Tumgik
roshod-bd-blog · 7 years
Text
সত্যজিৎ রায়!
Tumblr media
সত্যজিৎ রায় (উচ্চারণ) (সাহায্য·তথ্য); (২ মে, ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল, ১৯৯২) একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক। কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্পের জগতে খ্যাতনামা এক বাঙালি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরপ্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায়ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে(ইতালীয় ভাষায় Ladri di biciclette, "বাইসাইকেল চোর") দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তাঁর কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, যাদের মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানব দলিল” (Best Human Documentary) পুরস্কারটি। পথের পাঁচালি, অপরাজিত ও অপুর সংসার – এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে অপু ত্রয়ী বলা হয়, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বা ম্যাগনাম ওপাস হিসেবে বহুল স্বীকৃত। চলচ্চিত্র মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্র গ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানা কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তবে এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কারটি (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন।
Tumblr media
সত্যজিৎ রায়ের বংশানুক্রম প্রায় দশ প্রজন্ম অতীত পর্যন্ত বের করা সম্ভব।[২] তার আদি পৈত্রিক ভিটা বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে অবস্থিত। বর্তমানে তাদের পৈতৃক বাড়িটি এখনও রয়েছে, যেখানে সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং বাবা সুকুমার রায় দুজনেরই জন্ম হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের অনেক আগেই উপেন্দ্রকিশোর সপরিবারে কলকাতা চলে যান। বর্তমানে তাদের প্রায় ৪ একরের এই বিশাল জমি ও বাড়ি বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব বিভাগের অধীনে রয়েছে এবং তারা এই বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি পর্যটন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা নিচ্ছেন। এছাড়া সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ হরি কিশোর রায় চৌধুরী প্রায় ২০০ বছর আগে মসূয়া গ্রামে শ্রীশ্রী কালভৈরব পূজা উপলক্ষে একটি মেলার আয়োজন করেছিলেন। এখনও প্রতি বছর বৈশাখ মাসের শেষ বুধবার এই মেলা পালিত হয়ে আসছে।[৩]
উপেন্দ্রকিশোরের সময়েই সত্যজিতের পরিবারের ইতিহাস এক নতুন দিকে মোড় নেয়। লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক, প্রকাশক ও শখের জ্যোতির্বিদ উপেন্দ্রকিশোরের মূল পরিচিতি ১৯শ শতকের বাংলার এক ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন ব্রাহ্ম সমাজেরঅন্যতম নেতা হিসেবে। উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ননসেন্স ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল। ১৯২১ সালে কলকাতায় জন্ম নেন সুকুমারের একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়। সত্যজিতের মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমারের মৃত্যু ঘটে; মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাঁকে বড় করেন। সত্যজিৎ বড় হয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি পড়তে যান, যদিও চারুকলার প্রতি সবসময়েই তাঁর দুর্বলতা ছিল। ১৯৪০ সালে সত্যজিতের মা তাঁকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। কলকাতাপ্রেমী সত্যজিৎ শান্তিনিকেতনের শিক্ষার পরিবেশ সম্বন্ধে খুব উঁচু ধারণা পোষণ করতেন না, কিন্তু শেষে মায়ের প্ররোচনা ও রবিঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধার ফলে রাজি হন। [৪] শান্তিনিকেতনে গিয়ে সত্যজিৎ প্রাচ্যের শিল্পের মর্যাদা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে সেখানকার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু[৫] এবং বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছিলেন। সত্যজিৎ বিনোদবিহারীর ওপর পরবর্তীকালে একটি প্রামাণ্যচিত্রও বানান। অজন্তা, ইলোরা এবং এলিফ্যান্টায় ভ্রমণের পর ভারতীয় শিল্পের ওপর সত্যজিতের গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরাগ জন্মায়।[৬]
