#আকিব শিকদার
Explore tagged Tumblr posts
Text
কবি আকিব শিকদারের কবিতা
কবি আকিব শিকদারের কবিতা
একটা ঘুড়ি দুজন যখন দুই নাটাইয়ে উড়ায় বিয়ের পরেও যে মেয়েটা মায়ের কথায় চলে স্বামীর ঘরে সুখে নেই তার, দু’চোখ ভিজে জলে মেয়ের ভাগ্যে তালাক জোটে মার চালাকির ফলে। যে ছেলেটা বিয়ের পরেও বোনের ইচ্ছায় নাচে সংসারে তার ভাঙন দশা, বউ থাকে না কাছে জ্যা-নন্দের জ্বালায় স্বামীকে ছেড়ে বাঁচে। একটা ঘুড়ি দুজন যখন দুই নাটাইয়ে উড়ায় গুত্তা খেয়ে পড়বেই তো আবর্জনার লুরায়। জেনে নিও গন্ডগোলটা আগাতে নয়, গোড়ায়। ঈর্ষামাতাল খাঁচার…
View On WordPress
0 notes
Text
কবি মহিবুর রহিমের "হাওর বাংলা" : যেন কাদামাটির সোঁদা গন্ধ ভরপুর
কবি মহিবুর রহিমের “হাওর বাংলা” : যেন কাদামাটির সোঁদা গন্ধ ভরপুর
আকিব শিকদার ।। কবি মহিবুর রহিমের জন্ম হাওর অঞ্চল বলে পরিচিত কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রামে। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকেই একজন সক্রিয় ধারার প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিসেবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক শক্তিমান কবিতা। এদেশের মাটি ও মানুষের নিখাদ সম্পর্কের বিষয়টি তার কবিতায় উঠে এসেছে নানা সময়ে, নানা রূপে, নানা ভঙ্গিমায়। “হাওর বাংলা” কাব্যগ্রন্থটি তারই একটি উত্তম নিদর্শন। একজন কবি যে কত সহজে বাংলার…
View On WordPress
0 notes
Text
তুমি কোনটা নেবে…?
আকিব শিকদার আমার হাতে বন্দুক, আমার কপালে রক্ত তুমি কোনটা নেবে…? যদি বন্দুক নাওÑ তুমি হিংস্র ঘাতক। যদি রক্ত নাওÑ তুমি অপরিণামদর্শী কাতিল।
আমার চোখে অশ্রু, আমার ঠোঁটে হাসি তুমি কোনটা নেবে…? যদি অশ্রু নাও, তবে তুমি দুঃখ বিলাসীÑ মানে আমার প্রকৃত বন্ধু। যদি হাসি নাও, তবে তুমি দুধের মাছিÑ মানে সুসময়ের ধাপ্পাবাজ।
আমার কপালে ঘাম, আমার দু’চোখ লাল তুমি কোনটা নেবে…? যদি কপালের ঘাম মুছে দাও শুষ্ক আঁচলেÑ তুমি…
View On WordPress
0 notes
Text
ঈদের খুশি ; আকিব শিকদার
ঈদের খুশি ; আকিব শিকদার
ঈদের খুশি
আকিব শিকদার
ঈদ এসেছে, ঈদ এসেছে, ঈদ এসেছে ঐ-রে
ফিন্নি-পায়েস, মাংশ-রুটি, নতুন জামা কই-রে
আতর গোলাপ ছড়াছড়ি, বোতল ভরে সুরমা আন
জায়নামাজে নামাজ শেষে আলিঙ্গনে মাতবে প্রাণ।
এবার ঈদে নতুন কেনা রঙ্গিন রঙ্গা পাঞ্জাবী
ঠিক করেছি দান করবো কাজের বুয়ার ছেলেকে
জরীর টুপি পরবো না ভাই, পরবো না ঐ মালাটি
ঝলক লাগা নাগরা জুতো কে নিবিরে? নিবি কে?
বাবা-কাকার পায়ে ছুয়ে সালামী…
View On WordPress
0 notes
Photo
চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাবুগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম বাবুগঞ্জ প্রতিনিধিঃ বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সম্মানিত সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ কালীন বেইজ কমন্ডার এ্যাডঃ আবুল কাশেম আর বেঁচে নেই (ইন্নালিল্লাহি .......রাজেঊন)। তিনি শুক্রবার সকাল ১১ টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন। এ সময় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পরলে উপস্থিত নেতা কর্মীরা দ্রুত বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে, ২ মেয়েসহ অসংখ্য গুনাগ্রহী রেখে গেছেন। শুক্রবার বাদ আছর বাবুগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ্ মাঠে তার নামাজে জানাজা শেষে গার্ড অব অর্নার পূর্বক বরিশাল মুসলিম গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। মরহুমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ তালুকদার মোঃ ইউনুস এমপি, বরিশাল ৩ আসনের সাংসদ এ্যাডঃ শেখ মোঃ টিপু সুলতান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য �� সাবেক সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ কুতুব উদ্দিন আহাম্মেদ, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম খালেদ হোসেন স্বপন, গৌরনদী পৌর মেয়র মোঃ হারিচুর রহমান হারিচ, মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম মিঠু, উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল, বাবুগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আঃ করিম হাওলাদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান রাজা,অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন, আঃ মতিন রাঢ়ী,যুগ্ন সম্পাদক মোস্তফা কামাল চিশতী,দপ্তর সম্পাদক পরিতোষ চন্দ্র পাল,বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শাহিনুর রহমান শিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মৃধা মুঃ আক্তার-উজ-জামান মিলন, প্রকৌশলী শাহরিয়ার আহম্মেদ শিল্পী, এ্যাডঃ শামসুজ্জামান সোহেল, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাসুদ করিম লাভু, আ’লীগ নেতা মোস্তাক আহম্মেদ রিপন, ছাত্রলীগ যুগ্ন সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আরিফর রহমান অপু, ছাত্রলীগ নেতা প্রসেনজিৎ দাস অপু, কাজী ইয়াসির আরাফাত সোহেল, জহিরুল হাসান মুরাদ, ওবায়দুল হক জুয়েল, আকিব হোসেন মেহেদী, ফায়জুল হকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী ও সর্বস্তরের সাধারন মানুষ।
#amader barisal#awamileague#bangla news#banglanews24#banglarbani24.com#barguna#barisal#barisal city#barisal city corporetion#barisal dc office#barisal live#barisal times#barisallive24#barisalnews#barisalnews24#barisaltimes24#bbc#bcb#bcci#bdjobs#bhola#Dhaka#DIG barisal#google.com#jagonews24#jhalakathi#jobnews#jugantor#khaleda zia#khulna city
0 notes
Text
জায়েদ হোসাইন লাকী'র নির্বাচিত কবিতা; যেন জমাট বাঁধা ভালোবাসা
জায়েদ হোসাইন লাকী’র নির্বাচিত কবিতা; যেন জমাট বাঁধা ভালোবাসা
আকিব শিকদার : আমি যেন এক তলোয়ারধারী অশ্বারোহী, সামনে বিপক্ষদলের যে সৈন্যই হাজির হবে, তার গর্দান কেটে নেব। এমনই এক মানসিকতায় প্রবৃত্ত হয়ে হাতে দিয়েছিলাম কবি জায়েদ হোসাইন লাকীর “নির্বাচিত কবিতা” বইটি। আমার হাতে পেন্সিলরুপি তরবারি আর সামনে বিপক্ষ দলের সৈন্যের মতো জায়েদ হোসাইন এর কবিতা। অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হলেই কবিতার বুকে চালাবো পেন্সিল, কেটেকুটে রক্তাক্ত করব তাকে- এই ছিল মতলব। কিন্তু যখন পড়তে…
View On WordPress
0 notes
Text
আকিব শিকদার এর 'বিজয়ের কবিতা'
আকিব শিকদার এর ‘বিজয়ের কবিতা’
রক্তফিনকীস্নাত সবুজ জামা ভালবাসার জন্য মানুষ কী না পারে কী না পারে বলুন? সাত সাগর তেরো নদী পার! হোহ… সে তো সামান্য, ফুলের রেণুর মতো যৎসামান্য। হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল একজন সোনার মানুষ, মুক্তিকামি সোনার মানুষ। শত অত্যাচার, তবু মুখ খুললো না সাহসী সে তরুণ। যদিও বেয়নেটের খোঁচা লাগছিল উরুতে, বুকে স্টেনগান ধরা মুখের উপর কটু প্রশ্ন ‘আমাদের জিজ্ঞাসার জবাব চাই, অগত্যা গুলি করে মারবো…
View On WordPress
0 notes
Text
কবি আকিব শিকদার এর দুটি কবিতা
কবি আকিব শিকদার এর দুটি কবিতা
জ্বালাই মশাল মানবমনে
কত কথাই তো ভাসে বাতাসে। কাজে আসার যোগ্যটুকু গ্রহণ করে অবশিষ্ট কথা না শোনাই বিজ্ঞ লোকের ধর্ম কানকে কখনো চালুনের মতো করো না। ময়দাকে ফেলে চালুন ভুষি উচ্ছিষ্টকে ধরে রাখে। আনন্দময় জীবন যদি চাও
অল্পে তুষ্ট হও। বাদ দাও অপ্রয়োজনে মানুষের সংশ্রব। আড়াল করে রাখতে শেখো নিজেকে। মানবসঙ্গ পরিহার, রিপুর চাহিদা দমন, পার্থিব সম্পদের মোহমুক্তিই হৃদয়-মন পবিত্র রাখার ব্যবস্থা করে। ফেরাও দৃষ্টিকে
View On WordPress
0 notes
Text
