয়ে একটি মজার কাহিনী আছে। সাইরাসের দাদা সাইরাস (১ম) সাইরাসের জন্মের পরে স্বপ্ন দেখলো যে সাইরাস একদিন তাকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। তাই সে সাইরাসকে গহীন পর্বতে নির্বাসন দেয়। কিন্তু সাইরাস ��েঁচে যায়। পরে ১০ বছর বয়সে তার দাদা তাকে ফিরিয়ে আনে। তবে সে স্বপ্ন সত্যি হয়েছিল। আনশান থেকে শুরু করে সাইরাস একে একে মেদেয়া, লাইদিয়া (তুরস্কের একাংশ) ও মেসোপটেমিয়া থেকে ও জুদেয়া (প্যালেস্টানের একাংশ) পর্যন্ত আকিমানিদ সাম্রাজ্যে যুক্ত করে। পারস্য সাম্রাজ্য (আকিমানিদ) (৫৪০ খ্রি.পূ) সাইরারেস তিন সন্তান- ক্যামবাইসেস (২য়), বার্দিয়া ও আতোসা। তার মৃত্যুর পরে ক্যামবাইসেস (২য়) পারস্য সাম্রাজ্যের (রাজত্বকাল ৫৩০-৫২২ খ্রি.পূ.) হাল ধরে। সে মিশরের কুশ রাজ্য পর্যন্ত আকেমানিদ সাম্রাজ্যকে প্রসারিত করে। আতোসা ছিল ক্যামবাইসের বোন ও রাণী। ক্যামবাইসের মৃত্যুর পরে পরবর্তী আকিমানিদ শাসক দারিয়াস দ্য গ্রেটের সাথে আতোসার বিয়ে হয়। এখানে জেনে রাখা ভালো যে, পবিত্র বাইবেলের ‘বুক অভ দানিয়েল’-এ বর্ণিত ‘সিংহের গুহায় দানিয়েল’ কাহিনীতে উল্লেখিত দারিউসের সাথে এই দারিউসের কোন ঐতিহাসিক সম্পর্ক নেই। ক্যামবাইসেসের পরে আকিমানিদ সাম্রাজ্যের হাল ধরে আরেক বিখ্যাত শাসক দারিয়াস দ্য গ্রেট (বা দারিয়াস ১ম)। দারিয়াস সাইরাসের কেউ ছিল না। দারিয়াস সে সময়ে আকিমানিদ সাম্রাজ্যের এক জন রাজযোদ্ধা ছিল। ক্যামবাইসেস তার ভাই বার্দিয়াকে হত্যা করেছিল। এ বিষয়ে কেউ কিছু জানতো না। তাই তার মৃত্যুর পরে গৌমাতা নামে এক ব্যক্তি বার্দিয়া সেজে আকিমানিদ সাম্রাজ্যে বসে। এ সময়ে দারিয়াসসহ সাত যোদ্ধা মিলে গৌমাতাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। সাত জনে নতুন রাজা নির্বাচনের জন্য একটি বুদ্ধি বের করে। একদিন ভোরে তারা সবাই ঘোড়া নিয়ে একত্রে মিলিত হবে। এই সাত জনের ঘোড়ার মধ্যে যার ঘোড়া আগে ডাকবে সে হবে নতুন রাজা। সেই ভোরে ঘোড়ার ডাকে দারিয়াস পারস্যের সম্রাট হয়ে যায়। মহান দারিয়াস (রাজত্ব ৫২২-৪৮৬) তবে দারিয়াস আকেমানিদ সাম্রাজ্যেরই বংশধর ছিল। আকিমিনিসের দ্বিতীয় পুত্র আরিয়ারামনেস, তার পুত্র আরসামেস আর তার পুত্র হিসতাপেস। হিসতাপেস ছিল আকিমানিদ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ব্যাক্ট্রিয়ার গভর্নর। ব্যাক্ট্রিয়া ছিল বর্তমানের আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান অঞ্চল। দারিউস ছিল এই হিসতাপেসের পুত্র। দারিয়াস ক্ষমতায় আসার পর পূর্বে সিন্ধু নদ পর্যন্ত পারস্যের পূর্ব সীমানা প্রসারিত করেন। তবে পারসিকদের পশ্চিম ও দক্ষিণে রাজ্য বিস্তারে গ্রিকরা ছিল অন্যতম বাধা। দারিয়াসের সময়ে তুরস্ক অঞ্চলের পারসিকদের অধীনে বসবাসরত গ্রীকরা বিদ্রোহ করলে সে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শক্তহাতে বিদ্রোহ দমন করে। পারস্যের গ্রিকদের সাথে পারসিকদের দীর্ঘ সময় (৪৯২-৪৪৯ খ্রি.পূ.) যুদ্ধ হয়েছে। ইতিহাসে এ যুদ্ধ গ্রেকো-পারসিক বা পারসিক যুদ্ধ নামে পরিচিত। গ্রেকো-পারসিক যুদ্ধ ৪৯০ খ্রিস্টাব্দে গ্রিসের এথেন্স নগরের অদূরে ‘বে অভ ম্যারাথন’ নামক উপসাগরে দারিয়াসের সৈন্যরা গ্রিকদের সাথে যুদ্ধ করে এবং পরাজিত হয়। এ যুদ্ধ ম্যারাথনের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে প্রায় ৬ হাজার পারসিক সৈন্য নিহত হয়। পারসিকরা ��খন আরো সৈন্য নিয়ে এথেন্স আক্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন গ্রিকরা নগর বাঁচানোর জন্য দৌড়ে ফিরে যায়। অথবা, গ্রিকদের বিজয়ের সংবাদ দ্রুত রাজধানী এথেন্সে পৌঁছে দেবার জন্যে ফিডিপিডিস (Pheidippides) নামে এক সৈন্য ম্যারথন থেকে দৌড়ে সরাসরি এথেন্সের রাজদরবারে প্রবেশ করে। তারপরে সে “নেনিকেকামেন” (nenikēkamen) বা “আমরা জিতেছি” বলে মৃত্যুবরণ করে। ম্যারাথন থেকে এথেন্সের দূরত্ব ৪২.১৯৫ কি.মি (২৬.২১৯ মাইল)। দুটি ঘটনার মধ্যে যে কোন একটির ভিত্তিতে ম্যারাথন দৌড়ের প্রচলন হয়। দারিউসের মৃত্যুর পরে আকিমানিদ সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেয় আতোসার গর্ভে তার ছেলে জার্কসিজ দ্য গ্রেট (বা জার্কসিজ ১ম)। ক্ষমতায় আরোহন করে সে পিতার পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবার জন্য দুই লক্ষ সৈন্য ও এক হাজার যুদ্ধজাহাজ নিয়ে গ্রিকদের আক্রমণ করে। এ যুদ্ধের নাম থার্মোপিলির লড়াই (৪৮০ খ্রি.পূ.)। গ্রিকদের পক্ষে এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয় গ্রিসের স্পার্টা নগরের রাজা লিওনিডাস (১ম)। ভয়াবহ এ যুদ্ধে অবস্থা বেগতিক দেখে লিওনিডাস মাত্র ৩০০ সৈন্যকে রেখে বাকী সবাইকে পালানোর সুযোগ দেয়। যুদ্ধে গ্রিকরা পরাজিত হলেও এই সৈন্যরা অনেক পারসিক সৈন্যদের পরাজিত করে। এ যুদ্ধ নিয়ে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়- ‘দ্য ৩০০ স্পার্টানস’ (১৯৬২), ‘৩০০’ (২০০০) ও ‘মিট দ্য স্পার্টানস’ (২০০৮)। প্রায় একই সময়ে সালামিসের লড়াই নামে আরেকটি যুদ্ধে গ্রিকরা জয়লাভ করে। আকিমানিদ সাম্রাজ্য পবিত্র বাইবেলে জার্কসিজ দ্য গ্রেট-এর উল্লেখ রয়েছে। তবে সেখানে সে আহাজুরিয়াস নামে পরিচিত। ভিন্নমত থাকলেও অনেকে মনে করেন যে আহাজুরিয়াস নামে জার্কসিজকে বোঝানো হয়েছে। পবিত্র বাইবেলের বুক অভ এসথার, দানিয়েল, এজরা ও তবিতে আহাজুরিয়াসের উল্লেখ আছে। ই্হুদী ধর্মের বিশ্বাস মতে, আহাজুরিয়াসের রাণীর নাম এসথার। এসথারকে নিয়ে ৪৭০ বিসি- ‘এসথার এন্ড দ্য কিং’ (১৯৬০), দ্য বুক অভ এসথার’ (২০১৩), ‘এসথার’ (১৯৬০, ১৯৮৬,১৯৯৯), ‘কুইন এসথার: দ্য বাইবেল’ (১৯৯৯), ‘ওয়ান নাইট উইথ দ্য কিং’ (২০০৬) প্রভৃতি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এদউইন লঙের আঁকা এসথার (১৮৭৯) মেসিডোনিয় শাসন জার্কসিজের পরে আকিমানিদ সাম্রাজ্যে আর কোন শক্তিশালী সম্রাট আসেনি। অন্যদিকে, গ্রিসের মেসিডোনিয়ায় জন্ম এক মহাপরাক্রমশালী শাসক- আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। আলেকজান্ডার ৩৩৪ থেকে ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পারস্য সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ করেন এবং সম্রাট ৩য় দারিউসের সৈন্যদের পরাজিত করে পারস্য বিজয় করেন। আলেকজান্ডার তাঁর সেনাবাহিনীতে বহু পারসিক সেনাকে অন্তর্ভুক্ত করে নেন এবং তাঁর নির্দেশে সমস্ত গ্রিক উচ্চপদস্থ সেনা অফি��ারেরা পারসিক মহিলাদের বিয়ে করে। সে নিজেও সম্রাট ৩য় দারিউসের কন্যা (২য়) স্তাতেইরাকে বিয়ে করে। আকিমানিদ সাম্রাজ্য এ সময় আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট-এর মেসোডোনিয়া সাম্রাজ্যের (আর্গিদ রাজবংশের) অন্তর্ভূক্ত হয়। আকিমানিদ সাম্রাজ্যের বংশানুক্রম জরথুস্ত্রবাদ পারসিকদের ধর্ম বিশ্বাসকে জরথুস্ত্রবাদ বলা হয়ে থাকে। এটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। এ ধর্ম প্রবর্তকের নাম জোরোয়াস্টার বা জরথুস্ত্র (৬২৮-৫৫১ খ্রিস্টপূর্ব) । জরথুস্ত্র ধর্মের প্রধান উপাস্য দেবতার নাম ‘আহোরা মাজদা’। ন্যায়, সততা এবং বিচক্ষণতার প্রতীক আহোরা মাজদা মঙ্গলের দেবতা। তার প্রতীক হলো অগ্নি। পারসিকরা আগুনের পবিত্রতাকে ঈশ্বরের পবিত্রতার সাথে তুলনীয় মনে করেন। এই এ কারণে পারসিকদের অগ্নি উপাসক বলা হয়। অপরদিকে আহোর মাজাদা প্রতিদ্বন্দ্বী দেবতার নাম ‘আহরিমান’। সে অসত্য, পাপাচার অমঙ্গল এবং দুষ্ট দেবতা নামে পরিচিত। এ দেবতা জরা, মহামারী, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি ধ্বংসকারী শক্তির প্রতীক। জরথুস্ত্রবাদের ধর্মগ্রন্থের নাম আবেস্তা বা জেন্দাবেস্তা। এ গ্রন্থের সাথে বেদের বেশ মিল আছে। জরথুস্ত্রবাদের প্রতীক ফারাবাহার খ্রিস্টীয় ৯ম শতকে জরথুস্ত্রীয় ধর্মালম্বী অনেক পারসিকরা পারস্য থেকে ভারতে চলে আসেন। ভারতে এসে এরা প্রথম পা রাখে বর্তমান গুজরাতের সঞ্জান এলাকায়। এদের এই আগমন সম্পর্কে একটি চমৎকার ঘটনা প্রচলিত আছে। পারসিকদের আগমনের পর সনজানের শাসক একটি কানায় কানায় পূর্ণ দুধের পাত্র পারসিকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন তাঁর রাজ্যে আর কাউকে ঠাঁই দেয়ার জায়গা নেই। পারসিরা ঐ পাত্রে চিনি ঢেলে দেখিয়ে দেন পাত্র উপচে পড়ছে না। অর্থাৎ বোঝানোর চেষ্টা করেন চিনি যেমন দুধে মিশে যায় তেমনি তাঁরাও ওই এলাকার মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকবেন। এরপর শাসক পারসিকদের আশ্রয় দেন। বর্তমানে পৃথিবীতে এ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার। এরা ভারত, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, ইরান সহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশে বাস করে। জরথুস্ত্রীয় ধর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে দীক্ষিত করার জন্য নওজোত (বা নবজোত) নামে একটি অনুষ্ঠান পালিত হয়। সাত বছর বয়স হওয়ার আগে কারও নওজোত হয় না। তবে নওজোতের জন্য বয়সের কোন উর্ধ্বসীমা নেই। জরাথুস্ত্র ধর্মের মূল ভিত্তি হচ্ছে শুভচিন্তা শুভকথা এবং শুভকর্ম। মৃত ব্যক্তিদের পুনর্জীবন, পরকাল, ত্রাণকর্তার আবির্ভাব, পরকালের বিচার, স্বর্গ ও দোজখের প্রতি বিশ্বাস জরাথুস্ত্র ধর্মে স্থান পেয়েছে। নৈতিকতা, সততা প্রভৃতি মহৎ গুণ অর্জনে এ ধর্ম উৎস��হিত করে। জরথুস্ত্র মতবাদ বিশেষ করে পরকাল, ত্রাণকর্তার আবির্ভাব, স্বর্গ, পরকালের বিচার ইত্যাদির ধারণা ইহুদী, খৃস্টান এবং ইসলাম ধর্মে দেখা যায়। সিলুসিদ শাসন ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের মৃত্যু হলে তাঁর সেনা নেতাদের মধ্যে পারস্যের সিংহাসন দখলের লড়াই শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সেলুকাস (১ম) পারস্যের রাজা হন। তিনি পূর্বে সিন্ধু নদ থেকে পশ্চিমে সিরিয়া ও তুরস্ক পর্যন্ত বিশাল এলাকার রাজা ছিলেন। তাঁর বংশধরেরা পারস্যে সেলুকাসীয় বা সিলুসিদ রাজবংশ গঠন করে। সেলুকাসের সময়কালের দুটি উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে একটি ব্যাবিলনের এন্তিগোনাস (১ম) এর সাথে আর অন্যটি ভারতে মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাথে। প্রথমটিতে জয় লাভ করলেও দ্বিতীয়টিতে সিলুসিদরা পরাজিত হয়। ১ম সেলুকাসের পরে পারস্য সভ্যতায় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সিলুসিদ শাসকের নাম পাওয়া যায় না। সেলুকাস (১ম) ইরানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের পার্থীয় নামে যে জাতি বাস করতো তারা শক্তিশালী তীরন্দাজ ছিল। ছুটন্ত ঘোড়ায় বসে উল্টো দিকে ফিরে তীর এরা পটু ছিল। এ জন্য এভাবে তীর ছোড়ার কৌশলের নাম ‘পার্থীয়ান শট’। ২৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পার্থীয় জাতির লোকেরা সেলুকাসীয় রাজবংশকে ক্ষমতাচ্যুত করে পার্থীয় সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। এরপর প্রায় সাড়ে চারশো বছর (২৪৭ খ্রি.পূ.-২২৪ খ্রিস্টাব্দ) পারসিকরা পার্থীয়দের অধীনে ছিল। ১ম আরসাসিজ নামে এক যোদ্ধা এ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেছিল বলে পার্থীয় সাম্রাজ্যকে আরসাসিদ রাজবংশের শাসনও বলা হয়। (ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে) পর্ব-০১: পৃথিবীর গল্প: চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা পর্ব-০২: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (সুমেরীয়-আকেদীয়-গুটি-সুমেরীয়) পর্ব-০৩: পৃথিবীর গল্প: চীনে এগারো শত বছরের শাসনে দুই রাজবংশ (শিয়া ও শাং রাজবংশ) পর্ব-০৪: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (আসেরীয়া-ব্যাবিলনিয়া-হিটাইট-ক্যাসাইট-নব্য আসেরীয়া- নব্য ব্যবিলনীয়া) পর্ব-০৫: পৃথিবীর গল্প: ফারাও শাসনের উত্থান ও বিকাশ-ফারাও এবং কুশাইট শাসন পর্ব-০৬: পৃথিবীর গল্প: ফারাও শাসনের পুনরুত্থান-ফারাও-আকিমানিদ-আক্সুমাইট Read the full article
0 notes
Photo
প্রাচীন ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর কিছু মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি মৃত্যুদণ্ডের পদ্ধতি – রাচীন পারস্যের জনগণ ন্যায়বিচার বিশ্বাস করতো। যেকোনো অপরাধ করার জন্যই অপরাধীদের জন্য ছিল খুবই কড়া এবং উপযুক্ত শাস্তি। কোনো অপরাধীকেই তার প্রথম অপরাধের ফলে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো না। বরং বিচার করার আগে তার ভালো কাজগুলোও বিবেচনায় আনা হতো। এত কিছু করার পর শুধুমাত্র তাদেরই শাস্তি দেওয়া হতো যাদের কৃতকর্মের জন্য উপযুক্ত শাস্তি আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি কোনো অপরাধীর পাপের বোঝা যথেষ্ট হতো, পারস্যবাসীরা তার শাস্তি দিতে কোনোরকম কার্পণ্য বোধ করত না। তারা এমন সব অভাবনীয় পদ্ধতির শাস্তির প্রচলন ঘটিয়েছিল যা ছিল একইসাথে সৃজনশীল এবং নারকীয়ও । ১ চামড়ার চেয়ার: পারস্যের বিখ্যাত এক বিচারক ঘুষ নেওয়ার সময় ধরা পড়লে রাজা দারিউস দৃষ্টান্তমূল�� শাস্তি দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন। রাজা দারিউসের সভার অন্যান্য ব্যক্তিবর্গরা চিন্তাভাবনা করতে থাকলেন কিভাবে ন্যায়বিচার হতে পারে। পরবর্তী বিচারক যেন ভুল করেও ঘুষ নেওয়ার পথ না মাড়ায় সেজন্য অভাবনীয় এক শাস্তির বিধান প্রবর্তন করলেন তারা। সেই বিচারক কে গলা কেটে জবাই করার পর দারিউস জল্লাদদের আদেশ দিলেন তার দেহের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে তার চামড়া আলাদা করে ফেলার জন্য! তারপর এসব টুকরো সেলাই করে জোড়া দিয়ে বানানো হলো চেয়ার! মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরি করা এই চেয়ার তৈরি করা হলো পরবর্তী বিচারকদের জন্য, যেন তারা তাদের পূর্ববর্তীদের অপরাধ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই চামড়ার চেয়ারে বসা প্রথম ব্যক্তি হলো তারই নিজের ছেলে! বিচারকাজ চালানোর জন্য প্রতিদিনই তার ছেলেকে তার বাবার চামড়া দিয়ে বানানো চেয়ারে বসতে হতো। এভাবেই নিজের সাম্রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করলেন রাজা দারিউস! ২ ছাই এবং শ্বাসরোধ: প্রাচীন পারস্যদেশে নৃশংসভাবে শাস্তি দেওয়ার আরেকটি বিধান ছিলো ছাইয়ের মাধ্যমে শ্বাসরোধ করে মৃত্যুদন্ড এবং এগুলো বরাদ্দ ছিল সবচেয়ে খারাপ অপরাধের জন্য। রাজ্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা এবং দেবতাদের বিরুদ্ধাচরণ করা ব্যক্তিদের জন্য শাস্তিটি আসলেই ছিল ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের মতো। অপরাধীদেরকে প্রায় ৭৫ ফুট উঁচু একটি ছাইয়ে ভরা টাওয়ার থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হতো। ছাইয়ের স্তূপ অপরাধীর পতন কিছুটা রোধ করলেও দুই-একটা হাড় ভাঙা অসম্ভব কিছু ছিল না। এরপর চাকা ঘুরিয়ে অপরাধীর উপর চাপিয়ে দেওয়া হতো ছাইয়ের বিশাল স্তূপ। আসামীর নাক-গলার ভিতরে কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাই ঢুকে যেত এবং শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যুবরণ করত। অপরাধী ব্যক্তির মৃতদেহের অবশেষটুকুও তার পরিবার নিয়ে যেতে পারত না। ৩ পাথর মেরে হত্যা: দানিয়ুব থেকে সিন্ধু, কাস্পিয়ান থেকে নাইলের বিশাল স্রোত পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্য ন্যায়বিচারকে গুরুত্ব দিলেও সামাজিক অবস্থান উপেক্ষা করে বিচারকার্য চালানোর মতো অবস্থায় ছিল না। যার কারণে রাজপরিবারের অপরাধ উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল দাসদের কাঁধে। ঘটনাটাই শোনা যাক। ‘কিং অফ কিংস’ উপাধি নেওয়া দ্বিতীয় আরতেজেরজিস-এর মা ছিলেন প্যারিসাতিস। প্যারিসাতিস তার ছেলের প্রধান স্ত্রী স্তাতেইরাকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। দুজন দুজনকে এতটাই ঘৃণা করতেন যে সামনাসামনি খুন করার সুযোগ থাকলে হয়তো তা-ই করে ফেলতেন। এবং আরতেজেরজিসকে দুদিকেই তাল মিলিয়ে চলতে হতো। তিনি তার মা ও স্ত্রী দুজনকে একইসাথে খাবার খেতে ডাকতেন এবং খাবারের একই টুকরো সমান দুইভাগ করে খাওয়ার নির্দেশ দিতেন। এত কিছু করার পরও শেষরক্ষা হয়��ি। প্যারিসাতিসের নির্দেশে তার এক দাস ছুরির এক পাশে বিষ লাগিয়ে রাখেন। বিষ মাখানো মাংস খাওয়ার পর প্রিয়তমা স্ত্রী মারা যাওয়ায় আরতেজেরজিস মারাত্মক রেগে যান। কিন্তু তার এই রাগ তার মায়ের উপর ফলাতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে তার পুরোটাই গিয়ে পড়ে খাবার পরিবেশনকারী দাসদের উপর। তিনি একে একে সবার উপর নিপীড়ন চালাতে থাকেন এবং অবশেষে পেয়ে যান তার মাংস কাটা ব্যক্তিকে। জীবিত অবস্থাতেই তার মাথা পাথর মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। প্যারিসাতিস মৃত্যুদণ্ড থেকে বেঁচে গেলেও তাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়। ৪ পোকার আক��রমণ: কোনো জীবন্ত মানুষকে একগাদা ক্ষুধার্ত পোকার সামনে ফেলে রাখলে কেমন হবে? অমানবিক আর নিষ্ঠুর এই নির্যাতন শুধুমাত্র রাজার ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দকারী ব্যক্তির উপরই প্রয়োগ করা হতো। প্রথমে ঐ ব্যক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নগ্ন করে ফেলা হতো এবং ফাঁকা গাছের গুড়ির মধ্যে রেখে দেওয়া হতো; রৌদ্রতপ্ত দিনের আলোতে হাত-পা এবং মাথাটুকু শুধু বাইরে থাকত। এরপর তাকে জোর করে খাওয়ানো হতো দুধ আর মধু; যতক্ষণ না পর্যন্ত তার শরীরে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা যায় এবং এভাবেই তার মল-মূত্রের উপরেই তাকে শুইয়ে রাখা হতো। এরপর তার দেহের অনাবৃত জায়গাগুলোতে মধু লাগিয়ে পোকামাকড়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতো। ছারপোকা, তেলাপোকার আক্রমণে ধীরে ধীরে তার দেহ থেকে মাংস অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে ভিমরুল আর মৌমাছির হুলের আঘাততো রয়েছেই। এভাবে যতটা ধীরে সম্ভব তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হতো। কিছুদিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির মাংস পচা শুরু হয়ে যেত এবং দুর্গন্ধ ছড়াত। যার উপর এই পদ্ধতিটি প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছিল, সে প্রায় ১৭ দিন নরকযন্ত্রণা ভোগ করার পর পাড়ি জমিয়েছিল পরপারের উদ্দেশ্যে। ৫ তৃতীয় মৃত্যু: ‘বীরেরা মরে একবার, কাপুরুষেরা মরে বারবার‘ প্রবাদটি পার্সিয়ানদের ক্ষেত্রে অকাট্য সত্যি এবং তারা বিশ্বাসও করত কিছু মানুষ একবারের চেয়েও বেশিবার মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করার অবস্থায় এসেছে। এজন্য শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে তিন সংখ্যাটি বেশ ভালোভাবেই মেনে চলা হতো এবং এটি পরিচিত ছিল ‘দ্য ট্রিপল ডেথ’ নামে। প্রাচীন পারস্য সাম্রাজ্যের অধিপতিদের মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত রাজা সাইরাস দ্য গ্রেটের স্ত্রীকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য এক খোজার উপর নেমে আসে ভয়াবহ ট্রিপল ডেথ। প্রথমে তার অক্ষিকোটর থেকে সাঁড়াশি দিয়ে চোখ বের করে আনা হয়। চোখের ব্যথা কমে যাওয়ার পরে তার শরীরের চামড়া ছিলে ফেলা হয় এবং শেষমেশ কাঠের উপর বেঁধে হাত-পায়ের উপর পেরেক ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হয়। সাইরাসের ছেলেকে মেরে ফেলার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে ��ায়ক হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে ট্রিপল ডেথের খড়গ নেমে আসে এক সৈন্যের উপর। সাইরাসের স্ত্রী প্রথমে তাকে ১০ দিন ক্যাথেরিন হুইলে টান টান করে ঝুলিয়ে রাখেন; এরপর চোখ খুলে নিয়ে গলিত কাঁসা শরীরের উপর ঢেলে তাকে হত্যা করেন! ৬ সন্তান ভক্ষক: গল্পটা এক সেনাপতির; নাম তার হারপাগাস। যদিও কাহিনীটি গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়, তবুও জিনিসটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাজা আসতাগিয়েস একবার স্বপ্নে দেখেন তার নাতি সিংহাসন থেকে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিবে; এ কারণে তিনি তার সেনাপতি হারপাগাসকে আদেশ দেন বাচ্চাটিকে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসতে। হারপাগাস দয়াপরবশ হয়ে তা করেননি, বরং এক মেষপালকের উপর বাচ্চাটির দায়িত্ব দিয়ে আসেন। যখন পারস্যরাজ তার আদেশ অমান্য করার ব্যাপারটি জানতে পারলেন, তখন হারপাগাসের কপাল পোড়া শুরু হলো। হারপাগাসের ছেলেকে ধরে এনে তাকে জবাই করা হলো। তারপর তার শরীর টুকরো টুকরো করে তেলে ভেজে হারপাগাসের সামনে পরিবেশন করা হলো। হারপাগাস তখনও জানতেন না যে তিনি তার ছেলের মাংস খাচ্ছেন। এমনকি তার ছেলে যে মৃত সেটাই জানতেন না। তিনি খাওয়া শুরু করলে আসতাগিয়েস তার ছেলের কাটা মাথা তার মুখের সামনে ধরে বলেছিলেন, “তুমি কি জানো তুমি কোন জন্তুর মাংস এইমাত্র খেলে?” হারপাগাস জানতেন প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করলে তার পরিণতি তার ছেলের চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু হবে না। নিজের কান্না আটকিয়ে আসতাগিয়েসের আক্রোশ থেকে বাঁচতে বলেই ফেললেন, “রাজা যা করেছেন, ভালোই করেছেন!” তারপর রাজার কাছে অনুরোধ করে ছেলের মৃতদেহের বাকি অংশটুকু নিয়ে দাফন করলেন!
0 notes
Text
বিশ্বাসঘাতক মীর জাফরের কিছু জানা, অজানা ইতিহাস
‘মীর জাফর’ এই নামটি বাংলার মানুষের কাছে এখন একটি গালি, বেইমানের প্রতিশব্দ। কোন বাঙালিই আর তার সন্তানের নাম এটা রাখে না। যার কারনে এই নামটি গালিতে রূপ নিয়েছে, বেইমানের প্রতিশব্দ হয়েছে তার পুরো নাম ছিল মীর জাফর আলী খান। জন্মেছিল ১৬৯১ সালে। ইংরেজরা এই উপমহাদেশে বৃটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে একটা প্রধান হাত ছিলো সে। নদীয়ার পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের কাছে পরাজিত এবং নিহত হন। মীর জাফর সেই যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ছিল। তার নিয়ন্ত্রনে থাকা সৈন্যদল যুদ্ধে অংশ গ্রহন না করায় নবাব যুদ্ধে হেরে যান। এই ব্যাপার গুলো আমাদের জানা অনেক আগে থেকেই। এই মীর জাফর ছিলো ইরানি বংশোদ্ভূত। তার পীতার নাম সৈয়দ আহমেদ নাজাফি। ছিল বাবা-মা র দ্বিতীয় সন্তান। পারস্য থেকে একদম নিঃস্ব হয়ে তিনি বাংলায় আসে ভাগ্যান্বেষণে। এখানে এসে বিহারের নায়েব আলীবর্দী খানের অধীনে চাকুরী শুরু করে।
মীর জাফর ১৭৪০ সালে গিরিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে মীর জাফর আলীবর্দী খানের ��য়ে নবাব সরফরাজ খানের বির���দ্ধে যুদ্ধ করে। যুদ্ধে জয়লাভ করে আলীবর্দী খান। এই যুদ্ধে বেশ খ্যাতি লাভ করে সে। এই যুদ্ধের পরে আলীবর্দী নবাব হলে মীর জাফরকে মসনবদার পদ প্রদান করেন এবং নিজের বোন শাহ খানুমকে তার সাথে বিয়ে দেন। সেই সময় তার বেতন হয় ১০০ টাকা। এর পরে সে নবাবের সেনা প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়। ১৭৪১ সালের দিকে মারাঠারা বারবার বাংলায় আক্রমন করে এর ধন সম্পদ লুট শুরু করে। এদের দমনের জন্য নবাব আলীবর্দী খ��নকে বিরামহীন ভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়েছিল। সেই সময় মীর জাফর এসব যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করে। এবং সেনানায়ক হিসেবে বিশেষ কৃতিত্ব দেখায়। ১৭৪১ সালের ডিসেম্বরের দিকে মীর জাফর মারাঠাদের পরাজিত করে উড়িষ্যার বড়বাটি দূর্গ দখল দখল করে সেখানে সপরিবারে বন্দী থাকা নায়েব নাযিম ( উড়িষ্যার নায়েব এবং আলিবর্দীর ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা) এবং সৈয়দ আহমদ খানকে মুক্ত করে। ১৭৪৬ সালে মেদিনীপুরে মারাঠাদের সাথে এক বৃহৎ যুদ্ধে পুরো মারাঠা বাহিনীকে পরাজিত করে। আর এর জন্য নবাব তাকে উড়িষ্যার নায়েব নাযিম প্রদান করেন। মারাঠাদের বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধে জয় লাভ করে মীর জাফর ধিরে ধীরে উচ্চাভিলাষী ও ক্ষমতালোভী হয়ে পড়ে। মেদিনীপুরের যুদ্ধে হেরে মীর হাবিব এবং জানুজী ভসলের নেতৃত্বে এক বিশাল মারাঠা বাহিনী উড়িষ্যা থেকে মেদিনিপুরের দিকে অগ্রসর হয়। এতে মীর জাফর প্রথমবারের মত ভয় পেয়ে পালিয়ে বর্ধমানে আশ্রয় নেন। তাকে সাহয্য করার জন্য নবাব আলীবর্দী সৈন্যসহ আতাউল্লাহ খানকে পাঠান। কিন্তু তারা মারাঠা সৈন্যকে আক্রমণ না করে বরং আলীবর্দী কে হত্যা করে তার রাজ্য নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু করে। বাধ্য হয়ে নবাব নিজেই সৈন্য নিয়ে অগ্রসর হলে মীর জাফর নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত না হয়ে বরং নবাবের সাথে উদ্ধত আচরণ করে। নবাব তাকে সাথে সাথে পদচ্যুত করেন। অবশ্য পরবর্তীতে তাকে আবার পূর্বপদে বহাল করলেও ততদিনে মীর জাফর ডুবে গিয়েছিল দুর্নীতি, লোভের অতলে। ১৭৫০ সালে মীর জাফর বিভিন্ন দুর্নীতির কারনে ধরা পরলে, তার উপর নজর রাখার জন্য তার ভাই মির্জা ইসমাইলের পরিবর্তে খাজা আব্দুল হাদীকে সহকারী প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। সেনাপতি হওয়ার পর মীর জাফর শুরুর দিকে যে কৃতিত্ব দেখিয়েছিল শেষের দিকে এসে তা আর সে ধরে রাখতে পারে নি। বার্ধক্যজনিত কারনে নবাব অসুস্থ হয়ে গেলে মীর জাফর এবং রায় দুর্লভকে যুদ্ধে পাঠান। কিন্তু তারা অহেতুক সময়ক্ষেপ করতে থাকলে। বৃদ্ধ নবাব বাধ্য হয়েই আবার যুদ্ধে যান। যুদ্ধ বন্ধ করতে অবশেষে দশ বছর পর মারাঠাদের সাথে সন্ধী হলে তারা বাংলায় আক্রমন বন্ধ করে। এর কিছুদিন পরেই নবাব আলীবর্দী খানের দৌহিত্র সিরাজউদ্দৌলা বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব হন। প্রধান সেনাপতি হয়েও মীর জাফর সিরাজউদ্দৌলাকে নবাব হিসেবে মেনে নিতে পারেন��ি। সে আশা ছিল আলীবর্দী খানের পর সেই হবে নবাব। কিশোর সিরাজউদ্দৌলার কাছে নিজের নবার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় সে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লর্ড ক্লাইভের সাথে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করতে এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। আর সেই ষড়যন্ত্রে ইয়ার লতিফ, জগত শেঠ, রায় দুর্লভ, উর্মি চাঁদ প্রমুখকে যুক্ত করতে সক্ষম হয় সে। পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে এরা নিজেরাও যোগ দেয় না এবং নিজেদের অধীনস্ত সৈন্যবাহিনীকেও যুদ্ধ থেকে দূরে রাখে। দূরে দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে থাকে নবাবের বাহিনীর করুণ পরাজয়। এই ষড়যন্ত্রের কারনেই সিরাজউদ্দৌলা পলাশির যুদ্ধে পরাজিত হন। এবং বাংলা বিহার উড়িষ্যা স্বাধীনতা হারিয়ে দুশো বছরের পরাধীনতার অন্ধকারে প্রবেশ করে। ক্ষমতার লোভে মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সেটা যেমন সত্যি তেমনি অনেকের মতে মীর জাফরের মত জৈষ্ঠ, অভিজ্ঞ লোক থাকতে বালক অনভিজ্ঞ সিরাজুদ্দৌলাকে নবাব করে ভুল করেছিলেন আলীবর্দী খান। দীর্ঘদিন যুদ্ধ লড়ে একজন বালকের শাসন মানতে পারে নি মীর জাফর। যুদ্ধের পরে কোম্পানি মীর জাফরকে নবাবের মসনদে বসায়। কিন্তু ইংরেজদের সাথে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করতে ব্যর্থ হলে তাকে সরিয়ে ইংরেজরা তার জামাতা মীর কাশিমকে নবাব বানায়। কিন্তু মীর কাশিম এই পরাধীনতা মেনে না নিয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে। বক্সারের যুদ্ধে তাকে পরাজিত করে ইংরেজরা মীর জাফরকে আবার মসনদে বসায়। ততদিনে মীর জাফর বুঝে গিয়েছিল ইংরেজদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার একটা আঙ্গুল নড়ানোর ও ক্ষমতা নেই। আর ইংরেজরাও বুঝে গিয়েছিল এই বাংলা লুটে নিতে চাইলে মীর জাফরের মত লোকই তাদের দরকার হবে। যে মীর জাফর শুরুর দিকে আলীবর্দী খানের সেনাপতি হয়ে কৃতিত্ব দেখিয়েছিল, যুদ্ধে লড়েছিল সেই মীর জাফর ক্ষমতার লোভে আলীবর্দী খানের নাতি , বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। ক্ষমতার লোভ মানুষকে কতটা অন্ধ করে দেয়, বেঈমান বানিয়ে দেয় তার অন্যতম উদাহরণ এই মীরজাফর। ১৭৬৫ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি মীর জাফর বিশ্বাসঘাতকতার প্রতীক হয়ে, নিমকহারামের চিরকলঙ্ক মাথায় নিয়ে মৃত্যুবরন করে। মুর্শিদাবাদে তার বসবাসের বাড়িটিকে এখনো মানুষ নিমকহারাম দেউড়ী নামেই চেনে। লেখকঃ অনিক শাহরিয়ার লেখক ও অনুবাদক Read the full article
0 notes
Text
কে ছিলেন আসল সুলতান সুলেমান?
