#BaitulMaqdis

[quransunnahdawah]

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের ভূমি একটি অত্যন্ত বরকতময় এবং পুণ্যময় স্থান। এই ভূমি ঐশী বাণী ও নবুয়তের উৎসস্থল ও ফোয়ারা। এই ভূমিতে অনেক নবী-রাসুল এসেছেন। এই সেই ভূমি, যেখান থেকে মেরাজের শুরু এবং শেষ হয়েছে, এটি আসমানের প্রবেশদ্বার।

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমিতে পরিণত করেছেন।

(সুরা : আল ইসরা, আয়াত : ১)

ইমাম ইবনে জারির আত তাবারি (রহ.) বলেন : এখানে অনন্ত ও অসীম কল্যাণ ও বরকত থাকবে।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪৪৮)

আবার কেউ কেউ বলেছেন : বরকতের অর্থ হলো এখানকার নদ-নদী, ফল-ফলাদি, নবী-রাসুল ও ওলিকুল। (ইরাবুল কোরআন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ভূমি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তার চারপাশকে বরকতময় করেছি’ (আল ইসরা, আয়াত-১) তা দ্বারা ফিলিস্তিন ও জর্দান উদ্দেশ্য।(ফাজায়িলু বাইতিল মাকদাস, পৃষ্ঠা ৪৪১)

উল্লেখ্য, হাদিসে ‘সিরিয়া বা শাম’ বলে যে ভূখণ্ডের কথা বলা হয়েছে তার ভৌগোলিক সীমানা সাম্প্রতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে সিরিয়া বলতে ফিলিস্তিন, বর্তমান সিরিয়া, জর্দান ও লেবানন অঞ্চল উদ্দেশ্য।

কোরআনে পাঁচ স্থানে ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমি বলা হয়েছে। তার মধ্যে এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো, আমি তাদের সেই দেশের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেথায় আমি বরকত নাজিল করেছিলাম এবং বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী পূর্ণ হলো, যেহেতু তারা সবর করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায় যা কিছু বানাত ও যা কিছু চরাত, তা সব আমি ধ্বংস করে দিলাম।’

(সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ১৩৭)

পবিত্র ভূমি

‘আরদে মুকাদ্দাস’ মানে হলো পবিত্র ভূমি।

আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) বলেন : বায়তুল মাকদিস হলো শিরক ও কুফর থেকে পবিত্র স্থানের নাম।

(তাফসিরে রাগিব ইস্পাহানি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩৬)

আল্লামা যুজাজ (রহ.) বলেন : পবিত্র ভূমি বলতে দামেস্ক, ফিলিস্তিন এবং জর্দানের কিছু অংশকে বোঝানো হয়েছে। (মাআনিল কোরআন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬২)

আল্লামা তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন : ‘পবিত্র ভূমি’ দ্বারা শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুল পাঠানোর জন্য এ ভূমিকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই একে ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে।(তাফসিরে তাওযীহুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

হাশরের ভূমি

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে ‘হাশরের ভূমি’ বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই কিতাবের অধিকারীদের মধ্যে যারা কাফির তাদের প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে ��চ্ছেদ করেছেন।’

(সুরা : আল হাশর, আয়াত : ২)

এখানে ‘প্রথম সমাবেশ’ বলতে শাম দেশে এই ইহুদিদের সমবেত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, যখন নবী কারীম (সা.) মদিনা থেকে বনু নাজিরকে নির্বাসিত করেছিলেন। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২৩, পৃষ্ঠা ২৬২)

আল্লামা জুহরি (রহ.) থেকে বর্ণিত যে প্রথম সমবেতভাবে পৃথিবীতে তাদের নির্বাসন হয়েছিল শামের ভূমিতে। (প্রাগুক্ত)

কোনো বিশেষণ ছাড়াই ফিলিস্তিনের আলোচনা

কোরআনের অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনের ভূমির কথা কোনোরূপ বিশেষণ ছাড়াই বলা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘আমি (আল্লাহ) কিতাবে মীমাংসা দান করে বনি ইসরাঈলকে অবহিত করেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঘোর অহংকার প্রদর্শন করবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪)

আল্লামা শাওকানী (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন যে এখানে ‘পৃথিবী’ বলতে শাম ও বায়তুল মাকদিসকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৯)

অন্য আয়াতে এসেছে, শপথ ‘তীন’ (ডুমুর) ও ‘জায়তুন’ (জলপাই) বৃক্ষের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তুর পর্বতের। (সুরা : আত ত্বিন, আয়াত : ১, ২)

অধিকাংশ তাফসিরবিশারদ বলেন : এখানে ‘তীন’ ও ‘জায়তুন’ দ্বারা সে স্থান বোঝানো হয়েছে, যেখানে এ বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে শাম দেশ ও ফিলিস্তিন, যা নবীদের আবাসভূমি। (আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

ফিলিস্তিনের কতিপয় অঞ্চলের বিবৃতি

কোরআনে ফিলিস্তিনের কতিপয় এলাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—

১. এবং আমি মরিয়মের পুত্র ও তার মাকে (অর্থাৎ ঈসা ও মরিয়ম আলাইহিমাস সালামকে) বানিয়েছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদের এমন এক উচ্চভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, যা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং যেখানে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ পানি।

(সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০)

এখানে ‘উচ্চভূমি’ দ্বারা ‘রামলাহ’ উদ্দেশ্য, যা ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চলের নাম। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫৩)

২. অতঃপর এই ঘটল যে মরিয়ম সেই শিশুকে গর্ভে ধারণ করল (এবং যখন জন্মের সময় কাছে এসে গেল) তখন সে তাকে নিয়ে দূরে এক নিভৃত স্থানে চলে গেল।

(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২)

মুফাসসিররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে মরিয়ম (আ.) গর্ভবতী হলে দূরবর্তী স্থানে চলে যান। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : তিনি আল আকসা উপত্যকায় গিয়েছিলেন আর এটিই হলো ‘বেথলেহেম’। ‘বেথলেহেম’ এবং ‘ইলিয়া’ এর মধ্যে চার মাইল দূরত্ব রয়েছে। আর ‘ইলিয়া’-এর অপর নাম হলো বায়তুল মাকদিস। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৪৯২)

৩. এবং (সেই কথাও স্মরণ করো) যখন আমি বলেছিলাম, এই জনপদে প্রবেশ করো এবং তার যেখান থেকে ইচ্ছা প্রাণভরে খাও। আর (জনপদের) প্রবেশদ্বার দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করবে আর বলতে থাকবে, (হে আল্লাহ!) আমরা আপ��ার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। (এভাবে) আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করব এবং পুণ্যবানদের আরো বেশি (সওয়াব) দেব। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ৫৮)

এই জনপদের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে, এখানে ‘জনপদ’ মানে বায়তুল মাকদিস।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : এখানে ‘দরজা’ বলতে বায়তুল মাকদিসের ‘বাবে হুত্তা’ উদ্দেশ্য।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৩)

৪. অতঃপর তালুত যখন সৈন্যদের সঙ্গে রওনা হলো, তখন সে (সৈন্যদের) বলল, আল্লাহ একটি নদীর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ২৪৯)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে এখানে নদী বলতে জর্দান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী নদীকে বোঝানো হয়েছে।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫৯)

৫. একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ারা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়ো, পাছে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের যাতে পিষে না ফেলে।

(সুরা : আন নামল, আয়াত : ১৮)