আকিব শিকদার এর নির্বাচিত ২৫ কবিতা
New Post has been published on https://is.gd/0re9B0
আকিব শিকদার এর নির্বাচিত ২৫ কবিতা
রঞ্জু, একটা হাতিয়ার... মিছিলটা হয়েছিলো প্রায় তিনশো গজ লম্বা। টানা পাঁচ দিন খেটেখোটে লোক জড় করেছিলে। বিপক্ষ দলের সামনে ইজ্জত রাখা চাই। গলিটা দখলে নিয়ে সাজালে প্যান্ডেল। ঝাঝালো ভাষণে জনপদ কাপিয়ে স্বার্থক জনসভা। নেতা তোমাকে কাছে ডেকে পরিপাটি চুলগুলো আঙুলে উলোঝুলো করে দিয়ে বললো- “বেটা বাঘের বাচ্চা, তোর মতো কেজো ছেলে আগে দেখিনি, একেবারে বিপ্লবী চে গুয়েভারা”। তুমি বাহবা পেয়ে গলে গেলে রঞ্জু। বুঝলে না, ছোটদের বগলবন্দি রাখতে বড়রা এমন প্রশংসার ফাঁদ প্রায়ই পাতেন। পার্টি অফিসে প্রতিদিন কতো কাজ, কতো পরিকল্পনা। নেতারা তোমায় পিতার মতোই স্নেহ করে। গোলটেবিল বৈঠকে জ্বালাময়ী আ��োচনায় রক্ত গরম। বাঁধা এলে অস্ত্র নেবে, প্রয়োজনে প্রাণ দেবে। অফিসের গোপন ঘরে নেতারা গলা ভেজাতে ভেজাতে তোমাদের হাতে বুতল দিয়ে বলে- “নে বাবারা, খা... শুধু খেয়াল রাখবি যেন হুষ ঠিক থাকে”। ভেবে দেখেছোকি রঞ্জু, তাদের ছেলেরা এসব নোংরা জল ছোবার কথা কল্পনাও করতে পাড়ে না। মায়েরা পড়ার টেবিলে গরম দুধে গ্লাস ভরে রাখে। কালো কাচ আটা পাজারু গাড়ি থামলো রাস্তাতে। জানালার কাচ খুলে নেতা হাত বাড়িয়ে দিলেন হাজার টাকার দুটো নোট। বললেন- “রঞ্জু... ঝাপিয়ে পর বাবা, মান সম্মানের বেপার”। তুমি ঝাপিয়ে পরলে পেট্রোল-বোমা আর ককটেল হাতে। দুদিন পর তোমার ঠিকানা হলো সরকারি হাসপাতালের নোংড়া বিছানা। হাত দুটু উড়ে গেছে, দু’পায়ের হাটুঅব্দি ব্যান্ডেজ। একবারও ভাবলে না, তিনি তোমার কেমন বাবা! তার সম্পত্তির ভাগ পাবে? তার কালো কাচের পাজারুটা তোমাকে দেবে? দেবে মখমল বিছানো বেডরোমে ঘুমানোর অনুমতি? তার সম্মান রাখবে তুমি! তার ছেলে বিদেশে পড়ে, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে; সে তো ঝাপিয়ে পড়ে না! তোমার হোষ কবে হবে রঞ্জু! তুমি ছিলে তাদের স্বার্থের হাতিয়ার, কাটা তোলার কাটা। তোমার মা হাসপাতালে গরাগরি দিয়ে কাদে, বাপ কাদে বাড়ান্দায়। সেই নেতারা, তোমার পাতানো বাবারা, একবারও তো দেখতে এলো না! বলি রঞ্জু, তোমাদের হুশ কবে হবে! অনন্য উপহার মেয়েটা হাতের একটা চুড়ি খুলে বললো- "এই নাও, রাখো। যেদিন তোমার ঘরে বউ হয়ে যাবো, বাসর রাতে পরিয়ে দিও"। ছেলেটা একটা চাবির রিং মেয়েটাকে দিয়ে বললো- "যত্নে রেখো। আমাদের সংসারের সব চাবি এটাতে গেঁথে আঁচলে ঝুলাবে"। একদিন ছেলেটার আবদার- "তোমার একটা ওড়না আমাকে দেবে? মধ্যরাতে বালিশে জড়াবো, আর তোমার বুকে নাক গুজে রেখেছি ভেবে চুমো খাবো"। আরেকদিন মেয়েটা নাছড়বান্দা- "হলুদ পাঞ্জাবিটা তো আর পরো না। আমাকে না হয় দিয়ে দাও, বুকের উপর রেখে ঘুমাবো"। তাদের পাশাপাশি দাড়িয়ে তোলা অন্তরঙ্গ ছবির একটি ছেলেটা তার মানিব্যাগে রেখে দিলো। ভাবটা এমন, যেন উপার্জিত সকল টাকা বউয়ের কাছেই জমা রাখছে। এদিকে মেয়েটা এমনই অসংখ্য ছবি মোঠোফোনে গোপন ফোল্ডারে সেভ করে নাম রাখলো "সুখি সংসার"। কালের আবর্তে কি হলো কে জানে (হয়তো পরিজনেরা মানবে না, নয় তো অন্য কিছু) মেয়েটা একটা আংটি রেপিং পেপারে মুড়িয়ে ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো- "যে তোমার বউ হবে, তাকে দিও। বলো আমি দিয়েছি। আর আমাকে কোনদিন ভুলে যেও না"। ছেলেটা সে আংটির বক্স হাতে নিয়ে ছুঁড়ে মারলো নর্দমায়। তারপর দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে বসে রইলো কতক্ষন। দুজনেরই চোখ বেয়ে নামলো নিরব কান্না। তারপর? তারপর যা হবার তাই হলো। প্রকৃত ভালোবাসা কোনদিন মরে যায় না। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলো অচেনা জনের সাথে। প্রেমিকের দেওয়া চাবির রিংটাতেই সব চাবি আঁচলে বেধে শুরু করলো সংসার। আর ছেলেটা অন্য মেয়েকে বিয়ে করে হাতে পরিয়ে দিলো প্রেমিকার চুড়িটা। ভিনদেশে বিপর্যস্ত মা আমাকে তার মাতৃসুলভ আচরণে স্নেহের হাতে তুলে খাইয়ে দিতে চাইতো, আমি দেইনি সম্মতি কখনো তার বুড়ো আঙুলের নখটা কেমন মড়া ঝিনুকের ফ্যাকসা খোলসের মতো ছিল বলে। শৈশবে স্কুলে পৌঁছবার রাজপথে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম শিয়ালের থেতলানো দেহ টানা তিনরাত ঘুমোতে পারিনি দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে, পারিনি করতে আহার স্বাভাবিক। চোখের সামনে শুধু উঠতো ভেসে বিচ্ছিন্ন মস্তক একটা মরা শিয়াল যার উসকোখুসকো চামড়ায় জমে আছে রক্তের স্তূপ আর তকতকে নীল মাছি। খুব বেশি খুতখুতে স্বভাব ছিল আমার। বাবা একবার আমার গামছা দিয়ে মুছে ছিলেন তার শস্যক্ষেত থেকে ফিরে আসা ঘর্মাক্ত পিঠ, সেই অপরাধে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে দিয়েছিলাম মূর্খের অপবাদ দিয়ে। এক বিছানায় ঘুমোতে গিয়ে আমার যে ছোটভাইটা গায়ের উপর তুলে দিতো পা আমি এক চড়ে তার কান থেকে রক্ত ঝরিয়ে বুঝিয়েছিলাম ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে যাওয়ার খেসারত। এখন আমার ঘুম আসে না, ঘুম আসে না রাতে ছাড়পোকা আর মশাদের উৎপাতে। উৎকট গন্ধে বন্ধ দম, শৌচাগারের পাশে বিছানায় নেই গা ঢাকা দেবার মতো টুকরো কাপড়। শীতে জুবুথুবু হয়ে যখন কুকড়ে যাই তোকে বড়ো মনে পড়ে, তোকে বড়ো মনে পড়ে ভাইরে। ঘুমঘোরে একটি পা গায়ের উপরে তুলে দিবি না আমায় একটু আরাম উত্তাপ? বল, তুই করবি না ক্ষমা আমায়...? ওরা যখন আমাকে নিয়ে এসেছিল ভিনদেশে বলেছিল কাজ দেবে পাঁচতারা হোটেলে, নিদেনপক্ষে মুদির দোকান তো জুটবেই কপালে। সূর্য ওঠার আগে শাবল ক্ষন্তা আঁকশি হাতে লেগে যাই কাজে, নগরের নর্দমা শোধন এখন আমার কাজ। যে হাতে ধরিনি গরুর দড়ি গোবর চনার গন্ধ লাগবে বলে সে হাত ধরে পঁচা ইদুরের লেজ, পলিথিনে মোড়া মাছি ভনভন করা মাছের পুর���ো আঁশ। পরিত্যক্ত আবর্জনা তুলে নিই পিঠের ঝুলিতে। বড়ো অসহায়, বড়ো অসহায় লাগে মা, মনে হয় মরে যাই; না গেলে কাজে নিতান্ত বুভূক্ষু কাটে দিন, পানিটাও এইদেশে কিনে খেতে হয়, টাকা ছাড়া জোটে না কান চুলকানোর কাঠিটি পর্যন্ত একবার, শুধু একবার, মা তোমার গোবর গুলে গৈঠা বানানো হাতে একমুঠো ভাত খাইয়ে দিয়ে যাও। বাবা, ও বাবা, আমার গায়ের সবচেয়ে সুন্দর যে জামাটি তাতে মোছো তোমার ভাত খেয়ে না ধোয়া হাত। তোমার সফেদ দাড়ির ভাজে তরকারির যে ঝোল লেগে থাকে সেই ময়লাটি জিহ্বায় চেটে তুলে নিতে বড়ো ইচ্ছা জাগে আমার। নিনিতা এবং ফেব্রুয়ারির একুশ আমার মেয়ে নিনিতা, কতোই বা তার বয়স হবে কান্ড দেখে তাক লেগে যাই যে কেউ অবাক চেয়ে রবে। ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ- সেই যে সকাল বেলাতে প্রভাতফেরীর গানের সুরে চায় গলাটা মেলাতে। ড্রেসিংটেবিল সামনে রেখে- শহিদমিনার মনে করে নতমস্তক দাঁড়িয়ে থাকে ফুল ছুঁড়ে দেয় শ্রদ্ধাভরে। বুকভরা তার ভাষাপ্রীতি, সেই কথাটাই জানাতে বর্ণমালার আদল একে চায় দেয়ালে টানাতে। তিনটে বছর হয়নি বয়স, কতোই বা সে বোদ্ধা ভাষাশহিদের স্মৃতির প্রতি এতো যে তার শ্রদ্ধা...! দুটানায় দিনযাপন বাবার ক্যান্সার। গলায় ব্যান্ডেজ, ব্যান্ডেজে রক্ত। এগারোটি থেরাপিতে চুল সাফ। চামড়ায় কালো দাগ। বিদেশে নিয়ে ভালো ডাক্তার দেখালে হতো। টাকা কোথায়... বউকে ডেকে জানতে চাই- “কী করতে পাড়ি?” বউ বলে- “যা ভালো মনেহয় করো।” বাবা যখন যন্ত্রণায় কুকিয়ে উঠে, চিংড়ি মাছের মতো দলা পাকিয়ে যায়, বড়ো মায়া হয়। সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়িটা বেচে দেবো। কিন্তু, বউ সন্তান নিয়ে থাকবো কোথায়! এদিকে বাবার মৃত্যু যন্ত্রণা, ওদিকে একমাত্র ছেলেকে অকুল সাগরে ফেলা। চিকিৎসার অভাবে বাবা মরলে লোকে বলবে- “কেমন ছেলে! বিনাচিকিৎসায় বাবাকে মারলো।” বাড়ি ভিটা বেচে দিলে কুৎসা রটবে- “কেমন বাপ! সন্তানের কথা ভাবলো না!” অসুস্থ বাপ বাড়ি বিক্রির গুঞ্জন শুনে বলেছিলো- “আমি আর কদিন! তোরা সুখে থাক বাবা, নাতিটার খেয়াল রাখিস।” কার খেয়াল রাখবো, নাতিটার? নাকি অসুস্থ বাবার? ভাবতে ভাবতে কাচের গ্লাসে বেলের শরবতে চামচ নাড়ছিলাম। হাত পা কাপছে, মুখ ঘামছে। শরবতে তিন ফোটা বিষ মিশিয়ে দিয়েছি আমি। তিব্র বিষ, মুখে নিলে মৃত্যু। মনেপড়লো ছোট বেলায় ম্যালেরিয়া জরে সতেরো দিন ছিলাম হাসপাতালে। চিকিৎসার খরচ যোগাতে বাবা তার প্রিয় মোটরসাইকেলটি বেচে দিয়েছিলো। কই.. একবারও তো বিষমাখা চকলেট খাইয়ে মেরে ফেলার কথা ভাবেনি। হাতের চামচ থেমে গেলো। বাবার বানানো বাড়ি ভিটা বেচেই বাবাকে বাচাবো। পরক্ষনে মনেপরলো ছেলের পড়াশোনা, বউয়ের আবদার, সংসারের নানা খরচ। বেলের শরবতে বিষ। না... বাবার হাতে কিছুতেই বিষের গ্লাস ধরিয়ে দিতে পারবো না। বাবা কতো স্নেহে মানুষ করেছে আমাকে। শহরে রেখে শিক্ষিত করেছে, মোটা অঙ্কের ঘুষে চাকরী জুটিয়েছে, তার হাতে তুলে দেবো বিষের গ্লাস! বিষমিশ্রিত শরবত পিরিচে ঢেকে বাবার বিছানার পাশে রেখে চলে গেলাম দুর। যেন কিছুই জানি না, জানতেও চাই না। যেন বাড়ি থেকে পালাতে পারলেই বাচি, এমনকি পৃথিবী থেকেও... আমার ছেলেটা গিয়েছিলো বাবাকে ঔষধ খাওয়াতে। রুগির পথ্য আপেল কমলা আঙুরের বেশি অংশ নাতিকে সস্নেহে খেতে দিতো বাবা, আজ দিলো শরবত ভরা গ্লাস। নাতি এক চুমুক মুখে নিয়েই মেঝেতে ঢলে পড়লো। তারপর... বাবা বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, ছেলে মেঝেতে পড়ে আছে নিস্তেজ। কী করবো! হায়... কোন দিকে যাবো আমি...! টাইম ফুল বারান্দার ঝুলন্ত টবে ফুটেছে টাইম ফুল। ঘাসের ডগায় গোলাপ-আকার মেরুন ফুলগুলো সকাল দশটায় ফুটে, চুপিসারে চুপসে দুপুরের প্রথম ভাগেই। এই ফুল আমাদের উঠোনে, ভিটের পাশে যেখানে টিনের চালের পানি ঝরে, সেখানে ফুটতো অনেক। বাবা, তখন সাইকেল হাতে দাড়াতে আঙিনায়। ক্রিংক্রিং বেল বাজিয়ে বলতে- ‘দেড়ি হয়ে গেলো, কৈ-রে..! আয় তারাতাড়ি’। আমি বইপত্র গোছানোতে ব্যাস্ত, আর মা আমার চুলে বাধছেন ঝুটি চিরুনী চালিয়ে- তারপর দুটো ক্লিপ। বাবা তুমি প্রাইমারী মাস্টার, আমি তোমার স্কুলে ছাত্রী চতুর্থ শ্রেনীর। উঠোনের কোন থেকে দুটো ফুল ছিড়ে কানে গুজে ছুটলাম, সাইকেলে উঠলাম। তখন মায়ের গলা- ‘গ্লাসভরা দুধ, খেয়ে তো গেলি না ?’ আমাদের ছাই রঙা গাভীটা দিতো দুধ এক হাড়ি, আর তার বাছুর কে রাখতো পারিপাটি জিহ্বায় চেটে। আহা কী মাতৃত্ব ! মায়েদের কতো মায়া ! যেদিন আমার বিয়ে ঠিক, সবাই খুশি, বিদেশে চাকুরে ছেলে,অঢেল টাকা। মা,তুমি চুপচাপ ছিলে কেনো বলতো...? মেয়ে মানুষের জাত, তাই বুঝি যথার্থ বুঝে ছিলে মেয়েদের মনস্তত্ব। টাইম ফুল সময় ধরে ফুটে,সময় ধরেই ঝরে । আমার যৌবন, মাতৃত্ব, সংসার...! সময় গেলে তো আর হবে না সাধন। তোমাদের মেয়ের জামাই বিয়ের প্রথম মাসে গেলো ভিনদেশে। তিনটি বছর পার, ত��ু দেশে ফিরবার নাম নেই, সে দেশের গ্রীনকার্ড পেয়ে তবেই ফিরবে, জানি না লাগবে কতো দিন। তুমি তো জানো না মা, জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে দুরের আকাশ দেখি। দেখি উড়ে যাওয়া মেঘ, পাখি আর বিমান। বড়ো একা একা লাগে, মানুষের সান্নিধ্যের অভাব কি যে যন্ত্রনার, কী করে বুঝাই...! আমি যেন পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় সেই প্রানী, বেঁচে আছি একটি মাত্র - একাকী। খুব জাগে সাধ,ফিরে যাই শৈশবে। বাবার সাইকেলে ক্রিংক্রিং। তোমার স্নেহে ঝুটিবাধা চুল, কানে গুজা টাইম ফুল। সোনার চুড়ি, হিড়েকুচি নেকলেস, বিদেশি প্রসাধন যেন আমার হাতের শিকল- যেন আমাকে লোহার খাচায় যাপটে ধরে,অজগর হয়ে খেতে চায় গিলে। এমন জীবন আমি চাইনি বাবা,এমন জীবন আমি চাইনি তো মা, এমন জীবন আমি চাই না ইশ্বর। চাকরী সমাচার চাকরী চাই। পিয়ন হবার জন্য পনেরো লাখ। ঘুষে হোক, তবু সরকারি চাকরী। একবার জুটে গেলে ফাঁকিতে ঝাপিতে জীবন পার। আমি জানি, সরকারি চাকরী মানে একজন স্ত্রীর একটাই স্বামী। মাস ফুরালে বেতন, সঙ্গম শেষে যেমন আদর আদর আর আদর। আমি জানি, বেসরকারি চাকরী মানে একজন বেশ্যার অনেকগুলো নাগর; রাতভর বলাৎকারের পর গায়ে মুখে ছুড়ে মারবে কয়টি টাকার নোট। আমি জানি, আত্মকর্মসংস্থান মানে ধর্ণাঢ্য সমাজপতির আদুরে কন্যা। যাকে বাটে ফেলতে লোকেরা তেল মেখে দাড়করিয়ে রেখেছে গোপনাঙ্গ; নিস্ফল আশায়। “কী করো তুমি? সফ্টওয়ার বিজনেস! ওহ... তুমি বুঝি চাকরী পাওনি?” “কী পেশা তোমার? ফ্রিলেন্স ওয়ার্ক! একটা চাকরী জুটিয়ে নিলে ভালো হতো।” “তুমি নাকি সিনেমা বানাও? তোমার নাকি গরু মোটা-তাজাকরণ প্রজেক্ট? হাস-মুরগির খামার? এসব ফেলে চাকরী খোঁজো বেটা। না হলে কেউ মেয়ে দেবে না।” -এই আমাদের সমাজ। বনরাজ সিংহের মুক্তজীবন নয়, এ জাতি পনেরো লাখের বিনিময়ে সোনার শিকল কিনে পোষা কুকুরের মতো গলাতে ঝুলাবে আর অনুগ্রহের আশায় মালিকের মুখে তাকাবে। ধনী বাপের আদুরে কন্যা না হয়ে পুরুষের একমাত্র বউ হওয়াতেই যেন সব আগ্রহ। হায় রে হুজুগে মাতাল জাতি, হায় রে আরামপ্রিয় ফাঁকিবাজ। প্রতীক্ষিতের ফরিয়াদ করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এমন করে তুমি আসবে ভাবিনি কখনো। তোমার কথা খুব মনে পড়তো। পড়বে না...! আমার পেটে যে তোমার সন্তান। আমি তার মাঝে অনুভবে তোমার স্পর্শ পাই। অনাগত, তবে অচিরেই পৃথিবীর মুখ দেখবে। তোমার খুব জানতে শখ ছিল, উদরগহীনে শিশু কেমনে নড়েচড়ে ওঠে। সে কি হাত পা ছোড়ে এদিক ও��িক, সে কি মাকে মা ডাকতে পারে, সে কি তোমাকে বাবা বাবা ডাকে, কী কৌতূহল তোমার। পেটের মাঝে কান পেতে রইলে আধাঘন্টা, কোন ফল পেলে না। না মা ডাক, না বাবা ডাক, না কোন কান্না-হাসি। আমি শুধু হাসলাম তোমার পাগলামি দেখে আর কুকড়ে গেলাম সুরসুরি পেয়ে। নাভীর উপর চুলের ঘষা, সুরসুরি লাগবে না তো কী...! তুমি কোনদিন বাবা ডাক শুনতে পাবে না; কী দুর্ভাগা তুমি। এমন করে তুমি আসবে ভাবিনি কখনো। সীমান্ত প্রহরীদের ছুটি মেলে না সহজে, তাই আমার মতো স্ত্রী-গণ চিরপ্রতীক্ষার পাত্র। ছুটি নেই বলে হানিমুনটাও করা হয়নি। তুমি বলতে পেনশন পেয়ে তবে যাবে হানিমুনে, সাথে থাকবে নাতি নাতকর। কখনো সখনো ফোনে কথা হলে বলতে তুমি ফোনটা যেন একবার ঠেকাই পেটে, অগ্রীম বাবা ডাক শোনা চাই তোমার; কী পাগলটাই না ছিলে তুমি। করিডোরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এমন করে তুমি আসবে ভাবিনি কখনো। গাড়ি এসে থেমেছিল রাস্তার শেষ সীমানায়, একটা কফিন নেমে এল ক’জনের কাধে ভর করে। বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো তোমার লাশ। গুলিটা তোমার কোথায় লেগেছিল- ফুসফুসে, কলিজায়, নাকি হৃদপিন্ডে? নিশ্বাস যখন বন্ধ হয়ে এল, অন্ধ হয়ে এল পৃৃথিবীর আলো আমার কথা তোমার কি মনে পড়ছিল, কিংবা আমার উদরপুষ্ট শিশুটির কথা? জলে ডোবা মানুষের মুহূর্তে বিস্মৃতি স্মরণের মতো। তোমার অনাগত সন্তান বাবা ডাকবে কাকে? কে শুনবে তার বাবা বাবা ডাক? পিতৃছায়াহীন বেঁচে থাকা কী যে বেদনার। কোনোদিন আর ভুল হবে না কোনোদিন আর ভুল হবে না, আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর তুমি বলা এসে যাবে না। এই কান ধরে বলছি গো, মাথা ছুঁয়ে বলছি- আপনার পথের দিকে আর চেয়ে থাকা হবে না। আর কোনোদিন আমি তাকাবো না আড়চোখে, আপনি যতই পরে আসুন নতুন শাড়ি। কপালের টিপ যদি ভুল করে অস্থানে হয়ে যায় ইশারায় আর আমি দেখাবো না... আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না। আপনি যদি আমাকে রেখেই চলে যান চুপিচুপি, চলে যান কবিতা পাঠের আসর ছেড়ে। এই মাটি খেয়ে বলছি গো, কিড়া কেটে বলছি- আর রাগ করে আমি মুখ ফোলাব না... আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না। আমি তো কারো টাকাতে কেনা গোলাম নই, নিজেকে দেইনি বেচে অন্যের হাতে। কেন আপনারে ভেবে বৃথা হই উচাটন- এই মন আর কারো মনোমত চলবে না... আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না। চোখ তেড়া মহাত্মা গান্ধী করেছিলেন তেরোবছর বয়সে, শেখ মুজিবকেও আঠারোতে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। আর রবিঠাকুর...? সে যুগের সবাই কমবেশি মুকুল ধরতে না ধরতেই বয়সী বকুল। দাদারা ভারি কাচের চশমায় পড়তেন সংবাদপত্র। কোথাও ধর্ষণ নেই, শব্দটা অভিধানে ছিল না নাকি...! বউকে কুপিয়ে তিনারা এতটাই ঘেমে ��েতেন যে ধর্ষণ করার সুযোগই জুটেনি ঘর্মাক্ত কপালে। গোলাম সারওয়ার, এ যুগের বিচক্ষণ সম্পাদক, অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাল কালির শিরোনামে ছাপা হয় একটি মেয়ের শ্লীলতাহরণ তার দৈনিকে প্রায় প্রতিদিন। উনত্রিশে আমাদের লেখাপড়ায় ইতি, ত্রিশে চাকরির সন্ধানে জুতো ক্ষয় তেত্রিশে বিবাহ বন্ধন- এই বিশাল সময়ের কাঁনাচে কদাচিৎ ধর্ষণ অস্বাভাবিক কিছু তো নয়। ভুলে গেলে চলবে না, সে যুগের তিনাদের মতো নাভীর নিচের পশম এ যুগেও তেরো চৌদ্দতেই গজায়। সংবাদপত্র হাতে নিয়ে চায়ের কাপে ঠোঁট ডুবিয়ে সহকর্মীর দিকে চোখ তেড়া করেন সরকারি কাচারির দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরে নিরঞ্জন- “বুঝলেন দিদি আমি কি বলি, বাল্যবিবাহের মূল উৎপাটন করতে গেলে বেড়ে যেতেই পারে ধর্ষণ।” রিকশাতে একদিন রিকশাতে একটা মেয়ে একটা ছেলের কাঁধে মাথা রেখে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। আর ছেলেটা মেয়েটার চুল-ওড়া কপালে চুমু খেতে খেতে নরম শরীরে শরীর ঘষছিল। রিকশাটা চলে গেল আমারই চোখের সম্মুখ মাড়িয়ে। মুহূর্তে আমি যেন তলিয়ে গেলাম, পুরাতন স্মৃতির আড়ালে গেলাম হারিয়ে। মনে পড়ে তার মুখ তার চোখ, যাকে আমি প্রাণপণ বেসেছি ভালো- আহা, সেই কবেকার কথা- এমন মধুর দিন আমারও তো ছিল। রিকশাতে একটা মেয়ে একটা ছেলের কাঁধে মাথা রেখ ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। গোপনে বিপন্ন সোনার পিঞ্জিরা রেখে উড়ে যায় পোষা পাখি সোনার কী দাম আহা রইল তবে ঘরের বধূই যদি গেল চলে পৃথিবী ছেড়ে রুপালি খাটটি না হয় পড়ে থাক নীরবে। মেঘ কেন মিশে যায় গহিন নীলিমায় হাসে না হাসনাহেনা বিপন্ন বাগানে জাল ছেঁড়া মাছ দেখায় লেজের দাপট চলে গেল যে তার লাগি মন কাঁদে গোপনে। সে যদি গেলই চলে একাকী নিস্বর্গে আমার থরোথরো বুকে কে ঘুমাবে খোঁপা খুলে এতই যদি রবে অটুট তার অভিমান- আমার চুরুটের ধুঁয়া প্রজাপতি হবে কার চুলে!! নির্যাতনের মতো স্নেহ মায়ের কিছু আচরণ মারাত্মক পীড়া দিতো আমায়। আমি এর নাম রেখেছিলাম নির্যাতনের মতো স্নেহ। ধরা যাক, বন্ধুবান্ধবে আড্ডা। ফোনে যন্ত্রণার ঝড় তুলে মা জানতে চায়- শরীরটা ভালো কি না? খেয়েছি কি না সসময়ে? বাড়িতে নিজ হাতে খাওয়াতো; আমার মোটেই লাগতো না ভালো। অনার্স পড়ুয়া ছেলে মায়ের হাতে ভাত খাচ্ছে- কী লজ্জা! গোসলখানার দরজায় ঠক-ঠক। তোয়ালেতে সাবান মেখে উপস্থিত মা। পিঠে কালি-ময়লার চর, ঘষেমেজে তুলবে যখন, আমি সুরসুরি পেয়ে দলাই-মলাই। হঠাৎ যদি অসুখ বাঁধতো, যেমন সামান্য জ্বর, মা রাতজেগে ছেলের মাথায় ঢালতেন জল। ভেজা কাপড়ে জুড়াতেন কপালের উত্তাপ। তার চোখভরা অশ্রু দেখে রাগে তো আমার দাঁত কটমট। কোথাও যাবার বেলায় মা উঠোন পেরিয়ে রাস্তা অব্দি আসতো। ক্ষণে ক্ষণে বলতো- ‘সাবধানে থাকিস’। আঁচলের গিঁট খুলে হাতে দিতো তুলে খুচরো পয়সা কিছু- পথে পড়বে প্রয়োজন। রিক্সাতে উঠে মায়ের উদ্বেগী মুখটায় তাকাতেই খুব কষ্টে জমতো কান্না চোখের কোণায়। মাঝে মাঝে নিঃশব্দে চলে আসতাম। তার এক বদভ্যাস, যাত্রাকালে স্রষ্টার নামে আমার কপালে দেবে অন্তত তিনটি ফুঁ... এতে নাকি বিপদের ছায়া কাটে, কুগ্রহের কালগ্রাস থেকে বাঁচবো আমি। ওসবে বিন্দুমাত্র ছিলো না বিশ্বাস, তবু একদিন বেজেউঠা ফোন রিসিভ করতেই শশ্বব্যস্ত মায়ের গলা- ‘রিক্সাটা থামা বাবা, তোর মাথায় তো ফুঁ দেওয়া হয়নি’। আবদার রাখতে প্রথম বাসটা মিস, দ্বিতীয়টায় চড়ে বসলাম। বাস ছুটছিল বাতাস কাটা বেগে; আচমকা কড়া ব্রেকের ঝাঁকুনিতে যাত্রিরা থতোমতো। বাইরে ভীর, শহরগামী প্রথম গাড়িটা পড়ে আছে ব্রিজের নিচে, আর প্রায় সব কয় যাত্রীই নিহত। আহা... এতোক্ষণে হয়ে যেতাম ওপারের বাসিন্দা। মায়ের মৃত্যুর পর আজই প্রথম বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছি। এতোবার পিছু তাকালাম, মায়ের মুখটা দেখতে পেলাম না; বড়ো উদ্বিগ্ন চিন্তাশঙ্কুল সেই মুখ কোনদিন দেখা হবে না এই পৃথিবীতে। মা... মা গো... তোমার সন্তানের ওপর থেকে সকল বিপদের ছায়া, কুচক্রির কুনজর কি কেটে গেছে...! একটি বার কেনো আসো না তবে দিতে মঙ্গল ফুঁ...! কেন পিছু ডেকে বলো না- ‘এই নে খুচরো কয়টা টাকা, পথে কিছু কিনে খাস’। ব্যর্থ ডুবুরী চেয়েছিলাম একটি বেগুনী ফুল, তুমি এনে দিলে ঝুলবারান্দায় ঝুলিয়ে রাখার মতো দুটো অর্কিড-চারা নারকেলের খয়েরী মালায়। সকাল বিকাল আমি জল ঢালি খুব যতনে- আর তুমি অফিসে যাবার আগে একবার পাতায় পাতায় বুলিয়ে যাও হাত, ফিরে এসে আবার ধরো। যেন পিতা তার চঞ্চল কন্যার ববকাট চুলে স্নেহের আঙুল চালায়। যেদিন ফুটলো প্রথম ফুল তুমিই খুশি হলে সবচেয়ে বেশি। আমাকে একেবারে কোলবালিশের মতো আড়কোলে তোলে কপালে খেলে খপাৎ খপাৎ চুমু, আর বার বার তাকালে হালকা হাওয়ায় কাঁপা প্রজাপতির পাখার মতো ছিটছিট অর্কিড পাপড়িগুলোর দিকে। আমি তো জানি কতো যে ভালো তুমি বাসো আমায়। তাই আমার একাকীত্ব কাটিয়ে দিতে দিলে উপহার ��রগোশ একজোড়া, একটি ধবধবে সাদা অন্যটি সাদায় কালোয় মিশ্রিত যাদের লালন করি আমি আপন শিশুর মতো গালে গাল মিশিয়ে- যেন আমিই তাদের মা। মুখে তুলে দেই কতো চাকচাক করে কাটা গাজরের ফালি, বাধাকপির কচি সবুজ পাতা। আমার কোন আবদার রাখোনি অপূর্ণ তুমি। আমিই কেবল পারিনি... মনে কি পড়ে... চেয়েছিলাম পদ্মার ইলিশ-সর্ষে ভাজি? তুমি আমাকেই নিয়ে গেলে পদ্মায় জোয়ারের বেলা জেলেদের নৌকায় উঠে নিজের হাতে ধরলে ইলিশ। যে ইলিশ ভেজেছি পহেলা বৈশাখে উত্তপ্ত উনুনের পাশে দাঁড়িয়ে আর আঁচলে মুছেছি গলার ভাঁজে জমা রূপালি মালার মতো ঘাম। তখন তুমি কোমর জড়িয়ে ধরে কামড়ে দিলে কান, আর হাতের আঙুলে এক চিমটি সর্ষে ইলিশ মুখে নিয়ে বললে- ‘বড়ো মধুর হয়েছে আমার রাধুনীর রান্না।’-মনে কি পড়ে? মনে কি পড়ে? অথচ আমি বারোটি বছর ধরে তোমাকে প্রতিদান কিছু দেবো বলে কতো যে চাই- যেমন একটি সন্তান, তবু পারি না দিতে। হাজার হাজার মাইল সাঁতরে এসে আমি যেন অতলান্তিক সমুদ্রপুরী থেকে শূন্য হাতে উঠে আসা ব্যর্থ ডুবুরী কোন। তুমি যখন আমাকে খুব খুব খুব বেশি ভালোবাসো... ব্যর্থতার গ্লানী আর অপারগ অপরাধের ভার বুকে নিয়ে গলায় কলস বেধে ডুবে মরতে ইচ্ছে করে আমার। অফিসে যাবার বেলায় আমি আর বাবা হাতে পায়ে লোশন মালিশকালে পড়লো মনে বাবা তো এ বস্তু মাখেনি কখনো গায়ে...! নাকে মুখে ছাকা ছাকা সরিষার তেল মেখে বলতেন- ‘খাঁটি জিনিস, বড়ো উপকারী, চোখে ধরলে আরও ভালো’ সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না এ যুগের কি বুঝবেন...! অথচ লোশন তখনো দোকানে পাওয়া যেতো ঠিকই। জেল মাখা চুলগুলো পরিপাটি আঁচড়াতে গিয়ে দেখি আগেকার আয়নাটা ছিলো না তো এতো বড় আর এতো মসৃণ...! ছিলো একফালি ভাঙা কাঁচ, তাতেও আবার প্রতিবিম্ব বিকৃত। বাবার মাথায় শুষ্ক চুল, চিরুণীর দাঁত কটা বিলীন, নতুন যোগানোর নেই আয়োজন- টানাপোড়নে এমনি সাদামাটা বেঁচে থাকা। রিক্সাতে উঠে যাই অনায়াসে, শুধাই না ভাড়া বাবা ঠিকই চড়তেন দাম দড় কষে, যেন যাত্রা শেষে ধূর্ত চালক না পারে খসাতে একটি টাকাও বেশি। কিংবা রাজ্যের পথ পায়ে হেঁটেই দিতেন পাড়ি, তবু পকেটের টাকা পকেটেই থেকে যাক- এই যেন পণ। সেন্টের ঘ্রাণমাখা জামা, সিগারেট ফুকে ফুকে চলি পথের ভিখারি যেই চায় দুটো পয়সা হাত বাড়িয়ে অমনি দিলাম রাম ধমক, অকথ্য গালাজ তো আছেই। বাবা তাকে ফেরাতেন খালি হাতে তবু ধমকটা দিতেন না; আর তার কাছে সিগারেট ফুকা মান�� অকাতরে অর্থ ওড়ানো। অল্প আয়ের লোক- বাউন্ডুলে তোড়জোড় তাকে কি মানায়...? অফিসে ঢুকেই দেখি বেশুমার মক্কেল প্রতীক্ষা গুণে, চেয়ার টেনে বসতেই টেবিলের আবডালে চলে আসে টাকা। ঘুষ বললে মন্দ শোনায়, বাঁ হাতের কারসাজি ডাকি আমি এ-কে। এমন ���ুপটুতা ছিলো দুষ্কর বাবার পক্ষে অতি ভীতু ব্যক্তির দ্বারা হবে কেন এ তো নির্ভীক সওদা...! হয়তো তিনি বলতেন- ‘এ কাজ করার আগে মরণ দিও প্রভু, তবু ঘুষ নয়।’ বাবাটার লাগি বড়ো মায়া হয়, জীবনটা তার কোনদিন উপভোগ করা হলো না। সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না এ যুগের কি বুঝবেন...! প্রথম পরিচয় সেলিম ভাই, আপনার জন্য আমার ধাঁধাঁ, আচ্ছা বলুন তো... আমাদের প্রথম দেখাটা কখন কোথায় হয়েছিল? মুখ কাচুমাচু করার কিছু নেই, জবাব আমিই বলি- এগারোতম ছড়া উৎসবে আপনার হাতে মাউথপিস, আমার হাতে একটা চিক্কন কাগজ, হিজিবিজি কাটাকাটি সমেত কী সব লিখা। আপনার মাথার গেরুয়া হ্যাটটা বাঁ হাতে ঠিক করে নিয়ে বললেন,- ‘এবার স্বরচিত কবিতা পাঠ করতে আসছে...’ হ্যাঁ, প্রথম একবার আটকে গিয়েছিলেন, তারপর ভুলের মতোই শুনালেন সবাইকে আমার নাম। আমি তখনও অর্বাচীন এক আঁতেল- কবিতাপত্র হাতে ঠকঠক কাঁপছি এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁশিতে সাফ করছি গলা। সামনে অজস্র শ্রোতা, আমি কবিতা পাঠ শুরু করলাম। কেউ কান চুলকায়, কেউ হাত চুলকায়, কেউ মাথার চুলে আঙুল বোলাতে বোলাতে পায়ের জুতা ঠিক করে। আবার কেউ কেউ ভ্রুয়ের পাশে রাজ্যের যন্ত্রণা নিয়ে কুচকানো কপালে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, তাকিয়ে থাকতে হবে- তাই হয়তো তাকিয়ে থাকা। মনে মনে ভাবি, কবিতা নির্বাচনে ভুল করলাম না তো...! প্রেমের কবিতা হলে ভালো হতো, কিংবা হাসির ছড়া। চোখ বন্ধ করে কাঠের পুতুলের মতো অনড় বসে শুনতো সবাই এক্কেবারে প্রত্নযুগের কালো পাথরের মূর্তি যেমন; তারপর হাসতে হাসতে পড়তো গড়িয়ে এদিক ওদিক। আমার যে প্রেমিকা, আমি যার বাড়ির পথে যাবার বেলায় খোলা জানালায় কমসে কম তিনবার চোখ রাখি, তাকে উদ্দেশ্য করে দাঁত কটমটিয়ে বললাম-‘অন্তত তুমি তোমার ওড়না ধরে টানাটানি বন্ধ করো, অনুরোধ করি, আমার প্রতিভাকে মাঠে মরতে দিও না। আমার অপমান তো তোমারও অপমান।’ একজোড়া জালালী কবুতর হাততালি দেওয়ার মতো শব্দে উড়ে গেল হলরুমের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, কারও দৃষ্টি গেলো না সে দিকে। একটা শিশু দেয়ালের লেজকাটা টিকটিকিটাকে তাড়া করতে গিয়ে ছুঁড়ে মারলো হাতের বাঁশি, সেদিকে দিলো না মনোযোগ কেউ। ছোট বেলায় চোখে কাঁচপোকা পরে যেমন জল ঝরছিল তেমনি টলমল করে উঠলো আমার চোখ। সবার দৃষ্টি এবার আমার দিকে, শুধুই আমার দিকে... আমি সেলাই কলের নিরবিচ্ছিন্ন ঘূর্ণয়মান চাকার মতো মাইক ফাটিয়ে অনর্গল বলে গেলাম- ‘হে মাটি... হে স্বদেশ... হে মায়ের অশ্রুসিক্ত পিতার কবর, ওগো পূর্বপুরুষের গলিত লাশে উর্বর পুণ্যভূমি। যতক্ষণ হৃৎপিণ্ডে রক্ত আছে, যতক্ষণ ঘাড়ের উপর মাথাটি দণ্ডায়মান কসম তোমার- যে লুটেরা লুটে নেয় তোমার সুখ, যে কুলাঙ্গার চেটে খায় তোমর সম্ভ্রম, তোমার দুর্দিনে যে দুর্বৃত্ত বগল বাজিয়ে হাসে তোষামোদি হাসি বিরুদ্ধে তার রুখে দাঁড়াতে গিয়ে মরণ যদিও আসে- লড়ে যাবো, লড়ে যাবো, লড়ে যাবো।’ সেলিম ভাই, সেদিনই আপনার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। পরিণতি মা। যখন সন্তানের মুখে স্তন গুজার কথা, দোলনায় দোল তুলে ঘুমপাড়ানিয়া গান শোনাবার কথা দাসির হাতে দুধের বোতল দিয়ে মজেছো টিভি নাটকে, সিনেমায়। বাবা। যখন সন্তান নিয়ে দৌড়-ঝাপ, লুকোচুরি, ফুটবল এটা ওটা খেলাচ্ছলে কোলে তুলে চুমু বিলাবার কথা পোষা কুকুরের শিকল ধরে ঘুরছো পার্কে-ময়দানে, ভালোবেসে পিঠের লোমে বুলাচ্ছো হাত। শিশুটা কাঁদছে একাকিত্বের যন্ত্রণায়, জানালার গ্রীলে ঠুকছে কপাল। অথচ তোমরা বন্ধুবান্ধব আর প্রিয় খুনসুটিতে কাটাচ্ছো দিন-রাত, ছেলেকে রেখে অবহেলায়। তোমাদের সন্তান ঘরের দেয়ালে একটি দুটি অক্ষর নচেৎ ফুল-পাতা-চিত্র এঁকে দাড়িয়েছে কুড়াতে প্রশংসা। ভ্রুয়ের পাশে যন্ত্রণা এনে ভেবেছো- ধুর ছাই... কেন এই জঞ্জাল পোষা! ঢের ভালো নিঃসন্তান জীবনটা উপভোগ। অথবা তাকে শিশু-সেবাকেন্দ্রে দেবে নির্বাসন আগামী মাসেই। হুম... তোমাদেরকেই বলছি... শোন হে জননী এবং জনক তোমাদের দুর্দিনে, ধরো... প্রবীণ বয়সে হাতের লাঠি অথবা চশমা যদি হাত ফসকে নাক উপচে পড়ে যায়, আসবে না কেউ ছুটে পুনরায় তুলে দিতে। ছেলেটা পাশের ঘরে বউ নিয়ে মাতবে হাসি-তামাসায়! তোমরা একা অন্ধকারে শক্তিহীন সন্ধ্যাবাতি জ্বালাবার। পিঞ্জিরায় কাঠবিড়ালী, তাকে সময় সময় খাবার দিতে ভুলবে না পুত্রবধু। অথচ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে অষুধ সেবনে প্রায়ই হবে ভুল। আর যদি বড়ো বেশি বোঝা হয়ে ওঠো তোমাদের আশ্রয় হবে বৃদ্ধাশ্রম, শুধু বৃদ্ধাশ্রম। হরতালে ঠক্ ঠক্ ঠক্ ঠক্-ঠক্-ঠক্- ‘আপনার ঘর করবো তালাশ, আছে নাকি কোন আগ্��েয়াস্ত্র আলমারির আবডালে?’ ঠক-ঠক-ঠক- ‘দরজা খুলুন, আমরা পুলিশ, সরকারি লোক।’ পুলিশের জীপ নিঃশব্দে ছুটছে- আলিগলি, রাজপথ, দোকান-পাট, পার্ক, রেস্তোরাঁ ও বস্তি পাড়ায়। এক রাতে জীপ থামলো আমাদের ছাত্রাবাসে। পাশের ঘরে দরজায় ঠক্-ঠক্-ঠক্, ঠক্-ঠক্-ঠক ্। ভেতর থেকে আওয়াজ- ‘কে রে শালা, মাঝরাতে এলি ঘুম ভাঙতে...?’ পুনরায় একটু জোরে- ঠক্-ঠক্-ঠক্ । দরজা খুলে দাঁড়ালো গৌতম। হাত পা কাঁপছে, মুখ শব্দহীন, সে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তিনজন পুলিশ। একজন বললো- ‘শালাকে জীপে তোল, বড় বদমাশ।’ ‘স্যার, আমি জামাত-শিবির নই, জাত হিন্দু।’ ‘কী প্রমাণ তার, প্যান্ট খোল প্যান্ট খোল ব্যাটা- চেক করি ঠিকঠাক্।’ ভয়ে গৌতমের পেচ্ছাব ছুটবার অবস্থা, অণ্ডকোষ চিমসে তলপেটে মিশেছে। ঘর তালাশ শেষে মিললো রাধাকৃষ্ণের ছবি, দেবী দূর্গার মূর্তি। বেঁচে গেলো সে। এবার রাজুদের দরজায় বন্দুকের বাটের সজোরে আঘাত। দরজা খুলতে বাধ্য ভেতরের দু’জন। নেই জামাতি-শিবিরি প্রমাণ, ঘরে নেই ককটেল-পাটকেল তবু হাতকড়া দুজনের হাতে। দরজা খুলতে দেরিটাই অপরাধ...! জানালায় চুপিচুপি দাঁড়িয়ে দেখছি সব। আমি নিরাপদ। বাইরে লাগিয়ে তালা গ্রিলভাঙা জানালাটা টপকে ঘরেতে ঘুমাই। পুলিশ ভাববে নেই কেউ। বাইরে ঝুলছে তালা, তাই দরজায় বাজবে না ঠক্-ঠক্-ঠক্। ঘটনা কী ঘটছে, কৌতুহলে উঁকি দিলো রমজান। দুইজন পুলিশ ঢুকলো তার কামড়ায়। টেবিলে কুরান, নবীজির জীবনী, অজস্র ইসলামী বই আর টুপি। বিছানায় ভাঁজ করা জায়নামাজ। ‘শালা নিশ্চিত শিবির, দাঁড়ি দেখলেই যায় বুঝা’- একটা পুলিশ বললো এবং জাপটে ধরলো তাকে। ছেলেটা কেঁদেকেটে বলেছিলো- ‘আমি জামাত-শিবির নই, নেই নিষিদ্ধ দলের সাথে যোগাযোগ। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ি শুধু।’ আরও দুটো রুম সার্চ। একজন আটক। তার মুঠোফোন ঘেটেঘুটে পুলিশ পেয়েছে উলঙ্গ নারীর ছবি নগ্ন ভিডিও। বেকসুর খালাস। এমন ভিডিও যারা দেখে তারা জামাত-শিবির হতে পারে না। একজন ছাড়া পেলো পকেটে প্যাকেট ভরা সিগারেট ছিল বলে। ইসলামে ধুমপান নিষেধ। অতএব তিনি হেফাজতে ইসলাম নন, পুলিশের জীপ তাকে করবে না বহন । ঠক্-ঠক্-ঠক্... কাল হরতাল। তাই এই ধর-পাকড়, যাতে শান্ত থাকে দেশ; ককটেল-পাটকেল না ফাটে পথে। অপার্থিব ফলে ফরমালিন, মাছের কানকো পঁচা, চালে কাঙ্কর। দোকানিকে বৃথা বকে-ঝকে মুখে তুলছো ফেনা, বুঝোই না তোমার কৃতকর্মই ��োমায় ঠকে যেতে বাধ্য করেছে। সুদখোর, মিথ্যাবাদী, ফন্দিবাজ, আমানতের খিয়ানতকারীদের বিধাতা করেন বঞ্চিত সমস্ত নিয়ামত থেকে। ব্যাংকে অসৎ টাকা ক্রমানুপাতিক বাড়ছে, যেন বন্য শুকর মাস মাস সন্তান প্রসবরত। অফিসের ফাইল আটকিয়ে খোঁজ বখশিশ, শিকার সন্ধানী ধূর্ত শিয়াল; তুমি ঘুষখোর নও...! বন্ধুরা টাকা ধার নিলে মহামান্য আবু বকর উঁচু গলায় বাগারম্বর তো নয়, করতেন অপরাধির মতন বিনম্র আচরণ। অতিরিক্ত আদায় দূরে থাক, বৃষ্টির রাতেও ঋণগ্রস্থ বন্ধুর বারান্দায় নিতেন না আশ্রয়, যদি সুদ বিবেচ্য হয়। প্রতিবেশি যথাসময় ঋণ শুধতে না পারায় তুমি পথে পেয়ে করো অপদস্ত। তিরিক্ষি মেজাজ জুড়াতে সে করে আপ্যায়ন । চায়ের কাপে বিস্কুট চুবিয়ে পা নাচাও আয়েশী ভঙ্গিমায়; লজ্জা করে না...! খলিফা ওমর কাচারিতে ব্যস্ত। এক রাত�� এলো অতিথি এক। নিভিয়ে দোয়াত আঁধারে বসেই ওমর কথা বলছিলেন আগন্তুুকের সাথে। ব্যক্তিগত ব্যাপারে সরকারি তেল ক্ষয় সমীচীন নয়, কী সাংঘাতিক সৎ মানসিকতা...! তুমি স্কুলগামী সন্তানকে ঘরে ফেরাতে, শ্বাশুড়ীকে হাসপাতাল নিতে পাঠিয়ে দাও অফিসের চৌচাকা, যার কাজ শুধু তোমাকে বহন। অফিসের টেলিফোনে করো পারিবারিক বাৎচিত, বুঝোই না এ যে অন্যায়...! তোমার সন্তান নষ্টের দখলে যাবে। অতি আধুনিক কন্যা অশালীন পোশাকে বন্ধুর হাত ধরে পালাবে, ফিরবে না কোনদিন। ছেলেটা মদের বোতল হাতে আসবে তেড়ে বুনো মহিষের মতো তোমাকেই গুতিয়ে মারতে। সুন্দরী বধূ পরকিয়ায় মেতে নাইট ক্লাবে কাটিয়ে আসবে রাত। তোমার শ্রমে ঘামে গড়া অট্টালিকায় ধরবে ফাটল। যখন মৃত্যুদূত দাঁড়াবে দুয়ারে, এই ধন, এইসব আত্মীয়-স্বজন মুহুর্তে ফেরাবে মুখ। মৃত মানুষের শূন্য মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে কেউ দেয় না গুঁজে পার্থিব সম্পদ। বউ বন্দনা পৃথিবীতে বিদুষী কিছু নারী কখনো কখনো পারে বুঝে নিতে মুহূর্তে পড়ে নিতে, স্মিতহেসে জয় করে নিতে পুরুষের মন ঘরেই আমার আছে তেমনি একজন, ভুবন মোহন। প্রচন্ড বৃষ্টিতে মধ্যদুপুর, চুলোর ওপর শর্ষে-ইলিশ লক্ষ্মী ঘরণী আমার ঘেমে ঘেমে রাঁধছো। দেখেই হারাই দিশা পৃথিবীর সমস্ত প্রশান্তি যেন আমারই ঘরে বেধেছে বাসা, ভালোবাসা। রিকশাতে যেতে যেতে হঠাৎ যখন মসজিদে পড়ে আসরের আজান তাড়াহুড়ো করে তুমি তুলো মাথায় কাপড়, ঘোম��াতে ঢাকো মুখ তখন আমার অন্তরজুড়ে স্বর্গীয় সুখ, অজানা সে সুখ। মধ্যরাতের ঘরে সুবাসী সুরভী গায়ে মেখে, টানা চোখে কাজল এঁকে যখন দাঁড়াও শরীর ঘেঁষে। মনে হয় সমস্ত আলো নিভাই ফুৎকারে শুধু কাচের চুড়ি বাজুক নদীর স্রোতের সুরে, নিস্তব্ধ অন্ধকারে। সেই যে পয়লা বৈশাখে দিয়েছিলে কিনে পাঞ্জাবি আকারে একটু বড় আমি কি ঘুরিনি বলো তোমার সাথে সেই ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি পরে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে হাসিমুখে সারা দিন ধরে, মনে কি পড়ে? ঈদের নামাজ শেষে ফিরেছি ঘরে, তুমি পায়ে ছুঁয়ে করলে সালাম মনে হলো সমস্ত সৌন্দর্য সমস্ত পবিত্রতা রয়েছে তোমাকে ঘিরে যেন স্বর্গীয় অপ্সরা এলো পথ ভুলে আমার ঘরে, যাবে না স্বর্গে ফিরে। আমার কোলে যেদিন দেবে তুলে প্রথম সন্তান, সেদিন মনে হবে পৃথিবী সুন্দর, জীবন সুন্দর, এর থেকে বেশি সুন্দর ভালোবাসা জাগবে মনে সহস্র শতাব্দী বাঁচার আশা, অপূর্ণ প্রত্যাশা। এইখানে এইখানে যদি বনের ভেতর ঢুকে যাও তোমাকে ভয় দেখাতে আসবে লকলকে জিহ্বধারী সবুজরঙা সাপ। তোমাকে ভয় দেখাতে আসবে উলুল ঝুলুল খাটাশ, খেকশিয়াল। এইখানে যদি তুমি গাছের সাথে সেঁটে থাকতে চাও- তোমার পা কামড়ে দেবে লাল পিঁপড়ে, তোমাকে আজন্ম বৃক্ষ ভেবে ঘারের উপর ডানা ঝাঁপটাবে হলুদ পালকধারী একটা অচেনা পাখি। এইখানে ঝরা শুকনো পাতার মর্মর ছাড়া কোন কোলাহল নেই, ফুলের সৌন্দর্য ছাড়া কোন নান্দনিকতা নেই- নেই পাখির কিচির মিচির ব্যাতিরেকে কোন গান। এইখানে মানুষ নিতান্ত সহজ সরল, তোমাকে ডেকে এনে চিরচেনা স্বজনের মতো দুবেলা খাইয়ে দেবে যথেষ্ট সমাদর দেখিয়ে। তোমার মুখে তুলে দেবে মগডালের সিঁদুরে পাকা আম, কাজলী গাভীর একবাটি দুধ। এইখানে শ্বেতপাথরে ঘাটবাঁধা পুকুরের অতলান্তিকে ডিগবাজি খেলে চিতল বোয়াল, শামুক কাছিম। শিশুরা টলটলে জলে লাফিয়ে পড়ে মুখে জল নিয়ে আকাশের দিকে ছিটিয়ে ছিটিয়ে স্নান সারে। এইখানে নেই রক্তচোষা পিশাচের দল, নেই গ্রেনেড বোমা। নেই আড়ালে লুকিয়ে থেকে বুকে ছুড়ি মারার মতো অসৎ হাত। এখানে তো নেই কালো ধোঁয়ার আবডালে মতলব আটা মানবরূপী দানবের মুখ। কারও হাতে ঘড়ি নেই- তাই নেই সময়ের তাড়া। এইখানে মানুষের সাদামাটা পান খাওয়া মুখে নির্ঝঞ্ঝাট হাসি লেগে থাকে সর্বক্ষণ। ওরা গাছের পাতার রং বদল দেখে- নিজেকে বদলাতে শেখে। ওরা কাজল দীঘির কাকচক্ষু জলে বলিহাঁসের ডুব সাঁতার দেখে নিজেকে করে কিছুটা রহস্যময়। এইখানে ওরা ঘুঘুপাখির খুনসুটি দেখে আপন ব��ূর সাথে প্রণয়মাতাল হয়। ওরা ঠকতে জানে- ঠকাতে জানে না। কাঁদতে জানে, অথচ কাউকে কখনো কাঁদিয়ে দেখেনি। এইখানে ওরা মুখ ফুটে কোনদিন বলেনি ‘ভালবাসি’ অথচ কতো গভীর-গভীর-গভীর ভালবাসা দিয়ে যায় একে অন্যকে। মেয়েলী আবদার আমার জন্য কেউ পাগল হোক, তা চাই না শুধু আমাকে বুঝোক। চোখের কোনে বাসি কাজল লেপটে আছে, এ দৃশ্য যেন তার দৃষ্টিগোচর হয়। আমি কাদলে তার কাধটা বাড়িয়ে দিক, আর হাসলে সে তাকাক বিষ্ময় ভরা চোখে। প্রভাতে বিছানা ত্যাগের বেলা আমার আচল ধরে বলুক- “আরেকটু ঘুমাও, আসেনি এখনো রোদ জানালার কাঁচে”। গোসল শেষে ভেজা চুলে আমাকে দেখে কেউ তাকিয়ে থাকুক। অফিসে যাবার আগে তারাহুরু করে তৈরি চিনি দিতে ভুল করা চায়ে চুমুক দিয়ে বলুক- “বেশ হয়েছে”। মন খারাপের দিনে আমাকে নিয়ে ঘুরতে বেরুক। পথের দোকান থেকে দুটো ফুল কিনে বলুক- “আজ সারাদিন শুধু তোমারই আরাধনা”। আমি চাই না ওঠতে বসতে কেউ বলুক- “ভালোবাসি ভালোবাসি”। শুধু চাই যখন রাগ করে চলে যাই, সে আমাকে যেতে না দিক। ভালোবাসার নিবির সুখে মরে যেতে যেতে মধ্যরাতের বিছানায় আদরমাখা শিৎকারে তার নাম ধরে ডাকতে চাই। আর চাই সাজবো বলে আয়নাতে দাড়াই যখন, পেছন থেকে জরিয়ে কাধের চুলগুলো সরিয়ে কানেকানে কেউ তো বলুক- “তোমাকে ছাড়া এই পৃথিবী বড়ো একলা লাগে”। শেলটার ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম... একটা মোটর বাইক চষে বেড়াচ্ছে কলেজ ক্যাম্পাসের এপাশ ওপাশ। ক্লাশ ফাকি মেরে কাঠাল তলায় আড্ডাবাজিতে মাতা ছেলেগুলো, একলা আসা মেয়ে দেখলেই সিগারেট-পোরা ঠোটে শিশ বাজানো ছেলেগুলো উত্তেজনার জোয়ারে ভাসছে। ক্ষনেক্ষনে দুজন তিনজন চড়ে বসে বাইকটায়, আকাশ বাতাস কেপে ওঠে বিভৎস শব্দে। আমি ভাবি মালিক কে! সবাই দেখি মালিকশোলভ গাম্ভীর্যে চালায়! একজনকে ডেকে জানতে চাই- "মেটর সাইকেল পেলে কোথায়?" ছেলেটা শ্রদ্ধায় ঝড়কবলিতো সুপারি গাছের মতো মাথা ঝুকিয়ে বললো- "জলিল দারোগা দিয়েছে স্যার... আপন ভাইয়ের সমান স্নেহ করে আমাদের।" দারোগা সাহেবকে পথে পেলে তিনি জানালেন- "বর্ডারক্রস চোরাই মাল, থানায় পরে নষ্ঠ হচ্ছিলো। ছেলেদের দিয়ে দিলাম, চড়ে ফিরে শখ মেটাক।" আমি বলি- "পড়াশোনা তো গোল্লায়, ছেলেগুলো বিপথে যাবে, সারাক্ষন শুধু ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম..." "কি যে বলেন মাস্টার! এই বয়সে জীবনটা উপভোগ না করলে আর কখন! ওরা সরকারের ডান হাত, আগামী দিনের নেতা। যা কর�� তাতেই দেশের মঙ্গল।" বুঝলাম কথা বাড়ানো বৃথা। কদিন যেতেই শুনি বাইক চালকেরা দোকানে দোকানে চাঁদা তুলে, চাঁদা তুলে চলন্ত গাড়ি থেকে রাস্তায়। উত্তলিত টাকার একভাগ নিজেদের একভাগ দারোগার