সুলতান সুলেমান ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান। ইতিহাসের কালজয়ী এক মহানায়ক ছিলেন তিনি। ১৫২০ থেকে ১৫৬৬ পর্যন্ত টানা ৪৬ বছর তিনি সফলভাবে সাম্রাজ্য শাসন করেছেন। এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা মিলিয়ে তিন মহাদেশের বিরাট অংশজুড়ে অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল তখন। তার নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ভীষণ সাহসী এই শাসক ছিলেন ন্যায়বিচারক ও সৎ। ইউরোপের ইতিহাসে তাকে…
View On WordPress
0 notes
Text
ফারাও শাসনের পুনরুত্থান (মিশরীয় সভ্যতা- ২য় ভাগ)
ফারাও শাসনের পুনরুত্থান: ফারাও-আকিমানিদ-আক্সুমাইট
ফারাও শাসনের পুনরুত্থান ঘটায় ১ম আহমোসিস। তিনি হাইকসস শাসনের (১৫, ১৬ ও ১৭তম বংশ) অবসান ঘটিয়ে মিশরের শাসন পুনরায় মিশরীয়দের হাতে ফিরিয়ে আনে। থিবজ শহরকে কেন্ত্র করে সে অষ্টাদশ বংশের (১৫৫০–১২৯২ খ্রি.পূ.) প্রতিষ্ঠা করে। এ বংশের অন্যান্য ফারাওদের মধ্যে হ্যাতশেপসুট, আকনাথুন (৪র্থ আহমুনহোথেপ) ও তাঁর স্ত্রী নেফারতিতি ও তুতানখামুনের নাম উল্লেখযোগ্য। আহমোসিস (১ম)আকনাথুননেফারতিতিতুতানখামুন ফারাও ৪র্থ আহমুনহোথেপ বা আখেনাথুন মিশরের অন্যতম বিখ্যাত রাজা। তিনি মিশরে বহুঈশ্বরবাদের অবসান ঘটিয়ে একেশ্বরবাদের প্রচলন করেন। তিনি নতুন সূর্য দেবতা আতেনের পূজা রীতি চালু করেন। আখেনাথুনের স্ত্রীর নাম ছিল নেফেরতিতি। স্বামীর মৃত্যুর পর কিছুকাল তিনি রাজসিংহাসনের অধিকারী হন। ফারাও তুতেনখামুন আখেনাথুনের পুত্র। আখেনাথুন দেবতা আতেনের নামে তাঁর নাম রেখে ছিলেন তুতেনখাতেন; কিন্তু সে পুনরায় আমুনসহ অন্য��ন্য দেবতাদের পুনরায় অধিষ্ঠিত করে নিজে তুতেনখামুন নাম গ্রহণ করে। তার জনগণরা তাকে অর্ধেক মানুষ এবং অর্ধেক দেবতা মনে করতো। অষ্টাদশ রাজবংশের ফারাওগণ ১৮তম বংশের শেষ ফারাও হরেমহেবের কোন উত্তরাধিকার ছিলো না। সে মারা গেলে তার উজির রামসিজ নামে মিশরের সিংহাসনে বসে। মিশরে শুরু হয় রামসিজ বংশের (১৯তম, ১২৯২ থেকে ১১৮৯ খ্রি.পূ.) শাসন। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাওয়ের রামসিজ দ্য গ্রেট (১ম রামসিজের নাতি ২য় রামসিজ)। তিনি প্রায় ৬৭ বছর মিশর শাসন করে। রামসিজকে নিয়ে ইংরেজি কবি পার্সি বেসি শেলির বিখ্যাত কবিতার নাম ‘অজিম্যানদিয়াস’। রামসিজ দ্য গ্রেট (শাসন খ্রি.পূ. ১২৭৯- ১২১৩) হিটাইট সাম্রাজ্যের শাসক ২য় মুয়াতাল্লির সাথে লেবানন-সিরিয়ার সীমান্তে রামসিজের এক ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। ইতিহাসে এ যুদ্ধ ‘কাদেশের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ১৬ বছর যুদ্ধের পর ‘মিশর-হিটাইট শান্তি চুক্তি’র মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান হয়। কাদেশের যুদ্ধ (১২৭৪ খ্রি.পূ.) ইহুদি, খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্মে (২য়) রামসিজ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। মোশি ইহুদি, খ্রিস্ট,এবং ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত পয়গম্বর। মিশরীয়রা ইসরাইলিদেরকে দাস হিসেবে ব্যবহার করতো। এসময় মিশরের লিবাইট (বনী-ইসরাঈল) নামক ইসরাইলি পরিবারে মোশি জন্মগ্রহণ করেন। জ্যোতিষী গণনা করে রামেসিজকে বলেছিলেন, ইহুদি পরিবারের মধ্যে এমন এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যে ভবিষ্যতে মিশরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই তিনি আদেশ দিলেন কোনো ইহুদি পরিবারে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই যেন তাকে হত্যা করা হয়। জন্মের পর মোশির মা জোশিবেদ সকলের চোখের আড়ালে সম্পূর্ণ গোপনে শিশুসন্তানকে বড় করে তুলতে লাগলেন। এভাবে তিন মাস যাওয়ার পর সন্তানকে গোপন রাখা আর সম্ভব পর হচ্ছিল না। তখন পিতা আমরাম এবং জোশিবেদ শিশু মোশিকে একটা ছোট ঝুড়িতে করে নীল নদে ভাসিয়ে দেয়। নদীর পাড় ধরে শিশুবাহী ঝুড়িটিকে অনুসরণ করে চললেন মোশির বোন মিরিয়াম। ঝুড়িটি গিয়ে পৌছল এমন একটি ঘাটে যেখানে ফারাও রামসিজের কন্যা বিথিয়া (বা স্ত্রী আছিয়া) স্নান করছিল। ফুটফুটে সুন্দর একটা বাচ্চাকে একা পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হলো। সে তাকে তুলে নিয়ে এলো রাজপ্রাসাদে। সেখানে জোশিবেদকেই মোশির ধাত্রী হিসেবে নিযু্ক্ত করা হয়। এভাবে মোশি ফারাও প্রাসাদেই বড় হয়। এক্সোডাস ম্যাপএক্সোডাস ম্যাপ-২ পরবর্তীকালে রামসিজের সাথে বি��োধের জের ধরে সকল ইসরাইলি দাসদেরকে মুক্ত করে মোশি সিনাই পর্বতে চলে যান। ইতিহাসে এ ঘটনা ‘এক্সোডাস’ (মহাযাত্রা) নামে পরিচিত। এ পর্বতে অবস্থান কালে মোশি ‘টেন কমান্ডমেন্ট’ (ওল্ড টেস্টামেন্টের ১০ মূলনীতি) লাভ করেন। মূসা ও রামসেজের এ ঘটনাকে আশ্রয় করেবেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘টেন কমান্ডমেন্টস’ (১৯২৩, ১৯৫৬, ২০০৭) ও ‘এক্সোডাস: গডস অ্যান্ড কিংস’ (২০১৪)। টেন কমান্ডমেন্টস মমি মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম এক নিদর্শন। মমি হল মৃতদেহ সংরক্ষণ করার বিশেষ এক পদ্ধতি। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করতো যে, মৃত্যুর পর মানুষ আরেক পৃথিবীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই যাত্রা শেষে পরকালে বসবাসের জন্য তাদের দেহ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। আর এই ধারণা থেকে তারা মমি বানানো শুরু করে। মিশরীয়রা শুধু মানুষ নয়, অনেক প্রাণী যেমন- কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির মৃতদেহকেও মমি বানিয়ে রাখতো। মিশরীয় সভ্যতায় আমরা যে ধরণের মমি দেখতে পাই সেগুলো ধর্মীয় কারণে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হত। এগুলোকে বলে এন্থ্রোপজেনিক মমি। কিন্তু কিছু মমি সৃষ্টি হয়েছিল দুর্ঘটনাবশত। যেমন, গুয়ানাজুয়াতো, মেক্সিকোতে একশ এর বেশি মমির সন্ধান পাওয়া গেছে যাদের ইচ্ছাকৃত ভাবে মমি করা হয়নি। ধরে নেয়া হয়, প্রচণ্ড গরম বা তীব্র ঠাণ্ডার তাপমাত্রা, বদ্ধ কোন জলাভূমির মত বায়ু শূন্য অবস্থায় অথবা এলাকার মাটির নিচে বিপুল পরিমাণে সালফার এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থের কারণে অনেক মৃতদেহ মমিতে পরিণত হয়েছে। এগুলোকে বলে স্পন্টেনিয়াস মমি। এ কারণে লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, ইরান, সাইবেরিয়া, ডেনমার্ক, ফিলিপিন, হাঙেরি, ইটালি ইত্যাদি দেশেও মমির অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যে সব দেহের মমি করা হতো তাদের শুকনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো লিলেন কাপড়ে পেঁচিয়ে ক্যানোপিক জার নামক চার ধরণের বয়ামে ভরে রাখা হত। প্রতিটি বয়ামের ঢাকনাগুলো মিশরীয় দেবতা হোরাসের ৪ পুত্র- ইমসেটি, হেপি, দুয়ামাটেফ, কেবেসেনাফ এর আদলে তৈরি করা হত। মানুষের মাথার মত ইমসেটি জারে যকৃত, বেবুনের মাথার মত হেপি জারে ফুসফুস, খেকশিয়ালের মাথার মত দুয়ামাটেফ জারে পাকস্থলী এবং বাজপাখির মাথার মত জারে অন্ত্রসমূহ রাখা হতো। কফিনের মতো যে বাক্সের মধ্যে ��মি সংরক্ষণ করা হতো তাকে বলা হয় স্যাক্রোফ্যাগাস। ক্যানোপিক জার মমি রহস্য সবসময়ই মানুষকে অভিভূত করেছে। এ নিয়ে বেশ কিছু চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ‘দি এজটেক মামি’ (১৯৫৭), ‘টেইল অভ দি মামি’ (১৯৯৮), ‘দি মামি’ (১৯৯৯), ‘দ্য মামি রিটার্নস’(২০০১), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং’ (২০০২), ‘লেজিয়ন অভ দ্য ডেড’ (২০০৫), ‘দ্য কারস অভ কিং টুট’স টুম’ (২০০৬), ‘দি মামিঃ টুম অভ দি ড্রাগন এমপেরর’ (২০০৮), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ২: রাইজ অভ অ্যা ওয়ারিওর’ (২০০৮) এবং ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ৩: ব্যাটেল ফর রিডেম্পশন’ (২০১২) ‘দি মামি’ (২০১৭) উল্লেখযোগ্য। স্যাক্রোফ্যাগাস ও মমি প্রাচীন মিশরীয় সাহ্যিত্যের মধ্যে ‘বুক অভ ডেড’ বেশ পরিচিত । মিশরীয়রা পরকালে বিশ্বাস করতো। তাদের ধারণা ছিল মৃত্যুর পর আত্মা ‘সেখেত-আরু’ নামের স্বর্গে চলে যায়। তবে সেখানে যাবার আগে মৃতদের হৃদয়কে উটপাখির পালকের বিপরীতে দাড়িপাল্লায় ওজন করা হয়। যদি হৃদয় এই পালকের চেয়ে হালকা হয় তাহলে সে স্বর্গে যেতে পারে। যদি ভারি হয় তাহলে তাকে ‘আম্মিত’ নামক দৈত্যের খাদ্যে পরিণত হতে হয়। তাই পরকালে ম���ত ব্যক্তিদের আত্মার দুর্গম পথ পাড়ি দেবার জন্যে পেপিরাসে বেশ কিছু মন্ত্র লিখে মৃত ব্যক্তির সাথে সমাহিত করা হতো। মন্ত্র সম্বলিত এ সংকলনের নাম ‘বুক অভ ডেড’। ১৯তম বংশের পরে আরও প্রায় পাঁচশো বছর (২০-২৪তম বংশ; ১১৮৯-৭২০ খ্রি.পূ.) ফারাওদের শাসন টিকে ছিলো। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার পতনের শুরু হয় কুশাইট নামে এক জাতির মাধ্যমে। এ সভ্যতার প্রায় সমসাময়িক সময়ে বর্তমান দক্ষিণ মিশর ও সুদানের নুবিয়া অঞ্চলে তীরন্দাজ হিসেবে খ্যাত কুশাইট জাতি কর্মা নামে এক শহরের গোড়াপত্তন করেছিল। কালক্রমে এ জাতি মিশরীয়দের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে সমৃদ্ধশালী হয়। খ্রি. পূ. ১১ শতকের শেষ ভাগে মিশরীয় ফারাওদের শাসন দূর্বল হয়ে পড়লে কুশাইটরা মিশরে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে থাকে। ৭৫০/৭৪৪ খ্রি.পূর্বাব্দে কুশাইট রাজা কাশতা মিশরের সিংহাসনে আরোহন করে কুশ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। কুশ রাজ্য নুবিয়ান রাজ্য নামেও পরিচিত। কুশ বা নুবিয়ান রাজ্য (৭০০ খ্রি.পূ.) কুশ রাজ্যের সময়কালে বিশ্বে এক মহা পরাক্রমশালী সাম্রাজ্য ছিলো- আকিমানিদ রাজ্য (পারস্য সম্রাজ্যের প্রথম ভাগ)। এ সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক মহান সাইরাসের পুত্র (২য়) ক্যামবাইসেস কুশ রাজ্যকে আকেমেনিদ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত (৫২৫ খ্রি.পূ.) করে। আক্সুমাইট রাজ্য ২য় শতকে ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া অঞ্চলে আক্সুমাইট রাজ্যের গোড়াপত্তন হয়েছিলো। এই আক্সুমাইট জাতির আক্রমণ ও লুণ্ঠনে কুশ রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘটে। (ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চল��ে) পর্ব-০১: পৃথিবীর গল্প: চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা পর্ব-০২: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (সুমেরীয়-আকেদীয়-গুটি-সুমেরীয়) পর্ব-০৩: পৃথিবীর গল্প: চীনে এগারো শত বছরের শাসনে দুই রাজবংশ (শিয়া ও শাং রাজবংশ) পর্ব-০৪: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (আসেরীয়া-ব্যাবিলনিয়া-হিটাইট-ক্যাসাইট-নব্য আসেরীয়া- নব্য ব্যবিলনীয়া) পর্ব-০৫: পৃথিবীর গল্প: ফারাও শাসনের উত্থান ও বিকাশ-ফারাও এবং কুশাইট শাসন Read the full article
0 notes
Text
ফারাও শাসনে মিশরীয় সভ্যতার উত্থান ও বিকাশ (১ম ভাগ)
ফারাও এবং কুশাইট শাসন