নিয়মানুযায়ী বিশ্বভারতীতে সত্যজিতের পাঁচ বছর পড়াশোনা করার কথা থাকলেও তার আগেই ১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে “জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার” হিসেবে যোগ দেন। চিত্রসজ্জা বা ভিজুয়াল ডিজাইন সত্যজিতের পছন্দের একটি বিষয় ছিল ও সংস্থাটিতে তিনি ভালো সমাদরেই ছিলেন, কিন্তু সংস্থাটির ইংরেজ ও ভারতীয় কর্মচারীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল (ইংরেজ কর্মচারীদেরকে অনেক বেশি বেতন দেয়া হত), আর সত্যজিতের মনে হত প্রতিষ্ঠানটির "ক্লায়েন্টরা ছিলেন মূলত বোকা।"[৭] ১৯৪৩ সালের দিকে সত্যজিৎ ডি কে গুপ্তের প্রকাশনা সংস্থা 'সিগনেট প্রেস'-এর সাথে জড়িয়ে পড়েন। ডি কে গুপ্ত তাঁকে সিগনেট প্রেস থেকে ছাপা বইগুলোর প্রচ্ছদ আঁকার অনুরোধ করেন ও এ ব্যাপারে তাঁকে সম্পূর্ণ শৈল্পিক স্বাধীনতা দেন। এখানে সত্যজিৎ প্রচুর বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন, যার মধ্যে জিম করবেটের ম্যানইটার্স অব কুমায়ুন ও জওহরলাল নেহেরুর দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী বাংলা উপন্যাস পথের পাঁচালীর একটি শিশুতোষ সংস্করণ আম আঁটির ভেঁপু-র ওপরেও কাজ করেন। বিভুতিভূষণের লেখা এ উপন্যাসটি সত্যজিৎকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে এবং এটিকেই পরবর্তীকালে সত্যজিৎ তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচন করেন। বইটির প্রচ্ছদ আঁকা ছাড়াও তিনি এর ভেতরের বিভিন্ন ছবিগুলোও এঁকে দেন। এই ছবিগুলোই পরে দৃশ্য বা শট হিসেবে তাঁর সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রে স্থান পায়।[৮]
১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ চিদানন্দ দাসগুপ্ত ও অন্যান্যদের সাথে মিলে কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। সোসাইটির সদস্য হবার সুবাদে তাঁর অনেক বিদেশী চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ হয়। এ সময় তিনি প্রচুর ছবি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন; তিনি তাদের কাছ থেকে শহরে আসা নতুন মার্কিন চলচ্চিত্রগুলোর খবর নিতেন। এ সময় তিনি নরম্যান ক্লেয়ার নামের রয়েল এয়ার ফোর্সের এক কর্মচারীর সংস্পর্শে আসেন, যিনি সত্যজিতের মতোই চলচ্চিত্র, দাবা ও পাশ্চাত্যের ধ্রুপদী সঙ্গীত পছন্দ করতেন। [৯] ১৯৪৯সালে সত্যজিৎ তাঁর দূরসম্পর্কের বোন ও বহুদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। সত্যজিৎ দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়, যিনি নিজেও বর্তমানে একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক। ঐ একই বছরে জঁ রনোয়ার তাঁর দ্য রিভার চলচ্চিত্রটির শুটিং করতে কলকাতায় আসেন। সত্যজিৎ রনোয়ারকে গ্রামাঞ্চলে চিত্রস্থান খুঁজতে সহায়তা করেন। ঐ সময়েই সত্যজিৎ রনোয়ারের সাথে “পথের পাঁচালী”-র চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে কথা বলেন এবং রনোয়ার এ ব্যাপারে তাঁকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন।[১০]
১৯৫০ সালে ডি জে কিমার সত্যজিৎকে লন্ডনে তাদের প্রধান কার্যালয়ে কাজ করতে পাঠান। লন্ডনে তিন মাস থাকাকালীন অবস্থায় সত্যজিৎ প্রায় ৯৯টি চলচ্চিত্র দেখেন। এদের মধ্যে ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (ইতালীয় Ladri di biciclette, "সাইকেল চোর") তাঁর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পরে সত্যজিৎ বলেছেন যে ঐ ছবিটি দেখে সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার সময়েই তিনি ঠিক করেন যে তিনি একজন চলচ্চিত্রকার হবেন।
Tumblr media