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন : এখানে ‘পিঁপড়ার উপত্যকা’ দ্বারা ‘শামের উপত্যকা’কে বোঝানো, যেখানে পিঁপড়ার আধিক্য বেশি আর এটি ‘আসকেলন (Ashkelon)’  উপত্যকার আশপাশে অবস্থিত।

(মাফাতিহুল গায়েব, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

এই পবিত্র ভূমি, যার পবিত্রতা ও বরকত পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে, মুসলমান হিসেবে যার উত্তরাধিকার পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভূমি মুসলমানদের দ্বারা অত্যন্ত বরকতময় ও পবিত্রতার আবরণে শাসিত হয়েছে;  কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে গেছি, যার কারণে ইসরায়েলের অপবিত্র ইহুদিরা এই পবিত্র ও পুণ্য ভূমি জবরদখল করে এখানকার মুসলিমদের ওপর বর্বর ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং হামলা চালাচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত এর পবিত্রতা বুঝে এই পবিত্র স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন মুসলিমদের হেফাজত করুন ও বিজয় দান করুন। আমিন।

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

Palestine in the Quran

 ফিলিস্তিন কোরআনে

[tawhidrisalatakhirah]

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের ভূমি একটি অত্যন্ত বরকতময় এবং পুণ্যময় স্থান। এই ভূমি ঐশী বাণী ও নবুয়তের উৎসস্থল ও ফোয়ারা। এই ভূমিতে অনেক নবী-রাসুল এসেছেন। এই সেই ভূমি, যেখান থেকে মেরাজের শুরু এবং শেষ হয়েছে, এটি আসমানের প্রবেশদ্বার।

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমিতে পরিণত করেছেন।

(সুরা : আল ইসরা, আয়াত : ১)

ইমাম ইবনে জারির আত তাবারি (রহ.) বলেন : এখানে অনন্ত ও অসীম কল্যাণ ও বরকত থাকবে।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪৪৮)

আবার কেউ কেউ বলেছেন : বরকতের অর্থ হলো এখানকার নদ-নদী, ফল-ফলাদি, নবী-রাসুল ও ওলিকুল। (ইরাবুল কোরআন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ভূমি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তার চারপাশকে বরকতময় করেছি’ (আল ইসরা, আয়াত-১) তা দ্বারা ফিলিস্তিন ও জর্দান উদ্দেশ্য।(ফাজায়িলু বাইতিল মাকদাস, পৃষ্ঠা ৪৪১)

উল্লেখ্য, হাদিসে ‘সিরিয়া বা শাম’ বলে যে ভূখণ্ডের কথা বলা হয়েছে তার ভৌগোলিক সীমানা সাম্প্রতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে সিরিয়া বলতে ফিলিস্তিন, বর্তমান সিরিয়া, জর্দান ও লেবানন অঞ্চল উদ্দেশ্য।

কোরআনে পাঁচ স্থানে ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমি বলা হয়েছে। তার মধ্যে এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো, আমি তাদের সেই দেশের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেথায় আমি বরকত নাজিল করেছিলাম এবং বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী পূর্ণ হলো, যেহেতু তারা সবর করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায় যা কিছু বানাত ও যা কিছু চরাত, তা সব আমি ধ্বংস করে দিলাম।’

(সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ১৩৭)

পবিত্র ভূমি

‘আরদে মুকাদ্দাস’ মানে হলো পবিত্র ভূমি।

আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) বলেন : বায়তুল মাকদিস হলো শিরক ও কুফর থেকে পবিত্র স্থানের নাম।

(তাফসিরে রাগিব ইস্পাহানি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩৬)

আল্লামা যুজাজ (রহ.) বলেন : পবিত্র ভূমি বলতে দামেস্ক, ফিলিস্তিন এবং জর্দানের কিছু অংশকে বোঝানো হয়েছে। (মাআনিল কোরআন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬২)

আল্লামা তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন : ‘পবিত্র ভূমি’ দ্বারা শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুল পাঠানোর জন্য এ ভূমিকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই একে ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে।(তাফসিরে তাওযীহুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

হাশরের ভূমি

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে ‘হাশরের ভূমি’ বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই কিতাবের অধিকারীদের মধ্যে যারা কাফির তাদের প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন।’

(সুরা : আল হাশর, আয়াত : ২)

এখানে ‘প্রথম সমাবেশ’ বলতে শাম দেশে এই ইহুদিদের সমবেত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, যখন নবী কারীম (সা.) মদিনা থেকে বনু নাজিরকে নির্বাসিত করেছিলেন। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২৩, পৃষ্ঠা ২৬২)

আল্লামা জুহরি (রহ.) থেকে বর্ণিত যে প্রথম সমবেতভাবে পৃথিবীতে তাদের নির্বাসন হয়েছিল শামের ভূমিতে। (প্রাগুক্ত)

কোনো বিশেষণ ছাড়াই ফিলিস্তিনের আলোচনা

কোরআনের অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনের ভূমির কথা কোনোরূপ বিশেষণ ছাড়াই বলা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘আমি (আল্লাহ) কিতাবে মীমাংসা দান করে বনি ইসরাঈলকে অবহিত করেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঘোর অহংকার প্রদর্শন করবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪)

আল্লামা শাওকানী (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন যে এখানে ‘পৃথিবী’ বলতে শাম ও বায়তুল মাকদিসকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৯)

অন্য আয়াতে এসেছে, শপথ ‘তীন’ (ডুমুর) ও ‘জায়তুন’ (জলপাই) বৃক্ষের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তুর পর্বতের। (সুরা : আত ত্বিন, আয়াত : ১, ২)

অধিকাংশ তাফসিরবিশারদ বলেন : এখানে ‘তীন’ ও ‘জায়তুন’ দ্বারা সে স্থান বোঝানো হয়েছে, যেখানে এ বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে শাম দেশ ও ফিলিস্তিন, যা নবীদের আবাসভূমি। (আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

ফিলিস্তিনের কতিপয় অঞ্চলের বিবৃতি

কোরআনে ফিলিস্তিনের কতিপয় এলাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—

১. এবং আমি মরিয়মের পুত্র ও তার মাকে (অর্থাৎ ঈসা ও মরিয়ম আলাইহিমাস সালামকে) বানিয়েছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদের এমন এক উচ্চভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, যা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং যেখানে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ পানি।

(সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০)

এখানে ‘উচ্চভূমি’ দ্বারা ‘রামলাহ’ উদ্দেশ্য, যা ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চলের নাম। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫৩)

২. অতঃপর এই ঘটল যে মরিয়ম সেই শিশুকে গর্ভে ধারণ করল (এবং যখন জন্মের সময় কাছে এসে গেল) তখন সে তাকে নিয়ে দূরে এক নিভৃত স্থানে চলে গেল।

(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২)

মুফাসসিররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে মরিয়ম (আ.) গর্ভবতী হলে দূরবর্তী স্থানে চলে যান। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : তিনি আল আকসা উপত্যকায় গিয়েছিলেন আর এটিই হলো ‘বেথলেহেম’। ‘বেথলেহেম’ এবং ‘ইলিয়া’ এর মধ্যে চার মাইল দূরত্ব রয়েছে। আর ‘ইলিয়া’-এর অপর নাম হলো বায়তুল মাকদিস। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৪৯২)

৩. এবং (সেই কথাও স্মরণ করো) যখন আমি বলেছিলাম, এই জনপদে প্রবেশ করো এবং তার যেখান থেকে ইচ্ছা প্রাণভরে খাও। আর (জনপদের) প্রবেশদ্বার দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করবে আর বলতে থাকবে, (হে আল্লাহ!) আমরা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। (এভাবে) আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করব এবং পুণ্যবানদের আরো বেশি (সওয়াব) দেব। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ৫৮)

