#পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলে
Explore tagged Tumblr posts
Text
দেবু
অন্দ্রিলা, ডিভোর্স হয়েছে মাত্র ছয় মাস হয়েছে আর বাচ্চা হয়েছে একটা বছর। খুব বেশি সময় হয়নি সে ঢাকায় এসেছে কোলের সেই ফুটফুটে বাচ্চাটিকে রেখে।
খুব কম বয়সে অন্দ্রিলার বিয়ে। তারপর আট বছরের সংসার এখন একটি বাচ্চা আর সামনে এডমিশন এক্সাম! খুব অল্পবয়সীই বলা যায় অন্দ্রিলাকে। নিজেকেই এখনও সামনে উঠতে পারেনি তবে তার মধ্যেই সামনে এক নতুন যুদ্ধ জয়ের জন্য যেন পথ তৈরি!
বাবা-মায়ের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকার সাহস এতো বিশাল বড় ব্যাপার আর অন্দ্রিলার সে সাহস কখনোই ছিল না!
- হ্যাঁ, মা পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
- ভালো হয়েছে মা। দেবু কেমন আছে?
মা কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো কিছু বলল না। অন্দ্রিলা বারবার জিজ্ঞেস করলে মা একসময় বলল,
- হ্যাঁ, ভালো আছে।
তবে অন্দ্রিলার মনের ভিতর খটকা লেগে গেল হয়তো বা দেবুর কিছু হয়েছে! নইলে মা তো এমন করে না!
অনদ্রিলা আর দেরি করলো না। সেদিন কথা শেষেই বাড়ির জন্য রওনা দিয়েছে। পরদিনই এক্সাম ছিল কিন্তু সেসব ফেলে রওনা করেছে বাড়িতে। বাড়ি গিয়ে দেখে হাজারো লোকের ভিড়ে। বাড়ি থেকে অনেক লোকজন বেরিয়ে যাচ্ছে অন্দ্রিলা কিছু বুঝতে পারলো না এত লোক কেন হঠাৎ করে বাড়িতে! সবাই তাকে দেখে,
- কি হবে মেয়েটার এখন!
- হয়তো এটাই ওর জন্য ভাল ছিল!
কিছু বোঝার আগেই অন্দিলা দেখে যে বাড়ির ভেকরে কেউ নেই!
অন্দ্রিলা আশেপাশের লোকজন দেখে জিজ্ঞেস করল, বাড়ির সকলে কোথায়? কিন্তু সকলেই কিছু বলতে নারাজ এমন সময় পাশের একটি ছোট বাচ্চা বললো
- তোমার বাচ্চারে লইয়া শ্বশানঘাটে গেছে ওইহানে গিয়া দেহ!
অন্দ্রিলা বাড়ি থেকে বের হতে লেগেছে এমন সময় সবাই ফিরেছে। অন্দিলা মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
- মা, দেবু কোথায়?
মায়ের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। অন্দ্রিলা বাবাকে জিজ্ঞেস করে, বোনকে জিজ্ঞেস করে কেউ কোনো জবাব দিতে পারে না। সব শেষে অন্দ্রিলার মা বলে,
- তোর বাচ্চাকে আর বাঁচাতে পারলাম নারে মা!
অন্দ্রিলা, মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বলে,
- মা, কি বলছো! তুমি কি মজা করার সময় পাও না? আমার সাথে কি মজা করা যায় তুমি এখন এটা মনে করো!
- না রে মা আসলেই!
- কি করে আসলেই মা! কি করে আসলেই! আমি তো ওকে তোমাদের ভরসা রেখে গিয়েছিলাম তাহলে কিভাবে বল আমার বাচ্চার এমন হলো!
- এটা ডায়রিয়া মা, কোন ভাবে সারাতে পারি নি সব চেষ্টা করেছি!
বিশ দিন হতে চলল, সেদিনের পর থেকে অন্দ্রিলা এখনো পর্যন্ত কোনো কিছু বলেনি। দেবু মারা গেলে দেবুর বাবা একবা��ের জন্য তাকে শেষ দেখা দেখতে আসেনি।
অন্দ্রিলার পরীক্ষার রেজাল্ট বেরিয়েছে ঢাকা ভার্সিটির নিউট্রেশন বিভাগে চান্স হয়েছে অন্দ্রিলার তবে কি সে পড়তে যাবে?
না, সে কোনোভাবেই যাবেনা। মা অনেকে অনেক ভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করেছে তাকে,ছেলের দোহাই দিয়েছে কিন্তু তারপরও কোনো কাজে আসেনি। অন্দ্রিলা এক রাতে খুব কষ্টে ঘুমিয়েছে সেদিন যেন দেবু এসে ধরা দিয়েছে তার স্বপ্নে। বলেছে, মা আমাকে তো বাঁচাতে পারলে না আর বাকি বাচ্চাদের কি তুমি বাঁচাবে না!
পরদিন সকালে, অন্দ্রিলা কাউকে কিছু না বলে ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে।
এভাবে ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। এই ছয়টা বছরে অন্দ্রিলা যোগাযোগ রাখিনি বাড়ির কারো সাথে! না একটাবার কথা, না একটাবার দেখা, কোন কিছুই না। বাবা-মা অনেকবার এসেওছে অন্দ্রিলার সাথে দেখা করবে বলে কিন্তু না, অন্দ্রিলা দেখা করেনি!
সেকি ছিল মনে জমা কোন অভিমান! নাকি নিজের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া কোনো অমূল্য ধন!
ছয়টা বছর পর অন্দ্রিলা গ্রামে ফিরেছে। অন্দ্রিলার বোনের বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর হল। তার একটি ফুটফুটে ছেলে হয়েছে। সে অন্দ্রিলাকে চেনে তাকে গ্রামে দেখে ছুটে গিয়েছে বাড়ি,গিয়ে বলে অন্দ্রি মা কে দেখেছি! অন্দ্রি মা!
বাড়ির কেউ প্রথমে তার কথা বিশ্বাস না করলেও পরে অন্দ্রিলা বাড়ি ফিরলে তখন সকলে তার কথা বিশ্বাস করে। অন্দ্রিলা বাড়ি এসে জানতে পারে তার বোন মারা যায় ডেলিভারির সময় এবং যে ছেলেটিকে রেখে যায় তার নাম দিয়ে যায় দেবু!
- ৩১ মে, ২০২২
- মোনালিসা মিতু।
0 notes