সত্যজিৎ ঠিক করেন যে, বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী “বিল্ডুংস্‌রোমান” পথের পাঁচালী-ই হবে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই প্রায়-আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসটিতে বাংলার এক গ্রামের ছেলে অপু’র বেড়ে ওঠার কাহিনী বিধৃত হয়েছে।
এ ছবি বানানোর জন্য সত্যজিৎ কিছু পূর্ব-অভিজ্ঞতাবিহীন কুশলীকে একত্রিত করেন, যদিও তাঁর ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র ও শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত দুজনেই পরবর্তীকালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিলাভ করেন। এ ছাড়া ছবির বেশির ভাগ অভিনেতাই ছিলেন শৌখিন। ১৯৫২ সালের শেষ দিকে সত্যজিৎ তার নিজের জমানো পয়সা খরচ করে দৃশ্যগ্রহণ শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন প্রাথমিক দৃশ্যগুলো দেখার পরে হয়ত কেউ ছবিটিতে অর্থলগ্নি করবেন। কিন্তু সে ধরনের আর্থিক সহায়তা মিলছিল না। পথের পাঁচালী-র দৃশ্যগ্রহণ তাই থেমে থেমে অস্বাভাবিকভাবে প্রায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে সম্পন্ন হয়। কেবল তখনই দৃশ্যগ্রহণ করা সম্ভব হত যখন সত্যজিৎ বা নির্মাণ ব্যবস্থাপক অনিল চৌধুরী প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান করতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গসরকারের থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ছবিটি নির্মাণ সম্পন্ন হয় ও সে বছরই এটি মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচক সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে ও বহু পুরস্কার জিতে নেয়। ছবিটি বহুদিন ধরে ভারতে ও ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়। ছবিটি নির্মাণের সময় অর্থের বিনিময়ে চিত্রনাট্য বদলের জন্য কোন অনুরোধই সত্যজিৎ রাখেননি। এমনকি ছবিটির একটি সুখী সমাপ্তির (যেখানে ছবির কাহিনীর শেষে অপুর সংসার একটি “উন্নয়ন প্রকল্পে” যোগ দেয়) জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধও তিনি উপেক্ষা করেন। [১১]
ভারতে ছবিটির প্রতিক্রিয়া ছিল উৎসাহসঞ্চারী। দ্য টাইম্‌স অফ ইন্ডিয়া-তে লেখা হয়, "It is absurd to compare it with any other Indian cinema ... Pather Panchali is pure cinema" (“একে অন্য যেকোনও ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে তুলনা করা অবাস্তব... পথের পাঁচালী হল বিশুদ্ধ চলচ্চিত্র”)।[১২] যুক্তরাজ্যে লিন্‌জি অ্যান্ডারসন চলচ্চিত্রটির অত্যন্ত ইতিবাচক একটি সমালোচনা লেখেন। [১২] তবে ছবিটির সব সমালোচনাই এ রকম ইতিবাচক ছিল না। বলা হয় যে ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো ছবিটি দেখে মন্তব্য করেছিলেন: “কৃষকেরা হাত দিয়ে খাচ্ছে - এরকম দৃশ্যসম্বলিত ছবি আমি দেখতে চাই না।” [১৩] দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী সমালোচক বসলি ক্রাউদার ছবিটির একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন, এবং সেটি পড়ে মনে করা হয়েছিল যে ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেলেও ভাল করবে না। কিন্তু এর বদলে ছবিটি সেখানে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি দিন ধরে প্রদর্শিত হয়।
সত্যজিতের পরবর্তী ছবি অপরাজিত-এর সাফল্য তাঁকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও পরিচিত করে তোলে। এই ছবিটিতে তরুণ অপুর উচ্চাভিলাষ ও তার মায়ের ভালবাসার মধ্যকার চিরন্তন সংঘাতকে মর্মভেদী রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। বহু সমালোচক, যাদের মধ্যে মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক অন্যতম, ছবিটিকে সত্যজিতের প্রথম ছবিটির চেয়েও ওপরে স্থান দেন। অপরাজিত ভেনিসে গোল্ডেন লায়নপুরস্কার জেতে। অপু ত্রয়ী শেষ করার আগে সত্যজিৎ আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ সমাপ্ত করেন। প্রথমটি ছিল পরশ পাথর নামের একটি হাস্যরসাত্মক ছবি। আর পরেরটি ছিল জমিদারী প্রথার অবক্ষয়ের ওপর নির্মিত জলসাঘর, যেটিকে তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। [১৪]
