Tumgik
কল্পনা করুন: একটা বিশাল খালি ঘর, যার ভেতরটা একদম শূন্য। এর ভেতরে কিছুই নেই। কোনো আলো, বাতাস, পদার্থ, শক্তি, ক্ষেত্র — কিছুই নেই। ভেতরটা হচ্ছে ঘুটঘুটে অন্ধকার, পরম শূন্যতা। এখন আপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে: এই ঘরের ভেতরে কিছু একটা তৈরি করার। কিন্তু শর্ত হচ্ছে: আপনি বাইরে থেকে কিছু ব্যবহার করতে পারবেন না। ধরুন, আপনি সেই ঘরের ভেতর এক মুহূর্তের জন্য একটা আলো জ্বালাতে চান। কিন্তু আপনি তা করতে পারবেন না, কারণ আলো জ্বালানোর জন্য যা কিছু দরকার, তা আপনাকে বাইরে থেকে দিতে হবে। এখন আপনি দাবি করতে পারেন যে, আমরা যদি কোটি কোটি বছর অপেক্ষা করি, তাহলে একদিন হয়ত সেই ঘরের শূন্যতার মধ্যে একটা ক্ষুদ্র কণা, অণু, বা পরমাণু আপনা আপনিই তৈরি হবে। তারপর আরও কয়েক কোটি বছর পার হলে তা থেকে একসময় তেল, ম্যাচ, কাঠ তৈরি হয়ে একসময় আগুন ধরে যাবে এবং আলো তৈরি হবে। কিন্তু এই দাবির সমস্যা রয়েছে। প্রথমত, সময় নিজে থেকে কিছু করে না। কোনো ঘটনা ঘটলে, তা ঘটে সময়ের মধ্যে, কিন্তু সময় সেই ঘটনা ঘটায় না। যেমন, আপনি যদি চুলায় ডাল দিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করেন, তাহলে সেই পনের মিনিট কিন্তু ডাল রান্না করে না, বরং চুলার তাপ ডাল রান্না করে। আপনি যদি চুলা না জ্বালিয়ে চুপচাপ ১৫ মিনিট বসে থাকতেন, তাহলে আপনা আপনি ডাল রান্না হয়ে যেত না। সুতরাং আমরা যদি অসীম সময় পর্যন্তও অপেক্ষা করি, সেই ঘরের ভেতরে কিছুই আপনা থেকে সৃষ্টি হবে না। সেটা একটা অত্যন্ত ক্ষুদ্র কণিকা হোক, বা একটা বড় ফুটবল হোক না কেন। তাহলে এখন প্রশ্ন আসে, যদি কোটি কোটি বছর আগে মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগে শূন্যতা বিরাজ করছিল, তাহলে এখনও কেন শূন্যতা নেই? শূন্যতা থেকে তো কোনো কিছু আসতে পারেনা। তাহলে তো এখনও শূন্যতা বিরাজ করার কথা। কিন্তু যেহেতু আপনি আছেন এবং আপনি এই আর্টিকেল পড়ছেন, তার মানে দাঁড়ায় এখন শূন্যতা নেই, কিছু একটা আছে। এর মানে দাঁড়ায়: শূন্যতা কখনই ছিল না। কিছু একটা সবসময় ছিল। এখন প্রশ্ন হলো: সেটা কী? সেটা কি একটা কণিকা ছিল? এক ধরনের শক্তি? একটা না হয়ে অনেক কিছু কি ছিল? আমাদের কল্পনার ঘরে ফেরত যাই। ধরে নেই: সেই ঘরে পাঁচটি বল রয়েছে। সেই বলগুলো চিরকাল থেকে সেই ঘরের ভেতরে ছিল। এখন আমরা যদি আরও দশ বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি আরেকটা বল তৈরি হবে? যদি কয়েক কোটি বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি হবে? হবে না। যদি পাঁচটি বলের বদলে কোটি কোটি বল থাকে, তাহলে কি সেই বলগুলো থেকে আরেকটি বল সৃষ্টি হবে? হবে না। সুতরাং সংখ্যা এখানে কোনো ব্যাপার নয়। সময় কোনো ব্যাপার নয়। নিষ্প্রাণ বস্তু কখনো অন্য কোনো বস্তুর জন্ম দেবে না, তার সংখ্যা যতই হোক না কেন এবং যতই সময় দেওয়া হোক না কেন। এখন