Don't wanna be here? Send us removal request.
Text
.
★অচেনা সুন্দরী★
প্রায় চার মাস হলো কলেজে ক্লাস শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে একটা ভয়ানক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি। যার ভয়াবহতা অামার জীবনকে গ্রাস করে নিচ্ছে। অত্যন্ত নিঃসঙ্গ হয়ে একটা বদ্ধ অন্ধকার ঘরে অালো জালিয়ে লিখতে বসেছি সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার গল্প। অবশ্য সবার সাথে শেয়ার করতে পেরে একটু হালকা অনুভব করছি।
কলেজের প্রথম দিন। পরিচিত হলাম শাহরিয়ার শুভ নামের একটি ছেলের সাথে। একই বেঞ্চে বসলাম। ছেলেটি দেখতে দারুন স্মার্ট। মনে হয় শহরের ধনীদের মধ্যে ওর বাবার অবস্থানটা বেশ উঁচুতে। অনেকের সাথেই সেদিন পরিচিত হলাম। তবে শুভ নামের ছেলেটির সাথে অামার দারুন ভাব হলো। বড়লোক বাবার একমাত্র সন্তান শুভ। ওদের ড্রাইভার প্রতিদিন ওকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যায়। অন্যদিকে অামি গ্রামের ছেলে। কলেজের হোস্টেলে থাকি। ওর অার অামার কোনো মিল নেই। তবুও ধীরে ধীরে অামি ওর প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠলাম। এভাবে একমাস পার হয়ে গেল। কলেজের প্রথম ক্লাস পরীক্ষা শুরু হলো। পরীক্ষা দিয়ে একদম হাপিয়ে উঠলাম। শুভ অামাকে অার রাকিব কে উদ্দেশ্য করে বলল, My dear friends- Sabbir and Rakib Let's celebrate today. অামিও ভাবলাম একটু অাড্ডা দেওয়াও দরকার।
শুভ অামাদের নিয়ে গেল একটি বিলাসবহু�� রেস্টুরেন্টে। অাগেই বলেছি শুভ বিরাট বড়লোকের ছেলে। কাজেই অামাদের পকেট ফাঁকা হলেও ওর পকেট সবসময়ই ভর্তি থাকে। শুভ চারটা কাবাব অার ড্রিংক্স অর্ডার করলো। কাবাবের পোড়া মাংসের গন্ধে অামার জিভে জল চলে এল। খাওয়ার লোভ অনেক কষ্টে সামলাচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ একটা অচেনা সুন্দরী মেয়ে এসে অামার পাশে বসল। অামি কিছু বুঝতে পারলাম না। তিনটা চেয়ারে অামরা তিনজন বসেছিলাম। অামার পাশের চেয়ারটা ফাঁকা ছিল। অামি স্তম্ভিত হয়ে বসে ছিলাম। শুভ অামাকে সরিয়ে দিয়ে অামার জায়গায় বসল। অামি হতভম্ব হয়ে শুভর জায়গায় এসে বসে পড়লাম। রাকিব অামার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলল মেয়েটি শুভর গার্লফ্রেন্ড। অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটা। তাকালেই যেন চোখ ঝাঁঝিয়ে যায়। নিজের অজান্তেই বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল মেয়েটার দিকে। হাসিতে যেন তার মুক্তো ঝরছে। চোখ দুটো ঠিক হরিণীর চোখের মতো টানা টানা। এমন সুন্দরীশ্রেষ্ঠা মেয়ে নিজের সৌন্দর্যকে অপরের কাছে মুল্যহীন করে তুলছে এটা মানতে পারছিলাম না। কি জানি বাবা, বড় বড় লোকের সব বড় বড় কারবার অামার মতো গরীবেরা কি করে বুঝবে।