সত্যজিৎ অপরাজিত নির্মাণের সময় একটি ত্রয়ী সম্পন্ন করার কথা ভাবেননি, কিন্তু ভেনিসে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা শুনে তাঁর মাথায় এটি বাস্তবায়নের ধারণা আসে। [১৫] অপু সিরিজের শেষ ছবি অপুর সংসার ১৯৫৯ সালে নির্মাণ করা হয়। আগের দুটি ছবির মত এটিকেও বহু সমালোচক সিরিজের সেরা ছবি হিসেবে আখ্যা দেন (রবিন উড, অপর্ণা সেন)। এ ছবির মাধ্যমেই সত্যজিতের দুই প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুরের চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ছবিটিতে অপুকে দেখানো হয় কলকাতার এক জীর্ণ বাড়িতে প্রায়-দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করতে। এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অপর্ণার সাথে অপুর বিয়ে হয়। তাদের জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যতে “বিবাহিত জীবন সম্পর্কে ছবিটির ধ্রুপদী ইতিবাচকতা ফুটে ওঠে”,[১৬] কিন্তু শীঘ্রই এক বিয়োগান্তক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। একজন বাঙালি সমালোচক অপুর সংসার-এর একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন, এবং সত্যজিৎ এর উত্তরে ছবিটির পক্ষে একটি সুলিখিত নিবন্ধ লেখেন - যা ছিল সত্যজিতের কর্মজীবনে একটি দুর্লভ ঘটনা (সত্যজিতের প্রত্যুত্তরের এরকম ঘটনা আরেকবার ঘটে তাঁর পছন্দের চারুলতা ছবিটি নিয়ে)। [১৭]
সত্যজিতের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর তাঁর কর্মজীবনের সাফল্যের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। সত্যজিতের নিজস্ব কোন বাড়ি ছিল না; তিনি তাঁর মা, মামা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে এক ভাড়া বাড়িতেই সারা জীবন কাটিয়ে দেন। [১৮] তাঁর স্ত্রী ও ছেলে দুজনেই তাঁর কাজের সাথে জড়িয়ে ছিলেন। বেশির ভাগ চিত্রনাট্য বিজয়াই প্রথমে পড়তেন, এবং ছবির সঙ্গীতের সুর তৈরীতেও তিনি স্বামীকে সাহায্য করতেন। আয়ের পরিমাণ কম হলেও সত্যজিৎ নিজেকে বিত্তশালীই মনে করতেন, কেননা পছন্দের বই বা সঙ্গীতের অ্যালবাম কিনতে কখনোই তাঁর কষ্ট হয়নি। [১৮]
0 notes
roshod-bd-blog · 7 years
Text
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
Tumblr media
দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ (বা বাঙলা দেশ, দেশের পূর্ববানান অনুসারে) ছিল ১ আগস্ট ১৯৭১ সালের রবিবার ২.৩০ এবং ৮.০০ অপরাহ্নে নিউ ইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে প্রায় ৪০,০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত, সাবেক বিটল্‌স সঙ্গীতদলের লিড গিটারবাদক জর্জ হ্যারিসন এবং ভারতীয় সেতারবাদক রবিশঙ্কর কর্তৃক সংগঠিত দুটি বেনিফিট কনসার্ট। এই প্রদর্শনী পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সচেতনতা এবং তহবিল ত্রাণ প্রচেষ্টা বাড়াতে, মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ-সম্পর্কিত বাংলাদেশের নৃশংসতারফলে সাহায্যের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছিলো। এই কনসার্টের একটি শ্রেষ্ঠ বিক্রিত লাইভ অ্যালবাম, একটি বক্স-থ্রি রেকর্ড সেট এবং অ্যাপল ফিল্মসের কনসার্টের তথ্যচিত্র নিয়ে ১৯৭২ সালের বসন্তে চলচ্চিত্রাকারে প্রকাশ করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের এক বিশাল দল অংশ নিয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, জর্জ হ্যারিসন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, ব্যাড ফিঙ্গার এবং রিঙ্গো রকস্টার ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
এই অনুষ্ঠানের গানের একটি সংকলন কিছুদিন পরেই ১৯৭১ সালে বের হয় এবং ১৯৭২ সালে এই অনুষ্ঠানের চলচ্চিত্রও বের হয়। গত ২০০৫খ্রিস্টাব্দে উক্ত চলচ্চিত্রটিকে একটি তথ্যচিত্রসহ নতুনভাবে ডিভিডি আকারে তৈরি করা হয়।
কনসার্ট ও অন্যান্য অনুষঙ্গ হতে প্রাপ্ত অর্থ সাহায্যের পরিমাণ ছিলো প্রায় ২,৪৩,৪১৮.৫১ মার্কিন ডলার, যা ইউনিসেফের মাধ্যমে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে ব্যয়ীত হয়
0 notes
roshod-bd-blog · 7 years
Text
জানেন কি পোস্ট মর্টেমের বাংলা নাম ময়না তদন্ত কেন?