এই জনপদের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে, এখানে ‘জনপদ’ মানে বায়তুল মাকদিস।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : এখানে ‘দরজা’ বলতে বায়তুল মাকদিসের ‘বাবে হুত্তা’ উদ্দেশ্য।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৩)

৪. অতঃপর তালুত যখন সৈন্যদের সঙ্গে রওনা হলো, তখন সে (সৈন্যদের) বলল, আল্লাহ একটি নদীর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ২৪৯)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে এখানে নদী বলতে জর্দান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী নদীকে বোঝানো হয়েছে।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫৯)

৫. একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ারা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়ো, পাছে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের যাতে পিষে না ফেলে।

(সুরা : আন না��ল, আয়াত : ১৮)

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন : এখানে ‘পিঁপড়ার উপত্যকা’ দ্বারা ‘শামের উপত্যকা’কে বোঝানো, যেখানে পিঁপড়ার আধিক্য বেশি আর এটি ‘আসকেলন (Ashkelon)’  উপত্যকার আশপাশে অবস্থিত।

(মাফাতিহুল গায়েব, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

এই পবিত্র ভূমি, যার পবিত্রতা ও বরকত পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে, মুসলমান হিসেবে যার উত্তরাধিকার পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভূমি মুসলমানদের দ্বারা অত্যন্ত বরকতময় ও পবিত্রতার আবরণে শাসিত হয়েছে;  কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে গেছি, যার কারণে ইসরায়েলের অপবিত্র ইহুদিরা এই পবিত্র ও পুণ্য ভূমি জবরদখল করে এখানকার মুসলিমদের ওপর বর্বর ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং হামলা চালাচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত এর পবিত্রতা বুঝে এই পবিত্র স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন মুসলিমদের হেফাজত করুন ও বিজয় দান করুন। আমিন।

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

Palestine in the Quran

 ফিলিস্তিন কোরআনে

[ilyforallahswt]

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের ভূমি একটি অত্যন্ত বরকতময় এবং পুণ্যময় স্থান। এই ভূমি ঐশী বাণী ও নবুয়তের উৎসস্থল ও ফোয়ারা। এই ভূমিতে অনেক নবী-রাসুল এসেছেন। এই সেই ভূমি, যেখান থেকে মেরাজের শুরু এবং শেষ হয়েছে, এটি আসমানের প্রবেশদ্বার।

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমিতে পরিণত করেছেন।

(সুরা : আল ইসরা, আয়াত : ১)

ইমাম ইবনে জারির আত তাবারি (রহ.) বলেন : এখানে অনন্ত ও অসীম কল্যাণ ও বরকত থাকবে।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪৪৮)

আবার কেউ কেউ বলেছেন : বরকতের অর্থ হলো এখানকার নদ-নদী, ফল-ফলাদি, নবী-রাসুল ও ওলিকুল। (ইরাবুল কোরআন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ভূমি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তার চারপাশকে বরকতময় করেছি’ (আল ইসরা, আয়াত-১) তা দ্বারা ফিলিস্তিন ও জর্দান উদ্দেশ্য।(ফাজায়িলু বাইতিল মাকদাস, পৃষ্ঠা ৪৪১)

উল্লেখ্য, হাদিসে ‘সিরিয়া বা শাম’ বলে যে ভূখণ্ডের কথা বলা হয়েছে তার ভৌগোলিক সীমানা সাম্প্রতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে সিরিয়া বলতে ফিলিস্তিন, বর্তমান সিরিয়া, জর্দান ও লেবানন অঞ্চল উদ্দেশ্য।

কোরআনে পাঁচ স্থানে ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমি বলা হয়েছে। তার মধ্যে এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো, আমি তাদের সেই দেশের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেথায় আমি বরকত নাজিল করেছিলাম এবং বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী পূর্ণ হলো, যেহেতু তারা সবর করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায় যা কিছু বানাত ও যা কিছু চরাত, তা সব আমি ধ্বংস করে দিলাম।’

(সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ১৩৭)

পবিত্র ভূমি

‘আরদে মুকাদ্দাস’ মানে হলো পবিত্র ভূমি।

আল্লামা রাগি��� ইস্পাহানি (রহ.) বলেন : বায়তুল মাকদিস হলো শিরক ও কুফর থেকে পবিত্র স্থানের নাম।

(তাফসিরে রাগিব ইস্পাহানি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩৬)

আল্লামা যুজাজ (রহ.) বলেন : পবিত্র ভূমি বলতে দামেস্ক, ফিলিস্তিন এবং জর্দানের কিছু অংশকে বোঝানো হয়েছে। (মাআনিল কোরআন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬২)

আল্লামা তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন : ‘পবিত্র ভূমি’ দ্বারা শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুল পাঠানোর জন্য এ ভূমিকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই একে ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে।(তাফসিরে তাওযীহুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

হাশরের ভূমি

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে ‘হাশরের ভূমি’ বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই কিতাবের অধিকারীদের মধ্যে যারা কাফির তাদের প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন।’

(সুরা : আল হাশর, আয়াত : ২)

এখানে ‘প্রথম সমাবেশ’ বলতে শাম দেশে এই ইহুদিদের সমবেত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, যখন নবী কারীম (সা.) মদিনা থেকে বনু নাজিরকে নির্বাসিত করেছিলেন। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২৩, পৃষ্ঠা ২৬২)

আল্লামা জুহরি (রহ.) থেকে বর্ণিত যে প্রথম সমবেতভাবে পৃথিবীতে তাদের নির্বাসন হয়েছিল শামের ভূমিতে। (প্রাগুক্ত)

কোনো বিশেষণ ছাড়াই ফিলিস্তিনের আলোচনা

কোরআনের অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনের ভূমির কথা কোনোরূপ বিশেষণ ছাড়াই বলা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘আমি (আল্লাহ) কিতাবে মীমাংসা দান করে বনি ইসরাঈলকে অবহিত করেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঘোর অহংকার প্রদর্শন করবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪)

আল্লামা শাওকানী (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন যে এখানে ‘পৃথিবী’ বলতে শাম ও বায়তুল মাকদিসকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৯)

অন্য আয়াতে এসেছে, শপথ ‘তীন’ (ডুমুর) ও ‘জায়তুন’ (জলপাই) বৃক্ষের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তুর পর্বতের। (সুরা : আত ত্বিন, আয়াত : ১, ২)

অধিকাংশ তাফসিরবিশারদ বলেন : এখানে ‘তীন’ ও ‘জায়তুন’ দ্বারা সে স্থান বোঝানো হয়েছে, যেখানে এ বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে শাম দেশ ও ফিলিস্তিন, যা নবীদের আবাসভূমি। (আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

ফিলিস্তিনের কতিপয় অঞ্চলের বিবৃতি

কোরআনে ফিলিস্তিনের কতিপয় এলাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—

১. এবং আমি মরিয়মের পুত্র ও তার মাকে (অর্থাৎ ঈসা ও মরিয়ম আলাইহিমাস সালামকে) বানিয়েছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদের এমন এক উচ্চভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, যা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং যেখানে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ পানি।

(সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০)

এখানে ‘উচ্চভূমি’ দ্বারা ‘রামলাহ’ উদ্দেশ্য, যা ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চলের নাম। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫৩)