একভাগ যায় উপরমহলে। রাতে দারোগা এসে তাদের সঙ্গে বসে চা-বিস্কুটে, ফিসফাস আলাপনে, অট্টহাসিতে জমান আড্ডা। ছেলেগুলো মদের বোতল হাতে রাস্তা মাতায়, কেউ কিছু বলে না, মেয়েদের ওড়না ধরে টানে, কেউ প্রতিবাদে দাড়ায় না। থানাটি তাদের বৈঠকঘর, দারোগা তাদের তাঁসের সঙ্গী, তারাই আইনপ্রনেতা। তারপর এলো নির্বাচন। ভোট চাওয়া চাওয়ি, মিছিল মিটিং। সরকার বদল। নতুন দল এলো ক্ষমতায়। ভাবলাম এইবার থামবে। কিন্তু একি! এবার দুটো মোটরবাইক, দিগুন শব্দ, তিনগুন হইহুল্লুর, চারগুন চাদাবাজী। পরিচিত দোকানিরা নালিশ জানায়- "ওরা তে আপনরই ছাত্র স্যার, আপনি বললে থামবে। কোমরে পিস্তল গুজে চাঁদা তুলে...." বিকেলে খেলার মাঠে আমি ওদের ডেকেছিলাম। ছেলেগুলো গলে যাওয়া মোমের মতো পায়ের কাছে জড় হয়ে বসলো। আমার সকল উপদেশ মেনে নেওয়ার ভঙ্গিতে ঘাড় নাড়লো। সন্ধায় এলেন জলিল দারোগা- "জং ধরা পিস্তল মাস্টার, গুলি তো বেরোয় না। লকারে রাখলেই কী, আর ওদের হাতে থাকলেই কী! তাছাড়া ওদের উঠতি বয়স, বাধা দিলে ঘাপলা বাধাবে।" দারোগার ফ্যাশফ্যাশে হাসি শুনে কেবলই আমার কানে বাজছিলো উঠতিবয���সি মেয়ের আকুতি- "ওড়নাটা ছেড়ে দিন, আপনারা আমার মায়ের পেটের ভাই।" বৃদ্ধ পথচারীর চোখে ভয়- "দিচ্ছি দিচ্ছি সব, পিস্তল পকেটে রাখো বাবা, তোমরা আমার ছেলের বয়সি।" পরিচিত কারও অভিযোগ- "ওরা তো আপনারই ছাত্র স্যার, একটু থামান..." আর বাজছিলো- "ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম... ভ্রুম ভ্রুরুম ভ্রুরুরুরুম..." মুয়াজ্জিনকে চিরকুট শুনুন মুয়াজ্জিন সাহেব... সন্ধেবেলায় আমি আজানের প্রতিক্ষায় থাকি। আকাশ যখন হয় রক্তিম, নীড়ে ফিরে পাখি, আপনার সকরুণ সুর ভিষণ মন্ত্রমুগ্ধ করে আমাকে। টিভির ভলিয়ম কমিয়ে আজানের মায়াময় মূর্ছনায় কান পেতে রাখি। মাথায় আঁচল তুলতে গিয়েই থামি। মুসলিম মেয়ে হলে চলতো, আমি তো হিন্দু, লোকেরা ভাববে পাগলামী...! কিশোরী বয়সে এক মুসলমান ছেলের প্রেমে পড়েছিলাম। বলতো সে, তার ঘরে বউ হয়ে গেলে পড়তে হবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং খুব প্রভাতে তিলাওয়াতে-কুরআন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ভালোবাসার মানুষটির উপদেশ যতই কঠিন হোক, অক্ষরে অক্ষরে পালন ��রতে কে না চায়? কিন্তুু আমার হলো কই...! ধর্মাশ্রিত সমা�� বাঁধার দেয়াল তুলে দাঁড়ালো। এখন মাথায় সিঁদুর, শাখাপরা হাতে করি অন্যের সংসার। কবুতরগুলো যখন বাকবাকুম ডেকে খোঁপে ফিরে, বাঁদুরেরা ছুটে খাদ্যের খোঁজে, তুলসীতলায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালাবার আগে; শুনুন মুয়াজ্জিন সাহেব, আমি আজানের প্রতিক্ষায় থাকি। তুমি কোনটা নেবে...? আমার হাতে বন্দুক, আমার কপালে রক্ত তুমি কোনটা নেবে...? যদি বন্দুক নাও- তুমি হিংস্র ঘাতক। যদি রক্ত নাও- তুমি অপরিণামদর্শী কাতিল। আমার চোখে অশ্রু, আমার ঠোঁটে হাসি তুমি কোনটা নেবে...? যদি অশ্রু নাও, তবে তুমি দুঃখ বিলাসী- মানে আমার প্রকৃত বন্ধু। যদি হাসি নাও, তবে তুমি দুধের মাছি- মানে সুসময়ের ধাপ্পাবাজ। আমার কপালে ঘাম, আমার দু’চোখ লাল তুমি কোনটা নেবে...? যদি কপালের ঘাম মুছে দাও শুষ্ক আঁচলে- তুমি আমার প্রকৃত ঘরণী, আমার অর্ধ-অঙ্গ। যদি রক্তিম চোখে বোলাও হাতের শীতল আঙুল- তুমি আমার স্নেহশীল প্রেমিকা, রমণযোগ্য ভালোবাসা। আকিব শিকদার। জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানাধীন তারাপাশা গ্রামে, ০২ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে। প্রফেসর আলহাজ মোঃ ইয়াকুব আলী শিকদার ও মোছাঃ নূরুন্নাহার বেগম এর জ্যেষ্ঠ সন্তান। স্নাতক পড়েছেন শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর। খন্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু; বর্তমানে প্রভাষক হিসেবে আছেন এ্যাপারেল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজিতে। কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল (২০১৪), দেশদ্রোহীর অগ্নিদগ্ধ মুখ (২০১৫), কৃষ্ণপক্ষে যে দেয় উষ্ণ চুম্বন (২০১৬), জ্বালাই মশাল মানবমনে (২০১৮) তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। “দোলনা দোলার কাব্য” তার প্রকাশিতব্য শিশুতোষ কবিতার বই। সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ স্বরুপ পেয়েছেন হোসেনপুর সাহিত্য সংসদ প্রদত্ত “উদ্দীপনা সাহিত্য পদক”, “সমধারা সাহিত্য সম্মাননা”, “মেঠোপথ উদ্দীপনা পদক”। লেখালেখির পাশাপাশি সঙ্গীত ও চিত্রাংকন তার নেশা।
0 notes
Text
আকিব শিকদার এর কবিতা
আকিব শিকদার এর কবিতা
বাবার প্রতি
গরিব ঘরের মেয়ে, সুদর্শন ছিলো, ছিলো কেমন একটা অন্যরকম আকর্ষণ। শিক্ষা-দীক্ষায় উঁচু ছিলো না তেমন। মন দিয়েছি তাকে নির্বাচিত করে। বংশ কেমন জানতে ইচ্ছে হয়নি।
বললে তুমি বাবা- ‘কাণ্ড দেখে হাসি, জাতের হদিস নাই, নুন আনতে পান্তা ফুরায়। মন দিয়েছিস তাকে, আমার ছেলে হয়ে। নর্দমার জল পান করে কে বল…!’ পদবী রক্ষা করতে গিয়ে ভুলতে হলো তাকে।
এবার পেলে জাত, অনেক উঁচু বংশ। নাম-সুনামের তলানী পাওয়া ভাড়।…
View On WordPress
0 notes
Text
আকিব শিকদার এর তিনটি ছড়া
New Post has been published on https://is.gd/wtLo2q
আকিব শিকদার এর তিনটি ছড়া
দারোয়ান
মসা এক উড়ে গেল - ভন ভন খোলা দ্বার, বায়ু বয় - শন শন ঋতু শীত, বুক কাঁপে - কন কন।
পাহারায় বসে আছে দারোয়ান গায়ে তার কাশ্মীরি আলোয়ান শোনা যায় নাক ডাকা গোংরান।
চোর এক ঢুকে গেল - ঠক ঠক কুকুরটা ডেকে ওঠে - খক খক দারোয়ান জেগে ওঠে - চকমক।
মাথি
ছাগলের ছানাটা, নেই তার ডানাটা। চারখানা পা আছে তাধীন তাধীন নাচে নাড়া দিয়ে দুই কান, জুরে দেয় ভ্যা ভ্যা গান।
শিং নেই মাথাতে, গুতো মারে ছাতাতে। লিকলিকে জিহ্বাটা পিঠে এসে দেয় চাটা আমি তাকে কুলে তুলে, চুমু খাই কালো চুলে।
বলি- “ওরে দুষ্টুটি, কেন এতো খুনসুটি?” ওমা! সেকি তন্ময়! চোখে চোখে চেয়ে রয় নাম তার ‘মাথি’, সে আমার সাথি।
স্বপ্নবাড়ি ক্রোক
বাড়ির দখল আদ্যপান্ত চামচিকাদের হাতে রাজত্বটা চলছে ভীষণ সকাল সন্ধ্যা রাতে দরজা খুলে ঘরের ভেতর যেই দিয়েছি পা এ্যাঁ মা এ কি দেখছি কি গো শিউরে উঠল গা হাতির মতো পেট ফুলিয়ে মস্ত একটা ব্যাঙ চিৎপটাংটি হয়েই বুঝি দেখায় আমায় ঠ্যাং পা চারটে ঠিকই আছে মুখ খেয়েছে কে গো চামচিকা না ভূতের এ্যাঁটো বুঝতে পারছি না গো
শপাৎ করে গাট্রা একটা কে মেরেছে ঘারে চামচিকাদের রাজত্ব তো এমন হতেই পারে সিলিঙে আর ছাদে ঝুলে ওরাই ছিল বেশ অনধিকারচর্চা যেন আমার অনুপ্রবেশ ভোগদখলের ফর্দ দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি চামচিকারা ক্রোক করেছে আমার স্বপ্নবাড়ি।
আকিব শিকদার রচিত বই : কাব্য গ্রন্থ : কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল (২০১৪), দেশদ্রোহীর অগ্নিদগ্ধ মুখ (২০১৫) কৃষ্ণপক্ষে যে দেয় উষ্ণ চুম্বন (২০১৬), জ্বালাই মশাল মানবমনে (২০১৮)। শিশুতোষ : দোলনা দোলার কাব্য (প্রকাশিতব্য) আকিব শিকদার। জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানাধীন তারাপাশা গ্রামে, ০২ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে। প্রফেসর আলহাজ মোঃ ইয়াকুব আলী শিকদার ও মোছাঃ নূরুন্নাহার বেগম এর জ্যেষ্ঠ সন্তান। স্নাতক পড়েছেন শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর। খন্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু; বর্তমানে প্রভাষক হিসেবে আছেন এ্যাপারেল ইন্সটিটিউট অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজিতে। কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল (২০১৪), দেশদ্রোহীর অগ্নিদগ্ধ মুখ (২০১৫), কৃষ্ণপক্ষে যে দেয় উষ্ণ চুম্বন (২০১৬), জ্বালাই মশাল মানবমনে (২০১৮) তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। “দোলনা দোলার কাব্য” তার প্রকাশিতব্য শিশুতোষ কবিতার বই। সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ স্বরুপ পেয়েছেন হোসেনপুর সাহিত্য সংসদ প্রদত্ত “উদ্দীপনা সাহিত্য পদক”, “সমধারা সাহিত্য সম্মাননা”, “মেঠোপথ উদ্দীপনা পদক”। লেখালেখির পাশাপাশি সঙ্গীত ও চিত্রাংকন তার নেশা।