Tumblr media
ওয়েব ডেস্ক: আচ্ছা কখনও ভেবে দেখেছেন পোস্ট মর্টেমের বাংলা নাম ময়না তদন্ত কেন? আমরা সকলেই জানি যে, পোস্ট মর্টেম একটি অজানা কারণকে উদ্ঘাটন করে থাকে। অন্ধকার থেকে একটি ঘটনার কারণকে আলোতে নিয়ে আসে। তাহলে পোস্ট মর্টেমের সঙ্গে ময়না পাখির মিল কোথায়? বিষয়টা হয়তো অনেকের কাছে তেমন গুরুত্ববহ নয় বা এ নিয়ে কেউ মাথাও ঘামায় না, তবে রহস্য উদঘাটনের নেশা থাকা উচিৎ।
আমরা জানি, ময়না পাখি দেখতে মিশমিশে কালো এবং তার ঠোঁট হলুদ। এই পাখি প্রায় তিন থেকে তেরো রকম ভাবে ডাকতে পারে। অন্ধকারে ময়না পাখিকে দেখা যায় না চোখে। অন্ধকারের কালোয় নিজের কালোকে লুকিয়ে রাখে এরা। শুধু মাত্র অভিজ্ঞ মানুষ তার ডাক শুনে বুঝতে পারেন, যে, এটা ময়না পাখি। না দেখা ময়না কে যেমন অন্ধকারে শুধু কণ্ঠস্বর শুনে আবিষ্কার করা যায়, তেমনই পোস্টমর্টেমেও অন্ধকারে থাকা কারণকে সামান্য সূত্র দিয়ে আবিষ্কার করা হয়। সামান্য সূত্র থেকে আবিষ্কার হয় বড় থেকে বড় রহস্যের সমাধান। পাওয়া যায় আসল অপরাধীদের। পাওয়া যায় মৃত্যুর কারণ। তাই পোস্ট মর্টেমের বাংলা হয়েছে – ময়না তদন্ত।
0 notes
roshod-bd-blog · 7 years
Text
বাংলা ভাষা আন্দোলন
Tumblr media
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ বপিত হয়েছিল বহু আগে, অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভা��ত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়। কিন্তু পাকিস্তানের দু’টি অংশ—পূর্ব পাকিস্তানএবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেক মৌলিক পার্থক্য বিরাজ করছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধার�� জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি বেআইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক[১], সালাম, বরকত-সহ[২][৩] আরও অনেকে। শহিদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৬ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে—যা বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতি বছর গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়।
0 notes
roshod-bd-blog · 7 years
Text
ইতিহাসের সর্বাধিক বিক্রিত জনপ্রিয়তম মোবাইল ফোনগুলো!