প্রাচীন মিশরের মানচিত্র মিশরীয় সভ্যতা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম সভ্যতা। বিশ্বের দীর্ঘতম আফ্রিকার নীল নদের অববাহিকায় এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে দশটি দেশ পার হয়ে সর্বশেষে মিশর অতিক্রম করে নীল নদ ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়। মিশরের মধ্য দিয়ে এ নদের প্রবাহকে কেন্দ্র করে প্রাচীন মিশরকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। সে সময়ে ভুমধ্যসাগরের নিকটবর্তী মিশরের উত্তরাঞ্চলকে ‘নিম্নস্থ মিশর’ ও দক্ষিণাঞ্চলকে ‘ঊর্ধ্বস্থ মিশর’নামে ভিন্ন ভিন্ন শাসকদের আওতাধীন ছিল। মিশরীয় সভ্যতার প্রথম বিখ্যাত রাজা, ঊর্ধ্বস্থ মিশরের রাজা নারমের (বা মেনেজ) দুই মিশরকে একত্রিত করে সমগ্র মিশরে একটি শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলেন। রাজা নারমের ধারণা করা হয়, নারমেরের আগে ঐ অঞ্চলের রাজাদের নাম ছিল স্করপিয়ন বা ‘কাঁকড়াবিছা’। এ ধারণাকে কেন্দ্র করে ‘দ্য স্করপিয়ন কিং’ (২০০২), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ২: রাইজ অভ অ্যা ওয়ারিওর’ (২০০৮) এবং ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ৩: ব্যাটেল ফর রিডেম্পশন’ (২০১২), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ৪: কোয়েস্ট ফর পাওয়ার’ (২০১৫), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং: বুক অভ সোলস’ (২০১৮) নামে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। হায়ারোগ্লিফিক্স মিশরীয় ফারাও নারমেরের রাজত্বকালে প্রাচীন মিশরীয়দের আরেক বিষ্ময়কর আবিস্কার তাদের চিত্রভিত্তিক বর্ণমালা- হায়ারোগ্লিফিক্স। মিশরীয় রাজ দরবারের যে সব ব্যক্তিরা হায়ারোগ্লিফিক্সের মাধ্যমে রাজাদেশ বা অন্যান্য বিষয়াবলী লিপিবদ্ধ করতো তাদেরকে স্ক্রাইব বা দপ্তরি বলা হতো। মিশরীয় স্ক্রাইব এখানে একটি বিষয় জেনে নেয়া ভালো। চীনাদের পিকটোগ্রাম লিখন পদ্ধতি ‘ওরাকল বোন স্ক্রিপ্ট’ এর সাথে সুমেরীয়দের কিউনিফর্ম ও মিশরীয়দের হায়ারোগ্লিফ্লিকসের পার্থক্য এই যে, চীনারা ছবি শব্দ বা বাক্য বোঝাতো। অন্যদিকে, কিউনিফর্মে বিভিন্ন রেখাচিত্র ও হায়ারোগ্লিফ্লিকসে ছবি দিয়ে বর্ণ বোঝাতো। হায়ারোগ্লিফিক্স পাঠ বর্ণমালার সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিশরীয়দের যেমন বিশেষ অবদান ছিল, তেমনি তারা পেপিরাস নামের লেখার উপযোগী এই চমৎকার উপাদান আবিস্কার করে। পেপিরাস এক ধরণের কাগজ। মিশরের জলাভূমিতে পেপিরাস নামে নলখাগড়া জাতীয় এক ধরণের গাছ পাওয়া যেত। সেই গাছ কেটে প্রাপ্ত খোলকে পাথর চাপা দিয়ে রোদে শুকানো হতো। শুকানো খোলগুলো পাথরের চাপে সোজা হয়ে লেখার উপযোগী হতো। পরবর্তীতে এ খোলাগুলোকে জোড়া দিয়ে রোল আকারে সংরক্ষণ ক��া হতো। এভাবে তৈরী লেখা বা চিত্রকলার উপযোগী মাধ্যমকে পেপিরাস বলা হয়। ভাষা শিক্ষা সফটওয়ার হিসেবে ‘রোসেটা স্টোন’ নামটি বেশ পরিচিত। রোসেটা স্টোন মূলতঃ প্রাচীন মিশরের একটি বড় পাথর ফলক বা শিলালিপির ভাঙা অংশ। এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সবচেয়ে বিখ্যাত বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। এ পাথরে খোদাই করে হায়ারোগ্লিফিকস, ডেমোটিক (প্রাচীন মিশরীয়দের সাধারণ ‘জনগণের ভাষা’) এবং গ্রিক – এই তিন ধরনের লিপিতে ১৩ বছর বয়সী পঞ্চম টলেমি এর রাজ্যাভিষেকের উপলক্ষ্যে পুরোহিত পরিষদের সম্মতিসূচক ফরমান লিপিবদ্ধ করা হয়। মিশরীয় পুরাতত্ত্বে রোসেটা স্টোনের গুরুত্ব অপরিসীম। এটা আবিস্কৃত হবার পূর্বে কেউ মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকস পড়তে জানতো না। যেহেতু লেখাগুলোতে একই জিনিষ ভিন্ন তিনটি লিপিতে লেখা হয়েছে, এবং গবেষকগণ প্রাচীন গ্রিক পড়তে জানতেন, তাই রোসেটা স্টোন হায়ারোগ্লিফ পাঠোদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে পরিণত হয়। রোসেটা স্টোন নিম্নস্থ মিশরের মেমফেস, ঊর্ধ্বস্থ মিশরের থিবজ (বর্তমানে লুকশর) এবং হর্ন অভ আফ্রিকা অঞ্চলের পান্ট ছিল প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিখ্যাত কয়েকটি স্থান। মিশরের প্রাচীনতম পিরামিডগুলি মেমফিসের গিজা ও সাক্কারায় আবিষ্কৃত হয়েছে। ‘ভ্যালি অভ দ্য কিংস’ ও ‘ভ্যালি অভ দ্য কুইনস’এর জন্য থিবজ বিখ্যাত। এ সকল উপত্যকায় ফারাও ও তাঁদের স্ত্রীদের সমাহিত করা হতো। পান্ট অঞ্চল সোনা ও হাতির দাঁতের জন্য বিশেষ বিখ্যাত ছিল বলে মিশরীয়দের সাথে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য চলতো। প্রাচীন মিশরীয়রা বহুশ্বরবাদী ছিল। তাদের সকল দেবী-দেবীর উৎপত্তি হয়েছে ‘নান’ দেবতা থেকে। তারা যে সব দেব-দেবীর পূজা করতো তাদের মধ্যে আমুন, আনুবিস, আইসিস, হোরাস, মাত, ওসিরিস, রা, সেথ ও সেখমেট উল্লেখযোগ্য। আমুন সৃষ্টির দেবতা, আনুবিস মৃতের জগতের অধিকর্তা; আইসিস শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় দেবী, ওসিরিসের পত্নী এবং হোরাসের মা; হোরাস আকাশ, সূর্য, রাজত্ব, প্রতিরক্ষা এবং সুস্থতার দেবতা; মাত সত্য, ভারসাম্য, আদেশ, আইন, নৈতিকতা ও সুবিচার এর দেবী; ওসিরিস পরকালের বিচারক, শস্য ও পুনর্জন্মের দেবতা; রা মধ্যদিনের সূর্য দেবতা; সেখমেট যুদ্ধের দেবী এবং সেথ ছিল বিশৃঙ্খলা, মরুভূমি ও ন���সংশতার দেবতা। মিশরীয় দেব-দেবীর পরিবার চিকিৎসা বিদ্যায় এখনও প্রতিরক্ষা এবং সুস্থতার দেবতা হোরাসের উপস্থিতি রয়েছে। ডাক্তারের যে কোন পেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্রের দিকে তাকালে Rx শব্দ যুগল আমাদের চোখে পড়ে। এই Rx-এর R এর অর্থ ‘রেসিপি’ (recipe)। আদেশসূচক বাক্যের ক্রিয়া হিসেবে ‘রেসিপি’ বা R বোঝায় ‘এটা লও’ (take this)। ব্যবহারিক অর্থে Rx এখন ‘পেসক্রিপশন’ বা সাধারণ অর্থে ‘ঔষধ’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। Rx-এর সাথে প্রাচীন মিশরের একটি গল্প মিশে আছে। সেটা হলো ‘হোরাস’ দেবতার চোখ। গ্রামে-গঞ্জে তাবিজ যেভাবে প্রতিরক্ষা কবজ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেমনি প্রাচীন মিশরীয়দের প্রতিরক্ষা কবজ ছিল ‘হরুসের চোখ’। চোখের এই প্রতীকটি কালক্রমে Rx রূপ ধারণ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। মিশরীয় দেবতা বিশেষ করে হোরাসকে আশ্রয় করে নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের নাম ‘গডস অভ ইজিপ্ট’ (২০১৬)। Rx প্রতীক প্রাচীন মিশরীয় রাজাদেরকে ফারাও বলা হতো। ফারাওরা নিজেদেরকে কখনো ঈশ্বর, কখনো ঈশ্বরের প্রতিনিধি দাবী করতেন। ফারাওদের মধ্যে জোসার, স্নেফ্রু, খুফু, জেডেফ্রে, খাফ্রে, সবেকসেফেরু, ১ম আহমোসিস, হ্যাতশেপসুট, আকনাথুন (৪র্থ আহমুনহোথেপ) ও তাঁর স্ত্রী নেফারতিতি, তুতানখামুন এবং র্যামসিজ দ্য গ্রেট (২য় র্যামসিজ) এর নাম উল্লেখযোগ্য। মিশরের ফারাওদের ইতিহাস কয়েকটি রাজবংশে বিভক্ত। থিনিস নামের কোন এক শহরকে কেন্দ্র করে রাজা নারমের যে ফারাও রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে সেটি প্রথম বংশ। খ্রি.পূ. ৩০ শতকে এ বংশের সমাপ্তি ঘটে। থিনিসেই দ্বিতীয় বংশ (২৮৯০–২৬৮৬ খ্রি.পূ.) ও মেমফিস শহরে তৃতীয় ফারাও বংশ (২৬৮৬–২৬১৩ খ্রি.পূ.) গড়ে ওঠে। তবে তৃতীয় বংশের ফারাও জোসার বাদে এই দুই রাজবংশের মধ্যে বিখ্যাত কোন শাসকের নাম পাওয়া যায় না। ফারাও জোসারফারাও খাফ্রেফারাও খুফুফারাও জেডেফ্রেফারাও স্নেফ্রু স্নেফ্রু, খুফু, জেডেফ্রে, খাফ্রে- এই চার ফারাও মেমফিস শহরে গড়ে ওঠা চতুর্থ বংশের (২৬১৩–২৪৯৪ খ্রি.পূ.) ফারাও। এরা সবাই পিরামিড তৈরির জন্য বিখ্যাত। পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো মিশরের পিরামিড। চতুর্থ রাজবংশের ফারাওগণ পিরামিড হলো এক প্রকার জ্যামিতিক আকৃতি বা গঠন যার বাইরের তলগুলো ত্রিভূজাকার এবং যারা শীর্ষে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। বিভিন্ন ফারাওরা বিভিন্ন সময়ে তাদের সমাধিক্ষেত্র হিসেবে এ সব পিরামিড নির্মাণ করে। খুফুর পিরামিড মিশরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। স্থপতি ইমহোটেপের নির্দেশনায় ফারাও জোসার সবচেয়ে পুরনো পিরামিডটি নির্মাণ করে। ফারাও স্নেফ্রু নির্মাণ করে ‘অবনত পিরামিড’ ও ‘লাল পিরামিড’। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় গিজা'র পিরামিডটি নির্মাণ করে ফারাও খুফু। তাই এটা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। মিশরের মতো সুউচ্চ না হলেও অন্যান্য কয়েকটি দেশে বিভিন্ন ধরণের ছোট-বড় পিরামিড বা পিরামিড সদৃশ স্থাপনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যেমন- ইরাক, সুদান, নাইজেরিয়া, গ্রিস, স্পেন, চীন, ইটালি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পেরু। পিরামিডের মতো মিশরীয় সভ্যতার আরেক নিদর্শনের নাম গিজার প্রকাণ্ড স্ফিংস। স্ফিংস একটি দোআঁশলা পৌরাণিক প্রাণি যার সিংহাকৃতির শরীরের উপরে মানব মাথা বসানো। মিশরের মতো গ্রীক পুরাণেও স্ফিংসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মিশরীয় স্ফিংক্সগুলো সাধারণত পুরুষ আকৃতির কিন্তু গ্রীক পুরাণের স্ফিংসরা নারী-আকৃতির হয়। বিভিন্ন পুরাণে স্ফিংক্স বা স্ফিংক্স সদৃশ কাল্পনিক প্রাণিকে মন্দির কিংবা সমতুল্য কোন অঞ্চলের প্রবেশদ্বারের প্রহরীস্বরূপ বর্ণনা করা হয়। ফারাও জেডেফ্রে বা ফারাও খাফ্রে গিজার প্রকাণ্ড স্ফিংসটি নির্মাণ করে বলে মনে করা হয়। গিজার স্ফিংস চতুর্থ বংশের পরবর্তী আটশো বছরে মেমফিস শহরকে কেন্দ্র করে পঞ্চম থেকে অষ্টম বংশ, হেরাক্লিওপলিস ম্যাগনা শহরে নবম ও দশম এবং থিবজ শহরে একাদশ ও দ্বাদশ, ইচতাওয়ায়ি শহরে ত্রয়োদশ এবং এভারিস শহরে চতুর্দশ ফারাও বংশ গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে দ্বাদশ রাজবংশের চার আমেনেমহাত ও তিন সেনুসরেত ফারাওরাও পিরামিড নির্মাণ করে। এছাড়া আর কোন রাজবংশের তেমন উল্লেযোগ্য কোন কীর্তি পাওয়া যায় না। দ্বাদশ রাজবংশের ফারাওগণ প্রাচীন মিশরে পুরুষদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নারী ফারাও ছিল। প্রথম নারী ফারাও ছিলো দ্বাদশ বংশের ফারাও সবেকনেফেরু। দ্বিতীয় নারী অষ্টাদশ বংশের ফারাও হ্যাতশেপসুট পান্টের সাথে মিশরের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার করেন। মিশরে নারী শাসকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মিশর শাসন করেছিলেন। ফারাও হ্যাতশেপসুটফারাও সবেকনেফেরু খ্রিস্টপূর্ব সতের শতকের মাঝামাঝি সময়ে হাইকসস (‘পরদেশি শাসক’) নামের এক যাযাবর জাতি প্রাচীন মিশরীয় ফারাওদের রাজত্বকালের বিচ্ছেদ ঘটায়। হাইকসসরা ছিল পশ্চিম এশিয়ার সেমেটিক যাযাবর। নীলনদের ব-দ্বীপের অ্যাভারিস নগর হাইকসস জাতিগোষ্ঠীর রাজধানী ছিল বলে ধারণা করা হয়। এদের কাছ থেকে মিশরীয়রা ব্রোঞ্জ, নতুন অস্ত্র এবং ঘোড়াটানা রথের ব্যবহার শিখেছিল। (ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে) পর্ব-০১: পৃথিবীর গল্প: চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা পর্ব-০২: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (সুমেরীয়-আকেদীয়-গুটি-সুমেরীয়) পর্ব-০৩: পৃথিবীর গল্প: চীনে এগারো শত বছরের শাসনে দুই রাজবংশ (শিয়া ও শাং রাজবংশ) পর্ব-০৪: পৃথিবীর ���ল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (আসেরীয়া-ব্যাবিলনিয়া-হিটাইট-ক্যাসাইট-নব্য আসেরীয়া- নব্য ব্যবিলনীয়া) Read the full article
0 notes
Text
ফারাও শাসনে মিশরীয় সভ্যতার উত্থান ও বিকাশ (১ম ভাগ)
ফারাও এবং কুশাইট শাসন
প্রাচীন মিশরের মানচিত্র মিশরীয় সভ্যতা পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম সভ্যতা। বিশ্বের দীর্ঘতম আফ্রিকার নীল নদের অববাহিকায় এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের ভিক্টোরিয়া হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে দশটি দেশ পার হয়ে সর্বশেষে মিশর অতিক্রম করে নীল নদ ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়। মিশরের মধ্য দিয়ে এ নদের প্রবাহকে কেন্দ্র করে প্রাচীন মিশরকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। সে সময়ে ভুমধ্যসাগরের নিকটবর্তী মিশরের উত্তরাঞ্চলকে ‘নিম্নস্থ মিশর’ ও দক্ষিণাঞ্চলকে ‘ঊর্ধ্বস্থ মিশর’নামে ভিন্ন ভিন্ন শাসকদের আওতাধীন ছিল। মিশরীয় সভ্যতার প্রথম বিখ্যাত রাজা, ঊর্ধ্বস্থ মিশরের রাজা নারমের (বা মেনেজ) দুই মিশরকে একত্রিত করে সমগ্র মিশরে একটি শক্তিশালী রাজ্য গড়ে তোলেন। রাজা নারমের ধারণা করা হয়, নারমেরের আগে ঐ অঞ্চলের রাজাদের নাম ছিল স্করপিয়ন বা ‘কাঁকড়াবিছা’। এ ধারণাকে কেন্দ্র করে ‘দ্য স্করপিয়ন কিং’ (২০০২), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ২: রাইজ অভ অ্যা ওয়ারিওর’ (২০০৮) এবং ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ৩: ব্যাটেল ফর রিডেম্পশন’ (২০১২), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং ৪: কোয়েস্ট ফর পাওয়ার’ (২০১৫), ‘দ্য স্করপিয়ন কিং: বুক অভ সোলস’ (২০১৮) নামে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। হায়ারোগ্লিফিক্স মিশরীয় ফারাও নারমেরের রাজত্বকালে প্রাচীন মিশরীয়দের আরেক বিষ্ময়কর আবিস্কার তাদের চিত্রভিত্তিক বর্ণমালা- হায়ারোগ্লিফিক্স। মিশরীয় রাজ দরবারের যে সব ব্যক্তিরা হায়ারোগ্লিফিক্সের মাধ্যমে রাজাদেশ বা অন্যান্য বিষয়াবলী লিপিবদ্ধ করতো তাদেরকে স্ক্রাইব বা দপ্তরি বলা হতো। মিশরীয় স্ক্রাইব এখানে একটি বিষয় জেনে নেয়া ভালো। চীনাদের পিকটোগ্রাম লিখন পদ্ধতি ‘ওরাকল বোন স্ক্রিপ্ট’ এর সাথে সুমেরীয়দের কিউনিফর্ম ও মিশরীয়দের হায়ারোগ্লিফ্লিকসের পার্থক্য এই যে, চীনারা ছবি শব্দ বা বাক্য বোঝাতো। অন্যদিকে, কিউনিফর্মে বিভিন্ন রেখাচিত্র ও হায়ারোগ্লিফ্লিকসে ছবি দিয়ে বর্ণ বোঝাতো। হায়ারোগ্লিফিক্স পাঠ বর্ণমালার সৃষ্টির ক্ষেত্রে মিশরীয়দের যেমন বিশেষ অবদান ছিল, তেমনি তারা পেপিরাস নামের লেখার উপযোগী এই চমৎকার উপাদান আবিস্কার করে। পেপিরাস এক ধরণের কাগজ। মিশরের জলাভূমিতে পেপিরাস নামে নলখাগড়া জাতীয় এক ধরণের গাছ পাওয়া যেত। সেই গাছ কেটে প্রাপ্ত