#চ���না অচেনা
Explore tagged Tumblr posts
rebelmonwar · 4 years ago
Text
Tumblr media
অগ্নিযুগের বিফ্লবী প্রফুল্লা চাকী
#PrafullaChaki #rebelofindia #rebelofbangladesh
ক্ষুদিরামের নামটির সাথে যে নাম উচ্চারিত হয়,
সে নামটি হল প্রফুল্ল চ|কি।
তিনি ছিলেন বাংলা তথা ভারতের এক বিশিষ্ট সশস্ত্র বিপ্লবী।
১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ই ডিসেম্বর রংপুরে প্রফুল্ল চাকির জন্ম হয়, তার পিতার নাম রাজনারায়ণ চাকি। তাদের আদি নিবাস ছিল বগুড়ার বিহারগ্রামে।
রংপুরের স্কুলে ভর্তি হলেন প্রফুল্ল চাকি। স্কুলে ভরতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি কুস্তির আখড়া তৈরি করলেন। তখন থেকেই নেতৃত্ব সুলভ মনোভাব ছিল প্রফুল্ল চাকির মধ্যে। সমবয়সীদের সঙ্গে কুস্তি করে দিন কাটাতেন। কুস্তি ছাড়াও মন দিয়ে শিখতেন লাঠি খেলা এবং ছোরাখেলা। তরবারি চালনাতেও হাত পাকিয়ে ছিলেন।
তখন ভারতের সর্বত্র বিক্ষোভ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। একটির পর একটি গুপ্ত কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন জায়গাতে। প্ৰফুল্ল চাকি অল্পবয়সে এ জাতীয় গুপ্ত কেন্দ্রের সদস্য হলেন। যোগ দিলেন বান্ধব সমিতিতে। তখনও পর্যন্ত স্কুলের পাঠ শেষ হয়নি। এটি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের কথা। ১৫ বছরের প্রফুল্লর সাহসিকতা দেখে সহকর্মীরা অবাক হয়ে যেতেন। মধ্যরাতে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতেন। যে কোন ক��িন কাজ চোখের নিমেষে করতে পারতেন।
স্বদেশি আন্দোলনের সময় রংপুরে জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হল। প্রফুল্লর ওপর একটি গুরুদায়িত্ব দেওয়া হল। বলা হল তাকে ছাত্রদের লাঠিখেলা এবং মুষ্টিযুদ্ধ শিক্ষা দিতে হবে। প্রফুল্ল মন দিয়ে এই কাজ করতেন। তার চেষ্টায় বেশ কিছু সুদক্ষ লাঠিয়াল পাওয়া গেল। মুক্তিযুদ্ধ শিক্ষাতেও ছাত্ররা দক্ষ হয়ে উঠল। তার উপযুক্ত শিক্ষায় ছাত্রের নিয়মনিষ্ঠ ও শৃঙ্খলাপরায়ন হয়ে সৈনিকের মত গড়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, প্রফুল্ল একটি ত্রাণ কমিটিও গঠন করলেন। যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। সাধারণ মানুষের হাতে খাদ্য পৌছে দিতেন। সকলের মুখে তখন প্রফুল্ল চাকির নাম শোনা যাচ্ছে।
১৯০৬ সালের শেষের দিকে বিখ্যাত বিপ্লবী বারীন ঘোষের সঙ্গে প্রফুল্ল চাকির দেখা হয়। প্রফুল্লকে দেখে বারন বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই কিশোরের চরিত্রের মধ্যে এক সাহসিকতা, উদ্যম ও স্বদেশচেতনার পূর্ণ সংমিশ্রন রয়েছে। কলকাতা তখন স্বাধীনতার সূর্যকেন্দ্র। এখানে অসংখ্য গুপ্ত সমিতি স্থাপিত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সশস্ত্র সংগ্রামীরা নিয়মিত কলকাতা আসছেন। ব্রিটিশ সরকার কলকাতাকে নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত।