১৯৭৩ সালের ৩ এপ্রিল, মটোরোলা কোম্পানির একজন গবেষক, মার্টিন কুপার সর্বপ্রথম সেলফোন আবিষ্কার করেন। তার সেই আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থায় একরকম বিপ্লব সৃষ্টি করে। তারবিহীন টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থার সেই যে শুরু, তারপর থেকে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি দিন দিন উন্নত হতে শুরু করে।
মার্টিন কুপার তার প্রথম উদ্ভাবিত ফোনের সাথে; Source: thedailybeast.com
বর্তমানে এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, মোবাইল ফোন ব্যতীত কাউকে খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। এ পর্যন্ত এসেছে বহু মোবাইল ফোন, এসেছে বহু মোবাইল ফোন কোম্পানি। তবে মোবাইল ফোনের জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত এমন কিছু ফোন তৈরি হয়েছে যেগুলা পুরো বিশ্বের মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছে। চলুন দেখা যাক এমনই নয়টি মোবাইল ফোন যেগুলো গোটা বিশ্বে পেয়েছিলো তুমুল জনপ্রিয়তা।
Motorola RAZR V3, মোট বিক্রয়: ১৩০ মিলিয়ন
স্টাইলিশ মটোরোলা রেজার V3; Source: youtube.com
২০০৪ সালে ফোনটি রিলিজ হবার পর বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তৎকালীন নোকিয়ার ‘ক্যান্ডি-বার ফোন’ এর যুগে এই মটোরোলা ফোনটি মোবাইল ডিজাইনিং এ এক নতুন ধারার সূচনা করে। ফোনটি ছিল খুবই সুন্দর এবং চিকন। পাতলা এই ফোনটির ওজন ছিল মাত্র ৯৫ গ্রাম! সেলফোন বিশ্বে ফোনটি ছিল এক ফ্যাশন আইকন। যদিও ফিচারের দিক দিয়ে উল্লেখ করার মতো কিছু ছিল না, তবে ফোনটির অনন্য ডিজাইনটাই ছিল এটির এত বিক্রির মূল রহস্য। পুরো বিশ্বে ১৩০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে ফোনটি! তবে এই রেজার মডেলটির এত জনপ্রিয়তাই এক সময় কাল হয়ে দাঁড়ায় মটোরোলা কোম্পানির জন্য। মটোরোলা শুধু এই ফোনটির সফলতার উপরেই নির্ভর করে ছিল, যার ফলে যখন টাচস্ক্রিন ফোনের আনাগোনা শুরু হয়ে যায় মোবাইলফোন ইন্ডাস্ট্রিতে, মটোরোলা সেখানে অংশগ্রহণ করতে অনেক দেরি করে ফেলে।
Nokia 3310, মোট বিক্রয়: ১৩৬ মিলিয়ন
বিখ্যাত নোকিয়া ৩৩১০; Source: thesun.co.uk
২০০০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর এই কিংবদন্তী ফোনটি প্রথম তৈরি করা হয়। রিলিজের ১৭ বছর পরেও এই ফোনটি এখনো সমান জনপ্রিয় এবং পরিচিত। যদিও ইন্টারনেটে বিভিন্ন কার্টুন, ট্রল এবং মজার তথ্যের কারণে ফোনটি এখন বেশ ঠাট্টার জায়গা থেকেই পরিচিত নতুন প্রজন্মের কাছে, নোকিয়ার এই মডেলটি আবার বাজারে এসেছে নতুন মোড়কে। তবে মূল ফোনটি জনপ্রিয় ছিল মূলত এর টেকসই গঠন এবং ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য। ফোনটিকে বলা হয় অবিনশ্বর, ধ্বংসাতীত বা অক্ষয়। মজা করে ফোনটিকে ‘মুঠোফোন জগতের চাক নরিস’ও বলা হয়! প্রায় ১৩৬ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হওয়া এই ফোনটির সাথে ব্যাটারি লাইফের দিক থেকে অত্যাধুনিক যুগের কোনো ফোন আজও টেক্কা দিয়ে পারে না। ফোনটির এত জনপ্রিয়তা দেখে HMD Global এর অধীনে নোকিয়া আবার ফোনটি বের করেছে নতুন ডিজাইনে।