খোলকে পাথর চাপা দিয়ে রোদে শুকানো হতো। শুকানো খোলগুলো পাথরের চাপে সোজা হয়ে লেখার উপযোগী হতো। পরবর্তীতে এ খোলাগুলোকে জোড়া দিয়ে রোল আকারে সংরক্ষণ করা হতো। এভাবে তৈরী লেখা বা চিত্রকলার উপযোগী মাধ্যমকে পেপিরাস বলা হয়। ভাষা শিক্ষা সফটওয়ার হিসেবে ‘রোসেটা স্টোন’ নামটি বেশ পরিচিত। রোসেটা স্টোন মূলতঃ প্রাচীন মিশরের একটি বড় পাথর ফলক বা শিলালিপির ভাঙা অংশ। এটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের সবচেয়ে বিখ্যাত বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। এ পাথরে খোদাই করে হায়ারোগ্লিফিকস, ডেমোটিক (প্রাচীন মিশরীয়দের সাধারণ ‘জনগণের ভাষা’) এবং গ্রিক – এই তিন ধরনের লিপিতে ১৩ বছর বয়সী পঞ্চম টলেমি এর রাজ্যাভিষেকের উপলক্ষ্যে পুরোহিত পরিষদের সম্মতিসূচক ফরমান লিপিবদ্ধ করা হয়। মিশরীয় পুরাতত্ত্বে রোসেটা স্টোনের গুরুত্ব অপরিসীম। এটা আবিস্কৃত হবার পূর্বে কেউ মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকস পড়তে জানতো না। যেহেতু লেখাগুলোতে একই জিনিষ ভিন্ন তিনটি লিপিতে লেখা হয়েছে, এবং গবেষকগণ প্রাচীন গ্রিক পড়তে জানতেন, তাই রোসেটা স্টোন হায়ারোগ্লিফ পাঠোদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ সূত্রে পরিণত হয়। রোসেটা স্টোন নিম্নস্থ মিশরের মেমফেস, ঊর্ধ্বস্থ মিশরের থিবজ (বর্তমানে লুকশর) এবং হর্ন অভ আফ্রিকা অঞ্চলের পান্ট ছিল প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিখ্যাত কয়েকটি স্থান। মিশরের প্রাচীনতম পিরামিডগুলি মেমফিসের গিজা ও সাক্কারায় আবিষ্কৃত হয়েছে। ‘ভ্যালি অভ দ্য কিংস’ ও ‘ভ্যালি অভ দ্য কুইনস’এর জন্য থিবজ বিখ্যাত। এ সকল উপত্যকায় ফারাও ও তাঁদের স্ত্রীদের সমাহিত করা হতো। পান্ট অঞ্চল সোনা ও হাতির দাঁতের জন্য বিশেষ বিখ্যাত ছিল বলে মিশরীয়দের সাথে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য চলতো। প্রাচীন মিশরীয়রা বহুশ্বরবাদী ছিল। তাদের সকল দেবী-দেবীর উৎপত্তি হয়েছে ‘নান’ দেবতা থেকে। তারা যে সব দেব-দেবীর পূজা করতো তাদের মধ্যে আমুন, আনুবিস, আইসিস, হোরাস, মাত, ওসিরিস, রা, সেথ ও সেখমেট উল্লেখযোগ্য। আমুন সৃষ্টির দেবতা, আনুবিস মৃতের জগতের অধিকর্তা; আইসিস শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় দেবী, ওসিরিসের পত্নী এবং হোরাসের মা; হোরাস আকাশ, সূর্য, রাজত্ব, প্রতিরক্ষা এবং সুস্থতার দেবতা; মাত সত্য, ভারসাম্য, আদেশ, আইন, নৈতিকতা ও সুবিচার এর দেবী; ওসিরিস পরকালের বিচারক, শস্য ও পুনর্জন্মের দেবতা; রা মধ্যদিনের সূর্য দেবতা; সেখমেট যুদ্ধের দেবী এবং সেথ ছিল বিশৃঙ্খলা, মরুভূমি ও নৃসংশতার দেবতা। মিশরীয় দেব-দেবীর পরিবার চিকিৎসা বিদ্যায় এখনও প্রতিরক্ষা এবং সুস্থতার দেবতা হোরাসের উপস্থিতি রয়েছে। ডাক্তারের যে কোন পেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্রের দিকে তাকালে Rx শব্দ যুগল আমাদের চোখে পড়ে। এই Rx-এর R এর অর্থ ‘রেসিপি’ (recipe)। আদেশসূচক বাক্যের ক্রিয়া হিসেবে ‘রেসিপি’ বা R বোঝায় ‘এটা লও’ (take this)। ব্যবহারিক অর্থে Rx এখন ‘পেসক্রিপশন’ বা সাধারণ অর্থে ‘ঔষধ’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। Rx-এর সাথে প্রাচীন মিশরের একটি গল্প মিশে আছে। সেটা হলো ‘হোরাস’ দেবতার চোখ। গ্রামে-গঞ্জে তাবিজ যেভাবে প্রতিরক্ষা কবজ হিসেবে ব্যবহৃত হয় তেমনি প্রাচীন মিশরীয়দের প্রতিরক্ষা কবজ ছিল ‘হরুসের চোখ’। চোখের এই প্রতীকটি কালক্রমে Rx রূপ ধারণ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। মিশরীয় দেবতা বিশেষ করে হোরাসকে আশ্রয় করে নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের নাম ‘গডস অভ ইজিপ্ট’ (২০১৬)। Rx প্রতীক প্রাচীন মিশরীয় রাজাদেরকে ফারাও বলা হতো। ফারাওরা নিজেদেরকে কখনো ঈশ্বর, কখনো ঈশ্বরের প্রতিনিধি দাবী করতেন। ফারাওদের মধ্যে জোসার, স্নেফ্রু, খুফু, জেডেফ্রে, খাফ্রে, সবেকসেফেরু, ১ম আহমোসিস, হ্যাতশেপসুট, আকনাথুন (৪র্থ আহমুনহোথেপ) ও তাঁর স্ত্রী নেফারতিতি, তুতানখামুন এবং র্যামসিজ দ্য গ্রেট (২য় র্যামসিজ) এর নাম উল্লেখযোগ্য। মিশরের ফারাওদের ইতিহাস কয়েকটি রাজবংশে বিভক্ত। থিনিস নামের কোন এক শহরকে কেন্দ্র করে রাজা নারমের যে ফারাও রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে সেটি প্রথম বংশ। খ্রি.পূ. ৩০ শতকে এ বংশের সমাপ্তি ঘটে। থিনিসেই দ্বিতীয় বংশ (২৮৯০–২৬৮৬ খ্রি.পূ.) ও মেমফিস শহরে তৃতীয় ফারাও বংশ (২৬৮৬–২৬১৩ খ্রি.পূ.) গড়ে ওঠে। তবে তৃতীয় বংশের ফারাও জোসার বাদে এই দুই রাজবংশের মধ্যে বিখ্যাত কোন শাসকের নাম পাওয়া যায় না। ফারাও জোসারফারাও খাফ্রেফারাও খুফুফারাও জেডেফ্রেফারাও স্নেফ্রু স্নেফ্রু, খুফু, জেডেফ্রে, খাফ্রে- এই চার ফারাও মেমফিস শহরে গড়ে ওঠা চতুর্থ বংশের (২৬১৩–২৪৯৪ খ্রি.পূ.) ফারাও। এরা সবাই পিরামিড তৈরির জন্য বিখ্যাত। পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে অন্যতম প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো মিশরের পিরামিড। চতুর্থ রাজবংশের ফারাওগণ পিরামিড হলো এক প্রকার জ্যামিতিক আকৃতি বা গঠন যার বাইরের তলগুলো ত্রিভূজাকার এবং যারা শীর্ষে একটি বিন্দুতে মিলিত হয়। বিভিন্ন ফারাওরা বিভিন্ন সময়ে তাদের সমাধিক্ষেত্র হিসেবে এ সব পিরামিড নির্মাণ করে। খুফুর পিরামিড মিশরে ছোটবড় ৭৫টি পিরামিড আছে। স্থপতি ইমহোটেপের নির্দেশনায় ফারাও জোসার সবচেয়ে পুরনো পিরামিডটি নির্মাণ করে। ফারাও স্নেফ্রু নির্মাণ করে ‘অবনত পিরামিড’ ও ‘লাল পিরামিড’। সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষনীয় গিজা'র পিরামিডটি নির্মাণ করে ফারাও খুফু। তাই এটা খুফু'র পিরামিড হিসেবেও পরিচিত। মিশরের মতো সুউচ্চ না হলেও অন্যান্য কয়েকটি দেশে বিভিন্ন ধরণের ছোট-বড় পিরামিড বা পিরামিড সদৃশ স্থাপনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যেমন- ইরাক, সুদান, নাইজেরিয়া, গ্রিস, স্পেন, চীন, ইটালি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পেরু। পিরামিডের মতো মিশরীয় সভ্যতার আরেক নিদর্শনের নাম গিজার প্রকাণ্ড স্ফিংস। স্ফিংস একটি দোআঁশলা পৌরাণিক প্রাণি যার সিংহাকৃতির শরীরের উপরে মানব মাথা বসানো। মিশরের মতো গ্রীক পুরাণেও স্ফিংসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। মিশরীয় স্ফিংক্সগুলো সাধারণত পুরুষ আকৃতির কিন্তু গ্রীক পুরাণের স্ফিংসরা নারী-আকৃতির হয়। বিভিন্ন পুরাণে স্ফিংক্স বা স্ফিংক্স সদৃশ কাল্পনিক প্রাণিকে মন্দির কিংবা সমতুল্য কোন অঞ্চলের প্রবেশদ্বারের প্রহরীস্বরূপ বর্ণনা করা হয়। ফারাও জেডেফ্রে বা ফারাও খাফ্রে গিজার প্রকাণ্ড স্ফিংসটি নির্মাণ করে বলে মনে করা হয়। গিজার স্ফিংস চতুর্থ বংশের পরবর্তী আটশো বছরে মেমফিস শহরকে কেন্দ্র করে পঞ্চম থেকে অষ্টম বংশ, হেরাক্লিওপলিস ম্যাগনা শহরে নবম ও দশম এবং থিবজ শহরে একাদশ ও দ্বাদশ, ইচতাওয়ায়ি শহরে ত্রয়োদশ এবং এভারিস শহরে চতুর্দশ ফারাও বংশ গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে দ্বাদশ রাজবংশের চার আমেনেমহাত ও তিন সেনুসরেত ফারাওরাও পিরামিড নির্মাণ করে। এছাড়া আর কোন রাজবংশের তেমন উল্লেযোগ্য কোন কীর্তি পাওয়া যায় না। দ্বাদশ রাজবংশের ফারাওগণ প্রাচীন মিশরে পুরুষদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন নারী ফারাও ছিল। প্রথম নারী ফারাও ছিলো দ্বাদশ বংশের ফারাও সবেকনেফেরু। দ্বিতীয় নারী অষ্টাদশ বংশের ফারাও হ্যাতশেপসুট পান্টের সাথে মিশরের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার করেন। মিশরে নারী শাসকদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মিশর শাসন করেছিলেন। ফারাও হ্যাতশেপসুটফারাও সবেকনেফেরু খ্রিস্টপূর্ব সতের শতকের মাঝামাঝি সময়ে হাইকসস (‘পরদেশি শাসক’) নামের এক যাযাবর জাতি প্রাচীন মিশরীয় ফারাওদের রাজত্বকালের বিচ্ছেদ ঘটায়। হাইকসসরা ছিল পশ্চিম এশিয়ার সেমেটিক যাযাবর। নীলনদের ব-দ্বীপের অ্যাভারিস নগর হাইকসস জাতিগোষ্ঠীর রাজধানী ছিল বলে ধারণা করা হয়। এদের কাছ থেকে মিশরীয়রা ব্রোঞ্জ, নতুন অস্ত্র এবং ঘোড়াটানা রথের ব্যবহার শিখেছিল। (ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে) পর্ব-০১: পৃথিবীর গল্প: চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা পর্ব-০২: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (সুমেরীয়-আকেদীয়-গুটি-সুমেরীয়) পর্ব-০৩: পৃথিবীর গল্প: চীনে এগারো শত বছরের শাসনে দুই রাজবংশ (শিয়া ও শাং রাজবংশ) পর্ব-০৪: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (আসেরীয়া-ব্যাবিলনিয়া-হিটাইট-ক্যাসাইট-নব্য আসেরীয়া- নব্য ব্যবিলনীয়া) Read the full article
0 notes
Text
রোমক সভ্যতার উত্থানঃ রোমক সভ্যতার ইতিহাস (১ম ভাগ)
রোমক সাত রাজার শাসন
রোমক সভ্যতার ইতিহাস বলতে গেলে বলতে হবে প্রায় সাড়ে বাইশ শত বছর আগের কথা। ভূ-মধ্য সাগরের উত্তরের তীর ঘেঁষে ছোট একটি শহর গড়ে উঠেছিল। নাম রোম। এই রোম শহরকে এক সময় ‘বিশ্বের রাজধানী’ বলা হতো। অনেকে একে বিশ্বের প্রথম রাজকীয় শহর, প্রথম মেট্রোপলিটন শহরও বলে থাকে। এই শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল রোমক রাজ্য, রোমক গণপ্রজাতন্ত্র ও অবশেষে রোমক সাম্রাজ্য। রোমকরা গ্রিক ভাষার অনুকরণে নিজেদের বর্ণমালা ও লেখ্য ভাষা সমৃদ্ধ করেছিল। এই ভাষা লাতিন নামে পরিচিত। ভার্জিল (Virgil), হোরেস (Horace), প্রপারতিউস (Propertius)- এরা ছিল লাতিনের বিখ্যাত সব প্রাচীন কবি। এদের নাম বললে আরও এক জন প্রাচীন কবির কথা মনে পড়ে- টিবুলাস (Tibullus) (সময়কাল ৫৫-১৯ খ্রি.পূ.)। তার কবিতার দুই বিখ্যাত নারী চরিত্র- দেলিয়া (Delia) ও নেমেসিস (Nemesis) পরবর্তীকালে অনেক সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়েছে। এই কবি রোমকে Urbs Aeterna বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। ল্যাটিন ভাষা জন্ম নেয়া ইটালিয় ভাষায় এ শব্দগুচ্ছ অনুবাদ করলে দাড়ায় ‘লা সিটা এতারনা’ (La Città Eterna) । বাংলায় বললে ’চিরন্তন শহর’। রোম এখন ইতালির রাজধানী। ইতালিয় ভাষায় ইতালি হলো ইতালিয়া (Italia)। ইতালিয়া শব্দটির মূল শব্দ vitalia। এর অর্থ ‘গো-মহিষের দেশ’ (land of cattle)। ইতালি নামের বুৎপত্তি নিয়ে গ্রিক পুরাণে গল্পও আছে। জারিয়ান (Geryon) নামে প্রচণ্ড প্রতাপশালী এক দৈত্য ছিল। সে গো-মহিষ পালন করতো। তার কোন গরু-মহিষগুলোকে হস্তগত করা ছিল দুঃসাধ্য। রাজা উরিসথেউস (Eurystheus) হারকিউলিসকে (Heracles) সেগুলো চুরি করতে বলে। এগুলো নিয়ে হারকিউলিস পালানোর সময় এতটা ষাড় দলছুট হয়ে যায়। এটা সাঁতরে ইতালির দ্বীপ সিসিলিতে চলে যায়। আঞ্চলিক ভাষায় ষাড়কে বলা হয় ‘ইতালস’ (italos)। এটা থেকে ইতালি। রোম শহরের গোড়াপত্তন রোমের উত্তরে ইত্রুসকান (বর্তমান ইতালির ইত্রুরিয়া অঞ্চলের আদবাসী) ও দক্ষিণে ছিল গ্রিকরা। এই জাতিগুলো তখন যথেষ্ট উন্নত ছিল। এদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য হতো। এই বাণিজ্যের পথিমধ্যে ছিল রোম। শহরটি ছিল ইত্রুসকান ও গ্রিকদের থেকে বিতাড়িত সব চোর-বদমাশদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। এদেরকে নিয়েই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে রোম। রোমকদের বিশ্বাস, তারা ট্রোজান যুদ্ধ (১২৬০-১১৮০ খ্রি.পূ.) থেকে বেঁচে গ���য়ে রোমে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের বংশধর। তাদের জন্ম ইতিহাসের সাথে দুটি নাম ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে- রোমুলাস ও রিমাসের । বিখ্যাত ট্রোজান যোদ্ধা ইনিয়াসের বংশে এ যমজ জন্ম লাভ করে। ইনিয়াসকে নিয়ে ভার্জিলের মহাকাব্যের নাম ‘ইনিড’। ট্রয় রাজ পরিবারের অ্যাংকাইসিস ও গ্রিক দেবী অ্যাফোদিতির (রোমক পুরাণে ভেনাস) (পড়ুন- ডেলফির ওরাকল- সত্য না কি পৌরাণিক গল্প?) সন্তান এই ইনিয়াস। তার ঔরসে ক্রেউসা বা লাভিনিয়ার গর্ভে জন্মে পুত্র এসকেনিয়াস। রোমের ১২ মাইল দক্ষিণ-পূর্বের এক প্রাচীন শহর আলবা লঙ্গা। খ্রি.