২. অতঃপর এই ঘটল যে মরিয়ম সেই শিশুকে গর্ভে ধারণ করল (এবং যখন জন্মের সময় কাছে এসে গেল) তখন সে তাকে নিয়ে দূরে এক নিভৃত স্থানে চলে গেল।

(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২)

মুফাসসিররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে মরিয়ম (আ.) গর্ভবতী হলে দূরবর্তী স্থানে চলে যান। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : তিনি আল আকসা উপত্যকায় গিয়েছিলেন আর এটিই হলো ‘বেথলেহেম’। ‘বেথলেহেম’ এবং ‘ইলিয়া’ এর মধ্যে চার মাইল দূরত্ব রয়েছে। আর ‘ইলিয়া’-এর অপর নাম হলো বায়তুল মাকদিস। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৪৯২)

৩. এবং (সেই কথাও স্মরণ করো) যখন আমি বলেছিলাম, এই জনপদে প্রবেশ করো এবং তার যেখান থেকে ইচ্ছা প্রাণভরে খাও। আর (জনপদের) প্রবেশদ্বার দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করবে আর বলতে থাকবে, (হে আল্লাহ!) আমরা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। (এভাবে) আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করব এবং পুণ্যবানদের আরো বেশি (সওয়াব) দেব। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ৫৮)

এই জনপদের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে, এখানে ‘জনপদ’ মানে বায়তুল মাকদিস।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : এখানে ‘দরজা’ বলতে বায়তুল মাকদিসের ‘বাবে হুত্তা’ উদ্দেশ্য।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৩)

৪. অতঃপর তালুত যখন সৈন্যদের সঙ্গে রওনা হলো, তখন সে (সৈন্যদের) বলল, আল্লাহ একটি নদীর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ২৪৯)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে এখানে নদী বলতে জর্দান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী নদীকে বোঝানো হয়েছে।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫৯)

৫. একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ারা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়ো, পাছে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের যাতে পিষে না ফেলে।

(সুরা : আন নামল, আয়াত : ১৮)

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন : এখানে ‘পিঁপড়ার উপত্যকা’ দ্বারা ‘শামের উপত্যকা’কে বোঝানো, যেখানে পিঁপড়ার আধিক্য বেশি আর এটি ‘আসকেলন (Ashkelon)’  উপত্যকার আশপাশে অবস্থিত।

(মাফাতিহুল গায়েব, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

এই পবিত্র ভূমি, যার পবিত্রতা ও বরকত পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে, মুসলমান হিসেবে যার উত্তরাধিকার পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভূমি মুসলমানদের দ্বারা অত্যন্ত বরকতময় ও পবিত্রতার আবরণে শাসিত হয়েছে;  কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে গেছি, যার কারণে ইসরায়েলের অপবিত্র ইহুদিরা এই পবিত্র ও পুণ্য ভূমি জবরদখল করে এখানকার মুসলিমদের ওপর বর্বর ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং হামলা চালাচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত এর পবিত্রতা বুঝে এই পবিত্র স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন মুসলিমদের হেফাজত করুন ও বিজয় দান করুন। আমিন।

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

Palestine in the Quran

 ফিলিস্তিন কোরআনে

[myreligionislam]

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের ভূমি একটি অত্যন্ত বরকতময় এবং পুণ্যময় স্থান। এই ভূমি ঐশী বাণী ও নবুয়তের উৎসস্থল ও ফোয়ারা। এই ভূমিতে অনেক নবী-রাসুল এসেছেন। এই সেই ভূমি, যেখান থেকে মেরাজের শুরু এবং শেষ হয়েছে, এটি আসমানের প্রবেশদ্বার।

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমিতে পরিণত করেছেন।

(সুরা : আল ইসরা, আয়াত : ১)

ইমাম ইবনে জারির আত তাবারি (রহ.) বলেন : এখানে অনন্ত ও অসীম কল্যাণ ও বরকত থাকবে।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪৪৮)

আবার কেউ কেউ বলেছেন : বরকতের অর্থ হলো এখানকার নদ-নদী, ফল-ফলাদি, নবী-রাসুল ও ওলিকুল। (ইরাবুল কোরআন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ভূমি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তার চারপাশকে বরকতময় করেছি’ (আল ইসরা, আয়াত-১) তা দ্বারা ফিলিস্তিন ও জর্দান উদ্দেশ্য।(ফাজায়িলু বাইতিল মাকদাস, পৃষ্ঠা ৪৪১)

উল্লেখ্য, হাদিসে ‘সিরিয়া বা শাম’ বলে যে ভূখণ্ডের কথা বলা হয়েছে তার ভৌগোলিক সীমানা সাম্প্রতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে সিরিয়া বলতে ফিলিস্তিন, বর্তমান সিরিয়া, জর্দান ও লেবানন অঞ্চল উদ্দেশ্য।

কোরআনে পাঁচ স্থানে ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমি বলা হয়েছে। তার মধ্যে এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো, আমি তাদের সেই দেশের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেথায় আমি বরকত নাজিল করেছিলাম এবং বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী পূর্ণ হলো, যেহেতু তারা সবর করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায় যা কিছু বানাত ও যা কিছু চরাত, তা সব আমি ধ্বংস করে দিলাম।’

(সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ১৩৭)

পবিত্র ভূমি

‘আরদে মুকাদ্দাস’ মানে হলো পবিত্র ভূমি।

আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) বলেন : বায়তুল মাকদিস হলো শিরক ও কুফর থেকে পবিত্র স্থানের নাম।

(তাফসিরে রাগিব ইস্পাহানি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩৬)

আল্লামা যুজাজ (রহ.) বলেন : পবিত্র ভূমি বলতে দামেস্ক, ফিলিস্তিন এবং জর্দানের কিছু অংশকে বোঝানো হয়েছে। (মাআনিল কোরআন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬২)

আল্লামা তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন : ‘পবিত্র ভূমি’ দ্বারা শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুল পাঠানোর জন্য এ ভূমিকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই একে ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে।(তাফসিরে তাওযীহুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

হাশরের ভূমি

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে ‘হাশরের ভূমি’ বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই কিতাবের অধিকারীদের মধ্যে যারা কাফির তাদের প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন।’

(সুরা : আল হাশর, আয়াত : ২)

এখানে ‘প্রথম সমাবেশ’ বলতে শাম দেশে এই ইহুদিদের সমবেত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, যখন নবী কারীম (সা.) মদিনা থেকে বনু নাজিরকে নির্বাসিত করেছিলেন। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২৩, পৃষ্ঠা ২৬২)

আল্লামা জুহরি (রহ.) থেকে বর্ণিত যে প্রথম সমবেতভাবে পৃথিবীতে তাদের নির্বাসন হয়েছিল শামের ভূমিতে। (প্রাগুক্ত)

কোনো বিশেষণ ছাড়াই ফিলিস্তিনের আলোচনা

কোরআনের অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনের ভূমির কথা কোনোরূপ বিশেষণ ছাড়াই বলা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘আমি (আল্লাহ) কিতাবে মীমাংসা দান করে বনি ইসরাঈলকে অবহিত করেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঘোর অহংকার প্রদর্শন করবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪)

আল্লামা শাওকানী (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন যে এখানে ‘পৃথিবী’ বলতে শাম ও বায়তুল মাকদিসকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৯)

অন্য আয়াতে এসেছে, শপথ ‘তীন’ (ডুমুর) ও ‘জায়তুন’ (জলপাই) বৃক্ষের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তুর পর্বতের। (সুরা : আত ত্বিন, আয়াত : ১, ২)