বারীন ঘোষের একান্ত অনুরোধ প্রফুল্ল পূর্বাংলা থেকে কলকাতায় চলে এলেন। যুগান্তর কার্যালয়ে তাকে থাকার ব্যবস্থা করা হল।
কলকাতায় না এলে হয়তো প্রফুল্লর জীবন এভাবে পরিবর্তিত হত না। কলকাতায় এসে তিনি বিপ্লবের বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশের সুযোগ পেলেন। তখন অত্যাচারী রামফিল্ড ফুলার ছিলেন আসামের ছোটলাট। ফুলারকে পৃথিবীর থেকে সরাতে হবে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। কার ওপর এই গুরু দায়িত্ব দেওয়া হবে? প্রফুল্লকে নির্বাচিত করা হল ফুলার হত্যার ঘাতক হিসেবে। প্রফুল্ল ঠিক সময়ে ফুলারের ওপর আক্রমণ করলেন। কিন্তু একটুর জন্য তার প্রয়াস ব্যর্থ হল। ফুলার রক্ষা পেলেন। প্রফুল্ল নাম পালটে মানিকতলার বোমার আড্ডায় এসে বাস করতে থাকেন। দিন কাটতে থাকে। প্রফুল্ল নিয়ম করে গুপ্ত দলের সভা সমিতিতে যোগ দিচ্ছেন।
১৯০৮--কলকাতার প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিংসফোর্ড বিপ্লবীদের সাথে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করছেন। বিপ্লবী বালক সুশীল সেনকে দণ্ড দিয়েছেন। তাই তাকে পৃথিবী থেকে সরাতেই হবে।
কিংসফোর্ডকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হল। কলকাতা থেকে মজঃফরপুর। ব্রিটিশরা ভেবেছিল, মজঃফরপরে গিয়ে বিপ্লবীরা কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে পারবে না। কিন্তু বিপ্লবীদের গতি প্র��ৃতি সম্পর্কে ইংরেজদের কোন ধারণাই ছিল না। প্রফুল্ল এবং ক্ষুদিরামকে মজঃফরপুরে পাঠানো হল। তারা একটা ধর্মশালায় উঠে কয়েক দিন কাটালেন। কিংসফোর্ডের ওপর নজর রাখলেন।
ইউরোপীয় ক্লাবের কাছে কিংসফোর্ডের আবাস। ওই ক্লাবে নিয়মিত আসা ছাড়া তিনি অন্য কোথাও যান না। বেশ বোঝা যাচ্ছে, তার গতিবিধির ওপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা হয়েছে। তিনিও বোধহয় সম্ভাব্য আক্রমণের ভয়ে ভীত।।
প্রফুল্ল এবং ক্ষুদিরাম ওই ইউরোপীয় ক্লাবের কাছে আত্মগোপন করে থাকলেন।
১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল। রাত্রি সাড়ে আটটার সময়। কিংসফোর্ডের ফিটন গাড়িকে গেট দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল।
সঙ্গে সঙ্গে চোখে চোখে কথা হল দুই বীপ্লবী ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্লচাকির। বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। একরাশ ধোঁয়ার কুণ্ডলির মধ্যে বিধ্বস্ত ফিটন উল্টে পড়ে গেল।
বিপ্লবী দুজনের মুখে অলৌকিক হাসি। যাক, শেষ পর্যন্ত অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য প্রফুল্ল এবং ক্ষুদিরামের, এবারেও তাদের লক্ষ্য সফল হল না। সেদিন ভাগ্যগুণে রক্ষা পেলেন কিংসফোর্ড। গাড়িতে তিনি ছিলেন না। ছিলেন মিসেস ও মিস কেনেডি।
প্রফুল্ল এবং ক্ষুদিরাম ভুল করে তাদের হত্যা করলেন। বােমা নিক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে তারা, রেললাইন ধরে এগিয়ে গেলেন।