ধরুন বলের বদলে সেই ঘরে একটা মোরগ রয়েছে। এখন আমরা যদি কয়েক বছর অপেক্ষা করি, তাহলে কি একটা মুরগির বাচ্চার জন্ম হবে? হবে না। কিন্তু যদি একটা মোরগ এবং মুরগি রাখা হয়, তাহলে একটা বাচ্চা মুরগির জন্ম হতে পারে। সুতরাং, আমরা দেখছি এখানে সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। বলের বেলায় সংখ্যার কোনো গুরুত্ব নেই, কিন্তু মুরগির বেলায় সংখ্যার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, সেই ঘরের শূন্যতার মধ্যে যেই জিনিস রয়েছে তার গুণ কী। তার গুণ নির্ধারণ করে যে, সে অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করতে পারে, কি পারে না। মুরগির উদাহরণটাতে কিছু সমস্যা আছে। একটা মোরগ এবং মুরগি যদি একটা ঘরের শূন্যতার মধ্যে ভাসতে থাকে, তাহলে তারা কোনোদিনও একটা মুরগির বাচ্চার জন্ম দিতে পারবে না। কারণ সেই ঘরের মধ্যে কোনো প্রকৃতি নেই। কোনো বাতাস নেই, কোনো খাবার নেই, হাটার মত মাটি নেই। ওরা কিছুই খেতে পারে না, হেঁটে একজন আরেকজনের কাছে আসতে পারে না। ওদের পক্ষে কিছুই জন্ম দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি তাদের পক্ষে সেখানে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। সুতরাং সেইঘরের শূন্যতার মধ্যে যদি কিছুর অস্তিত্ব থাকে, তবে সেটি হতে হবে এমন একটা কিছু, যার কোনো বাতাস, আলো, শক্তি — কিছুরই দরকার নেই। সেটা এমন একটা কিছু, যার সাথে আমাদের পরিচিত কোনো প্রাণীর কোনোই মিল নেই। এখন প্রশ্ন আসতে পারে, কোনো প্রাণী না থাকুক, কোনো জড় বস্তু তো থাকতে পারে? তাদের তো কোনো খাবার, পানি, আলো-বাতাসের দরকার নেই? আমরা আগেই দেখেছি বলের উদাহরণটা। ধরুন, বলের বদলে পাঁচটি অণু রয়েছে। তাহলে কী দাঁড়াবে? যতই সময় যাক না কেন, সেই পাঁচটি অণুই থাকবে। নতুন কিছুই সৃষ্টি হবে না। এখন চিন্তা করে দেখুন, সেই অণুগুলো থাকার জন্য কী দরকার। কয়েক বছর আগে সরকারি পর্যায়ে কয়েকটি পশ্চিমা দেশের উদ্যোগে Large Hadron Collider নামে একটি বিশাল যন্ত্র তৈরি করা হয়, যা কয়েক মাইল চওড়া একটি যন্ত্র। এর মধ্যে দুটো অণুকে প্রচণ্ড গতিবেগে চালিয়ে একে অন্যের সাথে সংঘর্ষ ঘটানো হয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি অতি ক্ষুদ্র কণিকা জন্ম দেওয়া। বিপুল পরিমাণ শক্তি খরচ করে এই সংঘর্ষ থেকে একটি মাত্র অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করা হয়। সুতরাং আমাদের সেই কল্পনার ঘরে যদি পাঁচটি অণু থাকতে হয়, তাহলে এক বিশাল পরিমাণের শক্তির প্রয়োজন। এতক্ষণে আমরা যা জানলাম, তা থেকে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়— প্রথমত, সৃষ্টির আগে যদি কিছু থেকে থাকে, তাহলে সেটি হবে এমন একটি কিছু, যার অস্তিত্বের জন্য অন্য কিছুর দরকার নেই। যেটি একটি একক সত্তা। এর অস্তিত্বের জন্য অন্য কোনো কিছুর দরকার নেই। সেটি অমুখাপেক্ষী, কোনো কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। দ্বিতীয়ত, সেটির ক্ষমতা থাকতে হবে অন্য কোনো কিছুর সৃষ্টি করার। কারণ যদি সেটির সৃষ্টি করার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে আমাদের চারপাশে এই যে বিশাল সৃষ্টিজগৎ, এর কিছুরই অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। যেহেতু আপনি, আমি আছি, তাই সৃষ্টির আগে কিছু একটা ছিল, যার সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। তৃতীয়ত, সেই কিছু একটার অকল্পনীয় ক্ষমতা থাকতে হবে। আজকে আমরা একটি অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে যন্ত্র বানিয়ে, লক্ষ মেগাওয়াট শক্তি খরচ করি। এই পরিমাণ শক্তি যদি একটি মাত্র অতি ক্ষুদ্র কণিকা তৈরি করতে লাগে, তাহলে আপনি, আমি, আমাদের চারপাশ, এই বিশাল পৃথিবী, লক্ষ পৃথিবীর সমান বিরাট সূর্য, কোটি কোটি সূর্যের মত বিশাল তারা দিয়ে ভরা প্রকাণ্ড ছায়াপথ, এরকম কয়েকশ কোটি প্রকাণ্ড ছায়াপথসহ মহাবিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করতে কী পরিমাণ শক্তির দরকার? সুতরাং এই পর্যায়ে এসে আমরা কয়েকটি ব্যাপার প্রমাণ করলাম— • সৃষ্টির আগে ‘কিছু একটা’ ছিল। • সেই কিছু একটার অকল্পনীয় ক্ষমতা। • সেই কিছু একটার ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টির ক্ষমতা আছে। • সেই কিছু একটা ‘অন্য কিছু’ অবশ্যই সৃষ্টি করেছে। • সেই কিছু একটা অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নয়। • অন্য কোনো কিছুই সেটার সাথে তুলনা করার যোগ্য নয়। এখন চলুন সৃষ্টির আগে চলে যাই। শুধুই সেই অবিনশ্বর জিনিসটা রয়েছে। আর কিছুই নেই। এখন যদি অন্য কোনো কিছুর সৃষ্টি করতে হয়, তাহলে সেটা শুধুমাত্র সেই অবিনশ্বর জিনিসটাকে দিয়েই সম্ভব। আর অন্য কোনো কিছু নেই, যা কিনা তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা সেই জিনিসটাকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে কিছু একটা সৃষ্টি করার জন্য। এখন সেই জিনিসটার কোনো কিছু সৃষ্টি করার কোনোই প্রয়োজন নেই, কারণ সে নিজে থেকেই অস্তিত্ব নিয়ে থাকতে পারে, এবং সবসময়ই ছিল। যেহেতু সেটার কোনোই প্রয়োজন নেই অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করার, তার মানে হলো: যদি কিছু সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটা সৃষ্টি হয়েছে সেই অবিনশ্বর জিনিসটার ‘ইচ্ছা’র কারণে। এমনটা নয় যে, সেই অবিনশ্বর জিনিসটার প্রকৃতি হচ্ছে এমন যে, সেটি ‘কিছু সময়’ পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করা শুরু করবে। কারণ ‘কিছু সময়’ হচ্ছে একটা ‘অন্য কিছু’, যা এখনো সৃষ্টি হয়নি। যদি সেই জিনিসটা ‘কিছু সময়’ সৃষ্টি না করে, তাহলে ‘কিছু সময়’-এর কোনো অস্তিত্ব হবে না। এখন আমরা একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উপলব্ধি করলাম: সেই জিনিসটার ‘ইচ্ছা’ আছে। সুতরাং সেই জিনিসটা কোনো ‘জিনিস’ নয়, সেটা ‘কেউ একজন’ — কোনো চেতন সত্তা। আমরা আর সেটাকে ‘সেটা’ বলতে পারব না, বলতে হবে ‘তিনি’। এখন অনেকে দাবি করতে পারেন: যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে, সেটা তো দৈবক্রমে, বা ঘটনাচক্রেও সৃষ্টি হতে পারে? ‘ইচ্ছা’-এর দরকার নাও থাকতে পারে? যদি ইচ্ছা’র দরকার না থাকে, তাহলে আর কোনো চেতন সত্তার দরকার নেই। তখন সেটা অচেতন ‘কোনো জিনিস’ হতেই পারে। যেহেতু ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ হচ্ছে ‘অন্য কিছু’ একটা, যা সেই অবিনশ্বর জিনিসটা নয়, এবং আমরা এর আগে দেখেছি যে, ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টি হওয়া শুধুমাত্র সেই অবিনশ্বর জিনিসটার পক্ষেই করা সম্ভব, সুতরাং এই ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ সেই অবিনশ্বর জিনিসটাকেই সৃষ্টি করতে হবে। ‘দৈবক্রম’ বা ‘ঘটনাচক্র’ কখনই সেইঅবিনশ্বর জিনিসটার বাইরে নিজে থেকেই থাকতে পারে না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম অবিনশ্বর সত্তাটি একটি অতি পরমাণু, সেটি কোনো চেতন সত্তা নয়। সেটির সৃষ্টি করার ক্ষমতা রয়েছে। সেই অণুটির যতই ক্ষমতা থাকুক, যত কিছুই সৃষ্টি করার সামর্থ্য থাকুক না কেন, সৃষ্টি করার ‘ইচ্ছা’ না থাকলে সেই অণুটা চিরজীবন যেমন ছিল, তেমনই থাকবে।যেহেতু এর অন্য কোনো কিছু সৃষ্টি করার কোনোই প্রয়োজন নেই, সেটি কখনই কিছু সৃষ্টি করবে না। কিন্তু অন্য কিছু সৃষ্টি অবশ্যই সৃষ্টি হয়েছে, কারণ আপনি-আমি আজকে আছি। সুতরাং দৈবক্রম, বা ঘটনাচক্র বলে কিছু নেই। থাকলে সেটা সেই অবিনশ্বর সত্তারই সৃষ্টি। যদি তাই হয়, তার মানে সেই অবিনশ্বর সত্তা ‘ইচ্ছা’ করেন বলেই অন্য কিছু সৃষ্টি হয়। যদি ‘ইচ্ছা’ না থাকত, তাহলে যতই ক্ষমতা থাকুক না কেন, যতই সময় পার হোক না কেন, অন্য কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না। এথেকে আমরা এটা দাবি করতে পারি, সেই অবিনশ্বরসত্তার ‘ইচ্ছা’ আছে। এখন আমরা আগে দেখেছি, সেই অবিনশ্বর সত্তা অন্য কোনো কিছু ছাড়াই থাকতে পারেন। সুতরাং, তিনি সময় কিংবা পার্থিব জগতে আবদ্ধ নন, কারণ তিনি সময় এবং স্থান সৃষ্টি করেছেন। একইভাবে যেহেতু তিনিই স্থান সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনি ইচ্ছা করলেই স্থানের বাইরে অদৃশ্য থাকতে পারেন, যেন তাঁকে কোনোভাবেই বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ করা না যায়। আবার তিনি ইচ্ছা করলেই স্থানের ভেতরে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন, যেন তাঁর সৃষ্টি তাঁকে দেখতে এবং শুনতে পারে। এবার ধরি সেই অবিনশ্বর সত্তা একটি অণু সৃষ্টি করলেন। তিনি কি সেই অণুটির ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব তার সবকিছু জানেন? অবশ্যই, কারণ তিনি শূন্য থেকে সেই অণুটি সৃষ্টি করতে