অধিকাংশ তাফসিরবিশারদ বলেন : এখানে ‘তীন’ ও ‘জায়তুন’ দ্বারা সে স্থান বোঝানো হয়েছে, যেখানে এ বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে শাম দেশ ও ফিলিস্তিন, যা নবীদের আবাসভূমি। (আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

ফিলিস্তিনের কতিপয় অঞ্চলের বিবৃতি

কোরআনে ফিলিস্তিনের কতিপয় এলাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—

১. এবং আমি মরিয়মের পুত্র ও তার মাকে (অর্থাৎ ঈসা ও মরিয়ম আলাইহিমাস সালামকে) বানিয়েছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদের এমন এক উচ্চভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, যা ছিল শান্তি���ূর্ণ এবং যেখানে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ পানি।

(সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০)

এখানে ‘উচ্চভূমি’ দ্বারা ‘রামলাহ’ উদ্দেশ্য, যা ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চলের নাম। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫৩)

২. অতঃপর এই ঘটল যে মরিয়ম সেই শিশুকে গর্ভে ধারণ করল (এবং যখন জন্মের সময় কাছে এসে গেল) তখন সে তাকে নিয়ে দূরে এক নিভৃত স্থানে চলে গেল।

(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২)

মুফাসসিররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে মরিয়ম (আ.) গর্ভবতী হলে দূরবর্তী স্থানে চলে যান। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : তিনি আল আকসা উপত্যকায় গিয়েছিলেন আর এটিই হলো ‘বেথলেহেম’। ‘বেথলেহেম’ এবং ‘ইলিয়া’ এর মধ্যে চার মাইল দূরত্ব রয়েছে। আর ‘ইলিয়া’-এর অপর নাম হলো বায়তুল মাকদিস। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৪৯২)

৩. এবং (সেই কথাও স্মরণ করো) যখন আমি বলেছিলাম, এই জনপদে প্রবেশ করো এবং তার যেখান থেকে ইচ্ছা প্রাণভরে খাও। আর (জনপদের) প্রবেশদ্বার দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করবে আর বলতে থাকবে, (হে আল্লাহ!) আমরা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। (এভাবে) আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করব এবং পুণ্যবানদের আরো বেশি (সওয়াব) দেব। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ৫৮)

এই জনপদের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে, এখানে ‘জনপদ’ মানে বায়তুল মাকদিস।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : এখানে ‘দরজা’ বলতে বায়তুল মাকদিসের ‘বাবে হুত্তা’ উদ্দেশ্য।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৩)

৪. অতঃপর তালুত যখন সৈন্যদের সঙ্গে রওনা হলো, তখন সে (সৈন্যদের) বলল, আল্লাহ একটি নদীর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ২৪৯)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে এখানে নদী বলতে জর্দান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী নদীকে বোঝানো হয়েছে।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫৯)

৫. একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ারা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়ো, পাছে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের যাতে পিষে না ফেলে।

(সুরা : আন নামল, আয়াত : ১৮)

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন : এখানে ‘পিঁপড়ার উপত্যকা’ দ্বারা ‘শামের উপত্যকা’কে বোঝানো, যেখানে পিঁপড়ার আধিক্য বেশি আর এটি ‘আসকেলন (Ashkelon)’  উপত্যকার আশপাশে অবস্থিত।

(মাফাতিহুল গায়েব, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

এই পবিত্র ভূমি, যার পবিত্রতা ও বরকত পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে, মুসলমান হিসেবে যার উত্তরাধিকার পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভূমি মুসলমানদের দ্বারা অত্যন্ত বরকতময় ও পবিত্রতার আবরণে শাসিত হয়েছে;  কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে গেছি, যার কারণে ইসরায়েলের অপবিত্র ইহুদিরা এই পবিত্র ও পুণ্য ভূমি জবরদখল করে এখানকার মুসলিমদের ওপর বর্বর ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং হামলা চালাচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত এর পবিত্রতা বুঝে এই পবিত্র স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন মুসলিমদের হেফাজত করুন ও বিজয় দান করুন। আমিন।

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

Palestine in the Quran

 ফিলিস্তিন কোরআনে

[mylordisallah]

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের ভূমি একটি অত্যন্ত বরকতময় এবং পুণ্যময় স্থান। এই ভূমি ঐশী বাণী ও নবুয়তের উৎসস্থল ও ফোয়ারা। এই ভূমিতে অনেক নবী-রাসুল এসেছেন। এই সেই ভূমি, যেখান থেকে মেরাজের শুরু এবং শেষ হয়েছে, এটি আসমানের প্রবেশদ্বার।

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমিতে পরিণত করেছেন।

(সুরা : আল ইসরা, আয়াত : ১)

ইমাম ইবনে জারির আত তাবারি (রহ.) বলেন : এখানে অনন্ত ও অসীম কল্যাণ ও বরকত থাকবে।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪৪৮)

আবার কেউ কেউ বলেছেন : বরকতের অর্থ হলো এখানকার নদ-নদী, ফল-ফলাদি, নবী-রাসুল ও ওলিকুল। (ইরাবুল কোরআন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ভূমি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তার চারপাশকে বরকতময় করেছি’ (আল ইসরা, আয়াত-১) তা দ্বারা ফিলিস্তিন ও জর্দান উদ্দেশ্য।(ফাজায়িলু বাইতিল মাকদাস, পৃষ্ঠা ৪৪১)

উল্লেখ্য, হাদিসে ‘সিরিয়া বা শাম’ বলে যে ভূখণ্ডের কথা বলা হয়েছে তার ভৌগোলিক সীমানা সাম্প্রতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে সিরিয়া বলতে ফিলিস্তিন, বর্তমান সিরিয়া, জর্দান ও লেবানন অঞ্চল উদ্দেশ্য।

কোরআনে পাঁচ স্থানে ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমি বলা হয়েছে। তার মধ্যে এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো, আমি তাদের সেই দেশের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেথায় আমি বরকত নাজিল করেছিলাম এবং বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী পূর্ণ হলো, যেহেতু তারা সবর করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায় যা কিছু বানাত ও যা কিছু চরাত, তা সব আমি ধ্বংস করে দিলাম।’

(সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ১৩৭)

পবিত্র ভূমি

‘আরদে মুকাদ্দাস’ মানে হলো পবিত্র ভূমি।

আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) বলেন : বায়তুল মাকদিস হলো শিরক ও কুফর থেকে পবিত্র স্থানের নাম।

(তাফসিরে রাগিব ইস্পাহানি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩৬)

আল্লামা যুজাজ (রহ.) বলেন : পবিত্র ভূমি বলতে দামেস্ক, ফিলিস্তিন এবং জর্দানের কিছু অংশকে বোঝানো হয়েছে। (মাআনিল কোরআন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬২)

আল্লামা তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন : ‘পবিত্র ভূমি’ দ্বারা শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুল পাঠানোর জন্য এ ভূমিকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই একে ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে।(তাফসিরে তাওযীহুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

হাশরের ভূমি

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে ‘হাশরের ভূমি’ বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই কিতাবের অধিকারীদের মধ্যে যারা কাফির তাদের প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন।’

(সুরা : আল হাশর, আয়াত : ২)

এখানে ‘প্রথম সমাবেশ’ বলতে শাম দেশে এই ইহুদিদের সমবেত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, যখন নবী কারীম (সা.) মদিনা থেকে বনু নাজিরকে নির্বাসিত করেছিলেন। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২৩, পৃষ্ঠা ২৬২)