কেউ কারো পরিচয় জানতেন না। বিপ্লবী দলের মন্ত্রগুপ্তি অনুসরণ করে ক্ষুদিরাম জানতেন যে, তার সঙ্গীর নাম দীনেশ রায়। আর প্রফুল্ল জানতেন যে, ক্ষুদিরাম হরেন সরকার ছাড়া আর কেউ নন।
প্রফুল্ল দৌড়ে ছিলে��� ৪০ মাইল দূরবর্তী সমস্তিপুরের দিকে। ক্ষুদিরাম চলে গিয়েছিলেন ওয়াইনি স্টেশনের দিকে। ওয়াইনি স্টেশনে পৌঁছে ক্ষুদিরাম ধরা পড়লেন দুই কনেস্টেবল ফতে সিং আর শিবপ্রসাদ মিশ্রর হাতে।
প্রফুল্ল নিরাপদেই সমস্তিপুর রেল কোয়ার্টারের পাশে এসে দাঁড়ালেন। যেন কিছুই হয়নি এমন ভান করে হেটে চললেন স্টেশনের দিকে।
এমন সময় বাধা দিলেন এক সুপুরুষ বাঙালি যুবক। প্রফুল্লকে বারণ করলেন এখন স্টেশনের দিকে যেতে। বাঙালি যুবকের আগ্রহ দেখে কেমন সন্দেহ হল প্রফুল্ল চাকির। ভদ্রলোক বললেন—এখন আপনি আমার সঙ্গে আসুন সময় হলেই আমি আপনাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে আসব।
অচেনা যুবকের আগ্রহ লক্ষ্য করে সতর্ক হলেন প্রফুল্ল। পকেটে রাখা পিস্তলে হাত ছোঁয়ালেন তিনি। যুবকের সহজ সরল আন্তরিকতাকে উপেক্ষা করতে পারেননি প্রফুল্ল। অচেনা যুবকটি মুখে কোনো কৌতুহল প্রকাশ করলেন না। তিনি প্রফুল্লর আসল পরিচয় বুঝতে পেরেছিলেন। একজন। বাঙালী হিসেবে কর্তব্যজ্ঞানে মুক্তিকামী প্রফুলকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন।
ওই ভদ্রলোক নতুন কাপড় ও জুতো কিনে এনে দ���লেন প্রফুল্লকে। বিধ্বস্ত রাত জাগা ক্লান্ত অবসন্ন চেহারা, তার ওপর খালি ��া। চারিদিকে ধুলো ময়লার ছোপ লেগেছে। প্রথম দেখাতেই পুলিশের সন্দেহ হতে পারে। তাই ওই ভদ্রলোক প্রফুল্লর পোশাক পরিচ্ছদ একেবারে পালটে দিলেন।
নিজের আস্তানাতে প্রফুল্লকে সারাদিন রেখে দিলেন। সন্ধ্যের পর সব দিক দেখে সতর্কভাবে প্রফুল্লকে পৌঁছে দিলেন স্টেশনে। একান্ত আপনজনের মতো প্রফুল্লর শুভ কামনা করলেন।
দেশপ্রেমিককে যে ভালবাসে সাহায্য করে সে যে নিজেও একজন দেশপ্রেমিক স্বাধীনতার পূজারী তাতে আর সন্দেহ কি। পরে এই দেশপ্রেমিক যুবকের পরিচয় জানা গিয়েছিল। তার নাম ত্রিগুণাচন ঘোষ।
সেদিন যদি ওই ভদ্রলোক নিজে থেকে প্রফুল্লকে সাহায্য না করতেন তা হলে হয়তো প্রফুল্ল আগেই ধরা পড়ে যেতেন। প্ল্যাটফর্মে তখন কলকাতার ট্রেনের জন্য মানুষের ভিড় জমেছে। প্রফুল্ল
মোকামাঘাটের একটা টিকিট কিনলেন। প্ল্যাটফর্মের এককোণে গিয়ে বেঞ্চে বসে পড়লেন। মনের ভেতর নানা প্রশ্ন। ক্ষুদিরামের অবস্থা কী তিনি জানেন না।
সেদিন প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত ছিলেন সিংভূমের কুখ্যাত পুলিশ সাব ইন্সপেক্টার নন্দলাল ব্যানার্জী। ছুটি ভোগ করার পর আবার কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছিলেন।