Nokia 6600, মোট বিক্রয়: ১৫০ মিলিয়ন
নোকিয়ার প্রথম স্মার্টফোন- নোকিয়া ৬৬০০; Source: technopat.net
২০০৩ সালের স্মার্টফোন বলা হয় নোকিয়া ৬৬০০-কে। বের হবার সাথে সাথে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় ফোনটি। কম বয়সীদের অন্যতম আকাঙ্ক্ষিত স্মার্টফোনে পরিণত হয় এটি। কারণ তৎকালীন অন্যান্য ফোনের তুলনায় এই মডেলটির বড় স্ক্রিন ছিল, ভিজিএ ক্যামেরাও ছিল যা দিয়ে ছবি তোলা সহ ভিডিও ধারণ করাও যেত। অডিও-ভিডিও স্ট্রিমিং, ব্লুটুথ, ৬ মেগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ, মেমরি কার্ড ধারণক্ষমতা এবং জাভা সাপোর্টেড অপারেটিং সিস্টেম যার সাহায্যে থার্ড পার্টি এপ্লিকেশনও ডাউনলোড করা যেত; সব মিলিয়ে অনেকের স্বপ্নের ফোন ছিল এটি। বর্তমানের গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের মতোই তখন GetJar নামক থার্ডপার্টি ওয়েবসাইট থেকে প্রচুর এপ্লিকেশন নামিয়ে ব্যবহার করা যেত এতে। এখনকার এপ্লিকেশনগুলোর মতো অতটা বাস্তবধর্মী বা উপকারী না হলেও, তখন যা অ্যাপলিকেশন পাওয়া যেত, তা-ও নেহাত মন্দ ছিল না। নোকিয়ার ১২০০, ৫২৩০ মডেলগুলোর মতো এটিও ১৫০ মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছে।
Samsung E1100, মোট বিক্রয়: ১৫০ মিলিয়ন
ছোট হলেও দেখতে যথেষ্ট স্মার্ট ছিল ফোনটি; Source: youtube.com
স্যামসাংয়ের যে ফোনটি এই লিস্টে জায়গা করে নিয়েছে তা তাদের কোনো ফ্লাগশিপ স্মার্টফোন নয়। এটি তাদের একটি সিম্পল বা ক্যান্ডি-বার ফোন, মডেল- E1100। ফোনটি বের হয় ২০০৯ সালে এবং ২০১২ সাল অব্দি এটি প্রায় ১৫০ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে। এর ফিচার বলতে ছিল 65k কালারের CSTN ডিসপ্লে, ফ্লাশলাইট এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর অ্যাপ্লিকেশন। ১২৮x১২৮ পিক্সেল রেজুলেশন স্ক্রিনের ফোনটির ওজন ছিল ৭০ গ্রাম এবং ব্যাটারি ধারণ ক্ষমতা ছিল ৭৫০ মিলি অ্যাম্পিয়ার, যা স্ট্যান্ডবাইতে প্রায় ১৩ দিন চালু থাকতে সক্ষম ছিল! নোকিয়ার অন্যান্য বার ফোনের সাথে টেক্কা দিয়ে এই ফোনটা যে এত জনপ্রিয় হয়েছিল তা আসলেই বিস্ময়কর।
Nokia 3210, মোট বিক্রয়: ১৬০ মিলিয়ন
নোকিয়ার প্রথম ফোন যার এন্টেনা ভেতরে ছিল; Source: technokrata.hu
নোকিয়া ৩২১০ বের হয় ১৯৯৯ সালে, এবং এই ফোনটাই হলো নোকিয়ার প্রথম বিগহিট। অবশ্যই এটির ফিচারগুলো খুবই কম ছিল বর্তমান ফোনগুলোর তুলনায়, তবে যে বৈশিষ্ট্যটি এই ফোনটিকে তৎকালীন অন্যান্য ফোনগুলোর থেকে আলাদা এবং আকর্ষণীয় করেছিলো তা হলো, এটিতে ছিল গেমস। এবং অবশ্যই এতে ছিল সেই বিখ্যাত ‘Snake’ গেম। সেই সময়ে ফোনগুলো সাধারণত খুব একঘেঁয়ে ধরনের ছিল এবং সাধারণত ব্যবসায়ী বা চাকুরীজীবীরা ফোন ব্যবহার করতেন। কিন্তু এই ফোনটির দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় এবং গেম থাকার কারণে তা সহজে কম বয়সীদের আকর্ষণ করে। ফোনটি বাজারে থাকা অন্যান্য সব ফোনের সাথে প্রতিযোগিতা করে এবং দেখিয়ে দেয় যে, মুঠোফোন বিনোদনেরও একটি মাধ্যম হবার ক্ষমতা রাখে। নোকিয়া ৩২১০-ই সেই ফোন যা ১৬০ মিলিয়নেরও বেশি ইউনিট বিক্রি হওয়ার মাধ্যমে পরবর্তী কয়েক বছরের জন্য নোকিয়াকে প্রভাবশালী করে দেয়।