আল্লামা জুহরি (রহ.) থেকে বর্ণিত যে প্রথম সমবেতভাবে পৃথিবীতে তাদের নির্বাসন হয়েছিল শামের ভূমিতে। (প্রাগুক্ত)

কোনো বিশেষণ ছাড়াই ফিলিস্তিনের আলোচনা

কোরআনের অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনের ভূমির কথা কোনোরূপ বিশেষণ ছাড়াই বলা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘আমি (আল্লাহ) কিতাবে মীমাংসা দান করে বনি ইসরাঈলকে অবহিত করেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঘোর অহংকার প্রদর্শন করবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪)

আল্লামা শাওকানী (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন যে এখানে ‘পৃথিবী’ বলতে শাম ও বায়তুল মাকদিসকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৯)

অন্য আয়াতে এসেছে, শপথ ‘তীন’ (ডুমুর) ও ‘জায়তুন’ (জলপাই) বৃক্ষের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তুর পর্বতের। (সুরা : আত ত্বিন, আয়াত : ১, ২)

অধিকাংশ তাফসিরবিশারদ বলেন : এখানে ‘তীন’ ও ‘জায়তুন’ দ্বারা সে স্থান বোঝানো হয়েছে, যেখানে এ বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে শাম দেশ ও ফিলিস্তিন, যা নবীদের আবাসভূমি। (আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

ফিলিস্তিনের কতিপয় অঞ্চলের বিবৃতি

কোরআনে ফিলিস্তিনের কতিপয় এলাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—

১. এবং আমি মরিয়মের পুত্র ও তার মাকে (অর্থাৎ ঈসা ও মরিয়ম আলাইহিমাস সালামকে) বানিয়েছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদের এমন এক উচ্চভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, যা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং যেখানে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ পানি।

(সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০)

এখানে ‘উচ্চভূমি’ দ্বারা ‘রামলাহ’ উদ্দেশ্য, যা ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চলের নাম। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫৩)

২. অতঃপর এই ঘটল যে মরিয়ম সেই শিশুকে গর্ভে ধারণ করল (এবং যখন জন্মের সময় কাছে এসে গেল) তখন সে তাকে নিয়ে দূরে এক নিভৃত স্থানে চলে গেল।

(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২)

মুফাসসিররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে মরিয়ম (আ.) গর্ভবতী হলে দূরবর্তী স্থানে চলে যান। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : তিনি আল আকসা উপত্যকায় গিয়েছিলেন আর এটিই হলো ‘বেথলেহেম’। ‘বেথলেহেম’ এবং ‘ইলিয়া’ এর মধ্যে চার মাইল দূরত্ব রয়েছে। আর ‘ইলিয়া’-এর অপর নাম হলো বায়তুল মাকদিস। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৪৯২)

৩. এবং (সেই কথাও স্মরণ করো) যখন আমি বলেছিলাম, এই জনপদে প্রবেশ করো এবং তার যেখান থেকে ইচ্ছা প্রাণভরে খাও। আর (জনপদের) প্রবেশদ্বার দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করবে আর বলতে থাকবে, (হে আল্লাহ!) আমরা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। (এভাবে) আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করব এবং পুণ্যবানদের আরো বেশি (সওয়াব) দেব। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ৫৮)

এই জনপদের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে, এখানে ‘জনপদ’ মানে বায়তুল মাকদিস।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : এখানে ‘দরজা’ বলতে বায়তুল মাকদিসের ‘বাবে হুত্তা’ উদ্দেশ্য।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৩)

৪. অতঃপর তালুত যখন সৈন্যদের সঙ্গে রওনা হলো, তখন সে (সৈন্যদের) বলল, আল্লাহ একটি নদীর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ২৪৯)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে এখানে নদী বলতে জর্দান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী নদীকে বোঝানো হয়েছে।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫৯)

৫. একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ারা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়ো, পাছে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের যাতে পিষে না ফেলে।

(সুরা : আন নামল, আয়াত : ১৮)

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন : এখানে ‘পিঁপড়ার উপত্যকা’ দ্বারা ‘শামের উপত্যকা’কে বোঝানো, যেখানে পিঁপড়ার আধিক্য বেশি আর এটি ‘আসকেলন (Ashkelon)’  উপত্যকার আশপাশে অবস্থিত।

(মাফাতিহুল গায়েব, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

এই পবিত্র ভূমি, যার পবিত্রতা ও বরকত পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে, মুসলমান হিসেবে যার উত্তরাধিকার পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হ���়েছে। এই ভূমি মুসলমানদের দ্বারা অত্যন্ত বরকতময় ও পবিত্রতার আবরণে শাসিত হয়েছে;  কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে গেছি, যার কারণে ইসরায়েলের অপবিত্র ইহুদিরা এই পবিত্র ও পুণ্য ভূমি জবরদখল করে এখানকার মুসলিমদের ওপর বর্বর ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং হামলা চালাচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত এর পবিত্রতা বুঝে এই পবিত্র স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন মুসলিমদের হেফাজত করুন ও বিজয় দান করুন। আমিন।

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

Palestine in the Quran

 ফিলিস্তিন কোরআনে

[allahisourrabb]

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

ফিলিস্তিনের ভূমি একটি অত্যন্ত বরকতময় এবং পুণ্যময় স্থান। এই ভূমি ঐশী বাণী ও নবুয়তের উৎসস্থল ও ফোয়ারা। এই ভূমিতে অনেক নবী-রাসুল এসেছেন। এই সেই ভূমি, যেখান থেকে মেরাজের শুরু এবং শেষ হয়েছে, এটি আসমানের প্রবেশদ্বার।

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমিতে পরিণত করেছেন।

(সুরা : আল ইসরা, আয়াত : ১)

ইমাম ইবনে জারির আত তাবারি (রহ.) বলেন : এখানে অনন্ত ও অসীম কল্যাণ ও বরকত থাকবে।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ৪৪৮)

আবার কেউ কেউ বলেছেন : বরকতের অর্থ হলো এখানকার নদ-নদী, ফল-ফলাদি, নবী-রাসুল ও ওলিকুল। (ইরাবুল কোরআন, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৯৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যে ভূমি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘আমি তার চারপাশকে বরকতময় করেছি’ (আল ইসরা, আয়াত-১) তা দ্বারা ফিলিস্তিন ও জর্দান উদ্দেশ্য।(ফাজায়িলু বাইতিল মাকদাস, পৃষ্ঠা ৪৪১)

উল্লেখ্য, হাদিসে ‘সিরিয়া বা শাম’ বলে যে ভূখণ্ডের কথা বলা হয়েছে তার ভৌগোলিক সীমানা সাম্প্রতিক বিভাজনের প্রেক্ষাপটে সিরিয়া বলতে ফিলিস্তিন, বর্তমান সিরিয়া, জর্দান ও লেবানন অঞ্চল উদ্দেশ্য।

কোরআনে পাঁচ স্থানে ফিলিস্তিনের ভূমিকে পুণ্য ও বরকতময় ভূমি বলা হয়েছে। তার মধ্যে এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের দুর্বল মনে করা হতো, আমি তাদের সেই দেশের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেথায় আমি বরকত নাজিল করেছিলাম এবং বনি ইসরাঈলের ব্যাপারে তোমার প্রতিপালকের শুভ বাণী পূর্ণ হলো, যেহেতু তারা সবর করেছিল; আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায় যা কিছু বানাত ও যা কিছু চরাত, তা সব আমি ধ্বংস করে দিলাম।’

(সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ১৩৭)

পবিত্র ভূমি

‘আরদে মুকাদ্দাস’ মানে হলো পবিত্র ভূমি।

আল্লামা রাগিব ইস্পাহানি (রহ.) বলেন : বায়তুল মাকদিস হলো শিরক ও কুফর থেকে পবিত্র স্থানের নাম।

(তাফসিরে রাগিব ইস্পাহানি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৬৩৬)

আল্লামা যুজাজ (রহ.) বলেন : পবিত্র ভূমি বলতে দামেস্ক, ফিলিস্তিন এবং জর্দানের কিছু অংশকে বোঝানো হয়েছে। (মাআনিল কোরআন, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬২)

আল্লামা তাকি উসমানি (দা.বা.) বলেন : ‘পবিত্র ভূমি’ দ্বারা শাম ও ফিলিস্তিন অঞ্চলকে বো��ানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা নবী-রাসুল পাঠানোর জন্য এ ভূমিকে বেছে নিয়েছিলেন। তাই একে ‘পবিত্র ভূমি’ বলা হয়েছে।(তাফসিরে তাওযীহুল কোরআন, পৃষ্ঠা ৩৩৪)

হাশরের ভূমি

আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিনের ভূমিকে ‘হাশরের ভূমি’ বলেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : ‘তিনিই কিতাবের অধিকারীদের মধ্যে যারা কাফির তাদের প্রথম সমাবেশেই তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছেন।’

(সুরা : আল হাশর, আয়াত : ২)

এখানে ‘প্রথম সমাবেশ’ বলতে শাম দেশে এই ইহুদিদের সমবেত হওয়াকে বোঝানো হয়েছে, যখন নবী কারীম (সা.) মদিনা থেকে বনু নাজিরকে নির্বাসিত করেছিলেন। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২৩, পৃষ্ঠা ২৬২)

আল্লামা জুহরি (রহ.) থেকে বর্ণিত যে প্রথম সমবেতভাবে পৃথিবীতে তাদের নির্বাসন হয়েছিল শামের ভূমিতে। (প্রাগুক্ত)

কোনো বিশেষণ ছাড়াই ফিলিস্তিনের আলোচনা

কোরআনের অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনের ভূমির কথা কোনোরূপ বিশেষণ ছাড়াই বলা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘আমি (আল্লাহ) কিতাবে মীমাংসা দান করে বনি ইসরাঈলকে অবহিত করেছিলাম, তোমরা পৃথিবীতে দুবার বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ঘোর অহংকার প্রদর্শন করবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪)

আল্লামা শাওকানী (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে বলেছেন যে এখানে ‘পৃথিবী’ বলতে শাম ও বায়তুল মাকদিসকে বোঝানো হয়েছে। (ফাতহুল কাদীর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৯)

অন্য আয়াতে এসেছে, শপথ ‘তীন’ (ডুমুর) ও ‘জায়তুন’ (জলপাই) বৃক্ষের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তুর পর্বতের। (সুরা : আত ত্বিন, আয়াত : ১, ২)

অধিকাংশ তাফসিরবিশারদ বলেন : এখানে ‘তীন’ ও ‘জায়তুন’ দ্বারা সে স্থান বোঝানো হয়েছে, যেখানে এ বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে শাম দেশ ও ফিলিস্তিন, যা নবীদের আবাসভূমি। (আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৫৫৪)

ফিলিস্তিনের কতিপয় অঞ্চলের বিবৃতি

কোরআনে ফিলিস্তিনের কতিপয় এলাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ—

১. এবং আমি মরিয়মের পুত্র ও তার মাকে (অর্থাৎ ঈসা ও মরিয়ম আলাইহিমাস সালামকে) বানিয়েছিলাম এক নিদর্শন এবং তাদের এমন এক উচ্চভূমিতে আশ্রয় দিয়েছিলাম, যা ছিল শান্তিপূর্ণ এবং যেখানে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ পানি।

(সুরা : আল মুমিনুন, আয়াত : ৫০)

এখানে ‘উচ্চভূমি’ দ্বারা ‘রামলাহ’ উদ্দেশ্য, যা ফিলিস্তিনের একটি অঞ্চলের নাম। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৭, পৃষ্ঠা ৫৩)

২. অতঃপর এই ঘটল যে মরিয়ম সেই শিশুকে গর্ভে ধারণ করল (এবং যখন জন্মের সময় কাছে এসে গেল) তখন সে তাকে নিয়ে দূরে এক নিভৃত স্থানে চলে গেল।

(সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ২২)

মুফাসসিররা এ আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন যে মরিয়ম (আ.) গর্ভবতী হলে দূরবর্তী স্থানে চলে যান। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : তিনি আল আকসা উপত্যকায় গিয়েছিলেন আর এটিই হলো ‘বেথলেহেম’। ‘বেথলেহেম’ এবং ‘ইলিয়া’ এর মধ্যে চার মাইল দূরত্ব রয়েছে। আর ‘ইলিয়া’-এর অপর নাম হলো বায়তুল মাকদিস। (তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ১৫, পৃষ্ঠা ৪৯২)

৩. এবং (সেই কথাও স্মরণ করো) যখন আমি বলেছিলাম, এই জনপদে প্রবেশ করো এবং তার যেখান থেকে ইচ্ছা প্রাণভরে খাও। আর (জনপদের) প্রবেশদ্বার দিয়ে নতশিরে প্রবেশ করবে আর বলতে থাকবে, (হে আল্লাহ!) আমরা আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। (এভাবে) আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করব এবং পুণ্যবানদের আরো বেশি (সওয়াব) দেব। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ৫৮)

এই জনপদের ভৌগোলিক অবস্থান সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে, এখানে ‘জনপদ’ মানে বায়তুল মাকদিস।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : এখানে ‘দরজা’ বলতে বায়তুল মাকদিসের ‘বাবে হুত্তা’ উদ্দেশ্য।

(তাফসিরে তাবারি, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১০৩)

৪. অতঃপর তালুত যখন সৈন্যদের সঙ্গে রওনা হলো, তখন সে (সৈন্যদের) বলল, আল্লাহ একটি নদীর দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। (সুরা : আল বাকারা, আয়াত : ২৪৯)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন যে এখানে নদী বলতে জর্দান ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী নদীকে বোঝানো হয়েছে।

(আদ দুররুল মানসুর, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৫৯)

৫. একদিন যখন তারা পিঁপড়ার উপত্যকায় পৌঁছাল, তখন এক পিঁপড়া বলল, ওহে পিঁপড়ারা! নিজ ঘরে ঢুকে পড়ো, পাছে সুলাইমান ও তার সৈন্যরা তাদের অজ্ঞাতসারে তোমাদের যাতে পিষে না ফেলে।

(সুরা : আন নামল, আয়াত : ১৮)

ইমাম রাজি (রহ.) বলেন : এখানে ‘পিঁপড়ার উপত্যকা’ দ্বারা ‘শামের উপত্যকা’কে বোঝানো, যেখানে পিঁপড়ার আধিক্য বেশি আর এটি ‘আসকেলন (Ashkelon)’  উপত্যকার আশপাশে অবস্থিত।

(মাফাতিহুল গায়েব, খণ্ড ২৪, পৃষ্ঠা ৫৪৮)

এই পবিত্র ভূমি, যার পবিত্রতা ও বরকত পবিত্র কোরআনে বারবার বলা হয়েছে, মুসলমান হিসেবে যার উত্তরাধিকার পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ভূমি মুসলমানদের দ্বারা অত্যন্ত বরকতময় ও পবিত্রতার আবরণে শাসিত হয়েছে;  কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে আমরা আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ভুলে গেছি, যার কারণে ইসরায়েলের অপবিত্র ইহুদিরা এই পবিত্র ও পুণ্য ভূমি জবরদখল করে এখানকার মুসলিমদের ওপর বর্বর ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং হামলা চালাচ্ছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত এর পবিত্রতা বুঝে এই পবিত্র স্থানটি পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন মুসলিমদের হেফাজত করুন ও বিজয় দান করুন। আমিন।

আল-কোরআনের বয়ানে ফিলিস্তিন

Palestine in the Quran

[nurulxothman]

Bismillahi ma sha Allah.