প্রফুল্লর পায়ে নতুন জুতো দেখে কেমন যেন সন্দেহ হল নন্দলালের। এগিয়ে এসে প্রফুল্লর সঙ্গে আলাপ জমাবার চেষ্টা করলেন। কথায় কথায় বিপ্লবীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেন। নন্দলালের আচরণ দেখে প্রফুল্ল সন্দেহ করতে পারলেন না, কথা বলতে ভালো লাগছে না, তবুও কথা বলতে হচ্ছে। নন্দলাল ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন। সুদক্ষ পুলিশ অফিসার। পেটের কথা আদায় করতে জানেন। তিনি বললেন যে, ভোর রাতে শহরের ব্যারিস্টার কেনেডি সাহেবের গাড়িতে বোমা ছোড়া হয়েছে। মিসেস এবং মিস কেনেডি মারা গেছেন।
খবরটা কানে যেতেই চমকে উঠলেন প্রফুল্ল। হায়, আমাদের এত দিনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল ! তার মানে ? কিংসফোর্ড মারা যাননি! আমরা দুই অসহায় নিরাপরাধ নারীকে হত্যা করেছি।
প্রফুল্লর এই ভাবান্তর চোখ এড়ায়নি নন্দলালের। সন্দেহ ঘনীভুত হলো। নন্দলাল জানেন, ইতিমধ্যে একজন আততায়ী ওয়াইনিতে ধরা পরেছে। অন্যজন পলাতক। নন্দলাল বুঝতে পারলেন, বোধ হয় এই সেই পলাতক আততায়ী। তাহলে? নন্দলাল-এর লোভী মন আনন্দে নেচে উঠল। পলাতক আসামিকে ধরতে পারলে সরকার বাহাদুরের কাছ থেকে মোটা টাকা ইনকাম পাওয়া যাবে।
নন্দলাল-এর হাবভাব দেখে বিরক্ত বোধ করেন প্রফুল্ল । গাড়ী এসে গেছে। প্রফুল্ল ও নন্দলাল কামড়াতে উঠলেন। প্রফুল্ল পাশের কামড়াতে যাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু নন্দলাল তাকে ছাড়ল না।
অল্প সময়ের মধ্যে তিনি প্রফুল্লকে গ্রেফ��ার করার অনুমতি আনিয়ে নিয়েছেন। প্রফুল্লকে গ্রেফতার করতে গিয়ে প্রফুল্ল বলেছিলেন -- ছি, এই আপনার কাজ, একজন বাঙালি হয়ে একজন বাঙালি কে ধরিয়ে দিচ্ছেন।
এই কথা বলে প্রফুল্ল পালাবার চেষ্টা করলেন। দৌড়ে যেতে যেতে প্ল্যাটফর্মের শেষে পাহারাওলার হাতে ধরা পরে গেলেন। প্রফুল্ল রিভলবার বের করে নিজের কপাল লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেন। প্রাণহীন দেহটা প্ল্যাটফর্মের ওপর লুটিয়ে পড়ল।
প্রফুল্ল নিজের প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন যে বিপ্লবীরা কখনো মরতে ভয় পায় না।
প্রফুল্লর গুলিবিদ্ধ দেহটা মজোফপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হল। ক্ষুদিরাম দেখেই চিনতে পারলেন।
এরপর ব্রিটিশ সরকার এক পৈশাচিক কাজ করেছিল। তারা মৃতদেহ থেকে মুন্ডটা কেটে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়। বিশ্বাসঘতক নন্দলালকে উপযুক্ত শাস্তি পেতে হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সরকারি ইনাম পেয়েছেন তিনি। চাকরিতে পদোন্নতি হয়েছে।
একদিন রাত আটটা। হাতে একতারা চিঠি নিয়ে নন্দলাল চলেছে সারপেনটাইন লেন ধরে। পেছন থেকে ডাক শোনা যায় -- দাড়াও । নন্দলাল পিছন ফিরে তাকালেন। অপরিচিত তরুণদের দেখে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন---কি চাই তোমাদের?
-----তোমাকে পুরস্কার দিতে চাই।
তিনটি গুলির শব্দ, নন্দলালের মৃতদেহ পড়ে রইল গলির পথের ওপরে। সেদিন এই পুরস্কারের ব্যবস্থা যিনি করেছিলেন, তিনি হলেন দুর্ধর্ষ বিপ্লবী নেতা শ্রীশ পাল
0 notes