মানসম্মানের পরোয়া না করে শুভ অার মেয়েটা এমনভাবে অন্তরঙ্গ হচ্ছিল যেন স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীও পাবলিক প্লেসে এতটা অন্তরঙ্গ হয় না কারন অন্তরঙ্গতার জন্য বাড়িঘর অাছে। অামার এসব পছন্দ হচ্ছিল না। অামি রাকিবকে বললাম অাজ অার কাবাব খাব না। এই বলে সুস্বাদু কাবাব ছেড়ে বাইরে চলে এলাম। অামার পিছু পিছু অামাকে ডাকতে রাকিবও বাইরে অাসল। বলল, কিরে চলে অাসলি যে? অামি বললাম মাথাটা ব্যথা করছে, অাজ অার খাব না। রাকিব অামাকে দুরে সরিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলল, অামি বুঝতে পারছি কেন তুই চলে অাসলি। ওই যে মেয়েটা দেখছিস, শুভর জন্য পাগল। প্রথমে শুভ মেয়েটার পেছনে পেছনে ঘুরত, কিন্তু মেয়েটা ওকে পাত্তা দিত না। কিন্ত এখন দেখ্, মেয়েটা শুভকে ছাড়া কিছু বোঝে না। এমনকি মেয়েটা এটাও জানে না যে শুভ ওর সাথে প্রেম প্রেম খেলা করছে। ও অন্য মেয়েদের মতোই শুভর শিকার। অামি যেন অাকাশ থেকে পড়ে বললাম, খেলা করছে? একটা মেয়ের জীবন ওর কাছে খেলা মনে হয়? অামাকে তুচ্ছ করে রাকিব বলল, কিরে সাব্বির, তুই তো দেখি সিনেমার হিরোর মতোন কথা কস্। হিরো হইয়া লাভ নাই। তোর মতো হিরোরা শুভর কাছে জিরো। অামি কোনো কথা না বলে প্রবল গতিতে পুরো পথ হেটে হোস্টেলে এসে দরজা লাগিয়ে পাথরের মতো বসে রইলাম। প্রচন্ড রাগ হলো।
অারও একমাস চলে গেছে। শুভর সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। হয়নি বললে ভুল হবে ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করিনি। কেননা অামি ডিপ্রেশন এ ভুগছিলাম। তার অার একটা ��ারণ অামার পড়াশোনার খরচ চালানো অাব্বার পক্ষে কষ্টকর ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ নিজে চালাব। একটা টিউশনি জোগাড় করলাম বটে তবে টাকার পরিমান নগন্য ছিল। ক্লাস ফাইভের ছাত্র পড়াতে হবে। ছাত্রের বাবা একজন ডাক্তার। বিলাসবহুল বাড়ি। সপ্তাহে তিনদিন পড়াব। বেতন মাত্র ২০০০ টাকা। তাওতো অামার হাতখরচ টা চলবে। ছাত্রের নাম অাকাশ। অাকাশের অাম্মু অামাকে পুলিশের মতো জেরা করা শুরু করল। তোমার নাম কি?-জি সাব্বির থাক কই?- হোস্টেলে ……… আকাশের বাবা আমাকে তোমার সম্পর্কে সব বলেছে। তাও তোমাকে একবার জিজ্ঞেস করলাম। কিছু মনে কর না যেন।- বললাম, জি না অান্টি। ভদ্রমহিলা তারপর জোরে চেঁচিয়ে বললেন, অানিকা, চা-নাস্তা নিয়ে অায় তো মা। বলে শেষ করার অাগেই ভেতর থেকে চা-নাস্তা নিয়ে অাসল একটি মেয়ে। সেই রেস্টুরেন্টের অচেনা সুন্দরী মেয়ে। অামাকে চিনতে না পারলেও অামি ঠিকই চিনেছি। অমন সুন্দর চেহারা কি ভোলা যায়? সেই টানা টানা চোখ, গোলাপের পাপড়ির ঠোট, মুক্তো ঝরা হাসি সবটুকুই তার চেনা। অামি স্তব্ধ হয়ে শুধু দেখছিলাম। অানিকার অাম্মু বলল অামার বড় মেয়ে, অানিকা। জিজ্ঞেস করলো, তুমি এস.এস.সি. তে কত মার্কস পেয়েছিলে? অামি অাস্তে অাস্তে বললাম জি ১১৯০। এই শুনে অানিকা অার অাকাশ জোরে জোরে হাসতে লাগল। ভদ্রমহিলা হেসে বললেন, এত কম? অামার অানিকাই তো পেয়েছে ১২৫০। তা তোমার কোন স্কুল? অামি বললাম, সোনাহাটা উচ্চ বিদ্যালয়। ভদ্রমহিলা মুখটা বিকৃতি করে বললেন, অ্যা, কি?এই স্কুলের নামতো কোনোদিন শুনিনি। গ্রামের স্কুল থেকে অাসছ নাকি? মাথা নাড়লাম, জি। ভদ্রমহিলার মুখটা এখনো কুচকে রয়েছে।ওও, তা পারবে অামার ছেলেকে পড়াতে?-'জি চেষ্টা করব।' 'না, না, চেষ্টা করলে হবে না। গ্রাম থেকে এসেছ তোমার থেকে অার কিই বা অাশা করব। দেখ পড়াতে পার কি না। অামার ছেলে কিন্তু খুব টালেন্টেড। তবে একটু দুষ্টু।' অাকাশ মুখটা ইদুরের মতো চোখা করে রইল। ভদ্রমহিলা একটু থেমে অাবার বকবকানি শুরু করল। শহরের স্কুলের গুনাগুন দিয়ে শুরু করল অার শেষ করলো গ্রামের স্কুলের বারোটা বাজিয়ে। অামি না শুনেও শোনার ভান করলাম। সেদিন অার পড়ালাম না। বললাম, অাজকে তাহলে অাসি। এই বলে দ্রুত চলে এলাম।