পারেন। শূন্য থেকে কোনো কিছুবানানো, আর তেল ময়দা মাখিয়ে পরোটা বানানোর মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে। আমরা যা কিছুই বানাই, আমরা কখনই তা শূন্য থেকে বানাই না। একারণে কোনো কিছুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সব কখনই আমরা জানতে পারবো না। আমাদের জ্ঞান সবসময়ই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। এখন ধরুন তিনি দুটি ভিন্ন ধরনের অণু সৃষ্টি করলেন। তিনি কি সেই দুটো অণুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সবকিছু জানেন? অবশ্যই, একটার ব্যাপারে জানলে, দুটোর বেলায় কেন হবে না? সুতরাং আমরা দেখছি তাঁর সৃষ্ট কোনো কিছুর ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান, কয়টি সৃষ্টি হয়েছে, তার সংখ্যার উপর নির্ভর করে কমে না বা বাড়ে না। এভাবে তিনি যদি কোটি কোটি কোটি অণুও সৃষ্টি করেন, তারপরেও তিনি সেগুলোর প্রত্যেকটির ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তার সবকিছুই জানবেন। সুতরাং আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, তিনি শুধুই অকল্পনীয় জ্ঞানের অধিকারীই নন, তাঁর সবকিছুর ব্যাপারে সবরকম জ্ঞান রয়েছে। তিনি পরমজ্ঞানী, সকল জ্ঞানের অধিকারী। যদি সেই সত্তা প্রতিটি অণুর ব্যাপারে যা কিছু জানা সম্ভব, তাঁর সব কিছু জানেন, তার মানে দাঁড়ায় সেই অণুগুলো যা কিছু ঘটাচ্ছে, ঘটিয়েছে, এবং ঘটাবে, অর্থাৎ সৃষ্টিজগতে যা কিছুই ঘটে, সবকিছুর ব্যাপারেই জানেন। সুতরাং তিনি প্রতিটি শব্দ শোনেন, প্রতিটি ঘটনা দেখেন। শুধু তাই না, যেহেতু তিনি প্রতিটি অণু বানিয়েছেন, তাই প্রতিটি অণু যা কিছুই ঘটাতে পারে, তার সবকিছুই তিনিই নির্ধারণ করেদিয়েছেন। সুতরাং মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা তাঁর অনুমতিতে ঘটে। তিনিই সবকিছু ঘটান। তাঁর ঘটানো ঘটনার বাইরে অন্য কোনো কিছু ঘটে না। • সৃষ্টির আগে ‘কোনো একজন’ ছিলেন। • সেই ‘কোনো একজন’-এর অকল্পনীয় ক্ষমতা। • সেই ‘কোনো একজন’-এর ‘অন্য কিছু’ সৃষ্টির ক্ষমতা আছে। • সেই ‘কোনো একজন’ ‘অন্য কিছু’ অবশ্যই সৃষ্টি করেছেন। • সেই ‘কোনো একজন’ অন্য কিছুর উপর নির্ভরশীল নন। • অন্য কোনো কিছুই সেই ‘কোনো একজন’-এর সাথে তুলনা করার যোগ্য নয়। • সেই ‘কোনো একজন’ সবকিছুর ব্যাপারে সব জানেন, সব দেখেন, সব শোনেন। • মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনা ঘটে সেই ‘কোনো একজন’-এর ইচ্ছায়। উপরের এই যুক্তিগুলো ব্যবহার করে আমরা যে সত্তার অস্তিত্বকে প্রমাণ করলাম, তিনি কোনো কাল্পনিক সত্তা নন। তিনি থাকতে বাধ্য। না হলে উপরের সবগুলো যুক্তিমিথ্যা। যদি উপরের যুক্তিগুলো মিথ্যা হয়, তাহলে আপনার কোনো অস্তিত্ব নেই। যেহেতু আপনার অস্তিত্ব আছে, তাই উপরের যুক্তিগুলো ধারাবাহিকভাবে সবগুলো সত্যি। সুতরাং এরকম একজন সত্তা অবশ্যই আছেন।
0 notes
Tumblr media
0 notes