0 notes
Text
কবি আকিব শিকদার এর দু’টি কবিতা
কবি আকিব শিকদার এর দু’টি কবিতা
তন্ত্রমুক্ত গণতন্ত্রের জন্য
মাথার উপর কাক ক্রমাগত অলুক্ষণে ডাক দিচ্ছিল। কলের নালায় বসে ঝুনা নারকেলের খোসা আর ঝামা দিয়ে ঘঁষে একজন পৌঢ়াজননী এঁটো থালাবাটি ধুয়ে নিচ্ছিল।
সহপাঠীদের সাথে ছেলে তার চলে গেছে রাজপথে সকালে। বাড়াভাত না খেয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তরিঘরি হাত ধুয়ে যোগ দিতে স্বৈরাচারি শাসকবিরোধী মিছিলে।
কুকুরটা বারবার থেকে থেকে করছিল সকরুণ ডুৎকার অঙ্গনে। গণতন্ত্রকে তন্ত্রমুক্ত করবে বলে মিছিলে গিয়েছিল…
View On WordPress
0 notes
Text
আকিব শিকদার-এর দুটি কবিতা
আকিব শিকদার-এর দুটি কবিতা
ভালোবাসা পেলে, না পেলে
ভালোবাসা পেলে সব আগুন হবে জল মরা গাছে ফুটবে কমল।
শ্যাওলা ধরা প্রাচীরের ছায়ায় বসবো দু’জন মৌমাছি হয়ে চুষে নেবো তোমার যৌবন নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দেবো যখন তখন।
যদি ভালোবাসা না পাই তবে সোনার সিংহাসন কালান্তে মাটিতে মিলাবে।
ফিরতে পারিস যখন তখন
তোর চোখের মাপের আকাশ আমার নেই তাই পাখনা মেলে উড়তে বলি না তোকে ইচ্ছে হলে যা খুশি তা করিস, পূর্ণ অধিকার দেই।
তোর মনের মাপের উঠোন নেই এ বুকে তাই…
View On WordPress
0 notes
Text
আকিব শিকদার-এর দুটি কবিতা
আকিব শিকদার-এর দুটি কবিতা
ভালোবাসা পেলে, না পেলে
ভালোবাসা পেলে সব আগুন হবে জল মরা গাছে ফুটবে কমল।
শ্যাওলা ধরা প্রাচীরের ছায়ায় বসবো দু’জন মৌমাছি হয়ে চুষে নেবো তোমার যৌবন নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দেবো যখন তখন।
যদি ভালোবাসা না পাই তবে সোনার সিংহাসন কালান্তে মাটিতে মিলাবে।
ফিরতে পারিস যখন তখন
তোর চোখের মাপের আকাশ আমার নেই তাই পাখনা মেলে উড়তে বলি না তোকে ইচ্ছে হলে যা খুশি তা করিস, পূর্ণ অধিকার দেই।
তোর মনের মাপের উঠোন নেই এ বুকে তাই…
View On WordPress
0 notes
Text
আকিব শিকদারের কবিতা
তন্ত্রমুক্ত ��ণতন্ত্রের জন্য
মাথার উপর কাক ক্রমাগত অলুক্ষণে ডাক দিচ্ছিল। কলের নালায় বসে ঝুনা নারকেলের খোসা আর ঝামা দিয়ে ঘঁষে একজন পৌঢ়াজননী এঁটো থালাবাটি ধুয়ে নিচ্ছিল। সহপাঠীদের সাথে ছেলে তার চলে গেছে রাজপথে সকালে। বাড়াভাত না খেয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তরিঘরি হাত ধুয়ে যোগ দিতে স্বৈরাচারি শাসকবিরোধী মিছিলে। কুকুরটা বারবার থেকে থেকে করছিল সকরুণ ডুৎকার অঙ্গনে। গণতন্ত্রকে তন্ত্রমুক্ত করবে বলে মিছিলে গিয়েছিল চনমনে দুরন্ত ছেলে ফ…
View On WordPress
0 notes
Text
গৌরনদীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৩৮টি দোকান ভস্মীভূত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকা : মন্ত্রী-ডিসি’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন
New Post has been published on https://is.gd/Idg9wc
গৌরনদীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৩৮টি দোকান ভস্মীভূত হয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকা : মন্ত্রী-ডিসি’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন
বরিশাল প্রতিনিধি : বরিশালের গৌরনদীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২৪টি দোকান সম্পূর্ণ ও ১৪টি দোকান আংশিক ভস্মীভূত হয়েছে। গতকাল সোমবার ভ��ররাত সাড়ে ৩টার দিকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সকলে ধারণা করছেন। আগুন নেভাতে গিয়ে স্থানীয় ৫ জন আহত হয়েছে। এ অগ্নিকান্ডে সময় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক ও গৌরনদী-পয়সারহাট আঞ্চলিক সড়কে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। গৌরনদী ফায়ার স্টেশনের সাব-অফিসার আব্দুস ছালাম জানান, গতকাল সোমবার ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের নিজাম সরদারের চায়ের দোকান থেকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মূহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা ২০-২৫ ফুট উচ্চতায় উঠে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে গৌরনদী, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল দক্ষিণ ফায়ার স্টেশনের ৪টি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার কর্মীরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় সাড়ে ৩ ঘন্টা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে অগ্নিকান্ডে সোহেল ট্রেডার্স, শহিদুল স্টোর, সরদার ইলেকট্রিক, স্বাধীন স্টোর, হাবিব স্টোর, জাহিদ স্টোর, জালাল স্টোর, আরিফ স্টোর, সাদিয়া টেলিকম, কমলেশ স্টুডিও, জয়গুরু মিষ্টান্ন ভান্ডার, জাকির ডিজিটাল প্রেসের শো-রুম, ফিরোজ মেকার, মনো হেয়ার কাটিং সেলুন, বি আলম স্টোর, নান্নু হোটেল, গৌরনদী অটোটেম্পু-মাহিন্দ্রা শ্রমিক কার্যালয়, নিজামের চায়ের দোকানসহ ২৪টি দোকান সম্পূর্ণ ও আকিব ইলেকট্রিক, মনির মেকার, আমার ফোন কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার, জাকির ডিজিটাল প্রেস, মাস্টার ইলেকট্রিক, ফরিদ মিয়ার গোডাউনসহ ১৪টি দোকান আংশিক ভস্মীভূত হয়েছে। আগুন নেভাতে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী বিএম বেলাল, সঞ্জয় কুমার পাল, সোহেল শিকদার, আরিফ হোসেন, মো. খলিল আহত হয়েছে। বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন জানান, রবিবার ভোর রাতে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের একটি চায়ের দোকান থেকে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত হয়। মূহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে গৌরনদী, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাড়ে তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে সকাল সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এতে ২৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ভস্মীভূত ও ১৪টি দোকান আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তিনি আরও জানান, অগ্নিকান্ডে ব্যবসায়ীদের অন্তত: ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজ চলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গৌরনদী ফায়ার স্টেশনের ১টি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করার সাথে সাথে স্টেশনের পাম্পটি বিকল হয়ে পড়ে। এর দেড়ঘন্টা পর উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, বরিশাল থেকে ���টি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌছে চেষ্টা চালিয়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় ফায়ার স্টেশনের পাম্প নষ্ট হওয়ায় ও অন্য ৩টি গাড়ি দেরিতে আসায় বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। খবর পেয়ে মন্ত্রী পদমর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি, জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান, গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী, পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান, ইউএনও ইসরাত জাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
0 notes