Iphone 6 ও 6 plus, মোট বিক্রয়: ২২০ মিলিয়ন
আইফোন ৬ ও ৬ প্লাস পাশাপাশি; Source: knowyourmobile.com
যদি বলা হয় বর্তমান মোবাইল ফোন যুগে সব চেয়ে জনপ্রিয় ব্র্যান্ড কোনটি, তাহলে অবশ্যই অ্যাপলের আইফোনের নাম আসে একবাক্যেই। আইফোন ৫ মডেলটি প্রায় ৭০ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রি হয়। এর পরের মডেলটি অর্থাৎ আইফোন ৬ এবং এর বড় স্ক্রিনের মডেলটি- আইফোন ৬ প্লাসের জনপ্রিয়তাই অ্যাপলকে আজ অন্যতম ধনী কোম্পানিতে পরিণত করেছে। বলা হয়, বর্তমানে অ্যাপলের প্রায় ২.৫৬ বিলিয়ন ডলার শুধু ক্যাশই আছে! তো এই আইফোন ৬ সহোদর ২০১৪ সালে বের হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২২০ মিলিয়ন ইউনিটের বেশি বিক্রি হয়েছে। যদিও আইফোন ৬ প্লাস একটি বড় স্ক্রিন সাইজের ফোন, তবুও এর ওজন মাত্র ১২৯ গ্রাম। আইফোন ৬ এবং ৬ প্লাস দিয়ে অ্যাপল যে উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে মোবাইল ফোন জগতে, তা এখনো বিদ্যমান এবং বর্তমানে আইফোনের প্রিমিয়াম কোয়ালিটি এবং উচ্চমাত্রার দামের কারণে এটি একরকম দামী অলংকারে পরিণত হচ্ছে বললে ভুল হবে না।
Nokia 1100 & 1110, মোট বিক্রয়: ২৫০ মিলিয়ন
সর্বাধিক বিক্রিত ফোনের শিরোপা যাচ্ছে নোকিয়া ১১০০ এবং ১১১০ এর ঝুড়িতে; Source: snepstore.com
নোকিয়া ১১০০ এবং নোকিয়া ১১১০ এই দুটো মডেল সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ফোন। দুটি ফোনই প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ইউনিট বিক্রয় হয় পুরো বিশ্বে। ২০০৩ সালে নোকিয়া ১১০০ এবং ২০০৫ সালে নোকিয়া ১১১০ মডেলটি বের হয়। এই ফোনগুলোর না ছিল কোনো ক্যামেরা, ছিল না কোনো কালার স্ক্রিনও। তবুও এই ফোন দুটির এত বিক্রয় হবার কারণ হলো, মূলত নোকিয়া এই ফোনদ্বয় দিয়ে টার্গেট করেছিল উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। পৃথিবীতে প্রচুর মানুষ আছে যাদের কোনো আইফোনের প্রয়োজন নেই, কিন্তু একটি মুঠোফোনের প্রয়োজন! যার মাধ্যমে যোগাযোগটা অন্ততপক্ষে রক্ষা করা যায়। সেসব মানুষের নোকিয়া ১১০০ বা ১১১০ এর মতো একটি ফোনের প্রয়োজন ছিল। ফোনগুলোতে ছিল ফ্ল্যাশলাইট, কম্পোজার, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি। ২০০৯ সালে নোকিয়া ১১০০ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। উৎপাদন বন্ধ হবার আগে নোকিয়া ১১০০ এর জার্মানিতে তৈরি হওয়া কিছু মডেলের সফটওয়্যারে একধরনের ত্রুটি ধরা পরে। কিছু কিছু মডেল এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছিলো যাতে তা অন্য ফোনের সেন্সিটিভ মেসেজ, যেমন অনলাইন ব্যাংকিংয়ের তথ্যসমূহ সংগ্রহ করতে পারে। এরকম কিছু নোকিয়া ১১০০ মডেল ৩২,০০০ ডলারেরও অধিক মূল্যে বিক্রি হয়েছিল!
0 notes