পূ. ১১৫০ সালের দিকে এই শহরের গোড়াপত্তন ঘটেছিল। এসকেনিয়াস ছিল সেই আলবা লঙ্গার প্রথম কিংবদন্তী রাজা। বংশ পরম্পরায় এ বংশের রাজা হয় প্রকাস। তার দুই পুত্র- নুমিতর ও আমুলিয়াস। বড় ভাই হিসেবে নুমিতর রাজা হলেও আমুলিয়াস তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। তবে তার ভয় ছিল নুমিতরের কন্যা রিয়া সিলভিয়াকে নিয়ে। যদি রিয়া কখনো মা হয়, তবে সে কোন না কোন দিন সিংহাসনে ভাগ বসাবে। তাই সে রিয়ার উপর নজর রাখতে রোমক গৃহ দেবী ভেসতাকে দায়িত্ব দিয়েছিল। তবে ঘটনা ঘটে যায় অন্য ভাবে। রোমক দেবতা মার্সের (গ্রিক যুদ্ধ দেবতা এরেস) (পড়ুন-গ্রিক পুরাণের সহজপাঠ: তিতান দেব-দেবীগণ (২য় ভাগ) ধর্ষণে রিয়ার গর্ভে জন্ম নেয় রোমুলাস ও রেমুস। এই দেবতার নামে মঙ্গল গ্রহ নামকরণ করা হয়েছে। রোমুলাস ও রেমুসকে টাইবার নদীর তীরে ফেলে দেয়া হয়। তারা সেখানে নেকড়ের দুধ খেয়ে বেঁচে ছিল। মেষপালক ফস্টুলাস তাদেরকে কুড়িয়ে পায়, লালনপালন করে। এক সময় রোমুলাস ও রেমুস নানা নুমিতরকেও খুঁজে পায়। আলবা লঙ্গা ফিরে আসে নুমিতরের হাতে। কোথায় গড়ে তুলবে তাদের নতুন শহর- প্যালাটাইন পাহাড়, না কি এভেনটাইন পাহাড়ে? এই নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। রোমুলাস রেমুসকে হত্যা করে ভাইয়ের স্মৃতিতে প্যালাটাইন পাহাড়ের নতুন এ শহরের নাম রাখে রোম। এ দুটি পাহাড় বাদেও রোমে আরো পাঁচটি পাহাড় আছে। এ সাতটি পাহাড়ের জন্য রোমকে ‘সাত পাহাড়ের শহর’ বলে। সাত রাজার রোম শাসন (৭৫৩-৫০৯ খ্রি.পূ.) রোমের প্রথম রাজা রোমুলাস। তার নতুন শহরে পুরুষেরা ভীড় করলেও নারীরা আসতে চাইছিল না। তাই সে কিউরেস শহরের স্যাবাইন নামের গোত্রের নারীদেরকে অপহরণ করে সেখানে নিয়ে আসতে শুরু করে। এ নিয়ে স্যাবাইন রাজা তাতিয়াসের সাথে রোমুলাসের সংঘাত শুরু হয়। এক সময় এ দু’জনের মধ্যে সন্ধিচুক্তি হয়েছিল। রোমুলাসের স্যাবাইন নারী অপহরণের ঘটনাকে আশ্রয় করে অনেক শিল্পকর্ম রয়েছে। এর মধ্যে ইতালিয় শিল্পী জামবোলোইয়ার ভাস্কর্য ‘রেইপ অভ স্যাবাইন উইমেন’ (১৫৭৪-৮২) বিখ্যাত। রোমুলাসের পরে স্যাবাইন গোত্র হতে রোমের রাজা হয় নুমা পম্পিলিয়াস। তিনি রোমুলাসের মতো দাঙ্গাবাজ ছিলেন না। তিনি রাজ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি ভেসতাল ভার্জিনদেরকে রোমে নিয়ে আসেন। সেকালের রোমে যে সব নারী পুরোহিতরা দে��ী ভেসতার (গ্রিক দেবী হেস্তিয়া) ব্রত নিয়ে সারা জীবন কুমারী থাকতো, তাদেরকে ভেসতাল ভার্জিন বলা হতো। নুমা রোমে ধর্মীয় কলেজ ও দ্বার দেবতা জানুসের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এই জানুসের নাম থেকে ইংরেজি পঞ্জিকায় ‘জানুয়ারি’ মাসের নাম রাখা হয়েছে। তৃতীয় রাজার নাম তুলুস হোস্তিলিয়াস। তিনি ‘কুরিয়া হস্তিলিয়া’ নামে রোমে একটি সিনেট ভবন তৈরি করেন। চতুর্থ রাজা এংকুস মারতিউস ছিল নুমার নাতি। তিনি বন্দর নগরী ওসতিয়ার গোড়াপত্তন করেন। রোমের পঞ্চম রাজা ছিল একজন ইত্রুসকান- তার্কিনিয়াস প্রিসকাস। তার্কিনের আমলে আশেপাশের অঞ্চলে রোমের সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে। তিনি রথের চালানোর প্রতিযোগিতা ‘রোমক সার্কাস খেলা’র প্রচলন করেন। সম্ভবত তিনি জুপিটারের মন্দিরও তৈরি করেন। জুপিটার হলো গ্রিক দেবতা জিউস। জুপিটারের নাম বৃহস্পতি গ্রহের নাম রাখা রয়েছে। তার্কিনের পরে তার জামাতা সার্ভিউস তুলিয়াস রোমের রাজা হয়। তিনি রোমে প্রথম জনসংখ্যা গণনার কাজ শুরু করেন। তুলিয়াসকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে শেষ রোমক রাজা তার্কিনের পুত্র/নাতি তার্কিনিয়াস সুপারবাস। সাতজন রোমক রাজার মধ্যে একেই স্বৈরাচারী বলা হয়। এক সম্ভ্রান্ত কর্তাব্যক্তির (prefect) কন্যা ও এক গভর্নরের স্ত্রী লুক্রেশিয়া নামে এক নারীর সাথে তার্কিনের পুত্রের এক যৌন কেলেঙ্কারী ও জনসম্মুখে লুক্রেশিয়ার আত্মহত্যা তার্কিনের রাজত্বের সর্বনাশ ঘটায়। তার্কিনকে জনগণ রাজ্য থেকে বের করে দেয়। ‘লুক্রেশিয়া ধর্ষণ’ এ ঘটনাকে অসংখ্য চিত্রকর্ম রয়েছে। এর মধ্যে তিতিয়ানের ‘তার্কিন ও লুক্রেশিয়া’ (১৫৭১) উল্লেখযোগ্য। তার্কিনের ঘটনার পরে রোমকরা রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে রোমের শাসন ব্যবস্থায় দুই জন্য কনসুল (Consul) নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই কনসুলরা ৩০০ সিনেটের সদস্যদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। এই সিনেটের সদস্যদের ‘প্যাট্রিসি’ (patres হতে লাতিনে patricii, ইংরেজিতে patricians; অর্থ fathers) বলা হতো। রোমকদের এ শাসন ব্যবস্থা S.P.Q.R নামে পরিচিত ছিল। S.P.Q.R বলতে Senātus Populusque Rōmānus ব��ঝায়। এর অর্থ ‘রোমক সিনেট ও জনগণ’। এভাবে শুরু হয় রোমক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায়- রোমক গণপ্রজাতন্ত্র। (ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে) পৃথিবীর গল্প পরম্পরা পর্ব-০১: চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব ও বিকাশপর্ব-০২: মেসোপটেমিয়া- চার সভ্যতার লীলাভূমি-১পর্ব-০৩: চীনে এগারো শত বছরের শাসনে দুই রাজবংশপর্ব-০৪: মেসোপটেমিয়া – চার সভ্যতার লীলাভূমি-২পর্ব-০৫: ফারাও শাসনের উত্থান ও বিকাশ (মিশরীয় সভ্যতা-১)পর্ব-০৬: ফারাও শাসনের পুনরুত্থান (মিশরীয় সভ্যতা-২)পর্ব-০৭: আকিমানিদ-মেসিডোনিয়-জরথুস্ত্রবাদ-সিলুসিদ (পারস্য সভ্যতা-১) Read the full article
0 notes
Text
পৃথিবীর গল্প: মেসোপটেমিয়া-চার সভ্যতার লীলাভূমি (২য় ভাগ)
মেসোপটেমিয়া সভ্যতা: আসেরীয়া-ব্যাবিলনিয়া-হিটাইট-ক্যাসাইট-নব্য আসেরীয়া- নব্য ব্যবিলনীয়া (পর্ব-০৪)
ব্যাবিলন-আসেরীয়-মিটানি-হিটাইট শাসনের ম্যাপ আসেরীয় সাম্রাজ্য মেসোপটেমিয়া অঞ্চলের দক্ষিণে ছিল সুমের অঞ্চল। সুমেরের উত্তরে ছিল আকেদ শহর। আকেদের উত্তর পূর্ব অঞ্চলে গড়ে ওঠে আরেকটি শহর। বর্তমান ইরাকের অন্তর্গত এ শহরের নাম ছিল আসুর। এই শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে আসেরীয় সাম্রাজ্য। এ সাম্রাজ্যের অনেক শাসকেরা আকেদীয় সাম্রাজ্যের শাসকের নামে নামকরণ করতো। সুমেরীয় সভ্যতার কাছাকাছি সময় থেকে আসেরীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটলেও খ্রিঃ পূঃ ১৮ শতক পর্যন্ত এ অঞ্চলে খ্যাতনামা কোন শাসকের নাম পাওয়া যায় না। এ শতকের শেষে এ অঞ্চলের এক শাসক নিজেকে ‘মহাবিশ্বের রাজা’ দাবী করে। এ শাসকের নাম ছিল শামস�� আহাদ (১ম) (১৮১৩-১৭৮১ খ্রি.পূ.)। আহাদের ২৫০ বছর পরেও আসেরীয় সাম্রাজ্যে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন শাসকের আগমন ঘটেনি। মিটানি শাসন ফলে খ্রিঃ পূঃ ১৪ শতকের শেষের দিকে এ অঞ্চলের ক্ষমতা মিটানি (হুরি বা হ্যানিগালব্যাট) নামের এ জাতির হাতে চলে যায়। বর্তমান সিরিয়ার উত্তরে ও তুরস্কের দক্ষিণ পূর্ব দিকে মিটানিরা বাস করতো। হিটাইটরা যখন ব্যাবিলনে আক্রমণ করে সে সময়ে মিটানিরা আসুর অঞ্চলের আধিপত্য বিস্তার করে। তবে মিটানিদের শাসনকালে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য কোন ��াসক পাওয়া যায না। ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য আকেদীয় সাম্রাজ্যের অবসান ও সুমেরীয়দের পুনর্জাগরণের শেষ বিখ্যাত শাসক উর-নাম্মুর পরে প্রায় আড়াইশো বছরে মেসোপটেমিয়ায় উল্লেখ করার মতো তেমন কোন বিখ্যাত শাসক নেই। তবে খ্রিঃ পূঃ ১৭ শতকের শুরুতে সুমের অঞ্চলের উত্তরে আকেদ শহরের দক্ষিণে ব্যাবিলন নামের এক শহরকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী এক সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। এই সাম্রাজ্য ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। মেসোপটেমিয়ার পশ্চিম অঞ্চলের এখনকার সিরিয়ার এমোরাইট জাতি গোষ্ঠীরা এ সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। সম্রাট হামুরাবি ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের প্রথম বিখ্যাত সম্রাটের নাম হামুরাবি (শাসনকাল ১৯৯২-১৭৫২)। শামসী আহাদের মৃত্যুর পরে আসুরও তার আওতায় চলে আসে। উর-নাম্মুর মতো হামুরাবি আইন সংকলনের জন্য বিখ্যাত ছিল। এ সংকলন ‘হামুরাবির কোড’ নামে পরিচিত। ১৯০১ সালে এলামিদের প্রাচীন রাজধানী সুসা থেকে আবিস্কৃত হয় অমূল্য এই সংকলন। মোট ১২টি পাথরের টুকরোয় খোদাই করে লেখা ২৮২টি আইনের এই সংকলন পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন লিখিত আইন সংকলন হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে এই অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। হামুরাবির কোড ‘হামুরাবির কোড’ এ বাণিজ্য, বিবাহ, দাসত্ব, কর্জ ও চৌর্য - সব কিছুই স্থান পেয়েছিল। শাস্তির যে সব বিধান সেখানে ছিল, আজকের যুগে সেগুলি বর্বর মনে হতে পারে; যেমন-চুরির অপরাধে আঙুল কেটে নেওয়া, বিবাহিত নারীকে কোনও পরপুরুষ চুম্বন করলে তাঁর ঠোঁট কেটে ফেলা,অপবাদ প্রচারের শাস্তি হল জিভ কেটে নেওয়া, বাড়ি ভেঙে পড়ে বাড়ির মালিকের পুত্রের মৃত্যু হলে গৃহনির্মাতার পুত্রকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ইত্যাদি। সংকলটির ১৯৬ নম্বর আইনটিতে ছিল খুবই প্রতিশোধমূলক- “চোখের বিনিময়ে চোখ, দাতের বিনিময়ে দাঁত”। ব্যাবিলনীয় দেবতা মারদুক ব্যাবিলনীয়দের প্রধান দেবতার নাম ছিল মারদুক। এ দেবতাকে নিয়ে রচিত হয় ব্যাবিলনীয়দের অন্যতম সাহিত্য ‘এনুমা এলিস’। এটি প্রায় হাজার খানেক লাইনে লেখা একটি কবিতা। পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে ব্যাবিলনীয়দের বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে এ সাহিত্য রচিত হয়। সুমেরীয়দের প্লেগ রোগের দেবতা ��ারগিল ছিল ব্যাবিলনীয়দের পাতালের দেবতা। অন্যদের মধ্যে সমুদ্র দেবী তিয়ামাত উল্লেখযোগ্য। হিটাইট আক্রমণ হিটাইটরা ছিলো মেসোপটেমিয়ার সবচে উত্তরের অঞ্চল আনাতোলিয়ার অধিবাসী। আনাতোলিয়া এখন তুরস্ক নামে পরিচিত। খ্রিঃ পূঃ ১৫ শতকের শেষ ভাগে হিটাইটরা এ অঞ্চলে সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। এ জাতি ছিলো যোদ্ধা জাতি। আশেপাশের সব অঞ্চলের সাথে হিটাইটদের যুদ্ধ লেগে থাকতো। খ্রিঃ পূঃ ১৭৫০ সালে হামুরাবির মৃত্যু হয়। এর পরের দেড়শো বছরে ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়ে। ফলে খ্রিঃ পূঃ ১৫৮৫ সালে হিটাইটরা ব্যাবিলন শহর লুটপাট করে। এ লুটপাটে নেতৃত্ব দেয় হিটাইট রাজা ১ম মুরসিলি। তবে হিটাইটরা ব্যাবিলনে কোন শাসন গড়ে তোলেনি। ক্যাসাইট শাসন হিটাইটরা ব্যাবিলন ত্যাগ করলে মেসোপটেমিয়ার পূর্ব দিকের জাগরোস পর্বতমালা অঞ্চলের এক জনগোষ্ঠী এখানে বসবাস শুরু করে। এ জাতি গোষ্ঠীকে বলে ক্যাসাইট। এ জাতি প্রায় চারশো বছর ব্যাবিলন দখল করে রাখে; কিন্তু ক্যাসাইট শাসনামলে খুব নামজাদা কোন শাসক পাওয়া যায় না। নব্য আসেরীয় সাম্রাজ্য খ্রিঃ পূঃ ১৩ শতকের শেষ দিকে (১২২৫) ব্যাবিলনের ক্যাসাইটরা দক্ষিণের এলামাইট ও উত্তরের আসেরীয়দের পুনুরুত্থানের ফলে রাজ্য হারাতে থাকে। এলামাইটরা ছিল মেসোপটেমিয়ার সুমের অঞ্চলের আরো দক্ষিণে পারস্য উপসাগরের উত্তরে এলাম নামের এক অঞ্চলের আদিবাসী। এলাম বর্তমান ইরানের অন্তর্গত একটি অঞ্চল। অন্যদিকে, উত্তরের আসেরীয় অঞ্চলে সে সময়ে এক বিখ্যাত শাসকের আবির্ভাব ঘটে। এ রাজার নাম টিগলাথ পাইলিজার (১ম)। সে পুনরায় আসুর, ব্যাবিলন ও সুমের অঞ্চল জুড়ে আসেরীয় সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করে। এ সাম্রাজ্য ৫০০ বছর টিকে ছিল। এ সাম্রাজ্যের আরো দুই জন শাসকের কথা না জানলে চলে না। এদের এক জন সিনহারিব (৭০৫-৬৮১ খ্রিঃ পূঃ.) এবং অন্য জনের নাম আসুরবানিপাল। সিনহারিব ইসরাইল-প্যালেসটাইন পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তার করে এবং নিনেভা শহরে আসেরীয়দের রাজধানী গড়ে তোলে। আসুরবানিপাল ইরানের এলামাইটদের দমন করে এবং নিনেভাতে বিশাল এক লাইব্রেরি স্থাপন করে। এটা পৃথিবীর প্রথম লাইব্রেরি। এখানে কিউনিফর্ম পদ্ধতিতে লেখা ২২০০ টি কাদামাটির শ্লেট পাওয়া যায়। আসুরবানিপালের মৃত্যুর পরে আবার আসেরীয় সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে থাকে। সম্রাট আসুরবানিপাল (৬৬৮-৬৩১ খ্রিঃ পূঃ) আসেরীয়দের প্রধান দেবতার নাম ছিল আসুর। সে ছিল যুদ্ধ দেবতা। সুমেরীয়দের প্রেমের দেবী ইশতার ছিল আসুরের স্ত্রী। ব্যাবিলনয়দের মারদুক ও আসেরীয়দের আসুর বাদে সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় ও আসুরীয়দের দেব-দেবীর নাম ও কাজের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। নব্য ব্যবিলনীয় সাম্রাজ্য নেবুচাঁদনেজার (২য়) (৬০৫-৫৬২ খ্রিঃ পূঃ) আসুরবানিপালের মৃত্যুর পরে ক্ষয়িষ্ণু আসেরীয় সভ্যতার সুযোগে ব্যাবিলন সাম্রাজ্য আবার জেগে ওঠে। যে লোকটি আবার ব্যাবিলনদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে আনে তার নাম নবোপোলাসার। আবার শুরু হয় ব্যাবিলন সাম্রাজ্য। তার পরে এ সাম্রাজ্যের সবচে বিখ্যাত ব্যক্তি হলো নেবুচাঁদনেজার (২য়) (৬০৫-৫৬২ খ্রিঃ পূঃ)। তিনি ছিলেন স্থাপত্য ও শিল্পের প্রতি বি��েষভাবে অনুরাগী। তার বিখ্যাত স্থাপত্য শিল্প ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান। এটা বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর ফুলের বাগান। এই ঝুলন্ত বাগান গড়ে তোলার পিছনে তাঁকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল তার প্রিয়তম সম্রাজ্ঞী। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে এই বাগান তৈরি করেছিল। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে। ৮০ ফুট উচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেচানো নলের সাহায্যে। ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান (প্রকল্পিত) নেবুচাদনেজারের কঠোর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করায় তিনি ৫৮৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জেরুজালেম ধ্বংস করেন এবং ইহুদীদের বন্দী করে ৫৩৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত আটকে রাখেন। ইতিহাসে এটি ‘ব্যাবিলনীয় বন্দী দশা’ নামে পরিচিত। বাইবেলের বুক অব দানিয়েলে এ বর্ণনা পাওয়া যায়। নেবুচাঁদনেজারের শাসনামল ক্যালডীয় সভ্যতা নামে পরিচিত। এ সময়ে সপ্তাহকে সাত দিন এবং দিনরাত্রিকে ২৪ ঘন্টায় ভাগ করা হয়। এ যুগে জ্যোতির্বিদগণ ১২টি নক্ষত্রপুঞ্জের সন্ধান পান এবং এ থেকে ১২টি রাশিচক্রের সৃষ্টি হয়। নেবুচাঁদনেজারের হাত ধরে শেষ বারের মতো জেগে ওঠা ব্যাবিলন সাম্রাজ্য পতন ঘটে পারস্য সভ্যতার হাতে। তার মৃত্যুর পরে দূর্বল হয়ে পড়ে ব্যাবিলন সাম্রাজ্য। এ সুযোগে প্রথমে পারস্য সম্রাট কুরেশ ব্যাবিলনকে করায়ত্ত্ব করে। পরে সাইরাস নামে আরেক সম্রাট ব্যাবিলন শহরটি ধ্বংস করে ও জেরুজালেম দখল করে (৫১৪ খ্রিঃ পূঃ)। এভাবে ব্যাবিলন সাম্রাজ্য পুরোপুরি পারস্য সভ্যতার করতলগত হয়। (ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে) পর্ব-০১: পৃথিবীর গল্প: চীনা রূপকথা ও লোককাহিনী- উদ্ভব, সংস্কৃতি ও সভ্যতা পর্ব-০২: পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া (সুমেরীয়-আকেদীয়-গুটি-সুমেরীয়) পর্ব-০৩: পৃথিবীর গল্প: চীনে এগারো শত বছরের শাসনে দুই রাজবংশ (শিয়া ও শাং রাজবংশ) Read the full article
0 notes
Text
পৃথিবীর গল্প: চার সভ্যতার লীলাভূমি মেসোপটেমিয়া
মেসোপটেমিয়া সভ্যতা- সুমেরীয়, আসেরীয়, ব্যাবিলনীয় ও ক্যালডীয়
পর্ব-০১: সুমেরীয়-আকেদীয়-গুটি-সুমেরীয় মেসোপটেমিয়া কোন একক সভ্যতা নয়। প্রাচীনকালে এখানে একে একে গড়ে ওঠে চার সভ্যতা-সুমেরীয়, আসেরীয়, ব্যাবিলনীয় ও ক্যালডেরীয় সভ্যতা। এদের মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতা প্রথম গড়ে ওঠে। এর পরে মহান সারগন গড়ে তোলে আকেদীয় সাম্রাজ্য। আকেদীয়দের পরে গুটি শাসন। উতু-হেগেল ফিরিয়ে আনে সুমেরীয় শাসন। এর পরে উর-নাম্মু তৈরি করে পৃথিবীর প্রথম আইন সংকলন- কোড অভ উর নাম্ম আফ্রিকার নীল নদের নিম্ন অববাহিকায় ভূ-মধ্য সাগর অবস্থিত। এ সাগরের পূর্ব উপকূলে আছে দুটি নদী- টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস। এরা দজলা ও ফোরাত নদী নামেও পরিচিত। নদী দুটি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়। নীল নদের নিম্ন অববাহিকা হতে ভূ-মধ্য সাগরের পূর্ব তীর পার হয়ে পারস্য উপসাগরের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত অঞ্চলটি ইদের নতুন চাঁদের মতো দেখায়। দুই নদীর উর্বর পলিমাটির জন্যে এ অঞ্চলটি কৃষিকাজের বিশেষ উপযোগি ছিল। এ জন্য এখানে গড়ে উঠেছিল পৃথিবীর প্রথম সভ্যতা- মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। ইদের নতুন চাঁদের মতো দেখতে উর্বর এ অঞ্চলটি ‘ফার্টাইল ক্রিসেন্ট’ নামে পরিচিত। মানব সভ্যতার ইতিহাসে ফার্টাইল ক্রিসেন্টকে সভ্যতার আঁতুরঘর বলে। ফার্টাইল ক্রিসেন্ট মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা। ‘মেসোপটেমিয়া’ একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি। এই দুই নদীর নাম দজলা ও ফোরাত। বর্তমান তুরস্ক, সিরিয়া, ইরান, ইরাক ও কুয়েত প্রাচীন এই সভ্যতার অংশ ছিলো। তবে বেশীরভাগ অঞ্চলই ইরাকে অবস্থিত। মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা একক কোন সভ্যতা নয়। বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে যে সভ্যতাগুলো গড়ে উঠেছিল সে গুলোর মধ্যে সুমেরীয় সভ্যতা, আসেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা ও ক্যালডেরীয় সভ্যতা অন্যতম। সুমেরীয় সভ্যতা প্রায় সাত-আট হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণে উবাইদ নামে এক জাতি বাস করতো। উবায়েদরা কৃষিকাজ ও পশুপালনের জন্য ছোট ছোট গ্রাম গড়ে তোলে। সে সময়ে তাদের দুটি গ্রাম ধীরে ধীরে শহর হিসেবে পরিণত হয়। এদের একটির নাম এরিদু, অন্যটি উরুক। মজার ব্যাপার হলো, এই উবায়েদ জাতি কোন সভ্যতা গড়ে তুলতে পারেনি। উত্তরের কোন অঞ্চল থেকে অন্য একটি জাতি এসে উবায়েদদের উপরে আধিপত্য গড়ে তোলে। এ জাতিকে সুমেরীয় বলা হয়। এ জাতি কোথা থেকে এসেছিল তা এখনো নিশ্চিত ভাবে জানা যায় নি। মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলটির (ইরাকের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ) নাম ছিল সুমের। সুমেরীয় জাতি বসবাস করতো বলে এ অঞ্চলকে সুমের বলা হতো। কিংবা, সুমের নামের এ অঞ্চলে বসবাস করতো বলে এ জাতির নাম সুমেরীয়। এর মধ্যে কোনটি আগে ঘটেছিল তা বলা কঠিন। সুমেরীয়দের গড়ে তোলা সভ্যতা সুমেরীয় সভ্যতা নামে পরিচিত। এরিদু ও উরুক ছাড়াও সুমেরিয় সভ্যতায় আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর গড়ে ওঠে। এদের নাম উর, কিশ, লাগাশ, লার্সা ও নিপ্পুর। সুমেরীয় শহরগুলো লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার সুমেরীয় সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সুমেরীয় লিখন পদ্ধতি ছিল শব্দনির্ভর। সাধারণত একটি চিহ্ন দিয়ে একটি সম্পূর্ণ শব্দ প্রকাশ করা হতো। তাদের এ লিখন পদ্ধতিকে কিউনিফর্ম বলে। পৃথিবীর বেশীর ভাগ ভাষা একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কিত। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, সুমেরীয় ভাষার সাথে আর কোনো ভাষারই মিল পাওয়া যায় না। এটি কোনো ভাষা-পরিবারেরই সদস্য নয়। এজন্য সুমেরীয়কে বলা হয় ‘ল্যাংগুয়েজ আইসোলেট’ বা বিচ্ছিন্ন ভাষা। কিউনিফর্ম সুমেরীয়দের আরেক মহা আবিস্কার হলো চাকা। চাকা আবিস্কারের পরে দ্রুত সভ্যতা বিস্তার লাভ করতে থাকে। সুমেরীয়রা বছরকে ১২ মাসে, দিন-রাত্রিকে ঘন্টায় এবং ঘণ্টাকে মিনিটে বিভক্ত করেছিল। তারাই প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ১দিন ও ৭ দিনে ১ সপ্তাহ নিয়ম প্রবর্তন করে। দিন ও রাতের সময় নিরূপণের জন্য সুমেরীয়রা পানিঘড়ি ও স্বর্ণঘড়ি আবিষ্কার করে। পৃথিবীর প্রথম মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’ কিউনিফর্ম ভাষাতে রচিত। এই মহাকাব্যের প্রধান চরিত্র হচ্ছে গিলগামেশ (শাসনকাল ২৬৫০)। সুমেরিয় অঞ্চলের উরুক নামের এক শহরের রাজা ছিল সে। ঈশ্বর ও মানুষের ক্ষমতা মিলে সে ছিল এক অতিমানব। উরুকের জনগণের উপর রাজা গিলগামেশের নিপীড়ন ঠেকানোর জন্যে দেবতারা এনকিদু নামে এক বুনো মানব তৈরি করেন। প্রথমে যুদ্ধ করলেও, পরে তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে যান। তারা দুই জনে সিডার পর্বতে অভিযান চালিয়ে বনের দৈত্যাকার রক্ষক ‘হাম্বাবা’কে পরাজিত করে। সুমেরীয় প্রেম ও যুদ্ধের দেবী ইশতার গিলগামেশের প্রেমে পড়ে। কিন্তু সে দেবীর প্রেম প্রত্যাখ্যান করে। ফলে তাকে শায়েস্তা করতে দেবী স্বর্গ থেকে একটি ষাঁড় পাঠায়। গিলগামেশ ও এনকিদু ষাঁড়টিকে হত্যা করে। ষাঁড় হত্যার কারণে দেবতারা এনকিদুকে মৃত্যুদণ্ড দেন। বন্ধুর মৃত্যুতে শোকাহত গিলগামেশ অনন্ত জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। গিলগামেশ সুমেরীয়রা বহু দেবতার পূজা করতো। দেবতাদের চমৎকার চমৎকার সব নাম ছিল। যেমন: সূর্যদেবতা শামাস, বৃষ্টি,বাতাস ও বন্যার দেবতা এনলিল,পানির দেবতা এনকি; প্রেম, যুদ্ধ ও উর্বরতার দেবী ইনাননা/ইশতার, প্লেগ রোগের দেবতা নারগল ইত্যাদি। দেবতাদের উদ্দেশ্যে সুমেরীয়রা তেল, মাখন, শাকসব্জি, ফল-ফুল, খাদ্য প্রভৃতি উৎসর্গ করতো। শামাসএনলিল ও এনকিইনাননা বা ইশতার সুমেরীয়দের প্রধান ধর্মমন্দির ‘জিগুরাত’ নামে পরিচিত ছিল। এখানকার প্রধান পুরোহিতকে ‘পাতেজী’ নামে ডাকা হতো। সুমেরীয়দের পরজীবন সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। তাই সুমেরে কোন মমী বা স্মৃতিস্তম্ভ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে সময়ে কফিন ছাড়াই মৃতদেহ মাটিচাপা দেওয়া হতো। জিগুরাত ডিজাইন শুরুর দিকে এ সভ্যতায় তেমন বিখ্যাত কোন রাজা ছিল না। তবে তাদের সমাজে মানুষ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। পুরোহিত,অভিজাত,বণিক,শিল্পপতি এবং উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাগণ ছিলেন উচ্চ শ্রেণীভুক্ত। মধ্য শ্রেণীভুক্তরা হলেন চিকিৎসক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আর নিম্ন শ্রেণীতে অবস্থান ছিল দাস,ভূমিদাস, যুদ্ধবন্দি ও সাধারণ শ্রমিকদের। আকেদীয় সাম্রাজ্য আকেদীয় সাম্রাজ্য মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণে যখন সুমেরীয়রা সভ্যতা গড়ছে, তখন উত্তরের কোন স্থানে আকেদ নামের এক শহরে ধীরে ধীরে আরেক জাতি গড়ে ওঠে। এ জাতিকে আকেদীয় বলা হয়। এ জাতিতে জন্ম নিয়েছিল ইতিহাসের প্রথম সম্রাট- সারগন দ্য গ্রেট। সারগন একে একে সুমেরীয়দের শহরগুলো দখল করে আকেদীয় সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। ২৩৩৪ থেকে ২২৮৪/৭৯ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৫০ বছর সারগনের শাসন স্থায়ী ছিল। সারগন দ্য গ্রেট সারগনের পরবর্তী শাসকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নাম সারগনের নাতি নারাম সিন (শাসনকাল ২২৫৪-২২১৮)। বর্তমান তুরস্কের দক্ষিণ থেকে শুরু করে ইরানের পশ্চিম পাশ দিয়ে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত একটি পর্বতমালা রয়েছে। এ পর্বতমালার নাম জাগরোস পর্বতমালা। নারাম সিন মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণ থেকে শুরু করে উত্তরাঞ্চলের ঐ জাগরোস পর্বতমালা পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করে। নারাম সিনকে নিয়ে ‘আকেদের অভিশাপঃ একুরের প্রতিশোধ’ নামে একটি পৌরাণিক গল্প আছে। এ গল্পে মূল বিষয় নারাম সিনের সাথে বায়ু দেবতা এনলিলের যুদ্ধ ও আকেদীয় সাম্রাজ্যের পতন। নিপ্পুর শহরে অবস্থিত এনলিলের মন্দিরের নাম ছিল একুর। নারাম সিন একুর মন্দির লুটপাট করলে এনলিল খুব রেগে যায়। এনলিলের অভিশাপে আকেদ শহরে প্লেগ, দূর্ভিক্ষ মহামারি আকার ধারণ করে। ফলে ধীরে ধীরে শহরটি ধংস হয়, পতন হয় আকেদীয় সাম্রাজ্যের। গুটিদের শাসন ইরানের পশ্চিম দিকের জাগরোস পর্বত অঞ্চলে গুটি নামে এক যাযাবর জাতি বাস করতো। ধারণা করা হয় যে, গুটিরা বর্তমান কুর্দি জাতিদের পূর্ব পুরুষ। প্লেগ, দূর্ভিক্ষের মহামারিতে আকেদ সাম্রাজ্য এক সময় দূর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযোগে যাযাবর গুটিরা সুমের অঞ্চল দখল করে নেয়। গুটিদের শাসন (২১৩৫-২০৫৫ খ্রি.পূ.) সম্ভবত ১০০ বছর স্থায়ী ছিল। এ সময়ে উরুক শহরে উতু-হেগেল নামে এক গভর্নর ছিল। এ গভর্নর গুটিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সুমের অঞ্চলে গুটি শাসনের অবসান করে। এ ভাবে সুমের অঞ্চল আবার সুমেরীয়দের হাতে ফিরে আসে। সুমেরীয়দের পুর্নজাগরণ উর-নাম্মু দ্বিতীয় মেয়াদে সুমেরীয় শাসন কালের প্রথম বিখ্যাত শাসকের নাম ছিল উর-নাম্মু। সে সবচেয়ে বড় জিগুরাত ‘দ্য গ্রেট জিগুরাত অভ উর’ তৈরি করে। তবে তার বিখ্যাত সৃষ্টি ‘কোড অভ উর-নাম্মু’। কি অপরাধ করলে কি শাস্তি হবে এ নিয়ে এটি সুমেরীয় ভাষায় লিখিত একটি আইন সংকলন। এ সংকলনটি এখন ইস্তানবুলের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে রাখা আছে। উর-নাম্মুর পরে সুমেরীয়দের তেমন আর কোন বিখ্যাত রাজার নাম পাওয়া যায় না। খ্রি.পূ.২০০০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ সভ্যতার পরিসমাপ্তি ঘটে। কোড অভ উর-নাম্মু (ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর গল্প চলবে) পর্ব-০২: আসেরীয়, ব্যাবিলনীয় ও ক্যালডীয় Read the full article
0 notes
Text
ডেলফির ওরাকল- সত্য না কি পৌরাণিক গল্প?