তারপর থেকে নিয়মিত পড়াতে যেতাম। অামি অানিকাকে অনেকদিন বলার চেষ্টা করেছি, শুভ তোমার সাথে ভালবাসার নামে প্রতারনা করছে, ধোকা দিচ্ছে। ও শুধু তোমাকে না অারও অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। কিন্তু বলার সাহস হয়নি। একদিন সাহস করে নিরিবিলি জায়গায় অানিকাকে ডেকে বলেই ফেললাম। শুভর নামে একটা বাজে কথা বলার সা��েসাথেই অানিকা অামার কানে কষে একটা থাপ্পড় মারল। বেশ জোরে মেরেছিল মনে হয়। কারণ অামি কিছু শুনতেও পাচ্ছিলাম না। অস্পষ্টভাবে শুনলাম সে চিৎকার করে বলছে, 'ইতর, কুত্তার বাচ্চা। তুই কি ভেবেছিস? এসব কথা বললেই অামি তোর হয়ে যাব। অামি প্রথম দিনই তোর মতলব বুঝতে পেরেছি। অামার শরীর তোর এত পছন্দ হয়েচে? এই নে, অামি তো সামনেই অাছি। অামি ওকে থামিয়ে বললাম, দেখ অানিকা, তুমি অামাকে ভুল বুঝছ। অামি কখনো তোমাকে…..অামার কথা শেষ না হতেই ও বলল, টিউশনির নামে ধান্দাবাজী, না? অার কোনোদিন যদি অামার সামনে অাসিস সেদিন তোকে অামি দেখে নেব।এই বলে অামার সামনে থেকে চলে গেল। অাসলে অামার কথাগুলো বলা ঠিক হয়নি। যে যেমন বাঁচতে চায় তাকে সেভাবেই বাঁচতে দেওয়া উচিৎ।
এক সপ্তাহ পর অামার পাওনা টাকাটা নেওয়ার জন্য অাকাশদের বাড়িতে গেলাম। যাওয়ার অাগে অানিকার কথাগুলো কানে তীরের মতো লাগল। তবুও সাহস করে গেলাম। গিয়ে দেখি পুরো বাসায় হৈচৈ পড়ে গেছে। কি হয়েছে? কি হয়েছে? অানিকা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে প্রায় অাধঘন্টা অাগে। সবাই মিলে প্রচন্ড ডাকাডাকি শুরু করেছে। অামাকে দেখে অানিকার অাম্মু বলল দেখ তো সাব্বির । অামি বললাম, দরজা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। সবাই মিলে তখন দরজা ধাক্কা দেওয়ায় লক ভেঙ্গে দরজা খুলে গেল। সবাই হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকল। ঘরে ঢুকেই দেখলাম চেয়ারটা মেঝেতে পড়ে অাছে। পড়ে থাকা চেয়ারটার ঠিক ওপরে অানিকা ফ্যানের সাথে ঝুলে অাছে। যে মুখের হাসিতে মুক্তো ঝরতো সেই মুখ দিয়ে এখন লম্বা জিহ্বা বের হয়ে এসেছে। সাসপেন্সরী লিগামেন্ট ছিড়ে টানা টানা চোখদুটো যেন বের হয়ে অাসার জন্য ছটফট করছে। দাঁতগুলো জিহ্বার ভেতর যেন বসে গেছে। মনে হচ্ছে অার একটু চাপ দিলেই লম্বা জিহ্বাটা কেটে টপ করে মেঝেতে পড়বে। অার গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোট দুটো রক্তে লাল হয়ে যাবে। জড়িখচিত গোলাপি ওড়নাটা ওকে খুব মানিয়েছে। ঠিক যেন হিন্দুধর্মের কালি মা। গলা থেকে ওড়নাটা মেঝে পর্যন্ত ছেয়ে অাছে। মেঝেতে পড়ে অাছে অানিকার লেখা সদ্য চিঠি। অামি কাগজ টা তুলে নিলাম, তাতে বড় বড় অক্ষরে লেখা অাছে, "অামার মৃত্যুর জন্য কেও দায়ী নয়।"
লেখক- আমি নিজে (not copied) Md. Sabbir Hossain
এতক্ষন ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। গল্পটি কেমন লাগল তা কমেন্ট সেকশনে লিখে জানাতে পারেন।
1 note
·
View note
Video
Motivational Story Bangla, Frog Story
1 note
·
View note