The need to be in Your holy land comes with huge tests & challenges. By Your blessings, Your mercy and Your love, all praises to You for Your special invitation. Nothing but, alhamdulillah ya Rabbi, Rabbul 'arsy wa Rabbul 'alamin 🤲🏻 kullu kheir.

Labbaiki ya Aqsa, ya Rab.

كلهم رحمة وفضل من الله ♥️

I left my heart there 🫀

[rihladni]

Dan keimanan itu telah mencapai puncak paling tinggi. Setelah harta bendanya, keluarga dan anak-anaknya--semuanya--demi kehormatan Baitul Maqdis.

Apalagi kiranya yang menghalangi syurga untukmu. Innalillahi wa inna ilaihi raji'un

Semoga Allah merahmati para syuhada. Memberikan kemenangan bagi mujahidin, rakyat palestina, dan umat seluruhnya

#Palestine #BaitulMaqdis

[suara-rakyat-blog]

Pelan yang diumumkan baru-baru ini oleh Menteri Kewangan Israel Smotrich untuk menubuhkan penempatan haram baharu di Bethlehem adalah bertujuan untuk menghubungkan Al Mahrur, Battir, Velece dan Baitulmaqdis ke kawasan penempatan haram Zionis yang bersambung, mengasingkan bandar Palestin dan memusnahkan penduduk Palestin dari tanah mereka.

[melancong]

Salam memperingati peristiwa Israk Mikraj 2024 🌙

Tahukah anda? Israk Mikraj merupakan peristiwa penting dalam Islam yang menggambarkan perjalanan malam Nabi Muhammad S.A.W dari Masjidil Haram di Mekah ke Masjidil Aqsa di Baitulmaqdis, kemudian naik ke langit untuk bertemu dengan Allah SWT.

Melancong.my

[nep-razak]

Jika Musa membelah laut dengan tongkatnya, Daud mengkhayal burung-burung terbang dengan merdu suaranya, Sulaiman mempesona Balqis dengan magisnya, Umar membebas BaitulMaqdis dengan tiga belas tampalan pada bajunya, aku juga berkehendak melaku sesuatu.

Aku bukan Musa, bukan Daud, bukan Umar, jauh sekali Sulaiman. Aku tak perlu angin, burung, pedang, mergastua, flora, fauna, Ifrit, atau apa-apa perantaraan metafora mahupun literal. Aku hanya perlukan telefon.

Dan kredit panggilan.

Aku mahu masuk dalam hati dia, dengan diam dan sungguh berhati-hati -- barangkali berjinjit seakan-akan pencuri -- menggodam kewarasan dia dengan senyuman paling memukau, lalu dengan suara yang terketar-ketar seperti menanggung berat kerahsiaan sesuatu khabar, beritahu dia dengan bunyi yang hampir-hampir kedengaran berbisik, “Aku jatuh cinta.”

Ia satu peperangan. Dan tentera aku adalah imej-imej maya bersenapang-kan persepsi tentang diri aku yang berlegar dan mengepung pemikirannya.

Rancangan aku, sejurus sahaja sebelum dia sempat berkata apa-apa -- kemungkinan terbesar reaksi dia adalah tergamam terkejut -- aku akan terus segera menyambung:

“Dengan kamu.”

[dikiprasetyo26]

-- Apa Yang Harus Kulakukan Untuk Saudaraku di Palestina --

Langit mendung di kotamu

Senada juga dengan mendungnya hati umat Islam saat ini

Dimana tak sedikit dari saudara kita

Banyak dilanda jutaan siksa dan derita

Derita mereka di Palestina

Dimana pada momen lebaran yang penuh bahagia

Mereka malah diserang tiada hentinya

Dan tak sedikit jatuh korban jiwa

Yang terus menambah kepedihan hati ini

Bukankah umat islam bagaikan satu tubuh

Jika satu bagian sakit, maka bagian yang lain juga akan sakit

Pertanyaan nya, apakah kita sudah merasakan kepedihan mereka?

Dan aku ingin kau merasakan kepedihan itu

Membayangkan sebentar saja apa yang mereka rasakan

Dan dikau pasti akan sangat bersyukur

Karena diberi nikmat hidup aman di negara Indonesia

Lantas, dalam hati kecilmu bertanya

" Apa yang harus kulakukan untuk membantu saudaraku disana? "

Dan salah satu caranya ialah mendoakan mereka

Itulah bantuan sederhana tapi penuh makna kita kepada mereka

Yakinlah bahwa dengan doa akan mendekatkan yang jauh

Dan melalui doa pulalah Allah SWT kan memberikan pertolongan-Nya

Doakan mereka sehabis sholatmu

Doakan mereka di sepertiga malammu

Lantas, dikau masih bertanya

" Selain doa, kiranya apa yang dapat saya berikan kepada saudaraku di Palestina? "

Salah satunya yakni dengan donasi seikhlasnya

Donasi bagi kita yang terdapat kelebihan rezeki

Setidaknya dengan menyisihkan sebagian harta kita

Dapat disalurkan untuk memberikan bantuan kepada saudara kita

Baik nanti dalam bentuk makanan, pakaian ataupun kebutuhan lainnya

Dan semoga dengan hal-hal diatas dapat membantu saudara kita di Palestina

Jakarta, 18 Mei 2021

[ikmalfahmirasmi]

Palestinian citizens of Israel are being rounded up. Israeli govt is hoping that under a “ceasefire” they can continue to carry out their routine criminalization of Palestinians while escaping public scrutiny. Do not let that happen. Share widely. #NoHate #freepalestine #palestine #gazaunderattack #ceasefire #israelarmy #israeliapartheid #colonilization #apartheid #visitisrael #ramallah #telaviv #benjaminnetanyahu #idf #alquds #baitulmaqdis #domeoftherock #westbank #gaza #gazastrip #palestinian Source : https://www.instagram.com/p/CPO4FHsF2kY/?utm_medium=copy_link @a7madabuznaid (at Palestine) https://www.instagram.com/p/CPUBdePBPic/?utm_medium=tumblr

[deanialsart]

2019

March : ChirstChurch Mosque terrorist shooting 50 people killed

April : Notre Dame Church and Baitulmaqdis Mosque burnt at the same time / Sri Lanka terror attack 200 people killed

Dear Lord. What's next?

[mubziii]

View this post on Instagram

A post shared by Islam (@islam)

Abu Hurayrah radıyallahu Anhu relates that the Prophet ‎ﷺ‎‬ said: “Do not undertake a journey to visit any Mosque, but three: this Mosque of mine, the Mosque of al-Haram and the Mosque of Aqsa” Sahih Muslim 1397 . . #islam #masjidalaqsa #palestine #jerusalem #alquds #alaqsa #domeoftherock #baitulmaqdis #landoftheprophets #muslim https://www.instagram.com/p/B3RUw4pALw-/?igshid=38px4444howb