ডেলফির ওরাকল (Oracle of Delphi) এক রহস্যের মায়াজাল
গ্রিক পুরাণ-এ ডেলফির ওরাকল একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সে কালের ভবিষ্যৎবাণীর আধার এই ডেলফির ওরাকল কি সত্য ছিল? না কি এসব কেবলই পৌরাণিক গল্প? গ্রিসের করিন্থ উপসাগরের উত্তরে পারনাসাস (Parnassus) পর্বতের দক্ষিণ ঢালে ডেলফি মন্দির অবস্থিত। খ্রি.পূর্ব অষ্টম শতকে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। এখান থেকে শেষ ভবিষ্যৎবাণী করা হয় ৩৯৩ সালে। এই মন্দিরকে গ্রিক দেবতা এ্যাপোলোর মন্দিরও বলে। এ জন্য এ্যাপোলে সম্পর্কে একটু জেনে নিতে হবে। হিন্দু পুরাণে যেমন ঋষি কশ্যপ ঔরসে অদিতির গর্ভে দ্বাদশ আদিত্য বা সূর্য দেবতা জন্ম নিয়েছিল, তেমনি গ্রিক পুরাণেও মহাকাশ পিতা ইউরেনাস ও ধরিত্রি মাতা গায়ার দ্বাদশ টাইটান সন্তান ছিল। এদের ছয় জন ছিল টাইটান (পুরুষ) আর বাকী ছয় জন ছিল টাইটানেস (মহিলা)। একত্রে সবাইকে টাইটান বলে। পরুষ-মহিলা হিসেবে জোড়ায় জোড়ায় এই টাইটানরা হলো-অকেয়ানোস ও তেথুস, হাপেরিয়ন ও থেইয়া, কয়উস ও ফয়বে, ক্রোনাস ও রেয়া, নেমোসাইনে ও থেমিস, ক্রিউস ও ইয়াপেতুস। ঐ বারো জনের পরে আরো বারো জন গ্রিক দেবতার আবির্ভার ঘটে। গ্রিক পুরাণে টাইটানদের থেকে এদের প্রভাব অনেক বেশি। এদেরকে বলে দ্বাদশ অলিম্পিয়ান দেবতা। এরা হলো জিউস, হেরা, পোসেইডন, দেমেতের, এথেনা, এ্যাপোলো, আর্তেমিস, আরেস, আফ্রোদিতি, হেফাইসতস, হার্মিস এবং ডায়োনিসাস। টাইটান কয়উস ও ফয়বের কন্যার নাম ছিল লেটো। এই লেটোর গর্ভে উপরের বারো অলিম্পিয়ান দেবতাদের শ্রেষ্ঠ দেবতা জিউসের ঔরসে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। এদের নাম এপোলো ও আর্তেমিস। এরা দু’জনও বারো অলিম্পিয়ানের অন্তর্গত। এ্যাপোলো মূলত সূর্য দেবতা। তার অনেকগুলো ক্ষমতার একটি হলো ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। ডেলফি মন্দির থেকে এ ভবিষ্যৎ বাণী করা হতো। এ জন্য এ বাণীগুলোকে বলা হতো ডেলফির ওরাকল। তবে এ্যাপোলো নিজে কখনো ভবিষ্যৎবাণী করতো না। তার পক্ষে এ মন্দিরের নারী পুরোহিতরা এ সব বাণী করতো। এ অনেকটা আমাদের দেশের জ্বীন হাজির করার মতো। যে সব নারীরা এ কাজ করতো তারা পাইথিয়া (Pythia) নামে পরিচিত। এক জন পাইথিয়া মারা গেলে মন্দিরের অন্য নারী হতে এক জনকে পাইথিয়া নির্বাচিত করা হতো। পাইথিয়ারা সব সময় উচু বংশের শিক্ষিতা নারী ছিল। পারনাসাস নামের এক পাথরের উপর বসে বছরে মাত্র একবার এ ভবিষ্যৎবাণী করা হতো। ডেলফির ওরাকল চরম রহস্যময় ছিল। শুধু মানুষ নয়, দেবতারা পর্যন্ত এ ওরাকলে সঠিক অর্থ বুঝতে পারতো না। ফলে ডেলফির ওরাকলের গ্যাঁড়াকলে অনেকের সর্বনাশ হয়েছে। যেমন, ওরাকল বুঝতে না পেরে লাইডিয়ার রাজা ক্রোয়েসাস (রাজ্যকাল ৫৬০-৫৪৭ খ্রিঃপূঃ) পারস্য রাজ মহান সাইরাসের (Cyrus the Great) বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে নিজের রাজ্য হারিয়েছিল। লাইডিয়ার রাজা ক্রোয়েসাস মিডিয়া রাজ্য (পরে পারস্য রাজ্য, বর্তমান ইরান) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবা�� আগে ভবিষ্যৎ জানার জন্য ডেলফিতে গিয়েছিল। পাইথিয়াকে সে জিজ্ঞেস করলো, ‘পারস্য আক্রমণ করলে কি হবে?’ পাইথিয়ার উত্তর, ‘ক্রোয়েসাস যুদ্ধে গেলে একটি বিশাল একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হবে।’ ক্রোয়েসাস আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘তাঁর রাজ্য কতদিন টিকে থাকবে?’ উত্তর এলো, ‘যতদিন পর্যন্ত মিডিয়া সম্রাজ্যের ক্ষমতায় একজন খচ্চর (ঘোড়া ও গাধার শঙ্কর প্রাণি) না আসবে ততদিন লাইডিয়া টিকে থাকবে।’ এটা শুনে আনন্দে ক্রোয়েসাস মিডিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। খ্রি.পূ. ৫৪৯ সালে মিডিয়া রাজ্যের ক্ষমতায় আসে এক অবিসংবাদিত যোদ্ধা-মহান সাইরাস। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে মাস না পেরুতেই সাইরাস লাইডিয়া দখল করে নেয়। বন্দী হয় ক্রোয়েসাস। তবে কি ডেলফাইয়ের ভবিষ্যৎ বাণী মিথ্যা ছিল? না, মিথ্যা ছিল না। পাইথিয়া বলেছিল, একটি বিশাল একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হবে। হ্যাঁ, বিশাল রাজ্য লাইডিয়া ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ভবিষ্যৎ বাণী? মিডিয়া সাম্রাজ্যের শাসনে খচ্চর কিভাবে এলো? হ্যাঁ, এটাও সত্য ছিল। পারস্য ও মিডিয়া দুই রাজ্যের দুই বংশের দুইজন ছিল সাইরাসের পিতা-মাতা। যেমনি গাধা ও ঘোড়ার প্রজননে জন্ম নেয় খচ্চর, তেমনি দুই বংশের শঙ্করজাত সন্তান ছিল সাইরাস। শঙ্কর জন্মের বিবেচনায় সাইরাসকে তো খচ্চর বলা যেতেই পারে। আরেকটি ঘটনা বলি। এটি রোমান সম্রাট নিরোকে নিয়ে। রোমের কুখ্যাত শাসকদের একজন এই নিরো। এ হলো সেই নিরো, যাকে নিয়ে একটি প্রবাদ আছে- রোম পুড়ে যাওয়ার সময় নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিল। তবে সে আসলে বাঁশি বাজাচ্ছিল কি না সে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় না। তবে এটা সত্য যে, ১৯ জুলাই ৬৪ সালে রোমের ডোমার অরেয়া স্বর্ণ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। নিরো এ ঘটনার জন্য খ্রিস্টানদেরকে দায়ী করেছিলো। কিন্তু অনেক রোমান অধিবাসী মনে করতো যে, নিরো স্বয়ং ডোমাস অরেয়া স্বর্ণ ভবনে আগুন লাগানোর আদেশ দিয়েছিলেন। মাত্র ষোল বছর বয়সে ৫৪ সালে সম্রাট নিরো (শাসনকাল ৫৪-৬৮) রোমের শাসন ক্ষমতায় আসে। ৫৯ সালে নিরো তার মা এগ্রিপ্পিনাকে হত্যা করে। ৬৭ সালে নিরো ডেলফির ওরাকলের শরণাপন্ন হয়। তখন তার বয়স ৩০। ওরাকল তাকে বলেছিল, ‘ফিরে যাও মাতৃঘাতক! ৭৩ হলো তোমার পতনের ক্ষণ’ (The number 73 marks the hour of your downfall!)। নিরো মনে মনে খুশি হয়েছিল। সে ভেবেছিল, ৭৩ বছর বয়সে বা ৭৩ সালে তার মৃত্যু হবে’ অর্থাৎ তার হাতে এখনও ৪৩ বা ৬ বছর বাকী আছে। কিন্ত বিধি বাম! পরের বছররেই নিরোর মৃত্যু হয়। ৬৮ সালে নিরোর অত্যধিক কর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গল (ফ্রান্স) ও হিস্পানিয়ায় (স্পেন) বিদ্রোহ হয়। এ বিদ্রোহের অন্যতম নেতার নাম গালবা। এই গালবার আক্রমণের শিকার হয়ে নিরো পালিয়ে যায়। পরে ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলার ভয়ে ৯ জুন, ৬৮ তারিখে প্রথম রোমান সম্রাট হিসেবে নিরো আত্মহত্যা করে। তার এ আত্মহননের মধ্য দিয়ে রোমে জুলিও-ক্লদিয়ান রাজত্বকালের পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রোমে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় যা ‘চার সম্রাটের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। মজার ব্যাপার হলো, নিরোকে নিয়ে ওরাকলের ভবিষ্যৎবাণীও বহস্যজনকভাবে সত্য। গালবা যখন নিরোকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখন গালবার বয়স ছিল ৭৩। ডেলফির ওরাকল এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে। ৩৯৩ সালে খ্রিস্ট ধর্মালম্বী রোমান সম্রাট থেয়োদোসিয়াস (Theodosius) পৌত্তলিকতা চর্চার অভিযোগে এই মন্দিরটি বন্ধ করে দেয়। কাকতালীয় হলেও এটা সত্য যে, এ ঘটনার ২ বছর পরে থেয়োদোসিয়াস মারা যায়। তার মৃত্যুর ১৫ বছর পরে (৪১০ সালে) আলারিকের নেতৃত্বে ভিসিগোথ নামের দুর্ধর্ষ এক যাযাবর জাতির হাতে রোমের (পাশ্চাত্য অংশের) পতন ঘটে। Read the full article
0 notes
Text
ডেলফির ওরাকল- সত্য না কি পৌরাণিক গল্প?
ডেলফির ওরাকল (Oracle of Delphi) এক রহস্যের মায়াজাল
গ্রিক পুরাণ-এ ডেলফির ওরাকল একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। সে কালের ভবিষ্যৎবাণীর আধার এই ডেলফির ওরাকল কি সত্য ছিল? না কি এসব কেবলই পৌরাণিক গল্প? গ্রিসের করিন্থ উপসাগরের উত্তরে পারনাসাস (Parnassus) পর্বতের দক্ষিণ ঢালে ডেলফি মন্দির অবস্থিত। খ্রি.পূর্ব অষ্টম শতকে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। এখান থেকে শেষ ভবিষ্যৎবাণী করা হয় ৩৯৩ সালে। এই মন্দিরকে গ্রিক দেবতা এ্যাপোলোর মন্দিরও বলে। এ জন্য এ্যাপোলে সম্পর্কে একটু জেনে নিতে হবে। হিন্দু পুরাণে যেমন ঋষি কশ্যপ ঔরসে অদিতির গর্ভে দ্বাদশ আদিত্য বা সূর্য দেবতা জন্ম নিয়েছিল, তেমনি গ্রিক পুরাণেও মহাকাশ পিতা ইউরেনাস ও ধরিত্রি মাতা গায়ার দ্বাদশ টাইটান সন্তান ছিল। এদের ছয় জন ছিল টাইটান (পুরুষ) আর বাকী ছয় জন ছিল টাইটানেস (মহিলা)। একত্রে সবাইকে টাইটান বলে। পুরুষ-মহিলা হিসেবে জোড়ায় জোড়ায় এই টাইটানরা হলো-অকেয়ানোস ও তেথুস, হাপেরিয়ন ও থেইয়া, কয়উস ও ফয়বে, ক্রোনাস ও রেয়া, নেমোসাইনে ও থেমিস, ক্রিউস ও ইয়াপেতুস। ঐ বারো জনের পরে আরো বারো জন গ্রিক দেবতার আবির্ভার ঘটে। গ্রিক পুরাণে টাইটানদের থেকে এদের প্রভাব অনেক বেশি। এদেরকে বলে দ্বাদশ অলিম্পিয়ান দেবতা। এরা হলো জিউস, হেরা, পোসেইডন, দেমেতের, এথেনা, এ্যাপোলো, আর্তেমিস, আরেস, আফ্রোদিতি, হেফাইসতস, হার্মিস এবং ডায়োনিসাস। টাইটান কয়উস ও ফয়বের কন্যার নাম ছিল লেটো। এই লেটোর গর্ভে উপরের বারো অলিম্পিয়ান দেবতাদের শ্রেষ্ঠ দেবতা জিউসের ঔরসে যমজ সন্তানের জন্ম হয়। এদের নাম এপোলো ও আর্তেমিস। এরা দু’জনও বারো অলিম্পিয়ানের অন্তর্গত। এ্যাপোলো মূলত সূর্য দেবতা। তার অনেকগুলো ক্ষমতার একটি হলো ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। ডেলফি মন্দির থেকে এ ভবিষ্যৎ বাণী করা হতো। এ জন্য এ বাণীগুলোকে বলা হতো ডেলফির ওরাকল। তবে এ্যাপোলো নিজে কখনো ভবিষ্যৎবাণী করতো না। তার পক্ষে এ মন্দিরের নারী পুরোহিতরা এ সব বাণী করতো। এ অনেকটা আমাদের দেশের জ্বীন হাজির করার মতো। যে সব নারীরা এ কাজ করতো তারা পাইথিয়া (Pythia) নামে পরিচিত। এক জন পাইথিয়া মারা গেলে মন্দিরের অন্য নারী হতে এক জনকে পাইথিয়া নির্বাচিত করা হতো। পাইথিয়ারা সব সময় উচু বংশের শিক্ষিতা নারী ছিল। পারনাসাস নামের এক পাথরের উপর বসে বছরে মাত্র একবার এ ভবিষ্যৎবাণী করা হতো। ডেলফির ওরাকল চরম রহস্যময় ছিল। শুধু মানুষ নয়, দেবতারা পর্যন্ত এ ওরাকলে সঠিক অর্থ বুঝতে পারতো না। ফলে ডেলফির ওরাকলের গ্যাঁড়াকলে অনেকের সর্বনাশ হয়েছে। যেমন, ওরাকল বুঝতে না পেরে লাইডিয়ার রাজা ক্রোয়েসাস (রাজ্যকাল ৫৬০-৫৪৭ খ্রিঃপূঃ) পারস্য রাজ মহান সাইরাসের (Cyrus the Great) বিরুদ্ধে যুদ্ধে করে নিজের রাজ্য হারিয়েছিল। লাইডিয়ার রাজা ক্রোয়েসাস মিডিয়া রাজ্য (পরে পারস্য রাজ্য, বর্তমান ইরান) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেবার আগে ভবিষ্যৎ জানার জন্য ডেলফিতে গিয়েছিল। পাইথিয়াকে সে জিজ্ঞেস করলো, ‘পারস্য আক্রমণ করলে কি হবে?’ পাইথিয়ার উত্তর, ‘ক্রোয়েসাস যুদ্ধে গেলে একটি বিশাল একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হবে।’ ক্রোয়েসাস আবার জিজ্ঞেস করলো, ‘তাঁর রাজ্য কতদিন টিকে থাকবে?’ উত্তর এলো, ‘যতদিন পর্যন্ত মিডিয়া সম্রাজ্যের ক্ষমতায় একজন খচ্চর (ঘোড়া ও গাধার শঙ্কর প্রাণি) না আসবে ততদিন লাইডিয়া টিকে থাকবে।’ এটা শুনে আনন্দে ক্রোয়েসাস মিডিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। খ্রি.পূ. ৫৪৯ সালে মিডিয়া রাজ্যের ক্ষমতায় আসে এক অবিসংবাদিত যোদ্ধা-মহান সাইরাস। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে মাস না পেরুতেই সাইরাস লাইডিয়া দখল করে নেয়। বন্দী হয় ক্রোয়েসাস। তবে কি ডেলফাইয়ের ভবিষ্যৎ বাণী মিথ্যা ছিল? না, মিথ্যা ছিল না। পাইথিয়া বলেছিল, একটি বিশাল একটি সাম্রাজ্য ধ্বংস হবে। হ্যাঁ, বিশাল রাজ্য লাইডিয়া ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ভবিষ্যৎ বাণী? মিডিয়া সাম্রাজ্যের শাসনে খচ্চর কিভাবে এলো? হ্যাঁ, এটাও সত্য ছিল। পারস্য ও মিডিয়া দুই রাজ্যের দুই বংশের দুইজন ছিল সাইরাসের পিতা-মাতা। যেমনি গাধা ও ঘোড়ার প্রজননে জন্ম নেয় খচ্চর, তেমনি দুই বংশের শঙ্করজাত সন্তান ছিল সাইরাস। শঙ্কর জন্মের বিবেচনায় সাইরাসকে তো খচ্চর বলা যেতেই পারে। আরেকটি ঘটনা বলি। এটি রোমান সম্রাট নিরোকে নিয়ে। রোমের কুখ্যাত শাসকদের একজন এই নিরো। এ হলো সেই নিরো, যাকে নিয়ে একটি প্রবাদ আছে- রোম পুড়ে যাওয়ার সময় নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিল। তবে সে আসলে বাঁশি বাজাচ্ছিল কি না সে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় না। তবে এটা সত্য যে, ১৯ জুলাই ৬৪ সালে রোমের ডোমার অরেয়া স্বর্ণ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। নিরো এ ঘটনার জন্য খ্রিস্টানদেরকে দায়ী করেছিলো। কিন্তু অনেক রোমান অধিবাসী মনে করতো যে, নিরো স্বয়ং ডোমাস অরেয়া স্বর্ণ ভবনে আগুন লাগানোর আদেশ দিয়েছিলেন। মাত্র ষোল বছর বয়সে ৫৪ সালে সম্রাট নিরো (শাসনকাল ৫৪-৬৮) রোমের শাসন ক্ষমতায় আসে। ৫৯ সালে নিরো তার মা এগ্রিপ্পিনাকে হত্যা করে। ৬৭ সালে নিরো ডেলফির ওরাকলের শরণাপন্ন হয়। তখন তার বয়স ৩০। ওরাকল তাকে বলেছিল, ‘ফিরে যাও মাতৃঘাতক! ৭৩ হলো তোমার পতনের ক্ষণ’ (The number 73 marks the hour of your downfall!)। নিরো মনে মনে খুশি হয়েছিল। সে ভেবেছিল, ৭৩ বছর বয়সে বা ৭৩ সালে তার মৃত্যু হবে’ অর্থাৎ তার হাতে এখনও ৪৩ বা ৬ বছর বাকী আছে। কিন্ত বিধি বাম! পরের বছররেই নিরোর মৃত্যু হয়। ৬৮ সালে নিরোর অত্যধিক কর ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গল (ফ্রান্স) ও হিস্পানিয়ায় (স্পেন) বিদ্রোহ হয়। এ বিদ্রোহের অন্যতম নেতার নাম গালবা। এই গালবার আক্রমণের শিকার হয়ে নিরো পালিয়ে যায়। পরে ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলার ভয়ে ৯ জুন, ৬৮ তারিখে প্রথম রোমান সম্রাট হিসেবে নিরো আত্মহত্যা করে। তার এ আত্মহননের মধ্য দিয়ে রোমে জুলিও-ক্লদিয়ান রাজত্বকালের পরিসমাপ্তি ঘটে। এরপর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রোমে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় যা ‘চার সম্রাটের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। মজার ব্যাপার হলো, নিরোকে নিয়ে ওরাকলের ভবিষ্যৎবাণীও বহস্যজনকভাবে সত্য। গালবা যখন নিরোকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখন গালবার বয়স ছিল ৭৩। ডেলফির ওরাকল এ ধরনের অনেক ঘটনা আছে। ৩৯৩ সালে খ্রিস্ট ধর্মালম্বী রোমান সম্রাট থেয়োদোসিয়াস (Theodosius) পৌত্তলিকতা চর্চার অভিযোগে এই মন্দিরটি বন্ধ করে দেয়। কাকতালীয় হলেও এটা সত্য যে, এ ঘটনার ২ বছর পরে থেয়োদোসিয়াস মারা যায়। তার মৃত্যুর ১৫ বছর পরে (৪১০ সালে) আলারিকের নেতৃত্বে ভিসিগোথ নামের দুর্ধর্ষ এক যাযাবর জাতির হাতে রোমের (পাশ্চাত্য অংশের) পতন ঘটে। Read the full article
0 notes